[উৎসর্গ— দ্বীন-ই-ইলাহি খ্যাত মহান মুসলিম সম্রাট আকবরকে]
জাহেদ আহমেদ
রেডিও টিভিতে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বুশের মুখে মাঝে মাঝে মুসলিম নাম শোনা যায় এবং তা সঙ্গত কারণে। তবে ঐসব মুসলমানদের জন্য গৌরব বয়ে নিয়ে আসে না। বরং তা শুনে বিশ্বব্যাপী বেশিরভাগ মুসলমানদের মাথা হেঁট হয় স্বজাতির লজ্জা ও অপমানের গ্লানিতে। মজার বিষয়, আরেক আমেরিকান প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগানও কিন্তু একজন মুসলমানের নাম নিয়েছেন একাধিকবার তার বক্তৃতায়। তবে তা সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণে। রিগান বক্তৃতায় ‘ট্যাক্স কাট’ এবং মুদ্রাস্ফীতির মধ্যকার সম্পর্ক বোঝাতে মধ্য যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুসলিম মনীষী ইবেন খালদুনের উদ্ধৃতি দিতেন। ওসামা বিন লাদেন আর ইবেন খালদুন- দুটো নামই নয় কেবল। বলা যায়, এ দু’টি নামের মধ্যে ফুটে ওঠে আত্মপরিচয়ের সংকটে আবর্তিত আজকের মুসলমানদের গ্লানিময় বর্তমান এবং গৌরবমণ্ডিত অতীত। ইতিহাসের দুটো জ্বলজ্যান্ত কিন্তু বিপরতিমুখী দিক।
প্রশ্ন হল, কেমন করে এমন হল? যেমন এটি আজ মুসলমানদের প্রশ্ন, তেমন পশ্চিমা বিশ্বের লোকজনেরও প্রশ্ন। আমেরিকার প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত অধ্যাপক এবং মধ্যপ্রাচ্য ও ইসলামের ইতিহাস বিশেষজ্ঞ বার্নাড লুইস নাইন ইলেভেন (৯/১১) পরবর্তী পরিস্থিতিতে লেখা একটি বইয়ের শিরোনাম তাই দিয়েছেন ভুলটা আসলে কি ছিল (What Went Wrong?) লুইসকে অনেক কট্টরপন্থী মুসলমান ‘আমেরিকার দালল’ ও কেবলমাত্র একজন ‘মুসলিম বিদ্বেষী ইহুদী’ ভাবলেও সমসাময়িক সময়ে লেখা তার আর একটি বই ‘ইসলামের সংকট’ (The Crisis of Islam)- ইতিহাসের আলোকে মুসলমানদের পরাজয়ের বিশ্লেষণ করতে গিয়ে লুইস যা বলেছেন, তার সাথে খুব কম সচেতন মুসলমানই দ্বিমত পোষণ করবেন। নিচের উদ্ধৃতিটির দিকে তাকালেই ব্যাপারটা খোলাসা হবে।
প্রাচীন রোমান ও গ্রীক সভ্যতার পতন এবং আধুনিক ইউরোপীয় সভ্যতার মধ্যবর্তী সময়- যেটিকে ইউরোপের ইতিহাসবিদগণ ‘অন্ধকার যুগ’ বলে থাকেন— সেই সময়ে বিশাল ও শক্তিশালী সাম্রাজ্য, প্রাচুর্যময় শিল্প-বাণিজ্য এবং মৌলিক ও মননশীল বিজ্ঞানে ইসলাম ছিল পৃথিবীর শীর্ষ স্থানীয় সভ্যতা । খ্রিস্টান সভ্যতার চাইতে বহু গুণে বেশি ইসলামই ছিল প্রাচীন ও প্রাচ্য ও আধুনিক পশ্চিমের মধ্যবর্তী ধাপ। এবং এই আধুনিক পশ্চিমা সভ্যতায়ও রয়েছে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ অবদান। কিন্তু গত শতাব্দীতে ইসলাম হারিয়েছে কর্তৃত্ব ও নেতৃত্ব; আধুনিক পশ্চিম ও উদীয়মান প্রাচ্য- উভয়ের তুলনায় পিছিয়ে পড়েছে ইসলাম। পরাজয়ের এই বিশাল শূন্য সৃষ্টি করেছে বাস্তব এবং আবেগগত উভয় রকমের সমস্যা, যে বিষয়ে মুসলমান শাসককুল, চিন্তাবিদ এবং বিদ্রোহীরা আজও কোন কার্যকরী সমাধান খুঁজে পাননি।
ভাবার বিষয় বৈকি। দশ, বিশ কিংবা পঞ্চাশ বছর হলে না হয় কথা ছিল। নয়শ’ শতাব্দী থেকে তেরশ’ শতাব্দী— পুরো পাঁচ শত বছর ধরে মুসলমানরাই পৃথিবীতে জ্ঞানের মশাল জ্বালিয়ে রেখেছিল, আজকের সমস্ত ইউরোপ যখন কুসংস্কার ও অন্ধকারে আচ্ছন্ন! নিউইয়র্ক টাইমসের ডেনিস ওভারবাইয়ের ভাষায়ঃ
প্রকৃতিতে সৃষ্টিকর্তার উপস্থিতি ও জ্ঞান আহরণের ক্ষেত্রে কোরানের নির্দেশ এবং সেই সাথে প্রাচীন গ্রীক দর্শন ও জ্ঞান দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে মধ্য যুগে মুসলমানরা এমন একটি সমাজ ও সভ্যতার সৃষ্টি করেছিল যা ছিল সেই সময় সমস্ত পৃথিবীতে বিজ্ঞান চর্চার কেন্দ্র। পাঁচ শত বছরব্যাপী আরবী ভাষা ছিল জ্ঞান ও বিজ্ঞানের সমার্থক একটি বিষয়। স্বর্ণযুগের সেই সংস্কৃতিই বলতে গেলে এ কালের আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়, এলজেবরা এলকেমি বা কিমিয়া নক্ষত্রাবলির নাম, এমন কি পর্যবেক্ষণ সংশ্লিষ্ট বিদ্যা হিসেবে বিজ্ঞানের পরিচিত— এ ধারণাগুলোর জন্ম দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের ইতিহাসের অধ্যাপক ড. জামিল রাগেপের ভাষায়, ‘ষোল শতাব্দী সময় অবধি মুসলিম বিশ্বের ধারে কাছেও ছিল না ইউরোপ । মধ্যযুগের ইতিহাস সম্পর্কে যারা জ্ঞান রাখেন, তারা জানেন, ড. জামিলের এই উক্তিটি মোটেও অতিকথন নয়। কী পদার্থ বিদ্যা, কী চিকিৎসা শাস্ত্র, দর্শন, স্থাপত্যশিল্প জ্ঞান ও মননশীলতার প্রতিটি শাখায় মুসলিম মনীষীদের খ্যাতি ছিল সে সময় জগৎব্যাপী। ব্যাপারটা ব্যাখ্যার দাবি রাখে।
