ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি সহযোগী সংস্থায় সমন্বয়কারী হিসেবে এবং নিজের শাখা সংগঠনগুলোকে নিয়ে বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী আন্দোলনের মূল স্রোতে কাজ করছে। এই আন্দোলনেরই এক উল্লেখযোগ্য পর্যায় হল- ‘চ্যালেঞ্জ’। প্রচার ও বিজ্ঞাপনের দৌলতে যে গল্পের গরুগুলো গাছে চড়ে বসেছে, তাদের মাটিতে নামিয়ে এনে আবার ঘাস খাওয়ানোর জন্যেই এও ‘চ্যালেঞ্জ’। দোদুল্যমান, সুবিধাভোগী ও ঈর্ষাকাতরদের কাছে চ্যালেঞ্জ ‘অশোভন’ মনে হতেই পারে, কেন না, ‘চ্যালেঞ্জ’ বাস্তবসত্যকে বড় বেশি স্পষ্ট করে তোলে। সাধারণ মানুষের কাছে তাই আজকের জনপ্রিয় প্রশ্ন এটাই- যেখানে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলেই দাবি প্রমাণ করা যায়, বাস্তব সত্যকে জানা যায়, সেখানে চালেঞ্জ গ্রহণে দ্বিধা থাকবে কেন?
পৃথিবীর সমস্ত অলৌকিক ক্ষমতাধর ও জ্যোতিষীদের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে সাধারণত মানুষকে এই উপলব্ধিতে নিয়ে যেতে চাই- অলৌকিকত্ব ও জ্যোতিষশাস্ত্রের অভ্রান্ততার অস্তিত্ব আছে শুধু পত্র-পত্রিকায়, ধর্মগ্রন্থে, বইয়ের পাতায় এবং অতিরঞ্জিত গল্প বলিয়েদের গল্পে। তাই ঘোষণা করছি-
আমি প্রবীর ঘোষ, এই বইটির লেখক এবং ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির সাধারণ সম্পাদক, ঘোষণা করছি বিশ্বের যে কোনও প্রান্তের যে কোনও ব্যক্তি কৌশলের সাহায্য ছাড়া শুধুমাত্র অলৌকিক ক্ষমতার দ্বারা যদি আমার নির্দেশিত স্থানে ও পরিবেশে নিম্নলিখিত যে কোনও একটি ঘটনা ঘটিয়ে দেখাতে সমর্থ হন, তাঁকে এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার ভারতীয় টাকা দিতে বাধ্য থাকব, আমার এই চ্যালেঞ্জ আমার মৃত্যু পর্যন্ত অথবা প্রথম অলৌকিক ক্ষমতাবানকে খুঁজে পাওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
যে ঘটনাগুলোর যে কোনও একটি কৌশল ছাড়া অলৌকিক ক্ষমতার
সাহায্যেই ঘটিয়ে দেখাতে হবে-
১. যোগবলে ১০ মিনিট হৃদস্পন্দন বন্ধ রাখা।
২. যোগবলে শূন্যে ভাসা।
৩. একই সঙ্গে একাধিক স্থানে হাজির হওয়া।
৪. টেলিপ্যাথির সাহায্যে অন্যের মনের খবর জেনে দেওয়া।
৫. জলের ওপর হাঁটা।
৬. এমন একটা বিদেহী আত্মাকে হাজির করা, যার ছবি তোলা যায়।
৭. বিদেহী আত্মা এনে তার সাহায্যে পকেট-বন্দি নোটের নম্বর বলা।
৮. একটা নোট দেখাবো, সেই নোটের হুবহু প্রতিলিপি তৈরি করতে হবে।
৯. অতীন্দ্রিয় ক্ষমতায় আমার বা আমার মনোনীত কোনও ব্যক্তির চলন্ত গাড়ি থামাতে হবে।
১০. মানসিক শক্তির সাহায্যে কঠিন কোনও বস্তুকে বাঁকাতে হবে বা সরাতে হবে।
১১. জলকে পেট্টলে বা ডিজেলে পরিণত করতে হবে।
১২. অলৌকিক ক্ষমতাবলে বা জ্যোতিষশাস্ত্রের সাহায্যে আমার দেওয়া দশটি ছক বা হাতেরত ছাপ দেখে প্রত্যেক ছক বা হাতের ছাপের অধিকারীর অতীত সম্বন্ধে পাঁচটি করে প্রশ্নের মধ্যে অন্তত চারটি করে প্রশ্নের নির্ভুল উত্তর দিতে হবে।
১৩. অতীন্দ্রিয় দৃষ্টির সাহায্যে একটি খামে বা বাক্সে রাখা জিনিসের সঠিক বর্ণনা দিতে হবে।
