১৯৭৭ –এর এপ্রিলে শ্রীলঙ্কার কিছু খবরের কাগজে একটি জাতিস্মরের খবর প্রকাশিত হয়ে যথেষ্ট আলোড়ন সৃষ্টি করে। খবরে বলা হয় – মা তারা কাছেরীর মৃত কেরানি ফ্রান্সিস কোদিতুয়াক্কু তিন বছর আগে জন্ম নিয়েছে কান্দাগোদার এক পরিবারে। ফ্রান্সিস মারা যান ১৯৭৩ –এর ১৬ এপ্রিল ৫২ বছর বয়সে।
কিছু পরামনোবিজ্ঞানী, গবেষক ও বৌদ্ধ সন্ন্যাসী শিশুটিকে পরীক্ষা করে জানান – ও সত্যিই জাতিস্মর। ফ্রান্সিসের জীবনের খুঁটিনাটি অনেক ঘটনা ও বর্ণনা করেছে, সেই সঙ্গে চিনিয়েও দিয়েছে পূর্বজন্মের স্ত্রী ও দুই ছেলেকে।
শ্রীলঙ্কার র্যাশান্যালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন শিশুটির জাতিস্মর ক্ষমতা পরীক্ষা করতে এগিয়ে এল। ফ্রান্সিরের বাড়ির সঙ্গে শিশুটি আগেই পরিচিত ছিল। বেশ কয়েক বার ওই বাড়িতে গিয়েছে। ফ্রান্সিরের স্ত্রী ও দুই ছেলেকেও ভালোমতো চেনে। অতএব র্যাশন্যালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা একটু অন্যরকমভাবে পরীক্ষা নিলেন। তাঁরা ফ্রান্সিসের অফিসের সহকর্মীদের একটি গ্রুপ ছবি সংগ্রহ করে হাজির করলেন ছোট ছেলেটির কাছে। ওই ছবির কোন সহকর্মীকেই চিনতে পারল না ছেলেটি। ফ্রান্সিরের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন ধর্মদাস। ধর্মদাসের কাছে হাজির করা হল ছেলেটিকে। না, এবারও চিনতে পারল না। ফ্রান্সিসের জীবনের ওপর ৭০টি প্রশ্ন রাখা হয়েছিল, ৪টি মাত্র প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পেরেছিল ছেলেটি। গোটাটাই যে একটা সাজানো ব্যাপার তা বুঝতে মোটেও অসুবিধা হয় না। কাউকে ঠকাবার ইচ্ছা থাকলে একজন মৃত ব্যক্তির সম্বন্ধে খুঁটিনাটি খবর জেনে নিয়ে সেগুলো একটি বালক-বালিকাকে ভালোমতো শিখিয়ে-পড়িয়ে তার অতীত জীবনের স্মৃতি বলে চালানো মোটেই কঠিন কাজ নয়। আদিম মানুষের অজ্ঞতা থেকে সৃষ্টি হয়েছিল আত্মার, আর শাসক ও পুরোহিত সম্প্রদায়ের শোষণের সুবিধের জন্য সৃষ্টি হয়েছিল পূর্বজন্মের কর্মফল ও জন্মান্তরবাদ।