মন থাকলে মনের চাপ থাকবে-ই। চাপ থাকে না মানসিক প্রতিবন্ধীর। সকাল থেকেই চিন্তা তাড়িত করে আমাদের—দাঁত মাজতে হবে, পটি করতে হবে। চা খেয়ে ব্যাগ হাতে বাজারে। কী কিনি? বাজার থেকে ফিরে খবরের কাগজ পড়া। পড়তে পড়তে কিছু কিছু খবর মনের চাপ বাড়িয়ে দেয়। সলমন খান একগাদা ভয়ংকর ও ঘৃণ্য মামলায় অভিযুক্ত। অভিযোগ আন্তর্জাতিক অপরাধীদের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক রাখার। তারপরও তাকে নিয়ে মিডিয়াগুলোর কী আদিখ্যেতা! জেলে কী খেল, কীভাবে ঘুমালো, মা অসুস্থ—এ’খবরটা পেলে সলমন নাকি জেল ভেঙে বেরিয়ে আসত। ভারতে এমন কোনো জেল তৈরি হয়নি যাতে সলমনকে আটকে রাখতে পারে! এসব কথা নাকি সলমন প্রেসকে বলেছে। কী কুৎসিত ক্রিমিনাল। কপালের মাঝখানে একটা গুলি করে শেষ করে দিলে দেশের আবর্জনা একটু পরিষ্কার হয়–এমনটাও আপনার ভাবনায় আসতে পারে।

আপনি চূড়ান্ত ক্যারিয়ারিস্ট এবং খাও-পিও-জিও মার্কা মানুষ না হয়ে চিন্তাশীল মধ্যবিত্ত হলে সলমনের খবর যথেষ্ট টেনশন তৈরি করতে পারে। তারপরও পড়ে থাকে সারাটা দিন। কর্মক্ষেত্র থেকে ঘুম পর্যন্ত নানা পর্যায়ে দেখা দিতে পারে নানা টেনশন।

১ বৈশাখ ১৪১৩ বঙ্গাব্দ। সময় বিকেল চারটে। স্থান : কলকাতার সবচেয়ে বড় গ্ৰন্থ প্রকাশক সংস্থা ‘দে’জ পাবলিশিং’। একটি টিভি চ্যানেলের তরফ থেকে কয়েকজন লেখকের সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন এক তরুণী। এক প্রবীণ লেখক তাঁর সাক্ষাৎকারে বললেন, “নতুন বছরে আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ, আপনারা যাকে-তাকে ‘চিন্তাবিদ্’ ‘বুদ্ধিজীবী’ ইত্যাদি বিশেষণ প্রয়োগ করা থেকে বিরত হন এবং তা আজ থেকেই। গত কয়েকদিন ধরে আপনারা খেলোয়াড়, গায়ক, অভিনেতা, তবলচি ইত্যাদি পেশার মানুষদের গায়ে ‘চিন্তাবিদ্’ ও ‘বুদ্ধিজীবী’ ছাপ্পা মেরে হাজির করছেন। তাঁদের কাছে জানতে চাইছেন—ভোট বয়কট বিষয়ে মতামত ৷ গতকাল মতামত জানালেন এক নামি তবলচি। বললেন, ‘ভোট-দেওয়া প্রত্যেক নাগরিকের মহান কর্তব্য। যাঁরা ভোট বয়কটের কথা বলেন, তাঁরা কী করে এমন কথা বলেন ভেবে অবাক হই?’ তবলচির এসব ফালতু কথা শুনতে শুনতে চড়চড় করে টেনশন বেড়ে গেল। একটা অন্ধ আমাদের পথ দেখাবার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে ।

‘চিন্তাবিদ’ ছাপ্পা মারা তবলচি এও জানেন না, বিধানসভায় সংসদে

এমনকি রাষ্ট্রসঙ্ঘেও বিধায়ক, সাংসদ ও রাষ্ট্রসঙ্ঘের সদস্যদের

ভোট দেওয়া অথবা না দেওয়ার অধিকার আছে। ‘কন্ডাক্ট

অব ইলেকশন রুলস’ অনুসারে কাউকে ভোট না দেওয়ার

অধিকার ভারতের ভোটারের আছে। তবে নাগরিকদের

ভোট না দেওয়ার অধিকার কেড়ে নেওয়ার

পক্ষে সওয়াল করার উনি কে?

