মা দুর্গাই আবার সারাদ দেশের খবর হয়ে দাঁড়ালেন, এবারের ঘটনা স্থল জব্বলপুর। সাল ১৯৮২। ২৯ অক্টোবর ভেড়াঘাটে নর্দমা নদীতে শ্রীভবানী মণ্ডল দুর্গোৎসব কমিটির  দুর্গা প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হল, জলে ফেলতে প্রতিমা ডুবে গিয়েছিল, কিন্তু একটু পরেই দেখা গেল কিছুটা দূর, নর্দমার ডান তীরে প্রচন্ড স্রোতের মধ্যেও সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন দুর্গা প্রতিমা। প্রতিমা তীব্র স্রোতকেও উপেক্ষা করে অনড় হয়ে রয়েছেন। নর্দমার তীব্র স্রোত ভেসে চলেছে মা দুর্গার পা ধুয়ে।

কিছুক্ষণের  মধ্যেই মা দুর্গার এক অলৌকিক কাহিনী শহরে ছড়িয়ে পড়ল। সেই রাতের হাজারে হাজারে লোক এসে হাজির হল এই অলৌকিক দৃশ্য দেখতে। পরের তিন, ৩০ অক্টোবর ভেড়াঘাটে তিলধারণের জায়গা রইল না। বিভিন্ন রুট থেকে বাস সরিয়ে ভেড়াঘাটে অনবরত বাস যাচ্ছে আর আসছে। ভেড়াঘাট বিরাট একটা মেলার রূপ পেল। নানা রকমের দোকান, খাবার, ফুল, ফলের দোকানেই ভিড় সবচেয়ে বেশি। লক্ষ লক্ষ ভক্ত মা দুর্গার উদ্দেশ্যে নর্দমাতেই ছুঁড়ে দিচ্ছে ফুল, ফল বা মিঠাই। লক্ষ লক্ষ ধর্মপাগলকে সামলাতে শহরের পুলিশ হিমশিম খেয়ে গেল। এইসঙ্গে ব্যাপক হাতে বিক্রি হতে লাগল অলৌকিক মা দুর্গার ফোটোগ্রাফ। এমন জীবন্ত দুর্গার ছবি বাড়িতে থাকলে দুর্গতি দূর হবে এই বিশ্বাসে বহু ভক্তই মা দুর্গার ফোটোগ্রাফ কিনল। বলতে গেলে ফোটো কেনার হুজুগ পড়ে গেল ওখানে। জব্বলপুরের হিন্দি দৈনিক পত্রিকা ‘নবভারত’ -এর  দেওয়া তথ্য অনুসারে ৩০ অক্টোবর থেকে দুই নভেম্বর মাত্র চার দিনেই জব্বলপুরের মতো একটি মাঝারি শহরে ছবি বিক্রি হল ৪ থেকে ৫ লক্ষ। দাম হিসেবে জনসাধারণের পকেট থেকে চলে গিয়েছিল ৩৫ লক্ষ টাকার মতো। সেই সঙ্গে দেবী দুর্গার কৃপায় অন্যান্য দোকানেরও বিক্রি-বাটার রমরমা ছিল দেখার মতো। স্থান-মাহাত্ম্যের স্থায়ী রূপ দিয়ে এই জায়গাটাকে একটা তীর্থক্ষেত্র বানিয়ে ফেলতে পারলে আখেরে যে প্রচুর লাভ হবে এটুকু বুঝে নিয়েছিল স্বার্থসংশ্লিষ্ট লোকেরা।

এরই মধ্যে একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেল। দুই উৎসাহী যুবক গাঞ্জীপুরার রামকিষণ সাহু ও অজয় বর্মণ দেবীপ্রতিমাকে স্পর্শ করতে সাঁতার কেটে এগোতে গিয়ে নর্দমার তীব্র স্রোতে ভেসে গেল। দুই তরুণের এই মৃত্যুতে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন চিন্তিত হলেন। বুঝলেন, দেবীপ্রতিমা পাথরের খাঁজে যতদিন আটকে থাকবে, ততদিনই আরও দুর্ঘটনা ঘটনার সম্ভাবনা রয়েই যাবে। ধর্মান্ধ লোকেরা জাগ্রত দুর্গাকে স্পর্শ করতে গিয়ে মৃত্যু হলে অক্ষয় স্বর্গবাস হবে বলে যদি একবার ধরে নেয়, তবে বিপর্যয় ঘটে যাবে। গণহিস্টিরিয়ার প্রকোপে স্বর্গবাসের বাসনায় অনেকেই আত্মাহুতি দেবে। পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিলেন প্রতিমা ডুবিয়ে দেবেন।

এইবার বোধহয় জব্বলপুরের ভেরাঘাট সম্বন্ধে কিছু বলা প্রয়োজন। ভেড়াঘাট জব্বলপুরের বিখ্যাট দ্রষ্টব্য স্থান। ভেড়াঘাটে এলে দেখতে পাবেন বিশ্ববিখ্যাত ‘মার্বেল রক’ –এর অসাধারণ শোভা। দু’পাশে সাদা মার্বেল পাহাড়ের মাঝ দিয়ে বয়ে চলেছে নর্দমা নদী।

