পুঁটি পাত্র ওরফে কাজল পাত্র’র  জাতিস্মর হয়ে ওঠার খবরটা প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল আনন্দবাজার পত্রিকায়। দিনটা ৩১ মে। সালটা ১৯৬৮।

পুঁটি তখন সাড়ে তিন বছরের মেয়ে। নিবাস- মেদিনীপুর জেলার প্রাচীন শহর তমলুক’এর লাগোয়া গ্রাম কাপাশবেড়িয়া। কাপাশবেড়িয়া তমলুক থেকে পাঁচ কিলোমিটারের পথ।

পুঁটি পাকা মেয়ের মত পটাপট বলে যেত অনেক কথাই। বিয়ে করেছিল ‘কচি’র বাবা’কে। স্বামীর নাম কি মুখে আনতে পারে হিন্দু ঘরের কোনও সতী? পুঁটিও পারেনি ! হোক না আগের জন্মের স্বামী। স্বামী তো। পদবিটা অবশ্য বলেছিল- ‘বেরা’।

আগের জন্মের সন্তানদের কথাও মনে পড়ে বইকি। এক মেয়ে আর এক ছেলে ছিল। ছেলের নাম ছিল খোকা। আর সেই সুবাদে ছেলের বাবাকে খোকার বাবাও ডাকত পুঁটি। আর মেয়ের নাম কচি।

নিজের নাম? তাও মনে আছে বই কি? ললিতা। রাধার সখী। রাখা মানে- কৃষ্ণ-প্রিয়া।

নিজেদের বাড়ি ছিল কাঠের পুলের কাছে। অবস্থা ভাল ছিল না। বিয়ের পর সচ্ছলতার মুখ দেখেছিল। বাজারের সামনে বাড়ি। পুকুর ভরা মাছ, কলমি, হিঞ্চে, শুশনি শাকের দল। গোয়ালে গরু। জোয়ান স্বামী। কোলও ভরিয়ে দিয়েছিল। প্রথমে এলো মেয়েটা। তারপর খোকা।

না, না ; খোকার বাবা খারাপ মানুষ ছিল না। মাঝে-মধ্যে আমাকে মারত, মদ খেত। পুরুষ মানুষ মদ খাবে, নিজের বউকে মারবে, খারাপ কি আছে? কিন্তু শাশুড়িটা বড় ট্যাক-ট্যাক করত আমার পিছনে।

আমিও মাথা-গরম করতাম। ধাঁ করে আগুন জ্বলে যেত মাথায়। ওইটাই আমার দোষ ছিল। শ্বশুর-বাড়ি ছিলাম ভালোই, খাওয়ার কষ্ট ছিল না, পরার কষ্ট ছিল না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভালো থাকলাম কই। খোকার বাবাই আমাকে মেরে ফেলল। সেদিনকার সব কথা মনে পড়লে এখনও আমার সারা শরীরে আগুন ধরে যায়।

সারাটা দিন সংসারে গতর খাটিয়ে ভাত খেয়ে ঘুমিয়েছি। খোকার বাবা এলো টলতে টলতে। দুপুরবেলাতেই অনেক মদ গিলেছে। আমাকে ঘুম থেকে তুলে বলল- খেতে দে।

দুপুরে ফিরে এসে ভাত খেতে চাইবে, জানতাম না। দুপুরে ফিরবে, তাই বলে যায়নি। ভেবেছিলাম রাতে ফিরবে। বললাম- মুড়ি দিই। খোকার বাবা বলল- ভাত খাব।

ভাত কোথায় যে দেব। দুপুরে বাড়ি ফিরে ভাত খাবে বলে গিয়েছিলে? বাইরে মদ গিলতে পারলে, ভাত খেয়ে আসতে পারলে না?

