হযরত ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) হইতে ধারাবাহিকভাবে আবূ সালেহ ও ইকরামা মুহাম্মদ ইব্‌ ইবরাহীম করশী, হিশাম ইব্‌ন আম্মার, হুসায়ন ইব্‌ন ইসহাক তাসতারী ও ইমাম আবুল কাসিম তাবারানী ‘আল মাজমাউল কারী’ গ্রন্থে বর্ণনা করিয়াছেন।

হযরত ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) বলেন, একদা হযরত আলী (রাঃ) নবী করীম (সাঃ)-এর খেদমতে আরয করিলেন-হে আল্লাহ্র রাসূল ! আমার অন্তর হইতে কুরআন মজীদ ছুটিয়া যায়। (অর্থাৎ আমি কুরআন মজীদ স্মরণ রাখিতে পারি না)। নবী করীম (সাঃ) বলিলেন—’আমি কি তোমাকে এমন কতগুলি কালাম শিখাইব যাহা দ্বারা আল্লাহ্ তা’আলা তোমাকে এবং তুমি উহা যাহাকে শিখাইবে, তাহাকে উপকৃত করিবেন?” হযরত আলী (রাঃ) আরয করিলেন—হে আল্লাহর রাসূল ! আপনার জন্যে আমার পিতা-মাতা কুরবান হউক। আমাকে উহা শিখান। নবী করীম (সাঃ) বলিলেন—তুমি জুমুআর রাত্রিতে চারি রাক’আত নামায আদায় করিবে। প্রথম রাকআতে সূরা ফাতিহা ও সূরা ইয়াসীন, দ্বিতীয় রাকআতে সূরা ফাতিহা ও সূরা দুখান, তৃতীয় রাকআতে সূরা ফাতিহা ও সূরা হা-মীম আস্ সাজদাহ এবং চতুর্থ রাকআতে সূরা ফাতিহা ও সূরা মুল্ক তিলাওয়াত করিবে। তাশাহ্হুদ শেষ করিবার পর আল্লাহ্ তা’আলার হামদ ও প্রশংসা বর্ণনা করিবে, নবীগণের প্রতি দরূদ পাঠ করিবে এবং মু’মিনদের জন্যে আল্লাহ্ তা’আলার নিকট মাগফিরাত কামনা করিয়া এই দোয়া করিবেঃ

اللهم ارحمني بترك المعاصى ابدا ما بقيتنى – وارحمنى من ان اتكلف ما لا يعنيني – وارزقنى حسن النظر فيما يرضيك عنى – اللهم بديع السموات والارض ذا الجلال والاكرام والعزة التي لاترام – اسئلك يا الله يا رحمن بجلالك ونور وجهك أن تلزم قلبي حب كتابك كما علمتني – وارزقنی ان اتلوه على النحو الذي يرضيك عنى – واسئلك ان تنور بالكتاب بصرى وتطلق به لساني وتفرج به عن قلبي وتشرح به صدری و تستعمل به بدنی وتقويني على ذالك وتعينني عليه – فانه لا يعينني على الخير غيرك ولا موفق له الا انت –

হে আল্লাহ্ ! আমাকে আমার সমগ্র জীবনে সর্বত্র পাপ বর্জনের ব্যাপারে সহায়তা কর। আর যাহা আমার জন্যে কোন কল্যাণ বহিয়া আনিবে না, তাহার জন্যে আমাকে কষ্ট করিতে না যাইবার তাওফীক দিয়া আমার প্রতি রহম কর। যাহার প্রতি আমি তাকাইলে তুমি আমার প্রতি সন্তুষ্ট হইবে, উহার প্রতি তাকাইবার জন্যে আমাকে তাওফীক দান কর। আয় আল্লাহ্ ! তুমি আকাশসমূহ ও যমীনকে সৃষ্টি করিয়াছ। তুমি মহামহিম ও মহাপরাক্রমশালী। তোমার পরাক্রমের সমতুল্য পরাক্রম কেহ কামনা করিতে পারে না। আয় আল্লাহ্! আয় রহমান ! তোমার পরাক্রম এবং তোমার চেহারার নূর ও জ্যোতির মাধ্যমে তোমার নিকট আবেদন জানাইতেছি যে, তুমি তোমার কিতাবকে যেরূপে ভালবাসিতে আমাকে শিক্ষা দিয়াছ, উহার প্রতি সেইরূপ ভালবাসা আমার হৃদয়ে স্থায়ীভাবে বসাইয়া দাও।

