আপনারা অনেকেই শুনেছেন জাদুকর পি.সি. সরকার (জুনিয়র)-এর যাত্রী বোঝাই অমৃতসর এক্সপ্রেস ভ্যানিশের কথা। জেনেছেন আনন্দবাজার পত্রিকা পড়ে অথবা অন্য কারো মুখ থেকে। ঘটনাটা দেখেছেনও অনেকে, দূরদর্শনের পর্দায়। কিন্তু অল্পজনই জেনেছেন, এই ট্রেন ভ্যানিশের প্রচারটা ছিল চূড়ান্ত মিথ্যাচারিতা, ইয়লো-জার্নালিজিমের এক ক্লাসিক প্যাটার্ন।
যাত্রীবোঝাই গোটা একটা অমৃতসর এক্সপ্রেস ভ্যানিশের সুবাদে জাদুকর
সরকার আজ কিংবদন্তি মানুষ। কিন্তু ওই জাদুর খেলায় না ছিল
অমৃতসর এক্সপ্রেস, না হয়েছিল ভ্যানিশ। আসলে আদপেই ওটা
ম্যাজিক ছিল না। কারণ, ম্যাজিকটা কেউই দেখেননি ।
দেখানো হয়নি বলেই দেখেননি। দূরদর্শনে ট্রেন ভ্যানিশের দর্শক হিসেবে যে গ্রামবাসীদের দেখা গিয়েছিল, তাঁদের বলা হয়েছিল—–সিনেমার শুটিং হবে। ওঁরা শুটিং দেখার দর্শক হতে গিয়ে প্রতারিত হয়েছিলেন। কারণ, ওঁদের একজনও অমৃতসর এক্সপ্রেস ভ্যানিশ হতে দেখেননি। অথচ ওঁদের যাত্রী বোঝাই ট্রেন ভ্যানিশের দর্শক হিসেবে দূরদর্শনের পর্দায় হাজির করা হয়েছিল। কোনো বিশিষ্ট দর্শকও সেদিন প্যাসেঞ্জার ঠাসা অমৃতসর এক্সপ্রেস ভ্যানিশ হতে দেখেননি। দূরদর্শনের পর্দায় যা দেখানো হয়েছিল সেটা ছিল দর্শকদের প্রতারিত করার এক নির্লজ্জ দৃষ্টান্ত ।
এটা জাদুর ক্ষেত্রেও এক ঐতিহাসিক অনৈতিক ঘটনা। যে জাদু কেউ দেখল না, সে জাদু দেখানো হয়েছে বলে প্রচার করাটা একটা বড় মাপের সংগঠিত প্রতারণার দৃষ্টান্ত ছাড়া কিছু নয়।
এসব শোনার পরও আমার পরিচিত এক সাংবাদিক বলেছিলেন, “জাদুর ব্যাপারটাই তো কৌশল”। বলেছিলাম, “হ্যাঁ নিশ্চয়ই কৌশল কিন্তু তারও একটা নির্দিষ্ট নীতি আছে। জাদুকর যখন দেখান একটা মানুষ শূন্যে ভাসছে, তখন তা দেখানোর পিছনে যে কৌশলই থাকুক, দর্শকরা কিন্তু তাদের চোখের সামনে দেখতে পায়, একজন শূন্যে ভাসছে। আমরা এই শূন্যে ভাসার দৃশ্য না দেখে কখনই বলব না, জাদুকর আমাদের সামনে একটা মানুষকে শূন্যে ভাসালেন। ট্রেন ভ্যানিশের ঘটনার যে প্রচার হয়েছে, সেখানে কোনো দর্শকই ট্রেন ভ্যানিশ হতেই দেখলেন না, তখন এটাকে শুধু জাদুর নীতি কেন, কোনো নীতিতেই ‘দেখানো হয়েছে’ বলে প্রচার করা যায় না।”
“আবার দেখুন, দেখা এবং দেখানোরও একটা নীতি আছে। যে খানা জংশনের কাছে তথাকথিত জাদুটি দেখানো হয়েছিল, সেখানকার অবস্থানগত কারণে প্রতিটি ট্রেনই ঢাল বেয়ে নেমে যাওয়ার কারণে একসময় দৃষ্টির আড়ালে চলে যায়। কেউ কোনো ফেস্টুন দিয়ে দৃষ্টি আড়াল করে ট্রেনকে চলে যেতে দিলে যদি সেটা ট্রেন ভ্যানিশ হয়েছে বলে বিবেচিত হয়, তা হলে আগামী যে কোনো দিন একই পদ্ধতিতে শিয়ালদা স্টেশনে