জ্যোতিষে যাঁরা বিশ্বাসী, তাঁদের অনেকেই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা শোনান, জ্যোতিষীদের ভবিষ্যৎবাণী মিলে যাওয়ার গায়ে কাঁটা দেওয়া গল্প। বাস্তবিকই তাঁদের অনেক অভিজ্ঞতাতেই যেমন কল্পনার রঙ মেশান থাকে, আবার কিছু কিছু অভিজ্ঞতায় থাকে বাস্তবের ছোঁয়া। কেন কিছু কিছু ক্ষেত্রে মেলে, মেলার সঙ্গে বাস্তবিকই জ্যোতিষশাস্ত্রের সম্পর্ক আছে কিনা, জ্যোতিষশাস্ত্রের সাহায্য ছাড়াই কীভাবে মেলান যায় এবং জ্যোতিষীদের এই মিলিয়ে দেবার পেছনে ফাঁক আর ফাঁকিই বা কোথায়, সেই প্রসঙ্গে ধীরে ধীরে পর্যায়ক্রমে নিশ্চয়ই আসব। আসব জ্যোতিষীরা এই শাস্ত্রের পক্ষে কি কি যুক্তির অবতারণা করেন; যুক্তিগুলো কতখানি গ্রহণযোগ্য; জ্যোতিষশাস্ত্রের বুজবুকির বিরুদ্ধে যুক্তিগুলো কী কী, এইসব প্রসঙ্গ নিয়েও আলোচনায় আসব আমরা। কিন্তু যে শাস্ত্রটিকে নিয়ে এই বিতর্ক, সেই শাস্ত্র সম্বন্ধে মোটামুটি একটা ধারণা রাখা সবার আগে একান্তই প্রয়োজন। এই প্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে আলোচনাটা গোড়াতেই সেরে নিই আসুন।
জ্যোতিষীরা জাতকের জন্ম সময় জানার পর সেই সময়ে গ্রহ-নক্ষত্রগুলো কোথায় অবস্থান করছিল বের করেন। গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান জানার জন্য তাঁরা বিভিন্ন পত্রিকা বা এফিমেরিসের সাহায্য নিয়ে থাকেন। তারপর এই গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থানের একটি চিত্র বা ছক তৈরি করা হয়। এই জন্মছক বা রাশিচক্রের ওপর নির্ভর করে জ্যোতিষীরা জাতকের ভবিষ্যৎ গণনা করে থাকেন। এ-ছাড়া আরও এক শ্রেণীর জ্যোতিষী আছেন যাঁরা জাতকের হাতের রেখা দেখে ভবিষ্যদ্বাণী করেন। এই দুই ধরনের ভাগ্য গণনা-পদ্ধতি বেশি জনপ্রিয় । এর বাইরে কেউ কেউ আবার কপাল দেখে, কান দেখে, এমন কি পায়ের রেখা দেখেও ভবিষ্যদ্বাণী করে থাকেন। তবে এই শ্রেণীর ভবিষ্যৎ-বক্তারা সংখ্যায় অতি নগণ্য। আমবা জ্যোতিষশাস্ত্রের জনপ্রিয় দুই পদ্ধতি, রাশিচক্র ও হস্তরেখা নিয়ে আলোচনা করব। প্রথমে আসা যাক রাশিচক্রে।
প্রতিটি জন্ম-পত্রিকার, ঠিকুজীর বা কোষ্ঠীর শীর্ষে আঁকা থাকে একটি ছক বা রাশিচক্র। রাশিচক্রে রয়েছে বারোটি ঘর। কাল্পনিক রেখায় ভাগ করা বারোটি ঘর প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীব আকাশপটের ক্রান্তিবৃত্তের মানচিত্র। বিষুবরেখার উত্তরে কল্পনা করা হয়েছে মেষ, বৃষ, মিথুন, কর্কট, সিংহ ও কন্যারাশি। বিষুবরেখার দক্ষিণে কল্পনা করা হয়েছে তুলা, বৃশ্চিক, ধনু, মকর, কুম্ভ ও মীনরাশি ।
রাশিচক্রের ৩৬০° ডিগ্রিকে মোট ১২টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। অর্থাৎ, প্রতিটি
কাল্পনিক বারো ভাগের যে যে ভাগে যে যে নক্ষত্রগুলোকে দেখা গেল সেই নক্ষত্রগুলোকে কাল্পনিক রেখা জুড়ে দিতে জ্যোতিষীরা কল্পনায় দেখতে পেলেন এক একটি চিত্র। এই চিত্রগুলোর সঙ্গে যে যে প্রাণী বা বস্তুর মিল খুঁজে পেলেন, সেই নামেই সেই ভাগের ঘরটির রাশির নামকরণ করলেন ।
ভারতীয় মতে রাশির আকৃতি
১। মেঘ মেষাকৃতি ।
২। বৃষ বৃষাকৃতি
৩। মিথুন একাসনস্থিত স্ত্রী ও পুরুষ ।
8 কর্কট কর্কটাকৃতি ।
৫। সিংহ সিংহাকৃতি ।
৬। কন্যা নৌকাতে চড়া, অগ্নি ও শস্যধারিণী কুমারী।
৭ তুলা দাঁড়িপাল্লার আকৃতি।
৮। বৃশ্চিক কাঁকড়াবিছার আকৃতি।
৯। ধনু ঊর্ধ্বভাগ ধনুকধারী পুরুষ ও নিম্নভাগ অশ্বাকৃতি। মকরাকৃতি ।
১০। মকর মকরাকৃতি।
১১। কুম্ভ কাঁধে ঘট নিযে পুরুষ।
১২। মীন পরস্পর বিপরীত পুচ্ছ স্পর্শ করা দুটো মাছ।
জ্যোতিষীরা তাঁদের কল্পনাকে আরো প্রসারিত করে বিভিন্ন রাশির জাতকের মধ্যে রাশির কল্পনিক আকৃতির দোষ-গুণ আরোপ করে বসলেন ।
নক্ষত্র
জ্যোতিষীদের ধারণায রাশির বারো ভাগে রযেছে ২৭টি প্রধান নক্ষত্র। এই নক্ষত্রগুলোও পৃথিবী এবং জীবজগতের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করে। এই ২৭টি নক্ষত্র হলো (১) অশ্বিনী, (২) ভরণী, (৩) কৃত্তিকা, (৪) রোহিণী, (৫) মৃগশিরা, (৬) আর্দ্রা, (৭) পুনর্বসু, (৮) পুষ্যা, (৯) অশ্লেষা, (১০) মঘা, (১১) পূর্বফাল্গুনী, (১২) উত্তরফাল্গুনী, (১৩) হস্তা, (১৪) চিত্রা, (১৫) স্বাতী, (১৬) বিশাখা, (১৭) অনুরাধা, (১৮) জ্যেষ্ঠা, (১৯) মূলা, (২০) পূর্বাষাঢ়া, (২১) উত্তরষাঢ়া, (২২) শ্রবণা, (২৩) ধনিষ্ঠা, (২৪) শতভিষা, (২৫) পূর্বভাদ্রপদ, (২৬) উত্তরভাদ্রপদ, (২৭) বেরতী।
এই ২৭টি নক্ষত্র কিন্তু ২৭টি নক্ষত্র মাত্র নয়। এক বা একাধিক নক্ষত্র নিয়ে এই ২৭টি নক্ষত্রের নামকরণ হয়েছে। যেমন—
১। অশ্বিনী তিনটি নক্ষত্র।
২। ভরণী তিনটি নক্ষত্র ।
৩। কৃত্তিকা ছয়টি নক্ষত্র ।
৪। রোহিণী পাঁচটি নক্ষত্র।
৫। মৃগশিরা তিনটি নক্ষত্র ।
৬। আর্দ্রা একটি নক্ষত্র।
৭। পুনর্বসু দুটি নক্ষত্র
৮। পুষ্যা তিনটি নক্ষত্র।
৯। অশ্লেষা ছয়টি নক্ষত্র ।
১০। মঘা পাঁচটি নক্ষত্র
১১। পূর্বফাল্গুনী দুটি নক্ষত্র
১২ । উত্তরফাল্গুনী দুটি নক্ষত্র
১৩। হস্তা পাঁচটি নক্ষত্র
১৪। চিত্রা একটি নক্ষত্র
১৫। স্বাতী একটি নক্ষত্র
১৬। বিশাখা চারটি নক্ষত্র
১৭। অনুরাধা ছয়টি নক্ষত্র
১৮। জ্যেষ্ঠা আটটি নক্ষত্র
১৯। মূলা বারটি নক্ষত্র
২০। পূর্বাষাঢ়া চারটি নক্ষত্র
২১। উত্তরষাঢ়া দুটি নক্ষত্র
২২। শ্রবণা তিনটি নক্ষত্র
২৩। ধনিষ্ঠা পাঁচটি নক্ষত্র
২৪। শতভিষা শত নক্ষত্র
২৫। পূর্বভাদ্রপদ দুটি নক্ষত্র
২৬। উত্তরভাদ্রপদ দুটি নক্ষত্র
২৭ । বেরতী বত্রিশটি নক্ষত্র
নক্ষত্রের বৈশিষ্ট্য বিচার
জ্যোতিষীদের বিচারে মোটামুটিভাবে নক্ষত্রদের প্রভাব জাতকের চরিত্রের উপব যে বৈশিষ্ট্যের সৃষ্টি করে তার একটি তালিকা দিলাম।
অশ্বিনী—সুন্দর তনু, সৌন্দর্যের পূজারী, সর্বজনপ্রিয়, চতুর, শিক্ষিত, ধনশালী, অবিচলিত, পেশায় চিকিৎসক, অধ্যাপক বা ইঞ্জিনিয়ার।
ভরণী—দৃঢ়, সত্যবাদী, স্বাস্থ্যবান, স্ফূর্তিময় জীবন, শিক্ষিত ও সম্পদশালী।
কৃত্তিকা—পেটুক, কামুক, বলবান, নীতিবাগীশ, প্রসিদ্ধ, রাজপ্রিয় ও উচ্চ ক্ষমতালোভী। প্রথম জীবনে কষ্ট করতে হয়।
রোহিণী—সত্যবাদী, সুতার্কিক, দৃঢ়চিত্ত, দাতা, আকর্ণবিস্তৃত নয়ন ।
পুনর্বসু – সুন্দর স্বভাব, চতুব, অকর্মণ্য, পানরত, হিংস্র ও স্পষ্টবক্তা।
পুষ্যা – আইনজ্ঞ, কর্তব্যপরায়ণ, সু-চরিত্র, শিক্ষিত, সর্বজনপ্রিয়, দৃঢ়, সংকল্পে অটল, বিদ্বান ও সাহিত্যিক হন ।
অশ্লেষা – বলবান, প্রফুল্ল, বিজ্ঞ, অকৃতজ্ঞ, খর-চিহ্বা।
মঘা – ধনী, ঈশ্বরভক্ত, উচ্চাকাঙ্ক্ষী, চঞ্চল, কুসুম ও সুগন্ধপ্রিয় ও বহু দাস-দাসীর অধিকারী।
পূর্বফাল্গুনী – দয়ালু, মধুরভাষী, দূরদ্রষ্টা, উচ্চপদধারী, দুর্বল, পেশায় বণিক বা ব্যবসায়ী
উত্তরফাল্গুনী – চিন্তাশীল, সত্যবাদী, রগচটা, দৃঢ়চিত্ত ও অতি পেটুক।
হস্তা – শিক্ষিত, সংকল্পে দৃঢ়, সৌন্দর্যের পূজারী, কৃতজ্ঞ, মধ্যবয়স থেকে ধনবান, লজ্জাশূন্য, নির্দয় ও প্রচ্ছন্ন শক্তিশালী ।
চিত্রা – সু-নেত্র, মানানসই তনু, সু-চরিত্র, ভূষণভক্ত, স্থূল, ভাঁড়, বিষণ্ণ, ধীরস্থির, অভিনেতা, দয়ালু ও শ্রীযুক্ত।
স্বাতী – মনোরমস্বভাব, দয়ালু, ধার্মিক, বিজ্ঞ, পিতৃ-মাতৃভক্ত, সু-কণ্ঠ, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, রাষ্ট্রনেতা ।
বিশাখা – হিংসুক, কৃপণ, সংযতবাক, কৌতূহলী, ক্রোধী, ধার্মিক।
অনুরাধা – ধনবান, সজ্জন কর্তৃক প্রশংসিত, কর্তব্যপরায়ণ, সু-কেশ, রক্তিম নেত্র, তাম্বুলপ্রিয়, উগ্র যৌনক্ষুধা, ভ্রমণপটু।
জ্যেষ্ঠা – বিদ্রোহী, ক্রোধী, কর্কশভাষী, দরিদ্র, মিথ্যাবাদী, কৃপাশীল, স্বপ্নবন্ধু, মুগ্ধকর বাক্যবিদ ও প্রফুল্ল।
মূলা – গর্বিত, ধনী, দৃঢ়মনা, সহজ প্রেমিক, রগচটা, স্বজনহীন ও নীতিপরায়ণ ।
পূর্বাষাঢ়া – দীর্ঘদেহী, গর্বিত, প্রেমময়ী ভার্যার পতি, দূরদ্রষ্টা, মাতৃভক্ত, সত্যবাদী, ভ্রমণবিলাসী, রমণীপ্রিয়, ধনবান
উত্তরাষাঢ়া – তেজস্বী, দীর্ঘনাসিকা, কৃতজ্ঞ, সমাজপ্রিয়, সরল, ধার্মিক, পিতৃমাতৃভক্ত, ভোজনবিলাসী, অত্মীয়বৎসল ।
শ্রবণা – পণ্ডিত, খ্যাতিমান, সময়োপযোগী, রতিপটু, নারী-আসক্ত, সুগন্ধ-প্ৰীতি, সৌন্দর্য-পূজারী, ভদ্র ও নম্র।