“চিন্তার চর্চা না করা একটা মানুষকে ‘চিন্তাবিদ্’ বলে আপনারা প্রচার করলে তাঁর ভুল মতামত সাধারণ মানুষকে ভুল পথে-ই নিয়ে যাবে। এই ভুলের শুরু আপনারা মিডিয়ারা- ই আরম্ভ করেছেন। আপনারা আজ থেকে-ই এই ভুল বন্ধ করুন।”

প্রবীণ লেখকটির কথা, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ বলে দিচ্ছিল—টেনশন স্বাভাবিক নেই। বেড়ে গেছে।

সুজিতবাবু স্ট্রোকে মারা গেলেন। তাঁর ছেলে বলল, বাবার ব্লাডপ্রেশার ছিল। আরে…কোনো মানুষ বেঁচে আছে মানে–ই তার ব্লাডপ্রেশার আছে। ব্লাডপ্রেশার অস্বাভাবিক রকম কম বা বেশি মানে-ই খারাপ। একইভাবে টেনশন অস্বাভাবিক রকমের কম মানে হতে পারে মানসিক প্রতিবন্ধী, অস্বাভাবিক বেশি মানে শারীরিক ও মানসিক নানা রোগে সম্ভাবনা ।

কেউ আপনাকে পাঁচ টাকা ঠকালে আপনি রেগে যান। চোখের সামনে কোনো অন্যায় দেখলে রিঅ্যাক্ট করেন। আমার এক বান্ধবী যাচ্ছিলেন অফিস, বাস আচমকা ব্রেক কষলো। এক মহিলা হুমড়ি খেয়ে পড়লেন। নাক ফেটে প্রবল রক্তপাত। উনি মহিলাকে নিয়ে নামলেন। হ্যাঁ, একা-ই নামলেন। বাসযাত্রীদের শুকনো সহানুভূতি বাসের সঙ্গেই বিদায় নিল। আহত মানুষটিকে নিয়ে এতো ডাক্তারের চেম্বারে গেলেন। ড্রেসিং করিয়ে একটা ট্যাক্সি ধরে মানুষটিকে তাঁর অফিসে পৌঁছে দিয়ে নিজের অফিসে গেলেন। মহিলাকে রক্তাক্ত অবস্থায় স্টপেজে নামতে দেখেও সাহায্য না করে অফিস উনি যেতে পারতেন না। সারা দিন আহত মানুষটির কথা ভাবতে ভাবতে টেনশন বাড়াতেন। কারণ উনি সুসমাজের বিবেক।

সবাই ওঁর মতো নন। সত্যি বলতে কী; বান্ধবী বর্তমান সমাজে ব্যতিক্রম। অন্যায়ের প্রতিবাদ না করাটাই শহর কলকাতার মূল চরিত্র। আহত মানুষ, স্ট্রোকে আক্রান্ত মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়ে থেকে থেকে মারা যান। হাজার মানুষ পড়ে থাকা মানুষটিকে দেখেও দেখেন না। এসব তুচ্ছ ঘটনা কলকাতার পাবলিকের মনে দাগ কাটে না, টেনশন তৈরি করে না। বান্ধবীর সঙ্গে সাধারণ মানুষের পার্থক্য এইটুকু যে, তিনি সংবেদনশীল, সমাজ সচেতন। অন্যেরা স্বার্থচিন্তায় মগ্ন, অসামাজিক মানুষ। এই বিবেকবানের সংখ্যা বড় বেশি রকমের কম।

 

যখন বাড়তি টেনশন লড়াইয়ের জন্য তৈরি করে

মানসিক চাপ বাড়লে বাড়তি টেনশন তৈরি হয়। কে কতটা চাপ সহ্য করতে পারে, তা মানুষে মানুষে যেমন পার্থক্য তৈরি করে তেমন-ই অবস্থা, সিচুয়েশন, চাপের ধরন, সেই বিশেষ ধরনের চাপকে গ্রহণ করার শক্তি ইত্যাদি বহুতর বিষয়ের উপর টেনশনের পরিমাপ নির্ভর করে।

ফুটবল ম্যাচটা যখন মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলে, তখন দেখা যায় দু’দলের খেলোয়াড়, কোচ, কর্মকর্তা—প্রত্যেকেই বাড়তি টেনশনে কাবু। এই স্নায়ুযুদ্ধে যে জেতে, সে খেলা ও জেতে।