চ্যালেঞ্জ গ্রহণকারীদের নিম্নলিখিত শর্তগুলো মানতে হবে-
১. আমার চ্যালেঞ্জের অর্থ গ্রহণ করুন বা না করুন, আমার চ্যালেঞ্জ যিনি গ্রহণ করতে ইচ্ছুক, তাঁকে আমার কাছে অথবা আমার মনোনীত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে জামানত হিসেবে পাঁচ হাজার টাকা জমা দিতে হবে। তিনি জিতলে আমার চ্যালেঞ্জের টাকাসহ তাঁর জামানতের টাকাও ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
জামানতের ব্যবস্থা রাখার একটিমাত্র উদ্দেশ্য, আমার সময় ও অকারণ শ্রম বাঁচানো, সেই সঙ্গে যারা শুধুমাত্র সস্তা প্রচারের মোহে অযথা আমাকে অস্বস্তিকর ব্যস্ততার মধ্যে ফেলার জন্যে এগুতে চান, তাঁদের প্রতিহত করা।
২. যার নামে জামানতের অর্থ জমা হবে, একমাত্র তিনিই চ্যালেঞ্জ গ্রহণকারী হিসেবে গণ্য হবেন।
৩. চ্যালেঞ্জ-গ্রহণকারী ছাড়া কারও সঙ্গেই চ্যালেঞ্জ বিষয়ে কোনও রকম আলোচনা চালানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কেবলমাত্র চ্যালেঞ্জ গ্রহণকারী চ্যালেঞ্জ বিষয়ে পরবর্তী আলোচনায় আমার সঙ্গে অথবা আমার মনোনীত ব্যক্তির সঙ্গে বসতে পারবেন বা যোগাযোগ করতে পারবেন।
৪. চ্যালেঞ্জ গ্রহণকারীকে আমার মনোনীত ব্যক্তির সামনে দাবির প্রাথমিক পরীক্ষা দিতে হবে।
৫. চ্যালেঞ্জ-গ্রহণকারী দাবির প্রাথমিক পরীক্ষায় কোনও কারণে হাজির না হলে অথবা দাবি প্রমাণ করতে ব্যর্থ হলে, তাঁর জামানতের অর্থ বাজেয়াপ্ত করা হবে।
৬. চ্যালেঞ্জ-গ্রহণকারী দাবির প্রাথমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে আমি সর্বসমক্ষে চূড়ান্ত ও শেষ পরীক্ষা গ্রহণ করব।
পরীক্ষার চ্যালেঞ্জ-গ্রহণকারী তাঁর ক্ষমতা প্রমাণ করতে পারলে আমি পরাজয় স্বীকার করে নেব। একই সঙ্গে ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি তাদের সমস্ত রকম অলৌকিক ও জ্যোতিষ-বিরোধী প্রচার অভিযান ও কাজকর্ম থেকে বিরত থাকবে।
আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, আমি সেইসব অলৌকিক ক্ষমতাগুলোই দেখাতে বলেছি যেগুলো নিয়ে বিভিন্ন অবতারদের বহু অলৌকিক কাহিনী প্রচলিত রয়েছে বা কিংবদন্তি রূপ পেয়েছে।
একই সঙ্গে পাঠক-পাঠিকাদের প্রতি বিনীত অনুরোধ, জ্যোতিষী ও অলৌকিক ক্ষমতার নামধারী প্রতারকদের প্রতারনা বন্ধে সচেষ্ট হোন। আপনাদের সব রকম সহযোগিতা করার জন্য আমাদের সমিতি এবং আমি সব সময়ই থাকব, প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। এই ধরনের প্রতারনা বন্ধ কোনও একটি বা গুটিকয়েক সংগঠন বা ব্যক্তির কাজ হতে পারে না। এ-কাজ প্রতিটি সমাজ-সচেতন মানুষের কাজ। আপনাদের সক্রিয় সহযোগিতা ও সক্রিয় প্রতিরোধই পারে গোটা সমাজকে আন্দোলিত করতে। মানুষ বঞ্চিত হতে হতে আজ বারুদের স্তুপ হয়ে রয়েছে। আপনাদের সোচ্চার আন্দোলনই পারে সেই বারুদের স্তুপে আগুন লাগাতে, যে আগুনে বুজরুক ও তার পৃষ্ঠপোষকরা জ্বলে-পুড়ে ধ্বংস হয়ে যাবে।