আপনার চোখের সামনে দশ ঘণ্টায় শ’খানেক ট্রেন ভ্যানিশ করে দেখাতে পারি। আর সেজন্য আমাকে এমন কিছু করতে হবে না, একটা করে ট্রেন ছাড়বে, আপনার দৃষ্টির সামনে মেলে ধরব একটি রুমাল। মিনিট খানেকের মধ্যে বাঁক নিয়ে ট্রেনগুলো দৃষ্টির আড়ালে চলে যেতে থাকবে। তখন রুমাল সরিয়ে নেব আর আপনি ভ্যানিশ হওয়া ট্রেনের সংখ্যা শুনতে থাকবেন, পরের দিন আপনার কাগজের প্রথম পাতায় খবরটা ছাপাবেন বলে।”
সব শুনে সাংবাদিক বন্ধুটি বললেন, “ও এই ব্যাপার। কিন্তু এই করেও তো উনি দিব্যি কিংবদন্তি বনে গেলেন।”
হ্যাঁ কিংবদন্তি বনে গেলেন, সংবাদ মাধ্যমের মিথ্যাচারিতাতেই বনে গেলেন। আসল ঘটনা কী? আসুন সেদিকে আমরা ফিরে তাকাই।
এই না দেখা, না ঘটা ঘটনার খবর প্রচারিত হল দূরদর্শনে ১২ জুলাই, ১৯৯২। খবরের সঙ্গে দূরদর্শন দেখাল সেই না ঘটা ঘটনার ছবি। পরের দিন একটিমাত্র পত্রিকা ‘আনন্দবাজার’-এ প্রকাশিত হল খবরটি। তারপর পি সি সরকার (জুনিয়র) খবর থেকে কিংবদন্তি।
ঘটনাটা খুবই সাদামাটা। সরকার ইস্টার্ন রেলের কাছ থেকে ভাড়া করেছিলেন একটা ইঞ্জিন ও ছ’টা কোচ। ইঞ্জিনটা ডিজেল চালিত, ইঞ্জিনের নম্বর ১/৪০৫। ছ’টা কোচের পাঁচটা সাধারণ, একটা A.C.। ইঞ্জিন এলো আন্দুল লোকোশেড থেকে। ছ’টা কোচ নিয়ে নকল ‘অমৃতসর এক্সপ্রেস’ এসে দাঁড়াল খানা জংশনের অনতিদূরে, খানা লিংক কেবিনের কাছে। ড্রাইভার ছিলেন অনিলবরণ দত্ত। কোনো গার্ড বা টিকিটচেকার ছিলেন না। দর্শকরা জানতেন, ওই ছ’কোচের ট্রেনটি ‘অমৃতসর এক্সপ্রেস’ নয়, শুটিং-এর জন্য ভাড়া করা। ট্রেনে যাঁরা যাত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন, তাঁরা শ্রী সরকারের কর্মী ও রেলকর্মী। দর্শকদের বসানো হয়েছিল নিচু খেতে ও তার কাছাকাছি। কোচ নিয়ে ইঞ্জিন যেখানে দাঁড়িয়েছিল, সেখান থেকে চার জোড়া লাইন চলে গেছে। চার জোড়ার দু’জোড়া লাইন হঠাৎ গেছে নিচের দিকে নেমে এই লাইন দিয়ে ট্রেন একটু এগোলেই উঁচু মাটির আড়ালে চলে যায়।
ওই অনুষ্ঠান দেখতে একটিমাত্র পত্রিকার সাংবাদিক আমন্ত্রিত হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি হলেন, আনন্দবাজার পত্রিকা গ্রুপের শংকরলাল ভট্টাচার্য। ভিডিও রেকর্ডিং-এর জন্য উপস্থিত ছিলেন দূরদর্শনের সংবাদ পাঠিকা ইন্দ্রাণী ভট্টাচার্য। ইন্দ্রাণী শংকরলালের জীবনসঙ্গিনীও।
ট্রেন চলার পূর্বমুহূর্তে ট্রেনকে আড়াল করতে তুলে ধরা হল ব্যানার। দর্শকদের সামনে ব্যানার, কানে জেনারেটরের বিশাল শব্দ। সঙ্গে বাজি-পটকার ঘন-ঘন শব্দ ও ঘন ধোঁয়া । ছবি রেকর্ডিং-এর দায়িত্বে ছিলেন ইন্দ্রাণী। ইশারা পেয়ে ইঞ্জিন চালু করলেন অনিলবরণ। নিচে নেমে যাওয়া লাইন ধরে এগোলো তাঁর ট্রেন। রেকর্ডিং-এ ভ্যানিশ ট্রেনের চলার আওয়াজ যাতে ধরা না পড়ে তারই জন্য জেনারেটরটাকে ভাড়া করে আনা হয়েছিল । উত্তেজনাহীনভাবে ট্রেনটি দৃষ্টির আড়ালে চলে যেতেই ব্যানার সরিয়ে দেওয়া হল। শেষ হল ‘ট্রেন ভ্যানিশ’-এর খেলা।