ধনিষ্ঠা – নির্জীব, স্বাধীনচেতা, মহৎ, বিপ্লবী, উচ্চমতাবলম্বী, গুরুজনপ্রিয় ও সঙ্গীতাসক্ত।
শতভিষা – আইনবিদ, নিজ সংকল্পে অটল, সত্যবাদী, কর্কশভাষী, শিক্ষিত, উদ্যমশীল, বুদ্ধিমান, আস্থাবান ও আমলাপূজক, অতি সাহসী, নিষ্ঠুর, চতুর, শত্রুর প্রতি নিদারুণ ।
পূর্বভাদ্রপদ – বিষণ্ণ, নারীর বশীভূত, রমণীসম্পদ প্রত্যাশী, সুচারুবাক, শিক্ষিত, নাস্তিক, হিংস্র ও পরশ্রীকাতর।
উত্তরভাদ্রপদ – দয়ালু, বাকপটু, চতুর, তার্কিক, নীতিহীন ।
রেবতী – সুন্দরদেহী, বীর, অন্যেব সম্পদ-লাভ, নারীব প্রতি আসক্তি, সহজে বশীভূত, সুন্দর বচন, অনিন্দ্যনীয়।
পাশ্চাত্য মতে রবির সঙ্গে রাশি বিচার
পাশ্চাত্য মতে জাতকের জন্ম সময়ে রবি যে রাশিতে অবস্থান করে সেটাই জাতকের বাশি। বছরের বিভিন্ন সময়ে রবির ১২টি রাশিতে অবস্থান এইভাবে সূচীত হয়-
রাশির নাম রবির অবস্থান কাল
১। মেষে রবি থাকে – ২১ মার্চ থেকে ২০ এপ্রিল
২। বৃষে রবি থাকে – ২১ এপ্রিল ২০ মে
৩। মিথুনে রবি থাকে – ২১ মে থেকে ২০ জুন
৪। কর্কটে রবি থাকে – ২১ জুন থেকে ২০ জুলাই
৫। সিংহে রবি থাকে – ২১ জুলাই থেকে ২১ আগস্ট
৬। কন্যায় রবি থাকে – ২২ আগস্ট থেকে ২২ সেপ্টেম্বর
৭। তুলায় রবি থাকে – ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২২ অক্টোবর
৮। বৃষ্টিকে রবি থাকে – ২৩ অক্টোবর থেকে ২২ নভেম্বর
৯। ধনুতে রবি থাকে – ২৩ নভেম্বর থেকে ২০ ডিসেম্বর
১০। মকরে রবি থাকে – ২১ ডিসেম্বর থেকে ১৯ জানুয়ারী
১১। কন্তে রবি থাকে – ২০ জানুয়ারী থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারী
১২। মীনে রবি থাকে – ১৯ ফেব্রুয়ারী থেকে ২০ মার্চ
রাশি নির্ণয়ের ভারতীয় পদ্ধতি
ভারতীয় জ্যোতিষীদের মতে রাশি ও চন্দ্রের সঙ্গে সম্পর্ক প্রত্যক্ষ ও নিবিড়। কোনও জাতকের জন্মরাশি নির্ণীত হয় জন্মকালীন চন্দ্রের অবস্থানের উপর। জাতকের জন্মকালীন চন্দ্র যে নক্ষত্রযুক্ত ছিল, জাতকের জন্ম-নক্ষত্রও সেই নক্ষত্রই হবে।
জাতকের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করে প্রধানত যে গ্রহগুলি
জাতকের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে নক্ষত্রের চেয়ে গ্রহগুলির ভূমিকা প্রবল বলে জ্যোতিষীরা কল্পনা করেন। জন্মকালীন গ্রহ-অবস্থানের উপর জাতকের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে যায় বলে জ্যোতিষীরা কল্পনা করেন।
জ্যোতিষীদের মতে ৯টি গ্রহ আমাদের ভাগ্যকে নির্ধারিত ও নিযন্ত্রিত করে । গ্রহগুলো হলো (১) বুধ, (২) শুক্র, (৩) মঙ্গল, (৪) বৃহস্পতি, (৫) শনি, (৬) রবি, (৭) চন্দ্ৰ, (৮) রাহু, (৯) কেতু।
গ্রহ-অবস্থান ও জ্যোতিষ-বিচার, স্বক্ষেত্র, ত্রিকোশ, তুঙ্গস্থান, নীচস্থ
স্বক্ষেত্র
জ্যোতিষীদের কল্পনায় জাতকের জন্মকালে গ্রহ স্বক্ষেত্রে থাকলে গ্রহটি জাতকের ভাগ্যের ক্ষেত্রে ভাল বলে বিবেচিত হয়। গ্রহ মূল-ত্রিকোণে থাকলে অধিকতর ভাল ফল দেয় এবং তুঙ্গস্থানে সবচেয়ে ভাল ফল দিয়ে থাকে। গ্রহ নীচস্থ থাকলে খারাপ ফল দেয়।
জ্যোতিষীরা স্বক্ষেত্র বা নিজেদের ক্ষেত্র অথবা গৃহ বা ঘর কল্পনা করেছেন বিভিন্ন গ্রহের কোন্ গ্রহের স্বক্ষেত্র কোনটি নীচের ছবিটি দেখলেই পরিষ্কার বোঝা যাবে।
এখানে আমরা দেখছি যে, প্রতিটি গ্রহের দুটো কবে ঘর স্বক্ষেত্র। শুধু চন্দ্র ও রবির স্বক্ষেত্র একটি করে ঘর ।
জ্যোতিষীরা কল্পনা করেন গ্রহগুলো তাদের স্বক্ষেত্রের অধিপতি। অর্থাৎ
মেষ ও বৃশ্চিকরাশির অধিপতি মঙ্গল ৷
বৃষ ও তুলারাশিব অধিপতি শুক্র ।
মিথুন ও কন্যারাশির অধিপতি বুধ ।
কর্কটরাশির অধিপতি হল চন্দ্ৰ ।
সিংহরাশির অধিপতি হল রবি।
ধনু ও মীনরাশির অধিপতি হল বৃহস্পতি।
মকর ও কুম্ভরাশির অধিপতি হল শনি ।
নীচের ছবি দেখলে পরিষ্কার বোঝা যাবে।
ত্রিকোণ
জ্যোতিষশাস্ত্রে ত্রিকোণ বলতে বোঝায় লগ্ন, নবম ও পঞ্চম এই তিনটি ভাবকে। লগ্ন, চতুর্থ, সপ্তম ও দশম রাশির নাম-কেন্দ্র।
আবার গ্রহরা কিছু ঘরে থাকতে খুবই ভালবাসে এবং জাতককে ভাল ফল দেয় বলে জ্যোতিষীরা কল্পনা করেন। গ্রহদের ভালবাসার অবস্থানকে বলা হয় মূল-ত্রিকোণ।
তুঙ্গ-স্থান
তুঙ্গ-স্থানে গ্রহগুলো সাধারণভাবে শুভফলদানকারী বলে জ্যোতিষীরা বিশ্বাস করেন ।
মঙ্গলগ্রহের তুঙ্গ-স্থান হল মকররাশির ২৮° ডিগ্রির মধ্যে।
শুক্র গ্রহের তুঙ্গ-স্থান হল মীনরাশির ২৭° ডিগ্রির মধ্যে।
বুধ গ্রহের তুঙ্গ-স্থান হল কন্যারাশির ১৫° ডিগ্রির মধ্যে।
বৃহস্পতি গ্রহের তুঙ্গ-স্থান হল কর্কটরাশির ৫° ডিগ্রির মধ্যে।
চন্দ্রগ্রহের তুঙ্গ-স্থান হল বৃষরাশির ৩০° ডিগ্রির মধ্যে।
রবি গ্রহের তুঙ্গ-স্থান হল মেষরাশির ১০° ডিগ্রির মধ্যে।
শনি গ্রহের তুঙ্গ-স্থান হল তুলারাশির ২০° ডিগ্রির মধ্যে।
নীচের ছবি দেখুন :-
নীচস্থ স্থান
গ্রহরা বিশেষ বিশেষ রাশিতে খুবই দূর্বল বলে কল্পনা করা হয়েছে। দূর্বলতা হেতু ফলও খারাপ দিয়ে থাকে। যে গ্রহ যে রাশিতে দূর্বল বা খারাপ ফল দিয়ে থাকে, তাকে বলা
হয় গ্রহটির নীচস্থ ঘর। ছবিতে গ্রহগুলোর নীচস্থ ঘরের পরিচয় দিলাম।
মঙ্গল গ্রহের নীচ-স্থান হল কর্কটরাশির ২৮° ডিগ্রির মধ্যে।
শুক্র গ্রহের নীচ-স্থান হল কন্যারাশির ২৭° ডিগ্রির মধ্যে।
বুধ গ্রহের নীচ-স্থান হল মীনরাশির ১৫° ডিগ্রির মধ্যে।
বৃহস্পতি গ্রহের নীচ-স্থান হল মকররাশির ৫° ডিগ্রির মধ্যে।
চন্দ্র গ্রহের নীচ-স্থান হল বৃশ্চিকরাশির ৩° ডিগ্রির মধ্যে।
ৰবি গ্রহেব নীচ স্থান হল তুলারাশির ১০° ডিগ্রির মধ্যে ।
শনি গ্রহের নীচ-স্থান হল মেষবাশির ২০° ডিগ্রির মধ্যে।
নীচের চিত্র দেখলে বোঝা যাবে :–
জ্যোতিষ মতে শুভগ্রহই হোক, আর অশুভগ্রহ বা পাপগ্রহই হোক, গ্রহ উচ্চস্থ হলে ফলের শুভতা ও নীচস্থ হলে অশুভের আধিক্য ঘটে থাকে। বিষয়টি আরও একটু বিস্তৃত করছি । শুভগ্রহ উচ্চস্থ হলে সম্পূর্ণ শুভফল দেয়, মূলত্রিকোণে থাকলে তিন-চতুর্থাংশ শুভফল দেয়, স্বক্ষেত্রে থাকলে শুভফল দেয় অর্ধেক এবং মিত্রক্ষেত্রে থাকলে শুভ ফল দেয় একচতুর্থাংশ, নীচস্থ হলে কিছুমাত্র শুভফল দেয় না। আবার অশুভ গ্রহ উচ্চস্থ হলে সম্পূর্ণ অসুভফল দেয়। মূলত্রিকোণে অশুভফল দেয় তিনচতুর্থাংশ, স্বক্ষেত্রে অর্ধেক ও মিত্রক্ষেত্রে একচতুর্থাংশ ও নীচস্থ হলে কিছুমাত্র অশুভফল দেয় না ।
রাহুর স্বক্ষেত্র হিসেবে জ্যোতিষীরা কন্যা রাশিকে কল্পনা করেছেন। মূলত্রিকোণ কুণ্ড, তুঙ্গস্থান মিথুন, নীচস্থ স্থান ধনু।
কেতুর ক্ষেত্রে এর বিপরীত। অর্থাৎ কেতুর স্বক্ষেত্র মীন, মূলত্রিকোণ সিংহ, তুঙ্গস্থান ধনু, নীচস্থ স্থান মিথুন।
গ্রহের মিত্র, শত্রু ও নিরপেক্ষ গ্রহ
জ্যোতিষীদের ধারণায় সব গ্রহের সঙ্গে সব গ্রহের সম্পর্ক সমান হয়। কারণ এক একটি গ্রহের সঙ্গে এক একটি গ্রহের সম্পর্ক ভিন্নতর। একটি গ্রহের কে বন্ধু, কে শত্রু, কে নিরপেক্ষ, এ বিষয়েও জ্যোতিষীরা সিদ্ধান্তে পৌঁচেছেন। অবশ্য তাঁরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পরীক্ষা, পর্যবেক্ষণের পথ না ধরে শুধুমাত্র অন্ধবিশ্বাসকেই পাথেয় করেছেন। জ্যোতিষশাস্ত্র মতে গ্রহদের মিত্র, শত্রু ও নিরপেক্ষদের একটা তালিকা হাজির করছি।
গ্রহের বন্ধু
রবির বন্ধু – চন্দ্র, মঙ্গল, বৃহস্পতি।
চন্দ্রের বন্ধু – রবি, বুধ।
মঙ্গলের বন্ধু – রবি, চন্দ্র, বৃহস্পতি ।
বুধের বন্ধু – রবি ও শুক্র।
বৃহস্পতির বন্ধু – রবি, চন্দ্র, মঙ্গল।
শুক্রের বন্ধু – বুধ ও শনি।
শনির বন্ধু – বুধ ও শুক্র।
রাহুর বন্ধু – শুক্র ও শনি ।
কেতুর বন্ধু – রবি, চন্দ্র, মঙ্গল ।
গ্রহের শত্রু
রবির শত্রু – শুক্র, শনি।
চন্দ্রের শত্রু – চন্দ্রের কোনও শত্রু নেই ।
মঙ্গলের শত্রু – বুধ।
বুধের শত্রু – চন্দ্র।
বৃহস্পতির শত্রু – বুধ, শুক্র ।
শুক্রের শত্রু – রবি ও চন্দ্র ।
শনির শত্রু – রবি, চন্দ্র ও মঙ্গল।
রাহুর শত্রু – রবি, চন্দ্র ও মঙ্গল।
কেতুর শত্রু – শুক্র ও শনি।
কোন গ্রহ কার পক্ষে নিরপেক্ষ
রবির নিরপেক্ষ গ্রহ – বুধ
চন্দ্রের নিরপেক্ষ গ্রহ – মঙ্গল, বৃহস্পতি, শুক্র, শনি ।
মঙ্গলের নিরপেক্ষ গ্রহ – শুক্র ও শনি ।