 

স্নায়ুতন্ত্র ও টেনশন

টেনশনের সঙ্গে স্নায়ুতন্ত্রের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। আমাদের স্নায়ুতন্ত্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ হল ‘অটোনমিক নারভাস সিস্টেম’। এর আবার দুটো অংশ। (এক) ‘সিমপ্যাথেটিক’, (দুই) ‘প্যারাসিমপ্যাথেটিক’ ।

যখন আপনি কোনো বিপদের মুখোমুখি অথবা তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি, তখন আপনার শরীরের ‘অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি’ ‘অ্যাড্রেনালিন’ হরমোনের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে সক্রিয় হয়ে ওঠে ‘সিমপ্যাথেটিক’ স্নায়ুতন্ত্র।

৯০ মিনিট তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে। ইস্টবেঙ্গল মোহনবাগানের খেলোয়াড়রা বাঘের মতো লড়ে যাচ্ছে। রেফারির শেষ বাঁশি বাজতেই লড়াইয়ের সেনানীরা মাঠের পাশে এসেই শরীর এলিয়ে দেয়। উঠে দাঁড়াবার শক্তি বা ইচ্ছে নেই। লড়াইয়ের শেষে এই যে শরীর এলিয়ে দিয়ে বিশ্রাম বা আরাম পায় শরীর ও মন—এটা ‘প্যারাসিমপ্যাথেটিক’ স্নায়ুতন্ত্রের কাজ। ‘প্যারাসিমপ্যাথেটিক’ স্নায়ুতন্ত্র শরীর ও মনের উপর নার্ভের বাড়তি চাপকে কমিয়ে আনে এবং আবার লড়াইয়ের আগের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যায়।

 

মাঝারি টেনশন কর্মদক্ষতা বাড়ায়

গাড়ি চালাচ্ছেন রিলাক্সড্ মুডে। তার মানে কিন্তু এই নয় যে, একটুও টেনশন নেই। ট্রাফিক আইন মেনে, রাস্তার গাড়ি ও পথচারি মানুষদের বাঁচিয়ে গাড়ি চালাতে সচেতন তো হবে-ই। হালকা টেনশন তো থাকবে-ই। এটুকুও না থাকলে দুর্ঘটনা অনিবার্য।

সৃষ্টিশীল কাজে, যে কোনও বিষয়ে গভীর গবেষণায়

চিন্তা ও শরীরকে ক্রিয়াশীল করতে হালকা বা

মাঝারি টেনশন জরুরি। আবার বেশি রকম

টেনশন সব সময় এইসব কাজকে

ভণ্ডুল করে দেয়।

 

একটানা বাড়তি স্নায়ুচাপ, মানেই শরীর ও মনের ক্ষতি

বাড়তি স্নায়ুচাপ বা টেনশন যদি দীর্ঘ দিন ধরে চলতে থাকে, তবে আত্মবিশ্বাস কমে যায়, দক্ষতা হ্রাস পায়, ব্যক্তিত্ব খর্বিত হয়, মেধা-বুদ্ধির স্বতঃস্ফূর্ততা নষ্ট হয়, অলীক নানা ভয়ের শিকার হওয়াও সম্ভব। যেমন বাড়ি থেকে বেরতে ভয়, মনোযোগ দিতে না পারার সমস্যা, ভুলে যাওয়ার সমস্যা, বাসে-ট্রামে প্লেনে চড়তে ভয়, রাস্তা পার হতে ভয়, মানুষের সঙ্গে মিশতে ভয়, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তোতলামো, দূরে কোথাও যাওয়ার জন্যে ট্রেন ধরতে যাবার আগে পেটখারাপ, ঘন-ঘন হিসি করতে যাওয়া, পরিবারের লোকদের ছেড়ে অফিসের কাজে কিছু দিন বাইরে থাকতে হবে শুনে-ই হাঁপানির টানে সোজা নার্সিংহোমে যাওয়া, দিন-রাত নানারকম কাজের মধ্যে ডুবে থাকার পাগলামি, অন্যের মতামত ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত নিতে না পারা, অতি সন্দিগ্ধ হয়ে ওঠা, বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গে মিশতে ভয়, নারভাসনেস থেকে মাথা ঘোরা, মাথা ব্যথা, কপালের দুপাশে দপদপ্ ব্যথা, মাংসপেশিতে মাঝে-মাঝেই টান, গলায় কিছু আটকে আছে মনে করা ইত্যাদি হতে পারে ।

