বিজ্ঞানের সঙ্গে ফলিত জ্যোতিষের বিরোধের কথাটা কম বেশি অনেকেরই জানা । আবার জ্যোতিষীদের লাগাতার প্রচারে অনেকে এ-ও ভাবেন জ্যোতিষ-শাস্ত্র খাঁটি বিজ্ঞান ।
হাতের রেখা দেখে, কোষ্ঠি বিচার করে, কপাল দেখে কিম্বা কান দেখে অথবা অলৌকিক কোনও উপায়ে মানুষের ভবিষ্যৎ বলে থাকেন জ্যোতিষীরা। তাঁদের এমনটা বলতে পারা পেছনে যে দুটি কারণ ক্রিয়াশীল বলে জ্যোতিষীরা দাবি করেন সে দুটি হলো-এক : মানুষের ভাগ্য পূর্ব-নির্ধারিত। জন্ম মুহূর্ত থেকে প্রতিটি মানুষের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত কি ভাবে অতিবাহিত হবে সবই আগে থেকেই ঠিক হয়ে আছে। এই ঠিক হয়ে থাকাটা অপরিবর্তনীয়, অলঙ্ঘ। এই যে আজ এই মুহূর্তে আপনি আমার লেখার এই অংশটাই পড়ছেন, এটা আগে থেকে নির্ধারিত হয়ে রয়েছে বলেই পড়ছেন, পড়তে বাধ্য হচ্ছেন। দুই : জ্যোতিষশাস্ত্র এমনই একটি শাস্ত্র, যে শাস্ত্রের সূত্রাবলির সাহায্যে বিচার করে একজন মানুষের নির্ধারিত ভাগ্যকে জানতে পারা যায় । আর এই জানার ভিত্তিতেই একজন জ্যোতিষী একজন মানুষের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ সবই বলতে পাবেন ।
এ তো গেল জ্যোতিষীদের দাবির কথা। কিন্তু কেউ কোনও কিছু দাবি করলেই যদি মেনে নিতে হয়, তবে তো দারুণ গণ্ডোগোল বেধে যাবে। সত্যবাবু দাবি করলেন বিপ্লব বাবুকে হাজার টাকা ধার দিয়েছেন একটি বছর আগে। ফেরৎ দেবার কথা ছিল একটি মাসের মাথায়, অথচ বারো মাসেও ফেরৎ দেবার নামটি নেই। বিপ্লব বাবু দাবি করলেন, সত্যবাবু বেজায় অসত্য ভাষণে পটু। এক পয়সাও ধার নেননি কোনও দিনই। অতএব ফেরৎ দেবার প্রশ্নই আসে না। দু’জনের দাবিই সত্যি বলে মানতে হলে তো গোলমালের চূড়ান্ত।
কিছু কিছু জ্যোতিষী ও জ্যোতিষ সমর্থক এক ধরনের যুক্তির অবতারণা কবেন—“জ্যোতিষশাস্ত্র যে বিজ্ঞান নয, এই কথাটা বিজ্ঞান প্রমাণ করতে পারবে ?”
কিন্তু এই ধরনের যুক্তির সাহায্যে অনেক অস্তিত্বহীনের অস্তিত্বই প্রমাণ করা যায় ।
ধরুন, আমি হঠাৎ দাবি করে বসলাম, “রাত ঠিক বারোটায় আমার হাত দুটো মাঝে মধ্যে ডানা হয়ে যায়। তবে ঠিক করে যে হবে, তা বলা যায় না। যতবারই হাত দুটো ডানা হয়েছে, দেখছি ঠিক একটা তিরিশ হলেই ডানা দুটো আবার হাত হয়ে গেছে।
আপনি আমার কথায় অবিশ্বাস করলে আমি একইভাবে আপনাকে যদি বলি, “আপনি প্রমাণ করতে পারবেন যে আমার হাত দুটো ডানা হয় না ?” আপনি আমার দাবির বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণই হাজির করতে পারছেন না। ধরুন আপনি আমার দাবি পরীক্ষার ব্যাপারে ব্যাপক কর্মসূচী নিলেন। দিনের পর দিন, মাসেব পর মাস, বছরের পর বছর রাত একটা থেকে দেড়টা আমাকে চোখে চোখে রাখতে লাগলেন। আমি সে সহযোগিতা করতেও লাগলাম। উলুবেড়িযা থেকে হনুলুলু সর্বত্র আপনাকে বয়ে নিয়ে বেড়াতে লাগলাম। আপনি আমার হাত ডানা হতে দেখলেন না। মাঝে-মধ্যে আমার দাবি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করতেও পারেন। কিন্তু সেই সংশয় দ্বারা কখনই প্রমাণ হয় না যে, মাঝে-মধ্যে আমার হাত ডানা হয় না। যে কয় বছর আপনি আমাকে পর্যবেক্ষণে রেখেছেন, তার মধ্যে আমার হাত ডানা হয়নি বলে প্রমাণ হয় না আমার হাত ডানা হয় না, এবং ভবিষ্যতেও হবে না। যেহেতু আপনি এবং আমি মরণশীল, তাই এক সময় আমাদের মরতেও হবে। ধরুন আমাদের দু’জনের মধ্যে আমিই আগে মরলাম। তাতেও কিন্তু আপনি আমার দাবির বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণই হাজিব করতে পারবেন না। কারণ তখনও তুণে একটি মোক্ষম যুক্তি থেকেই যাচ্ছে, আরোও দীর্ঘ সময় বাঁচলে নিশ্চয়ই এক সময় হাত ডানা হোত। ডানা যে হোত না-এ আপনি কিছুতেই প্রমাণ করতে পারবেন না, কারণ আমি তো তখন মৃত। আর, আপনি যদি আগে মারা যান তবে তো আমি বলার সুযোগ পেয়েই যাব, “আমার দাবির সত্যতা প্রমাণ করতে না পারার ব্যর্থতা নিয়েই আপনি মারা গেছেন।”