বুধের নিরপেক্ষ গ্রহ – মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনি।
বৃহস্পতির নিরপেক্ষ গ্রহ – শনি
শুক্রের নিরপেক্ষ গ্রহ – মঙ্গল ও বৃহস্পতি।
শনির নিরপেক্ষ গ্রহ – বৃহস্পতি
রাহুর নিরপেক্ষ গ্রহ বুধ ও বৃহস্পতি ।
কেতুর নিরপেক্ষ গ্রহ – বুধ ও বৃহস্পতি।
গ্রহদের এই মিত্র, শত্রু ও নিরপেক্ষদের জ্যোতিষীরা বলেন প্রাকৃতিক- মিত্র, প্রাকৃতিক- শত্রু ও প্রাকৃতিক-নিরপেক্ষ। এ ছাড়াও জ্যোতিষীরা আর একটি গণনার সাহায্যে তৎকালীন মিত্র-শত্রু নির্ণয় করেন। কোনও গ্রহ থেকে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, দশম, একাদশ এবং দ্বাদশ ঘরে যে গ্রহগুলো অবস্থান করে সেগুলিকে প্রথমোক্ত গ্রহটির তৎকালীন মিত্র হিসেবে ধরা হয়। বাকি ছটি ঘরে অবস্থিত গ্রহগুলোকে প্রথমোক্ত গ্রহটির তৎকালীন শত্রু বলে ধরা হয়ে থাকে ।
গ্রহ-ফল বিচারে কী কী দেখতে হয়
জ্যোতিষীদের বিচারে গ্রহরা নানাভাবে ফল দিয়ে থাকে। ফলাফল ঠিক মত বিচার করতে জ্যোতিষীরা যে-সব বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি দেওয়ার কথা সাধারণভাবে বলে থাকেন, সেগুলো হলো—(১) গ্রহগণের প্রাকৃতিক শুভাশুভত্ব, (২) গ্রহগণের ভিন্ন ভিন্ন ভাবে ও পরস্পরের প্রতি দৃষ্টি, (৩) গ্রহগণের ভিন্ন ভিন্ন ভাবে স্থিতি, (৪) গ্রহগণের পরস্পরের মিত্রতা, শত্ৰুতা ও নিরপেক্ষতা, (৫) গ্রহগণের স্বক্ষেত্রে অবস্থানবশতঃ ফলের তারতম্য, (৬) গ্রহণে কারকতা, (৭) গ্রহগণের পরস্পর যোগ ও সম্বন্ধ প্রভৃতি, (৮) গ্রহগণের দশা, এবং গ্রহ- নক্ষত্রের কিছু বিশেষ বিধি ।
গ্রহগণের স্থিতি ও দৃষ্টি
জ্যোতিষীরা গ্রহদের দৃষ্টি কল্পনা করেছেন। গ্রহ যে রাশিতে থাকে সেই রাশি থেকে তৃতীয় ও দশম ঘরে এক-চতুর্থাংশ দৃষ্টি দিয়ে থাকে। পঞ্চম ও নবম ঘরে দৃষ্টি দেয় অর্ধেক, চতুর্থ ও অষ্টমে তিন-চতুর্থাংশ এবং সপ্তমে পূর্ণ দৃষ্টি দেয়।
এরপরও আছে। বৃহস্পতি নবম ও পঞ্চমে পূর্ণদৃষ্টি দেয়। মঙ্গল পূর্ণ দৃষ্টি দেয় চতুর্থ ঘরে ও অষ্টম ঘরে, শনির পূর্ণদৃষ্টি থাকে তৃতীয় ও দশম ঘরে। অবশ্য বৃহস্পতি, মঙ্গল ও শনি সপ্তমেও পূর্ণদৃষ্টি দেয় ।
রাহুব পঞ্চম, সপ্তম, নবম ও দ্বাদশে পূর্ণদৃষ্টি; তৃতীয়, ষষ্ঠ, চতুর্থ ও অষ্টমে অর্থদৃষ্টি ; দ্বিতীয় ও দশম ঘরে তিন-চতুর্থাংশ দৃষ্টি থাকে।
ফলাফল বিচারে, মোটামুটি পূর্ণদৃষ্টিই জ্যোতিষীরা গ্রহণ করে থাকেন।
কোন ভাব থেকে কী বিচার করা হয়
জ্যোতিষীদের ধারণায় লগ্নকে প্রথম ঘর ধরে বারোটি ঘরের এক একটি ঘরে জাতকের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিচার সম্ভব।
লগ্নের ঘরকে প্রথম ঘর ধরা হয়। এই ঘর থেকে জ্যোতিষীরা তনুভাবের বিচার করেন । তনুভাব থেকে তাঁরা জাতকের শরীরের গঠন, বর্ণ, গুণ, যশ, সবলতা, দূর্বলতা, সুখ-দুঃখ ইত্যাদির বিচার করেন ।
দ্বিতীয় বা ধনভাব থেকে মুখ, বাক্য, চোখ, আত্মীয়, মাসী, মামা, বন্ধু ইত্যাদি বিষয় বিচার করেন।
তৃতীয বা সহজভাব থেকে ভাই, সাহস, পরাক্রম, সহনশীলতা, প্রতিপালিত লোক ও কর্মচারীদের বিষয়ে বিচার করা হয়।
চতুর্থ বা সুখভাব থেকে বিচার করা হয় সুখ, মন, বন্ধু, যান-বাহন, ভূসম্পত্তি, পিতৃ- সম্পত্তি, মা, বিদ্যা, ইত্যাদি বিষয়ে ৷
পঞ্চমভাব থেকে দেবভক্তি, রাজভক্তি, পিতা, পুত্র, বুদ্ধি, রাজনৈতিক বুদ্ধি ইত্যাদি বিচার করা হয়।
ষষ্ঠ বা শত্রুভাব থেকে শত্রু, ক্লেশ, আঘাত, ক্ষত, মামা, মাসী ইত্যাদি বিষয়ে বিচার করা হয।
সপ্তম বা জায়াভাব থেকে প্রেম, বিবাহ, স্ত্রী, স্বামী, বড়-ভাইয়ের ছেলে, ব্যবসা-বানিজ্য, মুত্রাশয়, ভ্রমণ ইত্যাদি বিষয়ে বিচার করা হয়।
অষ্টম বা নিধনভাব থেকে বড় বোনের ছেলে, খাদ্য-সুখ, মৃত্যু, মরণের কারণ, মৃত্যুস্থান, জয় ও পরাজয় বিষযে বিচার করা হয়।
নবম বা ধর্মভাব থেকে ভাগ্য, ধর্মানুষ্ঠান, তীর্থযাত্রা, আধ্যাত্মিক উন্নতি, গুবুর অনুগ্রহ ইত্যাদি বিচার করা হয়। অনেকে নবম স্থান থেকে পিতৃবিষয়ক বিচার করে থাকেন।
দশম বা কর্মভাব থেকে কর্মক্ষেত্র, যশ, উচ্চপদ, সম্মান, সন্ন্যাস, শাস্ত্রোক্ত কর্ম, পিতা ইত্যাদি বিষয়ে বিচার করা হয়।
একাদশ বা আয়ভাব থেকে আয়, লাভ, মিত্র, কন্যা, বড় ভাই, ছোট ভাইয়ের ছেলের বিষয়ে বিচার করা হয় ।
দ্বাদশ বা ব্যয়ভাব থেকে ব্যয়, দূর ভ্রমণ, রাজদন্ড, ছোটবোনের ছেলে ইত্যাদি বিষয়ে বিচার করা হয় !
দশা বিচার
জ্যোতিষীদের কাছে জাতকের দশা বিচারের গুরুত্ব খুবই বেশি। জ্যোতিষীরা মনে করেন কোনও গ্রহের দশায় সেই গ্রহ জাতকের জীবনে বিপুলভাবে প্রভাব বিস্তার কবে।
বাংলাদেশে অষ্টোত্তরী মতে জাতকের দশা-অন্তর্দশা বিচার প্রচলিত ছিল। এখনও বহু জ্যোতিষীই অক্টোত্তরী মতে জাতকের দশা-অন্তর্দশা বিচার করে ভাগ্য গণনা করেন। ভারতবর্ষের অন্যান্য প্রদেশগুলোতে বিংশোত্তরী বিচারই প্রচলিত।
অক্টোত্তরী মতে বিভিন্ন গ্রহের দশা ভোগকাল
রবির দশা ভোগকাল ৬ বছর।
চন্দ্রের দশা ভোগকাল ১৫ বছর।
মঙ্গলের দশা ভোগকাল ৮ বছর।
বুধের দশা ভোগকাল ১৭ বছর।
শনির দশা ভোগকাল ১০ বছর।
বৃহস্পতির দশা ভোগকাল ১৯ বছর। রাহুর দশা ভোগকাল ১২ বছর।
শুক্রের দশা ভোগকাল ২১ বছর।
জাতক কিসের দশা দিয়ে জীবন শুরু করবে, তা নির্ভব কবে কোন নক্ষত্রের জাতক তার উপর।
১। কৃত্তিকা, রোহিণী ও মৃগশিরা নক্ষত্রের জাতকের প্রথম শুরু হবে রবির দশা মধ্যে।
২। আর্দ্রা, পুনর্বসু, পুষ্যা, অশ্লেষা নক্ষত্রের জাতকের প্রথম শুরু হবে চন্দ্রের দশা ৷
৩। মঘা, পূর্বফাল্গুনী, উত্তরফাল্গুনী নক্ষত্রের জাতকের প্রথম শুরু হবে মঙ্গলের দশা ।
৪। হস্তা, চিত্রা, স্বাতী, বিশাখা নক্ষত্রের জাতকের প্রথম শুরু হবে বুধের দশা ।
৫। অনুরাধা, জ্যেষ্ঠা, মূলা নক্ষত্রের জাতকের প্রথম শুরু হবে বুধের দশা।
৬। পূর্বাষাঢ়া, উত্তবাষাঢ়া, শ্রবণা নক্ষত্রের জাতকের প্রথম শুরু হবে বৃহস্পতির দশা।
৭। ধনিষ্ঠা, শতভিষা, পূর্বভাদ্রপদ নক্ষত্রের জাতকের প্রথম শুরু হবে রাহুর দশা।
৮। উদ্ভবভাদ্রপাদ, বেবতী, অশ্বিনী, ভরণী নক্ষত্রের জাতকের প্রথম শুরু হবে শুক্রের দশা।
বিংশোত্তরী মতে বিভিন্ন দশার ভোগকাল
জ্যোতিষীরা জন্ম নক্ষত্রের সংখ্যার সঙ্গে ১৬ যোগ করে ৯ দিয়ে ভাগ করলে যে অংক অবশিষ্ট থাকে, সেই অংকই জন্মকালে কোন গ্রহের দশা শুরু হবে তা সূচিত করে।
১ অবশিষ্ট থাকলে প্রথমে শুরু হবে রবির দশা।
২ অবশিষ্ট থাকলে প্রথমে শুরু হবে চন্দ্রের দশা।
৩ অবশিষ্ট থাকলে প্রথমে শুরু হবে মঙ্গলের দশা ।
৪ অবশিষ্ট থাকলে প্রথমে শুরু হবে রাহুর দশা।
৫ অবশিষ্ট থাকলে প্রথমে শুরু হবে বৃহস্পতির দশা ।
৬ অবশিষ্ট থাকলে প্রথমে শুরু হবে শনির দশা।
৭ অবশিষ্ট থাকলে প্রথমে শুরু হবে বুধের দশা।
৮ অবশিষ্ট থাকলে প্রথমে শুরু হবে কেতুর দশা ।
৯ অথবা ০ অবশিষ্ট থাকলে প্রথমে শুধু হবে শুক্রের দশা।
রবির দশা ভোগকাল ৬ বছর।
চন্দ্রের দশা ভোগকাল ১০ বছর।
মঙ্গলের দশা ভোগকাল ৭ বছর।
রাহুর দশা ভোগকাল ১৮ বছর।
বৃহস্পতির দশা ভোগকাল ১৬ বছর ৷
শনির দশা ভোগকাল ১৯ বছর।
বুধের দশা ভোগকাল ১৭ বছর ।
কেতুর দশা ভোগকাল ৭ বছর।
শুক্রের দশা ভোগকাল ২০ বছর।
এইসব দশার পরেও অঠোত্তরী ও বিংশোত্তরী মতে ওই দশাকালীন বিভিন্ন গ্রহের অন্তর্দশা চলতে থাকে । এই দশা ও অন্তর্দশা জাতক-জীবনের ভাগ্যকে পূর্ব-নির্ধারিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় বলে জ্যোতিষীদের বিশ্বাস ।
গোচর ফল
জ্যোতিষীরা তাঁদের তৈরি নিয়মে দশা-অন্তর্দশা প্রভৃতির সাহায্যে বিচার করতে গিয়ে দেখলেন একাধিক সময় একই ধরনের ফল লাভের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। আবার কখনও বা আরও নানা ধরনের সমস্যা ভাগ্য বিচারের ক্ষেত্রে হাজির হচ্ছে। জন্মকালীন বিভিন্ন ঘরের গ্রহ অবস্থান দেখেও সঠিক ভবিষ্যদ্বাণী অসম্ভব হয়ে পড়ছে। অন্যান্য নানা নিয়ম-কানুনের সাহায্য নিয়েও জাতকের ভাগ্য বিচার সফলতা পাচ্ছে না। এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতেই আরও নানা ধরনের বিচার পদ্ধতির জটিলতা হাজির করেছেন জ্যোতিষীরা। এইভাবেই এসেছে গোচর ফল ।