মুসলিম মনীষীরা মিসরের লাইব্রেরিগুলোতে দীর্ঘদিনের ফেলে রাখা ও পুরোনো গ্রীক পুস্তক ভাণ্ডারের সন্ধান পেলে তারা তখন খ্রিস্টান অনুবাদকদের দ্বারস্থ হন। খ্রিস্টান অনুবাদকরা গ্রীক বইগুলোকে প্রথমে তাদের স্থানীয় সিরিয়াক (Syriac) ভাষায় এবং পরবর্তীতে আরবিতে অনুবাদ করেন। ইহুদী, মুসলমান ও খ্রিস্টান মনীষীদের পাশাপাশি বসে জ্ঞান চর্চা করার যে উৎকর্ষময় সাংস্কৃতিক আবহাওয়া সে সময় বিরাজমান ছিল, আজকের বাস্তবতায় তা রূপকথা বলে মনে হতে পারে। জ্ঞানচর্চার মূল্যায়ন মুসলমানদের মাঝে সে সময় এত বেশি ছিল যে, প্রচলিত আছে— খলিফা আল মামুন তার সময়ের সেরা অনুবাদক খ্রিস্টান ধর্মী হুনায়িন বন ইশাকের পারিশ্রমিক দিতেন অনুবাদকৃত বইয়ের সমপরিমাণ ওজনের স্বর্ণ দ্বারা । কালক্রমে এইসব আরবি পুস্তকগুলো সিরিয়া, সিসিলি ও স্পেন হয়ে ইউরোপে প্রবেশ করে। এগুলো তখন আরবি থেকে ল্যাটিনে অনুবাদ করা হয়। অর্থাৎ অনুবাদের ক্রম ছিল গ্রীক> সিরিয়াক> আরবি> ল্যাটিন> ইংরেজি । কথাটি তাই মোটেও অতিরঞ্জিত নয় যে, ইউরোপীয়রা মূলত আরবদের মাধ্যমেই গ্ৰীক জ্ঞান বিজ্ঞান ও দর্শনের স্বাদ আস্বাদন করার সুযোগ পায়। মধ্যযুগের ইউরোপীয় মনীষীদের কাছে অ্যারিস্টটলীয় দর্শন ও ধারনার প্রধান উৎস ছিল বিখ্যাত মুসলিম মনীষী ইবনে রুশদের (আবু রুশদ) রচনাবলী । একইভাবে অ্যারিস্টটল ও অন্যান্য প্রশ্নে ল্যাটিন মনীষীদের কাছে কদর ছিল মনীষী ইবনে সিনার, যিনি পরিচিত ছিলেন একাধারে চিকিৎসক ও দার্শনিক হিসেবে। চিকিৎসাশাস্ত্রে ইবনে সিনার প্রণীত দশ লক্ষ শব্দ সম্বলিত তথ্যকোষ, বা এনসাইক্লোপেডিয়া সতেরো শতাব্দী পর্যন্ত ইউরোপে বাইবেলের মত ব্যবহৃত হয়েছে। একই সময়ের পদার্থবিদ আল- হাইতামকে* যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যযুগীয় বিজ্ঞান বিষয়ক ইতিহাসের অধ্যাপক ডেভিড লিন্ডবার্গ তুলনা করেছেন ‘আর্কিমিডিস, কেপলার এবং নিউটন এর সাথে। সে সময়কার মুসলিম মনীষীদের মত আরব ইহুদী মনীষীরাও ছিলেন গ্রীক দর্শনে অনুরক্ত এবং ব্যাপকভাবে তদ্বারা প্রভাবিত। ফলে মুসলমানদের পাশাপাশি তারাও তাদের ধর্মীয় গ্রন্থের যুক্তিনির্ভর ব্যাখ্যা দাঁড় করার চেষ্টা চালান। তারা গ্রীক গ্রন্থগুলোর আরবি অনুবাদকে হিব্রু ভাষাতে রূপান্তরিত করেন। ইহুদী মনীষী বেন জাবিরলের ইয়ানবু আল হাইয়া প্লেটোনিক চিন্তাধারাকে মুসলিম স্পেন এবং ইউরোপে ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। মধ্যযুগের আরবের আরেক মহান ইহুদী মনীষী হচ্ছেন স্পেনের করদবার মশেহ বিন মেমন** যিনি ছিলেন একজন খ্যাতনামা দার্শনিক এবং একই সাথে
* যিনি টলেমীর আলোকতত্ত্ব বা optics বিষয়ক কাজ দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিলেন এবং নিজে দৃষ্টিশক্তির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
** আরবীত মুসা ইবনে মেমন, ল্যাটিন ভাষায় মেইমনাইডস। সম্রাট সালাউদ্দিনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ।
কাগজের ব্যবহার আরবরা শিখে চীনাদের কাছ থেকে যে সম্পর্কে পরবর্তীতে ইউরোপীয়রা (স্পেনের মাধ্যমে) আরবদের কাছ থেকে জ্ঞান লাভ করে। গণিতশাস্ত্র মুসলিম মনীষীদের চর্চায় অভূতপূর্ব উন্নতি লাভ করে। নবম শতাব্দীতে আল-খাওয়ারিজমি গ্রীক ও রোমান অক্ষরের বদলে (আরবী) সংখ্যা এবং শূন্য বা জিরোর ব্যবহারের সূচনা করেন উচ্চতর গণিত শাস্ত্রে ।*** বার শতাব্দীতে আল- খাওয়ারিজমি আরবী গ্রন্থ হিসাব আল জাবের ওয়াল মুকাবালার মাধ্যমে সর্ব প্রথম আজকের এলজেবরা বা বীজগণিতের সূত্রপাত ঘটান। গ্রন্থটি ল্যাটিন ভাষায় অনূদিত হলে পশ্চিমারা বীজগণিত সম্পর্কে জানতে পারে। লগরিদমেরও সূচনা ঘটে আল-খাওয়ারিজমির হাতে। একই সময়ে আল বাত্তানি ত্রিকোণমিতির (trigonometry) উন্নতি সাধন করেন। গণিত শাস্ত্রের পাশাপাশি জ্যোতির্বিজ্ঞানের (astronomy) উন্নতির ক্ষেত্রে মুসলিম মনীষীদের রয়েছে ব্যাপক অবদান। গণিতবিদ ও জ্যোতর্বিদ আল-বিরুনি (মৃত্যু ১০৪৮ সাল) এই মতবাদ পোষণ করতেন যে, ঘূর্ণনশীল পৃথিবীর আকৃতি হচ্ছে গোল এবং মোটেই চ্যাপ্টা নয়, যা সেই সময়ে অনেক বিশ্বাস করতেন। এছাড়া আল-বিরুনি নির্ভুলভাবে পৃথিবীর নানা স্থানের দ্রাঘিমা ও অক্ষাংশের হিসাব বের করেন । একই রকমভাবে জ্যোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন আল-সুফী, জারকালি প্রমুখ মুসলিম মনীষীরা ।
২.
