যুক্তিবাদের মূল বক্তব্য—জ্ঞান মাত্রেই সঙ্গত কারণ বা যুক্তির (reason) পথ ধরে আসে। আমাদের যে পাঁচটি ইন্দ্রিয় আছে, সে ইন্দ্রিয়গুলো আমাদের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানকে বাড়ায়। দৃষ্টি ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে আমাদের অক্ষর পরিচয়ের শুরু। সাহিত্য- দর্শন-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে দৃষ্টি ইন্দ্রিয়ের অবদানকে স্বীকার করতেই হয়। দৃষ্টির অভাবে ইচ্ছে মত পড়াশুনো বারবার ব্যহত হতে বাধ্য। ন্যাশানাল জিওগ্রাফিক, ডিসকভারি, অ্যানিমেল প্ল্যানেট ই এস পি এন, বি বি সি, এমনই কত টি ভি চ্যানেল আমাদের চোখের সামনে হাজির করে চলেছে নানা তথ্যরাশি, জ্ঞানভাণ্ডার। সমুদ্রতলার জগৎ, মরুভূমির রহস্যময়তা, পুরাতত্ত্বের আবিষ্কার, পৃথিবীর নানা প্রান্তের ট্রাইবদের জীবনযাত্রার ছবি, ক্রীড়া-শিল্প-সাহিত্য-সংগীত-নাটক-চলচ্চিত্রের নানা অগ্রগতির সঙ্গে পরিচয় ঘটিয়ে চলেছে এইসব টিভি চ্যানেল। বিশ্বকাপ ফুটবলের দিকে চোখ রাখেন গোটা পৃথিবীর কোচ ও খেলোয়াড়রা। ক্রীড়াবিজ্ঞান ও নতুন নতুন ট্যাকটিক্যাল লাইন নিয়ে গবেষণা চলে দর্শন ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে। যাঁরা খেলেন, তাঁরা দেখতে না পেলে খেলাগুলোর চরিত্র যেত সম্পূর্ণ পাল্টে। হয়তো তখন খেলাগুলো হতো শব্দনির্ভর বা স্পর্শনির্ভর।
আমাদের জ্ঞানের অনেকটাই আসে স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের বক্তব্য বা লেকচার শুনে। গান শিখি গান শুনে, এমনকী কথা শিখি কথা শুনে। অক্ষরের উচ্চারণের সঙ্গে পরিচয়ের মাধ্যমও শব্দ। আমরা শৈশবে সুর করে নামতা পড়েছি গলা মিলিয়ে। শিখেছি ‘অ-য়ে অজগর….’ ছড়া। আজ হয়তো ছড়া পাল্টেছে, কিন্তু আমার নাতিও নার্সারিতে ভর্তি হয়ে অক্ষরজ্ঞানের আগেই ইংরেজি কবিতা বলা শিখে ফেলেছে। সেই প্রাচীন শ্রুতির ট্রাডিশন আজও বজায় রয়েছে। শুনছি কলকাতার আকাশবাণীর এফ এম ব্যান্ডের শ্রোতার সংখ্যা নাকি ২৮ লক্ষ এদের মধ্যে একটা অংশ নাকি সরাসরি ফোনে নানা আলোচনায় অংশ নেন। আলোচনাগুলো নানা যুক্তি-তর্কের মধ্য দিয়ে জ্ঞানার্জনে সাহায্য করে। এসব শ্রবণেন্দ্রিয়ের অবদান। এমনি করে সব ইন্দ্রিয়ই আমাদের জ্ঞান অর্জনে সাহায্য করে।
ইন্দ্রিয় যখন প্রতারিত