দু’জনেই ঝগড়া করছিলাম। হঠাৎ খোকার বাবা গালে একটা বিশাল চড় মারল। মাথা ঘুরে পড়ে গেলাম। জ্ঞান ছিল না। আমাকে নড়তে-চড়তে না দেখে খোকার বাবা একটু ঘাবড়ে গিয়েছিল। ঘটি করে জল এনে চোখে-মুখে জল দিল। তাও জ্ঞান ফিরছে না দেখে ভাবল- আমাকে মেরেই ফেলেছে। খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিল। আমাকে কাঁধে করে বয়ে নিয়ে এলো গোয়াল ঘরে। তারপর একটা গরু-বাঁধা দড়ি আমার গলায় বেঁধে গোয়াল ঘরে ঝুলিয়ে দিল।

এ’সব কথাই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বলেছে পুঁটি, বলেছেন পুঁটির বাবা বলাই পাত্র, মা বীণাপাণি পাত্র, ও পুঁটির দাদা লক্ষ্মীকান্ত।

এ’সব কথাই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বলেছেন ও লিখেছেন পুঁটির গন্ধে ছুটে আসা প্যারাসাইকোলজিস্টরা। এ’দের মধ্যে আছেন ডঃ যমুনাপ্রসাদ, ডঃ এল. পি. মেহরোত্রা, অধ্যাপক প্রণব পাল, আয়েন স্টিভেনসন।

 

প্যারাসাইকোলজিস্টরা অনুসন্ধানে কি পেয়েছিলেন

১. পুঁটি বলেছিল ও ছিল বংশী বেরার স্ত্রী। প্রথমে স্বামীর নাম ‘কচির বাবা’ বা ‘খোকার বাবা’ বললেও পরে জানিয়েছিল বরের নাম ছিল বংশী।

শালগাছিয়া গাঁ পুঁটিদের গাঁ ঘেঁষেই। সেখানে অনেক বেরা পরিবারের বাস। তাদেরই একটি পরিবারে ‘বংশী’ নামে এক মাঝ-বয়সী পুরুষের হদিস মেলে, যার স্ত্রী মারা গেছেন।

২. পুঁটি বলেছিল ওর পূর্বজন্মের নাম ছিল ললিতা। বংশী বেরার মৃত বউটির নামও ছিল ললিতা।

৩. পুঁটিও কথামত গতজন্মে ওকে গলায় ফাঁসি দিয়ে মারা হয়েছিল। বংশীর কথা মত- ললিতা গলায় ফাঁসি দিয়েই মারা গিয়েছিল।

৪. ফাঁসি দিয়েছিল গরুর দড়ি দিয়ে। গামছা বা কাপড় দিয়ে নয়।

বংশী তাঁর সাক্ষ্যে জানিয়েছিলেন- পুঁটির কথাই ঠিক। ললিতা ফাঁসি দিতে গরুর দড়িই বেছে নিয়েছিল।

৫. পুঁটি জানিয়েছিল- বংশী ঘটনার দিন মদ খেয়ে বাড়ি এসেছিল এবং খাবার না পেয়ে ললিতার সঙ্গে ঝগড়া করেছিল।

বংশী এই ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছিলেন।

৬. পুঁটির কথামত বংশীদের বাড়ি ছিল শালগাছিয়া বাজারের কাছে। বাস্তবেও তাই।

৭. পুঁটি জানিয়েছিল- বংশীদের পুকুর ছিল। সত্যিই ওদের পুকুর ছিল।

৮. পুঁটি বলেছিল- ওর শ্বশুর বাড়িতে গোয়াল ছিল। বাস্তবেও তাই ছিল।

৯. পুঁটির কথা মত- ললিতার দুই সন্তান ছিল। এক মেয়ে, এক ছেলে। তাই ছিল। ললিতার মৃত্যুর সময় ছেলের বয়স ছিল এক বছর, মেয়ের বয়স তখন তিন বছর।

১০. ললিতার বাড়ি ছিল ঐ গ্রামেরই প্রান্তে এক কাঠের পুলের কাছে। বাস্তবেও তাই ছিল। পুঁটির কথা সত্যি প্রমাণিত হয়েছিল।

১১. শ্বশুরবাড়ির কাছে ছিল নারকোলগাছ। এ’ক্ষেত্রেও পুঁটি ঠিকই বলেছিল। বংশী বেরা বাড়ির কাছেই ছিল নারকোল গাছ।

