‘জীবন’-এর সৃষ্টি ও স্থিতি সম্বন্ধে আমি আমার শৈশব ও কৈশোরে কোনোরূপ চিন্তাভাবনা করিনি এবং বিশেষভাবে করিনি যৌবনেও। পরিণত বয়সে এসে জানতে পেরেছি যে, আদিমানব আদমের দেহে ঈশ্বর নাকি প্রাণদান করেছিলেন ফুঁ দিয়ে। পবিত্র বাইবেল গ্রন্থে লিখিত আছে- “আর সদাপ্রভু-ঈশ্বর মৃত্তিকার ধূলিতে আদমকে (অর্থাৎ মনুষ্যকে নির্মাণ করিলেন, এবং তাহার নাসিকায় ফুঁ দিয়া প্রাণবায়ু প্রবেশ করাইলেন; তাহাতে মনুষ্য সজীব প্রাণী হইল” (আদিপুস্তক ২:৭)।
উপরোক্ত মতটি পর্যালোচনা করলে মনে হয় যে, বায়ুই হচ্ছে প্রাণের উপাদান এবং তা আদমের দেহে প্রবেশ করানো হয়েছিলো ‘ফুঁৎকার’ প্রক্রিয়া দ্বারা। অর্থাৎ কতকটা ফুটবল পাম্প করবার মতো। কিন্তু অন্যান্য প্রাণী যথা- পশু, পাখী, কীট, পতঙ্গ, জীবানু ইত্যাদি প্রাণীরা প্রাণবন্ত হল কিভাবে, ওতে তার কোনো হদিস মেলে না। ঈশ্বরের একটি মাত্র ফুঁয়ে জগতের যাবতীয় জীবের দেহে প্রাণসঞ্চার হতে পারেনি। কেননা বাইবেলীয় মতে, অন্যান্য প্রাণী ও আদম একই কালে সৃষ্টি হয়নি। সৃষ্টির ৫ম দিনে ঈশ্বর সৃষ্টি করেছেন জলচর ও খেচর প্রাণী, ৬ষ্ঠ দিন সকাল বেলা পশু, সরীসৃপ ও ভূচর প্রাণী এবং আদমকে সৃষ্টি করেছেন বিকেলে। পক্ষান্তরে- প্রত্যেকটি প্রাণীর দেহে প্রাণ সঞ্চারের জন্য ঈশ্বরকে যদি ভিন্ন ভিন্ন ফুঁ দিতে হয়, তবে তাঁর বুদ্ধিমত্তার পরিচয় কিছু থাকে কি?
কেউ কেউ বলেন- আদিমানব আদম সৃষ্টির প্রাক্কালে তাঁর জীবনদান যেভাবেই হয়ে থাকুক না কেন, পরের বিধান হল যে, রমণীদের গর্ভসঞ্চারের পর কোনো এক সময়ে জনৈক ফেরেস্তা এসে প্রাণকে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। মানুষের জন্মের পূর্বে ও মৃত্যুর পরে ‘ইল্লিন’ ও ‘সিজ্জিন’ নামক স্থানে প্রাণ মজুত থাকে।
‘প্রান’ কোন পদার্থ নয়, তা হচ্ছে নিরাকার এক শক্তিবিশেষ। নিরাকারকে একস্থানে আবদ্ধ রাখা বা হস্তান্তর করা, অর্থাৎ আমদানী-রপ্তানী ও গুদামজাত করা সম্ভব হয় কিরূপে, তা আমার জ্ঞানের অতীত।
প্রাণের উদ্ভব, স্থিতি ও চালচলন সম্বন্ধে বিশেষভাবে চিন্তাভাবনা করায় আমার মনে কতগুলো প্রশ্নের উদয় হয়েছে ও হচ্ছে। তার কিছু সংখ্যক প্রশ্ন বিবৃতি করেছি আমি আমার লিখিত ‘সত্যের সন্ধান’ নামক বইখানিতে। এখানে তার গুটিকতক প্রশ্ন সংক্ষেপে উদ্ধৃতি করছি –
(১) ‘আমি’ কে?
