২০০৫-এর ফেব্রুয়ারিতে ‘ন্যাশানাল জিয়োগ্রাফিক’ চ্যানেলের ডিরেক্টর ফ্রেঞ্চ রবার্ট যোগাযোগ করলেন আমার সঙ্গে। উদ্দেশ্য, আমার উপর একটা তথ্যচিত্র তৈরি করা। রবার্টের একটি অনুরোধ—ভারতের সবচেয়ে ধনী জ্যোতিষীর ভণ্ডামির মুখোশ ছিঁড়ে দেখাও।

আচার্য সত্যানন্দ একজন জ্যোতিষী। বর্ণময় তাঁর জীবন। কী ক্লায়েন্ট দেখতে, কী একগাদা টিভি প্রোগ্রামে-যাত্রার রাজার মতো পোশাকে হাজির থাকেন। মাথায় টুপি সাদা-কালো ডিজাইনার লম্বা দাড়ি। কথা বলেন অবাঙালির মতো বাংলা উচ্চারণে। তাঁর একটি বিমান আছে। থাকেন উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতে বিশাল প্রাসাদে। প্রায় প্রতিটি ঘরে রয়েছে বাতানুকূল যন্ত্র । রয়েছে একাধিক কম্পিউটার। টাকী রোডে একটা এয়ারক্রাফট্ ইঞ্জিনিয়ারিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্ৰ গড়েছেন কোটি টাকা খরচ করে। প্রায় সময়-ই সত্যানন্দকে ঘিরে থাকে ৮/১০ জন তাগড়াই যুবক। বিজ্ঞাপনে নাকি খরচ করেন বছরে কোটি টাকা। বর্তমানে জ্যোতিষশাস্ত্রের উপর একটি ম্যাগাজিন প্রকাশ করেন। ১৫ বছর আগেও একটি অশ্লীল ম্যাগাজিন প্রকাশ করতেন। তখন সত্যানন্দর নাম ছিল প্রদীপকুমার বিশ্বাস। থাকতেন উত্তর শহরতলির সিঁথির ছোট্ট বাসায়। কয়েক বছরে আর্থিক অবস্থা থেকে কথা বলার স্টাইল—সব পাল্টে গিয়েছিল। এখন তাঁর বাড়িতে বড় বড় লাল বাতিওয়ালা গাড়ির আনাগোনা । রাজ্যের তাবড় রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। পুলিশের কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্তারা তাঁর বাড়িতে মাঝে-মধ্যে আসেন।

আচার্য সত্যানন্দ

ফ্রেঞ্চ রবার্ট যেমন বর্ণময় জ্যোতিষী চেয়েছিলেন, সত্যানন্দ ঠিক তেমনটি। সব শুনে রবার্ট নেচে উঠলেন—একেই বে-আব্রু করো।

নিখুঁত ও বড়সড়ো একটা পরিকল্পনা করে ক্যামেরার সামনে প্রমাণ করলাম সত্যানন্দের ভণ্ডামি। দিনটা ছিল ৯ মার্চ ২০০৫ সাল। গোটা কাহিনি লিখতে একটা বই হয়ে যাবে। সেটা লিখব ‘যুক্তিবাদীর চ্যালেঞ্জাররা’ ৩য় খন্ডে।

সেই দীর্ঘ নাটকীয় কাহিনীর মধ্যে না গিয়ে। শুধু এটুকু বলি—সে’রাতেই সত্যানন্দ তাঁর একটি LIVE অনুষ্ঠানে ভক্তদের কাছে আমাদের হত্যা করার ফডেলিয়া দিলেন। আমাদের আমারে আমরা যারা সমাসে সক্রিয় ভাবে অংশ নিয়েছিলাম। অর্থাৎ আমি, সুমিত্রা, পিনাকী, সোনালী ও মানসীকে। আমাদের ছবি দেখিয়ে ফতোয়া জারি করেছিলেন ক্রুদ্ধ, অর্থ ও ক্ষমতাগর্বে গর্বিত সত্যানন্দ।

আমি অভিযোগ দায়ের করি রাজ্য পুলিশের সদর দপ্তর ভবানী ভবনে। ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী মিডিয়াগুলো বিশাল হই-চই তোলে। তার-ই একটি অতি ক্ষুদ্র অংশ নমুনা হিসেবে তুলে দিচ্ছি— 

দরকার কড়া আইন

নিজেকে কতটা উচ্চাসনে বসালে দেশের আইনকানুনের তোয়াক্কা না করে টিভি চ্যানেলে ফতোয়া দেওয়া যায়। জনগণকে প্ররোচিত করা যায় একজনকে চিহ্নিত করে, তাঁকে ও তাঁর সঙ্গীদের গুলি করে মেরে ফেলতে। আমরা দেখলাম জ্যোতিৰী সত্যানন্দ নিজে আতঙ্কের সৃষ্টি করলেন, দরজা বন্ধ করে মারধর করলেন বিদেশি সাংবাদিককে এবং অপরপক্ষকে ‘আতঙ্কবাদী’ বলে প্রচার করলেন নির্দ্বিধায়। ওঁর হিন্দুধর্ম প্রীতি চাগিয়ে উঠল ব্যাবসায় ক্ষতির সম্ভাবনা দেখে। হ্যাঁ, বছরে

কয়েক কোটি টাকা ইনভেস্ট করেন এইসব জ্যোতিষীরা চ্যানেল ভাড়া ও কাগজে ছবিসমেত বিজ্ঞাপনে। সৎভাবে লেখাপড়া করা ডাক্তার বা শিক্ষকরাও ভাবতে পারেন না এত টাকা। এই অস্বাস্থ্যকর সমাজদূষণ বন্ধ করতে পারেন প্রশাসনই। দেশের বিশাল সংখ্যক মানুষ বিজ্ঞানের অগ্রগতি সম্বন্ধে বেওয়াকিবহাল,—তাঁরা জানেন না বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন আংটি তাবিজে ভাগ্য ফেরানো সম্ভব নয়, জন্মসময়ে গ্রহের অবস্থান কোনওভাবেই জাতকের জীবনকে প্রভাবিত করে না। এ কথা মানুষকে জানানোর পাশাপাশি আইন করে জ্যোতিষ চ্যানেল ও বিজ্ঞাপন বন্ধ করা এই মুহূর্তের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ-ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার । ধন্যবাদ ‘প্রতিদিন’-কে ।

