বেতার অনুষ্ঠানে তা-বড় জ্যোতিষীরা ধরাশায়ী হলেন একের বিরুদ্ধে
১৯৮৫-র ১৮ জুলাই তামাম পৃথিবীর জ্যোতিষীদের কাছে ‘কালা দিবস’ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে রয়েছে। এই দিন রাত ৮ থেকে ৮-৩০ পর্যন্ত আকাশবাণী কলকাতা ‘ক’ কেন্দ্র থেকে একটি অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়। অনুষ্ঠানটির নাম প্রচারিত হয়েছিল “জ্যোতিষ নিয়ে দুচার কথা।” অনুষ্ঠানটি শুনে এই বিষয়ে মতামত জানানোর জন্য পশ্চিমবাংলার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে চিঠি পাঠান আকাশবাণীর বিজ্ঞান বিভাগের প্রযোজক। চিঠিতে অবশ্য অনুষ্ঠানটিকে “জ্যোতিষ বনাম বিজ্ঞান” নামে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
অনুষ্ঠানে জ্যোতিষী বা ভাগ্য গণনাকারীদের পক্ষে অংশ নিয়েছিলেন জ্যোতিষসম্রাট ডঃ অসিতকুমার চক্রবর্তী, ভৃগু আচার্য ওরফে শূকদের গোস্বামী, ‘এ-যুগের খনা’ নামে খ্যাত পারমিতা এবং পাগলাবাবা (বারাণসী)। বিজ্ঞানের পক্ষে বা জ্যোতিষীদের বিপক্ষে ছিলাম আমি একা। তিনজন জ্যোতিষী আকাশবাণীর আমন্ত্রণে সাড়া দেন নি। তাঁরা হলেন, মানবী কম্পুউটার শকুন্তলা দেবী, মেটাল ট্যাবলেটখ্যাত অমূললাল এবং আচার্য গৌরাঙ্গ ভারতী।
আলোচনাটিকে দুটি অংশে ভাগ করা যায়। এক অংশে ছিল জ্যোতিষশাস্ত্র ‘বিজ্ঞান, কি বিজ্ঞান নয়’ এই নিয়ে বিতর্ক। দ্বিতীয় অংশে ছিল আমার পরিচিত কয়েকজনের হাত ও ছক দেখে সাধারণ কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া, যেমন—তাদের আয় শিক্ষাগত যোগ্যতা, বিবাহ, কি ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত ইত্যাদি ।
রেকর্ডিং-এর মাসখানেক আগে শুকদের গোস্বামীকে আমার এবং আমার দুই বন্ধুর হাত দেখিয়েছিলাম। অসিতকুমার চক্রবর্তী ও পারমিতাকে দিয়েছিলাম আমার চার পরিচিত বন্ধুর জন্ম সময়। এই দুই জ্যোতিষীও গণনার সময় পেয়েছিলেন মাসখানেক। প্রতি জাতক পিছু অতীত ও বর্তমান সম্পর্কে প্রশ্ন ছিল চারটি করে। প্রশ্নগুলো রাখার সময় জ্যোতিষীদের সঙ্গে আলোচনা করে নিয়েছিলাম। যে সব প্রশ্নের ক্ষেত্রে জ্যোতিষীরা সামান্যতম অসুবিধের কথা বলেছেন, সে সব প্রশ্ন আমি তৎক্ষণাৎ বাতিল করেছি।
অনুষ্ঠনটির রেকর্ডিং করা হয়, অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হবার বেশ কিছুদিন আগে।
প্রচারিত অনুষ্ঠানটি জনমানসে এত বিপুলভাবে নাড়া দিয়েছিল যে, বিভিন্ন ভাষাভাষী পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে দীর্ঘ আলোচনা, চিঠি-পত্র এমন কী সম্পাদকীয় পর্যন্ত। বেতার অনুষ্ঠানটির প্রায় পুরোটাই বিভিন্ন ভাষাভাষী পত্রপত্রিকায় প্রায় বছর দুয়েক ধরে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত হয়েছে। কৃষ্টি সংসদ (সোনারপুর) তাঁদের নাটক ‘ভাগো ভূত ভগবান’এ বেতার অনুষ্ঠানটিকে নিয়ে এসেছেন। এই বেতার অনুষ্ঠানের পর জ্যোতিষসম্রাট ডঃ অসিতকুমার চক্রবর্তী একটি বই লিখেছেন। নাম ‘জ্যোতিষবিজ্ঞান-কথা’। বইটি মূলত আমাকে আক্রমণ করেই লেখা। বইয়ের মুখবন্ধে লিখেছেন, যে রাতে আকাশবাণী বেতার অনুষ্ঠানটি প্রচার করেছিলেন, “জ্বালা প্রশমনের জন্য সে রাতেই দেবতা এগিয়ে দিল লেখনী” । হায় জ্যোতিষসম্রাট প্রমুখ অংশ গ্রহণকারী অন্য জোতিষীরা, আপনারা এত লোকের ভাগ্য বলে দেন, ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দেন, অথচ আপনাদের চূড়ান্ত অপমানের আগাম খবরটাই আপনারা জানতেন না ?