রহস্যবাদ, কুসংস্কার ও অধ্যাত্মবাদের বিরুদ্ধে এই সংগ্রামই অসাম্যের সমাজ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সুসাংস্কৃতিক আগ্রাসন এবং অবশ্যই সাম্যের সমাজ ব্যবস্থা গড়ার প্রথম ধাপ। এ’কথাও অবশ্যই মনে রাখতে হবে, সাম্যের সমাজ ব্যবস্থা গড়ে ওঠার আগে, গড়ে ওঠার সময় ও গড়ে ওঠার প্রে, অর্থাৎ সব সময়ই সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে অপ্রয়োজনীয় জ্ঞানে ছুটি দিতে চায়, তাদের সেই সাম্যের কাঠের প্রাসাদে ঘুণ পোকা হয়ে আসে রহস্যবাদ ও অধ্যাত্মবাদই। ভোগবাদকে প্রতিষ্ঠিত করতেই ওরা আসে।
যে নতুন সাংস্কৃতিক আন্দোলনের আগুন আজ ভারতে জ্বলছে, তাকে ব্যপ্ত ও প্রজ্বলিত রাখার দায়িত্ব নিতে হবে সাম্ন্যের সুন্দর সমাজ গড়তে চাওয়া এবং সেদি সমাজকে পালন ও পুষ্ট করতে চাওয়া প্রতিটি মানুষকেই।
আসুন, সংঘর্ষ ও নির্মাণে স্বপ্নের সমাজ গড়ার লক্ষ্যের দিকে দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে যাই।
“অলৌকিক নয়,লৌকিক- ৪র্থ খন্ড ” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ
অধ্যায়ঃ এক
অধ্যায়ঃ দুই
অধ্যায়ঃ তিন
♦ আত্মার রূপ নিয়ে বার রাজপুত্তুরের তের হাঁড়ি
অধ্যায়ঃ চার
♦ এ’দেশের কিছু আদিবাসী ও বিদেশের কিছু অধিবাসীদের আত্মা-চিন্তা
অধ্যায়ঃ পাঁচ
♦ ‘সানন্দা’র দপ্তরে প্ল্যানচেটের আসর
♦ ঘাড়ে চাপল প্ল্যানচেটের আত্মা
♦ রবীন্দ্রনাথের প্ল্যানচেট-চর্চা
♦ স্বামী অভেদানন্দের সামনে আত্মা লিখল শ্লেটে
♦ ভূতের ভরে পটকা মেয়েও পেয়ে যায় হাজার হাতির বল
♦ চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে ভূতে পাওয়া কি
অধ্যায়ঃ ছয়
♦ ভিড় করে আসা প্রশ্নমালার উৎপত্তি
♦ থিওজফিক্যাল সোসাইটির প্রেতচর্চা
♦ উনিশ শতকের সেরা মিডিয়ামদ্বয় ও দুই শৌখিন জাদুকর
♦ থিওজফস্টদের ওপর আঘাত হেনেছিল যে বই
♦ থিওজফিস্টদের প্রতি লেখা বিজ্ঞানী হাক্সলের মজার চিঠি
অধ্যায়ঃ সাত
♦ যুক্তির নিরিখে ‘আত্মা’ কি অমর?
অধ্যায়ঃ আট
♦ অসাম্যের বিষবৃক্ষের মূল শিকড় অধ্যাত্মবাদ অধ্যাত্মবাদের মূল শিকড় আত্মা
অধ্যায়ঃ নয়
♦ সিস্টেম’কে পুষ্ট করতেই টিনের তলোয়ার ঝন-ঝন বাজে “আত্মা থাক, কুসংস্কার দূর হোক”
♦ সমাজ কাঠামোর সিংহাসনের চারটি পায়া কারা
অধ্যায়ঃ দশ
♦ হিন্দু ছাড়া কেউ জন্মান্তর মানে না
অধ্যায়ঃ এগারো
♦ আত্মার অস্তিত্বে বিশাল আঘাত হেনেছিল চার্বাক দর্শন
অধ্যায়ঃ বারো
অধ্যায়ঃ তেরো
♦ তবু জাতিস্মর বার বার ঘুরে ফিরে আসে
অধ্যায়ঃ চোদ্দ
♦ জাতিস্মর কাহিনীর প্রথম পর্যায়
♦ জাতিস্মর তদন্ত- ২ : চাকদার অগ্নিশিখা
♦ জাতিস্মর তদন্ত- ৩ : সুনীল সাক্সেনা
♦ জাতিস্মর তদন্ত- ৪ : যমজ জাতিস্মর রামু ও রাজু
♦ জাতিস্মর তদন্ত- ৫ : পুঁটি পাত্র
♦ জাতিস্মর তদন্ত- ৬ : গুজরাটের রাজুল
অধ্যায়ঃ পনের- জাতিস্মর কাহিনীর দ্বিতীয় পর্যায়
♦ জাতিস্মর তদন্ত- ৭ : জ্ঞানতিলক
♦ জাতিস্মর তদন্ত- ৯ : ত্রিশের দশকে কলকাতায় জাতিস্মর
অধ্যায়ঃ ষোল- অবতারদের পুনর্জন্ম
♦ জাতিস্মর তদন্ত-১০ : সত্য সাঁইবাবা
♦ জাতিস্মর তদন্ত- ১১ : দলাই লামা
অধ্যায়ঃ সতের
♦ জ্যোতিষী ও অলৌকিক ক্ষমতার দাবীদারদের প্রতি ১৫০,০০০ টাকার চ্যালেঞ্জ