সুমিত্রা পদ্মনাভন, সম্পাদক, হিউম্যানিস্টস্ অ্যাসোসিয়েশন

বোতল ভাঙা পাথর

কেব্ল চ্যানেলগুলি জ্যোতিষীদের দিয়ে অনুষ্ঠান করিয়ে কমিশন পাচ্ছে। অনুষ্ঠানগুলি বেশিরভাগই ‘রেকর্ডেড’। ফোনগুলি ‘গট-আপ’। দুর্বল চিত্তের মানুষ টিভির পর্দায় এইসব ভেকধারী জ্যোতিষীদের দেখে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে শরণাপন্ন হচ্ছে। জনজীবন কৃচ্ছ্রসাধন করে ঈশ্বরের করুণা পাওয়া যায় না। আর এইসব ভেকধারীরা এত ক্ষমতাবাদ যে ফোনে মানুষের ভাগ্য বলছে। বোতলভাঙা পাথর দিয়ে মানুষের ব্যর্থতা আটকাচ্ছে। এই মুখোশধারী ভণ্ড জ্যোতিষীদের বিরুদ্ধে প্রকৃত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে জেহাদ ঘোষণা করতে হবে।

কৃপানাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, অধ্যক্ষ, কালীনাথ আশ্রম

ঈশ্বরের কী দরকার

যদি গ্রহ-নক্ষত্ররা জীবন্ত প্রাণী হয় এবং তাদের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করার ক্ষমতা থাকে, তা হলে আর ঈশ্বর বা বিভিন্ন ঠাকুর দেবতার অস্তিত্ব মানার উদ্দেশ্য কী, মাদুলি-কবচ পাথর ধারণ করে এইসব গ্রহ-নক্ষত্রকে সন্তুষ্ট রাখলেই হয়। সত্যি, মাদুলি, কবচ, পাথর ধারণ করে বা ‘ফেংশুই’ অনুযায়ী খেলনা সাজিয়ে গ্রহ-নক্ষত্রদের ক্রোধ শান্ত করে প্রাকৃতিক বিপর্যয় এড়ানো যায়? বন্যা, মহামারি, ভূমিকম্প বা সুনামির প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় বলে দেননি কেন?

অধ্যাপক সুরথ চক্রবর্তী (অবসরপ্রাপ্ত), রামমোহন কলেজ, কল-৯

সরকার কী বলছে

আসলে ভাগ্য বলনেওয়ালারা নিজেদের ভাগ্য ফেরাতে দেশময় তাবিজ মাদুলির চর্চা এবং নীল লাল পাথরের পরিচর্যা বৃদ্ধি করতে উঠে পড়ে লেগেছে। এবং এ কাজে যোগ্য সঙ্গ দিচ্ছে কিছু টিভি চ্যানেল। জ্যোতিষী এবং ওইসব নির্বোধ চিন্তার বিশ্বাসীদের উদ্দেশে বলি, আমরা কি দেশগুলিকে রক্ষা করতে উন্নত প্রযুক্তির প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নিয়ে, বিপত্তারিণী বা রক্ষাকবচ ধারণ করব। যাইহোক, এগুলিকে ব্যক্তিগত বিশ্বাস বলে উপেক্ষা করা উচিত। আমার যতদূর মনে হয় এ বিষয়ে মাননীয় বামফ্রন্ট সরকার মানুষের বিশ্বাস ও সেন্টিমেন্টকে মূল্য দেয়। এতে তাদের প্রতি বিশ্বাস এবং বামপন্থার মূল্য কমছে, এ বিষয়ে নিঃসন্দেহ।

শেখ আসরাফ হোসেন, সিঙ্গুর, জলাঘাটা, হুগলি

চাই প্রকৃত শিক্ষা

কতকগুলো প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন এসে যাচ্ছে : (ক) ‘এখানে ফোন’ করছে, যোগাযোগ করছে যারা, তারা কি অশিক্ষিত, বিচারবুদ্ধিহীন? (খ) যদি উত্তর ‘হ্যাঁ’ হয় তবে, প্রথমে আন্দোলনটা কেতাবি শিক্ষার বিরুদ্ধে এবং প্রকৃত শিক্ষা বিস্তারের জন্য করা একান্ত জরুরি। (ঙ) অতএব ‘ধূমপান স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর’-এর মতো কোনও সতর্কতা বাণী এই সমস্ত অনুষ্ঠানে লেবেল হিসাবে সেঁটে দেওয়া গেলেই কিছুটা হলেও ‘জোরদার আন্দোলন’ সফল হতে পারে।

রণজিৎ ঝা, দেবীতলা, ইছাপুর, ২৪ পরগনা (উঃ)

স্রেফ উপেক্ষা করুন

‘জ্যোতিষ’ নিয়ে এত মাতামাতির তো কিছু নেই! যারা এসব নিয়ে মশগুল আছে থাকুক না। আপনি-আমি পাত্তা না দিলেই হল। সচেতন মানুষ এসব নিয়ে ভাবে না। তাদের অনেক কাজ আছে। সিগারেটের প্যাকেটে তো নিষেধাজ্ঞা দেওয়াই আছে, তা হলে কি মানুষ সিগারেট খায় না? মদের দোকানের নতুন লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে, না দেওয়া হলেও যারা খায় তারা ঠিকই খাবে। নিষেধাজ্ঞা বা ক্ষতি হবে জেনেও তারা খেতে দ্বিধা করে না। কই আমি-আপনি তো খাচ্ছি না। ওসব লিখে শুধু পাতা খরচ করা। এদের কথা যত লিখবেন ততই এদের গুরুত্ব দেওয়া হবে। কী দরকার, আসুন তো সাধারণ মানুষের গান গাই।

