ঘড়ী সময় মাপার যন্ত্র। আগে লোকে সূর্যের গতি বা কোন কিছুর ছায়া দেখে বা মেপে সময় নিরূপণ করত। সাধু-সজ্জন বা মুনি-ঋষিরা জপমালার গোনাগুণতির দ্বারা সময়ের একটা স্থুল হিসাব পেতেন। আমাদের গ্রামের মুন্সি আপছার উদ্দিন সাহেব প্রত্যহ মাগরেবের নামাজের বাদে একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক তছবিহ পড়ে এশার নামাজ পড়তেন। এতে তাঁর ঘড়ীর কাজ হ’ত। স্বাস্থ্য বিজ্ঞান মতে সুস্থ দেহে পূর্ণবয়স্ক একজন লোকের হৃদস্পন্দন বা নাড়ির স্পন্দন এক মিনিটে ৭৫ বার এবং শ্বাস প্রশ্বাস ২০ বার। তাহলে একবার শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যাপ্তিকাল ৩ সেকেন্ড এবং এক একটা নাড়ীস্পন্দনের সময়সীমা ৪/৫ সেকেন্ড। এ হিসাবে প্রতি ঘণ্টায় নাড়ীর স্পন্দন ৪৫০০ বার এবং শ্বাস-প্রশ্বাস ১২০০ বার। বসে বসে নাড়ীর স্পন্দন বা শ্বাস-প্রশ্বাস গুণতে থাকলে, ওতেও সময়ের একটা হিসাব পাওয়া যায়। কিন্তু সকল রকম প্রচেষ্টার শীর্ষে দাঁড়িয়ে আছে “ঘড়ী”।

হাতের শক্তি স্প্রিং এ জমা রেখে তদ্বারা ঘড়ীর যন্ত্রাংশ চালিয়ে সময় মাপা হয়। অনেক দিন হতে আমি ভাসা ভাসা ভাবে ভাবতে ছিলাম যে, কোন প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা ঘড়ী চালানো যায় কি-না। কিছু দিন পর্যায়ক্রমে চিন্তা ভাবনা করে স্থির করলাম যে, জলের মাধ্যাকর্ষণী শক্তির দ্বারা ঘড়ী চালানো সম্ভব। জলের দ্বারা ঘড়ী চলানো সম্বন্ধে আমার চিন্তা ধারাটা মোটামুটি এ রকম-

সূক্ষ্ম ছিদ্র যুক্ত কোন পাত্রে জল রাখলে, ছিদ্র দিয়ে ফোটা ফোটা জল পড়তে থাকবে। দুটি ফোঁটা পতনের মাঝের সময়ের ব্যবধান একই থাকবে- যদি ছিদ্রের পরিধি ও পাত্রের জলের উচ্চতা একই মাপের থাকে। পক্ষান্তরে- ছিদ্র বড় করলে বা জলের উচ্চতা বাড়ালে ফোঁটা তাড়াতাড়ি পড়বে এবং ছিদ্র ছোট করলে  বা জলের উচ্চতা কমালে ফোঁটা ধীরে ধীরে পড়তে থাকবে। এই ফোটা পড়া থেকে দুটি উপায়ে সময়ের হিসাব পাওয়া সম্ভব। প্রথম উপায়টি হল- ঘণ্টা, মিনিট, সেকেন্ড ইত্যাদি কোন নির্দিষ্ট সময়ের পতিত ফোঁটাগুলো গুণে বা মিনিম গ্লাসে ফেলে মেপে সময়ের একটা হিসেব পাওয়া যেতে পারে।

দ্বিতীয় উপায়টি হল- সাধারণতঃ জলের একটি ফোঁটার ওজন ১ গ্রেন বা প্রায় .৫ রতির সমান। কোন তৈল যন্ত্রের (সূক্ষ্ম মাপের নিক্তির) এক দিকের একটি বাটির ওপর একটি ফোঁটা ফেললে নিক্তির দন্ডের একটা দিক সামান্য নীচু হবে। ফলে অপর দিকটা সমপরিমাণ ওপরে ওঠবে। নিক্তি দন্ডের এই গতি অর্থাৎ ওঠা-নামা থেকে অর্থাৎ একটা নির্দিষ্ট সময়ে নিক্তি দন্ডটা কতটুকু ওপরে ওঠল বা নীচে নামল, সে মাপের সূত্র ধরে সময়ের একটা হিসাব পাওয়া সম্ভব।

