আমাদের সমাজের জীবনধারাই এই রকম- ‘নামী’ হওয়ার একটা পর্যায় অতিক্রম করে আরও নাম কিনতে সাধারণভাবে বিভিন্ন স্পনসরকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শক্তির শ্নজ্ঞে আপোষ করা অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে। এইসব স্পনসরদানকারী প্রতিষ্ঠান ও শক্তিগুলো বুদ্ধিজীবীদের স্বাতন্ত্র্যকে পিষে মেরে নিজের ছাঁচে ঢালাই করতে চায়। আমরা কি ধরনের গল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস, কবিতা পড়ব, তা ব্যাপকভাবে নির্ধারিত করে দিচ্ছে বৃহৎ পত্রিকাগোষ্ঠী ও প্রকাশকরা। আমরা দূরদর্শনে কতটা মারদাঙ্গা দেখব, কতটা যৌনতা, কতটা ভক্তিরসে আপ্লুত হবো, ধর্মগুরুদের বাণীর দ্বারা কতটা আচ্ছন্ন হবো, আদর্শ নারীর গুণ হিসেবে পতিসেবা, পতির পরিবারের সেবা, লজ্জা ইত্যাদি নীতিবোধকে কতটা আমাদের মগজে ঠাসবো- এ সবই ঠিক করে দিচ্ছে বিভিন্ন ধনকুবের স্পনসররা ও রাষ্ট্রশক্তি। পত্র-পত্রিকা ও দূরদর্শনের প্রচার শক্তিকে কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন ভোগ্যবস্তুর প্রতি ক্ষুধা জাগিয়ে তোলা হচ্ছে। পোশাক- আশাক পাল্টে যাচ্ছে। আসছে বারমুডা, শটগান, ওয়াশ-জিন। চিঁড়ে-মুড়িকে বিদায় নিতে হচ্ছে ‘কর্ণফ্লেক্স’, ‘ফানমাঞ্চ’, ‘বিনিজ মাঙ্গতা’র স্বপ্নময় স্লোগানের ঠেলায়। পিপাসার্তকে জলের পরিবর্তে ‘থামস-আপ’, ‘পেপসি’, ‘সেভেন-আপ’, ‘সিট্টা’ ইত্যাদি পানে প্রলোভিত করছে বিজ্ঞাপনের স্বপ্ন-সুন্দরী ও সুঠাম সুন্দররা। কোন ধরনের সিনেমা দেখব, তা নির্ণয় করে কোটিপতি চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সেনসর-ক্ষমতার অধিকারী সরকার। এ-সবের দ্বারাই তো আমাদের রুচি, চাহিদা, চেতনা, মূল্যবোধ নির্ধারিত হয়, গড়ে ওঠে জীবনধারা।

বুদ্ধিজীবীরা আজ স্পষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন, শুধু প্রতিভা জনপ্রিয়তা আনতে পারে না, বসায় না সম্মানের সিংহাসনে। এর জন্য চাই প্রচার- মাধ্যমগুলোর অকুন্ঠ সহযোগিতা ও শাসকদলের স্নেহ (যাতে রাষ্ট্রীয় পুরস্কার-টার পাওয়ায যায়)। বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে প্রচার মাধ্যম ও তারপরই স্পনসর হিসেবে উল্লেখযোগ্য দুই শক্তি- শাসক ও ধনকুবের গোষ্ঠীর সম্পর্ক পরস্পরের স্বার্থেই সব সময় দেওয়া-নেওয়ার মধ্য দিয়ে সুন্দর। পত্র-পত্রিকাগুলোয় চোখ বোলালেই দেখতে পাবেন, ‘গল্পপাঠের আসর ; ‘কবিতাপাঠের আসর’, ‘আবৃত্তির আসর’, ‘গানের আসন’, ‘নাচের আসর’, ‘নাটক’, সবের বিজ্ঞাপনের তলাতেই ‘সৌজন্যে’ লিখে জ্বলজ্বল করে স্পনসরকারী সংস্থার নাম।

বুদ্ধিজীবীরা বর্তমান সমাজ কাঠামোর বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক শক্তিগুলোর কাছ থেকে নেন সরকারি জমি, সরকারি ফ্ল্যাট, সরকারি পুরস্কার, বিদেশে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ, পত্র- পত্রিকা বেতার-দূরদর্শনে প্রচারে, বে-সরকারি নানা পুরস্কার ও একটা ‘বাজার’ যা তাদের দেয় অর্থ (অন্যান্য শাখার বুদ্ধিজীবীদের ক্ষেত্রেও ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে প্রায় একই ব্যাপার)। বিনিময়ে বুদ্ধিজীবীরা তেমনই সিনেমা বানান, নাটক লেখেন, গল্প-কবিতা-উপন্যাসকে চিত্রিত করেন এবং অন্যান্য বুদ্ধিজীবীরা অন্যান্য কিছু করেন, যেমনটা দেশের অর্থনৈতিক ক্ষমতার নিয়ন্ত্রক ধনকুবেরা চান। এই ধনকুবেরা চান, এই সমাজ ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখতে ও সবল করতে প্রয়োজনীয় একটি সাংস্কৃতিক বাতাবরণ। এই বাতাবরণ প্রধানত ভোগবাদ ও অধ্যাত্মবাদ-নির্ভর।

শিল্প-সাহিত্যের পুরস্কার কি প্রতিভার স্বীকৃতি?
না দালালির বিনিময় মূল্য?

পুরস্কার দেওয়া ও পাওয়া নিয়ে একটা মজাদার ঘটনার কথা মনে পড়ে গেল। ঘটনাটা আমাকে বলেছিলেন কথা সাহিত্যিক সমরেশ বসু। এই ঘটনাটাই বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত সাহিত্য পত্রিকা ‘ড্যাফোডিল’-এর পাতায় প্রকাশ করেছিলেন সম্পাদক ওয়াহিদ রেজা, জানুয়ারি ১৯৯১ সংখ্যায়।

সমরেশ বসু’র নেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ‘ড্যাফোডিল’ পত্রিকার তরফ থেকে কবি বাপী সমাদ্দার প্রশ্ন করেছিলেন, “আচ্ছা, সাম্প্রতিক পুরস্কারের বিষয়ে আমাদের কিছু বলুন না- এই, দাতা ও গ্রহীতার কথা, অন্দরমহলের কেষ্টবিষ্টুদের কথা।“

