১৯৮৩ সাল। গাইঘাটার অলৌকিক কালী রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গেল। উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার কলাসীম বাজারের কাছেই এই কালীমন্দির। পত্রপত্রিকার প্রচারে ভিড়ে ভিড়ে সয়লাব। ১৯৮৩-র ১২ এপ্রিল সন্ধ্যে নাগাদ চব্বিশ পরগনার গাইঘাটার উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছিল এক ক্ষণস্থায়ী তীব্র ঘূনিঝড়। এই ঝরে ২০টি গ্রাম প্রচন্ড ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ২৩ জনের মৃত্যু হয়। আহতের সংখ্যা ছিল ২০০ মতো। ঝড়ে পঞ্চায়েত অফিসের ছাদ উড়ে গিয়ে পড়ে প্রায় ১০০ ফুট দূরে। বিদ্যুৎ দপ্তরের পাকা বাড়িও ক্ষতিগ্রস্থ হয়। চারটি লিভার লিফট পাম্প উপড়ে ফেলে। সুপুরি ও খেজুর গাছ মাথাকাটা কণিষ্ক হয়ে যায়। কলাসীম স্কুলবাড়ির একতলা পাকা ঢালাই ছাদ পুরোটাই উড়িয়ে নিয়ে যায় প্রলয়ঙ্কর ঝড়। প্রত্যক্ষদর্শীদের কথামতো ঝড়ের সময় মনে হল একটা আগুনের গোলা তীব্র বেগে ঘুরতে ঘুরতে চলে যাচ্ছে। আগুনের গোলা ও ঝড় দুটো একই সময় একই সঙ্গে বিদায় নেয়। ঝড়ের প্রচন্ডতায় এতো ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও আশ্চর্যভাবে রক্ষা পেয়েছে কলাসীম বাজারের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা মন্দির। সন্ধ্যায় মন্দিরের পুরোহিত মানিক গাঙ্গুলি মায়ের পুজো করছিলেন। ঝড় সব কিছু তছনছ করে চলে গেল, শুধু স্পর্শ করল না মায়ের মন্দির। সাধারণের মনে প্রশ্ন এলো, এটা কি দেবী মাহাত্ম্য নয়? একে মায়ের লীলা ছাড়া আর কি-ই বা বলা যায়? সাধারণের অন্ধ বিশ্বাস ও কুসংস্কারকে আর একটু ইন্ধন যোগাল পত্রপত্রিকাগুলো। মন্দির অক্ষত রাখার কারণ অনুসন্ধানে কোন আবহাওয়া বিজ্ঞানীর সাহায্য না নিয়ে, যুক্তির সাহায্যে ব্যাখ্যার জন্য কোনও কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা না করে, বেশির ভাগ পত্রপত্রিকাগুলোই মন্দিরে আবিষ্কার করল ‘মায়ের লীলা’। অগ্নিগোলকেও আবিষ্কার করল ‘মায়ের লীলা’।

যে ঝড়টি সেদিন সন্ধেতে গাইঘাটার বুকে প্রলয় তুলেছিল, আবহাওয়াবিদদের ভাষায় সাএই ঝড়টির নাম ‘Tornado’ (টর্নেডো)। টর্নেডোর প্রকৃতি সম্বন্ধে সামান্য কয়েকটা কথা অন্তত না বললে এই ঘটনাটার যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যাও অনেকের বুঝতে অসুবিধে হতে হবে।

এপ্রিল-মে মাসে কালবৈশাখীর সময় যে কালো ঝটিকা মেঘবাহিনীকে দেখা যায়, সেগুলোতেই থাকে টর্নেডো ঝড়ের সম্ভাবনা। টর্নেডো ঝড়ের সৃষ্টিকর্তা মেঘগুলোর মাথা থাকে প্রায় ৪০ হাজার ফুট উঁচুতে, মেঘের তলদেশ থাকে মাটি থেকে প্রায় ২ হাজার ফুট উঁচুতে। এই কুচকুচে কালো ঝটিকা-মেঘের  ভেতর তীব্র বেগে আলোড়িত হতে থাকে এবং ঘুরতে থাকে লক্ষ লক্ষ টন ওজনের জলকণা। জলকণাগুলোর অনবরত প্রচন্ড ঘর্ষণে মেঘরাশি হয় বজ্রগর্ভ। এই  মেঘের-তলার দিকের অংশের কোন এক স্থানে কখনো আলোড়ন তীব্র হয়ে ঘূর্ণির সৃষ্টি হয়। এই ঘূর্ণির মেঘ নেমে আসে মাটির অনেক কাছাকাছি। ঝটিকা-মেঘ থেকে নেমে আসা হাতির শুঁড়ের মতো দেখতে এই ঘূর্ণি  মাটি বা জল ছুঁয়ে যায়, কখনো কখনো বা চলে যায় মাটি থেকে ১০, ১৫ বা ২০ ফুট উঁচু দিয়ে। তবে, যখন বয়ে যায়, তখন রেখে যায় তার চিহ্ন। অথচ আশ্চর্য এই যে,