গ্রহগুলো ঘুরছে। ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন গ্রহ এক রাশি থেকে অন্য রাশি পরিক্রমা করে চলেছে। ফলে প্রতিটি গ্রহ কিছু সময়ের জন্য এক একটি রাশিতে বা ঘরে অবস্থান করছে। গ্রহগুলো যে সময়ে যে ঘরগুলোতে দৃশ্যমান, সে ঘরগুলো সেই সেই গ্রহের ‘গোচরে’ আছে বলে ধরে নিয়ে গোচর ফল বিচার করা হয়। মোটামুটিভাবে এক রাশিতে গ্রহগুলো এইভাবে থাকে—
রবি এক রাশিতে থাকে ১ মাস।
চন্দ্র এক রাশিতে থাকে ২X১/৪ মাস।
মঙ্গল এক বাশিতে থাকে ৪৫ দিন।
বুধ এক রাশিতে থাকে ১৮ দিন।
বৃহস্পতি এক রাশিতে থাকে ১ বছর।
শুক্র এক রাশিতে থাকে ২৮ দিন।
শনি এক রাশিতে থাকে ২X১/২ বছর।
রাহু এক রাশিতে থাকে ১X১/২ বছর।
গোচরে চন্দ্র জন্মরাশি থেকে কেবলমাত্র প্রথম, তৃতীয়, ষষ্ঠ, সপ্তম, দশম ও একাদশ ঘরে থাকলে শুভফল দেখ। এছাড়াও আরও নিয়ম আছে। শুক্লপক্ষে চন্দ্র দ্বিতীয়, পঞ্চম ও নবমে থাকলেও শুভ ফল দেয়।
গোচরে মঙ্গল জন্মরাশি থেকে কেবলমাত্র তৃতীয়, ষষ্ঠ, দশম ও একাদশ স্থানে শুভ ফল দেয়।
গোচরে বুধ জন্মরাশি থেকে দ্বিতীয়, চতুর্থ, অষ্টম, দশম ও একাদশ রাশিতে থাকাকালীন শুভ ফল দেয়।
গোচরে বৃহস্পতি শুভ ফল দেয় জন্মরাশি থেকে দ্বিতীয়, পঞ্চম, সপ্তম, নবম ও একাদশে। গোচরে শুক্র প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, অষ্টম, নবম, দশম ও একাদশ স্থানে শুভ ফল দেয় ।
তৃতীয়, ষষ্ঠ ও একাদশ ঘরের শনি রাহু ও কেতু শুভ ফল দেয়।
কোনও কোনও মতে গোচরে জন্মরাশি থেকে দশমস্থ শনি, রাহু ও কেতু শুভ ফল দান করে।
এরপর জ্যোতিষীরা জাতকদের ভবিষ্যৎ বিচার করতে অসুবিধার মুখোমুখি হয়ে গ্রহদের গোচর ফলের সঙ্গে নক্ষত্রদের যুক্ত করলেন। জানালেন, গোচরে গ্রহ শুভ নক্ষত্রে এলে শুভফল দেবে, অশুভ নক্ষত্রে অশুভ ফল।
গোচরে জন্মরাশি থেকে বিচার করা হয়। জন্মকালীন যে রাশিতে চন্দ্র ছিল, সে রাশিই জাতকের জন্মরাশি।
গ্রহ কোন ঘরে কেমন ফল দেয়
জ্যোতিষীদের বিচারে প্রতিটি গ্রহ লগ্ন থেকে গণনা করে কোন ঘরে আছে, তার উপরও কিছু বিশ্বাস রয়ে গেছে। বিভিন্ন জ্যোতিষীদের বিশ্বাসও বিভিন্ন ধরনের।
খুব সংক্ষেপে মোটামুটিভাবে কোন গ্রহ কোন ঘরে থাকলে কী ধরনের ফল জাতক পাবে সে বিষয়ে আলোকপাত করছি।
রবি
রবি লগ্নে থাকলে জাতকের মাথার চুল থাকবে স্বল্প অথবা টাক। জাতক হবে অলস, ক্রোধী, নেত্ররোগী, দীর্ঘদেহী, কর্কশ শরীর ও ক্ষমাশীল।
রবি দ্বিতীয়ে বা ধনস্থানে থাকলে জাতক ধন-পুত্র বিষয়ে অসুখী, বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে অমিল, বুদ্ধিহীনতা, পর-গৃহে বাস।
রবি তৃতীয়ে থাকলে জাতক হয় প্রিয়ভাষী, ধনী, তেজস্বী, স্বল্প ভাই-বিশিষ্ট। রবি চতুর্থে থাকলে জাতক সুখহীন, ধনহীন হয়। জাতকের এক জায়গায় স্থির বাস হয় না।
রবি পণ্যমে থাকলে সুখহীন, উদ্ভ্রান্তচিত্ত, সৎ ও দেবভক্ত হয়।
রবি ষষ্ঠে থাকলে সদাসুখী, শত্ৰুহন্তা, মহাতেজা, সত্ত্বগুণের অধিকারী, মনোহর মানের অধিকারী ও রাজশক্তির নিকটজন হয়।
রবি সপ্তমে থাকলে হতশ্রী, ভীত, খারাপস্বভাব, রাজশক্তি বা রাষ্ট্রশক্তির ক্রোধে ক্লিষ্ট হয় ।
রবি অষ্টমে থাকলে নেত্ররোগী, বহু শত্রুবিশিষ্ট, প্রয়োজনের সময় বুদ্ধি-বিবেচনাহীন, ক্রোধী, অল্পবিত্ত ও কৃশদেহী হয় ।
রবি নবমে থাকলে ধার্মিক, সুকর্মী, পুত্র ও মিত্র বিষয়ে সুখী হয়, তবে মা’য়ের সঙ্গে মনোমালিন্যের সম্ভাবনা থাকে।
রবি দশমে থাকলে ধনী, সুবুদ্ধি, রাষ্ট্রশক্তির অনুগ্রহ বিশিষ্ট ও পুত্রবান হন। রবি একাদশে থাকলে জাতক বিত্তবান, রাষ্ট্রশক্তির অনুগ্রহপ্রাপ্ত, সঙ্গীতপ্রিয় হয়। রবি দ্বাদশে থাকলে চোখের অসুখ, বাবার সঙ্গে মনোমালিন্য সূচিত করে।
চন্দ্র
চন্দ্র বৃষ, কর্কট ও মেষলগ্নগত হলে জাতক ধনবান, রূপবান, গুণী, ভোগী ও দয়ালু হয়। চন্দ্র অন্য লগ্নে থাকলে জাতক চঞ্চলচিত্তের অধিকারী, নীচতা, মূক ও বধিরতা সৃষ্টি করে।
পূর্ণচন্দ্র দ্বিতীয়ে থাকলে জাতক ধনী, সুখী ও পুত্রবান হয়। ক্ষীণ চন্দ্র থাকলে গরীব ও বুদ্ধিহীন হয়।
চন্দ্র তৃতীয়ে থাকলে জাতক গর্বিত, হিংস্র, কৃপণ, অল্পবুদ্ধি, সাহসী ও বন্ধুবৎসল হয়। চন্দ্র চতুর্থে থাকলে ধনী, বাহনের অধিকারী, শাস্ত্র ও ব্রাহ্মণে ভক্তি দান করে চন্দ্ৰ পঞ্চমে থাকলে জাতক সুশীল, জিতেন্দ্রিয়, ধনী, প্রসন্নচিত্ত, পুত্রবান ও সংগ্রহশীল
চন্দ্র ষষ্ঠে থাকলে মানব ক্রুদ্ধ, অলস, নির্দয় ও শত্রুবিশিষ্ট হয়।
চন্দ্র সপ্তমে থাকলে জাতক ক্ষীণদেহী, ধনহীন, বিনয়হীন, কামাতুর ও অভিমানী হয় । চন্দ্র অষ্টমে থাকলে জাতক উদ্বিগ্নতা, ব্যাকুলতা প্রভৃতি নানা অসুখে ভোগে। জাতক চোর, শত্রু ও রাষ্ট্রশক্তির দ্বারা উৎপীড়িত হয় ।
চন্দ্র নবমে থাকলে জাতক স্ত্রী-পুত্রবান, ধনী, তীর্থ ও শাস্ত্রপ্রিয় হয়।
চন্দ্র দশমে থাকলে রাষ্ট্রশক্তি থেকে সম্মান লাভ, অর্থলাভ, যশলাভ হয়। জাতক স্থিরচিত্তের, সৌম্য ও ধনী হয়।
চন্দ্র একাদশে থাকলে সদ্গুণ দান করে । জাতক নানা সম্মান, কীর্তি ও নানা বাহনে অধিকারী হয়।
চন্দ্র দ্বাদশে থাকলে নেত্রপীড়া, ক্রোধ ও শত্রুবৃদ্ধি ঘটে।
মঙ্গল
মঙ্গল লগ্নে থাকলে জাতক সাহসী ও উগ্রস্বভাবের হয়। জাতকের মতিভ্রমের সম্ভাবনা ও আঘাত প্রাপ্তির সম্ভাবনা থাকে।
মঙ্গল দ্বিতীয়ে থাকলে জাতক ধনহীন, নির্দয় ও বিবাদপ্রিয় হয় ।
মঙ্গল তৃতীয়ে থাকলে জাতক উদার হয়, রাষ্ট্রশক্তির অনুগ্রহ পায়, বিক্রম প্রকাশ করে ও ভাইয়ের বিষয়ে অশান্তির সৃষ্টি করে ।
মঙ্গল চতুর্থে থাকলে বন্ধু থেকে কষ্ট, শারীরিক রোগ ও দুর্বলতা দান করে।
মঙ্গল পঞ্চমে থাকলে জাতক চঞ্চলমতি হয। পুত্র ও মিত্র থেকে সুখহানি ঘটে। বাত ও শ্লেষ্মায় ভোগে ।
মঙ্গলে ষষ্ঠে থাকলে জাতক সৎসঙ্গ লাভ করে, শত্রুনাশ করে, ক্রোধযুক্ত ও কামাতুর হয়।
মঙ্গল সপ্তমে থাকলে স্ত্রী বিষয়ে খুবই অসুখী হয়, অনর্থক নিষ্ফল চিন্তা করে।
মঙ্গল অষ্টমে থাকলে চোখের অসুখ, রক্তচাপ বা রক্তপীড়ায় ভোগে, খারাপ কাজে প্রবৃত্ত হয়, ভাগ্যহীন হয়।
মঙ্গল নবমে থাকলে ঈর্ষাপরায়ণ ও ধনহীন হয়।
মঙ্গল দশমে থাকলে জাতক রাজতুল্য, সাহসী ও পরোপকারী হয়।
মঙ্গল একাদশে থাকলে জাতক রাষ্ট্রশক্তির অনুগ্রহ লাভ করে ।
মঙ্গল দ্বাদশে থাকলে মিত্রদের সঙ্গে বিবাদ হয়, চোখের রোগ, ক্রোধ ও ধনব্যযের সম্ভাবনা থাকে। জাতকের কারাগার ভোগ হয় ।
বুধ
বুধ লগ্নে থাকলে জাতক বিদ্বান, সদাচারী, উদার, বিনীত, কলাজ্ঞ, ধীর ও শান্ত স্বভাবের ও শিশুর মত সরল হয় ৷
বুধ দ্বিতীয়ে বা ধনস্থ হলে জাতক সুকান্তি, উন্নতিশীল, সুশীল ও গুরুভক্ত হয়। বুধ তৃতীয়ে থাকলে সাহসী, হত-সুখ, শৈশবে রোগ-ভোগ হয় ৷
বুধ চতুর্থ স্থানে থাকলে জাতক বিদ্যান, ধনবান, সাহিত্য-শিল্প-সংগীত বিষয়ে আগ্রহী হয়।
বুধ পশুমে থাকলে জাতক সদা আনন্দময়, বন্ধুবৎসল, সুশীল, বুদ্ধিমান ও পুত্র বিষয়ে সুখী হয়।
বুধ ষষ্ঠ স্থানে থাকলে জাতক অলস, নিষ্ঠুর, কলহপ্রিয় ও শত্রু দ্বারা পীড়িত হয়। বুধ সপ্তমে থাকলে মানব সুশীল, ধনবান, সত্যভাষী, স্ত্রী ও পুত্র সুখে সুখী হয় ও পরস্ত্রীগামী হয়।
বুধ অষ্টমে থাকলে জাতক রাষ্ট্রশক্তির অনুগ্রহে ধনী ও পরের ধন গ্রাসকারী হয়।
বুধ নবমস্থ হলে জাতক বিদ্বান, ধনবান, দাতা, উপকারী, সৎ, কর্মপটু ও সুপুত্রবিশিষ্ট হয়।
বুধ দশম ঘরে থাকলে জাতক জ্ঞানবান, ধনী, সদা আনন্দময়, ও কর্মবীর হয়।
বুধ একাদশ ঘরে থাকলে জাতক বিনীত, বিভিন্নভাবে বিপুল আয়, ভোগী, আনন্দচিত্ত, সুশীল ও বলবান হয়।
বুধ দ্বাদশ ঘরে অবস্থান করলে জাতক বিদ্যাহীন, আত্মীয়-স্বজনদের দ্বারা ত্যক্ত, স্বকার্যে নিপুণ, অত্যন্ত ধূর্ত ও মলিন প্রকৃতির হয় ।
বৃহস্পতি
বৃহস্পতি লগ্নে থাকলে জাতক রাষ্ট্রশক্তি-প্রিয়, উদার, প্রাজ্ঞ, কৃতজ্ঞ চরিত্রের, চারুদেহী ও গম্ভীর স্বভাবের হয় ।
বৃহস্পতি দ্বিতীয় ঘরে থাকলে জাতক রূপবান, গুণবান, বিদ্বান, যশস্বী, ত্যাগী, ধনবান ও অজাতশত্রু হয়।
বৃহস্পতি তৃতীয় ঘরে থাকলে জতক সৌজন্যহীন, কৃতঘ্ন, কৃপণ, স্ত্রী-পুত্রদের দ্বারা অসুখী হয়।
বৃহস্পতি চতুর্থে থাকলে জাতক বহুমান্য, ধনবান, বাহনযুক্ত, রাষ্ট্রশক্তির অনুগ্রহে সম্পদশালী হয়।