খলিফা আল মামুন, খলিফা হারুন উর রশিদের শাসনামলে বাগদাদের পরিচিতি ছিল পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিদ্যা মন্দির হিসেবে। খ্রিস্টান-ইহুদী-মুসলমান মনীষীরা পাশাপাশি বসে জ্ঞানচর্চা করতেন। যুক্তিবাদী ধারার সমস্ত মুসলিম মনীষীরা পরিচিত ছিলেন মুতাজিলা নামে। এদের সম্পর্কে পাকিস্তানের বিখ্যাত নিউক্লিয়ার পদার্থবিজ্ঞানী এবং কায়েদ-এ-আযম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পারভেজ হুদবইয়ের মন্তব্য প্রণিধানযোগ্যঃ
ইসলামের স্বর্ণযুগে বিজ্ঞান অগ্রগতি লাভ করেছিল কারণ— ইসলামের অভ্যন্তরে তখন সক্রিয় ছিলেন মুতাজিলা নামধারী শক্তিশালী যুক্তিবাদী ঐতিহ্যের ধারক একদল চিন্তাবিদ।” সবকিছুই পূর্ব নির্ধারিত এবং আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ ব্যতীত মানুষের অন্য কোন উপায় নেই’– নিয়তিবাদীদের এ মতবাদের তীব্র বিরুদ্ধাচরণ করে মুতাজিলারা মানুষের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তিকে প্রাধান্য দিয়েছেন ।
*** ০-৯ এই দশটি প্রতীকে সংখ্যার দশমিক পদ্ধতিতে প্রকাশের জ্ঞান খলিফা আল মনসুরের সময় ভারতীয় পণ্ডিতদের কাছ থেকে আরবে পৌঁছায়।
মুতাজিলারা যখন রাজনৈতিক ক্ষমতায় ছিলেন, জ্ঞান তখন সমৃদ্ধি লাভ করেছিল। কিন্তু দ্বাদশ শতাব্দীতে গোঁড়া ইসলামী চিন্তাবিদ ইমাম আল-গাজালির নেতৃত্বে ইসলামী রক্ষণশীলতার পুনরাবির্ভাব ঘটে। আল-গাজালি যুক্তির স্থলে দৈব বাণী এবং স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির স্থলে নিয়তিকে তুলে ধরেন। কার্য এবং কারণ (cause and effect) সম্পর্ককে তিনি অস্বীকার করেন এই বলে যে, মানুষের ভবিষ্যৎ জানার শক্তি নেই, কেবল সৃষ্টিকর্তা এ বিষয়ে অবগত। গণিতশাস্ত্রকে আল-গাজালি ‘ইসলামবিরোধী’ এবং ‘মানব মনের জন্য ক্ষতিকারক’ বলে মন্তব্য করেন। গোঁড়ামির জালে ইসলামের সমৃদ্ধি আটকা পড়ে যায়। মহামতি খলিফা আল-মামুন এবং হরুন-আল-রশিদের শাসনামলে রাজদরবারে মুসলিম, খ্রিস্টান এবং ইহুদী মনীষীদের একত্রে জড়ো হয়ে জ্ঞানচর্চা এবং মতবিনিময় করার যে প্রবণতা বহাল ছিল, তা পরবর্তীকালে চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়। মুসলিম বিশ্বে সহিষ্ণুতা, মেধা এবং বিজ্ঞানের মৃত্যু ঘটে। যুক্তিবাদী ধারার সর্বশেষ মুসলিম মনীষী হচ্ছেন চতুর্দশ শতাব্দীর আবদাল রাহমান ইবনে খালদুন ।
স্বর্ণ যুগের ইসলাম যে কতটা গভীর ও ব্যাপকভাবে গ্রীক দর্শন ও যুক্তিবাদ দ্বারা প্রভাবিত ছিল তা ভাল করে বোঝার জন্য নিচে সেই সময়ের চারজন বিখ্যাত -প্রথাবিরোধী মুসলিম মনীষীর জীবন ও দর্শনের উপর আলোকপাত করা হলঃ
আল-রাজী (৮৬৯খ্রী:-৯২৫খ্রীঃ)
পুরো নাম আবু বাকর মোহাম্মদ বিন জাকারিয়া আল-রাজী। পি. ক্রাউস এবং পাইনস আল-রাজী সম্পর্কে Encyclopedia of Islam-এ মন্তব্য করেছেনঃ ‘খুব সম্ভবত সমস্ত ইসলামী ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ যুক্তিবাদী মনীষী।’ ম্যাক্স মেরফ আল- রাজীকে ‘ইসলামী বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ চিকিৎসক’ এবং ‘পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিকিৎসক’ বলে উল্লেখ করেছেন।
আল-রাজী তেহরানের নিকটস্থ রেই (Rayy) নামক স্থানের অধিবাসী ছিলেন। সেখানে তিনি গণিতশাস্ত্র, দর্শন, জ্যোতির্বিদ্যা, সাহিত্য এবং আল-কেমি অধ্যয়ন করতেন । পরবর্তীতে বাগদাদে তিনি চিকিৎসা শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। আল- রাজী বাগদাদের যে হাসপাতালে কাজ করতেন সেখানে চিকিৎসা শাস্ত্রের বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে খ্যাত চব্বিশ জন চিকিৎসক কাজ করতেন। উল্লেখ্য, খলিফা হারুন-আল-রশিদ খ্রিস্টান চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে বাগদাদে সর্ব প্রথম হাসপাতাল চালু করেছিলেন। অনেক হাসপাতালে সে সময় শ্রেণী কক্ষ, লাইব্রেরি ও মানসিক রোগের ওয়ার্ড ছিল। দশম শতাব্দীর শুরুর দিক থেকেই বাগদাদে চিকিৎসা শাস্ত্র চর্চার জন্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার নিয়ম চালু হয়ে যায়। সে সময় রাষ্ট্রই জনসাধারণের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করত। তের শতাব্দীতে মিসরের কায়রোতে নির্মিত মনসুরি হাসপাতালে আজ অবধি অন্ধত্বের চিকিৎসা চলছে।
আল-রাজী বহু বিষয়ে অধ্যয়ন ও লেখালেখি করেছেন। তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে— চিকিৎসাশাস্ত্রে সুদীর্ঘ পনেরো বছর অধ্যয়নের মাধ্যমে রচিত বিশাল জ্ঞান কোষ (encyclopedia) যা ‘আল-হাউই’ নামে পরিচিত। ১২৭৯ সালে এই গ্রন্থটি ল্যাটিন ভাষায় অনূদিত হয়। এছাড়া আল-কেমি বিষয়ে আল-রাজী রচিত “কিতাব আল-আসরার’ বার শতাব্দীতে ল্যাটিন ভাষায় অনুবাদ করা হয় যা আধুনিক রসায়ন শাস্ত্রের উন্মেষে বিশেষ ভূমিকা রাখে ।