কলাসীমায় ঝড়ের প্রকৃতি কেমন ছিল

টর্নেডো যদি ১৫ ফুট উঁচু দিয়ে যায় তবে তার যাত্রা পথে ১৫ ফুটের বেশি উঁচু গাছ, কি বাড়ির ছাদ যাই পড়ুক ভেঙ্গে উড়িয়ে নিয়ে যাবে, আর ১০-১২ ফুট পেঁপেগাছ, কলাগাছ কি চালাবাড়ি সবই থাকবে অটুট।

ঘূর্ণির এই হাতির শুঁড় তার যাত্রাপথে কখনো মাটি ছুঁয়ে চলে, কখনো কিছুটা উঁচু দিয়ে চলে, কখনো উঠে যায় অনেক উঁচুতে।

আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা মনে করেন টর্নেডো ঝড়ের তীব্র ঘূর্ণিতে ধূলিকণাগুলো ঘূর্ণিত হতে থাকে। ঘর্ষণের তীব্রতায় সৃষ্টি হয় প্রচুর৫ ঘর্ষণজনিত বিদ্যুৎ। এই ঘর্ষণজনিত বিদ্যুৎ মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ গোলার সৃষ্টি করে। এই ধরণের বিদ্যুৎ গোলাই সেদিন দেখেছিলেন গাইঘাটার লোকেরা।

কলাসীম বাজারের মন্দির আমি দেখেছি। মন্দিরটির বয়েস বছর খানেক। উচ্চতা ফুট দশের মতো। ওই তল্লাটের কিন্তু শুধু মন্দিরই রক্ষা পায়নি, আরো অনেক কিছুই রক্ষা পেয়েছে। পঞ্চায়েত অফিসের ছাদ উড়লেও অফিসের লাগোয়া ফুট দুয়েক নীচু গাছগুলোর সামান্যতম ক্ষতি হয়নি। আরও লক্ষণীয়, পঞ্চায়েত অফিস ও বিদ্যুৎ দপ্তরের ছাদ গেলেও দেওয়াল বা দরজা, জানালার ক্ষতি হয়নি। তার কারণও ওই একটিই। টর্নেডো দরজা-জানালার চেয়েও উঁচু দিয়ে বয়ে গেছে।

কলাসীম বাজারের উল্টোদিকে একটি বাড়ি দেখেছিলাম, যার চাল উড়ে গিয়েছিল, কিন্তু ওঁদের কলাগাছগুলোর কোন ক্ষতি হয়নি। কলাগাছ খুবই নরম জাতীয় গাছ। ঝরে এদেরই সবচেয়ে আগে শুয়ে পড়ার কথা। কলাগাছের উচ্চতার দিকে তাকালেই বোঝা যায় স্বল্প-উচ্চতাই এদের রক্ষা পাওয়ার কারণ। পনেরো ফুট উচ্চতার সাইনবোর্ডকে ছিঁড়ে নিয়ে যাওয়ার চিহ্ন দেখেছি। আর তারই পাশে অটল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি আট ফুট উচ্চতার চালাঘরকে। অতএব ১০ ফুট উঁচু মন্দির রক্ষার সঙ্গে দেবী-মাহাত্ম্যের কোন প্রমাণ আমি পাইনি। বুঝেছি টর্নেডো ঝড়ের গতি-প্রকৃতির জন্যেই এমনটা হয়েছে।

ভূমিকা

কিছু কথা

নতুন ‘কিছু কথা’

১. অধ্যায়ঃ এক

২. অধ্যায়ঃ দুই

৩. অধ্যায়ঃ তিন

৪. অধ্যায়ঃ চার

৫. অধ্যায়ঃ পাঁচ

৬. অধ্যায়ঃ ছয়

৭. অধ্যায়ঃ সাত

৮. অধ্যায়ঃ আট

৯. অধ্যায়ঃ নয়

৯.১ আদ্যা’মা রহস্য

৯.২ ধর্মের নামে লোক ঠকাবার উপদেশ কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে

৯.৩ সোমনাথ মন্দিরের অলৌকিক রহস্য

৯.৪ প্রাচীন মিশরের ধর্মস্থান রহস্য

৯.৫ কলকাতায় জীবন্ত শীতলাদেবী ও মা দুর্গা

৯.৬ জব্বলপুরে জীবন্ত দুর্গা

৯.৭ খেজুরতলার মাটি সারায় যত রোগ

৯.৮ পক্ষিতীর্থমের অমর পাখি

৯.৯ যে গাছ কাটা যায় না

৯.১০ গাইঘাটার অলৌকিক কালী

৯.১১ যে পাথর শূন্যে ভাসে

৯.১২ অলৌকিক প্রদীপে মৃত বাঁচে

৯.১৩ বার্মুডা ট্র্যাঙ্গেল রহস্য

১০. অধ্যায়ঃ দশ

১১. অধ্যায়ঃ এগারো

১২. অধ্যায়ঃ বার

১৩. অধ্যায়ঃ তেরো

১৪. অধ্যায়ঃ চোদ্দ

১৫. অধ্যায়ঃ পনের

১৬. অধ্যায়ঃ ষোল

১৭. অধ্যায়ঃ সতেরো

১৮. অধ্যায়ঃ আঠারো

১৯. অধ্যায়ঃ ঊনিশ

২০. অধ্যায়ঃ কুড়ি

error: Content is protected !!
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x