বাড়তি টেনশন বা স্নায়ুচাপে মেয়েদের কামশীলতা, ছেলেদের যৌন অক্ষমতা দেখে দিতে পারে। কাজে না গিয়ে অজুহাত খাড়া করে বাড়িতে বসে থাকার চেষ্টা করতে পারে। একটা কথা আরো একবার স্পষ্ট করে দিই। ‘বাড়তি টেনশন’ মানে—একজন মানুষ যতটা টেনশন সহ্য করতে পারে, তার চেয়ে বেশি টেনশন। বাড়তি টেনশনে যেসব শারীরিক ও মানসিক প্রতিক্রিয়া হয় বলে এতক্ষণ আলোচনা করলাম, সেসব প্রতিক্রিয়া একই সঙ্গে দেখা যাবে-এমনটা নয়। এক বা একাধিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

টেনশন রোগ তৈরি করে। আবার রোগ টেনশন বাড়ায়। এটা চক্রাকারে চলতেই থাকে । এই চক্রের গতি থামাতে পারে ‘রিল্যাকসেশান’।

 

বাড়তি টেনশন যেসব রোগ তৈরি করতে পারে

চিকিৎসা-বিজ্ঞান আজ যতটা এগিয়েছে তাতে মানুষের গড় আয়ু গত পঞ্চাশ বছরে দেড়গুণ বেড়েছে। বেশিরভাগ রোগ থেকে মুক্তির ওষুধ মানুষ আবিষ্কার করেছে। ব্লাডপ্রেশার, ব্লাডসুগার, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক থেকে বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারের মতো রোগকে কনট্রোলে রেখে আনন্দের সঙ্গে বাঁচাটা এখন কোনো ব্যাপার নয়। এমন একটা অবস্থায় টেনশন বা স্ট্রেস মানুষকে শারীরিক, মানসিক ও মানসিক কারণে শারীরিক অসুখে কাবু করুক—এটা কখনই অভিপ্রেত নয়। এই তিন অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায়ও বিজ্ঞান বের করেছে। উপায়‘রিল্যাকসেশান’ ।

টেনশন বা স্ট্রেস যেসব শারীরিক রোগ তৈরি করে সেগুলো হলঃ

শরীরের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। মাংসপেশিতে খিঁচ, পাকস্থলীতে জ্বালা ধরা যন্ত্রণা, পেপটিক আলসার, গ্যাসট্রিক আলসার, কোলাইটিস, হার্ট- অ্যাটাক, ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমা, বাত, ব্লাডপ্রেশার, ডায়াবেটিস, স্কিন ডিজিস, নারীদের অনিয়মিত ঋতুস্রাব, যৌন শীতলতা, গর্ভপাত, পুরুষদের যৌন-অক্ষমতা ইত্যাদি ।

মানসিক অবসাদ, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি রোগও আসে লাগাতার টেনশন বা স্ট্রেস থেকে। মানসিক অবসাদ ও দুশ্চিন্তা নিয়ে আসে মানসিক রোগ, আত্মহত্যার প্রবণতা। তৈরি করে নানা ‘ফোবিয়া’। টানা উদ্বেগ বা টেনশন মনঃসংযোগ, বুদ্ধি, স্মৃতি, জ্ঞান, বিচার-বিবেচনার ক্ষমতা, কর্মক্ষমতা—সবের-ই ক্ষতি করে।

 

একটানা টেনশনে ভুগলে যে রোগগুলো সবচেয়ে বেশি হয়

কোমরে ব্যথা, পিঠের নিচের দিকে ব্যথা (Low backpain), পেটে ব্যথা, মাথার ব্যথা। এইসব টেনশন থেকে তৈরি রোগ সমস্যা নিয়ে ডাক্তারের কাছে দৌড়ানো, তাঁদের নির্দেশ মতো ওষুধ খাওয়ার পরও সমস্যা মেটার লক্ষণ দেখা যায় না। তখন শুরু হয় রোগ নির্ণয়ের জন্য নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা। তাতেও রোগ ধরা পড়ে না। শেষ পর্যন্ত ডাক্তার জানান—রোগটা ‘সাইকোসোমাটিক’। অর্থাৎ মানসিক কারণে শারীরিক অসুখ। মানসিক কারণটা এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই স্নায়ুচাপ, টেনশন বা স্ট্রেস।