আর কুরআন মজীদ যেভাবে তিলাওয়াত করিলে তুমি আমার প্রতি সন্তুষ্ট হও, সেইভাবে উহা তিলাওয়াত করিবার জন্যে আমাকে তাওফীক দান কর। আর তোমার কাছে আবেদন জানাই যে, তুমি স্বীয় কিতাবের সাহায্যে আমার চক্ষু জ্যোতির্ময়, আমার জিহ্বাকে জড়তামুক্ত আমার ভাষাকে অবাধ, আমার অন্তরকে উদার, আমার বক্ষকে উন্মুক্ত ও প্রশস্ত এবং আমার দেহকে উহার আদেশ-নিষেধ ইত্যাদি যাবতীয় ব্যবস্থার বাস্তবায়নকারী ও রূপদাতা কর ৷ তোমার নিকট আরও আবেদন জানাই, কুরআন মজীদ আমার ভিতর কায়েম করিবার ব্যাপারে তুমি আমাকে শক্তি দাও এবং সাহায্য কর। কারণ, তুমি ভিন্ন নেক কাজে আমাকে সাহায্য করিবার এবং তাওফীক দান করিবার অন্য কেহ নাই।’

অতঃপর নবী করীম (সাঃ) হযরত আলী (রাঃ)-কে বলিলেন—’তুমি তিন অথবা পাঁচ অথবা সাত জুমআয় উপরোক্ত আমল করিবে। আল্লাহর মেহেরবানীতে তুমি কুরআন মজীদ স্মরণ রাখিতে পারিবে। কোন মু’মিন উক্ত আমল করিয়া ব্যর্থ মনোরথ হইতে পারে না।’ নবী করীম (সাঃ)-এর উপরোক্ত আদেশের পর সাত জুমআ অতিবাহিত হইয়া গেলে হযরত আলী (রাঃ) তাঁহার খেদমতে উপস্থিত হইয়া তাঁহাকে জানাইলেন যে, তিনি এখন কুরআন মজীদ এবং পবিত্র হাদীস স্মরণ রাখিতে পারেন। ইহাতে নবী করীম (সাঃ) বলিলেন—কা’বা ঘরের প্রভুর শপথ ! আলী মু’মিন। (হে আল্লাহ্ !) তুমি আবুল হাসানকে ইলম দান করো, তুমি আবুল হাসানকে ইলম দান করো।’

হযরত ইবন আব্বাস (রাঃ) হইতে ধারাবাহিকভাবে আতা ইবন রাবাহ ও ইকরামা, ইব্‌ন জুরায়জ, ওয়ালীদ ইব্‌ন মুসলিম, সুলায়মান ইব্‌ন আবদুর রহমান দামেশকী, আহমদ ইব্‌ন হাসান ও ইমাম আবূ ঈসা তিরমিযী (রঃ) স্বীয় ‘জামে’ সংকলনের ‘দোয়া’ অধ্যায়ে বর্ণনা করেনঃ