আসুন, আপনাদের সঙ্গে পরিচয় ঘটিয়ে দিই সে-দিনের সেই প্রচারিত বেতার অনুষ্ঠানটির।
অনুষ্ঠানটি শ্রোতাদের দাবিতে একাধিকবার প্রচারিত হয়েছে। এখানে ১৮ জুলাই ‘৮৫তে প্রচারিত অনুষ্ঠানটি তুলে দিলাম ।
প্রথম পর্যায়
আমিঃ আপনাদের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিচ্ছি শুকদেব গোস্বামীর, যিনি ভৃগু-আচার্য নামেও খ্যাত। শুকদেববাবু বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত পত্র-পত্রিকায় বিভিন্ন সময় রাশি- ফল বিচারকের কাজ করেছেন। শুকদেববাবু, আপনি নিশ্চয়ই একজন জ্যোতিষী হিসেবে বিশ্বাস করেন যে, গ্রহদের প্রভাবে মানুষের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে রয়েছে। তবে কেন, আপনার পেশেন্টদের আপনি স্টোন পরতে প্রেসক্রাইব করেন ?
শুকদেবঃ ভাগ্য অবশ্যই পূর্বনির্ধারিত। সেই কারণেই গণনা করে ভাগ্য জানা যায়, তবে আর্য ঋষিগণ যাঁরা জ্যোতিষশাস্ত্র প্রণয়ন করেছেন, তাঁরা কতকগুলো গ্রহের সঙ্গে কতকগুলো রত্নের গভীর সম্বন্ধ প্রত্যক্ষ করেছিলেন। প্রত্যেক গ্রহের এক একটি বর্ণ রয়েছে, এবং সেই বর্ণ বিশিষ্ট রত্নের প্রতি সেই গ্রহের আকর্ষণ থাকায় সেই রত্ন ওই গ্রহের প্রিয় রত্ন বলে বলেছেন।
আমিঃ একটা কথা শুকদেববাবু। ধরুন একজনের ভাগ্যে রয়েছে, তিনি তাঁর গাড়িতে চাপা দিয়ে একজনের মৃত্যু ঘটাবেন। তার জন্য তাঁকে জেলে যেতে হবে। এরই সঙ্গে আরও একজনের ভাগ্যের একটা ঘটনা নির্ধারিত হয়ে রয়েছে, যিনি এই গাড়িতে চাপা পড়ে মারা যাবেন। ধরুন, যিনি মারা যাবেন, তিনি একটা প্রাইভেট কোম্পানীতে কাজ করেন । ইলিওর করেন নি। ভাগ্যে ঠিক হয়ে রয়েছে, লোকটির মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী বিধবা হবেন। ছেলে-মেয়েরা বাবাকে হারিযে অনাথ হবে। বিধবা মহিলা কাজ না পেয়ে ভিখারির মত জীবন যাপনে বাধ্য হবেন। যিনি গাড়ি চাপা দেবেন, তিনি আপনাদের সাহায্য নিলেন, নির্ধারিত ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য। আপনারা তাঁকে এক বা একাধিক গ্রহরত্ন ধারণ করতে বললেন। লোকটি ধারণ করলেন এবং পূর্ব-নির্ধারিত ঘটনা ঘটল না। ফলে যাঁর গাড়ি চাপা পড়ে মারা যাওয়ার কথা ছিল, কোনও গ্রহরত্ন ধারণ না করেও তাঁর মৃত্যু ঘটল না । এই ঘটনার দরুন যে-সব ডাক্তার ও নার্সদের কর্মব্যস্ত থাকার কথা ছিল, তাঁদের