কথা হচ্ছে, এই যে আপনি আমার দাবিকে মিথ্যে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হলেন, এর দ্বারা কী এই প্রমাণিত হলো যে, আমার দাবি সঠিক? এই একইভাবে অনেক কিছুই প্রমাণ করা যায়—আমার শরীরটা মাঝে মাঝে অদৃশ্য হয়ে যায় ‘দ্য ইনভিজিবল ম্যান’-এর হঠাৎ কোনও এক অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে আমার দৃষ্টিশক্তি ধ্বংসাত্মক লেজার রশ্মির ভূমিকা নেয়। মাঝে মাঝে হঠাৎ আলো হয়ে যাই। তখন মহাশূণ্যে বিচরণ করতে ভালবাসি । আমার হাতের ছোঁয়ায় কখন যে অন্ধ ফিরে পায় দৃষ্টি, মৃত ফিরে পায় প্রাণ, তার হদিশ আমার নিজেরই অজানা। এমন শ’য়ে শ’য়ে দাবি আমি করতে পারি যার প্রত্যেকটির ক্ষেত্রেই আমি যদি বুক ঠুকে বলি, “আমার যে এ-সব ক্ষমতা নেই, প্রমাণ করতে পারবেন? ” প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই আপনি ব্যর্থ হবেন ।
এতক্ষণে বোধহয় প্রত্যেক পাঠক-পাঠিকারাই ধরতে পারবেন এই ধরনের প্রমাণের ক্ষেত্রে যুক্তির গলদটা কোথায়। এ ক্ষেত্রে দাবীদারকেই তার দাবীর সমর্থনে প্রমাণ হাজির করতে হবে, যদি সে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে লোক ঠকানোর চেষ্টা না কর তার পরিকে যুক্তিগতভাবে বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রমাণ করতে চায়। যতক্ষণ দাবীদার তার দাবির স্বপক্ষে প্রমাণ হাজির করতে না পারছে, ততক্ষণ আমরা সেই দাবি মানতে পারি না।
এখন জ্যোতিষীদেরই দায়িত্ব এটা প্রামাণ করা – কি কি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা, পর্যবেক্ষণ ও যৌক্তিক অনুসন্ধান চালিয়ে তারা এই সিদ্ধান্তে পৌঁচেছেন যে জন্মকালীন এই গ্রহ-নক্ষত্র অমুক অমুক স্থানে থাকলে আজ দাঁড়ি কাটতে গিয়ে গলা কাটবে, পরশু বাচ্চাটার জ্বর হবে, আর ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে রাজেনের রিক্সায় উঠতে হবে, আর ডাক্তারবাবুর পরণে সে-দিন থাকবে নীল সার্ট ও ছাই রঙ্গের প্যান্ট।
তারপর দাবি প্রমাণের দ্বিতীয় পর্যায়ে জ্যোতিষীদের কি করণীয় সে বিষয়ে বহু বছ আগেই পথ-নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী।
“একটা সোজা কথা বলি । ফলিত জ্যোতিষকে যাঁহারা বিজ্ঞানবিদ্যার পদে উন্নীত দেখিতে চাহেন, তাঁহারা এইরূপ করুন। প্রথমে তাঁহাদের প্রতিপাদ্য নিময়টা খুলিয়া বলুন। মানুষের জন্মকালে গ্রহ-নক্ষত্রের স্থিতি দেখিয়া মানুষের ভবিষ্যৎ কোন নিয়মে গণনা হইতেছে, তাহা স্পষ্টভাষায় বলিতে হইবে। কোন গ্রহ কোথায় থাকিলে কি ফল হইবে, তাহা খোলসা করিয়া বলিতে হইবে। বলিবার ভাষা যেন স্পষ্ট হয়—ধরি মাছ না ছুঁই পানি হইলে চলিবে না। তারপর হাজারখানেক শিশুর জন্মকাল ঘড়ি দেখিয়া প্রকাশ করিতে হইবে; এবং পূর্বের প্রদত্ত নিয়ম অনুসারে গণনা করিয়া তাহার ফলাফল স্পষ্টভাষায় নির্দেশ করিতে হইবে। শিশুদের নাম-ধাম পরিচয় স্পষ্ট দেওয়া চাই, যেন যাহার ইচ্ছা, সে পরীক্ষা করিয়া জন্মকাল সম্বন্ধে সংশয় নাশ করিতে পারে। গণনার নিয়ম পূর্ব হইতে বলা থাকিলে যে-কোন ব্যক্তি গণনা করিয়া কোষ্ঠীর বিশুদ্ধি পরীক্ষা করিতে পারিবে। যতদূর জানি, এই