নরনারায়ণ পুততুণ্ডু, সম্পাদক, দেশিক, কুস্তিয়া, ২৪ পরগনা (দঃ)

ভণ্ডামি দেখলে লজ্জা হয়

আমরা সাজপোশাকে আধুনিক হয়েছি। সেলফোন ব্যবহার করি। কম্পিউটারের কি-বোর্ডে আঙুল রাখছি। কিন্তু আঙুলে পাথরের আংটি, হাতে মাদুলি ব্যবহার করছি নিজের ভাগ্য ফেরানোর জন্য। কী সুন্দর আমাদের চারপাশে আধুনিকতা ও বুজরুকির এক সহাবস্থান অথচ এমন হচ্ছে কেন? আমরা ধূমকেতু, গ্রহ-নক্ষত্র, সূর্য-চন্দ্ৰ গ্রহণ, উল্কাপাতকে বিজ্ঞান বলে মানতে পারছি অথচ একশ্রেণির বুজরুক জ্যোতিষীর ভুল ব্যাখ্যায় জ্যোতিষকে বিজ্ঞান বলে মেনে নিচ্ছি। একটা কমিউনিস্ট শাসিত রাজ্যে জ্যোতিষ-ফেংশুই ভণ্ডামির এমন রমরমা দেখে লজ্জা হয় । এর অবসান হওয়া দরকার।

অতীশ মণ্ডল, নিউটাউন, ডায়মন্ডহারবার, দঃ ২৪ পরগনা

লোক ঠকিয়ে ব্যাবসা

যে দেশে ডাইনি সন্দেহে মেয়েদের পিটিয়ে মারা হয়, পরপর কন্যাসন্তান প্রসব করলে বাড়ির বউকে ‘অপয়া’ আখ্যা নিয়ে শ্বশুরবাড়ির থেকে বিতাড়িত হতে হয়, সেই দেশে জ্যোতিষচর্চার মতো বুজরুকি ব্যাবসা মানুষকে সর্বস্বান্ত করবে, সেটাই স্বাভাবিক। প্রকৃতপক্ষে শিক্ষায় আমাদের দেশ অনেক পিছিয়ে। বিশ্বে নারীশিক্ষায় ভারতের স্থান নিরীক্ষণ করতে হলে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের প্রয়োজন। অশিক্ষার সুযোগ নিয়ে জ্যোতিষীরা অসহায় মানুষদের প্রতারিত করছে। এটা অমার্জনীয় অপরাধ। ‘অপহরণের মাধ্যমে পণ আদায় করা’ ‘নারী পাচার করা’ কিংবা ‘মাদকদ্রব্যের চোরাচালান’ প্রভৃতির সঙ্গে যারা যুক্ত,তাদের সঙ্গে জ্যোতিষীদের লোক-ঠকানো ব্যাবসার কোনও তফাত নেই। তফাত এখানেই, জ্যোতিষীরা অন্যায় করেছে জেনেও, সরকার এদের বিরুদ্ধে কোনওরকম আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।

দিলীপকুমার মিত্র, মণ্ডলপাড়া লেন, কলকাতা-৫০

দায়বদ্ধ অবশ্যই আমরা

আমাদের দেশে ‘ড্রাগ অ্যান্ড ম্যাজিক রেমিডিস (অবজেকশন্যাবল অ্যাডভারটাইজমেন্ট) অ্যাক্ট’ ১৯৫৪ সালে সংসদে পাস হওয়া আইন বলে প্রতিটি জ্যোতিষীর প্রতারণার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা খুবই প্রয়োজন সরকার তথা প্রশাসনের। টিভি চ্যানেলগুলিতে জ্যোতিষীদের ‘ফোন ইন’ (লাইভ) অনুষ্ঠানে প্রায় প্রতিটি ফোনই গটআপ! আমি নিজে বহুবার ওইরকম অনুষ্ঠানে লাইন পাওয়ার পর প্রতিবারই অদৃশ্য কারণে অন্য প্রান্ত থেকে লাইন কেটে দেওয়া হয়েছে। আসলে অপরিচিত কোনও কণ্ঠস্বর শুনলেই এদের পিলে চমকায়। কেব্‌ল চ্যানেলগুলি, যাঁরা নীতিজ্ঞান বিসর্জন দিয়ে জ্যোতিষীদের বিভ্রান্তিমূলক অনুষ্ঠান প্রচারের সুযোগ করে দিয়ে অসংখ্য মানুষের শারীরিক, মানসিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতি করে চলেছেন, তাঁরা একবার ভেবে দেখবেন কি, এই সমাজের প্রতি তাদের কোনওরকম দায়বদ্ধতা আছে কি না? এই দায়বদ্ধতা আমাদের প্রত্যেককে গড়ে তুলতে হবে।