(২) প্রাণ কি অরূপ না সরূপ?
(৩) মন ও প্রাণ কি এক?
(৪) প্রাণের সহিত দেহ ও মনের সম্পর্ক কি?
(৫) প্রাণ চেনা যায় কি?
(৬) ‘আমি’ কি স্বাধীন?
(৭) অশরীরী আত্মার কি জ্ঞান থাকবে?
(৮) ‘প্রাণ’ কিভাবে দেহে আসা-যাওয়া করে? ইত্যাদি।
উপরোক্ত প্রশ্নাবলীর যথাযথ সমাধান না পেয়ে ধর্মরাজ্যের সীমানা পেরিয়ে আমার মন বিচরণ করতে থাকে বিজ্ঞান জগতের আনাচে-কানাচে।
বিশ্বব্যাপী বিরাজ করছে এক মহাশক্তি। সেই মহাশক্তিই আমাদের কাছে ভিন্ন ভিন্ন শক্তিরূপে প্রকাশ পেয়ে থাকে। যথা- তাপশক্তি, আলোকশক্তি, বিদ্যুৎশক্তি, চুম্বকশক্তি ইত্যাদি এবং সর্বোপরি প্রাণশক্তি। শক্তির সংহতিতে পদার্থ উৎপাদিত হয় এবং পদার্থ ধ্বংসের ফলে পুনঃ শক্তির উৎপত্তি হয়ে থাকে। অন্যান্য শক্তির ন্যায় প্রাণ শক্তিটিও মহাশক্তির কোটি কোটি বছরের আবর্তন, বিবর্তন ও রাসায়নিক ক্রিয়ার ফল।
শক্তি সংহত হয়ে ‘পদার্থ’ এবং পদার্থের রাসায়নিক ক্রিয়ার ফলে ‘প্রাণ’-এর উৎপত্তি হয়ে থাকলেও তা হঠাত করে হয়নি, হয়েছে ধাপে ধাপে ও পর্যায়ক্রমে এবং কোটি কোটি বছর সময়ে। এখানে কয়েকটি বিশেষ ধাপের উল্লেখ করছি।
১ম ধাপঃ ইলেক্ট্রন-প্রোটন বা শক্তিকণিকা
শক্তি কখনো নিষ্ক্রিয় থাকে না। যদি বলা হয়, ‘কেন থাকে না?’ ধরে লওয়া হয় যে, এটা হচ্ছে শক্তির চরিত্র বা ধর্ম। সক্রিয়তার ফলে শক্তি ঘনীভূত হয়ে উৎপন্ন হয় ইলেক্ট্রন-প্রোটনাদি শক্তিকণিকা। পদার্থ সৃষ্টির এটাই প্রাথমিক ধাপ। এঁরা পদার্থ এবং অপদার্থ, এ দুয়ের মাঝামাঝি অবস্থার বস্তু। এঁরা সতত চঞ্চল ও গতিশীল।
২য় ধাপঃ পরমাণু
উক্ত শক্তিকণিকাগুলো বিভিন্ন সংখ্যায় ও বিভিন্ন ধরণে জোট বাঁধার ফলে কালক্রমে উৎপন্ন হয় বিভিন্ন রকম মৌলিক পদার্থের পরমাণু। এই পরমাণুই হচ্ছে পার্থিব জগত সৃষ্টির মৌলিক উপাদান।
৩য় ধাপঃ অণু
পরমাণুগুলোর বিভিন্ন সংখ্যায় ও বিভিন্ন ভঙ্গিতে সংযুক্তির ফলে উৎপন্ন হয় বিভিন্ন জাতের অণু। এদের বলা হয় যৌগিক পদার্থ। যৌগিক পদার্থ দুই জাতের, যথা- জৈব ও অজৈব।