সমরেশ বসুঃ ভাই দেখ, এই পুরস্কারের ব্যাপারটা আমাকে প্রশ্ন করে তোমরা আমাকে একটু বিপদে ফেলেছো, এই কারনে যে, পুরস্কার সম্পর্কে আমার নিজের কোনো- আমি পুরস্কার পেয়েছি, পাইনি তা নয়, কিন্তু একটি বিশেষ সংবাদপত্রের প্রতিষ্ঠান থেকে পুরস্কার পেয়েছি। সেইজন্য, আমার নামে দুর্নামও আছে আমি বোধ হয় সেই সংস্থার সঙ্গে এমনভাবে জড়িত যে সেইজন্য তারা বুঝি আমাকে পুরস্কার দিয়েছিলেন। তারা যে-বছর প্রথম, আমি আনন্দবাজার পত্রিকার কথাই বলছি, তারা যে-বছর প্রথম পুরস্কার দিলেন, সেই বছর আমি-ই প্রথম পুরস্কার পাই আমি এবং বিভূতি মখোপাধ্যায়। সেটি আমি পেয়েছিলাম ‘গঙ্গা’ উপন্যাসের জন্য।

আমি জানি না এর মধ্যে কোথায় কি অপরাধ- কি অন্যায় লুকিয়ে আছে –

যাই হোক, ত্বে পুরস্কার ব্যাপারটা আমার কাছে স্বচ্ছ ব্যাপার বলে মনে হয় না। এ বিষয়ে তোমাদের একটা মজার গল্প বলি তাহলে বোধহয় আমাকে আর জবাব দিতে হবে না। তাহলে খুব, আমি নিজের দিক থেকে বেঁচে যাই। এক সময় বঙ্কিমচন্দ্রের জন্মদিনে, এখানে আমাদের নৈহাটিতে, কাঁঠালপাড়ায়, রেললাইনের ওপারে তিনজন বিখ্যাত সাহিত্যিক এসেছিলেন- তিনজনই এখনহ মৃত। এসেছিলেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। এসেছিলেন বনফুল- এসেছিলেন শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়। প্রথম বক্তা ছিলেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি তখন সদ্য রাশিয়া প্রত্যাগত এবং তোমরা বোধহয় জানো ওঁর কথাবার্তার মধ্যে বরাবরই ভীরভূমি টান ছিল। উনি বীরভূমের লোক। উনি প্রথমে উঠেই ওঁর বলবার মধ্যে একটা ভীষণ ফোরস কাজ করতো, যখন বলতেন সে কথাটাকে খুব জোর দিয়ে বলতেন- উনি প্রথমে বললেনঃ আজকে এখানে এসে প্রথমেই আমার বলতে ইচ্ছে করছে যে, আমি দে-দেশে গেসলাম আমি সেই দেশে দেখে এলাম যে সে দেশে সাহিত্যিকদের রাজার সম্মান দেওয়া হয়। আমি সোভিয়েট রাশিয়ার কথা বলতেসি। আমি বলছি সেখানে সাহিত্যিকদের রাজার সম্মান দেওয়া হয়। কিন্তু আমাকে দুঃখের সঙ্গে বইলতে হবে যে আমাদের দেশে সাহিত্যিকদের সেই সম্মান দেওয়া হয় না। তারপরে তিনি আরও কিছু কিছু কথা বললেন। তার পরবর্তী বক্তা, ইতিপূর্বে কিন্তু তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের ভারতবর্ষে মোটামুটি যতগুলো মানে, রিজিওন্যাল পুরস্কার পাওয়া উচিৎ সাহিত্যিকদের তার সবগুলোই পেয়েছেন, কিন্তু বনফুল কোনোটাই পাননি। এর পরবর্তী বক্তাই বনফুল এবং বনফুলের একটা ব্যাপার ছিল, তিনি, মানে, এমনিতে তৈরি করে হঠাত বক্তৃতা করতে পারতেন না। তিনি বক্তৃতা লিখে আনতেন সবসময়। তিনি উঠলেন, উঠে বললেন যে, আমি তো এমনিতে বক্তৃতা করতে পারি না, সেইজন্য আমি আমার বক্তব্য লিখে এনেছি। কিন্তু আমার পূর্ববর্তী বক্তা যা বলে গেলেন, তাঁর কথার জবাবে আমি একটি কথা বলে পরে আমি আমার বক্তৃতাটি পাঠ করছি আপনাদের সামনে। তিনি বিদেশে গেছলেন এবং সেখানে তিনি দেখে এসেছেন সাহিত্যিকদের রাজার সম্মান দেওয়া হয় এবং আমাদের দেশের সাহিত্যিকদের সেই রাজার সম্মান দেওয়া হয় এবং আমাদের দেশের সাহিত্যিকদের সেই রাজার সম্মান দেওয়া হয় না, কথাটা হয়তো খুবই ঠিক, খুবই সত্য- কিন্তু যে-দেশের সাহিত্যিক পুরস্কারের জন্য মন্ত্রীর কাছে ছুটে যায়, যে-দেশের সাহিত্যিক পুরস্কারের উমেদারি কারবার জন্য দিল্লিতে গিয়ে মন্ত্রীর বাড়িতে ঘনঘন যাতায়াত করে, মন্ত্রীর বন্ধুত্ব এবং মন্ত্রীর সেবা করতে চায়, সেই সাহিত্যিকদেরও কি রাজসম্মান দিতে হবে? আমার এটাই একমাত্র জিজ্ঞাসা। এবং আরও মজার কথা হল তারাশঙ্কর বক্তৃতার পর ভেতরঘরে গিয়ে চা খাচ্ছিলেন- আমাদের নৈহাটিরই এক বন্ধু, অধ্যাপক বন্ধু, কবি বন্ধু, প্রাবন্ধিক বন্ধু, তিনি বললেন আপনি কি শুনেছেন আপনার সম্পর্কে বনফুল কি বললেন। আপনার বক্তৃতার পরে বললেন কি, না একথা বলেছে। তারাশঙ্করের গাড়িতে বনফুল এসেছিলেন। বনফুলের গাড়ি ছিল না। তারাশঙ্করবাবু অত্যন্ত রেগে উঠে বললেন, ও ! ও এই কথা বলেছে ! ঠিক আছে, আমি চললাম আমার গাড়ি নিয়ে, আমার সঙ্গে ওকে যেতে হবে না। তোমরা এখন বুঝতে পারছ যে পুরস্কার ব্যাপারটা কোথায় দাঁড়িয়ে আছে। এটা আমার জবানী নয়, তোমরা বড় দুই দিকপাল সাহিত্যিকের জবানী থেকেই শুনতে পেলে যে পুরস্কার ব্যাপারটা কি। অতএব আমি আর এ ব্যাপারে কিছু বলছি চাইছি না।