গণনায় পাটীগণিতের অধিক বিদ্যা আবশ্যক হয় না। পূর্বে প্রচারিত ফলাফলের সহিত মিলিয়া গেলেই ঘোর অবিশ্বাসীও ফলিত জ্যোতিষে বিশ্বাসে বাধ্য হইবে; যতটুকু মিলিবে, ততটুকু বাধ্য হইবে । হাজারখানা কোষ্ঠীর মধ্যে যদি নয়শ মিলিয়া যায়, মনে করিতে হইবে ফলিত জ্যোতিষে অবশ্য কিছু আছে ; যদি পঞ্চাশখানা মাত্র মেলে, মনে করিতে হইবে তেমন কিছু নাই । হাজারের স্থানে যদি লক্ষটা মিলাইতে পার, আরও ভাল। বৈজ্ঞানিকেরা সহস্র পরীক্ষগারে ও মানমন্দিরে যে রীতিতে ফলাফল গণনা ও প্রকাশ করিতেছেন, সেই রীতি আশ্রয় করিতে হইবে।”
যুক্তিবাদীরা, বিজ্ঞানমনস্করা কোনও কিছুতেই বিশ্বাস বা
অবিশ্বাস নিয়ে অচল অনড় হয়ে বসে নেই। তাঁরা প্রমাণ
পাওয়ার ভিত্তিতেই কোনও কিছুকে গ্রহণ করে থাকেন।
সাধারণ মানুষ যত সহজে কোনও একটি ঘটনা বিশ্বাস করে ফেলেন, যুক্তিবাদীরা, বিজ্ঞানমস্করা তত সহজে বিশ্বাস করতে চান না। ঘটনাটিকে গ্রহণ করার আগে নানা ধরনের পরীক্ষা, পর্যবেক্ষণ, অনুসন্ধান চালান। তারপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রমাণ পাওয়ার পর ঘটানাটিকে বিশ্বাস করেন, সত্য বলে গ্রহণ করেন। সাধারণ মানুষ মনে করে শ্রদ্ধেয়জন, বয়স্কমানুষদের কথায় অবিশ্বাস করাটা নিতান্তই অনুচিত ও অসামাজিক কাজ ৷ কিন্তু বৈজ্ঞানিক মানসিকতার মানুষদের মধ্যে, যুক্তিনিষ্ঠ মানুষদের মধ্যে, এই সামাজিক বোধ, সৌজন্যতা বোধ নেই। কারণ তাঁরা জানেন, যাঁরা মিথ্যাভাষণে পটু, অথবা যাঁরা মাঝে- মধ্যে আষাঢ়ে গল্প ফাঁদতে ভালবাসেন, যাঁরা পরের কাছে শোনা ঘটনাতে বিশ্বাস স্থাপন করে অপরের কাছে ঘটনাটিকে বিশ্বাসযোগ্য করতে নিজেকে প্রত্যক্ষদর্শী বলে জাহির করেন, তাঁরাও কারো না কারো মা-বাবা, আত্মীয়, পড়শী বা শিক্ষক ।
সব কিছুতেই প্রশ্ন তোলা, সংশয় প্রকাশ করা যুক্তিবাদীদের, বিজ্ঞানমনস্কদের বড় গুণ বা দোষ, যাই বলুন। তবে তাঁদের এই সংশয়যুক্ত মানসিকতা শুধুমাত্র অন্যের প্রতিই নয় ; তাঁদের নিজেদের ওপরেও। তাঁরা আপন ইন্দ্রিয়কেও পরিপূর্ণভাবে বিশ্বাস করেন না। কারণ জানেন ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য সব কিছুই বাস্তব সত্য নয়, ইন্দ্রিয়ও প্রতারিত হয়। তাই অনেক সময় বহুভাবে পরীক্ষা পর্যবেক্ষণের পরই কোনও কিছুকে তাঁরা গ্রহণ বা বর্জন করে থাকেন । তাঁরা আপন বুদ্ধিকেও বিশ্বাস করেন না। জানেন, যে বিষয়ের ব্যাখ্যা তাঁর বুদ্ধির অগম্য তার ব্যাখ্যা অন্যের কাজে গম্য হতেই পারে।
জ্যোতিষশাস্ত্রকে বিজ্ঞান বলে প্রমাণ করতে হলে দাবিদার জ্যোতিষীদের প্রথম পদক্ষেপই হওয়া উচিত, বৈজ্ঞানিকদের জ্যোতিষশাস্ত্রের অভ্রান্ততা বিষয়ে সংশয় কাটিয়ে তোলা । এই সংশয় ও প্রশ্নের মীমাংসা যেখানে প্রমাণ হাজির করলে অতি সহজেই হয়ে যায়, সেখানে জ্যোতিষীরা প্রমাণ হাজির না করে নানা কূটকচকচালি, তত্ত্বকথা, নীতিকথা শোনাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন, এবং যাঁরা প্রমাণ ছাড়া কোনও কিছু মেনে নিতে নারাজ তাঁদের গাল পাড়েন। এ-সবই, জ্যোতিষশাস্ত্রের অভ্রান্ততার দাবিদারদের অতি দুর্বলতারই পরিচয়। বাস্তবে জ্যোতিষশাস্ত্র আরামভোগী, অন্নচিন্তাহীন, পরের মাথায় কাঠাল ভেঙে খাওয়া একদল পণ্ডিত নামক প্রতারকদের করে খাওয়ার শাস্ত্র।
এর পরও কেউ কেউ প্রশ্ন করতে পারেন, “জ্যোতিষ যখন শাস্ত্র, তখন তার কোনও একটা বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে। না হলে এই শাস্ত্রটা টিঁকে আছে কী করে? আর এইসব শাস্ত্র এলোই বা কোথা থেকে ?”