অমিতকুমার নন্দী, গণবিজ্ঞান কর্মী, মতিবাগান, চুঁচুড়া, হুগলি

সবটাই উপরচালাকি

কেবল চ্যানেলের জ্যোতিষীদের সম্পর্কে কিছু ভালো-মন্দ বলার আগে একটা মজার অভিজ্ঞতা বরং ‘শেয়ার’ করা যাক। এক ভদ্রলোক নিজের সন্তান সম্পর্কে জানতে চেয়ে জন্মছক থেকে ‘ডেট অফ বার্থ’ ইত্যাদি বললেন। পলকের মধ্যে কী সব অঙ্ক-টঙ্ক করে (কোয়ান্টাম ! ) সঙ্গে সঙ্গে বলে দিলেন ছেলের পড়াশোনা ব্যাপক, স্কলার ছেলে, পশ্চিম স্থানে কন্যারাশির ঘরে রবি-বুধ (স্বক্ষেত্রী) এ বুধাদিত্য যোগ। ভদ্রলোক এবার অপ্রতিভ হয়ে বললেন, সন্তান না জন্মাতেই এত কিছু। জ্যোতিষ সম্রাট বললেন, কেন ওই তো ডেট বললি। ‘কলার’ শুষ্ক কণ্ঠে বললেন, তিন বছর বিয়ে হয়ে গিয়েছে, সন্তান নেই, তাই ফোন করছিলাম। বিন্দুমাত্র ঘাবড়ে না গিয়ে গণক ঠাকুর বললেন, ওঃ হ ওটা তা হলে তোর ফলাফল। ‘কলার’ ঘাবড়ে গিয়ে বলল, আমি যে মাধ্যমিকও নই ।

সৌমিত্রঝিনুক বন্দ্যোপাধ্যায়, কোর্টপাড়া, উলুবেড়িয়া, হাওড়া

নিজেদের ভবিষ্যৎ জানেন ?

এখন মানুষ নানা সমস্যায় জর্জরিত আর এই সুযোগ নিয়ে কিছু ভূয়া জ্যোতিষীর দল পয়সা উপার্জনে ব্যস্ত। আমার মনে হয় এটা সম্পূর্ণ বুজরুকি। যারা শুধু টিভির পর্দায় বসে জন্মলগ্ন শুনে সেই মানুষটা সম্বন্ধে সবকিছু বলে দিতে পারে আমার জিজ্ঞাসা, তারা এই পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে কেন বলে দিতে পারে না অঘটনের কথা, তা হলে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা না গিয়ে অন্তত সাবধান হতে পারত। আসলে এইসব জ্যোতিষীদের নিজেদেরই ভবিষ্যতের ঠিক নেই, সাধারণ মানুষের কী উপকার করবে?

প্রবীর ভট্টাচার্য, ব্যবসায়ী

গারদে ঢোকান এদের

জ্যোতিষ আদৌ বিজ্ঞান কি না সেই আলোচনায় যাব না। কিন্তু এই জ্যোতিষ চ্যানেলগুলিতে বিচিত্র সাজে সজ্জিত জ্যোতিষ, ফেংশুই, রেইকি বিশেষজ্ঞ নামধারী একদল ঠক, প্রতারক, বুজরুক ক্লাউনেরা যে ভাঁড়ামোর অভিনয় করে তা যে কোনও চটুল হিন্দি বা ‘বাবার হাতে ছাতা’ মার্কা বাংলা ছবিগুলিকেও হার মানায়। জ্যোতিষ, ফেংশুই, তন্ত্র প্রভৃতির নাম করে এই ভণ্ড প্রতারকেরা গেরুয়া বসনে কেউ চৈতন্য প্রভু বা রজনীশ সেজে বা মাথায় ফেট্টি বেঁধে ‘টুথ পেস্ট’-এর বিজ্ঞাপনের কায়দায় দাঁত বের করে এমন আশঙ্কাপূর্ণ ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে তার সমাধান করতে সাধারণ মানুষরা ওই ভণ্ডদের কাছে আর্থিক বা মানসিকভাবে সর্বস্বান্ত হন। এই অপরাধীদের স্থান হওয়া উচিত একমাত্র জেলগারদে।

অঞ্জন চক্রবর্তী, হরিদেবপুর, কলকাতা-৮২

প্রশাসন কী করছিল

সতর্কটা আরও অনেকদিন আগেই হওয়া উচিত ছিল। এ পর্যন্ত নানারকম দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বহু সংখ্যক ঠক-জোচ্চোর জ্যোতিষ, তান্ত্রিক এবং ফেংশুই-এর স্বঘোষিত বিশেষজ্ঞই মানব-জাতির সঙ্গে প্রতারণা করে এসেছে, চরম ফুলে-ফেঁপে উঠেছে আর্থিকভাবে। কিছু সংখ্যক নির্দিষ্ট টেলিভিশন চ্যানেল টাকার বিনিময়ে এদের প্রচারের আলোয় এনে সর্বনাশ করে চলেছে সমাজের। কুসংস্কারের মোড়কে থাকা ওইসব স্বার্থান্বেষী বুজরুকদের দল রাত নেই, দিন নেই, দুপুর-সন্ধ্যে নেই, বিভিন্ন চ্যানেলে বক-বক করে চলে, সব ব্যাপারে যেভাবে জ্ঞানবৃষ্টি বর্ষণ করে চলে দেখলে পা-থেকে মাথা পর্যন্ত জ্বলে যায়। প্রশাসন সব দেখেশুনেও নির্বিকার। তবু ভালো, দেরিতে হলেও সম্বিত ফিরেছে আমাদের।

সৌমিত্র মজুমদার, পঃ বঙ্গ দূরসঞ্চার কার্যালয়, ৮ রেডক্রস প্লেস, কলকাতা-১

অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী

জ্যোতিষ বিদ্যাকে পাঁচ মিনিট সময়ের মধ্যে বেঁধে ভবিষ্যদ্বাণী করার মতো দৃষ্টতা না দেখানোই উচিত। A little learning is a dangerous things. জ্যোতির্বিদ্যা তখন আর বিজ্ঞানভিত্তিক থাকে না, হাস্যাস্পদ থেকে নামতে নামতে অপরাধ বিজ্ঞানে রূপান্তরিত হয়।

ডাঃ নীলকমল বর্মন, ডোমজুড় হাসপাতাল আবাসন, ডোমজুড় হাওড়া

গ্রেফতার ঠেকাতে পারলেন

সত্যানন্দ শুনেছিলাম খুব নামী জ্যোতিষী। অন্যের ভবিষ্যৎ বলে দেন, সময় কখন খারাপ যাবে জানিয়ে দেন। কিন্তু তিনি নিজেই যে গ্রেফতার হচ্ছেন, এই তথ্যটুকু গণনা করে ধরতে পারলেন না কেন? কেন পাথর পরে গ্রেফতার এড়ালেন না?