হযরত ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) বলেন– একদা আমরা নবী করীম (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। এই সময়ে হযরত আলী (রাঃ) তাঁহার খেদমতে উপস্থিত হইয়া আরয করিলেন—আমার পিতা-মাতা আপনার জন্যে কুরবান হউক। কুরআন মজীদ আমার অন্তর হইতে তিরোহিত হইয়া যায়। আমি উহা মনে রাখিতে পারি না। নবী করীম (সাঃ) তাঁহাকে বলিলেন—’ওহে আবুল হাসান! আমি কি তোমাকে কতগুলি কথা শিখাইব যদ্বারা আল্লাহ্ তা’আলা তোমাকে উপকৃত করিবেন এবং তুমি যাহাকে উহা শিখাইবে, তাহাকেও উপকৃত করিবেন? আর তুমি যাহা স্বীয় অন্তরে ধারণ করিবে, আল্লাহ্ তা’আলা তদ্বারা উহা তোমার পক্ষে দৃঢ়সংবদ্ধ করিয়া দিবেন?’ হযরত আলী (রাঃ) বলিলেন—হে আল্লাহর রাসূল ! হ্যাঁ, আমাকে উহা শিক্ষা দিন। নবী করীম (সাঃ) বলিলেন—’যখন শুক্রবারের রাত্রি আসে, তখন যদি পারো, উহার শেষ তৃতীয়াংশে নামায আদায় করিবে। রাত্রির উক্ত অংশের ইবাদত, বিশেষত কুরআন তিলাওয়াত ফেরেশতাগণ কর্তৃক পরিদৃষ্ট হইয়া থাকে এবং উক্ত সময়ের দোয়া কবূল হইয়া থাকে। আমার ভাই হযরত ইয়াকূব (আঃ) স্বীয় পুত্রগণকে বলিয়াছিলেনঃ

سوف أستغففر لكم ربى (আমি শীঘ্রই তোমাদের জন্যে আমার প্রতিপালক প্রভুর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করিব।) তাঁহার উদ্দেশ্য ছিল—জুমআর রাত্রি আসিলে তিনি তাহাদের জন্যে আল্লাহ্ তা’আলার নিকট ইস্তিগফার করিবেন। রাত্রির শেষ তৃতীয়াংশে না পারিলে তুমি মধ্য রাত্রিতে নামায আদায় করিবে। উহাও না পারিলে রাত্রির প্রথম ভাগে নামায আদায় করিবে ও চারি রাকআত নামায পড়িবে। প্রথম রাকআতে সূরা ফাতিহা ও সূরা ইয়াসীন, দ্বিতীয় রাকআতে সূরা ফাতিহা ও সূরা দুখান, তৃতীয় রাকআতে সূরা ফাতিহা ও সূরা আলিফ-লাম-মীম আস-সাজদাহ এবং চতুর্থ রাকআতে সূরা ফাতিহা ও সূরা মুল্ক তিলাওয়াত করিবে। তাশাহ্হুদ শেষ করিবার পর সুন্দরভাবে আল্লাহ্ তা’আলার হামদ ও প্রশংসা বর্ণনা করিবে, আমার প্রতি এবং অন্যান্য সকল নবীর প্রতি সুন্দররূপে দরূদ পাঠ করিবে এবং মু’মিন নারী-পুরুষের জন্যে এবং যে সকল মু’মিন তোমার পূর্বে ঈমান আনিয়াছে, তাহাদের জন্যে আল্লাহ্ তা’আলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করিবে। অতঃপর নির্দেশিত দোয়া পড়িবে। (এই স্থানে পূর্বোক্ত হাদীসে বর্ণিত দোয়া উল্লেখিত হইয়াছে। তবে ইহাতে وتستعمل به بدنى (আর তুমি উহাকে আমার দেহে বাস্তবায়িত করিবে) স্থলে وان تغسل به بذنى (আর তুমি উহা দ্বারা আমার দেহকে ধৌত করিয়া দিবে) বাক্যটি রহিয়াছে। এতদ্ব্যতীত সর্বশেষে নিম্নোক্ত কথাগুলি-সংযোজিত রহিয়াছেঃ

ولاحول ولاقوة الا باللّه العلى العظيم “আর মহা মর্যাদাশীল মহান আল্লাহ্ তা’আলার সাহায্য ব্যতীত (নেকী করিবার এবং বদী হইতে বাঁচিবার) কোন যোগ্যতা ও ক্ষমতা নাই।”