এই ট্রাডিশন আজও বহমান সরকারি-বেসরকারি সব ক্ষেত্রেই। সরকারি পুরস্কারের ব্যাপারে একটি সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতার কথা শোনাই। তখন সদ্য ১৯৯৩- এর ‘রবীন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার’ ঘোষিত হয়েছে। সংকর্ষণ রায়ের সঙ্গে খোলা-মেলা আড্ডা দিতে গিয়ে দেখলাম, আড্ডা তেমন জমছে না। বার বার কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছেন, বার বারই আড্ডার রেশ যাচ্ছে কেটে। সৎকর্ষণ রায় এক সময় সম্ভবত অস্বস্তিটা ঝেড়ে ফেলে কিছুটা হালকা হতে বললেন, তিনি এবার রবীন্দ্র পুরস্কার বিচারক মণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। সেখানে ঘটে যাওয়া অন্যায়কে ঠিক মত মেনে নিতে পারছেন না বলেই ভিতরে ভিতরে দগ্ধ হচ্ছেন। বিচারক মণ্ডলীর বেশির ভাগ সদস্যই যদিও একটি বইকে সেরা  মনে করে পুরস্কার দেওয়ার পক্ষে মত প্রকাশ করেছিলেন, কিন্তু সে মতামত বাতিল করে দিল মাত্র দু’জনের মতামত। দু’জন সদস্যই নাকি ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ক্ষমতাবান মানুষ। তাঁরা নাকি মত দিয়েছেন- বইটির লেখক ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের বিরোধী, অতএব ওঁকে পুরস্কার দেওয়া চলবে না। তাঁদের গোঁ’র কাছে বহুর মতামত বাতিল হয়ে গেল। বিচারক মণ্ডলীর প্রায় প্রত্যেকেই সরকারি বড় বড় পদাধিকারী। ওইসব পদে থেকে সরকার পক্ষের মতামতের বিরোধীতা করা বাস্তবে সম্ভব নয়। তাই বাধ্য হয়েই প্রত্যেককে দু’য়ের মতের পক্ষে স্বাক্ষর দিতে হল- ‘সর্বসম্মতভাবে আমরা নির্বাচিত করছি’ বলে।

দুই ক্ষমতাবান বিচারক, যারা নাকি বহুর মতকে অগ্রাহ্য করতে পারেন, পাল্টে দিতে বাধ্য করতে পারেন, তাঁদের নামও সংকর্ষণ রায় জানালেন। দু’জনই আমার কম-বেশি পরিচিত। একজন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি বিভাগের ডিরেক্টর অপরজন, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রো-ভাইসচ্যান্সেলার। আর, বইটির নাম, ‘অলৌকিক নয়, লৌকিক’ ২য় খন্ড।

এই খবরটা আমার কাছে আকস্মিক বা অভাবনীয় ছিল না। খবরের আগাম আভাস আগেই পেয়েছিলাম। পশ্চিমবঙ্গের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রাক্তন উপাচার্য দিন কয়েক আগে আমাকে ফোনে বলেছিলেন, আমার পুরস্কার লাভের সম্ভাবনা যথেষ্ট উজ্জ্বল। তবে এ বিষয়ে ওই ডিরেক্টরের সঙ্গে যেন কথা বলে নিই। উদ্দেশ্য পরিষ্কার- সিস্টেমের সোনার শিকল পছন্দ হয়েছে, ডিরেক্টরকে জানান। ফোন করিনি। তাইতেই … কিন্তু আমি তো দুই বিচারকের পার্টির বিরোধী নই? (কোনও পার্টির কোনও ভাল কাজেরই বিরোধী নই) আমি দুর্নীতির বিরোধী। ওঁরা কেন যে ওঁদের পার্টি = দুর্নীতি ভাবলেন, কে জানে?

এইজাতীয় উদাহরণ কিন্তু কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এবং এই উদাহরণ দুটি আমাদের সমাজ কাঠামোয় পুরস্কার দাতা ও গ্রহীতাদের মধ্যেকার একটা আপোষ সম্পর্কের বহমান ধারাবাহিকতারই দৃষ্টান্ত মাত্র। যারা পুরস্কার পান, তাঁরা নিশ্চয় সাধারণের চেয়ে প্রতিভাবান, তা কমই হোক, কি বেশি। কিন্তু প্রতিভাই এদেশে পুরস্কার পাওয়ার একমাত্র মানদণ্ড নয়। সঙ্গে চাই দাতা ও গ্রহীতার মধ্যে কিঞ্চিৎ দেওয়া-নেওয়া, গাঁ শোঁকাশুঁকি, পিঠ চাপড়া-চাপড়ি, আপোষ ইত্যাদি জাতীয় সম্পর্ক। যা প্রকারান্তরে দুর্নীতি। কখনো কখনো এই দুর্নীতি বিশাল হয়েও ওঠে।

বুদ্ধিজীবীদের স্বাধীনতা

লেখক ও বুদ্ধিজীবীরা তাঁদের প্রতিভা বিকাশের ক্ষেত্রে কতটা স্বাধীন? এ প্রসঙ্গে সমরেশ বসু’র একটি উক্তি হাজির করছিঃ “আমি আমার নিজের একটা জগৎ সৃষ্টি করছি এবং সেখানে আমি আমার স্বাধীনতাকে প্রতিফলিত করছি। সেটা কবিতা হতে পারে, সাহিত্যে গদ্য হতে পারে, ছবি হতে পারে, গান হতে পারে- যে কোনওদিকে তুমি তাকে টেনে নিয়ে যেতে পারো। সুতরাং আমি আগেই বলেছি, তোমাদের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার স্বাধীনতা যে আদৌ আমার কাছে, তা কিন্তু ঠিক নয়। কারণ তার সঙ্গে আমাকে জড়িয়ে আছে সংসারের (সমাজের) এমন সমস্ত ব্যক্তি, এমন সমস্ত সংস্থা, যে হয়তো আমার পক্ষে স্বাধীনভাবে সবকথা বলা, তাদের সম্পর্কে, সম্ভব হবে না।“ (‘ড্যাফোডিল’ সাহিত্য পত্রিকাটিতে প্রকাশিত সমরেশ বসু’র ওই সাক্ষাৎকারটির একটি অংশ)।

এই প্রসঙ্গে সমরেশ বসু উদাহরণও টেনে এনেছেন। শক্তিশালী রাজনৈতিক দল ও “সাহিত্য নিয়ে যারা মনোপলি বিজনেস করে আজকে আমাদের ভারতবর্ষে, এটা শুধু পশ্চিমবঙ্গেরই কথা নয়, এটা সারা ভারতবর্ষেরই কথা, যে, যে কোনও সৃষ্টিশীল সাহিত্যিকই কোনো-না-কোনো ভাবে বিগ বুর্জোয়া মনোপলি বিজনেস সাহিত্যে যাদের আছে, তাদের সঙ্গে আঁতাত করেন…”