জৈব ও অজৈব পদার্থের মধ্যে আসল পার্থক্য এই যে, জৈব পদার্থের প্রত্যেকটি অণুর কেন্দ্রে সব সময়ই থাকে একটি মৌলিক পদার্থের পরমাণু- ‘কার্বন’। কোনো অজৈব পদার্থের অণুর কেন্দ্রে কখনো কার্বন থাকে না। কার্বনকে বাংলা ভাষায় বলা হয় অঙ্গার। যে কোন জৈব পদার্থ পোড়ালে অঙ্গার পাওয়া যায়। কিন্তু কোন অজৈব পদার্থ পোড়ালে অঙ্গার পাওয়ায যায় না। যেমন – কাঁচ, পাথর বা কোনো ধাতু পোড়ালে কিছুতেই অঙ্গার পাওয়া যাবে না। কেননা তাদের কোন অণুর কেন্দ্রেই কার্বন বা অঙ্গার নেই।
জৈব পদার্থের মুখ্য উপাদান ‘কার্বন’ হলেও তার সাথে পদার্থভেদে মিশে থাকে- হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, গন্ধক, ফসফরাস এবং আরো অনেক পদার্থ। জৈব পদার্থের অণুর গর্ভে কার্বনের সঙ্গে এদের বিভিন্ন জাতীয় পরমাণুর বিভিন্ন ভঙ্গিতে মিলনের ফলে জন্ম হয় বিভিন্ন জাতীয় জৈব পদার্থের।
৪র্থ ধাপঃ প্রোটিন ও প্রোটোপ্ল্যাজম
পূর্বোক্তরূপে হাজার হাজার কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন ইত্যাদি পরমাণুর সুবিন্যস্ত সংযোগে ও লক্ষ লক্ষ বছর বিবর্তনের ফলে পৃথিবীর আদিম সমুদ্রের জলে জন্মেছিলো এক বিশেষ ধরণের জৈব পদার্থ, যার নাম ‘প্রোটিন’ এবং তা থেকে জন্ম নিয়েছিলো জীবদেহের মূল উপাদান ‘প্রোটোপ্ল্যাজম’।
প্রকৃতির একমাত্র কাজ হচ্ছে – পরিবর্তন বা রূপান্তর। একেই বিবর্তন বলা হয়। বিভিন্ন বিষয়ে প্রাকৃতিক পরিবর্তনে সময়ের ব্যবধান যথেষ্ট। প্রকৃতি দুধকে ‘দধি’ ও তালের রসকে ‘তাড়ি’ করতে কয়েক ঘণ্টা সময়ের মধ্যেই পারে। কিন্তু রেডিয়ামকে সীসায় পরিণত করতে তার সময় লাগে লাখ লাখ বছর। ঐরূপ কার্বনাদি জৈব পদার্থ হতে একদানা প্রোটোপ্ল্যাজম তৈরি করতে প্রকৃতির সময় লেগেছে প্রায় একশত কোটি বছর।‘
পদার্থ জৈব বা অজৈব যাই হোক, তা ‘জীব’ নামে অভিহিত হতে পারে না, যে পর্যন্ত তাতে জীবনের কোনো লক্ষণ প্রকাশ না পায়। ‘জীবন’-এর প্রধান লক্ষণ – দেহপুষ্টি ও বংশবিস্তার। কোনো পদারথে যদি ঐ লক্ষণ দু’টি দেখতে পাওয়া যায় তাহলে নিশ্চয়তার সাথে বলা যায় যে, ঐ পদার্থটি ‘সজীব’। এখন দেখা যাক যে, কোন পদার্থে ঐ লক্ষণ দু’টি পাওয়া যায়।
প্রোটোপ্ল্যাজমের মুখ্য উপাদান প্রোটিন হলেও তার সাথে মিশে থাকে আরও জৈবাজৈব অনেকগুলো পদার্থ। তা আদিম সমুদ্রে জলে গোলা দ্রব অবস্থায় ছিলো। তাকে ইংরেজিতে বলে ‘সলিউশন’। চিনি বা লবণ গোলা জলকেও সলিউশন বলা যায়। কিন্তু প্রোটোপ্ল্যাজম ঐ ধরণের সলিউশন নয়, তা এক বিশেষ ধরণের সলিউশন। ইংরাজিতে বলা হয় ‘কলয়ডাল সলিউশন’।