আলরাজী আপাদমস্তক একজন যুক্তিবাদী মনীষী ছিলেন। জেবরিইলি তাকে মধ্যযুগ, প্রাচ্য এবং ইউরোপীয় যুক্তিবাদী ধারার সমস্ত অজ্ঞেয়বাদীদের (agnostics) মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে মন্তব্য করেছেন। আল-রাজীর ব্যক্তিগত দর্শনের মূল সুর হচ্ছেঃ কোন কর্তৃত্বই সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। প্রচলিত ঐতিহ্য এবং কর্তৃত্বকে সর্বদা যুক্তির মাপকাঠিতে বিচার করার পক্ষপাতি ছিলেন তিনি ৷ মানব মনন ও যুক্তিবোধের প্রতি আল-রাজীর অপরিসীম আস্থা ফুটে উঠেছে নীতিশাস্ত্র বিষয়ে তার রচিত গ্রন্থ আধ্যাত্মিক প্রতিকার (Spiritual Physick) এর নিম্নলিখিত বক্তব্যে (ভাবানুবাদ)
“যুক্তিবোধ হচ্ছে মানুষের প্রতি সৃষ্টিকর্তার সর্বশ্রেষ্ঠ আশীর্বাদ। যুক্তিবোধই মানুষকে পশু থেকে আলাদা করেছে । নিজের এবং সমাজের মঙ্গল সাধন করতে যুক্তিবোধের বিকল্প অন্য কিছু নাই। …যা আমাদের জীবনকে সুন্দর এবং মহিমান্বিত করে তোলে, যুক্তিবোধের মাধ্যমে আমরা সেটির নাগাল পেতে পারি। এর মাধ্যমেই আমরা মনের ইচ্ছা এবং উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়িত করতে পারি। যেমন- যুক্তি প্রয়োগরে মাধ্যমে মানুষ জাহাজ তৈরি ও ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছে, যাতে সে সমুদ্র কর্তৃক সৃষ্ট দূরত্বকে অতিক্রম করতে পারে। যুক্তিবোধের ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা শরীরের অসুখ নিরাময়ে ঔষধ এবং অন্যান্য উপকারী শিল্প উদ্ভাবন করেছি… এর দ্বারাই আমরা জ্ঞানলাভ করেছি পৃথিবীর আকৃতি সম্পর্কে। জানতে পেরেছি চন্দ্র, সূর্য এবং অন্যান্য নক্ষত্রসমূহের তথ্য সম্পর্কে….
আল-রাজী সৃষ্টি সম্পর্কিত ইসলামী ব্যাখ্যাকে গ্রহণ করেন নাই। তার মতে মহাকালের সসীম মুহূর্তে পৃথিবীর সৃষ্টি হয়েছে; তবে শূন্য থেকে নয়। আল-রাজী পাঁচটি শাশ্বত মূলনীতিতে বিশ্বাস করতেনঃ সৃষ্টিকর্তা, আত্মা, বস্তু, সময় এবং মহাশূন্য। আল-কোরান এবং হযরত মুহম্মদ সংশ্লিষ্ট অলৌকিক কাহিনীতে তিনি কখনোই বিশ্বাস স্থাপন করেননি। আল-রাজী বিশ্বাস করতেন, যুক্তি দৈব বাণী অপেক্ষা শ্রেয় এবং কেবলমাত্র দর্শনের মাধ্যমে মুক্তি (salvation) সম্ভব। রাজনৈতিক দর্শনের ক্ষেত্রে তিনি বিশ্বাস করতেন- ধর্মীয় আইনসমূহের ভয়ভীতি ব্যতিতই মানুষ সুশৃঙ্খলভাবে সমাজে বসবাস করতে সক্ষম।
আল-মারি (৯৭৩-১০৫৮খ্রী)
পুরো নাম আবুল আলা আহমদ বিন আবদুল্লাহ বিন সুলাইমান আল-মারি । অসাধারণ কবিত্ব ও দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গির জন্য তাকে বলা হয় ‘প্রাচ্যের লুক্রেটিয়াস’ । বলাবাহুল্য, লুক্রেটিয়াস ছিলেন বিখ্যাত গ্রীক কবি ও দার্শনিক। সিরিয়াতে জন্মগ্রহণকারী এই মনীষী বাল্যবস্থায় বসন্ত রোগে আক্রান্ত হন এবং এতে সম্পূর্ণ রূপে অন্ধ হয়ে যান। নিজ শহরে ‘মারাত আল-নুমানে’ প্রত্যাবর্তনের পূর্বে তিনি লেপ্পো, এন্টিয়সসহ সিরিয়ার অন্যান্য শহরে অধ্যয়ন করেন। কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠালাভের সূচনাতে আল-মারি বাগদাদের বিখ্যাত জ্ঞানচর্চা কেন্দ্রগুলোর প্রতি আকৃষ্ট হন, এবং ১০০৮ সালে সেখানে গমন করেন। কিন্তু মাত্র আঠারো মাস অবস্থানের পর মারি বাগদাদ ছেড়ে একেবারে চলে আসেন এবং নিজ শহরে জীবনের বাকি সময় কাটান ।
বাগ্মিতার জন্য আল-মারির এমনই খ্যাতি ছিল যে, দূর-দূরান্ত থেকে দলে দলে লোক ‘মারাত আল-নুমানে’ এসে জড়ো হত কবিতা ও ব্যাকরণ বিষয়ে তার বক্তৃতা শুনতে । আল-মারির কবিতার মূল সুর হচ্ছে— ব্যাপক দুঃখবাদ । আগাগোড়া যুক্তিবাদী এই কবি বিশ্বাস করতেন, যুক্তির স্থান হচ্ছে সব ধরনের প্রথা, ঐতিহ্য এবং কর্তৃত্বের ঊর্ধ্বে। প্রতিটি ধর্মকে আল-মারি ‘যুক্তি ও মননের বিরুদ্ধে’ বলে মনে করতেন। ধর্ম হচ্ছে, আল মারির মতে, ‘প্রাচীন লোকজন কর্তৃক আবিষ্কৃ পৌরাণিক উপকথা, যার মূল্য কেবল তাদের কাছে রয়েছে, যারা সহজ বিশ্বাসী মানুষকে ঠকিয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠার পথ উন্মুক্ত করতে চায়।’ ধর্মীয় মহাগ্রন্থগুলো মারির দৃষ্টিতে, ‘এমন কিছু আষাঢ়ে গল্পের সমাহার যা যে কোন যুগের মানুষই সৃষ্টি করার ক্ষমতা রাখে এবং করেছেও।’ ধর্ম যুগে যুগে মানসিক অন্ধত্ব এবং মানুষে মানুষে কলহ সৃষ্টি করেছে বলে আল-মারির ধারণা। ধর্মীয় অনেক আচার-অনুষ্ঠান ও প্রথার সমালোচনায় তিনি ছিলেন মুখর। যেমন- হজরে আসাওয়াদ বা কালো পাথর চুমাকে আল-মারি একটি অযৌক্তিক কুসংস্কার বলে মনে করতেন ।
প্রাণী বধ প্রথার ঘোর বিরোধী ছিলেন আল মারি। মাত্র ত্রিশ বছর বয়সে নিরামিষ ভোজী হয়ে যাবার পর তার কবিতাতেও তিনি এই তত্ত্ব প্রচার করতেন যে, মাছ, মাংস, দুধ, ডিম এবং মধু খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে মানুষ হিসেবে আমরা সংশ্লিষ্ট প্রাণীগুলোর উপর অবিচার করছি। যেহেতু প্রাণীদেরও ব্যথা উপলব্ধির ক্ষমতা রয়েছে, তাদেরকে অহেতুক কষ্ট দেয়া অনৈতিক, এই যুক্তিতে তিনি বিশ্বাসী ছিলেন । ল-মারি সম্পর্কে আলফ্রেড ভন ক্রেমার (Von Kermer) যথার্থই মন্তব্য করেছেন যে, আল-মারি তার সময়ের চাইতে বহু শতাব্দী এগিয়ে ছিলেন ।
ওমর খৈয়াম (১০৪৮-১১৩১খ্রী.)
