আরজ আলী মাতুব্বর
বিগত ৩০শে ফালগুন ১৩৮৭ তারিখের ‘দৈনিক ইত্তেফাক’ পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে ‘মানব কল্যাণে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত’ শীর্ষক নাম দিয়ে। তাতে বরিশাল মেডিকেল কলেজে আমার মৃতদেহ দানের প্রসঙ্গটির উল্লেখ আছে । সংবাদটি প্রকাশিত হবার সাথে সাথে বহু লোকে আমাকে প্রশ্ন করতে থাকে— কেন আমার মৃতদেহ মেডিকেলে দান করছি, তার কারণ জানার জন্যে। অনেকে আবার ওর কারণ আবিষ্কার করেও ফেলেছেন, আমার কাছে ও বিষয়ে কিছু শোনবার আগেই। তাদের মতে ওর কারণ নাকি- কবরে মনকির ও নকির নামক ফেরেস্ত দ্বিয়ের দৌরাত্ম এড়ানো । এরূপ মনোভাব যারা পোষণ করেন, তাদের কাছে আমি সবিনয়ে বলছি, কারণ ওটি নয়, অন্য রকম দুটি ।
প্রথম কারণ
চার বছর বয়সে আমার বাবা মারা যান। কায়িক শ্রমের দ্বারা বহুকষ্টে আমাকে বাঁচিয়ে রাখেন স্বামী ও বিত্তহীনা আমার মা । বিশেষত আমি আমার মার একটিমাত্র সন্তান। তাই আমার উপর তার স্নেহটা ছিলো অন্যান্য মাদের চেয়ে অনেক বেশি। পক্ষান্তরে বাবা জীবিত না থাকায় আমার পিতৃস্নেহটুকুও পতিত হচ্ছিলো মায়ের উপরেই। তাই আমার মাতৃস্নেহ ছিলো অন্যান্যদের চেয় কিছু বেশিই।
বিগত (ইং) ২৭-১০-৭৮ তারিখের ‘বিচিত্রা’ পত্রিকা, ১০-৬-৮১ তারিখের ‘সংবাদ’ পত্রিকা, ১৯-৭-৮১ তারিখের ‘বিপ্লবী বাংলাদেশ’ পত্রিকা এবং ৪-৯-৮১ তারিখে প্রকাশিত ‘বাংলার বাণী’ পত্রিকা যারা পাঠ করেছেন, তারা হয়তো জানেন আমার দুঃখজনক একটি ঘটনা। তবুও সেই অবিস্মরণীয় বিষাদময় ঘটনাটি সংক্ষেপে এখানে বলছি। যে ঘটনা করেছে আমাকে অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে দ্রোহী ।
১৩৩৯ সালে আমার মা মারা গেলে আমি আমার মৃত মায়ের ফটো তুলি । তা দেখে আমার মার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সমাধা করতে যে সমস্ত আলেম ও মুসল্লিরা এসেছিলেন, তারা আমার মার নামাজে জানাজা ও দাফন করা ত্যাগ করে লাশ ফেলে চলে যান, যেহেতু ফটো তোলা নাকি হারাম । অগত্যা কতিপয় অমুসল্লি নিয়ে জানাজা ছাড়াই আমার মায়ের মরদদেহটি সৃষ্টিকর্তার হাতে সোপর্দ করতে হলো কবরে। আমার মা ছিলেন অতিশয় ধার্মিকা নারী। তার নামাজ- রোজা বাদ পড়া তো দূরের কথা, ‘কাজা’ হতেও দেখিনি কোনোদিন আমার জীবনে, বাদ পড়েনি কখনো তার তাহাজ্জোদ নামাজ মাঘ মাসের শীতের রাতেও। এহেন পুণ্যবতী মায়ের জানাজা হলো না আমার একটি দুষ্কর্মের ফলে। হায়রে পবিত্র ধর্ম! (আজকাল ওসব হারামের তম্বি নেই বললেই চলে।)