অভিষেক দাস, একডালিয়া রোড, কলকাতা

টাকা দিয়ে স্লট কেনেন

যেসব জ্যোতিষী, তান্ত্রিক ফেংশুই বিশেষজ্ঞদের দেখি টিভির পর্দায় বসেন, তাঁরা যদি নিজেরা টাকা দিয়ে স্লট না কিনতেন, তা হলে কি চ্যানেল থেকে তাঁদের ডাকত? নিশ্চয়ই ডাকত না। নিজেদের ঢাক নিজেদের পেটাতে হয়, এরা কেমন বিশেষজ্ঞ ?

সমীরণ বাগচি, দক্ষিণেশ্বর, কল-৭৬

জেলেও জায়গা হবে না

জ্যোতিষীরা শীঘ্র ভিআরএস নিয়ে বাড়িতে বসে আরাম করুন। নতুবা জেলখানায় জায়গা হবে না। বহুদিন ধরে এই অপবিজ্ঞান, শাস্ত্র ও হিন্দুধর্মের দোহাই দিয়ে রমরমা ব্যাবসা চালিয়ে যাচ্ছে। মানসিক কারণে অসুস্থতা ও সামাজিক কারণে অশান্তি আমাদের সমাজের বিরাট সংখ্যক মানুষকে প্রতিনিয়ত বিব্রত করে চলেছে। আর জ্যোতিষীরা আংটি, তাবিজ দিয়ে তাদের তাৎক্ষণিক কিছুটা আত্মবিশ্বাস এনে দিচ্ছে (ইংরাজিতে একে বলে প্লাসিবো ট্রিটমেন্ট) এবং আখেরে সর্বস্বান্ত করে দিচ্ছে। পাথরে ভাগ্য পাল্টায় না। যারা নিজেদের বিজ্ঞাপনের জন্য টিভি চ্যানেল ভাড়া করে, তারা অপরের ভাগ্য পাল্টাবে কী করে? এ তো সাধারণ বুদ্ধিতেই বোঝা যায়, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, সমস্ত জ্যোতিষ চ্যানেল তুলে দিয়ে বিজ্ঞান ও সাধারণ চিকিৎসার অনুষ্ঠান করা উচিত।

সুচেতনা পাল, পাতিপুকুর, দিঘিরপাড়

এরা বড় প্রতারক

গত ১৫ মার্চ ২০০৫ তারিখের ‘সংবাদ প্রতিদিন’ থেকে জ্যোতিষ তন্ত্র ও ফেংশুই বিশেষজ্ঞদের প্রতারণা বন্ধ করার লক্ষ্যে সংগঠিত হওয়া আন্দোলন সম্পর্কে যে সংবাদ পেলাম তা জেনে ভীষণই ভালো লাগছে। যুক্তিবাদীরা এ কথা বহুবার প্রমাণ করে দিয়েছেন যে, যে যত বড় জ্যোতিষী সে তত বড় প্রতারক। তাঁরা বিভিন্ন আইন উল্লেখ করে এ সম্পর্কেও আমাদের অবহিত করেছেন যে, তাবিজ-কবচ দিয়ে রোগ সারানোর দাবি করাটাই বেআইনি। পেশার প্রতারকদের প্রতারণা বন্ধ করার জন্য কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হোক। নতুবা পশ্চিমবঙ্গের ‘প্রগতিশীল’ ভাবমূর্তি যথেষ্ট পরিমাণে কালিমালিপ্ত হবে।

অনিন্দ্যসুন্দর মণ্ডল, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়, মেদিনীপুর

অবিবাহিত অথচ পুত্ৰ অসুস্থ

বিভিন্ন কেবল চ্যানেলে জ্যোতিষীরা যেসব অনুষ্ঠান করছেন সেগুলোর বিপক্ষে আমি। অনলাইন লটারির বিজ্ঞাপনের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে কোটিপতি হতে চেয়ে বহু মানুষ সর্বস্বান্ত হয়েছেন। অনেকে ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে আত্মহত্যাও করেছেন। এই বুজরুকিও অবিলম্বে বন্ধ করুন এটাই আমাদের অনুরোধ। জ্যোতিষবিদ্যা অবশ্যই বিজ্ঞানসম্মত। কেব্ল চ্যানেলে যেটা হচ্ছে তা বিজ্ঞানসম্মত নয়। শুধুমাত্র একটা ফোন করলেই ভবিষ্যৎ বলে দিচ্ছেন যেসব ‘স্বঘোষিত’ জ্যোতিষী তাঁরা ভণ্ড, প্রতারক। প্রমাণ নিয়েছিলাম আমি নিজেই। আমাকে বলা হল সন্তানের শারীরিক অসুস্থতা, স্ত্রীর পথদুর্ঘটনার আশঙ্কা, অথচ আমি অবিবাহিত।

সুনীল মুখোপাধ্যায়, সম্পাদক, শব্দের ঝংকার, হাওড়া-৬

এরা তো রক্তচোষা পরজীবী !