গন্তব্যবিহীন এ পথের একজন পথিকও আসে না ফিরে,
জানায় না আমাদের, কোথায় পথের শেষ ।
………………
পৃথিবী এগোবে তার পথে, আমরা প্রস্থান করার পরেও
একদা হেথায় কেউই ছিলাম না আমরা,
চিনত না কেউ আমাদের;
চলে গেলেও আমরা
পৃথিবীর ঘটবে না কোন বিচ্যুতি ।
(Of all the travelers on this endless road
Not one returns to tell us where it leads.
………………
Long will the world last after we are gone,
When every sign and trace of us are lost.
We were not here before, and no one knew;
Though we are gone, the world will be the same.)
জীবনের চূড়ান্ত পরিণতির নির্মম ও অবধারিত সত্য সম্পর্কে ওমর খৈয়ামের উপরের পংক্তিগুলো আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় খৈয়ামের প্রায় পাঁচশত বছর পরের আরেক মহান মনীষী সেক্সপীয়ারের নাটকের অমর ক’টি লাইনঃ
জীবন— যেন একটি চলন্ত ছায়া, একজন অভাগা অভিনেতা-
যে বৃথা অহংকারের ধ্বনিতে মঞ্চে তোলে কাঁপন,
অতঃপর করে চির প্রস্থান ।
এটি তখন হয়ে যায়-
নির্বোধের মুখে শোনা চিৎকার চেঁচামেচিতে পূর্ণ
কেবলই একটি অসার কাহিনী ।
(Life’s but a walking shadow, a poor player
That struts and frets his hour upon the stage
And then is heard no more: it is a tale
Told by an idiot, full of sound and fury,
Signifying nothing.)
(Macbeth)
কবি ও দার্শনিক হিসেবে তার মূল পরিচিতি থাকলেও জর্জ সার্টনের মতে, ওমর খৈয়াম হচ্ছেন ‘মধ্যযুগের শ্রেষ্ঠ গণিতবিদদের একজন। এছাড়াও যেসব বিষয় খৈয়াম অধ্যয়ন করেছিলেন বলে জানা যায়, সেগুলো হচ্ছে : পদার্থবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা, ভূগোল, সঙ্গীত, দর্শন ও ইতিহাস। ওমর খৈয়ামের জীবন ও কবিতা বিষয়ক আদি উৎস বলে বিবেচিত ‘মিরছাদ আল-ইবাদ’ গ্রন্থে মহান এ মনীষীর পরিচয় বিধৃত হয়েছে একজন নিরীশ্বরবাদী ও প্রকৃতিবাদী দার্শনিক হিসেবে
যেসব বিষয়কে কেন্দ্র করে ওমর খৈয়ামের বেশির ভাগ কবিতা ও দর্শন আবর্তিত হয়েছে সেগুলো হচ্ছেঃ মৃত্যুর অবশ্যম্ভাবিতা, পরকাল সম্পর্কে অস্বীকৃতি, উত্তরবিহীন প্রশ্নের জিজ্ঞাসা সম্পর্কে অসারতা, মহাবিশ্বের বিরাট রহস্যময়তা এবং বর্তমানকে উপভোগ করে বেঁচে থাকার আদর্শ বা ভোগবাদ। নিচের কটি পংক্তিতে তারই প্রমাণ পাই আমরাঃ
যদি শুনতে পাও ফুটন্ত গোলাপের ধ্বনি
জেনে নিও, প্রিয়া মোর, সুরা পানের সময় এখনি ।
হুর-পরী, হারেম, জাহান্নাম আর জান্নাত
এসবইতো রূপ কথা, ভুলে যাও তার সবই ।
(When once you hear the roses are in blomm,
Then is the time, my love, to pour the wine;
Houris and palaces and Heaven and Hell-
These are but fairy-tales, forget them all.)
বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ফার্সী ঔপন্যাসিক ও ছোট গল্প লেখক সাদেগ হেদায়াত হচ্ছেন ওমর খৈয়ামের দর্শন ও চিন্তা দ্বারা প্রভাবিত মনীষীদের একজন। সাদেগের বর্ণনায়, ‘যৌবনকাল থেকে শুরু করে আমৃত্যু ওমর খৈয়াম ছিলেন একজন বস্তুবাদী, দুঃখবাদী এবং সংশয়বাদী ভাবধারার মনীষী ।’ হেদায়াত আরও বলেছেন, সবগুলো ধর্মীয় প্রশ্নকে খৈয়াম সন্দেহের চোখে দেখতেন এবং ধর্মীয় উন্মাদনা, গোঁড়ামি ও মোল্লাদের আধিপত্যকে এই মহান মনীষী ঘৃণা করতেন।
ইবনে খালেদুন (মৃত্যু ১৪০৬ খ্রী.)