ইসলামের দৃষ্টিতে ছবি তোলা দূষণীয় হলেও এক্ষত্রে সে দোষে দোষী হয়তো স্বয়ং আমিই, আমার মা নন। কেননা এত আমার মার সম্মতি ছিলো না। আমার অপরাধে কেন যে আমার মার মরদেহের অবমাননা করা হলো, তা আজও আমি খুঁজে পাচ্ছি না। পক্ষান্তরে নানা কারণে আমার নিজের বহু ফটো তোলা হয়েছে ও হচ্ছে। বিশেষত আমার ছেলেরা আমার মৃতদেহের ফটো তুলে রাখারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমতাবস্থায় আমার মৃতদেহটি গোঁড়া মুসল্লিদের কাছে আনুষ্ঠানিক সৎকারের মর্যাদা না পাওয়াই সম্ভব। যদিও পায় তবে আমার মায়ের মরদেহের অমর্যাদা ও আমার মরদেহের মর্যাদা দেখে তাতে আমার বিদেহী আত্মা তুষ্ট হবার কথা নয়। তাই আমি আমার মৃতদেহটিকে বিশ্বাসীদের অবহেলার বস্তু ও কবরে গলিত পদার্থে পরিণত না করে, তা মানবকল্যাণে সোপর্দ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি ।
দ্বিতীয় কারণ
এককালে মানব সমাজে প্রসিদ্ধি লাভ করে থাকলেও বর্তমান শিক্ষিত সমাজ বিশেষত বৈজ্ঞানিক সমাজ ভূত- প্রেত, দেও-দানব, জ্বীন-পরী, শয়তান- ফেরেস্তা ইত্যাদি কাল্পনিক জীবগণকে নিয়ে চিন্তাভাবনা করে অযথা সময় নষ্ট করেন না। এমনকি আধুনিককালের কোনো ঔপন্যাসিকও ওসব অতিজীবকে নিয়ে বা ওদের সমন্বয়ে কোনো উপন্যাস রচনা করেন না। কেননা এখন আর এসব উপন্যাস বাজারে বিকায় না। তাই আমিও ওসব অতিজীবকে নিয়ে কোনোরূপ চিন্তা-ভাবনা করি না, করি মানবকল্যাণের চেষ্টা যতোটুকু পারি। মানবকল্যাণ আমার ব্রত ।
কোনো অট্টালিকা ধ্বংস হলে তা পরিণত হয় রাবিশে এবং মানুষের যথোপযুক্ত কাজে লাগে। অনুরূপভাবে জীকের মৃতদেহগুলো পচে গলে নষ্ট হলে তা পরিণত হয় কতোগুলো জৈবাজৈব পদার্থে এবং তা মানুষের কল্যাণ সাধন করে নানাভাবে। কৃষক হিসেবে আমি আমার একটি অভিজ্ঞতার কথা বলছি। মাঠের কোথাও কোনো জীবদেহ পঁচে-গলে নষ্ট হলে সেখানের মাটিতে কয়েক বছর যাবত যে কোনো ফসল জন্মে ভালো । ওতে মানুষের কল্যাণ সাধিত হয়। তবে ওর একটি অকল্যাণেরও আশংকা রয়েছে। সেটি হচ্ছে— শবদেহ পচে গলে নষ্ট হবার প্রাক্কালে দুর্গন্ধে মানুষের স্বাস্থ্য নষ্ট হবার আশংকা। বোধ হয় যে, সে কারণেই সেমিটিক জাতিরা মানুষের শবদেহ মাটিতে পুঁতে রাখার ব্যবস্থা করেছেন। এতে মানুষের অকল্যাণের পথ রুদ্ধ হলেও কল্যাণের পথ ততো প্রশস্ত হয়নি। কেননা যতোটুকু গভীরে শবদেহ রাখা হয়, কোনো ওষধি জাতীয় ফসলের শিকড় ততোটুকু গভীরে প্রবেশ করতে পারে না। তাই তাতে কোনো ফসল বাড়ে না। তবে আম,কাঁঠাল ইত্যাদি গাছের শিকড় ততোধিক গভীরে প্রবেশ করতে পারে। তাই দেখা যায় যে, কবরের উপর কোনো ফলের গাছ জন্মালে তাতে ফল ধরে প্রচুর। বিশেষত জীবের অস্থিতে থাকে ‘ফসফরাস’ নামীয় একটি পদার্থের আধিক্য এবং তা হচ্ছে ফলের স্বাদ ও ফলন বৃদ্ধির সহায়ক। পক্ষান্তরে শবদেহ জলভাগে পতিত হলে তা জলজীবের ভক্ষ্য হয় এবং জলজীবগুলো নানাভাবে মানুষের কাজে লাগে। এসবে দেখা যায় যে, জীবের মৃতদেহগুলো মানুষের কল্যাণ সাধন করে নানারূপে- প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষে, মুখ্য বা গৌণভাবে। কিন্তু এতে কারো ইহকালের মনমানসের সম্পর্ক থাকে না। সম্পর্ক যদি থাকতো, তবে তাদের নিজেদের দেহের এরূপ মানবকল্যাণের ভূমিকা দেখে তারা নিশ্চয়ই আনন্দলাভ করতো ।