৬২-র চীন-ভারত যুদ্ধের সময়ে দেশ পত্রিকায় ‘শিল্পীর স্বাধীনতা’ শিরোনামে বিভিন্ন লেখকদের দিয়ে লেখানো হয়েছিল। এই সাক্ষাৎকারেই সেই প্রসঙ্গে টেনে এনে সমরেশ বসু আমাদের শুনিয়েছেন, সেখানে বামপন্থী ও কমিউনিস্টদের বন্ধু হিসেবে বুক ঠুকে প্রচার করা সাহিত্যিকদের ডিগবাজি খেয়ে উল্টো গাওয়ার গপ্পো। সেখানে ‘বিগ প্রেস’-এর সঙ্গে আঁতাত করতে এগিয়ে এসেছিলেন নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, সুভাষ মুখোপাধ্যায়…। সেদিন সমরেশ বসু আমন্ত্রণ পেয়েও লেখেননি, ভারতের তৎকালীন রাজনীতিতে বিশ্বাস করতেন না বলেই লেখেননি।

বুদ্ধিজীবী ডিগবাজি খাওয়ার ব্যাপক এক প্রবণতা দেখা গিয়েছিল ১৯৬২তে চিন ভারত-যুদ্ধের সময়। চিনের বিরুদ্ধে উগ্র জাতীয়তাবোধ জাগিয়ে তুলতে সর্বশক্তি নিয়োগ করল রাষ্ট্রশক্তি। সমস্ত প্রচার মাধ্যমগুলোকে কাজে লাগাল জাত্যভিমানের ঝড় তুলতে। আর অমনি ঝাঁকে ঝাঁকে কমিউনিস্ট ও কমিউনিস্ট-ঘেঁষা শিল্পী-সাহিত্যিকেরা ঝাঁপিয়ে পড়লেন ‘দেশপ্রেমিক’ প্রমাণ করে অনুকূল স্রোতে গাঁ ভাসাতে। গণনাট্যের লড়াকু লোকসঙ্গীত শিল্পী নির্মলেন্দু চৌধুরী গানের কথা পাল্টে ফেলে রাতারাতি নেমে পড়লেন দেশপ্রেমের জোয়ার আনতে। ভূপেন হাজারিকা তাঁর “ভারত সীমানায়” গানের কথাই পাল্টে দিয়ে কমিউনিস্ট অপবাদ কাটিয়ে ‘দেশপ্রেমিক’ হয়ে গেলেন। গানের কথা ছিল, “চীনের জনতার জয়ধ্বনি শুনি”। এ-জায়গায় তিনি নতুন করে কথা বসালেন, “গাঁয়ের সীমানায় নিশীথ রাত্রির পদধ্বনি শুনি।“ গণনাট্য সঙ্ঘের বিশিষ্ট সংগঠক অভিনেত্রী নিবেদিতা দাস চীন-বিরোধী নাটক মঞ্চস্থ করলেন- পাছে পুলিশ তাঁকে চীনপন্থী বলে ঝামেলা করে। মহারাষ্ট্রের বিশিষ্ট গণনাট্য সঙ্গীতকার ওমর শেষও রাতারাতি ভোল পাল্টালেন। ডিগবাজি খাওয়ার ব্যাপারে কমিউনিস্ট কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়, কমিউনিস্টদরদী নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় কেউই পিছিয়ে রইলেন না। গণনাট্য সঙ্ঘের পশ্চিমবঙ্গের সভাপতি নাট্যকার দিগীন বন্দ্যোপাধ্যায় ‘সীমান্তের ডাক’ নামে চীন-বিরোধী একটা নাটকই রচনা করে ফেললেন। এমন ডিগবাজিকারদের সংখ্যা এতই বিপুল যে তাঁদের নামের ফিরিস্তি দিয়েই একটা গোটা বই লিখে ফেলা যায়। তবে এ-কথা বাস্তব সত্য যে কমিউনিস্ট নেতৃত্বের বড় অংশই ডিগবাজি খেলায় অংশ নিয়েছিলেন। এমন এক হুড়োহুড়ি পড়ে যাওয়া আত্মবিক্রির মধ্য দিয়ে গণনাট্য সঙ্ঘের নাটক-গান ইত্যাদির মধ্য দিয়ে নতুন সংস্কৃতি গড়ার আংশিক চেষ্টাটকুকুও বিশাল ধাক্কা খেয়েছিল। অসাম্যের সমাজ-ব্যবস্থা গড়ে ওঠার শুরুতে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকায় নামা পুরোহিত সম্প্রদায় রাজশক্তির সঙ্গে আঁতাতের যে সূচনা করেছিল, এযুগের বুদ্ধিজীবীরা সেই ‘ট্রাডিশন’ আজও বজায় রেখে চলেছেন। তারই ফলশ্রুতি হিসেবে আমরা দেখলাম, বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার প্র সরকারকে মদত দিতে প্রায় তামাম বুদ্ধিজীবীই ভাঙ্গা কাঁসির মত বাজিয়ে চলেছেন ‘ধর্মনিরপেক্ষতার নামে সর্ব ধর্ম বুদ্ধিজীবীই ভাঙ্গা বাণী’, যা অবশ্যই আমাদের দেশের সংবিধানের বিরোধীতারই নামান্তর। কারণ, ভারতীয় সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষ (Secular) শব্দের অর্থ করা হয়েছে- ধর্মের ক্ষেত্রে ভারত থাকবে নিরপেক্ষ অর্থাৎ কোনো ভাবেই কোনও ধর্মের পক্ষেই নয়। রাষ্ট্রনীতি, রাজনীতি ও শিক্ষানীতি ধর্মীয় অনুশাসন থেকে মুক্ত থাকবে। অর্থাৎ

(১) ভারতীয় সংবিধানের ‘ধর্মনিরপেক্ষ (Secular) শব্দটির অর্থ করা হয়েছে- ধর্মের ক্ষেত্রে ভারত থাকবে নিরপেক্ষ। রাষ্ট্রনীতি, রাজনীতি ও শিক্ষানীতি ধর্মীয় অনুপ্রবেশ থেকে মুক্ত থাকবে। সংবিধানকে মর্যাদা দিতে সরকারকে ধর্মনিরপেক্ষতার যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। অর্থাৎ :

(ক) রাষ্ট্রীয় সমস্ত রকম কার্যকলাপে ধর্মীয় অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে।

(খ) শিক্ষায়তনগুলোতে কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠান, ধর্মীয় প্রার্থনা, ও পঠন-পাঠনে ধর্মীয় নেতাদের জীবনী এবং প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মচেতনা বুদ্ধিজীবী বিষয়ের অন্তর্ভুক্তিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।

(২) ধর্মীয় কার্যকলাপে রাজনৈতিক নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতা ও সহযোগিতা নিষিদ্ধ করতে হবে।

(৩) যে রাজনৈতিক দলের নেতা ধর্মীয় কার্যকলাপে পৃষ্ঠপোষকতা করবেন অথবা প্রকাশ্যে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন, সেই নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করতে হবে, নতুবা গোটা দলকেই সাম্প্রদায়িক হিসেবে নিষিদ্ধ করতে হবে।