কোনো রোগকে ‘সাইকোসোমাটিক’ রোগ অর্থাৎ মানসিক কারণে শারীরিক অসুখ বলে ডাক্তার যদি চিহ্নিত করেন তবে মনোরোগ চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়াটা জরুরি। মনোরোগ-চিকিৎসক যদি মনোবিদের সাহায্য নিতে বলেন, তবে অবশ্যই তা নিতে হবে। নতুবা এইসব মনোশারীরিক রোগ থেকে মুক্তি নেই।

সবচেয়ে ভালো হল টেনশন দেখা দিলে ‘রিল্যাকসেশান’ করে টেনশনকে নির্মূল করা। কিন্তু সেইসঙ্গে এও মনে রাখতে হবে—‘রিল্যাকসেশান’ টেনশন কন্ট্রোলে রাখার অতি কার্যকর পদ্ধতি হলেও সব সময় অসাধারণ কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে না ।

যে হতদরিদ্র, বেকার, বিনা বিচারে জেলের ভিতর অত্যাচারিত, যে মুসলিম ধর্মের গুজরাটবাসী মানুষটি চোখের সামনে দেখেছে স্ত্রী ও বোনকে ধর্ষিতা হতে, বাবা ও ভাইকে জীবন্ত পুড়ে মরতে সেইসব মানুষ ‘স্ট্রেস ডিসঅর্ডার’-এর শিকার হতে-ই পারে। এসব ক্ষেত্রে ‘স্ট্রেস ডিসঅর্ডার’ ঠিক করতে প্রয়োজন গরিবি হটানো, বেকারদের কর্মসংস্থান, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও পার্টি সন্ত্রাস বন্ধ করা, বিনা বিচারে বন্দিদের মুক্তি, মনোরোগের চিকিৎসা ইত্যাদি। শুধু রিল্যাকসেশানে এইসব সমস্যাক্লিষ্ট মানুষদের টেনশনমুক্ত করা সম্ভব নয় । আবার এও ঠিক যে, রিল্যাকসেশান এদেরও শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণাকে সহনীয় করে তোলে, কষ্ট কিছুটা কমায়, স্ট্রেস কমায়।

অর্থাৎ রিল্যাকসেশানের কার্যকারিতা প্রায় কোনো জায়গাতেই একেবারে মূল্যহীন নয় ।

 

টেনশনের কারণ ও চাপ সহ্যের ক্ষমতা

‘টেনশন’ বলতে আমরা আলোচনায় টেনশন বৃদ্ধিকেই ধরবো। মানসিক চাপ বা টেনশন অথবা স্ট্রেসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে উৎকণ্ঠা বা অ্যাংজাইটি এবং মানসিক অবসাদ বা ডিপ্রেশন। আট থেকে আশি, অনিল আম্বানি থেকে ছাতু-পানি বিক্রেতা সবাই এখন টেনশনের শিকার। টেনশন বা স্ট্রেসের থাবার নিচে পুরুষ থেকে নারী ।

শহর ও শহরতলির মধ্যবিত্ত, উচ্চমধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তদের লাইফস্টাইল, আচার- ব্যবহার, রুচি, ধ্যান-ধারণা সব-ই পাল্টে গেছে। জীবনযাত্রা দ্রুততর হচ্ছে। ভোগ সামগ্রীর প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। এই দ্রুত জীবনযাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নিতে গিয়ে মানসিক চাপ বাড়ছে। একই সঙ্গে পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে নিতে কারো কারো চাপ সহ্য করার ক্ষমতা বাড়ছে। মানসিক দৃঢ়তা বাড়ছে।