মেডিকেলে আমার দেহদানের কারণ মায়ের বিদেহী আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এবং আমার মরদেহটি দ্বারা মানবকল্যাণের সম্ভাবনা বিধানে আমার সজীব মনের পরিতোষ ও আনন্দলাভের প্রয়াসমাত্র। আমার মরদেহটির সাহায্যে মেডিকেল কলেজের শল্যবিদ্যা শিক্ষার্থীগণ শল্যবিদ্যা আয়ত্ত করবে, আবার তাদের সাহায্যে রুগ্ন মানুষ রোগমুক্ত হয়ে শান্তিলাভ করবে। আর এসব প্রত্যক্ষ অনুভূতিই আমাকে দিয়েছে মেডিকেলে শবদেহ দানের মাধ্যমে মানবকল্যাণের আনন্দলাভের প্রেরণা। এতে আমার পরিজনের বা অন্য কারো উদ্বিগ্ন হওয়া সমীচীন নয় ।
মৃতদেহ দানপত্র
রে. তাং….. দলিল নং….
গৃহীতা
১। বাংলাদেশ সরকার পক্ষে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজের মাননীয় অধ্যক্ষ ।
দাতা-
২। আরজ আলী মাতুব্বর, পিতা-মৃত এন্তাজ আলী মাতুব্বর, সাকিন-লামচরি, থানা- কোতোয়ালী, জিলা- বরিশাল, জাতি-মুসলমান, পেশা- হালুটী ।
কস্য মৃতদেহ দান পত্রমিদং কার্যঞ্চাগে আমি মানবকল্যাণের উদ্দেশ্যে মৃত্যুর পর আমার মৃতদেহটি বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজে দান করিলাম। কলেজ কর্তৃপক্ষ আমার মৃতদেহটি দ্বারা উক্ত কলেজের উন্নয়ন ও জনকল্যাণমূলক যে কোন কাজ করিতে পারিবেন। আমার মৃত্যুর পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমার ওয়ারিসগণ আমার মৃতদেহটি কলেজ কর্তৃপক্ষের নিকট পৌছাইয়া দিবে। কিন্তু কোন কারণে যদি এমন কোন স্থানে আমার মৃত্যু ঘটে, যাহাতে আমার মৃতদেহটি আমার ওয়ারিসগণের আয়ত্তে না থাকে, তবে তাহারা আমার মৃত্যুর সঠিক তারিখ ও মৃত্যুর নির্দিষ্ট স্থানের নাম অবিলম্বে কলেজ কর্তৃপক্ষকে জ্ঞাত করাইবে। কলেজ কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করিলে এবং সম্ভব হইলে তাহাদের দায়িত্বে কলেজের কাজে ব্যবহারের জন্য আমার মৃতদেহটি আনাইয়া লইতে পারিবেন। তাহাতে আমার ওয়ারিসদের কোন ওজরাপত্তি থাকিবে না ।
প্রকাশ থাকে যে, আমার চক্ষুদ্বয় চক্ষু ব্যাংকে দান করা বাঞ্ছনীয়।
এতদার্থে আমি আমার সরল মনে, সুস্থ শরীরে, স্বেচ্ছায়, সজ্ঞানে অত্র দানপত্ৰ দলিল লিখিয়া সম্পাদন করিয়া দিলাম। ইতি সন ১৩৮৮ সনের ১৯শে অগ্রহায়ণ, ইং তাং ৫-১২-৮১।
কৈফিয়ত— অত্র দলিলের প্রথম পাতায় আট ছত্রে ‘মেডিক্যাল’ শব্দ তোলা লিখা ।
রেফ- ২ ফর্দ । লিখক
লিখকসহ ইসাদি ৪ জন । মোহাম্মদ হোসেন
সাং চরবাড়িয়া L. 1350
(স্বা. আরজ আলী মাতুব্বর)
ইসাদি ইসাদি ও পরিচিত
মো. ইয়াছিন আলী সিকদার আ. মালেক মাতুব্বর
সাং- লামচরি । পিং- আরজ আলী মাতুব্বর সাং- লামচরি ।
ইসাদি
মো. গোলাম রসুল মোল্লা
সাং- লামচরি ।
গ. অছিয়তনামা
রে. তাং….. দলিল নং….