১২. বংশী বেরার বাড়ি পুঁটি চিনিয়ে দিয়েছিল।

সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে প্যারাসাইকোলজিস্টরা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন, ঘটনাটা সত্যি।

প্যারাসাইকোলজিস্টরা বিভিন্ন সময়ে অনুসন্ধানের কাজে এলেও তাঁরা পুঁটিকে নিয়ে শালগাছিয়ায় বংশীর বাড়ির কাছে গিয়েছিলেন। পুঁটি বংশীর বাড়ি ঠিক-ঠিক দেখিয়ে দিয়েছিল। দেখিয়ে দিয়েছিল পুকুর, গোয়ালঘর।

এ’সব প্রমাণ হাতের কাছে পাওয়ার পর তাঁরা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন- পুঁটি বাস্তবিকই জাতিস্মর। এ’ছাড়া আর কি সিদ্ধান্তেই বা পৌঁছোতে পারতেন বলুন ! ! !

 

পুঁটিঃ কিছু তথ্য

পুঁটির জন্ম নভেম্বর ১৯৬৪। বাবা বলাই পাত্র বা মা বীণাপাণি পাত্র জন্ম তারিখ জানাতগে পারেননি।

ললিতার মৃত্যু পুঁটির জন্মের ৮ বছর আগে, ১৯৫৬ সালে।

পুঁটির বাবা ছিলেন দিনমজুর। পুঁটির ঠাকুমা গঙ্গামণি আনাজপাতি নিয়ে বসতেন বাজারে।

পুঁটিদের বাড়ি যদিও কাপাশবেড়িয়ায়, তবু ঠাকুমা আনাজ নিয়ে বসতেন শালগাছিয়ার বাজারেই। কারণ কাপাশবেড়িয়ার লোকদেরও দোকান-বাজার করতে আসতে হতো শালগাছিয়াতেই। দুটি গাঁয়ের দূরত্ব বেশি হলে দু’কিলোমিটার।

পুঁটির মার কথামত পুঁটি ছেলে-মেয়েদের মধ্যে একটু বেশি মেজাজি এবং একটু গিন্নি স্বভাবের।

পুঁটির উপরে ছিল এক দাদা ও তিন দিদি, কিন্তু পুঁটি নাকি দিদিদের ওপরও ‘দিদি-গিরি’ করত।

দেড় বছর বয়স থেকেই পুঁটি নাকি ওর পূর্বজন্মের কথা বলতে শুরু করে।

পুঁটির জাতিস্মর হয়ে ওঠার ঘটনা খুব দ্রুতই জেনেছিল আশে-পাশের দশ-বিশটা গাঁ। তমলুক শহরেও লোকের মুখে নাকি ফিরত পুঁটির কাহিনী। মুখে-মুখে ফেরার আরও একটা কারণ সম্ভবত- বংশী বেরার বউয়ের মৃত্যুর পিছনে একটা রসালো কাহিনীর সম্ভাবনাকে খুঁজে পাওয়া। বংশীর বউ আত্মহত্যা করেনি, তাকে হত্যা করেছে বংশী স্বয়ং। এমন একটা খবর সাধারণ মানুষ খাবে ভাল, এটাইও স্বাভাবিক। প্রশংসার খবর ছড়ায় গরুর গাড়ির গতিতে। নিন্দা ছড়ায় রকেট গতিতে, মহামারীর মত ব্যাপকতা নিয়ে।

তারপর পুঁটির খবর গ্রাম, জেলা, দেশের গণ্ডি অতিক্রম করে গোটা পৃথিবীতেই প্রচারিত হয়েছে বিশ্বের নামী-দামী প্যারাসাইকোলজিস্টদের কল্যাণে। পুঁটি আজও গ্রামের মানুষদের কাছে বিস্ময়।

 