চিনি বা লবণ জলে দ্রবীভূত হলে তা ছাঁকন প্রণালী দ্বারা জল থেকে ভিন্ন করা যায় না। কিন্তু কলয়ডাল সলিউশন ছাকুনীতে আটকা পড়ে। তাই বলে এই আটকা পড়াটাই তার বিশেষত্ব নয়। মাটি বা চুন গোলা জলও সূক্ষ্ম ছাঁকুনী দ্বারা ছাঁকলে মাটি ও চুন ভিন্ন হয়ে যায়। কিন্তু তা কলয়ডাল সলিউশন নয়। কেননা মাটি বা চুন জলে গোলা হলে সময়ান্তে তা থিতিয়ে পড়ে। কিন্তু কলয়ডাল সলিউশন কোনো কালেই থিতায় না। তা এমন এক বিশেষ ধরণের পদার্থ যে, জলে সম্পূর্ণ মেশে না। অথচ কোনো কালেই থিতায় না। অর্থাৎ অজৈব পদার্থের কলয়ডাল সলিউশন হয়তো জলে সম্পূর্ণ মিশে থাকে, নচেৎ থিতিয়ে পড়ে। কিন্তু জৈব পদার্থের কলয়ডাল সলিউশন জলে সম্পূর্ণ মেশে না, অথচ থিতিয়ে পড়ে না। এখানে লক্ষ্যণীয় এই যে, অজৈব পদার্থের সাথে জৈব পদার্থের একটি চরিত্রগত পার্থক্য প্রকট হয়ে উঠেছে। সে এখন থেকে আর জড় পদার্থের নিয়মে অপরের শক্তিতে চালিত হতে রাজী নয়। আর এটাই হচ্ছে জড় ও জীবজগতের প্রাথমিক সীমারেখা।
কলয়ডাল সলিউশনের আর দুইটি বিশেষ গুন এই যে, জলে অন্য যেসব জৈবাজৈব পদার্থ থাকে, তা আত্মসাৎ করে নিজ দেহ পুষ্ট করতে থাকে। এভাবে লাখ লাখ বছর অতিবাহিত হলে কলয়ডাল জৈব পদার্থটি আয়তনে ও ওজনে বহুগুণ বৃদ্ধি পায় ও শেষে ফেটে দুই টুকরো হয়ে যায়। কিন্তু দুই টুকরো হয়ে ওরা মরে না, আলাদা আলাদা থেকে আগের মতোই পুষ্ট হতে থাকে এবং কালক্রমে আবার দুই টুকরা ফেতে চার টুকরা হয় ও কালে চার টুকরা ফেটে আট টুকরা হয়। এভাবে চলতে থাকে কলয়ডাল পদার্থটির পুষ্টি ও বংশবৃদ্ধির ধারা। এখানে লক্ষ্যণীয় এই যে, কলয়ডাল পদার্থটির মধ্যে ‘জীবন’-এর সর্বাপেক্ষা বড়ো দুইটি লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছে, একটি ‘পুষ্টি’, আর একটি ‘বংশবিস্তার’। এই বিশেষ ধরণের কলয়ডাল পদার্থটিরই নাম – ‘প্রোটোপ্ল্যাজম’ বা ‘সেল’ (cell), বাংলায় বলা হয় ‘জীবকোষ’।