(৪) সরকারি প্রচার-মাধ্যমে ধর্মীয়-প্রচারকে নিষিদ্ধ করতে হবে।

(৫) কোনও আবেদনপত্রে আবেদনকারীর ধর্ম জানতে চাওয়া চলবে না।

কোনও রাজনৈতিক দল সাম্প্রদায়িক কাজ-কর্মের সঙ্গে জড়িত থাকলে বা সাম্প্রদায়িকতাকে পালন করার কাজে বা উসকে দেওয়ার কাজে যুক্ত থাকলে সংবিধানের ১৯৮৯ সালের রিপ্রেজেন্টেশন অফ দ্য পিপল (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্টের ২৯(এ) ধারা বলে ওই রাজনৈতিক দলের স্বীকৃতি খারিজ করার বিধান আছে।

উপরোক্ত ধারা মতে, দেশের সংবিধানে যে মৌলিক নীতিগুল আছে, প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে সেই মৌলিক নীতিগুলির প্রতি লিখিতভাবে আস্থাজ্ঞাপন করতে হবে নির্বাচন কমিশনের কাছে। কোনও ক্ষেত্রে কোনও দল এই নীতিগুলি অমান্য করলে নির্বাচন কমিশন ২৯ (এ) ধারা বলে সেই রাজনৈতিক দলের রেজিস্ট্রেশন কেড়ে নিতে পারে।

বুদ্ধিজীবীরা কেন নেমেছিলেন আমাদের সংবিধানে দেওয়া ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র ব্যাখ্যাকে পাল্টে দেওয়ার কি কাজে? কারণ শাসক ও শোষণরা তেমনটাই চেয়েছিলেন। দেশবাসীকে নানা ধর্মের নামে নানাভাবে বিভক্ত করার স্বার্থেই চেয়েছিলেন। নির্বাচনে ধর্মকে নিয়ে দাবা খেলার স্বার্থেই চেয়েছিলেন ধর্মীয় বিভাজন থাকুক।

গত বছরখানেক ‘দেশ’ পত্রিকাটির দিকে লক্ষ্য রাখলেই দেখবেন, ‘ধর্ম’ নিয়ে কতই না লেখা অফুরন্তধারায় প্রকাশিত হয়েই চলেছে। ধর্মের অমানবিক দিকগুলো যত বেশি বেশি করে আমরা, যুক্তিবাদী ও মানবতাবাদীরা সাধারণ মানুষদের কাছে প্রশ্নাতীত আনুগত্যের আসন থেকে চ্যুত হচ্ছে, তখন ‘অশনি-সঙ্কেত’ দেখতে পেয়েছে সিস্টেমের মধুপানে পুষ্ট শোষক-শাসক প্রচারমাধ্যম ও বুদ্ধিজীবীরা। বুদ্ধিজীবীদের পত্রিকা হিসেবে চিহ্নিত ‘দেশ’ পত্রিকাই অবস্থা ফেরবার মূল দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে। কাজে লাগিয়েছে অম্লান  দত্তদের মত সিস্টেমের নির্ভরযোগ্য কুশলী কলমগুলোকে, যারা ধর্ম ও যুক্তির শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের কথা লেখেন, এই সমাজ ব্যবস্থাকে স্থিতিশীল করতেই লেখেন।

 

ট্র্যাডিশনের স্রোতে মগজবেচা বুদ্ধিজীবী

রাষ্ট্রীয় কাঠামোর, সমাজ কাঠামোর সহায়ক শক্তিগুলো প্রতিটি প্রয়োজনের মুহূর্তেই নানা ভাবে তাদের স্বার্থের উপযোগী একটা সাংস্কৃতিক বাতাবরণ তৈরির চেষ্টা করেই চলে, বুদ্ধিজীবীদের সহায়তায়। এমন চেষ্টার মধ্যে রয়েছে নানা কূট-কৌশল, অনেক খুঁটি-নাটি, সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ব্যাপার-স্যাপার। বুদ্ধিজীবীরা একদিকে এইসব পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত থাকেন পরামর্শদাতা হিসেবে, আর এক দিকে পরিকল্পনাকে সার্থক করে তোলার কাজে নির্দিষ্ট ভূমিকা পালন করেন। এই ‘নির্দিষ্ট ভূমিকা’র মধ্যে সিংহভাগ জুড়ে থাকে তাদের সৃষ্টির মধ্য দিয়ে ভোগবাদ ও অধ্যাত্মবাদক নানাভাবে জনগণের কাছে হাজির করা ও তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলা।

শুধু ‘ফরোয়ার্ড’ –এর শক্তির উপর নির্ভর করে যেমন ফুটবল কি হকি খেলা জেতা যায় না, তার জন্য প্রতিপক্ষের আক্রমণের সামাল দিতে শক্তিশালী ‘ডিফেন্স’ –এরও প্রয়োজন ; ঠিক একই ভাবে দুর্নীতির এই সমাজ-কাঠামোর উপর আছড়ে পড়া হামলা রুখতে প্রয়োজন হয় শক্তিশালী একটি ডিফেন্স লাইনের। এই ডিফেন্স লাইন হিসেবে দুটি পদ্ধতি বর্তমান সমাজ কাঠামোর নিয়ন্ত্রক শক্তির কাছে খুবই জনপ্রিয়। একঃ যে সংস্থা বা সংগঠন এই সমাজ কাঠামোর বিরুদ্ধে আঘাত করছে, সেই সংস্থার আদলে বহিরঙ্গকে সাজিয়ে কিছু সংস্থা তৈরি করে মেকি আন্দোলন গড়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা ও সমাজ-কাঠামো বিরোধী আন্দোলনের পাল থেকে হাওয়া কেড়ে নেওয়া। অথবা সমাজ-কাঠামো বিরোধী আন্দোলনের দ্বারা প্রভাবিত সংস্থাগুলোর নেতৃত্বকে লোভ বা ভয় দেখিয়ে কিনে নিয়ে নিজেদের স্বার্থে তাদের কাজে লাগানো। দুইঃ ‘প্রগতিশীল’, ‘বিপ্লবী’, ‘প্রতিবাদী’ ইত্যাদি পরিচয়ে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের কিনে নিয়ে সমাজ কাঠামো বিরোধী আন্দোলনের বিরোধীতা করানো। এগুলো পুরনো, কিন্তু যথেষ্ট কার্যকর কৌশল। উদাহরণ হিসবে এখানে শুধু একটি ঘটনার দিকে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

এককালের যুক্তিবাদের চরম সমর্থক আজিজুল হককে আমরা দেখেছি। তাঁর অনেক বক্তব্য যুক্তিবাদের সমর্থকদের উদ্দীপ্ত করেছে। তিনি একথাও সোচ্চারে ঘোষণা করেছিলেন, যুক্তিবাদী সমিতিই সেই মিছরি তৈরির প্রথম দানাটি, যাকে ঘিরে সাম্যের সমাজ গড়ার স্বপ্ন দেখা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও মানুষ এক  হবেন।