সেই বাড়তি কর্মব্যস্ত থাকতে হলো না। যে ওষুধের দোকানের ভাগ্যে এই দুর্ঘটনার জন্য বাড়তি ওষুধ বিক্রির বিষয়টা আগে থেকেই ঠিক করা ছিল, তা হল না। রোগী দেখার দৌড়দৌড়ির জন্য আত্মীয়-বন্ধুরা ট্যাক্সির পেছনে যে খরচ করতেন, তা ট্যাক্সি-ড্রাইভারদের পকেটে গেল না। স্ত্রী বিধবা হলেন না । সন্তানরা অনাথ হল না। ছেলে-মেয়েদের যিনি পড়াতেন, সেই প্রাইভেট টিউটর টিউশুনি হারালেন না। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, কোনও গ্রহরত্ন ধারণ না করা সত্বেও এতগুলো লোকের জীবনের ঠিক হয়ে থাকা ঘটনাগুলো ওলট-পালট হয়ে গেল ।
এবার ধরুন, দুর্ঘটনায় যাঁর মৃত্যুযোগ ছিল, তাঁর ভাগ্য বিচার করলে কোনও জ্যোতিষী নিশ্চয়ই বলতেন, অমুক সময় তাঁর মৃত্যুযোগ। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যেত তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী মিথ্যে প্রমাণিত হয়েছে।
আমাদের সামাজিক জীবনে আমরা পরস্পরের সঙ্গে এত বেশি যুক্ত যে, একজনের পূর্ব-নির্ধারিত ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটলে আরও বহুজনের জীবনের পূর্ব-নির্ধারিত ঘটনাগুলো পাল্টে যাবে। এর ফলে বিশ্বজুড়ে আগে থেকে ঠিক হয়ে থাকা ঘটনাগুলোর ভারসাম্য নষ্ট হবে।
আপনারা, জ্যোতিষীরা অনবরত প্রতিকারের মাধ্যমে যদি জাতকদের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে থাকেন, তবে কী করে আপনারা বলবেন যে ভাগ্য পূর্ব- নির্ধারিত ?
শুকদেবঃ এখন পূর্ব-নির্ধারিত ভাগ্যকে কিছুতেই খণ্ডন করা যায় না; এ-কথা আমরা শাস্ত্রকারগণদের মুখে বারংবার শুনেছি । শাস্ত্রকারগণ যা বলেছেন, তা অভ্রান্ত সত্য । পূর্ব-নির্ধারিত কথা প্রসঙ্গে এ-কথাই আমি বলব-গ্রহাদির রত্ন ধারণ করে অনেক ক্ষেত্রে অনেকে উপকৃত হয়েছেন। আর্য মুণি-ঋষিগণ ধ্যান বলে, যোগ বলে জানতে পেরেছেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রতিকার করা যায়। এবং সেই প্রতিকার হিসেবে তাঁরা মণি বা রত্ন ধারণের কথা উল্লেখ করেছেন ।
আমিঃ কিছু কিছু ক্ষেত্রে পূর্ব-নির্ধারিত ভাগ্য পাল্টে দেবার অর্থই হলো পৃথিবী জুড়ে পূর্বনির্ধারিত ভাগ্যের ভারসাম্যকে নষ্ট করে দেওয়া ।
আপনি কি মনে করেন যে পুরুষকার দ্বারা মানুষ তাঁর ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে ?
