ভৌগোলিক অবস্থান ভেদে বিভিন্ন দেশের প্রকৃতি বিভিন্ন এবং প্রকৃতি ভেদে বিভিন্ন দেশের উৎপন্ন বা পণ্য দ্রব্য বিভিন্ন। আবার যে দেশে যে দ্রব্য উৎপন্ন হয় বেশী, সে দেশবাসীর পক্ষে সেই দ্রব্যই হয় প্রধান আহার্য ও ব্যবহার্য। নিম্ন সমতল ও নদীবহুল এই বাংলাদেশ। তাই এদেশে ধান ও মৎস্য সম্পদের প্রাচুর্য্য। কাজেই এ দেশবাসীর সর্ব প্রধান খাদ্যই হ’ল-মাছ ও ভাত। আর এ জন্যই বলা হয়-“মাছে ভাতে বঙ্গালী তুষ্ট”। এ কথাটা আমাদের গ্রামের পক্ষে বেশী সত্য। কেননা এ গ্রামটির প্রায় সব দিকেই নদী এবং ভিতরে ছোট-বড় খালও আছে পাঁচ-ছয়টি। নদী ও খাল গুলোতে প্রচুর মাছ পাওয়া যায় বারো মাসই, যদি কেউ ধরতে জানে ও পারে।
এখন যদিও পূর্বের ন্যায় মাছের প্রাচুর্য নেই। তবুও আমাদের গ্রামের কতিপয় লোক বছরে হাজার হাজার টাকা উপার্জন করছে মৎস্য বিক্রি দিয়ে।
মাছ ধরে খেলে যেমন পয়সা বাচে, তেমন পাওয়া যায় সুখাদ্য ও ধরার আনন্দ। আমি মাছমাংস খেতে ভালবাসি না, আমার প্রিয়-খাদ্য হ’ল নিরামিষ। তবুও মাছ ধরবার আগ্রহ যথেষ্ট। অনেকের “মাছ ধরা” একটা নেশা।
মাছ ধরার অনেক রকম পদ্ধতি আছে। যেমন জাল, বরশী, পলো, বেড়-গড়া, যোতী-কোচ, চাই-চাড়োয়া ইত্যাদি। আবার “জাল” অনেক রকম দেখতে পাওয়া যায়। যেমন-ঝাকী জাল, খোটু জাল, খুতুনী জাল ইত্যাদি। হাতে অস্ত্র পেলেই যেমন যোদ্ধা হওয়া যায় না, তেমনহাতে জাল-বরণী পেলেই মাছ মারা যায় না। এর জন্য আবশ্যক- যোগ্যতা ও দক্ষতা। অর্থাৎ শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা। মাছের -আহার, বিহার, চাল-চলন ও স্বভাব জানতে হয়। জানতে হয় মাছের মনোবৃত্তি।
আমি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পদ্ধতিতে মৎস্য শিকার করেছি। কিন্তু বিশেষ ভাবে ব্যবহার করেছি “জাল”। অনেকে মৎস্য-শিকারে আগ্রহী হলেও শিকার-যন্ত্র নির্মানে পারদশী নয়। হয়ত উহা কিনে নেয়, নতুবা অন্যকে দিয়ে বানিয়ে নেয়। কিন্তু মৎস্য শিকার অপেক্ষাও যন্ত্র নিমানে আমার আগ্রহ বেশী।
ঝাকী, মইয়া, খোট, খুতুনী ইত্যাদি কতিপয় জাল আমাদের গ্রামের নিত্য ব্যবহার্য যন্ত্র। কাজেই ওগুলোর বয়ন ও ব্যবহার প্রনালী সহজেই শিখতে পেরেছি। কিন্তু কতিপয় জাল বুনা শিখতে হচ্ছে আমাকে দূরাঞ্চলে গিয়ে।