প্রাক-ক্যাম্ব্রিয়ান যুগের শেষের (এখন থেকে ৩১ কোটি বছর পূর্বের) দিকের কথা। তখন আকৃতি ও প্রকৃতিতে সেল বা জীবকোষগুলো জীব পদবাচ্য নয়। কিন্তু ওতে জীবনের প্রধান দুটি লক্ষণ যখন প্রকাশ পেয়েছে, তখন ওদেরকে আর নির্জীবও বলা চলে না। জীবকোষগুলোর কোনো ইন্দ্রিয় নেই, নির্দিষ্ট কোনো চেহারা নেই, আহার করে সর্বশরীর দিয়ে চুষে। পর্যাপ্ত পুষ্টিকর আহার পেলে অতিদ্রুত বংশবৃদ্ধি করতে পারে। শরীরের কোনো একস্থানে আঘাত পেলে সর্বশরীর শিউরে ওঠে। এতে দেখা যায় যে, জীবকোষে জীবনের আর একটি লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছে- ‘বোধশক্তি’।
আদিম জীবকোষের বংশাবলী আজও দেখা যায় খাল-বিলের নোংরা জলে। তা ন্রম তুলতুলে জেলির মতো শেওলা জাতীয় এক প্রকার জোলো পদার্থ। অণুবীক্ষণ যন্ত্র দ্বারা দেখলে ওতে দেখা যায় অসংখ্য বিন্দু বিন্দু ‘জীবকোষ’। ওদের এখন বলা হয় – ‘এ্যামিবা’। এরাই জীবজগতের আদিম প্রাণী এবং এককোষবিশিষ্ট জীব।
৫ম ধাপঃ বহুকোষী জীব
কালক্রমে কোন কোন জীবকোষ একা একা না থেকে মধুপোকার মতো কতগুলোতে একত্র জটলা করে থাকতে আরম্ভ করে। জটলার বাইরের দিকীর কোষগুলো খাদ্য সংগ্রহ করলে ভিতরের কোষগুলো তা চুষে নেয় এবং নিজের জায়গায় বসে ওদের পুষ্টি ও বংশবৃদ্ধি হতে থাকে। এর ফলে জটলাটির কলেবর বৃদ্ধি পায়। জটলার ভিতরের কোষগুলোর স্বতন্ত্র সত্ত্বা বজায় থাকে, কিন্তু বাইরের হয়ে যায় ‘এক’। এভাবে নানা আকৃতির জটলা তৈরি হয়ে সমুদ্রজলে হয় ‘বহুকোষী জীব’-এর আবির্ভাব।
জীবজগতের বিবর্তন
‘বিবর্তন’ হচ্ছে প্রকৃতির ধর্ম। দৃশ্যমান জগতের যাবতীয় জৈবাজৈব পদার্থই হচ্ছে প্রকৃতির সেই ধর্ম পালনের পুণ্যফল। কিন্তু সে ফল পার্থিব জীবজগতেই প্রকাশিত প্রকটরূপে। জীবজগতের বিবর্তন এমনই বিস্ময়কর যে, তা বিশ্বাস হতেই চায় না সাধারণভাবে। সাধারণত বিশ্বাস করা যায় না যে, জলচর জীবেরা স্থলচর জীবের পূর্বপুরুষ, সরীসৃপ পশুর পূর্বপুরুষ এবং পশুরা জ্ঞাতি মানুষের। কিন্তু বিশ্বাস না করেও গত্যন্তর নেই। কেননা ‘বিবর্তন’ প্রমানিত সত্য। যা হোক, এখানে এককোষী জীব (এ্যামিবা) থেকে জীবজগতের বিবর্তনের একটি অতিসংক্ষিপ্ত তালিকা লিপিবদ্ধ করছি।
(ক) এ্যামিবা – এরা এককোষবিশিষ্ট জীব। এদের বিবর্তনে অর্থাৎ কোষ সমবায়ে গঠিত হয়েছে ‘বহুকোষী জীব’।
(খ) বহুকোষী জীব – এরা দুই দলে বিভক্ত হয়ে এক দল হতে ‘অচল উদ্ভিদ’ এবং অপর দল হতে জন্মেছে ‘সচল জীব’।
(গ) সচল জীব – এদের এক শ্রেণীর জীবের নাম হচ্ছে ‘ট্রাইলোবাইট’।
(ঘ) ট্রাইলোবাইট – এরা পোকা জাতীয় জলজীব। কালক্রমে এদের এক শ্রেণীর দেহে মেরূদন্ড জন্মে, তাদের বলা হয় ‘মাছ’।