শুকদেবঃ এবার প্রশ্নটা অতি চমৎকার। বৈদান্তিকগণ যাঁরা, তাঁরা পুরুষকারের প্রতি ভীষণ বিশ্বাসী। এবং বশিষ্ট্য মুনি রামচন্দ্রকে পুরুষকারের কথাই বারংবার বলেছিলেন, “হে রামচন্দ্র, যে পুরুষকারকে মানে, সে সব গ্রহ-নক্ষত্রকে অতিক্রম করে যেতে পারে। তবে সাধারণ মানুষের পক্ষে পুরুষকার অনেক ক্ষেত্রে সুলভ হয় না বলেই দৈব্যকে আশ্রয় করে চলে।
আমিঃ তবে আপনি একটা কথা বললেন, পুরুষকার দ্বারা ভাগ্য পরিবর্তন করা, অর্থাৎ কোনও গ্রহের প্রভাবকে অতিক্রম করা যায়। রত্ন ও পুরুষকারকে মেনে নিয়ে তো আপনারা জোতিষশাস্ত্রেরই মূল কথা ‘ভাগ্য অপরিবর্তনীয়’–এই বক্তব্যেরই বিরোধীতা করছেন।
শুকদেবঃ নীরব ।
আমিঃ আজকের এই আকর্ষণীয় আলোচনাচক্রে উপস্থিতি হয়েছেন আসিতকুমার চক্রবর্তী । শ্রী চক্রবর্তীর দেওয়া আত্মপরিচয়লিপি থেকে জানতে পারছি ইনি জ্যোতিষশাস্ত্রর জন্য ওয়াল্ড ইউনিভার্সিটির ডক্টরেট।
আসিতবাবু, বাংলাদেশে এককালে আমরা অষ্টোত্তরী দশা বিচার করতাম, অর্থাৎ জ্যোতিষীরা করতেন। বর্তমান ভারতবর্ষে বিংশোত্তরী দশা বিচার প্রচলিত। দুটো পিদ্ধতিতে কিন্তু ভাগ্যফল ভিন্নতর। অথচ আগে বহু লোক জোতিষশাস্ত্রকে অভ্রান্ত এবং বিজ্ঞসম্মত মনে করতেন। এখনও বহুলোক তাই মনে করেন। অতএব দেখতে পাচ্ছি জ্যোতিষশাস্ত্র একটা বিশ্বাসের ব্যাপার তাই নয় কী?
অসিতকুমারঃ কিছু লোকের জ্যোতিষশাস্ত্রের প্রতি অবজ্ঞা বা অবিশ্বাস আছে ঠিকই। কিন্তু তাঁদের যদি প্রশ্ন করা যায়, তাঁরা কি যথেষ্ট পরিমাণে এই শাস্ত্র চর্চা করার পর এই ধরনের মনোভাব পোষণ করেন ? আবার অগণিত বিচার-বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ, যাঁদের এই শাস্ত্রে আস্থা আছে; তাঁরা দীর্ঘ অভিজ্ঞতা বা অনুশীলনের দ্বারা এর সত্যতার প্রমাণ পেয়েছেন।
আমিঃ ধাতু বা রত্নেব দ্বারা কি শারীরিক বা মানসিকভাবে প্রতিকার সম্ভব বলে আপনার ধারণা ?
অসিতকুমারঃ রত্নের দ্বারা প্রতিকার সম্ভব। তার কারণ হিসেবে আমরা বলতে পারি যে, রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা করার অপেক্ষা রোগ প্রতিরোধ করার প্রয়োজনেই প্রাচীন ঋষিরা দিয়েছেন রত্ন ধারণের নির্দেশ ।
আমিঃ আচ্ছা, আপনারা কি কখনও একটা সমীক্ষাভিত্তিক গবেষণা করে দেখেছেন যে, পাথর পরার পর কতগুলো রোগ সেরেছে ? কতকগুলো সারেনি ?
অসিতকুমারঃ এটা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বলা যায় যে, রত্নের দ্বারা উপকার পাওয়া সম্ভব।
আমিঃ সম্ভব। আবার সম্ভব নাও হতে পারে। এটা কোনও পরীক্ষার কথা নয়, গবেষণার কথা নয়, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তাহলে এলো কোথা থেকে? পাথরের সেখানেই কাজ করতে পারার সম্ভবনা আছে, যেখানে রোগটা মানসিকভাবে এসেছে।
আমিঃ এখন আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি পারমিতার সঙ্গে। পারমিতার আসল নাম, শুভ্রা গঙ্গোপাধ্যায়। আচ্ছা পারমিতাদেবী, এটা নিশ্চয়ই আপনি স্বীকার করবেন জ্যোতির্বিদ্যা ও জ্যোতিষশাস্ত্র এক নয় ?