প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা অসংখ্য চ্যানেলে কিছু কিম্ভূত বেশ-ভূষার শয়তান জ্যোতিষী, ফেংশুই, বাস্তু ইত্যাদি নিয়ে প্রতারণা করে চলেছে, এরা কারা? এরা রক্তচোষা পরজীবী। অসহায় মানুষের অনিশ্চিত ‘ভবিষ্যৎ ভয়’-কে (প্রতিটি ক্ষেত্রেই ‘ভয়টা’ এদেরই সৃষ্টি) গণ্য করে এক-একটা সংসারকে গ্রাস করে চলেছে। যদিও আমরা জানি আইন অনুযায়ী এইসব পেশা (স্মাগলিং, নারীপাচার, জ্যোতিষ, জালনোটের ব্যাবসা), বেআইনি (বৃত্তিকর দেওয়া যায় না) তবুও এসব রমরমিয়ে চলছে, পার্থক্য শুধু এটুকুই অন্য পেশার লোকেরা মুখ লুকিয়ে চলে। আইনকে ভয় পায়। আর এরা প্রতারক হয়েও সমাজের সম্মানীয়, উঁচুমহলে মেলামেশা করে। প্রশাসনকে অনুরোধ, এই শয়তান ও তাদের সহযোগী প্রতারক, চ্যানেলগুলির বিরুদ্ধে আইনত কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

অরূপ সেন, দেবীতলা রোড, ইস্ট ইছাপুর, ২৪ পরগনা (উঃ)

ছেলের উন্নতি হবে পাঁচ হাজারে

আমি এক জ্যোতিষী/তান্ত্রিকের কাছে আমার সন্তানের জন্য যাই। তিনি বলেছিলেন বছর তিনেকের মধ্যে আমার ছেলে এমন একটা উন্নত স্থানে যাবে যেটা আমি কল্পনা করতে পারব না। তবে একটা ফাঁড়া আছে যার প্রতিকার একটি যজ্ঞ। তার জন্য ৫৫০০ টাকা দিতে হবে। অবশ্যই একটা তাবিজের বিনিময়ে। স্বভাবতই ছেলের মঙ্গল কামনার জন্য আমি সর্বসাকুল্যে ৪৫০ টাকা অগ্রিম দিই। সত্যি, সবটা মিথ্যা ভাঁওতা ছাড়া কিছুই নয়। কোনও ক্ষমতা যদি থাকত তা হলে চারদিকে বিপদগুলোকে বিনষ্ট করতেন। ‘সংবাদ প্রতিদিন’ আমার চোখ খুলে দিল।

বিতান মুখোপাধ্যায়, আন্দুল, হাওড়া

বাবাজিদের লালসার শিকার

এই ব্যবসায়িক অনুষ্ঠানটি হতাশাগ্রস্ত মানুষকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, এই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। সমস্যা জর্জরিত অসহায় মানুষেরা ওই সমস্ত স্ব-ঘোষিত বাবাজি-মাতাজিদের লালসার শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। জ্যোতিষ শাস্ত্রের কোনও বাস্তব ভিত্তি আছে বা নেই সেই বিতর্কে না গিয়ে বলা যায়, যাঁরা মনে করেন, জ্যোতিষ একটি শাস্ত্র এবং কোনও সৎ, নিষ্ঠাবান জ্যোতিষীর দ্বারা তাঁরা কোনওভাবে উপকৃত হয়েছেন তাঁদেরও সমস্ত প্রতিবাদী মানুষের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এই ধরনের ভ্রষ্টাচারের বিরুদ্ধে সরব হওয়া উচিত।

অমলেন্দুশেখর সান্যাল, নৈনান পাড়া লেন, বরাহনগর

সে কী মিথ্যানন্দ গণৎকার !

ফলিত জ্যোতিষে বিশ্বাসী বা অলৌকিকতায় বিশ্বাসী দুর্বল মনের মানুষের সংখ্যা আজও এ দেশে অগণিত। আর এসব দুর্বল মনের মানুষদের অন্ধবিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে জ্যোতিষী তান্ত্রিক বাবাজি-মাতাজিরা তাদেরকে যথেচ্ছভাবে ঠকিয়ে চলেছে। এমনকী কেব্‌ল টিভি চ্যানেল ভাড়া পর্যন্ত করে কিছু চরমতম প্রতারক তাদের ঠগবাজি কারবার রমরমিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে। লোকটাকে দেখে হাসছ কেন?

হাততালি দিচ্ছ কেন পিছনে তার? লোকটা কে হে? সে কী মিথ্যানন্দ গণৎকার !

লাবু (স্বপন) ঘোষ, বিদ্যাসাগর রোড, হাবড়া

খেলা ভাঙার খেলা

অধিকাংশ বেসরকারি চ্যানেল জ্যোতিষীদের আখড়া চলছে চুটিয়ে জ্যোতিষী। কার সাধ্য দেবে বাগড়া। বুজরুকি, ভণ্ডামি, শঠতার পাহাড়, দেখেশুনে গা-জ্বলে বন্ধ করি আহার। অনেক হয়েছে আর নয়, এবার থামাতে হবে, এসেছে সময়। চটজলদি ভাগ্য নয় গণনা এক্কেবারে ভেক ভাঙতে হবে এদের শক্তপোক্ত ঠেক।

দেবাশিস চক্রবর্তী, গ্রিন পার্ক, বেহালা

চ্যানেলে বসে ভাগ্য পাল্টাবার বিধান দিলে কড়া সরকারি ব্যবস্থা

টিভিতে কোনও জ্যোতিষী বসলেও ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারবেন না। সমস্যা সমাধানের জন্য কোনও ব্যবস্থার বিধান দিতে পারবেন না। পাথর, মাদুলি, তাবিজ বা মন্ত্র-তন্ত্র চলবে না । ফেল্ডইং-এর নামে পুতুল-টুতুল দিয়ে ভাগ্য পাল্টাবার বিধান দিতে পারবে না। এমনটি কেউ করছে অভিযোগ এলেই পুলিশ ওই জ্যোতিষী ও চ্যানেল মালিককে গ্রেপ্তার করবে। পুলিশের তরফ থেকে এমন নির্দেশ জারি হওয়ার পর জ্যোতিষী ও তাদের চ্যানেলগুলো ছিল বাঘ, হুলো, বিড়াল।