এমন প্রশ্ন জ্যোতিষী অ-জ্যোতিষী অনেকেই তোলেন, ১৯৮৭ সালের জুনে ‘বর্তিকা’ পত্রিকায় মহাশ্বেতা দেবী এই প্রশ্ন তুলেছিলেন। আজই এই একই প্রশ্ন নিযে একটা চিঠি পেয়েছি, পত্রদাতা উত্তর চব্বিশ পরগণার সোদপুর শহরের পূর্বপল্লীর উজ্জ্বলকুমার চক্রবর্তী। এই দুই সময়ের ব্যবধানে বহুর কাছ থেকে এই একই প্রশ্ন এসেছে।
“শাস্ত্র যখন, তার একটা বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে”–এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে জানাই চারিটি বেদ, বেদাঙ্গ, জ্যোতিষ সম্পর্কীয় নানা গ্রন্থ নিয়ে যে বিশাল বৈদিক শাস্ত্র, দর্শন ও সাহিত্য গড়ে উঠেছে তাতে সাহিত্য, ধর্মীয় অনুশাসন ইত্যাদি থাকলেও এরই সঙ্গে রয়েছে দেবতার উদ্দেশ্যে নানা স্তোত্র ও প্রার্থনা। স্তোত্র ও প্রার্থনাগুলিতে নিবেদিত হয়েছে যে আকুতি তা হলো—আমাদের পর্যাপ্ত বৃষ্টি দাও, আমাদের শষ্যক্ষেত্রগুলো সমৃদ্ধ কর, গাভীগুলোকে সুদগ্ধবতী কর, ব্যাধিমুক্ত কব, শত্রু বধ কর… বিভিন্ন দেবতার উদ্দেশ্যে এইসব প্রার্থনায় চাওয়া হয়েছে কৃষিভিত্তিক সমাজে মানুষের বিভিন্ন কাম্যবস্তু। সেই সময়ের সমাজে। বিজ্ঞানের মুঠোয় সবকিছুই ছিল প্রায় অধরা। তাই মানুষ ঈশ্বর ও অদৃষ্টের কাছেই নিজেকে । সমৰ্পণ করে বাঁচতে চেয়েছে।
এই বৈদিক শাস্ত্রের ‘অথর্ব বেদে রয়েছে নানা তুকতাক, বশীকরণ, মারণ-উচাটন ইত্যাদি নানা মন্ত্র-তন্ত্র। আছে বৈরনাশ মন্ত্র। আছে এমন অব্যর্থ মন্ত্রের হদিশ যাতে গৃহবন্ধ করা যায়। ফলে ঘরে চুরি হবে না। বিপদ আপদ থাকবে দূরে। গ্রামবন্ধ করার মন্ত্রও আছে অথর্ব বেদে। যাঁরা বেদকে অভ্রান্ত মেনে শাস্ত্র মাত্রেই বৈজ্ঞানিক ভিত্তি খুঁজে পান, তাঁরা গৃহবন্ধের মন্ত্র পড়ে ঘরের গারদহীন জানালা খোলা রেখে, দরজা উন্মুক্ত করে রাত-দিনের , স্বাভাবিক কাজকর্মকে বজায় রেখে কিছুদিন পরীক্ষা করে দেখতে পারেন, চোররা মন্ত্রের জোরে
বাস্তবিকই আপনার আসবাবপত্র ও রত্নালঙ্কার স্পর্শহীন রেখেছে কিনা। বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন শহরে-গ্রামে এই ধরনের পরীক্ষা চালিয়ে সফলতা পেলে আমরা গৃহবন্ধী মন্ত্রের কার্যকারিতা বিষয়ে সন্দেহমুক্ত হতে পারি। এবং এই প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা বা প্রমাণের ভিত্তিতে ‘গ্রামবন্ধ’, ‘শহর বন্ধ’ ইত্যাদি মন্ত্রও কার্যকর হবে, এই প্রত্যাশা নিয়ে আমাদের দেশের গ্রাম, শহর ইত্যাদিকে মন্ত্রে বাঁধতে বাঁধতে বেঁধে ফেলতে পারি গোটা দেশটাকেই। ফলে পুলিশ ও প্রশাসন নামক মাথাভারি বিশাল দপ্তর ট্যাক্সের টাকায় পোষার হাত থেকে আমাদের দেশের ট্যাক্সদানকারীরা বেঁচে যান।
আমরা আরো একটি জরুরি বিষয়ে এই শাস্ত্রকে কাজে লাগাতে পারি। সেটা হলো যুদ্ধ । প্রতি বছর বিশাল প্রতিরক্ষা ব্যয় না করে, যুদ্ধ লাগলে আমরা মারণ-উচাটন মন্ত্রের সাহয্যে বিরুদ্ধ দেশের রাষ্ট্রনায়ক, সেনানায়কদের পটাপট মেরে ফেলতে পারলে আর পায় কে ।
এরপর আমরা ডাক্তারি পড়ার কলেজগুলো এবং হাসপাতাল ও অন্যান্য চিকিৎসাকেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দিতে পারি, যদি দেখি শাস্ত্রকে বিজ্ঞান প্রমাণ করে মন্ত্রে রোগমুক্তি ঘটান যাচ্ছে।
আমাদের দেশে এখনও বহু বৈদিক শাস্ত্রে বিশ্বাসী পণ্ডিত প্রচারক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান আছেন। ওইসব পণ্ডিত বৈদ্ধিকরা বৈদিক শাস্ত্রকে বিজ্ঞান, বেদকে অভ্রান্ত বলে বাণী ছড়াতে তৎপর হলেও নিজেদের ব্যবহারিক জীবনে কখনই ওইসব শাস্ত্রের কথাকে প্রয়োগ করার মত চূড়ান্ত বুদ্ধিহীনতার পরিচয় দেননি।
এর পরেও কিছু জ্যোতিষী প্রশ্ন তোলেন, “হ্যাঁ মানছি, জ্যোতিষ-শাস্ত্রকে বিজ্ঞান বলে এখনও প্রমাণ করা যায়নি, কিন্তু ভবিষ্যতে যে যাবে না, সে কথা কী বুক ঠুকে বলতে পারেন ? বিজ্ঞানের নিত্য-নতুন আবিষ্কার যে প্রতিনিয়ত প্রমাণিত সত্য হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে, স্বীকৃতি লাভের পূর্ব মুহূর্তে সেগুলো স্বীকৃত সত্য ছিল না। তবে ?”