ঘটনাটা এখানেই শেষ হতে পারত। কিন্তু হয়নি। ট্রেন ভ্যানিশের নেপথ্য দুর্নীতি জানাতে গিয়ে আমাদের সমিতিসহ বহু বিশিষ্ট ও শ্রদ্ধেয় জাদুকরদের অভিজ্ঞতাই খুব তিক্ত। বহু সংবাদপত্রের সাংবাদিকরাই আমাদের ও জাদুকরদের কাছ থেকে সবকিছু শুনেছেন, জেনেছেন, তথ্যপ্রমাণ নিয়েছেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত খবরটির উপর প্রতিবারই নেমে এসেছে ব্ল্যাক-আউটের থাবা। আমরা আমাদের সীমাবদ্ধ ক্ষমতায় ‘যুক্তিবাদী’ ও ‘কিশোর যুক্তিবাদী’ পত্রিকায় ট্রেন ভ্যানিশ নামক শতাব্দীর সেরা সাংস্কৃতিক দুর্নীতির খবর প্রকাশ করেছি। এই জাদুর নামে প্রতারণা বিষয়ে লিখেছেন কয়েকজন বিশিষ্ট জাদুকর। কলকাতার অতি শ্রদ্ধেয় জাদু সরঞ্জামের নির্মাতা ও পরিবেশক শ্যাম দালাল লিখেছেন একটি ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত জাদু পত্রিকায়। লিখেছেন বিশিষ্ট জাদুকর সুবীর সরকার ও ভারতের অসাধারণ জাদুশিল্পী কে. লাল। কিন্তু এসব লেখা বাংলা ভাষার বৃহৎ পত্রিকায় প্রকাশিত না হওয়ায়, প্রতারক হিসেবে যাঁর ঘৃণা কুড়োবার কথা, তিনি কুড়িয়েছেন কিংবদন্তির সম্মান।
‘সানন্দা’ একটি জনপ্রিয় পাক্ষিক। প্রকাশ করেন আনন্দবাজার গ্রুপ। ‘সানন্দা’র ৫ আগস্ট ১৯৯৪ সংখ্যায় চিঠিপত্তর বিভাগে ট্রেন-ভ্যানিশের নেপথ্য কাহিনি দু-চার লাইনে লেখার একটা সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলাম। আমার প্রকাশিত চিঠিটার তলায় লেখা ছিল : “চিঠিটির উত্তর দিচ্ছেন পি. সি. সরকার, আগামী সংখ্যায়”। পত্রিকার তরফ থেকে এই ধরনের ঘোষণা, অবশ্যই ব্যতিক্রম।
যাই হোক, ১৯ আগস্ট ১৯৯৪, সংখ্যার সানন্দায় মি. সরকারের উত্তর প্রকাশিত হল। সরকার লিখলেন, “ট্রেন ভ্যানিশের ম্যাজিকটা আমি একটা বিশেষ এবং বিশাল কমিটির সামনে দেখিয়েছিলাম…”
সেই কমিটির এক নম্বর নাম হিসেবে সরকার যাঁর উল্লেখ করেছিলেন, তিনি হলেন কলকাতার হাইকোর্টের বিচারপতি মুকুলগোপাল মুখোপাধ্যায়। উপস্থিত ভি.আই.পি.-দের তালিকায় ছিলেন, “সর্বভারতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা ইউ. এন. আই., এ-পি’র প্রতিনিধি। ছিলেন আনন্দবাজার গ্রুপ, আজকাল, গণশক্তি, ওভারল্যান্ড পত্রিকার সাংবাদিক ও প্রতিনিধি। দূরদর্শনের অ্যাসিস্ট্যান্ট স্টেশন ডাইরেক্টরসহ ছিলেন দূরদর্শনের সাংবাদিক ক্যামেরাম্যানদের বিরাট টিম তো বটেই… আপামর জনসাধারণকে দেখাবার জন্য দূরদর্শন নিউজ কভার করেছে।” “কুচুটে মনোবৃত্তির লোকেরা যত কুৎসাই রটাক না কেন ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের ইজ্জত বেড়েছে।”