পারমিতাঃ জোতিষশাস্ত্র আর ?
আমিঃ এবং জোতির্বিদ্যা; দুটো কী এক ?
পারমিতাঃ না।
আমিঃ যদিও অনেকেই দুটো বিষয়কে একেবারে গুলিয়ে ফেলেন। আর তার ফলেই তাঁরা যুক্তি দেখান—অনেক সময় জ্যোতিষীরা ক্যালকুলেশনে ভুল করতেই পারেন । কিন্তু গ্রহ-নক্ষত্রকে তো অস্বীকার করার উপায় নেই। অথচ দেখুন; জোতির্বিজ্ঞানের বিষয় গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান, দূরত্ব, গতিপথ ইত্যাদি নিরূপণ করা। আর জ্যোতিষশাস্ত্রের বিষয় মানবদেহে গ্রহ-নক্ষত্রের প্রভাব নিরুপণ করা। দুটো সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয় ?
পারমিতাঃ হ্যাঁ ।
আমিঃ প্রাচীনকাল থেকে এখনও পর্যন্ত জ্যোতির্বিজ্ঞানের প্রভূত উন্নতি হয়েছে।
জোতিষশাস্ত্রে কিন্তু সেই উন্নতি আমরা দেখতে পাচ্ছি না। জ্যোতিষশাস্ত্র জ্যোতির্বিজ্ঞানের সেই প্রাচীন ভুল ধারণা থেকে এক পাও এগোতে পারেনি । প্রাচীন জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতিষশাস্ত্র যখন মিলে-মিশে ছিল, তখন ওদের ধারণায় চাঁদ ছিল উপগ্রহ নয়, গ্রহ। রাহু ও কেতুকে গ্রহ বলে ভুল করেছিলেন। জ্যোতিষবিজ্ঞানীরা সেই ভুলকে ত্যাগ করে এগিয়ে গেছেন, কিন্তু জ্যোতিষশাস্ত্র এখনও গ্রহ হিসেবে চাঁদ, রাহু, কেতু ইত্যাদির অস্তিত্বকে আঁকড়ে রয়েছে। এর পরে কেউ যদি বলেন, ‘জ্যোতিষশাস্ত্র বিজ্ঞানের নামে অবিজ্ঞান, তবে জোতিষশাস্ত্রের পক্ষে কী যুক্তি দেবেন ?
পারমিতাঃ জ্যোতিষশাস্ত্র যে বিজ্ঞান এ নিয়ে অনেকের অনেক রকম মত আছে। তবে আমার মতে জ্যোতিষশাস্ত্র পুরোপুরি বিজ্ঞানসম্মত ।
আমিঃ এ-ব্যাপারে আপনি আর কিছু বলবেন ?
পারমিতাঃ নীরব ।
আমিঃ আচ্ছা; আমি একটা তবে অন্য প্রশ্নে যাই, যদি কিছু না বলেন। আপনার কি মনে হয়, ভূপালের গ্যাস দূর্ঘটনায় নিহতদের সকলেরই জন্ম ছকে একই সময়ে মৃত্যুযোগ ছিল ?
পারমিতাঃ এটা তো ধরুন আপনার, স্টেটেরও একটা ক্যালকুলেশন থাকে না?
আমিঃ আচ্ছা, স্টেট ক্যালকুলেশন মানে কী? রাজ্যের ক্যালকুলেশন তো? স্টেট ক্যালকুলেশনে যাই হোক, আমার ভাগ্যে যদি থাকে আমার মৃত্যুটা ওই সময় হবে না, তাহলেও স্টেটের ক্যালকুলেশনে থাকলেই কি এতগুলো লোকের মৃত্যু হয়ে যাবে?
পারমিতাঃ না।
আমিঃ তবে কার মৃত্যুযোগটা ঠিক হবে? স্টেট ক্যালকুলেশন অনুসারে আমাদের মৃত্যু যোগ ঠিক হয়? না, মানুষের জন্মছকে যে গ্রহ সন্নিবেশ আছে, তার দ্বারাই মৃত্যুযোগ নির্ধারিত হবে?