মধ্য যুগের মুসলিম মনীষীদের কৃতিত্ত্ব কেবলমাত্র গ্রীক সাহিত্যদর্শন সংরক্ষণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; মুসলিম মনীষীদের অনেকেই ইতিহাসের পাতায় প্রসিদ্ধ হয়ে আছেন এমন সব মৌলিক রচনাবলীর জন্য যা আধুনিক যুগে প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া ও গবেষণার সূচনা ঘটাতে স্মরণীয় ভূমিকা রেখেছে। ইবনে খালেদুন তেমনি একজন মনীষী । পারভেজ হুদবইয়েরের ভাষায় ‘চতুর্দশ শতাব্দীর আবদাল রাহমান ইবনে খালেদুন হচ্ছেন যুক্তিবাদী ধারার সর্বশেষ মুসলিম মনীষী।’ খালদুন ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন অনেকগুলো কারণে। আরব, বেদুঈন ও পারসীয়ানদের ইতিহাসের উপর তার রচিত মুকাদ্দিমাহকে মনে করা হয় ইতিহাস বিষয়ে রচিত প্রথম পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ যা পরবর্তীতে আধুনিক নৃবিজ্ঞান, সমাজ বিজ্ঞান ও অর্থনীতির বিদ্যার বিকাশ সাধনে ভূমিকা রেখেছে।” ঐতিহাসিক আরনলড টয়েনবি তাই মুকাদ্দিমাহ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেনঃ
স্বধারা ও বৈশিষ্ট্যের বিচারে এখন পর্যন্ত রচিত একমাত্র ও সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ । (১১) বলা যায়, সঙ্গত কারণেই আমেরিকান প্রেসিডেন্ট রিগান খালেদুনের উদ্ধৃতি দিতেন ।
মানুষের উন্নতির উপর ঐতিহাসিক শর্তাবলীর প্রভাব সম্পর্কে কার্ল মার্কসের পর্যবেক্ষণ, তার মূলসুর সে সময়ই ধ্বনিত হয়েছে খালেদুনের বক্তব্যে । সামাজিক, রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক পটপরিবর্তন সম্পর্কে বুঝতে হলে আমাদেরকে আগে রাজনৈতিক নীতিসমূহ সম্পর্কে অবহিত হতে হবে- ইবেন খালেদুন এ তত্ত্বে বিশ্বাসী ছিলেন। রাজনৈতিক নীতিসমূহ বলতে খালেদুন বুঝাতেন কোন একটি অঞ্চলের লোকজনের জীবিকা নির্বাহ করার উপায়, তাদের শিক্ষাদীক্ষা, ধর্মীয় বিশ্বাস, সংস্কৃতি, তাদের বসবাসের পরিবেশ গ্রামীণ না শহুরে এবং তারা কিভাবে নিজেদের শার্সন করে। ভবিষ্যৎ ঐতিহাসিকদের প্রতি খালেদুনের বার্তা ছিল : প্রতিটি ঘটনাকে যেন সংশ্লিষ্ট কারণের ভিত্তিতে অনুধাবন করার চেষ্টা করা হয় কেননা, শূন্য বা ভ্যাকুয়াম কিছুই ঘটে না ।
যুক্তি ও সত্যের প্রতি নিষ্ঠাবান এই মহান মনীষী সেই সব পণ্ডিতদের সমালোচনা ও অবজ্ঞা করতেন যারা যে কোন জ্ঞান বা বিদ্যাকে কোন রকম প্রশ্ন ব্যতিরেকেই অন্ধের মত মেনে নেয় এবং নতুন তথ্যের আলোকে সেগুলোর উপযোগিতা যাচাই করেন না । এছাড়া তিনি রাজনৈতিক পক্ষপাত দুষ্ট লেখকদেরও অপছন্দ করতেন ।
৩.
ঘড়ির কাঁটাকে এবার বর্তমানে নিয়ে আসা যাক। আজকে মুসলমানদের যে দৈন্য চলছে তা বহুমুখী । প্রাচুর্যের দীনতা, শিক্ষা ও সংস্কৃতির দীনতা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দীনতা এবং সর্বোপরি সহিষ্ণুতা ও মননের দীনতা। পৃথিবীর সমস্ত জনসংখ্যার প্রায় এক পঞ্চমাংশ মুসলিম হলেও বর্তমানে সমস্ত পৃথিবীতে মুসলিম বিজ্ঞানীদের সংখ্যা এক শতাংশেরও কম! আরও হতাশার খবর এই পৃথিবীর সমস্ত মুসলিম দেশে যত বিজ্ঞানী রয়েছে, কেবল ইসরাইলের রয়েছে তার চাইতে দ্বিগুণ সংখ্যক বিজ্ঞানী ! আফসোস আমার নিজের নয়; হতাশার এই বাস্তব চিত্রটি তুলে ধরেছেন পাকিস্তানের অধ্যাপক পারভেজ হুদবই তার ১৯৯১ সালে প্রকাশিত বইয়ে(১২) যারা বিশ্বের পরিবর্তন ও অগ্রগতির খবর রাখেন, তারা জানেন ড. পারভেজ হুদবই একটুও বাড়িয়ে বলেননি। শিক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে ইউরোপ-আমেরিকা তো দূরের কথা, মুসলিম দেশগুলোকে আজ ছাড়িয়ে যাচ্ছে ভিয়েতনাম, তাইওয়ানের মত দেশগুলোও। বই বিক্রির ভিত্তিতে নির্ধারিত জাতিসংঘের সাতাশটি দেশের (যেখানে যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে এবং ভিয়েতনাম সর্বশেষে রয়েছে তালিকায় একটিও মুসলিশ দেশের নাম নেই! ‘সমস্ত আরব বিশ্ব বছরে বর্তমানে প্রায় ৩৩০টি বই অনুবাদ করে থাকে যা বছরে কেবলমাত্র গ্রীস কর্তৃক অনূদিত বইয়ের এক-পঞ্চমাংশ। খলিফা মামুন (নবম শতাব্দী)এর আমল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত আরব দেশগুলো কর্তৃক অনূদিত বইয়ের সর্বমোট সংখ্যা প্রায় এক লক্ষ (১০০,০০০) যা ইউরোপে স্পেন একাই প্রতিবছরে অনুবাদ করে থাকে।’ অথচ মুসলিম উমাইয়া শাসনাধীন স্পেনের রাজধানী কর্ডোবা (Cordoba) কেবল আদালতের গ্রন্থাগারে বইয়ের সংখ্যা ছিল চার লক্ষ (৪০০,০০০) যখন ইউরোপের সর্বাপেক্ষা বৃহৎ গ্রন্থাগার বলে পরিচিত সুইডেনের মঠ লাইব্রেরিতে বই ছিল মাত্র ছয় শত (৬০০)।১৩ এবার অর্থনীতির দিকে তাকানো যাক। ১৯৯৯ সালে সকল আরব দেশগুলোর সম্মিলিত জিডিপি ($)৫৩১.২ বিলিয়ন) ছিল, একা স্পেনের জিডিপির (৮৫৯৫.৫ বিলিয়ন) চাইতেও কম! ক্ষুদ্র আয়তনের দেশ ইস্রাইলের per capita জিডিপি আরব লেবানন ও সিরিয়ার জিডিপির সাড়ে তিন গুণ, জর্ডানের চাইতে বার গুণ এবং মিসরের তুলনায় সাড়ে তের গুণ বেশি। এসব ভয়াবহ চিত্র ফুটে এসেছে আরব দেশগুলোরই বুদ্ধিজীবীদের তৈরি করা জাতিসংঘ কর্তৃক প্রকাশিত আরব বিশ্বের মানব উন্নয়ন বিষয়ক রিপোর্টে (The Arab Human Development Report 2002)। উৎসাহী পাঠকরা বিনা মূল্যে এটি অনলাইনে পড়ে দেখতে পারেন। নিচে ভারত, ইস্রাইল, যুক্তরাষ্ট্রসহ আরও কয়েকটি দেশের তুলনায় মুসলিম মিশর, কুয়েত, সউদী আরব ও আলজেরিয়ায় বিজ্ঞানীদের সংখ্যার একটা তুলনা দেয়া হলঃ
৪.