তারপর সময় গড়িয়েছে। রাষ্ট্রের কৃতজ্ঞতার রোদে তিনি লাল থেকে গোলাপী হয়েছেন। এবং কৃতজ্ঞতা শোধ করতে তিনি কলম ধরেছেন। এবং তাঁর কলম থেকেই বেরিয়ে এসেছে, “যুক্তির একটা গ্রহণযোগ্যতা আছে। সূর্য পূর্ব দিকে ওঠে, পশ্চিমে ডোবে, এটা যুক্তিবাদ, যে-কেউ মেনে নেবে, কিন্তু এটা তো সত্য নয়। সূর্য ওঠেও না, ডোবেও না, আসল সত্য হল এটাই। সুতরাং ‘যুক্তিবাদী’ আর ‘সত্যবাদী’ এক ব্যক্তি নন। যুক্তিবাদ শেষ বিচারে টুপি-পরানোর প্রতিক্রিয়াশীল মতবাদ।“ [উবুদশ, বর্ষ ৭, সংখ্যা ৪]

আজিজুল সাহেব, আপনি যখন বলেন, “সূর্য ওঠে না, ডোবেও না, আসল সত্য হল এটাই,” তখন একথা মানুষের কাছে গ্রহণীয় করতে আপনি যুক্তিরই আশ্রয় নেন। সেই সঙ্গে এও জানি যারা আত্মার অমরত্বের সমর্থনে বলেন, তাঁরাও যুক্তিরই আশ্রয় নেন, এবং উভয় ক্ষেত্রেই দু’জনের যুক্তিতেই থাকে যথেষ্ট ফাঁক-ফোকর। যার জন্য এগুলো শেষ বিচারে কু’যুক্তি হিসবেই শেষ হয়ে যায়।

মাননীয় আজিজুল সাহেব, পৃথিবীতে অবস্থানকারী মানুষদের চোখে সূর্যের ‘ওঠা’ ও ‘ডোবা’, দুইই বাস্তব সত্য। সূর্যের এই ‘ওঠা’ ও ‘ডোবা’ পৃথিবী যে নিজের মেরুদন্ডের চারপাশে লাট্টুর মত ঘুরে চলেছে, তারই ফল। আপনি এমন নিজের মেরুদন্ডের চারপাশে লাট্টুর মত ঘুরে চলেছে, তারই ফল। আপনি এমন সহজ যুক্তিটা বুঝলেন না কেন, মাননীয় আজিজুল সাহেব? জ্ঞানের খামতির কারণে? কিন্তু, আপনি তো যথেষ্ট শিক্ষিত বলেই জানি। অতএব, স্কুলের থ্রি-ফোর-এর জ্ঞানটুকু আপনার নেই, মেনে নেওয়া মুশকিল। তবে কি রাষ্ট্রশক্তির সঙ্গে সমঝোতাই আপনার এজাতীয় পাগলামোর কারণ? আর এই শেষ সম্ভাবনাটারই সত্যি হয়ে ওঠার সম্ভাবনা সবচেয়ে প্রবল? কারণ, আপনি লেখাটিতে ‘যুক্তিবাদী সমিতি’র বিরোধীতা না করে গোটা ‘যুক্তিবাদী’-এর চূড়ান্ত বিরোধিতায় নেমেছেন। দুঃখ হয়, সত্যিই দুঃখ হয় আপনার এমন ভিক্ষাপাত্র ধরা চেহারা দেখে।

প্রিয় পাঠক-পাঠিকা, আপনারাই পারেন বুদ্ধিজীবীদের টিনের তলোয়ার নিয়ে কুসংস্কারের বিরুদ্ধে, শোষণের বিরুদ্ধে ‘ঝন-ঝনা-ঝন’ নাটুকে লড়াইকে বন্ধ করতে, অথবা তাঁদের কথায় ও কাজে এক হতে বাধ্য করে বাস্তবিকই লড়াইতে নামাতে।

 

সব আন্দোলনই সিস্টেম ভাঙ্গার আন্দোলন নয়

গত কয়েক বছরে আমরা বিভিন্ন ধরনের দাবি আদায়ের আন্দোলন গড়ে উঠতে দেখেছি। ‘চিপকে’, ‘নর্দমা বাঁচাও’র মত বিভিন্ন দাবি বা ইস্যু-ভিত্তিক আন্দোলনের প্রতি পরিপূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, এইসব আন্দোলনের নিশ্চয়ই প্রয়োজনীয়তা আছে, সুন্দর সমাজ গড়ার ক্ষেত্রে এঁদের নিশ্চয়ই উজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে এবং থাকবে। কিন্তু এইসব আন্দোলন যেহেতু অসাম্য বজায় রাখার সমাজ কাঠামো বা ‘সিস্টেম’ পাল্টে দেওয়ার লক্ষ্যে জনমানসকে সমাবেশিত করতে পরিচালিত নয়, তাই সমাজ কাঠামো জিইয়ে রাখার অংশীদার রাজনৈতিক দল, প্রচারমাধ্যম, বুদ্ধিজীবী ইত্যাদিরা দলগত-স্বার্থ, ব্যক্তিগত-স্বার্থ, ব্যক্তি-ইমেজ ইত্যাদির দ্বারা পরিচালিত হয়ে এই জাতীয় আন্দোলনকে সমর্থন বা অসমর্থ করেন।

 

অসাম্যের সমাজকাঠামো ভাঙতে…

প্রিয় আন্তরিক ও সহানুভূতিশীল পাঠক-পাঠিকারা, আপনারাই পারেন ‘সিস্টেম’ নামের শোষক-শাসক-প্রচারমাধ্যম-বুদ্ধিজীবীদের দুর্নীতির আঁতাতকে আঘাতে আঘাতে গুঁড়িয়ে দিতে। আপনাদের ঘৃণাই পারে অসাম্যের সমাজ ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার পা’দুলোকে ভেঙ্গে ফেলতে। আপনাদের তীব্র ঘৃণাই পারে রাষ্ট্রশক্তির সিংহাসনকে ফেলে দিতে। এবং আপনারাই পারেন, পরম মমতায় যুক্তিবাদকে প্রতিষ্ঠা করতে, মানবতাকে প্রতিষ্ঠা করতে- যা বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের প্রাথমিক ও আবশ্যিক ধাপ।

প্রিয় পাঠক-পাঠিকা ও সংগ্রামে সাথীরা, এরই সঙ্গে মনে রাখতে হবে একটি অতি প্রয়োজনীয় কথা- অতীত ইতিহাস আমাদের অতি স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে, প্রতিটি রাষ্ট্রক্ষমতা বদলের ক্ষেত্রে, সমাজ কাঠামো পাল্টে দেবার ক্ষেত্রে সফলতা এসেছে তুলনামূলকভাবে সহজে, যখন সমাজ কাঠামোর সমর্থক শক্তির মধ্যে বিভাজন ঘটিয়ে টেনে আনা গেছে তাদেরই একটা অংশকে।