যুক্তিবাদ ইন্দ্রিয়ের অবদান মেনে নেবার পাশাপাশি একথাও বলে যে, ইন্দ্রিয় অনেক সময় প্রতারিত হয়, ভুল করে। ইন্দ্রিয় ভুল করলে আমরা ভুল কার। ধরুন, নাটক দেখতে গেছেন। আপনার মেয়ের স্কুলের নাটক। মেয়ে পরীর ভূমিকায় নামবে। হলে ঢুকতে একটু দেরি হয়ে গেছে। ঢুকেই দেখলেন, জাদু-কাঠি হাতে মেয়ে নাচছে। মেঝেতে লুটোপুটি খাওয়া পোশাকটা ম্যানেজ করে সুন্দর নেচে চলেছে মিউজিক ট্র্যাকের তালে তালে। পোশাকের রঙ টুকটুকে লাল। মুহূর্তে সবুজ হল, মুহূর্তে নীল। নাচ শেষে পোজ দিয়ে স্থির। পোশাক সাদা, ধবধবে সাদা। এই যে আপনার দর্শন ইন্দ্রিয় বার বার পোশাকের রঙ বুঝতে গিয়ে প্রতারিত হচ্ছিল, এরপরও আপনি কী করে বলবেন যে দর্শন ইন্দ্রিয় আমাদের সঠিক জ্ঞানই দেয়? ইন্দ্রিয় আমাদের প্রতারিত করে। উদাহরণ রাশি রাশি হাজির করা যায়। কিন্তু আপনাদের ধৈর্যচ্যুতি যাতে না হয়, সেদিকে দৃষ্টি রাখতে দু-তিনটি দৃষ্টি বিভ্রমের দৃষ্টান্ত হাজির করছি।
জাদুকররা অনেক জাদুই দেখিয়ে থাকেন মঞ্চের পিছনের পর্দার রঙ ও আলোর কারসাজিতে দৃষ্টিবিভ্রম ঘটিয়ে।
“অলৌকিক নয়,লৌকিক- ৫ম খন্ড ” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ
অধ্যায়ঃ এক
ধর্মঃ সংজ্ঞায় গোলমাল
অধ্যায়ঃ দুই
উপাসনা ধর্মঃ প্রাচীন মত
♦ উপাসনা- ধর্মের (religion) উৎপত্তি
♦ একঃ দৈব-প্রত্যাদেশ বা অপৌরুষেয় প্রত্যাদেশ
♦ দুইঃ ঈশ্বরে বিশ্বাস; সহজাত প্রবৃত্তি
♦ তিনঃ ধর্মীয় আচরণ বাদে ঈশ্বর বিশ্বাস
♦ আধুনিক নাস্তিক্যবাদ ‘মার্কসবাদ’
অধ্যায়ঃ তিন
‘সমকালীন যুক্তিবাদ’ নাস্তিক্যবাদের সঙ্গে বাড়তি কিছু
♦ ‘সমকালীন যুক্তিবাদ’ চির নতুন
♦ তোমার আমার দুই চেতনার ভালো-খারাপ
♦ মারাদোনার পায়ের জাদু ও যুক্তিবাদ
♦ প্রেমের রহস্যময়তা ও যুক্তিবাদ
♦ ‘ঈশ্বরে বিশ্বাস’, ‘বিজ্ঞানের বিশ্বাস’ : আকাশ-পাতাল
অধ্যায়ঃ চার
উপাসনা ধর্মঃ আধুনিক মত
♦ উপাসনা-ধর্ম : নৃতত্ত্ব ও সমাজতত্ত্বের দৃষ্টিতে
অধ্যায়ঃ পাঁচ
ভারতবর্ষের জাদু সংস্কৃতি
♦ আদিম উপজাতি, আধুনিক উপজাতিঃ একই কথা
♦ ধর্মীয় জাদু বিশ্বাস ও ম্যাজিক শোঃ দুই পৃথিবী
অধ্যায়ঃ ছয়
তন্ত্রের প্রথম ধাপ যোগ, তারপর…
অধ্যায়ঃ সাত
বৈদিক সাহিত্য, জাদু-বিশ্বাস, যজ্ঞে যৌনাচার
♦ সত্য খোঁজে মুক্তমন, হিসেব কষে ভন্ড
♦ বৈদিক সাহিত্যের গপ্পো ও দুই ডাক্তার
♦ বৈদিক সাহিত্যে জাদু-বিশ্বাস, যজ্ঞের নামে যৌনাচার
অধ্যায়ঃ আট
হিন্দু উপাসনা-ধর্মে তন্ত্র
অধ্যায়ঃ নয়
শক্তিধর্মে তন্ত্র
অধ্যায়ঃ দশ
রেইকি গ্রাণ্ডমাষ্টার, ফেং শুই ক্ষমতার দাবিদার, জ্যোতিষী ও অলৌকিক ক্ষমতার দাবিদারদের প্রতি