এপার ওপার জুড়িয়া অন্ধকার

মধ্য অকূল রহস্য- পারাবার,

তারি এই কূলে নিশি নিশি কাঁদে জাগি’

চক্রবাক সে চক্রবাকীর লাগি’ ।

 

ভু’লে যাওয়া কোন জন্মান্তর পারে

কোন সুখ-দিনে এই সে নদীর ধারে

পেয়েছিল তা’রে সারা দিবসের সাথী,

তারপর এলো বিরহের চির-রাতি,—

আজিও তাহার বুকের ব্যথার কাছে,

সেই সে স্মৃতির পালক পড়িয়া আছে !

 

কেটে গেল দিন, রাত্রি কাটে না আর,

দেখা নাহি যায় অতি দূর ঐ পার।

এপারে ওপারে জনম জনম বাধা,

অকূলে চাহিয়া কাঁদিছে কূলের রাধা ।

এই বিরহের বিপুল শূন্য ভরি

কাঁদিছে বাঁশরি সুরের ছলনা করি’ !

আমরা শুনাই সেই বাঁশরির সুর,

কাঁদি—সাথে কাঁদে নিখিল ব্যথা-বিধুর।

 

কত তের নদী সাত সমুদ্র পার

কোন লোকে কোন্ দেশে গ্রহ-তারকার

সৃজন-দিনের প্রিয়া কাঁদে বন্দিনী,

দশদিশি ঘিরি’ নিষেধের নিশীথিনী ।

 

এ পারে বৃথাই বিস্মরণের কূলে

খোঁজে সাথী তার, কেবলি সে পথ ভুলে।

কত পায় বুকে কত সে হারায় তবু—

পায় নি যাহারে ভোলে নি তাহারে কভু।

 

তাহারি লাগিয়া শত সুরে শত গানে

কাব্যে, কথায়, চিত্রে জড় পাষাণে,

লিখিছে তাহার অমর অশ্রু-লেখা।

নিরন্ধ্র মেঘ বাদলে ডাকিছে কেকা !

আমাদের পটে তাহারি প্রতিচ্ছবি,

সে গান শুনাই—আমরা শিল্পী কবি।

 

এই বেদনার নিশীথ-তমসা-তীরে

বিরহী চক্রবাক খুঁজে খুঁজে ফিরে

কোথা প্রভাতের সূর্যোদয়ের সাথে

ডাকে সাথী তার মিলনের মোহনাতে।

 

আমরা শিশির, আমাদের আঁখি-জলে

সেই সে আশার রাঙা রামধনু ঝলে ।

error: Content is protected !!