শ্রীলঙ্কার যুক্তিবাদী ডঃ আব্রাহাম থোম্মা কোভুর ১৯৬৩ সালে টেলিপ্যাথি ক্ষমতাকে ভ্যালেঞ্জ জানিয়ে ২৫ হাজার সিলোনিজ টাকা পর্যন্ত বাজি রাখেন। কোভুর ঘোষণায় বলেছিলেন –টেলিপ্যাথি ক্ষমতার অধিকারী দু-জনের মধ্যে একজনকে একটি কাগজের টাকা দেখান হবে। সেই টাকার নম্বর অন্যজনকে বলে দিতে হবে।
অবশ্য এই ধরণের পরীক্ষায় কেউ সাফল্য দেখালেন সেটাকে টেলিপ্যাথির সফল পরীক্ষা বলে মেনে নিতে আমি রাজি নই। কারণ ওর মধ্যেও থাকতে পারে কিছু কৌশল। আমি আমার ১১ বছরের ছেলে পিংকির সহায়তায় বহুবার এই ধরনের টেলিপ্যাথি সেমিনার ও অনুষ্ঠানে দেখিয়েছি। অনেকেই এটাকে খাঁটি টেলিপ্যাথি বলেই যে ধরে নিয়েছিলেন। বোঝাবার পর ভুল ভেঙ্গেছে।
আমার এক বন্ধুর বাড়িতে সপরিবারে বেড়াতে গিয়ে আড্ডায় বেশ জমে উঠেছিলাম। ‘ধান ভানতে শীবের গীত’ –এর মতোই বন্ধু বলল, টেলিপ্যাথি ব্যাপারটিকে তুই কি বলবি –সত্যি, না কি বুজরুকি?
বললাম, “বেশ তো, তোদের একটি টেলিপ্যাথি করে দেখাচ্ছি। ব্যাখ্যা পরে দেবো।
“পিংকি (আমার একমাত্র ছেলে। বয়েস এগারো আমার যুক্তিবাদী কাজকর্মের সঙ্গী) এই ঘরেই থাকুক। আমি যাচ্ছি তোর সঙ্গে পাশের ঘরে। তুই যে কোন একটা কাগুজে টাকা আমাকে দেখাবি। নোটের নম্বরটা দেখে আমি টেলিপ্যাথির সাহায্যে পিংকির মস্তিষ্কে চিন্তাটা পাটাব। পিংকি নোটের নম্বর বলে দেবে।“
পাশের ঘরে বন্ধুর দেওয়া নম্বরটা দেখলাম। ১০৯৬৩৬। বন্ধুকে বললাম, “এবার পিংকি ঠিক আমার চিন্তা ধরে নেবে। তারপর বল, এবার পূজোয় তুই কোথায় যাচ্ছিস?”
বন্ধু বলল, “কিছু ঠিক করিনি।“
বললাম, “এবার আমার রাজস্থান, দিল্লি, আগ্রা সাইডটা দেখার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু বোধহয় যাওয়া হবে না। আগামী পুজোর আগে হবে বলে মনে হচ্ছে না। দুই প্রকাশকের দুটো বড়-সড় কাজ রয়েছে হাতে। অতএব পুজোটা খাতা-কলম নিয়েই কাটাতে হবে মনে হচ্ছে।“
ও ঘর থেকে পিংকি জবাব দিল, “নোটের নম্বর ১০৯৬৩৬।“
১৯৮৬-র ১৬-১৭ই ফেব্রুয়ারী। স্থানঃ কলকাতার মৌলালী যুবকেন্দ্রে। মনোবিজ্ঞানী, মনোরোগ চিকিৎসক এবং সমাজবিজ্ঞানীদের নিয়ে “মানসিক ব্যাধি ও আমাদের কর্তব্য” শিরোনামে দু’দিনব্যাপী সেমিনার অনুষ্ঠিত হল। আয়োজক, ছিলেন “মানব মন রজত জয়ন্তী উৎসব কমিটি।“ উদ্বোধন করেন পশ্চিমবঙ্গের সে সময়কার মুখ্যমন্ত্রী শ্রীজ্যোতি বসু।
প্রথম দিনের অধিবেশনে আমি বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন অবতার এবং প্যারাসাইকোলজিস্টরা অলৌকিক বলে যা কিছু দেখিয়েছেন তার কিছু কিছু করে দেখাই বলি, “এগুলো সবই দেখালাম লৌকিক কৌশলের সাহায্যে।“ শেষে টেলিপ্যাথির আলোচনায় এলাম। দেখালাম নানা ধরণের টেলিপ্যাথির কৌশল। শেষে একজন দর্শককে একটা কাগুজে টাকা দিতে অনুরোধ করলাম। মঞ্চে এলেন দুইজন দর্শক। একজন দিয়েছিলেন এক টাকার নোট। আর একজন পাঁচ টাকার।
চোখ বাঁধা অবস্থায় পিংকি বসেছিল স্টেজে। আমি প্রথম দর্শকের নোটটি নিয়ে পিংকিকে বলতে বলেছিলাম, “কত টাকার নোট এবং নম্বর কত?”