এই ধরনের যুক্তির সাহায্যেও কিন্তু জ্যোতিষশাস্ত্রের অভ্রান্ততা প্রমাণিত হলো না। কারণ এই একই যুক্তিতে কোনও যোগবলে গবেষক অথবা ভূত-গবেষক কিন্তু দাবি করে বসতেই পারেন, “আজকে যা গবেষণার পর্যায়ে রয়েছে, আগামী দিনে সেটা যে বিজ্ঞান বলে পরিচিত হবে না, কে বলতে পারে ?” আর ইতিমধ্যে এই ধরনের দাবি করা শুরুও হয়ে গেছে। এটা আর নিছক হাল্কা-হাসির রসিকতার পর্যায়ে নেই। জাদুকর পি. সি. সরকার (জুনিয়ার) দাবি করেছেন, “আজকে যেটাকে ভৌতিক ভাবছি, আগামী দিনে সেটা হয়ত পরিষ্কার বিজ্ঞান বলে পরিচিত হবে।”
যখন পরিচিত হবে, হবে। তার জন্য প্রমাণ হাজির না করেই এত লম্ফ-ঝম্ফের কি প্রয়োজন ? বৈজ্ঞানিক-মনস্করা যুক্তিবাদীরা খোলা মনের মানুষ। ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণিত হলে ঈশ্বর মেনে নেবে ; জাতিস্মরের অস্তিত্ব প্রামাণিত হলে মেনে নেবে পূর্বজন্ম ; অলৌকিক ক্ষমতার প্রকাশ প্রমাণিত হলে মেনে নেবে অলৌকিকত্ব ; জ্যোতিষশাস্ত্রের অভ্রান্ততা প্রমাণিত হলে জ্যোতিষশাস্ত্রকেও স্বীকৃতি জানাবে। বর্তমানে এর কোনটিই যেহেতু প্রমাণিত হয়নি, তাই মেনে নিতে আপত্তি আছে।
এখানেই যে “বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহু দূর” কথায় শ্রদ্ধাশীলেরা চুপ করে যাবেন, এমনটি প্রত্যাশা করি না। এরপরও তাঁরা তর্ক চালাতে প্রশ্ন করতেই পারেন “বিজ্ঞান ও যুক্তিব সঙ্গে বিশ্বাসের শুধু কী বিবাদই রয়েছে ? বিজ্ঞানে কী বিশ্বাসের কোনও মূল্যই নেই ?”
বিজ্ঞান ও যুক্তির সঙ্গে বিশ্বাসের বিবাদ কোথায় এবং বিশ্বাসের মূল্য যুক্তি ও বিজ্ঞানের কাছে কতখানি, একটু দেখা যাক। আপনি যদি একটা মুদ্রা ওপরের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বিশ্বাস করেন, মুদ্রাটির হেড বা টেল ওপরের দিকে করে পড়বে, তাহলে আপনার বিশ্বাসের মূল্যমান হবে শতকরা একশ ভাগ। যদি আপনি বিশ্বাস করেন মুদ্রাটির হেড ওপরের দিকে মুখ করে পড়বে, তাহলে আপনার বিশ্বাসের মূল্যমান হবে শতকরা পঞ্চাশ ভাগ, টেল পড়বে বিশ্বাস করলেও আপনার বিশ্বাসের মূল্যমান হবে শতকরা পঞ্চাশ ভাগ, কিন্তু আপনি যদি বিশ্বাস করে বসে থাকেন, হেড ও টেল এক সঙ্গেই পড়বে, কিম্বা হেড বা টেল কিছুই পড়বে না, তবে আপনার বিশ্বাসের মূল্যমান দাঁড়াবে শূন্য।
‘৯০-এর কলিকাতা পুস্তক মেলায় আমাদের সমিতির টেবিলের সামনে চেয়ারে দাঁড়িয়ে যখন বহু শ্রোতার বিভিন্ন প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছিলাম, তখন এক আর্চ বিশপ আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “আপনার পিতাই যে আপনার জন্মদাতা, এটা কী আপনি প্রমাণ করতে পারবেন ? এটা তো পুরোপুরি বিশ্বাস-নির্ভর ব্যাপার। তবে অন্য সময় বিশ্বাসে নির্ভরতায় আপনাদের, যুক্তিবাদীদের আপত্তি কেন?”