লিখিতাং আরজ আলী মাতুব্বর, পিতা- মৃত এন্তাজ আলী মাতুব্বর, সাং- লামচরি, থানা- কোতোয়ালী, জিলা- বরিশাল, জাতি- মুসলমান, পেশা- হালুটী। কস্য অছিয়তনামা পত্রমিদং কার্যঞ্চাগে ১. আবদুল মালেক মাতুব্বর (পুত্র), ২. আবদুল খালেক মাতুব্বর (পুত্র), ৩. আবদুল বারেক মাতুব্বর (পুত্র), ৪. মোসাম্মৎ ফয়জরন নেছা (কন্যা), ৫. মোসাম্মৎ নূরজাহান বেগম (কন্যা), ৬. মোসাম্মৎ মনোয়ারা বেগম (কন্যা), ৭. মোসাম্মৎ বিয়াম্বা বেগম (কন্যা), ৮. মোসাম্মৎ সুফিয়া খাতুন (স্ত্রী); সাকিন- লামচরি, থানা- কোতোয়ালী, জিলা- বরিশাল, জাতি- মুসলমান, পেশা- হালুটী। এতদ্বারা তোমাদিগকে অছিয়ত করা যাইতেছে যে, তোমরা আমার উত্তরাধিকারী বটে। আমার স্থাবরাস্থাবর যাবতীয় সম্পত্তির ন্যায় আমার মৃতদেহটিরও উত্তরাধিকারী তোমরাই। তোমরা জান যে, মানবকল্যাণের উদ্দেশ্যে আমার মৃতদেহটি বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজে দান করিয়া যাইতেছি, তাই আমার মৃত্যুর পর তোমাদের এই বিষয়ে ও অন্যান্য বিষয়ে কৰ্ত্তব্য সম্বন্ধে লিখিত অছিয়ত করিয়া যাইতেছি। আমি আশা করি, তোমরা আমার অছিয়তসমূহ পালন করিবা, কিন্তু যদি আমি এমন কোন স্থানে মারা যাই যাহাতে আমার মৃতদেহ তোমাদের আওতাধীনে না থাকে, তবে সেই ক্ষেত্রে আমার এই বিষয়ের অছিয়ত পালনের কোন দায়িত্ব তোমাদের থাকিবে না। তবে অন্যান্য সম্বন্ধে থাকিবে।
অছিয়তসমূহ
১. মৃত্যুর পর আমার শবদেহটি জলে ধৌতপূর্বক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ করিয়া (নতুন বা পুরাতন) বস্ত্রাবৃত করিবা। হয়ত খোশবু ব্যবহার করিবা । ইহা ছাড়া অন্য কোনরূপ চিরাচরিত প্রথা রক্ষার জন্য উদ্বিগ্ন হইবা না ।
২. আমার বিদেহী আত্মার কল্যাণের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করার জন্য কাহাকেও পীড়াপীড়ি বা সেই জন্য অর্থ ব্যয় করিবা না। তবে কাহারও স্বেচ্ছাকৃত প্রার্থনা বা আশীর্বাদ আমার অবাঞ্ছিত নহে।
৩. কোনরূপ প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটিলে ২৪ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে আমার মরদেহটি বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ সাহেবের কাছে পৌছাইয়া দিবা ।
৪. মেডিকেল কলেজের কর্তৃপক্ষের কাছে সোপর্দ করিবার পূর্বে তোমাদের সুবিধামত সময়ে আমার মৃতদেহটির ফটো তুলিবা, এবং তাহার কপি এনলার্জ ও বাঁধাই করিয়া আমার লাইব্রেরি ভবনে রাখিবা ।