পিংকি উত্তর দিয়েছিল, “এক টাকার নোট, নম্বর ২৩৩২৭৯।“
দ্বিতীয় দর্শকের দেওয়া নোটটির ক্ষেত্রেও সঠিকভাবে বলে দিয়েছিল, “পাঁচ টাকার নোট, নম্বর ৭৭১৩২০।“
‘সাপ্তাহিক পরিবর্তন’ পত্রিকার ব্যবস্থাপনায় টেলিপ্যাথি
এক সময় সবচেয়ে জনপ্রিয় সাপ্তাহিক ছিল ‘পরিবর্তন’। ‘পরিবর্তন’ পত্রিকার সম্পাদক ডঃ পার্থ চট্টোপাধ্যায় রাশিয়া ভ্রমণে গিয়েছিলেন। ওখানে দেখেছিলেন মাদাম কুলাগিনার টেলিপ্যাথি। আমি বলেছিলাম –ওটা টেলিপ্যাথি নয়; কৌশল। আমিও অমন টেলিপ্যাথি দেখাতে পারবো শুনে পার্থদা পরিবর্তন পত্রিকার তরফ থেকে লৌকিক-অলৌকিক’ নামের একটি প্রদর্শনীর আয়জন করেন। প্রদর্শনীতে (৩রা ডিসেম্বর, ১৯৮৫) টেলিপ্যাথির কিছু ‘খেলা’ ছিল অন্যতম আকর্ষণ। আমি যা দেখতে পাচ্ছিলাম, চোখ বাঁধা পিংকির কাছেও তা দৃশ্যমান হয়ে উঠেছিল। নোটের নম্বর বলা দিয়ে প্রদর্শনী শেষ করে বসলাম সম্পাদক ডঃ পার্থ চট্টোপাধ্যায় পাশের চেয়ারে। আমার পাশে বসল পিংকি। পার্থদা একটা কয়েন (coin) বার করে বললেন, “এই কয়েনটার সাল পিংকি বলতে পারবে?”
বললাম, “কেন পারবে না? আপনি কি ভেবেছেন, যিনি টাকা দিয়েছিলেন তিনি আমার দলের কেউ?”
পার্থদা সালটা আমাকে দেখিয়ে কয়েনটা মুষ্ঠিবদ্ধ করলেন।
আমি পিংকিকে প্রশ্ন করতেই ও সালটা বলে দিল। স্বভাবতই পার্থদা অবাক।
১১.২ ডুবোজাহাজে টেলিপ্যাথির পরীক্ষা
১১.৩ টেলিপ্যাথির সাহায্যে নোটের নম্বর বলা
১১.৪ টেলিফোনে টেলিপ্যাথিঃ আয়োজক লন্ডনের ‘সানডে মিরর’
১১.৭ টেলিফোন টেলিপ্যাথির আর এক আকর্ষণীয় ঘটনা
১১.৮ এমিল উদ্যা ও রবেয়ার উদ্যা’র টেলিপ্যাথি
১১.৯ অতীন্দ্রিয় ইউরি গেলারকে নিয়ে ‘নেচার’ (Nature)-এর রিপোর্ট
১১.১০ আই আই টি-তে টেলিপ্যাথি দেখালেন দীপক রাও