ফিরে আসি মূল প্রশ্নেঃ কেমন করে এমন হল? আল্লাহতে বিশ্বাসী মুসলমানদের সংখ্যা তো বেড়েছে বৈ কমেনি (মুসলমানরা সংখ্যায় বর্তমানে ১.৩ বিলিয়ন, যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-পঞ্চমাংশ)। তেমনিভাবে একই রকম আছে কোরান। তাহলে গলদটা কোথায়? কেউ কেউ একে ইহুদি-খ্রিস্টানদের ষড়যন্ত্র হিসেবে চালিয়ে দিয়ে সান্ত্বনা অনুভব করেন। এসব যুক্তি ধোপে টিকে না, অন্তত ইতিহাস তাই বলে। রাজনীতি ও ক্ষমতার লোভ থেকে কোন ধর্ম ও জাতির শাসকদল কোন কালেই মুক্ত ছিল না। মুসলমানরাও মুক্ত ছিল না, মুক্ত নয় আজও। মুসলমান বাদশাহ-সম্রাট হত্যা করেছে মুসলমান সহোদর-পুত্র-কন্যাকে, মুসলমান রাষ্ট্র বছরের পর বছর লড়াই করেছে আরেক মুসলমান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। শিয়া-সুন্নী দাঙ্গা, কাদিয়ানীদের ওপর মুসলমান মোল্লাদের অকথ্য নির্যাতন- এসবও কি ইহুদী-খ্রিস্টানদের তথাকথিত ষড়যন্ত্রের ফল? পাকিস্তানে আজ অবধি পাসপোর্টের দরখাস্তে লিখতে হয় যে, দরখাস্তকারী মনে করেন- কাদিয়ানীরা মুসলিম নয়। ইহুদী-খ্রিস্টান ছাড়াও মুসলমানরা নিকট অতীতে কখনো তুর্কী, কখনো বা মোঘলদের ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। তাছাড়া তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেই যে ষড়যন্ত্রের কারণেই আজকে মুসলমানদের এই দুর্দশা, তাহলেও প্রশ্ন থেকে যায়, তথাকথিত ষড়যন্ত্রকারীরা কি করে সফল হল? এটা কি মুসলমানদের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতারই প্রকাশ নয়? আসলে স্বীয় ব্যর্থতাকে আড়াল করতে ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ (blame game) অনেক সময় মনে ক্ষোভের প্রশমন ঘটালেও তা মানুষকে মুক্তির পথ দেখাতে পারে না । আবার আরেকদল মুসলমান এই বিশ্বাস করে সুখ অনুভব করে যে, কোরানেই রয়েছে সকল সমস্যার সমাধান। কেউ কেউ— যাদের মধ্যে অনেক উঁচু ডিগ্রীধারা লোকও রয়েছেন- আরেক ধাপ এগিয়ে গিয়ে বলেনঃ বিজ্ঞানের বড় বড় সকল আবিষ্কারের মূল সূত্র কোরানেই নিহিত রয়েছে। জ্ঞানের অভাব(!) বলেই আমরা সেটির মর্ম উদ্ধার করতে অপারগ! আত্মপ্রবঞ্চনার এমন নজির সত্যি সত্যি পৃথিবীতে বেশি নেই। এ যেন মরুভূমির বালুতে মাথা গোঁজা উট পাখি আজ মুসলমানের রূপ ধারণ করেছে! আমরা দেখেছি, জ্ঞান-বিজ্ঞান, সংস্কৃতি ও প্রযুক্তিতে মধ্য যুগে মুসলমানদের সাফল্যের পিছনে কোন অলৌকিকত্ব ছিল না। ছিল না কোরানের কোন লুক্কায়িত সূত্র। আমি বলছি না যে, মধ্যযুগের মুসলমান মনীষীদের কেউই আল্লাহ-নবী ও কোরানে বিশ্বাস করতেন না। অনেক করতেন, অনেকে করতেন না। কিন্তু লক্ষ করার মত মিল হচ্ছে— তাদের অধিকাংশই ছিলেন জ্ঞান, সত্য, যুক্তিবোধ ও উদার চেতনার আলোয় উদ্ভাসিত । মুসলমানদের গৌরবময় সাম্রাজ্যের পতন কেবল একটি কারণে হয়নি। রাজনীতি, সমরনীতি, অর্থনীতি বিষয়ক কারণ ছাড়াও ইউরোপে বিজ্ঞান- প্রযুক্তি ও শিল্প বিপ্লবের সূচনা- এসবই মুসলিম সাম্রাজ্যের পতনকে ত্বরান্বিত করেছে। কিন্তু ধর্ম, শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে যুক্তিবোধ ও উদার চেতনার বদলে রক্ষণশীলতা ও পশ্চাৎমুখী চিন্তাচেতনাকে আঁকড়ে ধরার প্রবণতাও যে মুসলমানদের সমৃদ্ধ সাম্রাজ্য পতনের অন্যতম প্রধান কারণ সে বিষয়ে ইতিহাসবিদদের মাঝে খুব একটা দ্বিমত নেই। আজকাল যুক্তিবাদ ও বিজ্ঞানের কথা বললে অনেক মুসলমান মনে করেন, এগুলো পশ্চিমাদের শেখানো মন্ত্ৰ, অথচ সত্য হচ্ছে মানবতাবাদ, যুক্তিবোধ, চিন্তার উদারতা ও বিজ্ঞানমনস্কতা- এইসব মানবীয় গুণাবলীর পূর্বেরও নয়, পশ্চিমেরও নয়। এগুলো সকল কালের সকল ধর্ম ও জাতির আলোকিত মানুষদের মূল মন্ত্র ।
জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকল মানুষকে ভালবাসার ক্ষমতা হারিয়ে মুসলমানরা মুফতি, মাওলানা হয়েছে, শায়খুল হাদীস হয়েছে, কিন্তু আলোকিত সভ্যতার জন্ম দিতে পারেনি। সাপ্তাহিক ২০০০ পত্রিকার সাথে সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় মুফতি ফজলুল হক আমিনী (সাবেক এমপি ও চারদলীয় জোট সরকারের শরিকদার) একবার বলেছিলেন, ‘তসলিমার কোন বই আমি পড়িনি তবে তার ফাঁসি চাই।’ একজনের লেখা একেবারে না পড়ে, না বুঝেই ফাঁসি দাবি করার ঘটনার নজির বিশ্বে আর কোথাও আছে কি? আর থাকলেও আমার বিশ্বাস, সেটি আরেকটি মুসলিম দেশেই হবে। দেশে থাকাকালীন একবার এক দল মাদ্রাসার ছাত্রকে দেখলাম দল বেধে যাচ্ছে এনজিও বিরোধী হরতালের কর্মসূচি পালন করতে। একজন পরিচিত ছিল বিধায় তাকে একটু থামালাম। ‘আচ্ছা এনজিও মানে কি, তুমি জান?’ প্রশ্ন করলাম। তার উত্তরে জানতে পারলাম ‘এনজিওরা ইসলামবিরোধী এবং খ্রিস্টান আমেরিকার দালাল।’ ধর্মান্ধ এবং একই সাথে দরিদ্র সমাজে মানুষকে বিপথগামী করা যে কত সহজ তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন ।