পারমিতাঃ জাতকের গ্রহ সন্নিবেশ তো অবশ্যই দেখতে হবে। কিন্তু সে স্টেটে দূর্ঘটনাজনিত যেটা হয়েছে সেটাও তো একটা দেখতে হবে, সেই সময় সেই স্থানে কী ধরনের গ্রহ সমাবেশ ছিল, যার জন্য এই দূর্ঘটনা হলো।
আমিঃ আপনারা কী স্টেট ক্যালকুলেশন করে ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারতেন না তাহলে যে, “এই সময় কেউ ভূপালে থেকো না, সবাই ভূপাল ছেড়ে চলে যাও। তাহলে মৃত্যুযোগটা অ্যাভয়েড করা যায়”। আপনারা যখন স্টেট ক্যালকুলেশন করে এটা দেখেছিলেন, তখন এটা জনসাধারণকে জানান নিশ্চয়ই আপনাদের নৈতিক দায়িত্ব ছিল?
পারমিতাঃ দেখুন, এ-সম্পর্কে ফোরকাস্ট তো আগেই করা হয়েছিল।
আমিঃ এই ভূপাল সম্বন্ধে ?
পারমিতাঃ ‘ভূপাল’ পার্টিকুলার সম্পর্কে নয়। তবে এই ধরনের একটা দুর্ঘটনাজনিত কিছু হবে।
আমিঃ পাঁজি দেখলে প্রতি বছরই দেখতে পাবেন এই ধরনের দূর্ঘটনা, খরা, বন্যা ইত্যাদির কথা লেখা থাকে। ভারতবর্ষ তো বিরাট দেশ। সারা বছরে বেশ কিছু দূর্ঘটনা হবেই। নির্দিষ্টভাবে কোন টাউনে দূর্ঘটনা ঘটবে না জানালে এই ধরনের ভবিষ্যদ্বাণী অর্থহীন। কারণ এতবড় দেশে অনেক দূর্ঘটনা ঘটবেই। নির্দিষ্ট ভাবে বলা যাবে না—এটাকে নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল।
পারমিতাঃ হ্যাঁ।
আমিঃ আচ্ছা, আপনার কী অন্য জ্যোতিষীদের মত মনে হয়, মানুষের ভাগ্য- পূর্বনির্ধারিত ? গ্রহের প্রভাবে মানুষের ভাগ্য আগে থেকেই নির্ধারিত হয়ে রয়েছে?
পারমিতাঃ হ্যাঁ।
আমিঃ আচ্ছা মানুষের ভাগ্য যদি পূর্ব-নির্ধারিত হয়েই থাকে তাহলে আপনারা আপনাদের পেসেন্টকে স্টোন প্রেসক্রাইব করেন কেন ?
পারমিতাঃ সূর্যগ্রহের বিকিরিত রশ্মি ছাড়া জীব-জগতের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। সূর্যরশ্মি ও অন্যান্য সব গ্রহের রশ্মি সব সময় দেহকোষ দ্বারা মানুষের দেহে সঞ্চালিত হয়ে ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে শুভাশুভ কাজ করে। দেহের স্নায়ুর দ্বারা বুদ্ধি ও জ্ঞানের বিকাশ এবং সব কাজই সম্পাদিত হয়ে থাকে। রত্নের বিকিরিত রশ্মি দেহকোষের মধ্যে দিয়ে ব্রেনের মধ্যে সঞ্চালিত হয়ে শুভাশুভ ভাবকে উম্মোচিত করে। গ্রহের অশুভ প্রতিক্রিয়াকে শুভমুখী করাই রত্নের কাজ।
আমিঃ ব্যাপারটা বুঝলাম না। ‘নির্ধারিত’ কথার অর্থ যা কিছুতেই পাল্টান যাবে না। রত্ন তাহলে ভাগ্য পাল্টাবে কি করে?
আর একটা কথা আমি জিজ্ঞেস করছি, আপনি যে বলেন, রত্নের দ্বারা রোগ সারান সম্ভব; আচ্ছা, এ-রকম কি আপনারা কখনও সমীক্ষাভিত্তিক গবেষণা করে দেখেছেন?