বৃহস্পতি পঞ্চমে থাকলে ধনবান, গাড়ি-বাড়ির অধিকারী, মন্ত্রণা-কুশল ও সু-পুত্রের পিতা হয় ।
বৃহস্পতি ষষ্ঠে থাকলে জাতক সংগীতপ্রিয়, কীর্তিপ্রিয় ও শত্রু-বিনাশকারী হয় ।
বৃহস্পতি সপ্তমে থাকলে জাতক বিনয়ী, সাহিত্যিক, বিদ্বান, মন্ত্রণাকুশল ও কামিনী- কান বিষয়ে অত্যন্ত সুখী হয়।
বৃহস্পতি অষ্টমে থাকলে জাতক দরিদ্র, অনস, ক্ষীণদেহী ও বিবেচনাহীন হয় ।
বৃহস্পতি নবমে থাকলে জাতক রাজনৈতিক নেতা, মন্ত্রী, বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান, কর্মপটু ও দেব-দ্বিজে ভক্ত হয় ।
বৃহস্পতি দশমে থাকলে জাতক রাজনৈতিক নেতা, ধনী, গাড়ি-বাড়ির অধিকারী, বিবিধ যশের অধিকারী ও স্ত্রী-পুত্র বিষয়ে সুখী হয়।
বৃহস্পতি একাদশে থাকলে জাতক রাষ্ট্রশক্তির অনুগ্রহ, ক্ষমতা, অর্থ ও গাড়ি-বাড়ির মালিক হয় ।
বৃহস্পতি দ্বাদশে থাকলে জাতক অনস, নির্বোধ, কোপন-স্বভাব ও নির্লজ্জ হয় ।
শুক্র
শুক্র লগ্নে থাকলে জাতক নানা বিদ্যায় পারদর্শী, মিষ্টভাষী, সুদর্শন, কামুক, রাষ্ট্রশক্তি থেকে সম্মান পায় ।
শুক্র দ্বিতীয়ে থাকলে জাতক গাড়ি বাড়ি, অর্থ প্রাচুর্য বিদ্যা লাভ করে।
শুক্র তৃতীয় ঘরে থাকলে জাতক কৃশদেহী, কৃপণ, গরীব, কামুক ও দুষ্ট প্রকৃতির হয় ।
শুক্র চতুর্থ ঘরে থাকলে ধনবান, সুখী, সদানন্দ ও দেবভক্ত হয়।
শুক্র পঞ্চম ঘরে থাকলে জাতক কাব্য ও কলা বিষয়ে জ্ঞানী, ধনী, সম্পদশালী ও সুপুত্রের অধিকারী হয়।
শুক্র ষষ্ঠ ঘরে থাকলে জাতক কামহীন, রমণীদের কাছে অপ্রিয় ও শত্রুভয়যুক্ত হয়।
শুক্র সপ্তম ঘরে থাকলে জাতক বিভিন্ন কলায় কুশলী, সত্তরণপটু, রতিপণ্ডিত, রমণীরমন ও বিভিন্ন নারীতে আসক্ত হয়।
শুক্র অষ্টমে থাকলে জাতক প্রসন্ন-মূর্তি, রাষ্ট্রশক্তির প্রিয়জন, স্ত্রী-পুত্র বিষয়ে উদ্বিগ্ন, শঠ ও নির্ভয় মানসিকতাসম্পন্ন হয়।
শুক্র নবম স্থানে থাকলে জাতক অতিথিসেবক, গুরু-দেব-দ্বিজ-পূজক, তীর্থ-প্রিয়, আনন্দময়, ক্রোধশূন্য ও ধনী হয়।
শুক্র দশম স্থানে থাকলে সৌভাগ্যবান, মানী, ধনবান, স্ত্রী-পুত্র বিষয়ে সুখী হয় ।
শুক্র একাদশ ঘরে থাকলে জাতক অভিনয়, নৃত্য-গীত ইত্যাদি বিষয়ে আগ্রহী হয়, ধর্মপরায়ণ হয় ।
শুক্র দ্বাদশে থাকলে জাতক সর্বদা কামচিন্তায় কাতর থাকে, নির্দয় ও মিথ্যাচারী হয়।
শনি
শনি তুলা, কুম্ভ ও মকর লগ্নগত হলে জাতক রাষ্ট্রনায়ক হয় । অন্যান্য লগ্নে শনি থাকলে শনি জাতকের দারিদ্র্য ও অমঙ্গলের কারণ হয় ।
শনি দ্বিতীয় ঘরে থাকলে জাতক অসৎ উপায়ে ধনী, মানসিকভাবে অসুখী, বিলাসী ও বান্ধবত্যক্ত হয় ।
শনি তৃতীয়ে থাকলে জাতক মাঝারি আকারের রাজনৈতিক নেতা, বহু পালক ও বিক্রমশীল হয়।
শনি চতুর্থে থাকলে জাতক পীড়িত, অলস, কলহপ্রিয় হয়।
শনি পঞ্চমে থাকলে জাতক সদাপীড়িত, ধনহীন, পুরুষত্বহীন ও পুত্র বিষয়ে অসুখী হয় । শনি ষষ্ঠে থাকলে জাতক স্বাস্থ্যবান, শত্রুজয়ী, গুণগ্রাহী হয়। শনি ষষ্ঠে মেষ রাশিতে থাকলে নীচ জাতির কোনও ব্যক্তি থেকে ভয়ের সম্ভাবনা থাকে। শনি ষষ্ঠে তুলা বাশিতে অবস্থান করলে জাতক পূর্ণকাম হয় ।
শনি সপ্তমে থাকলে জাতক স্ত্রী বিষয়ে অসুখী, গৃহ-ধনাদি বিষয়ে অসুখী ও অসুখে ভুগে দূর্বল শরীরের হয়।
শনি অষ্টমে থাকলে জাতক নির্ভয়, অলস, অসন্তুষ্ট ও রোগক্লিষ্ট হয়।
শনি নবমে থাকলে জাতক বিকলদেহ, মন্দমতি ও ধার্মিক হয়।
শনি দশমে থাকলে জাতক শাসকের প্রিয়, অভিজ্ঞ, সুচতুর, সংগ্রামী ও বিনয়ী হয়। শনি একাদশে থাকলে জাতক ধনবান ও স্থিরচিত্তের অধিকারী হয় ।
শনি দ্বাদশ ঘরে থাকলে জাতক নির্দয়, অতিমব্যয়ী, অলস, নির্ধন, নির্লজ্জ, অসৎ বন্ধুবিশিষ্ট ও প্রবাসপ্রিয় হয় ।
রাহু
রাহু লগ্নে থাকলে জাতক দুষ্টবুদ্ধি, দুষ্ট-স্বভাব, স্বজন-প্রতারক, কামুক, রুগ্নদেহী ও শিরোরোগী হয় ।
রাহু ধনস্থ হলে অর্থাৎ দ্বিতীয় ঘরে থাকলে বাকপটু, ভ্রমণশীল ও দরিদ্র হয়।
রাহু তৃতীয় ঘরে থাকলে যশ, বিলাস ও বিক্রম দান করে। একই সঙ্গে জাতকের ভাতৃনাশ ও দারিদ্রভাবও দেখা যায় ।
রাহু চতুর্থ ঘরে থাকলে জাতকের সুখনাশ, আত্মীয়-হানি, সদা ভ্রমণ ও পুত্র-মিত্র বিষয়ে অসুখী করে।
রাহু পঞ্চমে থাকলে মিত্র-স্বল্পতা দেখা যায়।
রাহু ষষ্ঠ স্থানে থাকলে জাতক মহাবলী, শত্রুজয়ী হয় ।
রাহু সপ্তমে থাকলে স্ত্রীর সঙ্গে বিবাদ, স্ত্রী-নাশ সূচিত হয়। জাতকের স্ত্রী ক্রোধী, কলহপ্রিয়া ও যোগযুক্তা হয়।
রাহু অষ্টমে থাকলে জাতক চোর হয়। জাতক গুহ্যদ্বারের পীড়া, অণ্ডকোষ বৃদ্ধি ও মুত্ররোগ ভোগ করে ।
রাহু নবম ঘরে থাকলে জাতক দরিদ্র, বন্ধুহীন ও অসুখী হয়।
রাহু দশম ঘরে থাকলে জাতক পিতার বিষয়ে অসুখী, ভাগ্যহীন, যানবাহন দ্বারা পীড়িত ও বাত-রোগে আক্রান্ত হয় ।
রাহু একাদশে থাকলে জাতক রাষ্ট্রীয় সম্মান লাভ করে, ধনী, সুখী ও বিজয়ী হয়
রাহু দ্বাদশে থাকলে জাতক নেত্ররোগী, পায়ে আঘাত, প্রতারক, অসৎ-সঙ্গপ্রিযতা, দম্ভ, স্ত্রী বিষয়ে অসুখী ও প্রবাসী হয়।
কেতু
কেতু লগ্নে থাকলে জাতক ভীরু, রোগযুক্ত, উদ্বিগ্নচিত্ত ও অস্থির প্রকৃতির হয়।
কেতু দ্বিতীয় ঘরে থাকলে জাতক ধনী, সুখী, তেজস্বী, শত্রুজয়ী হয়। তবে জাতক কলহে জড়িয়ে পড়ে, বন্ধু বিয়োগ ঘটে এবং জাতক কোনও রোগে পীড়িত হয় ।
কেতু তৃতীয় স্থানে থাকলে মাতৃ-সুখ ও বন্ধু-সুখ থেকে বঞ্চিত হয়; তবে কেতু লগ্ন থেকে চতুর্থ ঘরে ধনু রাশিতে থাকলে ফল শুভ হয় ।
পঞ্চমে কেতু থাকলে জাতক পেটের অসুখে ভোগে, ভাইয়ের বিষয়ে অসুখী হয়।
ষষ্ঠে কেতু থাকলে ধনলাভ, সুখ, নীরোগ জীবন লাভ করেন জাতক। তবে মাতুল পক্ষ থেকে অপমানিত হওয়ার সম্ভবনা থাকে।
সপ্তমে কেতু থাকলে জাতক বেড়াতে ভালবাসে, তবে অর্থনাশ, বিত্তনাশ ও জল থেকে
ভয়ের কারণ থাকে। কেতু সপ্তম ঘরে বৃশ্চিক রাশিতে থাকলে কলহ, ব্যয়ের সম্ভাবনা থাকে।
কেতু অষ্টমে থাকলে গুহ্যদেশে পীড়া, বাহনভয় ও অর্থনাশ হয়। কিন্তু কেতু অষ্টম ঘরে বৃশ্চিক, কন্যা, মেষ, বৃষ ও মিথুন রাশিগত হলে জাতকের অর্থভাগ্য শুভ হয়।
কেতু নবমে থাকলে জাতক নানা ধরনের অসুখের শিকার হয়। ভাইও অসুখে ভোগে । দান করলেও সমাজে সম্মান পান না; বরং উপহাসের পাত্র হন।
কেতু দশমে থাকলে দুর্ভাগ্য, ক্লেশ ও বাহনভয় দেখা দেয়। পিতা অসুখী হন। দশমস্থ কেতু বৃষ, মেষ, বৃশ্চিক ও কন্যায় থাকলে শত্রুনাশ হয় ।
কেতু একাদশে থাকলে জাতক বিদ্বান, সুমিষ্টভাষী, তেজস্বী হয়। তবে পুত্র বিষয়ে অসুখী ও গুহ্যদেশের পীড়ায় পীড়িত হয় ।
কেতু দ্বাদশে থাকলে জাতক রাজতুল্য, শত্রুনাশকারী হয়। পায়ের, চোখের, পেটের ও গুহ্যদেশের অসুখে ভোগে ।
প্রতিটি ঘরের অধিপতিরা কোন ঘরে থাকলে কেমন ফল দেয়
আগেই আমরা প্রতিটি গ্রহের স্বক্ষেত্র অর্থাৎ কোন গ্রহ কোন ঘরের মালিক বা অধিপতি, সে বিষয়ে আলোচনা করেছি। লগ্ন থেকে দ্বাদশ স্থান পর্যন্ত বারোটি ঘরের অধিপতি বা কোথায় অবস্থান করছে তার উপরও জাতকের ভাগ্য নির্ধারিত হয় বলে জ্যোতিষীরা বিশ্বাস করেন । প্রতিটি ঘরেব অধিপতিরা কোন ঘরে থাকলে কেমন ফল দেয়—এ বিষয়ে জ্যোতিষীরা কী বলেন খুব সংক্ষেপে সেটুকু নিয়ে আলোচনা করছি।
লগ্নপতি
জাতকের সঠিক জন্ম সময় অনেক’ সময়েই বিভিন্ন কারণে রাখা সম্ভব হয় না। ফলে জন্মলগ্ন নির্ধারণে ভুল হতে পারে। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্যেও জ্যোতিষীরা পথ বের করে ফেলেছেন। কিছু নিয়ম-কানুন তৈরি করেছেন যেগুলোর সাহায্যে নাকি সঠিক লগ্ন নির্ণয় করা সম্ভব ।
চন্দ্ৰ লগ্নের মত অত তাড়াতাড়ি তো এক ঘর থেকে আর এক ঘরে দৌড়োয় না । তাই জন্মের সময় চন্দ্রের অবস্থান দেখে রাশি নির্ণয় করেও ভাগ্যের বিচার করা হয়। জন্মের সময় চন্দ্র যে রাশিতে থাকে সেটাই জাতকের রাশি হিসেবে ধরে নেওযা যায়।
জ্যোতিষ মতে জাতকের লগ্নই মস্তক। তাই লগ্নে পাপগ্রহ অর্থাৎ রাহু, ববি, মঙ্গল বা শনি থাকলে মাথায় আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। জাতকের, আকৃতি, প্রকৃতি লগ্নে উপর নির্ভরশীল বলে জ্যোতিষীরা বিশ্বাস করেন।