অমৃতানন্দময়ী নামে ভারতের এক ধর্মীয় মাতা সাংবাদিকদের কোন এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, মানুষ ধর্মের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত, কিন্তু ধর্মের জন্য তারা বেঁচে থাকতে প্রস্তুত নয়। আমাদের সমাজে শায়খুল হাদীসের সংখ্যা একেবারে কম নয়। চল্লিশ হাজার হাদীস মুখস্থ করে শায়খুল হাদীস হতে হয়। কাজটা কষ্টের হলেও অসম্ভব নয়। কিন্তু কঠিন কাজ হচ্ছে চল্লিশ হাজারের মধ্যে মাত্র একটা হাদীসের সত্যিকার প্রতিফলন ঘটানো নিজেদের জীবনে । আমরা জানি, হাদীসে আছে, যার দ্বারা মানবতা উপকৃত হয়, মানুষের মধ্যে তিনিই উত্তম । কয় জন শায়খুল হাদীস দাবি করতে পারবেন যে, তিনি সারা জীবনে এমন একটা হলেও কাজ করেছেন যা দ্বারা মানবতা উপকৃত হয়েছে? মসজিদ-মন্দিরে গিয়ে প্রার্থনা-পূজা আদায় করা যত সহজ, পাশের বাড়ির প্রতিবেশীর দিকে ভালবাসার দৃষ্টিতে তাকানো তত সহজ নয়। আর যারা তা পারেন, আল্লাহ-ভগবানের সন্ধানে তাদের মসজিদ মন্দিরে ছুটাছুটি করার প্রয়োজন হয় না। বিখ্যাত ইরানী কবি হাফিজ তাই বলেছিলেন, ‘আমি মসজিদে গিয়ে আল্লাহর সন্ধান করলাম, আল্লাহকে পেলাম না; অতপর আমি মন্দিরে গেলাম, সেখানেও পেলাম না; চার্চ ও প্যাগোডাতে নিরাশ হওয়ার পর অবশেষে আল্লাহকে আমি আবিষ্কার করলাম আমারই মনের মধ্যে। যেন নজরুলের সেই কবিতার লাইনঃ
“মিথ্যা শুনিনি ভাই
এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনো মন্দির-কাবা নাই”
কিংবা, স্বামী বিবেকানন্দের সেই অমর বাণীঃ
“জীবে প্রেম করে যেই জন
সেই জন সেবিছে ঈশ্বর ।”
সোয়া এক বিলিয়ন মুসলমান আগামী দিনগুলোত পৃথিবীকে আলোকিত করবে, নাকি পৃথিবীর বোঝা হয়ে থাকবে— এই সিদ্ধান্ত মুসলমানদের নিজেদের নিতে হবে। তাদের সামনে একাধারে রয়েছে আবু রুশদ, ইবনে খালেদুন, ওমর খৈয়াম, ইবনে সিনা, আল-রাজি, আল-মারি, আল হাইতামদের গৌরবোজ্জ্বল উদাহরণ; অন্যদিকে রয়েছে বিন লাদেন, খোমেনী, মওদুদী, ফজলুল হক আমিনী, শায়খুল হাদীস, বাংলাভাইয়ের মত মানব বিদ্বেষী ও পশ্চাৎমুখী চিন্তাধারার ব্যক্তিবর্গ। মুসলমানদের চিন্তা চেতনার ধরণ এবং এগুলোর বাহ্যিক প্রতিফলনই ভবিষ্যতে নির্ধারণ করবে পৃথিবীর অন্যান্য জাতি ও ধর্মের মানুষেরা মুসলমানদের কার উত্তরসুরি হিসেবে বিবেচনা করবে— ইবনে খালেদুন, নাকি বিন লাদেনের।
তথ্যসূত্র
- Ronald Reagan, Public Papers of the Presidents of the United States: 1981 (Washington, DC: United States Government Printing Office, 1982), pp. 745,871.
- Bernard Lewis, The Crisis of Islam (New York: The Modern Library, 2003) p.4.
- Dennis Overbye, How Islam Won, and Lost, the Lead in Science, New York Times (October 30, 2001).
- lbid
- Ibid
- Pervez Hoodbhoy, Muslims and the West After September 11, Washington Post (2002).
- F.Gabrieli, La Zandaqa an 1er Siecle Abbasiole,” in L’Elaboration de l’Islam (Paris, 1961)
- Al-Razi The Spiritual Physick”, trans, A. J. Arberry (London: John Murray, 1950) pp. 20-21.
- G. Sarton, Introduction to the History of Science (Washington, DC: Williams & Wilkins, 1927), Vol. 1, pp. 759-61.
- Tamara Sonn, A Brief History of Islam (Blackwell Publishing, 2004) p. 56.
- lbid
- Pervez Hoodbhoy, Islam and Science Religious Orthodoxy and the Battle for Rationality.
- Tamara Sonn, A Brief History of Islam (Blackwell Publishing, 2004), p.48.
- Arab Human Development Report 2002.
প্রথম অধ্যায়ঃ যুক্তিবাদ মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্কতা
♦ মন্দের যুক্তি ও ঈশ্বরের অস্তিত্ব
♦ বিজ্ঞান মনস্কতা ও বিজ্ঞানমনস্ক সমাজনির্মাণ
♦ ইন্টিলিজেন্ট ডিজাইন নিয়ে কূটকচাল
♦ ব্রুনোর আত্মত্যাগ ও যুক্তিবাদ
♦ ইহজাগতিকতা ও আরজ আলী মাতুব্বর- একজন যুক্তিবাদী দার্শনিক
♦ বাংলাদেশে চেতনা-মুক্তির লড়াই
♦ ইসলাম যেভাবে নিজের পথ থেকে সরে গেছে
♦ বিজ্ঞান, বিজ্ঞানমনস্কতা বনাম কোরানিক বিজ্ঞান
দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ ধর্ম ও নৈতিকতা
♦ জীবিত ইসলামের মৃত গৌরবের কথা
♦ রামায়ণ কাহিনীর ঐতিহাসিকতা একটি একাডেমিক আলোচনা
♦ মানবতাভিত্তিক সংবিধান এবং অমানবিক বিধান
♦ ধর্মের উপযোগিতাঃ জনৈক বিবর্তনবাদীর দৃষ্টিতে
♦ ধর্মরাষ্ট্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও রাষ্ট্রধর্ম
♦ মানুষের জন্য ধর্ম, না ধর্মের জন্য মানুষ?
♦ বিজ্ঞান কি উপাসনা-ধর্মের প্রতিদ্বন্দ্বী
তৃতীয় অধ্যায়ঃ অন্যান্য প্রসঙ্গ
♦ হাইপেশিয়াঃ এক বিস্মৃতপ্ৰায় গণিতজ্ঞ নারীর বেদনাঘন উপাখ্যান
♦ শাশ্বত এথেন্সের নারী ও তার বিপর্যস্ত ধারাবাহিকতা
“স্বতন্ত্র ভাবনাঃ মুক্তচিন্তা ও বুদ্ধির মুক্তি” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