উত্তরে বলেছিলাম, “জীববিজ্ঞানের নিয়ম অনুসারে আমার একজন জন্মদাতা নিশ্চয়ই আছেন। যুক্তির দিক থেকে তিনি আমার পিতা হতে পারেন, নাও হতে পারেন—এটা নিশ্চয়ই বিশ্বাস করি। কিন্তু আমার পিতাই আমার জন্মদাতা কিনা, এই নিয়ে দীর্ঘ অনুসন্ধান চালান আমার কাছে একান্তই প্রয়োজনহীন। তবে আবারও বলি, আমার জন্মদাতার অস্তিত্ব ছাড়া যে আমার অস্তিত্ব তাত্ত্বিকভাবেই অসম্ভব এটা জানি, বিশ্বাস করি। এখানে বিশ্বাসটা এসেছে জ্ঞান ও যুক্তির পথ ধরেই। কিন্তু আপনি যদি এখন বলে বসেন, অলৌকিক ক্ষমতায় আপনি শূন্যে বিচরণ করতে পারেন বা ইচ্ছেমত সৃষ্টি করতে পারেন যা খুশি তাই; এবং তাতে যদি আমি বিশ্বাস করে বসি, তবে তা হবে জ্ঞান ও যুক্তিবিরোধী অন্ধবিশ্বাস ; এবং সে ক্ষেত্রে আমার বিশ্বাসের মূল্যমান হবে শূন্য ।
জ্যোতিষ, যুক্তি ও বিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা করতে করতে কিছু বিজ্ঞানীর কথা মনে পড়ে গেল। এঁরা সরাসরি জ্যোতিষশাস্ত্রের বিরুদ্ধে একটি ইস্তাহার প্রকাশ করেছিলেন। ইস্তাহারটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৭৫-এর সেপ্টেম্বরে ‘দি হিউম্যানিষ্ট’ পত্রিকায়, সাক্ষরকারী ১৮৫জন বিশিষ্ট বিজ্ঞানীদের মধ্যে ১৮জন নোবেল বিজয়ী। ইস্তাহারটিতে বলা হয়েছিল—
Scientists in a variety of fields have become concerned about the increased acceptance of astrology in many parts of the world We, the undersigned— astronomers, astrophysicists and seientists in other fields-wish to caution the public against the unquestioning acceptance of the predictions and advice given privately and publicly by astrologers Those who wish to believe in astrology should realize that there is not scientific foundation for its tenets
In ancient ume people believed in the predictions and advice of astrologers because astrology was part and parcel of their magical world view They looked upon cclesual objects as abodes or omens of the Gods and, thus, intimately connected with events here on earth. they had no concept of the vast distances form the earth to the planets and stars. Now that these distances can and have been calculated, we can see how infinitesimally small are the gravitational and other effects produced by the distant planets and the far more distant stars. It is simply a mistake to imagine that the forces exerted by stars and planets at the moment of birth can in any way shape our futures. Neither is it ture that the positions of distant heavenly bodies make certain days or periods more favourable to particular kinds of action, or that the sign under which one was born determines one’s compatibility or incompatibility with other people.
Why do we believe in astrology? In these uncertain times many long for the comfort of having guidance in making decisions They would like to believe a destiny predetermined by astral forces beyond their control However, we must all face the world, and we must realize that our futures lie in ourselves, and not in the stars.
One would imagine, in this day of widespread enlightenment and education, that it would be unnecessary to debunk beliefs based on magic and superstition Yet, acceptance of astrology prevades modern society. We are especially distrubed by the continued uncritical dissemination of astrological charts, forecasts, and horo- scopes by the media and by otherwise reputable newspapers, magazines, and book publishers. This can only contribute to the growth of irrationalism and obscurant- ism We believe that the time has come to challenge directly, and forcefully, pretentious claims of astrological charlatans.