লগ্নের অধিপতি অর্থাৎ লগ্নপতি লগ্নে থাকলে জাতক সবল, নীরোগ ও কীর্তিমান হয় । লগ্নপতি ধনস্থানে অর্থাৎ দ্বিতীয় ঘরে থাকলে জাতক দীর্ঘজীবি, ধনবান ও কর্মক্ষেত্রে উন্নতি করে ।
লগ্নপতি তৃতীয়ে বা ভ্রাতৃস্থানে থাকলে ভাইয়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকে, বন্ধুভাগ্য ভাল হয়। জাতক ধার্মিক, দাতা ও বিক্রমী হয।
লগ্নপতি চতুর্থ ঘরে থাকলে জাতক দীর্ঘজীবি, পিতৃভক্ত, রাজভক্ত, ভূসম্পত্তির অধিকারী হয়। জাতক পিতার সম্পত্তি লাভ করে।
লগ্নপতি পঞ্চম ঘরে থাকলে জাতক সুপুত্রের পিতা হয়। জাতক দীর্ঘজীবী, ক্ষমতাবান বিনীত, ত্যাগী ও বিখ্যাত হয় ।
লগ্নপতি ষষ্ঠ ঘরে থাকলে জাতক নীরোগ, সবল, ধনী, কৃপণ ও শত্রুহন্তা হয় ৷
লগ্নপতি সপ্তম ঘরে থাকলে জাতক সুন্দরী স্ত্রী লাভ করে, সচ্চরিত্র, তেজস্বী এবং স্ত্রৈণ হয়। জাতিকার ক্ষেত্রে সুদর্শন পতি লাভ ও স্বামীর নেওটা হওয়ার সম্ভাবণা প্রবলভাবে দেখা যায় ।
লগ্নপতি অষ্টম ঘরে থাকলে জাতক ধনী, কৃপণ ও দীর্ঘায়ু হয়।
লগ্নপতি নবম ঘরে থাকলে জাতক ধার্মিক, যশস্বী ও তেজস্বী হয়।
লগ্নপতি দশমগত হলে জাতক পণ্ডিত, বিখ্যাত গুরু, রাষ্ট্রশক্তির কৃপাধন্য হয়।
লগ্নপতি একাদশ স্থানে থাকলে জাতক অর্থবান, বন্ধুবিশিষ্ট ও পুত্রবান হয।
লগ্নপতি দ্বাদশ বা ব্যবস্থানে থাকলে জাতক কটুভাষী, ব্যয়ের আধিক্য থাকলেও অর্থকষ্ট হয় না।
দ্বিতীয়পতি
দ্বিতীয়পতি বা ধনাধিপতি লগ্নে থাকলে জাতক উদ্যোগী, ধনী, কৃপণ, নির্দয় ও আত্মীয়- কুটুম্ব বিরোধী হয়।
দ্বিতীয়পতি দ্বিতীয় স্থানে অর্থাৎ ধনস্থানে থাকলে জাতক ধনী, অর্থলোভী ও গর্বিত হয় ।
দ্বিতীয়পতি তৃতীয় ঘরে থাকলে জাতক উদ্যোগী, বিক্রমী, ধনী গর্বিত, চঞ্চলচিত্ত ও কলহপ্রিয় হয়।
দ্বিতীয়পতি চতুর্থস্থানে থাকলে জাতক পিতার সম্পত্তি লাভ করে, সত্যবাদী, দীর্ঘায়ু ও দয়ালু হয়।
দ্বিতীয়পতি ক্রূর গ্রহ হয়ে চতুর্থ ঘরে থাকলে দ্বিতীয়পতির দশা-অন্তর্দশায় মায়ের কঠিন অসুখ হয়।
দ্বিতীয়পতি পঞ্চমে থাকলে জাতক কৃপণ, দুঃখী, সুপুত্রের পিতা হয় ও নিজগুণে খ্যাতি লাভ করে।
দ্বিতীয়পতি ষষ্ঠে থাকলে জাতক ধনসংগ্রহে আগ্রহী হয়।
দ্বিতীয়পতি সপ্তম ঘরে থাকলে জাতক বিলাসী, আনন্দময়ী, রোজগেরে স্ত্রী লাভ করে ।
দ্বিতীয়পতি অষ্টম ঘরে থাকলে জাতক কোনও মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি লাভ কবে, পরোপকারী হয় তবে স্ত্রীর বিষয়ে অসুখী হয়।
দ্বিতীয়পতি নবমে থাকলে জাতক গুরুর প্রিয় হয় ও দাতা হয়। তবে দ্বিতীয়পতি পাপগ্রহ হলে জাতক ভিক্ষুকজীবন লাভ করে।
দ্বিতীয় পতি দশমে বা কর্মঘরে থাকলে জাতক রাষ্ট্রশক্তিমান্য, রাষ্ট্রশক্তির কৃপায় ধনী, মানী, পণ্ডিত, মা ও বাবার পালক ও একাধিক স্ত্রী বা স্ত্রীছাড়া বহু নারীর সঙ্গে দৈহিক সম্পর্কযুক্ত হয়।
দ্বিতীয়পতি একাদশে থাকলে জাতক উদ্যমী ও আশ্রিত-পালক হয়।
দ্বিতীয়পতি দ্বাদশ বা ব্যবস্থানে থাকলে জাতক ধনী, সাহসী, ও দুঃখী হয়। দ্বিতীয়পতি পাপ গ্রহ হলে জাতক ভিক্ষাবৃত্তি গ্রহণ করে।
তৃতীয়পতি
তৃতীয় ভাব থেকে ভ্রাতা, পরাক্রম, ইত্যাদি বিচার করা হয়।
তৃতীয়পতি লগ্নগত হলে জাতক লম্পট, বড় বড় কথা বলার স্বভাবযুক্ত, অসৎ বন্ধুযুক্ত ও সেবাপরায়ণ হয় ।
তৃতীয়পতি দ্বিতীয় ঘরে থাকলে জাতক নির্ধনী, অল্পায়ু ও বন্ধুবিরোধী হয়।
তৃতীয়পতি তৃতীয় ঘরে থাকলে গরুভক্তি, দেবভক্তি বা রাজভক্তির অধিকারী হয়।
তৃতীয়পতি চতুর্থে থাকলে জাতক পিতা ও সহদরদের সুখী করলেও মায়ের সঙ্গে ঝগড়া লেগে থাকে।
তৃতীয়পতি পঞ্চমে থাকলে জাতক পরোপকারী, দীর্ঘায়ু ও সুবন্ধুভাগ্যের অধিকারী হয় ।
তৃতীয়পতি ষষ্ঠে থাকলে জাতক ধনী, নেত্ররোগী ও বন্ধু-বিরোধী হয়।
তৃতীয়পতি সপ্তম ঘরে থাকলে স্ত্রী সুন্দরী ও সৌভাগ্যবতী হয়। তৃতীয়পতি পাপ গ্রহ হলে স্ত্রীর সঙ্গে দেবরের অবৈধ সম্পর্ক থাকে ৷
তৃতীয়পতি অষ্টমে থাকলে জাতকের সহোদরের মৃত্যু ঘটে।
তৃতীয়পতি নবমে থাকলে জাতক বন্ধু-পরিত্যক্ত হয়। তবে তৃতীয়পতি শুভগ্রহ হলে জাতক ভালো বন্ধু লাভ করে ।
তৃতীয়পতি দশমে থাকলে জাতক মাতৃভক্ত, বন্ধুপ্রিয় ও রাষ্ট্রনায়কের পূজ্য হয়। তৃতীয়পতি একদশে থাকলে জাতক সুমিত্র, ভোগী ও রাষ্ট্রশক্তির দ্বারা লাভবান হয় ৷ তৃতীয়পতি দ্বাদশে থাকলে জাতক মিত্র-বিরোধী ও দূরদেশবাসী হয়।
চতুর্থপতি
চতুর্থস্থান থেকে বিদ্যা, জননী, পিতৃবিত্ত ও সুখ বিচার করা হয়। চতুর্থপতি লগ্নে থাকলে পিতা ও পুত্র পরস্পরের সম্পর্ক সুন্দর থাকে। পুত্র পিতার নামে বিখ্যাত হয়।
চতুর্থপতি দ্বিতীয় ঘরে থাকলে পিতার সঙ্গে বিরোধ হয়। চতুর্থপতি শুভগ্রহ হলে অবশ্য জাতক পিতার পালক ও খ্যাতিমান হয়।
চতুর্থপতি তৃতীয়ে থাকলে জাতক পিতা-মাতার শত্রু এমন কি পিতা-মাতার হত্যাকারীও হয়।
চতুর্থপতি চতুর্থ ঘরে থাকলে জাতক ধনী, মানী, ধার্মিক ও সুখী হয়।
চতুর্থপতি পঞ্চমে থাকলে জাতক ভূ-সম্পত্তির মালিক, জনপ্রিয়, বিষ্ণুভক্ত হয়। জাতকের পিতা ধনী ও পুত্র দীর্ঘায়ু হয়।
চতুর্থপতি ষষ্ঠে থাকলে জাতকের একাধিক মা থাকে। জাতক পিতার অর্থনাশকারী, পিতার শত্রু, পিতার দোষ নিজ চরিত্রে গ্রহণকারী ও চোর হয় ।
চতুর্থপতি সপ্তম ঘরে থাকলে জাতক বিদ্বান, পিতৃধনত্যাগী ও সভায় জড়বৎ হয়।
চতুর্থপতি অষ্টমে থাকলে জাতক রুগ্ন, দরিদ্র, দুষ্কর্মা ও মৃত্যুপ্রিয় হয় ।
চতুর্থপতি নবমে থাকলে জাতক বিদ্বান ও পিতার প্রতি অনাসক্ত হয়।
চতুর্থপতি দশমে থাকলে জাতক রাষ্ট্রশক্তি কর্তৃক মান্য, সুখী, আনন্দচিত্ত ও রসায়নবিদ হয়।
চতুর্থপতি একাদশে থাকলে জাতক উদার, গুণবান, দাতা ও নিত্যরোগী হয়।
চতুর্থপতি দ্বাদশে অবস্থান করলে জাতক অসুখী ও পিতৃসুখহীন হয় ।
চতুর্থপতি পাপগ্রহ হলে জাতক জারজ ও ক্লীব হয় ।
পঞ্চমপতি
পঞ্চমভাব থেকে পুত্র, বুদ্ধি, দেবভক্তি, রাষ্ট্রশক্তির অনুগ্রহ ও জাতকের গুপ্ত-মন্ত্রণাশক্তির পরিচয় পাওয়া যায় ।
পঞ্চমপতি লগ্নে থাকলে জাতক বুদ্ধিমান, কৃপণ, স্বার্থপর ও শাস্ত্রজ্ঞ হয়।
পঞ্চমপতি দ্বিতীয়ে থাকলে জাতক ধনবান, উচ্চপদস্থ, খ্যাতিমান, ক্রোধী ও দুঃখিত চিত্ত হয়।
পঞ্চমপতি তৃতীয়ে থাকলে জাতক মিষ্টভাষী ও যশষী হয় ।
পঞ্চমপতি চতুর্থ ঘরে থাকলে জাতক মাতৃভক্ত, পিতৃকর্মে রত হয়।
পঞ্চমপতি পঞ্চমে থাকলে জাতক বুদ্ধিমান, বচনকুশল, ও খ্যাতিমান হয় ৷
পঞ্চমপতি ষষ্ঠে থাকলে জাতক শত্রুযুক্ত, রুথ, ধনহীন, মানহীন ও পুত্রযুক্ত হয়।
পঞ্চমপতি সপ্তমে থাকলে জাতক সুশীলা, পুত্রবর্তী স্ত্রী লাভ করে।
পঞ্চমপতি অষ্টমে থাকলে জাতকের স্ত্রী অসুস্থা, পুত্র ও ভ্রাতা বিকলাঙ্গ হয়, অথবা জাতক সন্তানহীন হয় ।
পঞ্চমপতি নবমে থাকলে জাতক কবি, সাহিত্যিক, সংগীতজ্ঞ, রসিক, বিদ্বান ও বুদ্ধিমান হয়।
পঞ্চমপতি দশমে থাকলে জাতক বিখ্যাত, মাতৃসুখযুক্ত ও পুত্র রাষ্ট্রনেতা হয়।
পঞ্চমপতি একাদশে থাকলে জাতক লেখক, জনপ্রিয় ও পুত্র রাষ্ট্রনেতা হয় ।
পঞ্চমপতি দ্বাদশে থাকলে এবং পঞ্চমপতি শুভ গ্রহ হলে জাতক সুপুত্রের অধিকারী হয় এবং জাতকের বিদেশযাত্রা সূচিত হয়।
পঞ্চমপতি অশুভ হলে জাতক পুত্রহীন হয়।
ষষ্ঠপতি
ষষ্ঠভাব থেকে শত্রু, রোগ, চিন্তা, মাতুল, ক্রুরতা ইত্যাদি বিচার করা হয়।
ষষ্ঠপতি লগ্নে থাকলে জাতক সবল, নিবোগী, উদ্যমী, রিপুজয়ী, বাচাল ও আত্মীয়দের কষ্টদানকারী হয়।
ষষ্ঠপতি দ্বিতীয়ে বা ধনস্থানে থাকলে জাতক দুষ্ট, চতুর, সঞ্চয়ী উচ্চপদস্থ, খ্যাতিমান, রোগযুক্ত ও পুত্রদ্বারা অপহূতধন হয়।
ষষ্ঠপতি তৃতীয়ে থাকলে জাতক ক্রোধী, বিত্তবান, ভাতৃ-বিরোধী হয়।
ষষ্ঠপতি চতুর্থে থাকলে পিতা রুগ্ন হন, পিতা পুত্রে বৈরিতা থাকে, পিতার বিত্তহানি ঘটে।
ষষ্ঠপতি পঞ্চমে থাকলে পুত্রহানি, পিতা-পুত্রে শত্রুতা ও রাষ্ট্রশক্তির নিগ্রহ জোটে ।
ষষ্ঠপতি ষষ্ঠে থাকলে জাতক নিবোগী, সুখী ও কৃপণ হয় ।
ষষ্ঠপতি পাপগ্রহ হয়ে সপ্তমে থাকলে স্ত্রী উগ্র ও প্রচণ্ড স্বভাবের হয়।
ষষ্ঠপতি শুভগ্রহ হয়ে সপ্তমে থাকলে স্ত্রী বন্ধ্যা ও গর্ভপাত রোগযুক্ত হয়। ।