আমি দ্বিতীয় উপায়টি অবলম্বন করে “জল-ঘড়ী” বানাবার জন্য একটা পরিকল্পনা করলাম এবং কাগজে ওর একটা নক্সা আঁকলাম। নক্সায় প্রদর্শিত ঘড়ীটির সব কিছুকে দুটি অংশে ভাগ করা যেতে পারে। যথা- পরিচালক অংশ ও পরিচালিত অংশ। আবার পরিচালক অংশকে “জলাংশ” এবং পরিচালিত অংশকে “যন্ত্রাংশ” বলা যায়। প্রথমতঃ আমি জলাংশ সম্বন্ধে আলোচনা করছি।

জলাংশে তিনটি জলাধার থাকবে। এর ওপর ভাগে থাকবে প্রথম জলাধারটি এবং এর ওপরে থাকবে একটি মুখ। এটা দিয়ে ওপরের জলাধারটিতে জল ভরতে হবে। এজলাধারটির নিম্নভাগে একটি ছিদ্র ও নল, এটা দিয়ে জল নীচে পড়তে থাকবে। এ জলাধারটির নিচে স্থাপন করতে হবে আর একটি জলাধার। ওপরস্থিত প্রথম জলাধারটি হতে দ্বিতীয় জলাধার এ জন পড়তে থাকবে। প্রথম জলাধারের জল পড়ার সাথে সাথে তার জলের পরিমাণ বা উচ্চতা কমতে থাকবে। কিন্তু দ্বিতীয় জলাধারটির জল পড়ে তার জলের পরিমাণ বা উচ্চতা কমবে না, একই থাকবে। নিয়ন্ত্রক শলাটি এমন ভাবে তৈরি করতে হবে যে, ওর দৈর্ঘ্য বাড়ানো বা কমানো যেতে পারে। এর জন্য শলাটির ওপরে এক মুখ খোলা একটি সরু চোঙ্গা বসাতে হবে। চোঙ্গাটির গর্তের ফাঁক এতটুকু হওয়া দরকার, যাতে ওর ভেতর পূর্বোক্ত শলাকাটি ঢুকিয়ে ও বের করে “চোঙ্গা-শলাটির দৈর্ঘ্য বাড়ানো বা কমানো যায়। চোঙ্গা শলাকা যুক্ত ভাসমান কৌটাটি এমনভাবে জলের ওপর ভাসায়ে রাখতে হবে যে, চোঙ্গা শলাটির উপর প্রাপ্ত প্রথম জলধারাটির ছিদ্র এর সোজা থাকে। প্রথম জলাধার হতে দ্বিতীয় জলাধারে জল পড়ে এর জলের উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চোঙ্গা-শলা সমেত কৌটাটি ভেসে উপরে উঠতে থাকবে। এতে এমন একটা সময় আসবে যখন চোঙ্গা শলাটির উপর প্রাপ্ত- প্রথম জলাধারটির নিচের ছিদ্রকে বন্ধ করে দেবে। এতে প্রথম জলাধার হতে দ্বিতীয় জলাধারে আর জল আসতে পারবে না। তবে কখনো আসতে পারবে না, তা নয়; দ্বিতীয় জলাধার হতে তার নিচের ছিদ্র দিয়ে যেই পরিমাণ জল পড়বে, প্রথম জলাধার হতে দ্বিতীয় জলাধার এ সেই পরিমাণ জল আসতে পারবে, এর বেশি নয়। এতে দ্বিতীয় জলাধারের জলের উচ্চতা সব সময় একই ভাবে থেকে যাবে এবং এটা হতে তার নীচের ছিদ্র দিয়ে একই নিয়মে জলের ফোঁটা পড়তে থাকবে। কিন্তু চোঙ্গা-শলা এর দৈর্ঘ্য বাড়ালে দ্বিতীয় জলাধার এর জলের উচ্চতা বেড়ে যাবে, ফলে ফোঁটা পড়বে তাড়াতাড়ি।