It should be apparent that those individuals who continue to have faith in astrology do so in spite of the fact that there is no verified scientific basis for their beliefs, and indeed that there is strong evidence to the contrary
এখানে জ্যোতিষীদের বিরুদ্ধে বিজ্ঞানীদের এই সম্মিলীতে ঘোষণাটির উল্লেখ করলাম এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা বলে। এর বাড়তি কোনও গুরুত্ব আরোপ করছি না, যেহেতু এই ঘোষণা-পত্রে “জ্যোতিষশাস্ত্র কেন বিজ্ঞান নয়” এই প্রসঙ্গ নিয়ে কোনও আলোচনা ছিল না, ছিল না কোনও যুক্তির অবতারণা।
অনেক যুক্তিবাদী আন্দোলনকর্মীরা এই ঐতিহাসিক ঘটনাটিকে এমনভাবে উল্লেখ করেন যেন, ১৮৬জন বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানীর জ্যোতিষশাস্ত্রের বিরোধীতা করাটাই জ্যোতিষশাস্ত্রের ভ্রান্তির অকাট্য প্রমাণ। এই সময় আবেগতাড়িত হয়ে অনেক যুক্তিবাদীও ভুলে যান, জ্যোতিষীদের পক্ষে বা বিপক্ষে কতজন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী বা বিশিষ্ট ব্যক্তি মত প্রকাশ করলেন এমন সংখ্যাতত্ত্বের নিরিখে কোনও মতকে মেনে নেওয়া যুক্তিগতভাবে একস্তুই মূল্যহীন । জ্যোতিষীরা যদি ১৮৬জনের বেশি বিজ্ঞানী জ্যোতিষশাস্ত্রের পক্ষে হাজির করেন, তবে কী জ্যোতিষশাস্ত্রটা রাতারাতি বিজ্ঞান হয়ে যাবে ? এক সময় পৃথিবীর সংখ্যা-গরিষ্ঠ বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করতেন পৃথিবী স্থির, সূর্যই পৃথিবীকে ঘিরে ঘুরপাক খাচ্ছে। সংখ্যাতত্ত্বের ভিত্তিকে গ্রহণীয় মনে করলে আজও আমাদের ভূকেন্দ্রিক বিশ্বতত্ত্বকেই মেনে নিতে হোত। ইতিহাস বলে, বহু ক্ষেত্রেই বিশিষ্ট সংখ্যাগুরুদের মতও আবর্জনার মতই পরিত্যক্ত হয়েছে যুক্তির কাছে, বিজ্ঞানের কাছে।
বিবেকানন্দ জ্যোতিষশাস্ত্রের পক্ষে ছিলেন কী বিপক্ষে, বঙ্কিমচন্দ্র জ্যোতিষশাস্ত্রের বিরুদ্ধে কী বলেছেন, এগুলো “জ্যোতিষশাস্ত্র বিজ্ঞান, কী বিজ্ঞান নয়”—প্রমাণ করার পক্ষে কখনই অকাঠ্য যুক্তি নয়। এগুলোর মধ্যে দিয়ে আমরা শুধু বিবেকানন্দ বা বঙ্কিমচন্দ্র প্রমুখদের জ্যোতিষ বিষয়ে মতামত জানতে পারি মাত্র। ওই বিশিষ্ট ব্যক্তিরা কী বিশ্বাস করেন, সেটা যুক্তির কাছে মূল্যবান নয় ; মূল্যবান—তাঁদের বিশ্বাসের পেছনে ক্রিয়াশীল যুক্তিগুলি।
আবারও বলি, বহু বিজ্ঞান-আন্দোলনকর্মী, যুক্তিবাদ-আন্দোলনকর্মী ও বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদ বিষয়ক পত্র-পত্রিকা যেভাবে বিশিষ্ট বিজ্ঞানীদের, বিশিষ্ট ব্যক্তিদের জ্যোতিষশাস্ত্রের প্রতি অবিশ্বাসকেই জ্যোতিষশাস্ত্রের ভ্রান্তির পক্ষে জোরাল যুক্তি হিসেবে হাজির করতে চাইছেন, জ্যোতিষশাস্ত্রের পক্ষে পাল্টা যুক্তি হেনে সেই জোরাল যুক্তিকে ভাসিয়ে দেওয়া অতি সরল কাজ। আর জ্যোতিষীদের পক্ষ থেকে সে কাজ শুরুও হয়েছে।
জনৈক স্ব-ঘোষিত ডক্টরেট উপাধিধারী জ্যোতিষসম্রাট তাঁর লেখা একটি জ্যোতিষ সংক্রান্ত নধর গ্রন্থে ১৮৬জন বিজ্ঞানীর জ্যোতিষ-বিরোধী মতামতকে ভাসিয়ে দিতে পৃথিবী বিখ্যাত নমস্যঃ বিজ্ঞানী পিথাগোরাস, টলেমী, বরাহমিহির, ট্রাইকোব্রাহা, গ্যালিলিও, কেপলার, ভাস্কর, শ্রীপতি থেকে শুরু করে এ যুগের বহু বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞানীদের জ্যোতিষশাস্ত্রের পক্ষে বলিষ্ঠ মত প্রকাশের কথা উল্লেখ করেছেন।
এক জনপ্রিয় জ্যোতিষী বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় পুরো পাতা জুড়ে বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন মাঝে- মধ্যেই। ওই বিজ্ঞাপনে এ-যুগের অনেক রথী-মহারথী সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবি ও বিজ্ঞানী জ্যোতিষশাস্ত্রের পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন।
এক সময়কার জনপ্রিয় সাপ্তাহিক ‘পরিবর্তন’ পত্রিকার ২৪-৩০ নভেম্বর ১৯৮১ সংখ্যায় জনৈক খ্যাতিনাম জ্যোতিষী তথ্য, প্রমাণ সহ দেখাতে চেয়েছেন- স্বামী বিবেকানন্দ জ্যোতিষবিরোধী কোনও একটি উক্তি করলেও অদৃষ্টবাদে বিশ্বাসী ছিলেন তাঁর ব্যক্তিজীবনে।