ষষ্ঠপতি হয়ে অষ্টমে শনি থাকলে রোগ, অষ্টমে মঙ্গল থাকলে সর্পদংশনের ভয়, বুধ বিষ থেকে ভয়, চন্দ্ৰ হঠাৎ মৃত্যু, রবি বনচর পশু থেকে ভয়, বৃহস্পতি দুষ্টুবুদ্ধি, এবং ষষ্ঠপতি হয়ে অষ্টমে শুক্র থাকলে নেত্রপীড়া হয়।
ষষ্ঠপতি হয়ে কোনও পাপগ্রহ নবমে থাকলে জাতক খোঁড়া, পণ্ডিত-বিরুদ্ধবাদী ও গুরু- অবজ্ঞাকারী হয়।
ষষ্ঠপতি হয়ে কোনও পাপগ্রহ দশমে থাকলে মায়ের সঙ্গে শত্রুতা হয়। শুভগ্রহ থাকলে ধর্মে মতি, পুত্ৰপালনে মতি দেখা যায় ।
কোনও পাপগ্রহ ষষ্ঠপতি হয়ে একাদশে থাকলে শত্রু থেকে মৃত্যু, রিপু ও চোর থেকে ক্ষতি হয় ।
যষ্ঠপতি দ্বাদশে থাকলে গৃহপালিত পশু ও ধননাশ ও জাতক ইর্ষাপরায়ণ হয় ৷
সপ্তমপতি
সপ্তম ঘর থেকে স্ত্রী বা স্বামী, ব্যবসা ও ভ্রমণ বিচার করা হয়। ধনভাব অর্থাৎ লগ্ন থেকে দ্বিতীয় ঘর, সপ্তম ঘর ও শুক্র থেকে জ্যোতিষীরা স্ত্রী বা স্বামী বিষয়ে বিচার করে থাকেন।
সপ্তমপত্তি রাহু বা কেতুর সঙ্গে যুক্ত হলে জাতক ব্যভিচারী হয়।
সপ্তমপতি ও ধনাধিপতি বা দ্বিতীয় ঘরের অধিপতির সম্বন্ধবিশিষ্ট দশা বা অন্তর্দশা তবে বিয়ে হয়। শুক্র, চন্দ্র ও লগ্ন থেকে সপ্তমস্থানের অধিপতির দশা-অন্তর্দশায়ও বিয়ের সম্ভাবনা থাকে।
পতি বলবান হবে, বোল্ড কোণে থাকলে ভালো বিয়ে হয়।
সপ্তমপতি বা পশুপতি যাপতির সঙ্গে যুক্ত বা দুষ্ট হলে স্ত্রী উপপতির সাহায্যে সন্তান উৎপাদন করে। জাতিকা হলে স্বামী বহুস্ত্রী বিশিষ্ট হয় ।
এই ধবনের আরও অনেক বিশ্বাসই জড়িয়ে আছে সপ্তম স্থান ঘিরে। এবার আমরা বরং সপ্তমপতি কোন ঘরে থাকলে জ্যোতিষ-বিচার কী বলে দেখা যাক।
সপ্তমপতি লগ্নে থাকলে জাতক রূপবান, ভোগী ও স্ত্রীর দ্বারা অবহেলিত হয়। সপ্তমপতি দ্বিতীয় ঘরে থাকলে জাতকের স্ত্রী দুষ্টু প্রকৃতির হয়, জাতক সুখহীন ও নিৰ্জনপ্রিয় হয় ৷
সপ্তমপতি তৃতীয ঘরে থাকেল স্ত্রী সুন্দরী ও দেবরের সঙ্গে প্রণয়াবদ্ধ হয়। সপ্তমপতি পাপগ্রহ হলে স্ত্রী দেবরের সঙ্গে ঘর বাঁধে। জাতক অসুখী, বন্ধুবৎসল ও আত্মনির্ভরশীল হয় ।
সপ্তমপতি চতুর্থ ঘরে থাকলে জাতক চঞ্চলচিত্ত, স্নেহপ্রবণ হন ।
সপ্তমপতি পঞ্চমে থাকলে জাতক সৌভাগ্যযুক্ত, সাহসী ও দুষ্ট স্বভাবের হয়। সপ্তমপতি ষষ্ঠে থাকলে জাতকের স্ত্রীর প্রতি আসক্তি থাকে না, এমন কী স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক শত্রুতায় দাঁড়ায়।
সপ্তমপতি সপ্তমে থাকলে জাতক সুখী, দীর্ঘায়ু, তেজস্বী, নির্মল-স্বভাবযুক্ত হয়। সপ্তমপতি অষ্টমে থাকলে জাতক চিরকুমার ও বেশ্যাসক্ত হয়।
সপ্তমপতি নবমে থাকলে জাতক স্বয়ং তেজস্বী, ভদ্র, মার্জিত রুচির হন। স্ত্রীও তেজস্বিনী ও রুচিশীলা হন।
সপ্তমপতি দশমে থাকলে জাতক লম্পট, কর্কশভাষী ও ক্রুর-প্রকৃতির হয়।
সপ্তমপতি একাদশে থাকলে জাতকের স্ত্রী রূপবতী ও সুশীলা হয়।
সপ্তমপতি দ্বাদশ ঘরে থাকলে জাতকের স্ত্রী চঞ্চলা, পর-পুরুষে আগ্রহী হয় কিংবা স্ত্রী অন্যের সঙ্গে ঘর ছাড়ে।
অষ্টমপতি
অষ্টমস্থান থেকে জাতকের মৃত্যু বিচার করা হয়। এ-ছাড়াও মৃত্যু বিষয়ক আরও অনেক কিছুরই বিচার করা হয় অষ্টমস্থান থেকে ।
অষ্টমপতি লগ্নে থাকলে জাতক রোগী, চোর, খারাপ আলোচনায় আগ্রহী হয় ।
অষ্টমপতি পাপগ্রহ হয়ে দ্বিতীয় ঘরে থাকলে স্বল্পায়ু, রাজতুল্য, শত্ৰুবান হয়। অষ্টমপতি শুক্রগ্রহ হয়ে দ্বিতীয়ে থাকলে ফল শুভ হয়, কিন্তু রাষ্ট্রশক্তির কাছ থেকে কষ্ট পায় ।
অষ্টমপতি তৃতীয়ে থাকলে জাতক বিকলাঙ্গ, চঞ্চল, দুর্বাক, সহোদরহীন ও বন্ধুবিরোধী হয়।
অষ্টমপতি চতুর্থে থাকলে জাতকের পিতা রুগ্ন হযয় পিতার সঙ্গে শত্রুতা হয়, জাতক পিতার ধন-সম্পত্তি অপহরণ করে।
অষ্টমপতি পঞ্চমে থাকলে জাতক অপুত্রক হয়, পুত্র হলেও বাঁচে না। অষ্টমপতি শুভগ্রহ হয়ে শুভগ্রহের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পঞ্চমে থাকলে জাতক সুপুত্ৰ লাভ কবে ।
অষ্টমপতি যদি রবি হয় ও ষষ্ঠে থাকে তবে জাতক রাজশক্তি-বিরোধী হয়।
অষ্টমপতি যদি চন্দ্র হয় ও ষষ্ঠে থাকে তবে জাতক রোগী হয়।
অষ্টমপতি যদি মঙ্গল হয়ে ষষ্ঠে থাকে, জাতক ঈর্ষাপারাযণ হয়। বুধ হলে সর্পভয়। বৃহস্পতি হলে কৃশদেহী। শুরু হলে নেত্ররোগী এবং অষ্টমপতি যদি শনি হয়ে ষষ্ঠে থাকে, জাতক মুখের রোগ ভোগ করে।
অষ্টমপতি সপ্তমে থাকলে জাতক দুষ্ট, গুহ্যযোগযুক্ত হয়। অষ্টমপতি পাপগ্রহ হয়ে সপ্তমে থাকলে জাতক স্ত্রী-বিদ্বেষী ও স্ত্রী-দোষে জাতকের মৃত্যু হয়।
অষ্টমপতি অষ্টম ঘরে থাকলে জাতক ব্যবসায়ী ও সুস্থদেহী হয়।
অষ্টমপতি নবমগত হলে জাতক নিঃসঙ্গ, ঘাতক, পাপী, স্নেহশূন্য এবং পূজনীয় ব্যক্তির প্রতি সম্মান প্রদর্শনে পরাম্মুখ হয়।
অষ্টমপতি দশমে থাকলে জাতক সরকারী কর্মচারী, অলস ও বাল্যে মাতৃহীন হয়। অষ্টমপতি একাদশে থাকলে জাতক অল্পায়ু, বাল্যে দুঃখী ও শেষ বয়সে সুখী হয়। অষ্টমপতি দ্বাদশে থাকলে জাতক তস্কর, শঠ, বিকৃতদেহ ও স্বেচ্ছাচারী হয়।
নবমপতি
নবমভাব ও বৃহস্পতি থেকে জাতকের ভাগ্য, গুরুর অনুগ্রহ, ধর্মানুষ্ঠান, উরু ও বাঁ- পায়ের বিচার করা হয়। নবমস্থানকে বলা হয় ভাগ্যস্থান ।
লগ্ন থেকে নবম ও চন্দ্র অর্থাৎ জন্মরাশি থেকে নবম—-এই দুটির মধ্যে যেটি বেশি বলবান সেটা থেকেই ভাগ্য বিচার করা হয়।
নবমপতি লগ্নে থাকলে জাতক বুদ্ধিমান, দেব ও গুরুভক্ত, কৃপণ, স্বল্প ভূসম্পত্তিসম্পন্ন ও সরকারী কর্মচারী হয়।
নবমপতি ধনস্থানে থাকলে জাতক ধনী, বিখ্যাত, বিদ্বান ও যশবান হয়।
নবমপতি তৃতীয় ঘরে থাকলে জাতক বন্ধু-বৎসল হয় ও তার একাধিক স্ত্রী থাকে।
নবমপতি চতুর্থ ঘরে থাকলে জাতক পিতৃভক্ত, বিখ্যাত, ভুসম্পত্তির অধিকারী ও বন্ধুদের উপকারী হয় ।
নবমপতি পঞ্চম ঘরে থাকলে জাতক রূপবান, পুত্রবান ও দেবভক্ত হয় ।
নবমপতি ষষ্ঠে থাকলে জাতক অর্ধমপরায়ণ, নিদ্রালু এবং অশক্ত-দেহী হয়।
নবমপতি সপ্তমে থাকলে জাতক সুরূপা, সুশীলা, শ্রীমতি স্ত্রী লাভ করে।
নবমপতি অষ্টমে থাকলে জাতক অধার্মিক, দুষ্ট, হিংস্র ও বন্ধুশূণ্য হয়।
নবমপতি নবমে থাকলে জাতক স্বদেশে ভাগ্যবান, বন্ধু-প্রিয়, দাতা ও দেব-গুরু-ভক্ত হয়।
নবমপতি দশমে থাকলে জাতক বিশাল ধনী ও ধর্ম দ্বারা বিখ্যাত হয়। মাতার কখনও কোনও বিঘ্ন হয় না।
নবমপতি একাদশে থাকলে জাতক ধর্মিক, স্নেহপরাযণ, ধনী, বিখ্যাত ও দীর্ঘায়ু হয়। নবমপতি দ্বাদশে থাকলে জাতক বিদেশে মানী, রূপবান ও বিদ্বান হয়। নবমপতি পাপগ্রহ হয়ে দ্বাদশে থাকলে ধূর্ত ও মন্দবুদ্ধি হয়।
দশমপতি
দশমস্থান থেকে জাতকের ব্যক্তিত্ব, সম্মান, যশ, প্রতিপত্তি ও প্রভুত্ব ইত্যাদি বিচার করা হয়।
নগ্ন ও চন্দ্রের মধ্যে যে বলবান, সেই বলবান স্থান থেকে দশমভাব বিচার কবে জাতকের কর্ম ও বৃত্তিবিচারও করা হয়ে থাকে। দশমস্থান অর্থাৎ কর্মস্থানে গ্রহ থাকলে শুভ ফল দিযে থাকে। গর্গমতে দশমস্থানে কোনও গ্রহ বা গ্রহের দৃষ্টি না থাকলে জাতক দরিদ্র হয়।
দশমপতি লগ্নে থাকলে জাতক পিভ, মায়ের বিরোধী, দুঃখী ও শৈশবে পিতৃহীন হয়।
দশমপতি দ্বিতীয়স্থানে থাকলে জাতক মায়ের দ্বারা পালিত, মায়ের অনিষ্টকারী, অল্প ভূসম্পত্তিসম্পন্ন ও অল্পকর্ম হয় ।
দশমপতি তৃতীয়স্থানে থাকলে মা ও আত্মীয়দের বিরোধী হয় এবং জাতক মামারবাড়িতে পালিত হয় ।
দশমপতি চতুর্থে থাকলে স্নাতক মা-বাবাকে সুখী কবে, সকলকেই আনন্দ দেয় ও রাষ্ট্রশক্তির অনুগ্রহ লাভ করে।
দশমপতি পঞ্চমে থাকলে জাতক রাষ্ট্রশতির অনুগ্রহ লাভ করে এবং সংগীত-প্রিয় হয় ।
দশমপত্তি ষষ্ঠে থাকলে জাতক নিজগুণে বিখ্যাত হয়, পিতৃ-সম্পত্তি লাভ করে এবং বাষ্ট্রশক্তির অনুগ্রহ পেয়ে থাকে। ষটে পাপগ্রহ থাকলে অশুভ ফল পায়।
দশমপতি সপ্তমে থাকলে জাতকের স্ত্রী সুরূপা, পুত্রবর্তী এবং জাতক মাতৃপালক হয় দশমপত্তি অষ্টমে থাকলে জাতক মিথ্যাবাদী, চোর, ধূর্ত ও মাকে কষ্ট দেয়। অবশ্য অষ্টমে শুভগ্রহ থাকলে অশুভ এই ফল লাভ করতে হয় না ।
দশমপতি নবমে থাকলে জাতক সচ্চরিত্র, সদবন্ধুবিশিষ্ট হয়। জাতকের মা হন পুণ্যবর্তী।
দশমপতি দশমে থাকলে জাতক বাচতুর হয় ও মা’কে সুখী করে ৷
দশমপতি একাদশে থাকলে জাতক সম্মান ও ধনলাভ করে, দীর্ঘায়ু হয় ও মাকে সুখী করে !