ধীর বা দ্রুত – যেভাবেই জলের ফোঁটা পড়ুক না কেন, দৈনিকে (২৪ ঘণ্টার) পতিত জল জমা হবে গিয়ে সর্বনিম্নে স্থাপিত তৃতীয় জলাধার এ এবং শূন্য হবে প্রথম জলাধার। একটা নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর প্রথম জলাধার এ জল ভর্তি করতে হবে। কিন্তু সে জন্য বাইরের থেকে জল আনতে হবে না। তৃতীয় জলাধার এর নিম্ন পার্শ্বে এমন একটি পাম্পার যন্ত্র যুক্ত করতে হবে, যার হ্যান্ডেল টানলে তৃতীয় জলাধার হতে পাম্পের মধ্যে জল ঢোকে এবং চাপ দিলে প্রত্যাবর্তক নল বেয়ে উপরে উঠে প্রথম জলাধারে চলে যায়।

প্রথম জলাধারটি কি পরিমাণ জল থাকল বা আদৌ থাকল না, তা দেখার জন্য জলাধারটির নিম্নাংশের সঙ্গে একটি (কাঁচের) পরিমিতী  নল যুক্ত করতে হবে। এতে বাইরে থেকে প্রথম জলাধারটির জল দেখে পাম্পারের সাহায্যে যথা সময়ে ওটাতে জল প্রদান করা সম্ভব হবে।

“পরিচালিত অংশ” বা যন্ত্রাংশের বিষয়ে এখন বলছি। এর “বাটি” ও “চক্র” একত্রে বলা যায় “চক্র বাটি”।

জল ঘড়ী পরিচালনার মূল শক্তিটি- হল “মাধ্যাকর্ষণ শক্তি” বা জলের “নিম্ন চাপ” শক্তি। এ শক্তি বাড়া-কমা নির্ভর করবে “চক্র-বাটিরঃ চাকার “ব্যাস” ও বাটিতে পতিত “জলের” পরিমাণের ওপর। চক্রবাটির চাকার ব্যাস বাড়ালে ঐ চাপ শক্তি বাড়বে এবং ব্যাস কমালে চাপ শক্তি কমবে। কাজেই শক্তি বাড়াবার জন্যই চক্রবাটির চাকাটি কিছু বড় করতে হবে। আমার পরিকল্পিত চক্রবাটির চাকার ব্যাস হবে ১২ ইঞ্চি। তাই প্রথমতঃ ১২ ইঞ্চি ব্যাস বিশিষ্ট একটি চাকা তৈরি করতে হবে এবং ওটায় প্রায় ব্যাসার্ধ পরিমাণ দৈর্ঘ্য বারোটি চক্রদন্ড থাকবে। চক্রটির কেন্দ্রে থাকবে আড়াআড়ি ভাবে একটি দন্ড, এটাকে বলা হবে শক্তিশালী দন্ড। শক্তি-বাহী দন্ডটির এক প্রান্ত থাকবে ঘড়ীটির পিছনের দিকে কোন এক স্থানে আলগা ভাবে ধরানো এবং অপর প্রান্ত থাকবে ঘড়ীটির সম্মুখ ভাগে ডায়ালের মিনিটের কাটার সঙ্গে যুক্ত এবং উপরে থাকবে একটি নল পড়ানো, ওটাকে বলব “আহ্নিক নল”। চাকাটির পরিধিকে সমান বারো ভাগে বিভিক্ত করে অর্থাৎ বারোটি চক্রদন্ডের মাথায় বারোটি বাটি বসাতো হবে। এতে দুটি বাটির মধ্যকার ব্যবধান হবে ৩০০ ডিগ্রী। বিশেষতঃ ঘড়ীর সম্মুখে দাঁড়ানো দর্শকের ডান দিকের বাটির মুখ ওপরের দিকে থাকবে। পূর্বোক্ত প্রথম ও দ্বিতীয় জলাধার দুটি এমন ভাবে স্থাপন করতে হবে, যেন দ্বিতীয় জলাধার হতে পতিত জলের ফোঁটা গুলো (ডান দিকের) সমতল বাটিটার ওপর পড়ে। এতে পতিত জলের ওজনে বা চাপে সমতল বাটিটা নিম্নগামী হবে এবং নিয়ন্ত্রক শলা বাড়িয়ে কমিয়ে জলের ফোটাগুলোকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং নিয়ন্ত্রক শলা বাড়িয়ে কমিয়ে জলের ফোটাগুলোকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে যে, পাঁচ মিনিট সময়ে বাটিটা ৩০০ ডিগ্রী নিচে নেমে যায়। এতে সমতলের বাটিটা আর সমতল থাকবে না। কিন্তু তার পেছনের বাটিটা সমতলে আসবে এবং জলের ফোটার চাপে ক্রমে সেটাও নীচে চলে যাবে, পুনঃ সমতলে আর একটা আসবে, পরে আর একটা। এভাবে শক্তিবাহী দন্ড সমেত বাটি-চক্রটা ঘুরতে থাকবে এবং এক ঘণ্টা (৫X১২=৬০ মিনিট) পর প্রথম সমতল বাটিটা ঘুরে আবার সমতলে আসবে। অর্থাৎ বাটি চক্রটা ঘুরবে ঘণ্টায় একবার। এভাবে চলতে থাকবে বাটি-চক্রের ঘূর্ণন। আর বাটি-চক্রের কেন্দ্রে সংলগ্ন শক্তিশালী দন্ডটির সহিত ঘুরবে ডায়াল এর মিনিটের কাটাটি নিয়মিতভাবে।