জনপ্রিয় মাসিক শিশু-সাহিত্য পত্রিকা ‘শুকতারা’য় ১৩৯১ বঙ্গাব্দের আশ্বিন সংখ্যায় ‘অলৌকিক’ শিরোনামের একটি লেখায় লেখক নটরাজন স্বামী বিবেকানন্দের জীবনের একটি ঘটনার উল্লেখ করে দেখিয়েছেন বিবেকানন্দ যখন বিবেকানন্দ তখনও তিনি অদৃষ্টবাদে বিশ্বাসী ছিলেন ।
জ্যোতিষীদের পক্ষ থেকে এইসব সাক্ষী ও তথ্য হাজির করার পর বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের মতামতকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া, সংখ্যাতত্বকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া বিজ্ঞান-আন্দোলনকর্মী ও কিছু কিছু পত্র-পত্রিকা নিশ্চয়ই অস্বস্তিতে পড়বেন। কিন্তু যুক্তিবাদীদের এতে সামান্যতম অস্বস্তির কারণ দেখি না। কারণ জ্যোতিষীদের ও শুকতারার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তি এ-কথাই বলে—জ্যোতিষীদের কথা থেকে এ-কথাই প্রমাণিত হয়, কিছু কিছু বিজ্ঞান- পেশা, সাহিত্য-পেশা ও অন্যান্য পেশাব বিশিষ্ট মানুষরা জ্যোতিষশাস্ত্রে বিশ্বাসী, কিন্তু তাতে জ্যোতিষশাস্ত্র যে বিজ্ঞান- এ কথা প্রমাণিত হয় না। স্বামী বিবেকানন্দের জ্যোতিষ বিশ্বাস, জ্যোতিষ অবিশ্বাস বা স্ব-বিরোধীতার মধ্য দিয়ে তাঁর ব্যক্তি-বিশ্বাসের পরিচটুকুই আমরা পেতে পারি মাত্র । এর বাড়তি কিছু নয়। কারণ বিবেকানন্দ বা অন্য বিখ্যাত ব্যক্তিত্বর আপন বিশ্বাসের দ্বারা কোনও কিছুই প্রমাণিত হয় না।
অতএব আসুন ব্যক্তি-বিশ্বাসে গুরুত্ব আরোপ না করে যুক্তির নিরিখে বিচারে বসি । জ্যোতিষশাস্ত্র নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণে বসি। দেখি জ্যেতিষীরা জ্যোতিষশাস্ত্রের পক্ষে যে- সব যুক্তির অবতারণা করেন, সেগুলো কতটা গ্রহণযোগ্য অথবা বর্জনীয়। জ্যোতিষশাস্ত্রের পক্ষে হাজির করা যুক্তির বিরুদ্ধে কোনও যুক্তি আছে কিনা, তাও দেখা যাক। জ্যোতিষশাস্ত্রের বিপক্ষে যুক্তির শানিত আক্রমণ চালাতে যুক্তিবাদীদের পক্ষে কোন যুক্তিগুলো অপ্রতিরোধ্য, অব্যর্থ, সেগুলো নিয়েও আলোচনায় আসা যাবে। এসব নিয়ে আলোচনা শুরু করার আগে আমাদের যেটা একান্তই প্রয়োজন, সেটা হলো, যে শাস্ত্রটিকে নিয়ে আলোচনা, সেই শাস্ত্র বিষয়ে মোটামুটি একটা স্পষ্ট ধারনা নেওয়া।
কিছু কথা
♦ শোষণ ব্যবস্থাকে কায়েম রাখতেই মগজ ধোলাই চলছে
♦ দেশপ্রেম নিয়ে ভুল ধারনা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে
♦ গণতন্ত্র যেখানে বর্বর রসিকতা
♦ জনসেবা নিয়ে স্বচ্ছতা থাকা অতি প্রয়োজনীয়
♦ যুক্তিবাদের আগ্রাসন প্রতিরোধে কাগুজে যুক্তিবাদীর সৃষ্টি
♦ যুক্তিবাদবিরোধী অমোঘ অস্ত্র ‘ধর্ম’
♦ যুক্তিবাদী আন্দোলন নিয়ে প্রহসন কতদিন চলবে?
♦ আন্দোলনে জোয়ার আনতে একটু সচেতনতা, আন্তরিকতা
অধ্যায়ঃ এক
♦ পত্র-পত্রিকায় সাড়া জাগানো কিছু ভবিষ্যদ্বাণী প্রসঙ্গে
অধ্যায়ঃ দুই- অশিক্ষা, পদে পদে অনিশ্চয়তা এবং পরিবেশ মানুষকে ভাগ্য নির্ভর করে
♦ অদৃষ্টবাদ যেখানে অশিক্ষা থেকে উঠে আসে
♦ অনিশ্চয়তা আনে ভাগ্য নির্ভরতা
♦ পরিবেশ আমাদের জ্যোতিষ বিশ্বাসী করেছে
♦ মানব জীবনে দোষ-গুণ প্রকাশে পরিবেশের প্রভাব
অধ্যায়ঃ তিন
অধ্যায়ঃ চার
♦ জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতিষশাস্ত্রের পার্থক্য
অধ্যায়ঃ পাঁচ
♦জ্যোতিষশাস্ত্রের বিচার পদ্ধতি
অধ্যায়ঃ ছয়
অধ্যায়ঃ সাত
♦ জ্যোতিষীরা জ্যোতিষশাস্ত্রের পক্ষে যে-সব যুক্তি হাজির করেন
অধ্যায়ঃ আট
♦ জ্যোতিষশাস্ত্রের বিরুদ্ধে বিজ্ঞানের যুক্তি
অধ্যায়ঃ নয়
♦ মানব শরীরে রত্ন ও ধাতুর প্রভাব
অধ্যায়ঃ দশ
♦ জ্যোতিষচর্চা প্রথম যেদিন নাড়া খেল
অধ্যায়ঃ এগারো
♦ কিভাবে বার-বার মেলান যায় জ্যোতিষ না পড়েই
অধ্যায়ঃ বারো
♦ জ্যোতিষী ও অলৌকিক ক্ষমতার দাবিদারদের প্রতি চ্যালেঞ্জ
২য় পর্বঃ কিছু কথা
অধ্যায়- একঃ নস্ট্রাডামুসের সঙ্গে পরিচয়
♦ নস্ট্রাডামুসের ‘আশ্চর্য’ ভবিষ্যদ্বাণী কতটা ‘আশ্চর্যজনক’?
অধ্যায়ঃ দুই
অধ্যায়ঃ তিন
অধ্যায়ঃ চার
অধ্যায়ঃ পাঁচ
অধ্যায়ঃ ছয়
অধ্যায়ঃ সাত
অধ্যায়ঃ আট
অধ্যায়ঃ নয়
অধ্যায়ঃ দশ
অধ্যায়ঃ এগারো
অধ্যায়ঃ বারো
♦ এ-দেশের পত্র-পত্রিকায় নস্ট্রাডামুস নিয়ে গাল-গপ্পো বা গুল-গপ্পো
“অলৌকিক নয়,লৌকিক- ৩য় খন্ড ” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