নদীতে বোটে চেপে পর্যটকেরা পাহাড়ের সৌন্দর্য পান করেন। এখানকার প্রাকৃতিক গঠন বৈশিষ্ট্যের জন্য নদীর বাঁ-দিক বেশ গভীর, কোথাও কোথাও এই গভীরতা তিন চারশ ফুট পর্যন্ত। স্বভাবতই গভীরতার দরুন নদীর বাঁ দিকের জল শান্ত ও স্রোত কম। ডান দিকের নদীর গভীরতা খুবই কম। এত কম যে, কোথাও কোথাও জলের উপর পাথরও চোখে পড়ে। জলের দু’চার ফুট গভীরতার মধ্যে রয়েছে বহু পাথর ও পাথরের তৈরি খাঁজ। তাই ডান দিকে নদীর স্রোত খুব তীব্র।

বাঁ-দিকের বেশি জলে বিসর্জন দেওয়ায় ডুবে গিয়েছিল বটে কিন্তু ডুবন্ত অবস্থায় স্রোতের টানে ডান দিকে চলে যায় এবং প্রতিমার পাটাতন আটকে যায় কোন ডুবন্ত পাথরের খাঁজে। জলের তীব্র ধাক্কায় আটকে থাকা প্রতিমা সোজা দাঁড়িয়ে পড়ে। ব্যাপারটা অসাধারণ হলেও অলৌকিক নয়।

২ নভেম্বর বিকেলে কোমরে নাইনলের দড়ি বাঁধা ডুবিরিরা নামল প্রতিমা ডোবাতে। পুলিশের এমন অধার্মিক কাজে জনতা উত্তেজিত হল। পুলিশ উত্তেজিত জনতার উপর লাঠিচার্জ করতে বাধ্য হল। ডুবুরিরা দেবী প্রতিমার পাটাতন কেমনভাবে পাথরের খাঁজে আটকে গেছে পরীক্ষা করে মূর্তিকে দড়ি বেঁধে টানাটানি করল, শাবল দিয়ে চাড় দিল, মূর্তি কিন্তু তেমনই দাঁড়িয়ে রইল। উন্মত্ত দড়ি জনতা ডুবুরিদের থামাতে পাথর ছুঁড়তে লাগল। তারই সঙ্গে মাঝে মাঝে সমস্বরে চিৎকার করতে লাগল, “জয় দুর্গে, জয় নর্মদে”, “ধর্ম কি জয় হো, অধর্মকা নাশ হো।“ দারুন উত্তেজনার মধ্যে দীর্ঘ সংগ্রামের পর রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ অধার্মিকরাই জিতে গেল।  মা দুর্গা অবশেষে ডুবলেন।

ভূমিকা

কিছু কথা

নতুন ‘কিছু কথা’

১. অধ্যায়ঃ এক

২. অধ্যায়ঃ দুই

৩. অধ্যায়ঃ তিন

৪. অধ্যায়ঃ চার

৫. অধ্যায়ঃ পাঁচ

৬. অধ্যায়ঃ ছয়

৭. অধ্যায়ঃ সাত

৮. অধ্যায়ঃ আট

৯. অধ্যায়ঃ নয়

৯.১ আদ্যা’মা রহস্য

৯.২ ধর্মের নামে লোক ঠকাবার উপদেশ কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে

৯.৩ সোমনাথ মন্দিরের অলৌকিক রহস্য

৯.৪ প্রাচীন মিশরের ধর্মস্থান রহস্য

৯.৫ কলকাতায় জীবন্ত শীতলাদেবী ও মা দুর্গা

৯.৬ জব্বলপুরে জীবন্ত দুর্গা

৯.৭ খেজুরতলার মাটি সারায় যত রোগ

৯.৮ পক্ষিতীর্থমের অমর পাখি

৯.৯ যে গাছ কাটা যায় না

৯.১০ গাইঘাটার অলৌকিক কালী

৯.১১ যে পাথর শূন্যে ভাসে

৯.১২ অলৌকিক প্রদীপে মৃত বাঁচে

৯.১৩ বার্মুডা ট্র্যাঙ্গেল রহস্য

১০. অধ্যায়ঃ দশ

১১. অধ্যায়ঃ এগারো

১২. অধ্যায়ঃ বার

১৩. অধ্যায়ঃ তেরো

১৪. অধ্যায়ঃ চোদ্দ

১৫. অধ্যায়ঃ পনের

১৬. অধ্যায়ঃ ষোল

১৭. অধ্যায়ঃ সতেরো

১৮. অধ্যায়ঃ আঠারো

১৯. অধ্যায়ঃ ঊনিশ

২০. অধ্যায়ঃ কুড়ি

error: Content is protected !!
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x