শক্তিবাহী দন্ড এর সঙ্গে আর একটি দাঁতওয়ালা ছোট চাকা (পিনিয়ন) সংযুক্ত করতে হবে, তার নাম হবে “ঘণ্টা-চক্র”। এই ঘণ্টা-চক্রের দাঁতের সহিত দাঁত মিশিয়ে অনুরূপ আর একটি বড় চাকা স্থাপন করতে হবে, তার নাম হবে “আহ্নিক চক্র” এবং ওর পরিধি হবে ঘণ্টা চক্রের বারো গুণ। এটার কেন্দ্র বিন্দুতে একটা আহ্নিক দন্ড থাকবে এবং তার এক প্রান্ত থাকবে আহ্নিক চক্রধারী দন্ড এর সঙ্গে আলগা ভাবে লাগানো ও অপর প্রান্ত থাকবে ঘড়ীর সম্মুখ ভাগের কোথায়ও আলগা ভাবে লাগানো। আহ্নিক চক্রটি ঘুরবে প্রতি বারো ঘণ্টায় একবার।

ঘণ্টা চক্র ও আহ্নিক চক্রের ব্যাসের সমষ্টির অর্ধেক ব্যাস বিশিষ্ট দাঁতওয়ালা দুটো চক্র তৈরি করতে হবে। ওদের বলা হবে “যুগ্ম আহ্নিক চক্র”। এর একটা চক্র থাকবে আহ্নিক দন্ডের সাথে যুক্ত এবং অপরটি থাকবে আহ্নিক নল এর সঙ্গে যুক্ত। বিশেষতঃ উভয় চক্রের দাঁতে দাঁত মিলানো থাকবে। আহ্নিক নলটি এর বাইরের দিকের শেষ প্রান্তে যুক্ত থাকবে (মিনিটের কাটার সাহায়ক রূপে) ঘণ্টার কাটা।

ঘূর্ণনশীল সংযোগস্থানগুলো যথা সম্ভব আলগা থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। এতে জলের আবশ্যকতা কমে যাবে। পরিশ্রুত বা কলের জল ব্যবহার করতে হবে, নচেৎ জলাধারের ছিদ্র পথে ময়লা জমে জল পতন ব্যাহত হবে। ফলে ঘড়ীর নির্দিষ্ট সময়ের হেরফের হবে। হয়ত বা ঘড়ী বন্ধ হয়ে যাবে।

পরিকল্পিত ঘড়ীটি (২৪ ঘণ্টা) চালাতে যে পরিমাণ জল আবশ্যক হবে, তার বাস্তবতা নির্ভর করবে- প্রস্তুতকারকের পারদর্শিতা বা কলাকৌশলের সূক্ষ্মতার উপর। তবুও স্থুলতঃ একটা হিসাব করা যেতে পারে।

প্রতি দু সেকেন্ডে এক ফোঁটা করে জল খরচ হলে ২৪ ঘণ্টায় জলের আবশ্যক হবে প্রায় দু সের তের ছটাক, ধরা যেতে পারে তিন সের। সুতরাং এই পরিমাণ জল ধারনের উপযোগী জলাধার আবশ্যক হবে।