আমরা সাম্প্রতিক উদাহরণে দেখেছি, নকশালপন্থী দলের সদস্য না হয়েও তাদের আদর্শকে সমর্থন করতে এগিয়ে আসা বহু শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবীদের। সে’দিন নকশালপন্থীদের পরিকল্পনার মধ্যে একটা বড় ভুল ছিল, এই শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে একটি প্রয়োজনীয় সাংস্কৃতিক বাহিনী গড়ে তোলা হয়নি। ভুল, কারণ, রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করতে চাইলে সশস্ত্র আঘাত হানার জন্য সংগ্রামী মানুষের বাহিনী নামাবারও আগে প্রয়োজন সাংস্কৃতিক বাহিনীকে নামানো। এ’কথা সমস্ত শ্রেণীর ক্ষমতা দখলের ক্ষেত্রেই বাস্তব সত্য।

আমরা দেখেছি, পূর্ব ইউরোপের মার্কসবাদী দেশগুলোতে দীর্ঘ দিন ধরে মগজ ধোলাই প্রক্রিয়া চালিয়ে গিয়েছিল মার্কসবাদ-বিরোধী আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র। এই প্রক্রিয়াকে সাফল্যের সঙ্গে চালাতে তারা সহযোগিতা নিয়েছিল সেইসব মার্কসবাদী দেশের বুদ্ধিজীবীদের, প্রচার মাধ্যমগুলোর, শাসক শ্রেণীর ও প্রশাসনের মধ্যেকার কিছু কিছু দুর্নীতির ঘুণপোকায় কাটা মানুষের, শাসক শ্রেণীর ও প্রশাসনের মধ্যেকার কিছু কিছু দুর্নীতির ঘুনপোকায় কাটা মানুষের, ওইসব দেশে ধৈর্যের সঙ্গে লাগাতার ভাবে মার্কিন সংস্কৃতির গন্ধ পাঠানো হয়েছে। ভোগসর্বস্ব সংস্কৃতির গন্ধ পাঠানো হয়েছে, মানুষের চেতনায় নিরন্তর উত্তেজনাপূর্ণ জীবন যাপনের খোরাক পাঠানো হয়েছে। সে উত্তেজনা একান্ত সুখের উত্তেজনা, বহুর থেকে বাড়তি সুখ ভোগের উত্তেজনা, নাচ, গান, যৌনতা, যুদ্ধ, ধর্মীয় নেশা ইত্যাদি নানা ভাবে পাওয়া উত্তেজনা। এই সব উত্তেজনার এইসব ভোগসর্বস্ব চিন্তার এমনই মাদকতা, মানুষ তখন আত্ম-সুখের বাইরে কিছু ভাবতেই চাইবে না। ‘যেন তেন প্রকারেণ’ নিজের আখের গোছানোর এই চিন্তার মধ্য দিয়েই তারা পরিচালিত হবে। বৃহত্তর সমস্যার প্রতি, অন্যের সমস্যার প্রতি তাকিয়েও দেখবে না, দেখতেই চাইবে না।

সেই সঙ্গে ওইসব দেশ অধ্যাত্মবাদী চিন্তাকেও পাঠানো হয়েছে। কৃষ্ণ, রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ, খৃষ্ট সবাই এসে আসর জাকিয়েছে। ক্ষমতার ঘুণপোকায় শাসকদের সাম্য-চনিতাকে কখন যে ঝাঁঝরা করে দিয়েছে, টেরই পাওয়া যায়নি। সাংস্কৃতির আন্দোলনের অভাবেই টের পাওয়া যায়নি, চেতনা কখন লোভী হয়েছে। লোভী চেতনার কিছু শাসকই নিজ স্বার্থকে চরিতার্থ করতে, অসাম্যের সামজ ব্যবস্থার দিকে সমাজের চাকাকে ঘোরাতে এইসব ভোগবাদী ও অধ্যাত্মবাদী সংস্কৃতি আমদানি করতে দিয়েছে। তারপর এক সময় আমরা দেখলাম মার্কিন সংস্কৃতির গন্ধে মাতাল হতে মার্কসবাদী দেশের পুলিশ ও সেনাকে। ফলে মার্কসবাদীদের হাত থেকে ক্ষমতা দখল করতে মার্কিন গোয়েন্দা সি. আই. এ’রা বোমা, গোলা, বারুদ কিছুই প্রয়োগ করল না। প্রয়োগ করল ‘মগজ ধোলাই’ ও সমাজ কাঠামোর সিংহাসনের পায়াগুলোর মধ্যে সরাসরি বিভাজন করার ব্রহ্মাস্ত্র। আর তাইতেই হুড়মুড় করে একের প্র এক মার্কসবাদী সম্রাজ্য বসে পড়ল।

অস্বীকার করার উপায় নেই সর্বত্র নাক গলানোর ব্যাপারে সি. আই. এ-র যেমন জুড়ি নেই, তেমনই চিন্তাকে একমুখী করে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করার ব্যাপারেও তারা অপ্রতিদ্বন্দ্বী, সবার কাছ থেকেই আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। চিন্তার অন্ধত্বে আবদ্ধ না থেকে শেখার মানসিকতার দ্বারা পরিচালিত হলে অবশ্যই অনেক কিছুই শেখা যায়। সি. আই. এ-র ঘটনাগুলো থেকে আমরা অবশ্যই একটা শিক্ষা নিতে পারি, একটা সত্যে পৌঁছুতে পারি- জনচিন্তাকে একমুখী করে ও অসাম্যের সমাজ কাঠামোর সহায়ক শক্তিগুলোর মধ্যে থেকেই আমাদের আদর্শের সমর্থক বন্ধু সংগ্রহ করে, এই সমাজ কাঠামোকে ধসিয়ে দেওয়া যায়। বিশ্ব-ত্রাস রাষ্ট্রশক্তির মধ্যেও ত্রাসের সঞ্চার করা যায়।

এই শিক্ষাকে আমরাই বা কেন কাজে লাগাতে পারব না। আমরাও যদি জন-চেতনাকে বঞ্চিত মানুষদের পক্ষে একমুখী করি তবে, আমাদের দেশের সরকারই বা গণেশ উল্টোবে না কেন, ভারতবর্ষের তুলনায় বহুগুণ শক্তিশালী সামরিক শক্তির সাহায্য নিয়েও যখন গণ-বিদ্রোহের মুখে পূর্ব ইউরোপের মার্ক্সবাদী দেশগুলোকে পিছু হটতে হয়েছে, তখন ভারতের ক্ষেত্রেও একমুখী গণ-বিক্ষোভের মুখে সরকারকে পিছু হটতে হয়েছে, তখন ভারতের ক্ষেত্রেও একমুখী গণ-বিক্ষোভের মুখে সরকারকে পিছু হটতে বাধ্য করা যাবে না কেন?