অনুসন্ধানে আমি যা পেয়েছি

১৯৬৯-এর ডিসেম্বরে গিয়েছিলাম পুঁটির গাঁয়ে। মধ্যরাতে খরগপুরে পৌঁছে যখন বাসে উঠলাম, তখন গোটা বাসে আমার সহযাত্রী মাত্র দু’জন। যার একজন কন্ডাকটর ও একজন পুলিশ। নকশাল আন্দোলন ডেবরা, গোপীবল্লবপুরের গণ্ডি ছাড়িয়ে যে মেদিনীপুর জেলার অনেকাংশতেই ছড়িয়ে পড়েছে, শ্বেত-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে পাল্টা লাল-সন্ত্রাস, তা বুঝতে অসুবিধে হয়নি রাতের বাসে এমন যাত্রীর আকাল দেখে।

মুখ থেকে ধোঁয়া বেরুনো শীতের ভোরে পৌঁছেছিলাম পুঁটির বাড়ি। ‘ভোর’ বেছে নেবার কারণ- বলাইবাবুর জীবিকা।

অনুসন্ধান চালিয়ে যেসব তথ্য জানতে পেরেছি, তার থেকেই কিছু তথ্য এখানে আপনাদের জন্য হাজির করছি, যেগুলো ‘পুঁটি-রহস্য’ উন্মোচনে সহায়ক হবে বলে আশা রাখি।

১. বলাই পাত্র তার পরিবার নিয়ে কাপাশবেড়িয়ায় আসার আগে থাকতেন শালগাছিয়ায়। এ’কথা জানিয়েছিলেন বলাইবাবু স্বয়ং ও তাঁর স্ত্রী বীণাপাণি।

২. শালগাছিয়ায় বংশী বেরার বাড়িতেই তাঁরা ভাড়াটে হিসেবে বাস করতেন। এ’কথাও জানিয়েছিলেন বলাইবাবু, বীণাপাণিদেবী, বংশী বেরা ও শালগাছিয়ার কিছু অধিবাসী।

৩. ললিতার গলায় দড়ি দিয়ে মৃত্যুর খবর বলাইবাবুদের পরিবারের কারুরই অজানা ছিল না।

৪. গলায় যে গরুর দড়ি দেওয়া হয়েছিল, তাও বলাইবাবু, বীণাপাণিদেবীদের অজানা ছিল না।

৫. মৃত্যু যে গোয়ালঘরেই ঘটেছিল তাও পুঁটির মা-বাবা জানতেন। জানত পুঁটির ভাই-বোনেরা।

এই তথ্যগুলোর সাহায্য নিয়ে আমাদের পক্ষে এই সন্দেহ প্রকাশ করাটাই স্বাভাবিক- এই খুঁটি-নাটি তথ্য পুঁটিরও অজানা ছিল না।

 

অনুসন্ধানে আরও জেনেছিলামঃ

৬. ললিতার বাড়ি যে কাঠ-পুলের কাছে তা পুঁটির বাবা-মা জানতেন।

৭. পুঁটির বাবা-মা জানতেন, ললিতার এক মেয়ে ও এক ছেলে।

৮. ওঁরা এও জানতেন ললিতা বংশী বেরাকে ‘খোকার বাবা’ বা ‘কচির বাবা’ বলে ডাকতেন।

৯. যে-হেতু বংশীদের বাড়ির ভাড়াটে ছিলেন বলাইবাবুরা তাই জানতেন বংশীদের পুকুরের কথা, গোয়ালের কথা, নারকোলগাছের কথা।

১০. বংশীবাবুর বাড়ি বাজারের কাছে- এটা পুঁটিদের পরিবারের অজানা ছিল না।

১১. ললিতার মৃত্যুর দিন বংশী মদ খেয়ে এসেছিলেন, ভাত না পেয়ে ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন, তার থেকে দু’জনে ঝগড়া এবং ললিতার আত্মহত্যা- এ’সব তথ্য বংশীবাবুই গাঁয়ের মানুষদের জানিয়েছিলেন।

বংশীবাবু তাঁর সাক্ষ্যে বলেছিলেন, ললিতা গলায় দড়ি দিয়েছিল বিকেল চারটে থেকে সাড়ে চারটা নাগাদ।