জলাধার, বাটিচক্র ও পিনিয়ন সমূহের পরিপ্রেক্ষিতে ঘড়িটির ও তার অন্যান্য অংশের পরিমাপ হওয়া উচিৎ নিম্নরূপ।

১। ঘড়ির দেহ- দৈর্ঘ্য ১৫ ইঞ্চি, প্রস্থ ৯ ইঞ্চি, উচ্চতা ২৪ ইঞ্চি।

২। জলাধার- দৈর্ঘ্য ১৪.৫ ইঞ্চি, প্রস্থ ৮.৫ ইঞ্চি এবং উচ্চতা ২ ইঞ্চি।

৩। জলাধার (গোলাকার ব্যাস ৩ ইঞ্চি, উচ্চতা ) ইঞ্চি।

৪। ভাসমান কৌটা- (গোলাকার) ব্যাস  ইঞ্চি, উচ্চতা  ইঞ্চি।

৫। নিয়ন্ত্রক শলা- (গোলাকার) (ওপরের চোঙ্গা অংশের) দৈর্ঘ্য  ইঞ্চি, ব্যাস ইচ্ছাধীন, (নিম্নাংশের) দৈর্ঘ্য  ইঞ্চি, ব্যাস ওপরের ব্যাসের গর্তের সমান।

৬। জলাধার- প্রথম জলাধার এর অনুরূপ।

৭। বাটি- (গোলাকার) ব্যাস ১ ইঞ্চি, উচ্চতা ১ ইঞ্চি।

ইহা ভিন্ন ঘড়ীটি নির্মাণে অন্যান্য যা কিছু আবশ্যক হবে, তা নির্মাণকারীর বিবেচনাধীন থাকিবে।

১৩২০-৪৫ সাল পর্যন্ত – মাধব পাশা নিবাসী মধুসুধন কর্মকার ও তাঁর পুত্র রসিক চন্দ্র কর্মকার আমাদের বাড়িতে থেকে সোনা-রূপার কাজ করতেন। কিন্তু আবশ্যকবোধে তামা-পিতলের কাজ এবং কচিৎ লোহার কাজও করতেন। আমি সচরাচর দোকানের কাছে বসে বসে ওদের কাজ করা দেখতাম।

হাতের কাজ সমূহ “দেখা” ই “শেখা”, অবশ্য মনোযোগের আবশ্যক। আর দেখা কাজ হাতে করতে করতেই অর্জিত হয় দক্ষতা ও নিপুণতা।

ওঁদের দোকানে বসার দুটি আসনে দুটি নেহাই ছিল এবং যে কেহ বাড়িতে গেলে একটি নেহাই খালি পড়ে থাকত। আমি অবসর সময়ে ওখানে বসে তামা ও পিতলের ছোট খাট কাজ করবার সুযোগ পেতাম এবং কিছু কিছু কাজ করতাম। ওঁরাও আমার কর্মোৎসাহ দেখে এ কাজে আমাকে সহায়তা করতেন। বহু বছর যাবত ওঁদের সংশ্রবে থেকে ও সহযোগিতা পেয়ে আমি তামা, পিতল ও লোহার কিছু ছোট ছোট কাজ করতে শিখতে পেরেছিউ। যেমন- হাতের আংটি, গেলাস, বাটি, কুপীবাতি, শোন, চিমটা ইত্যাদি এবং বিশেষ ভাবে শিখেছিলাম- তামা, পিতল ও লোহা, টিন ইত্যাদির “ঝালাই” এর কাজ। (গার্হস্থ্য জীবনে টুকি-টাকি কাজ নিয়ে কর্মকার ঝালাইয়ের কাছে গিয়ে আমাকে ধন্না দিতে হয় না। কেননা সাধারণ কাজ গুলো করবার মত হাতিয়ার আমি সংগ্রহ করে নিয়েছি এবং নিজের কাজগুলো নিজেই করে থাকি। এমন কি চল কাটা, জুতা সেলাই ইত্যাদিও। এতে আমি “লজ্জাও” ও পয়সা কিছুই পাই না, পাই আনন্দ।)