দশমপতি দ্বাদশে থাকলে জাতক শক্তিমান, রাজকর্মে বত, সৎকাজে উৎসাহী হয়। দশমে কৃবগ্রহ থাকলে জাতক বিদেশগামী হয়।
একাদশপতি
একাদশ স্থানকে আয়স্থান বলা হয় । লগ্ন থেকে একাদশ স্থানে কোনও গ্রহের দৃষ্টি থাকলেই কিছু শুভ হয়ে থাকে। রবিযুক্ত অথবা রবিদৃষ্ট আয়ভাব রবির স্বক্ষেত্র হলে জাতক রাষ্ট্রশক্তি অর্থাৎ মন্ত্রী, চোর, চতুষ্পদ জন্তু ও কলহ থেকে ধন লাভ করে। একাদশস্থান চন্দ্রের ক্ষেত্র হলে এবং তাতে চন্দ্রের দৃষ্টি যোগ থাকলে জাতকের জলাশয়, অশ্ব ও স্ত্রী বৃদ্ধি হয়। কিন্তু চন্দ্র দূর্বল হলে ফল বিপরীত হয়। মঙ্গল একাদশে দৃষ্টি দিলে এবং একাদশ স্থানটি মঙ্গলের স্বক্ষেত্র হলে জাতক সাহস ও কৌশলের দ্বারা প্রচুর আয় করে থাকে। একাদশে বুধ থাকলে জাতক কাব্য, শিল্প, বানিজ্য, ইত্যাদির দ্বারা আর করে। একাদশে বৃহস্পতি থাকলে জাতক বাষ্ট্রশক্তির অনুগ্রহে বিপুল অর্থ ও সম্পত্তির মালিক হয় ।
এবার দেখা যাক একাদশ স্থানের অধিপতি কোন কোন স্থানে কি ধরনের ফল দেয় বলে জ্যোতিষীরা বিশ্বাস করেন ।
একাদশপতি লগ্নে থাকলে জাতক স্বল্পায়ু, বীর, দাতা, ধনপ্রিয় ও সৌভাগ্যশালী হয় । একাদশপতি দ্বিতীয় বা ধনস্থানে থাকলে জাতক যা আয় করে তাই ব্যয় হয়ে যায়। জাতক দুঃখ ও রোগভোগ করে এবং স্বল্পায়ু হয় ।
একাদশপতি তৃতীয়ে থাকলে জাতক বন্ধুবৎসল ও সৎ হয় ।
একাদশপতি চতুর্থে থাকলে জাতক দীর্ঘায়ু, পিতৃভক্ত, ধার্মিক হয়। একাদশপতি পঞ্চমে থাকলে জাতকের পুত্র স্বল্পায়ু হয়।
একাদশপতি ষষ্ঠাগত হলে জাতক শত্ৰুবিশিষ্ট হয়, দীর্ঘ রোগভোগ করে, অশ্ব সংগ্রহকারী হয়। একাদশপতি ক্রূরগ্রহ হয়ে ষষ্ঠে থাকলে জাতক বিদেশে চোর-ছিনতাইকারীদের হাতে প্ৰাণ দেয় ৷
একাদশপতি সপ্তমে থাকলে জাতক তেজস্বী, দীর্ঘায়ু, সুশীল এবং এক স্ত্রীর স্বামী হয়ে থাকে ।
একাদশপতি অষ্টমে ক্রূরগ্রহ থাকলে জাতক জীবনৃত, স্বল্পায়ু, ও দীর্ঘ রোগভোগ করে। শুভগ্রহ থাকলে জাতক দুঃখী জীবন কাটায়।
একাদশপতি নবমে থাকলে জাতক বহুশাস্ত্রে পণ্ডিত, ধর্মে খ্যাতিলাভ করে।
একদশপতি দশমে থাকলে জাতক মাতৃভক্ত, পিতৃদ্বেষী, ধনবান ও দীর্ঘজীবী হয়।
একদশপতি একাদশে থাকলে জাতক রূপবান, সুশীল, জনপ্রিয়, দীর্ঘায়ু এবং পুত্রপৌত্রবিশিষ্ট হয় ।
একদশপতি দ্বাদশে থাকলে জাতক মানী, দাতা, দুঃখী, অস্থিরমতি ও তেজী হয়।
দ্বাদশপতি
দ্বাদশপতি থেকে ব্যয়, অর্থহানি, আইনের-দণ্ড ইত্যাদি বিচার করা হয়। জ্যোতিষশাস্ত্র মতে দ্বাদশে রবি, মঙ্গল অথবা শনি থাকলে জাতক অতিরিক্ত ব্যয়শীল হয়। বৃহস্পতি, শুক্র ও পূর্ণচন্দ্র ব্যবস্থানে অর্থাৎ একাদশে থাকলে জাতক সঞ্চয়শীল হয়। ব্যবস্থানে শুক্র থাকলে জাতক নীচ মনের মানুষ হয়। অলস, ভোগী ও রমনপ্রিয় হয়। ব্যবস্থানে শুভগ্রহ থাকলে জাতক সদ্ব্যায়ী ও কীর্তিমান হয়। ব্যবস্থানে অশুভগ্রহ থাকলে জাতক অসৎ কাজে ব্যয় করে এবং কুকীর্তির অধিকারী হয়। দ্বাদশে রবি বা মঙ্গল থাকলে জাতক চোখের পীড়ায় ভোগে।
দ্বাদশপতি লগ্নে থাকলে জাতক রূপবান, মিষ্টভাষী, বিদেশগামী, চিরকুমার, চিরকুমারী অথবা ক্লীব হয়।
দ্বাদশপতি দ্বিতীয়ে থাকলে জাতক কটুভাষী ও কৃপণ হয়। দ্বাদশপতি দ্বিতীয়ে ক্রূরগ্রহ হলে অল্পায়ু হয়। রাষ্ট্রশক্তি, চোর ও আগুন থেকে জাতক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
দ্বাদশপতি তৃতীয়ে থাকলে জাতক ধনবান, কৃপণ, অল্প সহোদর-যুক্ত এবং বন্ধুহীন হয়।
দ্বাদশপতি চতুর্থে থাকলে জাতক কৃপণ, দুঃখী ও অসুখ নিয়ে ভীত হয়। পুত্র জাতকের মৃত্যুর কারণ হয়।
দ্বাদশপতি পঞ্চমে থাকলে জাতক পিতৃভক্ত ও পুত্রবিশিষ্ট হয়। ক্রূরগ্রহ দ্বাদশপতি হয়ে পঞ্চমে থাকলে জাতক পুত্রহীন হয়।
দ্বাদশপতি ষষ্ঠে থাকলে ক্রূরগ্রহে হলে জাতক কৃপণ ও অল্পায়ু হয় এবং জনগণের দ্বারা নিন্দিত হয়।
দ্বাদশপতি যদি শুক্র হয় এবং ষষ্ঠে থাকে জাতক অন্ধ হয়।
দ্বাদশপতি সপ্তমে থাকলে দুশ্চরিত্র লম্পট, বাচাল ও নিন্দিত চরিত্রের হয়। জাতকের হাতে দেহজীবির মৃত্যু হয়।
দ্বাদশপতি ক্রূরগ্রহ হয়ে সপ্তমে থাকলে জাতক স্ত্রীর মৃত্যুর কারণ হয় ।
দ্বাদশপতি অষ্টমে শুভগ্রহ থাকলে জাতক ধনী এবং অশুভগ্রহ থাকলে চরম ভাগ্যহীন
দ্বাদশপতি নবমে থাকলে জাতক বার বার বৃত্তি পরিবর্তন করে।
দ্বাদশপতি দশমে থাকলে জাতক ধনী, পুত্রবান হয় ।
দ্বাদশপতি একাদশে থাকলে জাতক খ্যাতিমান, সুদর্শন, সত্যাশ্রয়ী, দাতা, দীর্ঘজীবী ও কর্মজীবনে উচ্চপদস্থ হয় ৷
দ্বাদশপতি দ্বাদশে থাকলে জাতক ঐশ্বর্যশালী, কৃপণ ও দীর্ঘজীবী হয়।
রাশি অনুসারে যোটক বিচার
জ্যোতিষশাস্ত্র মতে পুরুষদের মেষ থেকে মীন পর্যন্ত বারোটি রাশির ক্ষেত্রে নারীদের কোন রাশির মিলন কেমন হবে ছক করে এ-বিষয়ে আলোকপাত করলাম-
কিছু কথা
♦ শোষণ ব্যবস্থাকে কায়েম রাখতেই মগজ ধোলাই চলছে
♦ দেশপ্রেম নিয়ে ভুল ধারনা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে
♦ গণতন্ত্র যেখানে বর্বর রসিকতা
♦ জনসেবা নিয়ে স্বচ্ছতা থাকা অতি প্রয়োজনীয়
♦ যুক্তিবাদের আগ্রাসন প্রতিরোধে কাগুজে যুক্তিবাদীর সৃষ্টি
♦ যুক্তিবাদবিরোধী অমোঘ অস্ত্র ‘ধর্ম’
♦ যুক্তিবাদী আন্দোলন নিয়ে প্রহসন কতদিন চলবে?
♦ আন্দোলনে জোয়ার আনতে একটু সচেতনতা, আন্তরিকতা
অধ্যায়ঃ এক
♦ পত্র-পত্রিকায় সাড়া জাগানো কিছু ভবিষ্যদ্বাণী প্রসঙ্গে
অধ্যায়ঃ দুই- অশিক্ষা, পদে পদে অনিশ্চয়তা এবং পরিবেশ মানুষকে ভাগ্য নির্ভর করে
♦ অদৃষ্টবাদ যেখানে অশিক্ষা থেকে উঠে আসে
♦ অনিশ্চয়তা আনে ভাগ্য নির্ভরতা
♦ পরিবেশ আমাদের জ্যোতিষ বিশ্বাসী করেছে
♦ মানব জীবনে দোষ-গুণ প্রকাশে পরিবেশের প্রভাব
অধ্যায়ঃ তিন
অধ্যায়ঃ চার
♦ জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতিষশাস্ত্রের পার্থক্য
অধ্যায়ঃ পাঁচ
♦জ্যোতিষশাস্ত্রের বিচার পদ্ধতি
অধ্যায়ঃ ছয়
অধ্যায়ঃ সাত
♦ জ্যোতিষীরা জ্যোতিষশাস্ত্রের পক্ষে যে-সব যুক্তি হাজির করেন
অধ্যায়ঃ আট
♦ জ্যোতিষশাস্ত্রের বিরুদ্ধে বিজ্ঞানের যুক্তি
অধ্যায়ঃ নয়
♦ মানব শরীরে রত্ন ও ধাতুর প্রভাব
অধ্যায়ঃ দশ
♦ জ্যোতিষচর্চা প্রথম যেদিন নাড়া খেল
অধ্যায়ঃ এগারো
♦ কিভাবে বার-বার মেলান যায় জ্যোতিষ না পড়েই
অধ্যায়ঃ বারো
♦ জ্যোতিষী ও অলৌকিক ক্ষমতার দাবিদারদের প্রতি চ্যালেঞ্জ
২য় পর্বঃ কিছু কথা
অধ্যায়- একঃ নস্ট্রাডামুসের সঙ্গে পরিচয়
♦ নস্ট্রাডামুসের ‘আশ্চর্য’ ভবিষ্যদ্বাণী কতটা ‘আশ্চর্যজনক’?
অধ্যায়ঃ দুই
অধ্যায়ঃ তিন
অধ্যায়ঃ চার
অধ্যায়ঃ পাঁচ
অধ্যায়ঃ ছয়
অধ্যায়ঃ সাত
অধ্যায়ঃ আট
অধ্যায়ঃ নয়
অধ্যায়ঃ দশ
অধ্যায়ঃ এগারো
অধ্যায়ঃ বারো
♦ এ-দেশের পত্র-পত্রিকায় নস্ট্রাডামুস নিয়ে গাল-গপ্পো বা গুল-গপ্পো
“অলৌকিক নয়,লৌকিক- ৩য় খন্ড ” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