উত্তর পাঠিয়েছি ‘সানন্দা’র দপ্তরে, কলকাতা জেনারেল পোস্ট অফিস থেকে রেজিস্ট্রি ডাকে। পাঠাবার তারিখ : ৮.১০.১৯৯৪। রেজিস্ট্রেশন নম্বর জি-৩৩৪৪। ওরা যে চিঠি পেয়েছেন, তার প্রাপ্তিস্বীকারের কার্ডও পেয়ে গেছি। এই প্রসঙ্গে সানন্দার সম্পাদকীয় দপ্তরের সঙ্গে কথাও হয়েছে। কিন্তু ১৯৯৪ পেরিয়ে এখন ২০১১ নভেম্বর এখনো পর্যন্ত সানন্দা আমার চিঠিটি প্রকাশ করেননি। মানছি, আমার চিঠি ছাপার বা না ছাপার পূর্ণ স্বাধীনতা সানন্দার আছে। কে সত্যি বলছে, কে মিথ্যে—দেখার দায় সানন্দার নয়। চিঠিটিতে লিখেছিলামঃ
“কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি মাননীয় মুকুলগোপাল মুখোপাধ্যায় ৩ সেপ্টেম্বর ‘৯৪ প্রকাশ্য সভায় দ্বিধাহীন জানালেন—পি.সি. সরকার (জুনিয়র)-এর ট্রেন ভ্যানিশের আমি একজন দর্শক ছিলাম। সেদিন অমৃতসর এক্সপ্রেসকে ভ্যানিশ করা হয়নি। একটা ইঞ্জিন ও কয়েকটা কম্পার্টমেন্ট ভাড়া করে আনা হয়েছিল, সেগুলো রেললাইন ধরেই চলে গিয়েছিল। দূরদর্শনের তরফে ছবি তুলেছিলেন ইন্দ্রাণী ভট্টাচার্য। পি.সি. সরকার (জুনিয়র) এ বিষয়ে আমাকে মুখ না খুলতে অনুরোধ করেছিলেন।
প্রকাশ্য সভাটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টের ৮ নম্বর কোর্টে, দুপুর ২টা থেকে সন্ধে ৭টা পর্যন্ত। সভার শিরোনাম ছিল ‘অলৌকিক নয়, লৌকিক’। ব্যবস্থাপক : হাইকোর্ট লেডিজ ওয়েলফেয়ার কমিটি। সহযোগিতায় হাইকোর্ট কর্মচারী সমিতি। সভার প্রধান অতিথি ছিলেন মাননীয় মুকুলগোপাল মুখোপাধ্যায়। মূল বক্তা প্রবীর ঘোষ। হল উপচে পড়া ভিড়ে বিশিষ্টদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার শ্রী এস. এস. পান্ডে, অ্যাডিশনাল রেজিস্ট্রার শ্রী মলয় সেনগুপ্ত ও শ্রী পি. কে. সেন, ডেপুটি রেজিস্ট্রার শ্রীনিরোদবরণ হালদার, স্টেট কোঅর্ডিনেশন কমিটির প্রেসিডেন্ট শ্রীচুনিলাল চক্রবর্তী, কলকাতা হাইকোর্ট এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের জেনারেল সেক্রেটারি শ্রীসিদ্ধেশ্বর শূর এবং হাইকোর্ট এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের একজিকিউটিভ কমিটির সদস্যবৃন্দ।