(ঙ) মাছ – এদের বংশ হতে জন্মে জলচর, উভচর, বিহঙ্গম এবং স্থলচর ‘সরীসৃপ’।
(চ) সরীসৃপ – এদের এক শাখা থেকে জন্মে উষ্ণরক্ত-বিশিষ্ট ‘স্তন্যপ্রায়ী জীব’।
(ছ) স্তন্যপায়ী জীব – এদের এক শাখা হয় বৃক্ষচারী জীব। তাদের বলা হয় ‘প্রাইমেট’।
(জ) প্রাইমেট – এদের থেকে জন্মে দ্বিপদ জীব। তাদের বলা হয় ‘প্যারাপিথেকাস’।
(ঝ) প্যারাপিথেকাস – এদের মধ্য হতে একদল জন্মে পুরোপুরি সমতলভূমিবাসী দ্বিপদ জীব। এদের বলা হয় ‘এ্যানথ্রোপয়েড এপ’ বা ‘বনমানুষ’।
(ঞ) বনমানুষ – এদের ক্রমোন্নতির ফলে জন্মেছে ‘অসভ্য’ ও আধুনিক ‘সভ্য মানুষ’।
উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এই প্রতীতি জন্মে যে, এক বিশেষ পরিবেশে পদার্থবিশেষের রাসায়নিক ক্রিয়ার ফলে প্রাণের উৎপত্তি হয়েছে এবং তার সহগামী হয়ে এসেছে বোধশক্তি, যার বিবর্তিত রূপ হচ্ছে মন বা জ্ঞান। পক্ষান্তরে সেই আদিম প্রোটোপ্ল্যাজম বা জীবকোষের দৈহিক বিবর্তিত রূপ হচ্ছে বিভিন্ন জাতীয় জীব ও মানুষ। কোনো প্রদীপ নিভে গেলে যেমন তার নির্বাপিত অগ্নিকে পুন্রুদ্ধার করা যায় না, তদ্রুপ প্রাণ শক্তিটিও দেহ বিচ্যুতি হলে তার স্বতন্ত্র সত্ত্বা বজায় থাকা সম্ভব নয়। কেননা, তা বিশ্বশক্তি বা পরমাত্মার সাথে একাত্ম হয়ে যায়।
অধ্যায়ঃ সত্যের সন্ধান
♦ দ্বিতীয় প্রস্তাবঃ ঈশ্বর বিষয়ক
♦ পঞ্চম প্রস্তাবঃ প্রকৃতি বিষয়ক
অধ্যায়ঃ অনুমান
অধ্যায়ঃ স্মরণিকা
♦ লামচরি গ্রামের অবস্থান ও পরিবেশ
♦ লাইব্রেরী উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও ৭৯ সালের বৃত্তি দান
♦ মানব কল্যাণের অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত
♦ ১৯৮০ সালের বৃত্তিপ্রদান অনুষ্ঠান
♦ পুস্তক প্রদান অনুষ্ঠানের ভাষণ
♦ অবহেলিত একটি প্রতিভার স্বীকৃতি বাকেরগঞ্জ জিলা পরিষদ কর্তৃক বিশেষ পুরস্কার দান
♦ বার্ষিক অধিবেশন ও ৮১ সালের বৃত্তিপ্রদান
♦ আরজ মঞ্জিল পাবলিক লাইব্রেরীর দানপত্র সংক্রান্ত দলিলসমূহের অনুলিপি
♦ কেন আমার মৃতদেহ মেডিক্যালে দান করছি
অধ্যায়ঃ আমার জীবনদর্শন
♦ জগত সম্পর্কে আমার ব্যক্তিগত ধারণা
♦ জীবন সম্পর্কে আমার ব্যক্তিগত ধারণা
“আরজ আলী মাতুব্বর” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