সাংস্কৃতিক চেতনাকে এক-
মুখী করে অপসংস্কৃতির দ্বারা, অর্থাৎ
ভোগবাদী চিন্তার দ্বারা প্রভাবিত করে জনগণকে
যদি রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সংগ্রামে নামানোর কাজটি সি.
আই. এ-নিখুঁত ও সার্থকভাবে পালন করতে সমর্থ হয়, তবে আমরাই বা
কেন বঞ্চিত মানুষদের চেতনাকে সুস্থ-সংস্কৃতির খাতে বইয়ে
বঞ্চনার প্রকৃত কারণগুলোর দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে
জনগণকে রাজনৈতিক সংগ্রামে
নামাতে পারব না?

যারা তোতাপাখির মতই আউড়ে যান- “সাংস্কৃতিক আন্দোলন নয়, রাজনৈতিক সংগ্রামই আনতে পারে শ্রেণী-মুক্তি”, তাঁরা অবশ্যই বিশ্বের তাবৎ ঘটনার থেকে নিজেদের দৃষ্টি ঘুরিয়ে রাখেন শুধুমাত্র বইয়ের পাতায়। জীবন থেকে শিক্ষা নেবার পরিবর্তে এঁরা শিক্ষা নিতে চান শুধুই ছাপার অক্ষর থেকে। পৃথিবীতে কোনও কিছুই অনড় হয়ে দাঁড়িয়ে নেই, দাঁড়িয়ে থাকে না। ভাববাদও এক জায়গায় দাঁড়িয়ে নেই, দাঁড়িয়ে নেই শোষণের প্রক্রিয়াগুলো। জিততে গেলে বঞ্চিত মানুষদের স্বার্থেই শোষণের আধুনিকতম কৌশলগুলোকে বুঝতে হবে, শোষকদের বিরুদ্ধে আধুনিকতম কৌশলগুলোরই প্রয়োগ করতে হবে। লক্ষ্য যতই স্থির থাকুক, আধুনিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে মান্ধাতার আমলের অস্ত্র নিয়েই লড়াই চালানো যায় না। এখানে অস্ত্র বলতে বোঝাচ্ছি- ‘মগজ-ধোলাই’ নামক শক্তিশালী অস্ত্রের কথা, যে অস্ত্রের কার্যকারিতা ও সাফল্য প্রশ্নাতীত বলেই আজ তাতে কোনো শক্তিশালী রাষ্ট্রপতিই প্রশ্নাতীত গুরুত্ব আরোপ করেছেন।

যারা সাংস্কৃতিক আন্দোলনকর্মী ও রাজনৈতিক কর্মীদের মাঝে একটা বিভেদের পাঁচিল তুলে দেন, তারা চোখটি খুলে দেখতে চাননি সাংস্কৃতিক আন্দোলন কর্মী ও রাজনৈতিক কর্মীদের মধ্যে কাল্পনিক বিভেদের পাঁচিল বার বারই ভেঙ্গে পড়েছে, দুই আন্দোলনকর্মীরাই মিলে-মিশে একাকার হয়ে গেছে, যখনই বঞ্চিত মানুষের চেতনা মুক্তির জন্য সাংস্কৃতিক আন্দোলনকর্মীরা ময়দানে নেমেছেন।

একটা বিপ্লবের আগে জনগণকে মানসিকভাবে ক্ষুধার্ত করে তুলে, মোটিভেট করে তুলে রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে চালিত করা যায় এবং রাষ্ট্রশক্তির কফিনে শেষ পেরেক পোঁতা যায়, এটা যেমন আজ বহুবার পরীক্ষার দ্বারা সত্য প্রমাণিত হয়েছে। তেমনই এও সত্য- বিপ্লব-পরবর্তী পর্যায়ে নেতৃত্বকে বিশেষ সুবিধাভোগী শ্রেণীতে পরিণত হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে, বিচ্যুত নেতাদের হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে এবং জনগণকে ভোগসর্বস্ব চিন্তা থেকে রক্ষা করতে, ভাববাদী চিন্তা থেকে বাঁচাতে একান্তভাবেই যুক্তিবাদী আদর্শবাদী চিন্তার এক বাতাবরণ সৃষ্টির প্রয়োজন। এই যুক্তিবাদী, আদর্শবাদী চিন্তার বাতাবরণ সৃষ্টির যে প্রক্রিয়া, তাই তো সাংস্কৃতিক আন্দোলন।

এমন একটা লাগাতার সাংস্কৃতিক আন্দোলন না থাকলে নেতারা বিশেষ সুবিধাভোগী হয়ে উঠতেই পারে। আখের গোছানো, স্বজনপোষণ ইত্যাদি দুর্নীতি ঘাড়ে চাপতেই পারে, যা পূর্ব ইউরোপের মার্ক্সবাদী দেশগুলোর নেতাদের ক্ষেত্রেও দেখা গিয়েছিল।

সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল গড়ে তুলে
মানুষের চিন্তাকে একমুখী করে তোলা সম্ভব,
মানুষকে মোটিভেট করা সম্ভব- এটা আজ প্রমাণিত সত্য।
এই সত্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আমরা অবশ্যই বলতে পারি-
বিপ্লবের আগে, বিপ্লব কালে এবং বিপ্লব পরবর্তী পর্যায়ে
সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ভূমিকা অপরিসীম।

নিপীড়িত মানুষদের চিন্তাকে একমুখী করতে, দ্রুত ও সফলতার সঙ্গে করতে বুদ্ধিজীবীদের কাছে আমাদের আদর্শের খবর পৌঁছে দিতে হবে, তাঁদের উব্দুদ্ধ করতে হবে। চেষ্টা আন্তরিক হলে কিছু বুদ্ধিজীবী, কিছু প্রচার মাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত মানুষকে এই কাজে সঙ্গে পাওয়া যাবেই, যেমন আমরা পেয়েছি। আমাদের সমিতির অভিজ্ঞতা বলে, শাসক, প্রশাসন, পুলিশ সবার মধ্যে থেকেই অসাম্যের সমাজ গড়ার আদর্শের সমর্থক পাওয়া যায়। আর পাওয়া যায় বলেই সিস্টেমের বিরুদ্ধে লড়তে নেমে অনেক অসম লড়াই আমরা জিতে চলেছি।

শেষ লড়াইও জেতা যায়, এবং তা আমরাই জিতবই। অসাম্যের এই সমাজ কাঠামো ভেঙ্গে, নতুন সমাজ কাঠামো আমরা গড়বই।

error: Content is protected !!