৮ মে ১৯৯৪ বুদ্ধিজীবীদের একটি প্রতিনিধিদল বিভিন্ন দাবিসহ দূরদর্শনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ডেপুটেশন দিয়েছিলেন কলকাতা দূরদর্শনের ডিরেক্টর শ্রীঅরুণ বিশ্বাসের কাছে। তাতে দুর্নীতির একটি অভিযোগ ছিল ‘ট্রেন ভ্যানিশ’ দেখিয়ে কলকাতা দূরদর্শন ১২ জুলাই ‘৯৪ যে সংবাদ প্রচার করেছিল, সেই ট্রেন আদৌ কোনো কৌশলেই ভ্যানিশ করা হয়নি। গোটাটাই করা হয়েছিল ক্যামেরার কৌশলে। এমন একটি মিথ্যে খবর প্রচার করে একদিকে একজনকে রাতারাতি কিংবদন্তি বানানো হয়েছে। অন্যদিকে কোটি কোটি দর্শককে প্রতারিত করা হয়েছে।
ডিরেক্টর শ্রীবিশ্বাস সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করার দায়িত্ব অর্পণ করেন অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর শ্রীঅমলেন্দু সিনহার ওপর।
শ্রীসিনহা তদন্ত রিপোর্টে জানান, দূরদর্শন কেন্দ্রের কোনো কর্মী বা টিম জাদুকর পি. সি. সরকার (জুনিয়র)-এর অমৃতসর এক্সপ্রেসের ছবি তুলতে যাননি। খবরে যে ছবিটি দেখানো হয়েছিল তা তুলে এনেছিলেন শ্রীমতী ইন্দ্রাণী ভট্টাচার্য। শ্রীসিনহা আরো জানান, শ্রীমতী ভট্টাচার্য দূরদর্শন কেন্দ্রের কর্মী নন। ক্যাজুয়াল কর্মী হিসেবে মাঝে-মধ্যে তিনি খবর পড়ে থাকেন মাত্র।
‘অল ইন্ডিয়া ম্যাজিক সোসাইটি’-এর সভাপতি ভারতের বিখ্যাত গোয়েন্দা সংস্থা গ্লোব-ডিটেকটিভ সার্ভিসেসকে দিয়ে এ ব্যাপারে একটি তদন্ত করান। ওই সংস্থার ডিরেক্টরের স্বাক্ষর-সংবলিত (রেফারেন্স নং-জি ডি এস/২৫৪০/৯২, তারিখ ১৮/৮/৯২) দীর্ঘ তদন্ত রিপোর্টে দ্বিধাহীনভাবে জানানো হয়েছে।
(১) অমৃতসর এক্সপ্রেস আদৌ ভ্যানিশ করা হয়নি। (২) তথাকথিত ট্রেন ভ্যানিশের জন্য একটি বিশেষ ট্রেন ভাড়া করা হয়েছিল, যার ডিজেল ইঞ্জিন নং-১/৪০৫। ড্রাইভারের নাম অনিলবরণ দত্ত। (৩) গ্রামবাসীদের বলা হয়েছিল সিনেমার শুটিং হবে। শেষ পর্যন্ত তাঁদের ট্রেন ভ্যানিশের দর্শক হিসেবে দেখিয়ে প্রতারিত করা হয়েছে। (৪) ভাড়া করা ট্রেনটি লুপ লাইন দিয়ে তার নিজের মতোই চলে গেছে। (৫) ম্যাজিকের নামে ট্রেন ভ্যানিশের ঘটনাটি ছিল নিছকই একটি ক্যামেরা ট্রিক। (৬) আনন্দবাজার পত্রিকা গ্রুপ ছাড়া আর কোনো পত্রিকা প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
সাংবাদিক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাত্র দু’জন—একজন আনন্দবাজার পত্রিকাগোষ্ঠীর সাংবাদিক শঙ্করলাল ভট্টাচার্য এবং অপরজন দূরদর্শনের ক্যাজুয়াল নিউজ রিডার শ্রীমতী ইন্দ্রাণী ভট্টাচার্য যিনি শঙ্করলাল ভট্টাচার্যের স্ত্রী। প্রাথমিক প্রমাণ হিসেবে ‘গ্লোব ডিটেকটিভ সার্ভিসেস’-এর তদন্ত রিপোর্টের জেরক্স কপি পাঠালাম। প্রয়োজনে আরো স্পষ্টভাবে প্ৰমাণ করে দিতে পারব, আর কোনো পত্রিকাগোষ্ঠীই যায়নি এবং মাননীয় বিচারপতি মুকুলগোপাল মুখোপাধ্যায় ও দূরদর্শনের ডিরেক্টর প্রসঙ্গে যে বক্তব্য রেখেছি তাও কাঁটায় কাঁটায় সত্যি।