৫. মৃত্যুর পরে বরিশাল মেডিকেল কলেজে আমার শবদেহটি পৌছাইবার ও অন্যান্য খরচ নির্বাহের উদ্দেশ্যে আমি বরিশাল জনতা ব্যাংক (চকবাজার শাখা একাউন্ট নং-৪১৫৮ তাং ২০-৭-৮২)-এ একটি সেভিংস একাউন্ট ফাণ্ড করিয়াছি এবং এতদ্দশ্যে সেই ফাণ্ডে অন্যুন ৫০০.০০ টাকা সতত মজুত থাকিবে। আমার মৃতদেহটি লইয়া তোমাদের মেডিকেল কলেজে যাতায়াত খরচ ও ফটো তোলা ইত্যাদি যাবতীয় খরচ তোমরা সেই ফাণ্ড হইতে বহন করিবা এবং তোমাদের ইচ্ছা হইলে কাফন, সমাগতদের অভ্যর্থনা ইত্যাদি খরচও সেই ফাণ্ড হইতে বহন করিতে পারিবা।
আমার মৃত্যুদিনটির স্মৃতিরক্ষার উদ্দেশ্যে পরবর্তী বৎসরগুলিতে আমার ‘মৃত্যুদিবস’ অনুষ্ঠান পালনের জন্য আমি বার্ষিক মং ১০০.০০ টাকা করিয়া ব্যয় বরাদ্দ করিয়া যাইতেছি এবং তাহা বহন করিতে হইবে লাইব্রেরির সাধারণ তহবিলের টাকা হইতে, কিন্তু আমার সদ্যমৃত দিনটিতে মং ১০০.০০ টাকা দান করিতে হইবে উপরোক্ত সেভিংস ফাণ্ডের টাকা হইতে ।
৬. উপরোক্ত যাবতীয় খরচ বহনের পর যদি আমার সেভিং একাউন্টে অর্থ মজুত থাকে, তবে তাহা হইতে তোমাদের মধ্যে যেই যেই ব্যক্তি মেডিকেলে আমার দেহদান ব্যাপারে সক্রিয় অংশগ্রহণ করিবা, সেই সেই ব্যাক্তি তাহাদের পরিশ্রম বাবদ মোট মং ৫০.০০ টাকা গ্রহণ করিতে পারিবা। তদ্বাদে যদি উক্ত ফাণ্ডে কোন টাকা মজুত থাকে, তবে তাহা উক্ত ব্যাংকে আমার স্থায়ী আমানত তহবিলে (একান্ট নং ৩৬৬১১২/১০৮ তাং ৩-৪-৭৯) জমা হইবে এবং সেই টাকার মুনাফার দ্বারা আমার মৃত্যু অনুষ্ঠানে কাঙ্গালের সংখ্যা বাড়াইয়া তাহাদের যথানিয়মে সাহায্যদান করা যাইবে। এমতাবস্থায় তখন আমার সেভিংস তহবিলে টাকা থাকিবে না ।
৭. প্রতি বৎসর আমার মৃত্যু অনুষ্ঠান দিনটির পূর্বে লাইব্রেরির নির্বাহী কমিটির স্থানীয় সদস্যদের যে কোন তিনজনের পরামর্শ লইয়া আমার নিকটতম প্রতিবেশী কাঙ্গাল হইতে ক্রমশ দূরবর্তী ২০ জন কাঙ্গাল-কাঙ্গালীকে মনোনীত ও আমন্ত্রণ করিয়া তাহাদের প্রত্যেককে মং ৫.০০ টাকা করিয়া (মোট ১০০ টাকা) সাহায্যদান করিতে হইবে। তবে সেভিংস একাউন্টের টাকার দ্বারা তহবিল বৃদ্ধি পাইলে তদ্বারা কাঙ্গাল-কাঙ্গালীর সংখ্যা বাড়াইতে পারা যাইবে ।
৮. আমার বংশাবলীর মধ্যে (পুরুষ বা নারী) বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তির দ্বারা কাঙ্গাল- কাঙ্গালীদের হাতে সাহায্যদান করিতে হইবে। তদভাবে নির্বাহী কমিটির সম্পাদক উক্ত সাহায্যদান করিবেন।
৯. এমন কখনো না হউক- যদি আমার বংশাবলীর মধ্যে (পুরুষ বা নারী) কেহ জীবিত না থাকে, তখনও লাইব্রেরির নির্বাহী কমিটির সম্পাদকের দ্বারা যথানিয়মে আমার মৃত্যুদিনে নির্ধারিত মং-১০০.০০ টাকা সাহায্যদান করিতে হইবে ।