একজন সফল খেলোয়াড়, অভিনেতা, গায়ক ইত্যাদিরা

সাফল্য লাভের সঙ্গে সঙ্গে মানসিক দৃঢ়তা, ব্যক্তিত্ব ও

চাপ সহ্য করার ক্ষমতা অর্জন করে। সানিয়া মির্জা

থেকে সচিন তেণ্ডুলকর প্রত্যেকেই প্রাপ্তবয়স্ক

হওয়ার আগে-ই চাপ সহ্য করার ক্ষমতা ও

মানসিক দৃঢ়তা অর্জন করেছিলেন।

আবার চোর-পুলিশ করতে করতে বড় মাপের ক্রিমিনালদের মানসিক চাপ সহ্য করার ক্ষমতা অসম্ভব রকমের বেশি। একজন মানুষ টেনশনে কতটা কাবু হবে অথবা হবে না, তা অনেকটা নির্ভর করে জীবনযাত্রার ধরন, পেশা, বয়স, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য, পারিবারিক চাপ, কর্মক্ষেত্রের চাপ, কর্মজীবনের অনিশ্চয়তা, পারিবারিক সম্পর্ক, রোজগারের পথ খুঁজে না পাওয়া, সন্তান নিয়ে দুশ্চিন্তা, অর্থচিন্তা, সময়ের অভাব, রোগভোগ ইত্যাদি এবং সেইসঙ্গে এইসব চাপ সহ্য করার ক্ষমতার উপর।

পর্ব- একঃ উঠে আসা নানা প্রশ্ন

অধ্যায়ঃ এক

♦ সম্মোহন

অধ্যায়ঃ দুই

♦ জন্তুদের সম্মোহন করা ব্যাপারটা কি?

অধ্যায়ঃ তিন

♦ ফোটো-সম্মোহন কি সম্ভব?

অধ্যায়ঃ চার

♦ গণ-সম্মোহনের সাহায্যে কি ট্রেন ভ্যানিশ করা যায়?

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ সম্মোহন করে পূর্বজন্মে নিয়ে যাওয়া যায়?

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ জন্মান্তর ও সম্মোহন

অধ্যায়ঃ সাত

♦ সম্মোহন ও নার্কো টেস্ট

অধ্যায়ঃ আট

♦ সম্মোহন করে কথা বলানো যায় ?

অধ্যায়ঃ নয়

♦ প্ল্যানচেটে যে আত্মা আনা হয়, তা কি স্বসম্মোহন বা সম্মোহনের প্রতিক্রিয়া ?

পর্ব- দুইঃ সম্মোহনের ইতিহাস ও নানা মানসিক রোগ

অধ্যায়ঃ এক

♦ সম্মোহনের বিজ্ঞান হয়ে ওঠার ইতিহাস

অধ্যায়ঃ দুই

♦ মনোরোগ, সম্মোহন জানতে মগজের কাজ জানা জরুরি

অধ্যায়ঃ তিন

♦ মানসিক রোগের রকমফের

অধ্যায়ঃ চার

♦ Hysterical neurosis – Conversion type

অধ্যায়ঃ চার

♦ সাইকোসিস (Psychosis) উন্মাদ

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ দেহ-মনজনিত অসুখ (Psycho-somatic disorder)

পর্ব- তিনঃ মনোবিদ ও মনোরোগ চিকিৎসার বিভিন্ন পদ্ধতি

অধ্যায়ঃ এক

♦ মনোবিদ (Psychologist) ) মনোরোগ চিকিৎসক (Phychiatrist)

অধ্যায়ঃ দুই

♦ প্রধান কয়েকটি সাইকোথেরাপি নিয়ে আলোচনায় যাব

অধ্যায়ঃ তিন

♦ টেনশন

অধ্যায়ঃ চার

♦ রিল্যাকসেশান পদ্ধতি

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ যৌনতা এবং যৌন-সমস্যা

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ ‘যোগ’ মস্তিষ্ক-চর্চা বিরোধী এক স্থবীর তত্ত্ব

পর্ব- চারঃ বিভিন্ন রোগের সম্মোহনের সাজেশন পদ্ধতি

অধ্যায়ঃ এক

♦ সম্মোহন চিকিৎসা এবং…

অধ্যায়ঃ দুই

♦ রোগীকে সাজেশন দেওয়ার পদ্ধতি

অধ্যায়ঃ তিন

♦ রকমারি রোগ, রকমারি সাজেশন

অধ্যায়ঃ চার

♦ প্রাচীন আমল থেকেই মানসিক রোগ মানেই অশুভ শক্তির কালো হাত

“সম্মোহনের A to Z” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ

⇒ মন্তব্য করুন⇐

error: Content is protected !!