সানন্দার মতো জনপ্রিয় পত্রিকায় জাদুকর জুনিয়র সরকারের এই চূড়ান্ত মিথ্যাচারিতার নিদর্শন প্রকাশিত হওয়ায় আমার ও আমাদের সমিতির সম্মান ও মর্যাদা বিশালভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। যতদিন না এই চিঠির মাধ্যমে সত্য প্রকাশিত হচ্ছে, ততদিন এই মিথ্যে কলঙ্কের বোঝা আমাকে এবং আমাদের সমিতিকে বয়ে বেড়াতে হবে। যুক্তিবাদী আন্দোলনের ওপর এই ষড়যন্ত্রমূলক আঘাত ইতিহাস কোনো দিনই ক্ষমা করবে না, ক্ষমা করবে না ‘মথি’ হতে শ্রীসরকারের মিথ্যাচারিতাকে। বিষয়ের গুরুত্ব অনুধাবন করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিঠি প্রকাশ করুন—অনুরোধ” ।
চিঠির সঙ্গে গ্লোব ডিটেকটিভ সার্ভিসেস-এর তদন্ত সম্পূর্ণ প্রতিলিপিও পাঠিয়েছিলাম।
কিন্তু তারপর? প্রিয় পাঠক-পাঠিকারা, একবার ভাবুন, ১৯৯২-এর ১২ জুলাই
কী ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন জাদুকর পি. সি. সরকার (জুনিয়র)? সংস্কৃতির
জগতে দুর্নীতির ইতিহাস? প্রচার মাধ্যমের অকুণ্ঠ সহায়তায় ট্রেন
ভ্যানিশের নামে প্রতারকের কিংবদন্তি হয়ে ওঠার ইতিহাস?
নাকি প্রচার মাধ্যমের হলদে সাংবাদিকতার অনন্য
নজির স্থাপনের ইতিহাস?
পর্ব- একঃ উঠে আসা নানা প্রশ্ন
অধ্যায়ঃ এক
অধ্যায়ঃ দুই
♦ জন্তুদের সম্মোহন করা ব্যাপারটা কি?
অধ্যায়ঃ তিন
অধ্যায়ঃ চার
♦ গণ-সম্মোহনের সাহায্যে কি ট্রেন ভ্যানিশ করা যায়?
অধ্যায়ঃ পাঁচ
♦ সম্মোহন করে পূর্বজন্মে নিয়ে যাওয়া যায়?
অধ্যায়ঃ ছয়
অধ্যায়ঃ সাত
অধ্যায়ঃ আট
অধ্যায়ঃ নয়
♦ প্ল্যানচেটে যে আত্মা আনা হয়, তা কি স্বসম্মোহন বা সম্মোহনের প্রতিক্রিয়া ?
পর্ব- দুইঃ সম্মোহনের ইতিহাস ও নানা মানসিক রোগ
অধ্যায়ঃ এক
♦ সম্মোহনের বিজ্ঞান হয়ে ওঠার ইতিহাস
অধ্যায়ঃ দুই
♦ মনোরোগ, সম্মোহন জানতে মগজের কাজ জানা জরুরি
অধ্যায়ঃ তিন
অধ্যায়ঃ চার
♦ Hysterical neurosis – Conversion type
অধ্যায়ঃ চার
অধ্যায়ঃ পাঁচ
♦ দেহ-মনজনিত অসুখ (Psycho-somatic disorder)
পর্ব- তিনঃ মনোবিদ ও মনোরোগ চিকিৎসার বিভিন্ন পদ্ধতি
অধ্যায়ঃ এক
♦ মনোবিদ (Psychologist) ) মনোরোগ চিকিৎসক (Phychiatrist)
অধ্যায়ঃ দুই
♦ প্রধান কয়েকটি সাইকোথেরাপি নিয়ে আলোচনায় যাব
অধ্যায়ঃ তিন
অধ্যায়ঃ চার
অধ্যায়ঃ পাঁচ
অধ্যায়ঃ ছয়
♦ ‘যোগ’ মস্তিষ্ক-চর্চা বিরোধী এক স্থবীর তত্ত্ব
পর্ব- চারঃ বিভিন্ন রোগের সম্মোহনের সাজেশন পদ্ধতি
অধ্যায়ঃ এক
অধ্যায়ঃ দুই
অধ্যায়ঃ তিন
অধ্যায়ঃ চার
“সম্মোহনের A to Z” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