রূপোর শিঙা

১. প্রভু মোশিকে বললেন:

২. “দুটি রূপোর শিঙা তৈরী কর। শিঙা দুটি তৈরী করার জন্য পেটানো রূপো ব্যবহার কর। লোকেদের একসঙ্গে ডাকার জন্যে এবং শিবির স্থানান্তরের সময় বলার জন্য এই শিঙা দুটি ব্যবহার করা হবে।

৩. ‘যদি শিঙা দুটি এক সাথে দীর্ঘসুরে জোরে বাজাও, তাহলে সব লোক যেন সমাগম তাঁবুর প্রবেশ পথে তোমার সামনে আসে। 

৪. কিন্তু যদি তুমি তোমার সঙ্গে দেখা করার জন্য নেতাদের অর্থাৎ ইস্রায়েলের বারোটি পরিবারগোষ্ঠীর প্রধানদের জড়ো করতে চাও, তাহলে কেবলমাত্র একটি শিঙাকেই দীর্ঘ সুরে বাজাবে।

৫. “শিঙা দুটিকে অল্পক্ষণের জন্য বাজানো হলে বোঝাবে যে শিবিরকে সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তখন সমাগম তাঁবুর পূর্বদিকে যে পরিবারগোষ্ঠী শিবির স্থাপন করেছে তারা অবশ্যই চলতে শুরু করবে।

৬. ‘দ্বিতীয়বার শিঙা দুটিকে অল্পক্ষণের জন্য বাজালে সমাগম তাঁবুর দক্ষিণদিকে যে পরিবারগোষ্ঠী শিবির স্থাপন করেছে তারা চলতে শুরু করবে।

৭. ‘কিন্তু যদি বিশেষ সভার জন্য লোকেদের একজায়গায় একত্রিত করতে চাও, তাহলে শিঙা দুটিকে দীর্ঘ সময় ধরে কিন্তু অন্যভাবে বাজাবে।

৮. কেবলমাত্র হারোণের পুত্ররা এবং যাজকরা শিঙা দুটিকে বাজাবে। এই বিধি তোমাদের এবং তোমাদের পরবর্তী বংশধরদের জন্যে চিরকালীন বিধি।

৯. ‘যদি তুমি তোমার কোনো শত্রুর সঙ্গে তোমার নিজের দেশে যুদ্ধ করতে যাও, তাহলে তুমি তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে যাওয়ার আগে শিঙা দুটিকে অল্প সময়ের জন্য জোরে বাজাও। প্রভু তোমার ঈশ্বর, তোমার শিঙার আওয়াজ শুনতে পাবেন এবং তিনি তোমাকে তোমার শত্রুদের হাত থেকে বাঁচাবেন।

১০. এছাড়াও তোমার বিশেষ সভার সময়, অমাবস্যার দিনগুলোতে এবং তোমাদের সকলের সুখের সমাবেশে এই শিঙা দুটিকে বাজাবে। তুমি যখন তোমার হোমবলি এবং মঙ্গল নৈবেদ্য প্রদান করবে সেই সময়েও শিঙা দুটিকে বাজাবে। প্রভু তোমার ঈশ্বর তোমাকে যেন মনে রাখেন, সে জন্যেই এই বিশেষ পদ্ধতি। এটি করার জন্যে আমি তোমাকে আদেশ করছি; আমিই প্রভু তোমার ঈশ্বর।”

ইস্রায়েলের লোকেরা তাদের তাঁবু স্থানান্তরিত করল

১১. ইস্রায়েলের লোকেরা মিশর ত্যাগ করার পরে, দ্বিতীয় বছরের দ্বিতীয় মাসের 20 তম দিনে চুক্তির তাঁবুর ওপর থেকে মেঘ উঠল। 

১২. তাই ইস্রায়েলের লোকেরা তাদের যাত্রা শুরু করল। তারা সীনয় মরুভূমি ত্যাগ করে পারণ মরুভূমিতে মেঘ থামা পর্যন্ত ভ্রমণ করল।

১৩. এই প্রথম লোকের৷ তাদের শিবির স্থানান্তর করল। প্রভু মোশিকে যেমন আদেশ করলেন, সেই ভাবেই তার৷ এটিকে স্থানান্তর করল।

১৪. যিহূদার শিবির থেকে প্রথমে তিনটি গোষ্ঠী গেল। তারা তাদের পতাকা নিয়েই ভ্রমণ করল। প্রথম গোষ্ঠীটি ছিল যিহুদার পরিবারগোষ্ঠী। অম্মীনাদবের পুত্র নহশোন ছিলেন ঐ গোষ্ঠীর দলনেতা।

১৫. এরপরে এলেন ইষাখরের পরিবারগোষ্ঠী। সূয়ারের পুত্র নথনেল ছিলেন ঐ গোষ্ঠীর দলনেতা।

১৬. তারপরে এলেন সবূলূনের পরিবারগোষ্ঠী। হেলোনের পুত্র ইলীয়াব ছিলেন ঐ গোষ্ঠীর দলনেতা।

১৭. এরপরে পবিত্র তাঁবুটিকে তোল৷ হল। গের্শোন এবং মরারি পরিবারের লোকেরা পবিত্র তাঁবুটিকে বহন করছিল। সুতরাং এই পরিবারের লোকেরা সারিতে ঠিক তার পরেই ছিল।

১৮. এরপর রূবেণের শিবির থেকে তিনটি গোষ্ঠী তাদের পতাকাসহ ভ্রমণ করল। প্রথম গোষ্ঠীটি ছিল রূবেণের পরিবারগোষ্ঠী। শদেয়ূরের পুত্র ইলীযূর ছিলেন এই গোষ্ঠীর দলনেতা।

