এবার যে ঘটনার কথায় আসছি, তার নায়ক চরিত্রে রয়ছে ইয়ান স্টিভেনসন ও ডঃ হেমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। নায়িকা শ্রীলঙ্কার ছ-বছরের মেয়ে জ্ঞানতিলক। মেয়েটি নাকি পূর্বজন্মে ছিল তিলকরত্ন। ১৩ বছর ৯ মাস বয়সে তিলকরত্ন মারা যায়। তিলকরত্নের মৃত্যুর ৫ মাস পরে জ্ঞানতিলকের জন্ম। ১৯৬০ সালের নভেম্বর স্টিভেনসন ও ডঃ বন্দ্যোপাধ্যায় মেয়েটিকে তার পূর্বজন্মের ওপর ৬১টি প্রশ্ন করেছিলেন। ৪৬ টি প্রশ্নের উত্তর ঠিক দিয়েছিল। এবং শুধুমাত্র বেশিসংখ্যক ঠিক উত্তর দেওয়াকেই জাতিস্মরের অভ্রান্ত প্রমাণ হিসেবে এই দুই পরামনোবিজ্ঞানী গ্রহণ করেছিলেন। জ্ঞানতিলক যেসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিল তার গুটিকতক নমুনা আপনাদের সামনে হাজির করছি,
(১) আমার বাবা ছিল।
(২) আমার মা ছিল।
(৩) সমুদ্র দেখেছি।
(৪) সমুদ্রের রং সবুজ ও নীল।
(৫) সমুদ্রের ধারে গাছ আছে।
(৬) গাছগুলো নারকোল গাছ।
(৭) সমুদ্রের পাড়ে বালি আছে।
(৮) আমার বোন ছিল।
(৯) ছোটবেলায় বোনকে মেরেছি।
(১০) স্কুলে যেতাম।
(১১) মা ছিলেন ফর্সা।
(১২) পোস্ট অফিসে গিয়েছি।
এমন সব উত্তর জানতে চাওয়ার সার্থকতা কি আমার ঠিক মাথায় ঢুকল না।
পরামনোবিজ্ঞানীরা বলেছেন, জ্ঞানতিলক সমুদ্র দেখেনি, অথচ সমুদ্রের রঙ্গের সঠিক বর্ণনা দিয়েছে। সমুদ্রের পাড়ে যে নারকেল গাছ তাও বলতে পেরেছে। সমুদ্রকুলে বালির বর্ণনাও সঠিক দিয়েছে। এই সবই বলতে পেরেছে পূর্বজন্মের তিলকরত্নের সমুদ্র দেখার স্মৃতি উদ্ধার করে।
সমুদ্র না দেখলে কি সমুদ্রের বর্ণনা দেওয়া যায় না। নিউইয়র্ক না দেখলেও কি নিউইয়র্কের বিরাট উঁচু উঁচু বাড়ির বর্ণনা করা অসম্ভব? রবীন্দ্রনাথকে মুখোমুখি না দেখলেও কি তাঁর চেহারা আমাদের অপরিচিত?
একটা চার পাঁচ বছরের বাচ্চাকে হাতি, বাঘ, ভাল্লুক। ঘোড়া, নদী, সমুদ্র, পাহাড়, ট্রেন – এইসব নানা ধরনের জিনিসের ছবি দেখিয়ে দেখবেন আপনার বয়স্ক চোখের চেয়েও ওদের চোখ অনেক বেশি ডিটেইলস-এর দিকে নজর রাখে। ছোটদের ছবি আঁকতে তার পছন্দমতো রঙ্গের মাঝখানে বসিয়ে দিন, দেখবেন, অনেক সময় ওদের ডিটেলসের কাজ আপনাকে অবাক করে দেবে। একটা ছোট শিশুকে নদী, পাহাড়, সমুদ্রের রঙচঙ্গে ছবি দেখাবার পর তাকে জিজ্ঞেস করে দেখবেন, সে প্রত্যেকটাই সঠিক বর্ণনা দেবে। জ্ঞানতিলক কোন দিনই কোনও রঙ্গিন ছবি দেখেনি, এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায় নি।
জ্ঞানতিলককে যে অনেক কিছু আগে থেকেই শেখানো হয়েছিল এই ধরনের অনুমান করার মতো অনেক ধারণা আছে।
পরামনোবিজ্ঞানীদ্বয়ের সেরা জাতিস্মর জ্ঞানতিলক কিন্তু তার জাতিস্মর ক্ষমতা সুনিশ্চিতভাবে প্রমাণ করতে পারেনি।