জ্যোতিষীদের যে গণ্ডাখানেক কেব্ল চ্যানেল টিমটিম করে চলছে, তাতে জ্যোতিষী আছে তো সমস্যা সমাধানের উপায় নেই। জ্যোতিষীরা প্যান-প্যান করে বলে চলেছে, বুধ সপ্তমে থাকলে অমুক হয়, মঙ্গল অষ্টমে থাকলে তমুক। আরে বাবা ওসব জ্যোতিষশাস্ত্রের কচ্‌চানি কে শুনতে চায়! অতএব দর্শক সংখ্যা ধু-ম্ করে তলানিতে নেমেছে জ্যোতিষীদের আয় পড়েছে। কেবল টিভির ভাড়া কমেছে। এমনকী পত্রিকার বিজ্ঞাপন রেট প্রায় অর্ধেক হয়েছে-শুধু জ্যোতিষীদের জন্য।

কেবল চ্যানেলে বসে ভাগ্য পাল্টাবার বিধান দেওয়া বন্ধ করতেই জ্যোতিষীদের ভাগ্যে নেমে এল বিপর্যয়। কোনও রত্ন, মাদুলি, মন্ত্রের সাধ্য হল না এই বিপর্যয় সামলানোর।

জ্যোতিষীদের বৃত্তিকর বাতিল করল যুক্তিবাদী সমিতি

সত্যানন্দের ভাণ্ডাফোঁড় করতেই কোণঠাসা সত্যানন্দ সাংবাদিকদের ডেকে জানালেন, তিনিই একমাত্র জ্যোতিষী যিনি নিয়মিত বৃত্তিকর দেন। বৃত্তিকর দিয়ে পাওয়া সার্টিফিকেট হাতে তুলে দেখালেন।

এতেই কাল হল। বিষয়টা জেনে জোগাড় করলাম বৃত্তিকর দিয়ে পাওয়া ‘সার্টিফিকেট অফ এনরোলমেন্ট’-এর জেরক্স কপি। অর্থাৎ বৃত্তিকরের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সার্টিফিকেট-এর জেরক্স কপি ।

১৯.১০.২০০৫ ডেপুটি কমিশনার, প্রফেশন ট্যাক্স অফিস, হেডকোয়ার্টার, কলকাতা-র ঠিকানায় একটি চিঠি দিলাম ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে। চিঠির বয়ানের বাংলা তর্জমা এখানে তুলে দিলাম—

প্রতি

ডেপুটি কমিশনার

প্রফেশন ট্যাক্স অফিস

হেডকোয়ার্টার, কলকাতা

19.10.2005

প্রিয় মহাশয়,

আমরা যতটুকু জানি, বৃত্তিকর যারা দিতে পারবেন তাঁদের তালিকায়, জ্যোতিষী, : হস্তরেখাবিদ, তান্ত্রিক ইত্যাদি পেশার নাম নেই। আমরা এই দেখে বিস্মিত যে আপনার ডিপার্টমেন্ট আচার্য সত্যানন্দের কাছ থেকে বৃত্তিকর নিয়েছে এবং তাঁকে বৃত্তিকরে নাম অন্তর্ভুক্তির একটি সার্টিফিকেট দিয়েছে। সত্যানন্দের জ্যোতিষী হিসেবে বেআইনি পেশা চালাবার ঠিকানা ৮৬/১/৯ টাকি রোড, নর্থ কাজিপাড়া, বারাসাত, ২৪ পরগনা (উত্তর)। সার্টিফিকেটটি ইস্যু করা হয়েছিল ৮ মার্চ ২০০৫ সালে। ইস্যু করেছিলেন প্রফেশন ট্যাক্স অফিসার নবীনকৃষ্ণ সাহা, WBCU- V, বারাসাত, ২৪ পরগনা (উত্তর)।

আমি এই চিঠির সঙ্গে সার্টিফিকেট অফ এনরোলমেন্ট-এর একটি প্রতিলিপি পাঠালাম।

আপনার কাছে অনুরোধ, যত দ্রুত সম্ভব এই বেআইনি ভাবে ইস্যু করা সার্টিফিকেট

অফ এনরোলমেন্টটি বাতিল করুন।

প্রবীর ঘোষ

সাধারণ সম্পাদক

 

উত্তরে ডেপুটি কমিশনার জানালেনঃ—

মেমো নং ১৩০৫ পিটি

তারিখঃ ২৫ নভেম্বর ২০০৫

থেকেঃ

শ্রীসুগত ভট্টাচার্য

ডেপুটি কমিশনার

প্রফেশন ট্যাক্স (হেডকোয়ার্টার)

 

প্রতি

শ্রীপ্রবীর ঘোষ

সাধারণ সম্পাদক

ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি

৩৩ এ, ক্রিক রো, কলকাতা-৭০০০১৪

বিষয়ঃ আচার্য সত্যানন্দকে দেওয়া এনরোলমেন্ট সার্টিফিকেট

রেফারেন্সঃ আপনার ১৯.১০.২০০৫ এর দেওয়া চিঠি।

 

প্রিয় মহাশয়,

উপরে উল্লেখ করা আপনার চিঠির উত্তরে আমি জানাচ্ছি ওই এনরোলমেন্ট সার্টিফিকেট ভুল করে ৮ মার্চ ২০০৫-এ ইস্যু করা হয়েছিল। অধিকারী প্রফেশন ট্যাক্স অফিসার ৩১ অক্টোবর ২০০৫ একটি আদেশ বলে ওই এনরোলমেন্ট সার্টিফিকেট বাতিল করেছেন।

আপনার আস্থাভাজন

সুগত ভট্টাচার্য

ডেপুটি কমিশনার

প্রফেশন ট্যাক্স, হেডকোয়ার্টার

চৌর্যবৃত্তি বা বেশ্যাবৃত্তির মতোই জ্যোতিষবৃত্তি-ও যে একটা বেআইনি পেশা—এটা আমরা প্রমাণ করলাম।

♦ কিছু কথা

প্রথম খন্ড

♦ কিছু কথা

অধ্যায়ঃ এক

♦ মার্কিন গডম্যান মরিস সেরুলোঃ একটি ইতিহাস

অধ্যায়ঃ দুই

♦ যোগী-জ্যোতিষী হরেকৃষ্ণবাবা !

