বরিশাল চকের পোলের পূর্ব পাশে ঢাকা নিবাসী মুন্সি আলীমুদিন সাবের একখানা পুস্তকের দোকান ছিল। তিনি তাঁর দোকানে- কোরান শরীফ, কেতাব ও পুথিই রাখতেন বেশী; কিছু বাংলা বইও রাখতেন। আমি ওখানে যাতায়াত করে মুন্সি সাবের সাথে ভাব জমালাম এবং সুযোগ মত ওখানে গিয়ে বই-পুথি পড়তে লাগলাম। একদা মুন্সি সাব আমাকে “রবিনশন ক্রুশো” নামক এক খানা বই দিলেন, আমি ওখান কিনে আনলাম। নিঃসঙ্গ ও নিঃসম্বল রবিনশন বহু বছর যাবত দ্বীপবাসী থেকে কিভাবে বেঁচে থাকছিলেন, সে কাহিনী পড়ে আমার এক নুতন মানসিকতার সৃষ্টি হল। আমি ওতে দেখলাম-“মানুষের অসাধ্য কাজ নাই, ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়, সাহসে শক্তি যোগায়” ইত্যাদি বহু প্রবাদ বচনের প্রত্যক্ষ উদাহরণ আমাকে স্বাবলম্বী হবার প্রেরণা। ওটা আমার স্মরণীয় হয়ে আছে ও থাকবে।


আমার জীবন প্রবাহের গতি নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে সম্ভবতঃ চারজন লোকের দ্বারা। তাঁরা হচ্ছেন (১) মাষ্টার এমদাদ আলী, (২) মোল্লা আঃ হামিদ (৩) মুন্সি আলী মুদিন এবং অধ্যাপক (৪) কাজী গোলাম কাদির-সাব। এর যে কোনো একজন লোকের অভাবে আমার জীবনের গতি হয়ত অন্য দিকে চলে যেত (১) মাষ্টার এমদাদ আলী সাব আমার উপকার-না-অপকার করেছে, জানি না, তবে তিনি আমার “ধর্মীয় শিক্ষার সঙ্কল্পে বাধাদান” করে আমার জীবন প্রবাহকে বিপরীত মুখী করেছেন, বের করে দিয়েছেন আমাকে আলেম সমাজ হতে। (২) আমাকে আধুনিক শিক্ষার পথ প্রদর্শন ও শিক্ষা লোভী করেছেন মোল্লা সাবের”বইয়ের বস্তাটি”। ওটা না পেলে আমি জ্ঞান রাজ্যের পথের সন্ধান পেতাম না, হয়ত চলে যেতাম অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের রাজ্যে, হয়ে পড়তাম কু-সংস্কারের বেড়া জালে আবদ্ধ। (৩) মুন্সি আলী মুদিন সাবের প্রদত্ত “রবিনশন ক্রুশো” বই খানা দিয়েছে আমাকে স্বাবলম্বী হবার প্রেরণা, অর্থাৎ জীবনের সর্বক্ষেত্রে, উচু-নীচু সর্বস্তরের সকল কাজ স্বহস্তে করবার উদ্দীপনা। ও বইটাই আমার যাবতীয় “চেষ্টা” ও সাহস এর উৎসওটা না পেলে হয়ত আমি হয়ে যেতামঅলস, অক্ষম ও পরাধীন, অর্থাৎ অন্যের হাতের ক্রীড়া-পুত্তলী। ১৩২৩ সালে মায়ের বাসা ঘরটি ভেঙ্গে মোল্লা সাব সেখানে (১০ X ৫ হাত) এক খানা কুঁড়ে ঘর তুলেছিলেন।

error: Content is protected !!
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x