আমার পরিকল্পিত ঘড়ীটি নির্মাণ করবার জন্য যে সমস্ত মাল-মশল্লা ও যন্ত্রপাতি আবশ্যক হতে পারে, সে সমস্ত সংগ্রহ ও রোপনাদি মাঠের কাজ আপাততঃ সমাধা করে ২৫ শে ভাদ্র (১৩৪৩) নিজ হাতে ঘড়ী নির্মাণের কাজ শুরু করলাম। ঘড়ীটি নির্মাণে আমার প্রায় দুমাস সময় কেটে গেল। ঘড়ীটিতে ব্যবহার করা হল- তামা,টিন, লোহা ও কাঠ।

ঘড়ীটি চালু করে দেখা গেল যে, আমার পরিকল্পনা মতে সকল কাজ চলছে। তবে কিছুটা সময়ের অগ্র-পশ্চাৎ হচ্ছে। কিন্তু এ সমস্যাটা তত বেশি বড় নয়। আমার বড় একটি সমস্যা প্রত্যেক পাঁচ মিনিটের প্রথমার্ধে “ধীর” ও শেষার্ধে “দ্রুত” গতিতে ঘড়ীটি চলা। এ সমস্যাটি আমি সমাধান করতে পারছিলাম না।

অগ্রাহায়ণ- মাসের শেষার্ধে মিঃ জি, এন রায় দঃ লামচরি নিবাসী আঃ রহিম মৃধার বাড়িতে আসলেন, আমি সেখানে তাঁকে আমার ঘড়ীটি দেখালাম। সময়ের হেরফের ও কিছু ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হলেন এবং আমাকে পচিশ টাকা পুরস্কার প্রদান করলেন।

কিছু স্মৃতি, কিছু কথা

নিবেদন

ভিখারীর আত্মকাহিনী- প্রথম খন্ড

চর পূর্বাভাস ও জন্ম (১১৫৮-১৩০৭)

ছবি ও জলের কল (১৩২২)

মুন্সি আহম্মদ দেওয়ান (১৩২৩

পলায়ন (১৩২৪)

মুন্সি আপছার উদ্দিন (১৩২৫)

আরবী শিক্ষায় উদ্যোগ (১৩২৬)

চিকিৎসা শিক্ষা (১৩৩০)

জীবন প্রবাহের গতি (১৩৩১)

ছুতার কাজ শিক্ষা (১৩৩১)

জরীপ কাজ শিক্ষা (১৩৩৩)

বস্ত্র বয়ন শিক্ষা (১৩৩৫)

উচ্চ শিক্ষার প্রচেষ্টা (১৩৩৫)

জাল বুনা শিক্ষা (১৩৩৬)

ভিখারীর আত্মকাহিনী- দ্বিতীয় খন্ড

জাল বোনা ও মৎস্য শিকার

মোসলেম সমিতিঃ স্কুল প্রতিষ্ঠা ও শিক্ষকতা (১৩৩৬-১৩৪১)

মোসলেম সমিতিরঃ ভাঙ্গন

পাঠাগার স্থাপন (১৩৩৭)

পাখা তৈয়ার (১৩৩৯)

ইঞ্জিনিয়ারিং শিখার উদ্যোগ ও মাতৃবিয়োগ (১৩৩৯)

সীজের ফুল রচনা (১৩৪০)

বিশ্বাসের বিবর্তন (১৩৪১)

ডাইনামো তৈয়ার (১৩৪১)

ভিখারীর আত্মকাহিনী- তৃতীয় খন্ড

কৃষি বিদ্যা শিক্ষা 

জলঘড়ী তৈয়ার

বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরীর শিক্ষা 

সাইক্লোন

দুর্ভিক্ষ

অধ্যাপক কাজী গোলাম কাদিরের সান্নিধ্যে

লাল গোলা যাতায়াত

ভিখারীর আত্মকাহিনী- পঞ্চম খন্ড

“ক্ষেত্র-ফল” রচনা

স্টেট বাটারা

আদেশাবলী

“সৃষ্টি – রহস্য” রচনা

“সত্যের সন্ধান” এর পান্ডুলিপ

সত্যের সন্ধান প্রকাশ

সন্তান-সন্ততি

ভূসম্পত্তি

দেশ সেবা

খোরাক-পোসাক

জীবন বাণী

“আরজ আলী মাতুব্বর” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ

⇒অভিযোগ বা মন্তব্য⇐

 

error: Content is protected !!
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x