পারমিতাঃ এইগুলো পরীক্ষা না করলেও স্টোন দেবার পরে যে অনেকের কাজ হয়, এটা কিন্তু দেখা গেছে ৷
আমিঃ কোনও সমীক্ষাভিত্তিক গবেষণা করে কী কোনও প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি দেখেছেন যে, এতজনকে এই স্টোন এই রোগে দিলাম, এবং দেখলাম তাতে এতজনের রোগ সেরেছে। অতএব এই স্টোনটা এই রোগের জন্য দেওয়া যেতে পারে । এই ধরনের কোনও সমীক্ষাভিত্তিক গবেষণা কী হয়েছে?
পারমিতাঃ ঠিক সেই রকমভাবে হয়নি।
কিছু কথা
♦ শোষণ ব্যবস্থাকে কায়েম রাখতেই মগজ ধোলাই চলছে
♦ দেশপ্রেম নিয়ে ভুল ধারনা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে
♦ গণতন্ত্র যেখানে বর্বর রসিকতা
♦ জনসেবা নিয়ে স্বচ্ছতা থাকা অতি প্রয়োজনীয়
♦ যুক্তিবাদের আগ্রাসন প্রতিরোধে কাগুজে যুক্তিবাদীর সৃষ্টি
♦ যুক্তিবাদবিরোধী অমোঘ অস্ত্র ‘ধর্ম’
♦ যুক্তিবাদী আন্দোলন নিয়ে প্রহসন কতদিন চলবে?
♦ আন্দোলনে জোয়ার আনতে একটু সচেতনতা, আন্তরিকতা
অধ্যায়ঃ এক
♦ পত্র-পত্রিকায় সাড়া জাগানো কিছু ভবিষ্যদ্বাণী প্রসঙ্গে
অধ্যায়ঃ দুই- অশিক্ষা, পদে পদে অনিশ্চয়তা এবং পরিবেশ মানুষকে ভাগ্য নির্ভর করে
♦ অদৃষ্টবাদ যেখানে অশিক্ষা থেকে উঠে আসে
♦ অনিশ্চয়তা আনে ভাগ্য নির্ভরতা
♦ পরিবেশ আমাদের জ্যোতিষ বিশ্বাসী করেছে
♦ মানব জীবনে দোষ-গুণ প্রকাশে পরিবেশের প্রভাব
অধ্যায়ঃ তিন
অধ্যায়ঃ চার
♦ জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতিষশাস্ত্রের পার্থক্য
অধ্যায়ঃ পাঁচ
♦জ্যোতিষশাস্ত্রের বিচার পদ্ধতি
অধ্যায়ঃ ছয়
অধ্যায়ঃ সাত
♦ জ্যোতিষীরা জ্যোতিষশাস্ত্রের পক্ষে যে-সব যুক্তি হাজির করেন
অধ্যায়ঃ আট
♦ জ্যোতিষশাস্ত্রের বিরুদ্ধে বিজ্ঞানের যুক্তি
অধ্যায়ঃ নয়
♦ মানব শরীরে রত্ন ও ধাতুর প্রভাব
অধ্যায়ঃ দশ
♦ জ্যোতিষচর্চা প্রথম যেদিন নাড়া খেল
অধ্যায়ঃ এগারো
♦ কিভাবে বার-বার মেলান যায় জ্যোতিষ না পড়েই
অধ্যায়ঃ বারো
♦ জ্যোতিষী ও অলৌকিক ক্ষমতার দাবিদারদের প্রতি চ্যালেঞ্জ
২য় পর্বঃ কিছু কথা
অধ্যায়- একঃ নস্ট্রাডামুসের সঙ্গে পরিচয়
♦ নস্ট্রাডামুসের ‘আশ্চর্য’ ভবিষ্যদ্বাণী কতটা ‘আশ্চর্যজনক’?
অধ্যায়ঃ দুই
অধ্যায়ঃ তিন
অধ্যায়ঃ চার
অধ্যায়ঃ পাঁচ
অধ্যায়ঃ ছয়
অধ্যায়ঃ সাত
অধ্যায়ঃ আট
অধ্যায়ঃ নয়
অধ্যায়ঃ দশ
অধ্যায়ঃ এগারো
অধ্যায়ঃ বারো
♦ এ-দেশের পত্র-পত্রিকায় নস্ট্রাডামুস নিয়ে গাল-গপ্পো বা গুল-গপ্পো
“অলৌকিক নয়,লৌকিক- ৩য় খন্ড ” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