১০. তোমরা আমার (পুত্রগণ) লাইব্রেরিতে রক্ষিত ১৩/ক/৫ নং খাতাটির (বংশাবলী বা বংশলতা নামীয়) অনুকরণে আমার ঊর্ধ্বতন পুরুষ হইতে তোমাদের নিজ নিজ ‘বংশাবলী’ বা ‘বংশলতা’ লিখিয়া রাখিবা এবং তোমাদের অধস্তন পুরুষগণকে পুরুষানুক্রমে তাহাদের নিজ নিজ বংশাবলী বা বংশলতা রাখিতে উপদেশ দিয়া যাইবা। যেহেতু আমার বংশপরিচয় না থাকিলে লাইব্রেরি সংক্রান্ত কোন বিশেষ সুবিধা ভোগ করা যাইবে না ।
প্রকাশ থাকে যে, আমার বংশাবলীর মধ্যে সেই ব্যক্তি আমার অছিয়তের বাক্য পালন করিবে না, সেই ব্যক্তি আমার ত্যাজ্য স্থাবরবাস্থাবর কোন সম্পত্তির ‘উত্তরাধিকারী’ বলিয়া দাবি করিতে পারিবে না। দাবি করিলে তাহা সর্বাদালতে বাতিল হইবে।
এতদ্বারা আমি আমার সরল মনে, সুস্থ শরীরে, সজ্ঞানে অত্র অছিয়তনামা সম্পাদন করিয়া দিলাম ইতি সন ১৩৮৮ সালের ১৯শে অগ্রহায়ণ, ইং তাং- ৫-১২-৮১।
কৈফিয়ত— অত্র দলিলের ৩য় পাতায় ১২ ছত্রে ‘আমার’ শব্দ তোলা লিখা ।
রেফ মোট ৬ ফর্দ।
লিখকসহ ইসাদি ৪ জন ।
(স্বা. আরজ আলী মাতুব্বর) লিখক
মো. হোসেন
সাং- লামচরি ।
L.1350
ইসাদি
মো. ইয়াছিন আলী সিকদার
সাং- লামচরি ।
ইসাদি ও পরিচিত
আ. মালেক মাতুব্বর
পিং- আরজ আলী মাতুব্বর
সাং- লামচরি ।
সাং- চরবাড়িয়া
ইসাদি
মো. গোলাম রছুল মোল্লা
সাং- লামচরি ।
প্রথম অধ্যায়ঃ যুক্তিবাদ মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্কতা
♦ মন্দের যুক্তি ও ঈশ্বরের অস্তিত্ব
♦ বিজ্ঞান মনস্কতা ও বিজ্ঞানমনস্ক সমাজনির্মাণ
♦ ইন্টিলিজেন্ট ডিজাইন নিয়ে কূটকচাল
♦ ব্রুনোর আত্মত্যাগ ও যুক্তিবাদ
♦ ইহজাগতিকতা ও আরজ আলী মাতুব্বর- একজন যুক্তিবাদী দার্শনিক
♦ বাংলাদেশে চেতনা-মুক্তির লড়াই
♦ ইসলাম যেভাবে নিজের পথ থেকে সরে গেছে
♦ বিজ্ঞান, বিজ্ঞানমনস্কতা বনাম কোরানিক বিজ্ঞান
দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ ধর্ম ও নৈতিকতা
♦ জীবিত ইসলামের মৃত গৌরবের কথা
♦ রামায়ণ কাহিনীর ঐতিহাসিকতা একটি একাডেমিক আলোচনা
♦ মানবতাভিত্তিক সংবিধান এবং অমানবিক বিধান
♦ ধর্মের উপযোগিতাঃ জনৈক বিবর্তনবাদীর দৃষ্টিতে
♦ ধর্মরাষ্ট্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও রাষ্ট্রধর্ম
♦ মানুষের জন্য ধর্ম, না ধর্মের জন্য মানুষ?
♦ বিজ্ঞান কি উপাসনা-ধর্মের প্রতিদ্বন্দ্বী
তৃতীয় অধ্যায়ঃ অন্যান্য প্রসঙ্গ
♦ হাইপেশিয়াঃ এক বিস্মৃতপ্ৰায় গণিতজ্ঞ নারীর বেদনাঘন উপাখ্যান
♦ শাশ্বত এথেন্সের নারী ও তার বিপর্যস্ত ধারাবাহিকতা
“স্বতন্ত্র ভাবনাঃ মুক্তচিন্তা ও বুদ্ধির মুক্তি” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