১৯. এরপরে শিমিয়োনের পরিবারগোষ্ঠী এল। সূরীশদ্দয়ের পুত্র শলুমীয়েল ছিলেন এই গোষ্ঠীর দলনেতা।

২০. এবং তারপরে এসেছিল গাদের পরিবারগোষ্ঠী। দ্যুয়েলের পুত্র ইলীয়াসফ ছিলেন এই গোষ্ঠীর দলনেতা।

২১. কহাৎ পরিবার, যারা পবিত্র তাঁবু বহন করত, এরপর তারা যাত্রা শুরু করল কারণ নতুন জায়গায় আসা মাত্রই তাদের তাঁবুটি স্থাপন করতে হবে৷

২২. এরপর ইফ্রয়িমের শিবির থেকে তিনটি গোষ্ঠী এল। তারা তাদের পতাকাসহ ভ্রমণ করেছিল। প্রথম গোষ্ঠীটি ছিল ইফ্রয়িমের পরিবারগোষ্ঠী। অম্মীহূদের পুত্র ইলীশামা ছিলেন ঐ গোষ্ঠীর দলনেতা।

২৩. এরপর এসেছিল মনঃশির পরিবারগোষ্ঠী। পদাহসুরের পুত্র গমলীয়েল ছিলেন এই গোষ্ঠীর দলনেতা।

২৪. এরপর এল বিন্যামীনের পরিবারগোষ্ঠী। গিদিয়োনির পুত্র অবীদান ছিলেন ঐ গোষ্ঠীর দলনেতা।

২৫. শেষ তিনটি পরিবারগোষ্ঠী ছিল অন্যান্য সকল পরিবারগোষ্ঠীর পশ্চাদভাগরক্ষী। তারা ছিলেন দানের শিবিরের গোষ্ঠীভুক্ত। তারা তাদের পতাকা নিয়ে ভ্রমণ করল। প্রথম গোষ্ঠীটি ছিল দানের পরিবারগোষ্ঠী। অম্মীশদ্দয়ের পুত্র অহীয়েষর ছিলেন এই গোষ্ঠীর দলনেতা।

২৬. এরপরে এল আশেরের পরিবারগোষ্ঠী। অক্রণের পুত্র পগীয়েল ছিলেন ঐ গোষ্ঠীর দলনেতা।

২৭. ”এরপরে এল নপ্তালি পরিবারগোষ্ঠী। ঐননের পুত্র অহীরঃ ছিলেন ঐ গোষ্ঠীর দলনেতা।

২৮. স্থানান্তরে যাবার সময় ইস্রায়েলের লোকেরা এইভাবেই একসাথে যেতেন।

২৯. মিদিয়োনীয় রূয়েলের পুত্র ছিলেন হোবব। (রূয়েল ছিলেন মোশির শ্বশুর।) মোশি হোববকে বললেন, “আমরা সেই দেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করছি যেটা ঈশ্বর আমাদের দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি করেছিলেন। আমাদের সঙ্গে এসো আমরা তোমার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবো। প্রভু ইস্রায়েলীয়দের পক্ষে মঙ্গল প্রতিজ্ঞা করেছেন।”

৩০. কিন্তু হোবব উত্তর দিলেন, “না, আমি তোমাদের সঙ্গে যাবো না। আমি আমার জন্মভূমিতে, আমার নিজের লোকদের কাছে ফিরে যাবো।”

৩১. তখন মোশি বললেন, “দয়া করে আমাদের ছেড়ে যাবেন না। আপনি মরুভূমি সম্পর্কে আমাদের থেকেও বেশী জানেন। 

৩২. আপনি আমাদের পথ প্রদর্শক হতে পারেন। আপনি যদি আমাদের সঙ্গে আসেন তাহলে প্রভু আমাদের যে সকল উত্তম বিষয়ের অধিকারী করবেন, সেটা আমরা আপনার সঙ্গে ভাগ করে নেব।”

৩৩. এতে হোবব রাজী হলেন এবং তারা প্রভুর পাহাড়ের চূড়া থেকে যাত্রা শুরু করলেন এবং তিনদিন পথে চললেন। যাজকগণ প্রভুর সঙ্গে চুক্তিরসিন্দুকটি নিয়ে লোকেদের আগে আগে হাঁটলেন। শিবিরের জন্য স্থান অন্বেষণে তারা তিনদিন পবিত্র সিন্দুকটিকে বহন করলেন।

৩৪. “প্রত্যেক দিনই প্রভুর মেঘ তাদের ওপরেই থাকত এবং প্রত্যেক দিন সকালে তার৷ যখন শিবির ত্যাগ করতেন, তখন মেঘ তাদের পথ প্রদর্শন করত।

৩৫. শিবির স্থানান্তরের জন্য লোকেরা যখনই পবিত্ৰ সিন্দুকটিকে ওঠাতো, মোশি তখনই প্রত্যেকবারের মত বলতেন

“প্রভু, তুমি ওঠ! তোমার শত্রুরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাক। তোমার শত্রুরা তোমার কাছ থেকে পালিয়ে যাক।”

৩৬. যখনই পবিত্র সিন্দুকটিকে তার নিজের জায়গায় রাখা হত, মোশি তখনই প্রত্যেকবারের মত বলতেন,

“প্রভু তুমি, কোটি কোটি ইস্রায়েলীয়দের কাছে ফিরে এসো।”

error: Content is protected !!