বংশীবাবুকে হত্যাকারী বলে গাঁয়ের কেউই সন্দেহ প্রকাশ করেননি। তাই পুলিশকে খবর দিয়ে বংশীকে অস্বস্তিকর অবস্থায় সেদিন ফেলতে চাননি। কারণ তাঁরাও অনেকেই মনে করতেন- ললিতার একটু মাথায় গোলমাল ছিল। যখন-তখন দুম-দাম খেপে যেত। এমনই এক রাগের মুহূর্তে ললিতা গলায় দড়ি দিয়েছিলেন বলে পাড়া-পড়শিরা বিশ্বাস করেছিলেন।

১২. পুঁটির জাতিস্মর হয়ে ওঠার কথা গোটা তল্লাটে চাউর হওয়ায় অনেক গাঁ-গঞ্জের মানুষ ভিড় করে এলেও যাননি বংশীবাবু।

“কেন যাননি?” আমার কথার উত্তরে বংশীবাবু জানিয়েছিলেন, “ও ললিতা নয়। তাই ফালতু সময় নষ্ট করতে যাইনি।“

“কি করে নিশ্চিত হলেন ও ললিতা নয়?”

“পুঁটি যদি সত্যিই ললিতা হতো, তাহলে নিশ্চয়ই বলত ললিতা আত্মহত্ম্যা করেছিল।“

১৩. বংশী তাঁর বউ ললিতাকে যেভাবে হত্যা করেছিলেন বলে পুঁটি বর্ণনা করেছিল, সেই বর্ণনার দিকে পাঠক-পাঠিকাদের মনোযোগ আর একটি বারের জন্য ফেরাতে অনুরোধ করছি। সেই সঙ্গে জানিয়ে রাখছি-ললিতার মৃত্যুর পূর্বমুহূর্তগুলোর এই বর্ণনাই অন্যান্য প্যারাসাইকোলজিস্টদের লেখাতেও পাবেন।

পুঁটির কথামত ললিতা বংশীর চর খেয়ে মারা যাননি, জ্ঞান হারিয়েছিলেন মাত্র। যদিও জ্ঞান হারিয়েছিলেন, তবুও বুঝতে পারছিলেন ওর চোখে-মুখে জলের ঝাপটা দিচ্ছেন বংশী। জলের ঝাপটায় কাজ হয়নি। জ্ঞান ফেরেনি। এত চেষ্টাতেও ললিতার জ্ঞান না ফেরায় ও মারা গেছে মনে করে ভীত বংশী ওঁকে কাঁধে চাপিয়ে নিয়ে গেছেন গোয়ালঘরে। ঘর থেকে গোয়ালঘরের দূরত্ব আনুমানিক ১২৫ ফুট। এতটা পথ দোল খেতে খেতে যেতে যেতেও ললিতার জ্ঞান ফেরেনি। অজ্ঞান হলেও ললিতা জ্ঞান হারাননি ! বুঝতে পারছিলেন ওঁকে বংশী গোয়ালঘরে নিয়ে চলেছেন। ললিতাকে গোয়ালঘরের মেঝেতে নামিয়ে রেখেছেন বংশী। ললিতা বুঝতে পেরেছেন। ললিতার গলায় গরুর দড়ির ফাঁস পরিয়েছেন বংশী। ললিতা তাও বুঝতে পেরেছেন। অর্থাৎ বোঝার মত টনটনে জ্ঞান থাকা স্বত্বেও অজ্ঞানতার জন্য ‘টু’ শব্দটি করতে পারেননি। তারপর ললিতাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিয়েছেন। সব বুঝে-সমজেও ললিতা ফাঁসিতে ঝুলে পড়েছেন। রা’টি কাটেননি কোনও অভিমান থেকে নয়, অজ্ঞান থাকার জন্য। ললিতা এতো কিছু বুঝলেও, কিচ্ছুটি বুঝতে পারেননি বংশী। বুঝতে পারেননি, চড় খাওয়ার পর ললিতার মৃত্যু হওয়া তো দূরের কথা, জ্ঞানটি পর্যন্ত টনটনে রয়েছে। আহাম্মক আর কাকে বলে ! বোধহয় এরপরও যারা অজ্ঞান ললিতার স্বজ্ঞানে ফাঁসিতে চড়ার গল্প সরল বিশ্বাসে মেনে নেন, তাঁদেরই বলে।

error: Content is protected !!