অধ্যায়ঃ তিন

♦ পঞ্চাশ বছর আগের বালক ব্রহ্মচারী এবং…

অধ্যায়ঃ চার

♦ মেঠাইবাবার রহস্যভেদ

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ হাড় ভাঙ্গার দৈব-চিকিৎসা

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ কাকদ্বীপের দৈব-পুকুর

অধ্যায়ঃ সাত

♦ আগরপাড়ায় ‘ভূতুরে’ আগুন

অধ্যায়ঃ আট

♦ প্রদীপ আগরওয়ালের সম্মোহনে ‘পূর্বজন্মে’ যাত্রা

অধ্যায়ঃ নয়

♦ কামধেনু নিয়ে ধর্মব্যবসা

অধ্যায়ঃ দশ

♦ বরানগরের হানাবাড়িঃ গ্রেপ্তার মানুষ- ভূত

অধ্যায়ঃ এগারো

♦ এফিডেভিট করে ডাক্তারের প্রশংসাপত্র নিয়ে ওঝাগিরি !

অধ্যায়ঃ বারো

♦ ‘গ্যারান্টি চিকিৎসা’র নামে হত্যাকারীর ভূমিকায় সর্পবিদ হীরেন রায়

অধ্যায়ঃ তেরো

♦ চলো যাই ফকিরবাড়ি

অধ্যায়ঃ চোদ্দ

♦ সাঁইবাবার চ্যালেঞ্জঃ পেটে হবে মোহর !

অধ্যায়ঃ পনেরো

♦ হুজুর সাইদাবাদীঃ মন্তরে সন্তান লাভ !

অধ্যায়ঃ ষোলো

♦ জলাতঙ্ক ও দৈব-চিকিৎসা

অধ্যায়ঃ সতেরো

♦ বিশ্বাসের ব্যবসায়ীরা ও নপুংসক আইন

দ্বিতীয় খন্ড

♦ কিছু কথা

অধ্যায়ঃ এক

♦ খেজুর তলার মাটি সারায় সব রোগ

অধ্যায়ঃ দুই

♦ পক্ষিতীর্থমের অমর পাখি

অধ্যায়ঃ তিন

♦ স্বামী রামদেবঃ সন্ন্যাসী, সর্বযোগসিদ্ধ যোগী, যোগচিকিৎসক !

অধ্যায়ঃ চার

♦ নাকালের দৈব-পুকুরঃ হুজুগের সুনামী

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ সায়েব যখন রেইকি করে রাঘব বোয়াল চামচা ঘোরে

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ লক্ষ্মীমূর্তি কালি হলেন আপন খেয়ালে

অধ্যায়ঃ সাত

♦ পাথর যখন কথা বলে

অধ্যায়ঃ আট

♦ ফাঁদে পড়ে জ্যোতিষী শ্রীঘরে

অধ্যায়ঃ নয়

♦ বিশ্বের বিস্ময় অলৌকিক মাতা জয়া গাংগুলী’র বিস্ময়কর পরাজয় এবং…

অধ্যায়ঃ দশ

♦ আই আই টিতে টেলিপ্যাথি দেখালেন দীপক রাও

অধ্যায়ঃ এগারো

♦ জন্ডিস সারাবার পীঠস্থান ইছাপুর

অধ্যায়ঃ বারো

♦ মালপাড়ার পেশা দাঁতের পোকা বের করা

অধ্যায়ঃ তেরো

♦ নিমপীঠের গুগি মা

তৃতীয় খন্ড

♦ কিছু কথা

অধ্যায়ঃ এক

♦ ওঝার ঝাড়ফুঁক আর টেরিজার লকেটে মণিহার রোগমুক্তিঃ কুসংস্কারের দু’পিঠ

অধ্যায়ঃ দুই

♦ ‘মেমারিম্যান’ বিশ্বরূপ-এর একটি বিশুদ্ধ প্রতারণা

অধ্যায়ঃ তিন

♦ কোটিপতি জ্যোতিষী গ্রেপ্তার হলেন

চতুর্থ খন্ড

অধ্যায়ঃ এক

♦ কিস্যা অক্টোপাস পল বিশ্বকাপ ফুটবলের ভবিষ্যৎ বক্তা

অধ্যায়ঃ দুই

♦ কিস্যা জ্যোতিষী বেজান দারওয়ালা

অধ্যায়ঃ তিন

♦ সাধারণ নির্বাচন ২০০৯ নিয়ে সব জ্যোতিষী ফেল

অধ্যায়ঃ চার

♦ মা শীতলার পায়ের ছাপ পুকুরঘাটেঃ রহস্যভেদ

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ যিশুর মূর্তি থেকে রক্তপাত

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ সত্য সাঁই-এর সত্যি-মিথ্যে

অধ্যায়ঃ সাত

♦ অলৌকিক উপায়ে সন্তান দেন ডা. বারসি

অধ্যায়ঃ আট

♦ জ্যোতিষীর বাড়িতে অলৌকিক আগুন

অধ্যায়ঃ নয়

♦ সম্মিলিত দুর্নীতির ফসল ‘মোবাইলবাবা’

অধ্যায়ঃ দশ

♦ জাতিস্মরঃ রাজেশ কুমার

♦ অলৌকিক শক্তিধরদের প্রতি চ্যালেঞ্জ

“যুক্তিবাদীর চ্যালেঞ্জাররা” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ

⇒ মন্তব্য করুন⇐

error: Content is protected !!