নবী করীম (সাঃ) বলিলেন—ওহে আবুল হাসান ! তুমি উপরোক্ত আমল তিন অথবা পাঁচ অথবা সাত জুমআয় করিবে। আল্লাহর হুকুমে তোমার উদ্দেশ্য পূর্ণ হইবে। যে সত্তা আমাকে সত্য সহকারে পাঠাইয়াছেন, তাঁহার শপথ ! কোন মু’মিন ব্যক্তি উক্ত আমল করিলে সে উহার সুফল লাভ না করিয়া পারে না।

হযরত ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) বলেন— আল্লাহর কসম। পাঁচ বা সাত জুমআ অতিবাহিত হইবার পরই হযরত আলী (রাঃ) নবী করীম (সাঃ)-এর খেদমতে সেইরূপ মজলিসে উপস্থিত হইয়া আরয করিলেন—’হে আল্লাহর রাসূল ! ইতিপূর্বে আমি তিলাওয়াত করিতে যাইতাম, দেখিতাম, উহা আমার স্মৃতি হইতে তিরোহিত হইয়া গিয়াছে। অথচ এখন আমি একসঙ্গে চল্লিশ বা উহার কাছাকাছি সংখ্যক আয়াত শিখিয়া থাকি। উহা যখন মুখস্থ তিলাওয়াত করিতে যাই, তখন মনে হয়, আল্লাহর কিতাব আমার সম্মুখে খোলা রহিয়াছে। ইতিপূর্বে আমি একটি হাদীস শুনিবার পর উহা যখন স্মরণ করিতে যাইতাম, দেখিতাম, উহা আমার স্মৃতিপট হইতে অন্তর্হিত হইয়া গিয়াছে। আর বর্তমানে আমি একসাথে কতগুলি হাদীস শুনিয়া থাকি। উহা যখন স্মরণ করিতে যাই, উহার একটি বর্ণও স্মৃতিপট হইতে বিলুপ্ত পাই না।’ নবী করীম (সাঃ) তাঁহাকে বলিলেন—‘ওহে আবুল হাসান। কা’বা ঘরের প্রভুর কসম ! তুমি মু’মিন।

ইমাম তিরমিযী উপরোক্ত হাদীস বর্ণনা করিবার পর মন্তব্য করিয়াছেন- ‘উক্ত হাদীস যদিও একটি মাত্র মাধ্যমে বর্ণিত; তথাপি উহা গ্রহণযোগ্য। উপরোক্ত রাবী ওয়ালীদ ইব্‌ন মুসলিম ভিন্ন অন্য কাহারও মাধ্যমে উহা বর্ণিত হইয়াছে বলিয়া আমি জানি না।’ ইমাম তিরমিযী উক্ত হাদীস সম্বন্ধে উপরোক্ত মন্তব্য করিলেও উহা সে ওয়ালীদ ইব্‌ন মুসলিম ভিন্ন অন্য রাবীর মাধ্যমেও বর্ণিত হইয়াছে, পাঠকগণ ইতিপূর্বে তাহা দেখিয়াছেন। হাকিম তাঁহার ‘মুসতাদরাক সংকলনে উহা উক্ত রাবী ওয়ালীদ ইব্‌ন মুসলিমের মাধ্যমে বর্ণনা করত মন্তব্য করিয়াছেন—‘উক্ত হাদীসের সনদ ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম কর্তৃক নির্ধারিত হাদীস গ্রহণ সম্পর্কিত শর্তাবলী অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য। ওয়ালীদ ইব্‌ন মুসলিম স্পষ্টরূপে উল্লেখ করিয়াছেন যে, তিনি উক্ত হাদীস ইন জুরায়জ হইতে শুনিয়াছেন। অতএব, উক্ত হাদীসের সনদ নিশ্চিতভাবে ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য।’ আল্লাহ্ই সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী।

হযরত ইবন উমর (রাঃ) হইতে ধারাবাহিকভাবে নাফে’, (উবায়দুল্লাহ) আমরী, ওয়াকী— ও ইমাম আহমদ (রঃ) বর্ণনা করেন।

নবী করীম (সাঃ) বলিয়াছেন—‘কুরআন মজীদের অবস্থা হইতেছে রশি দ্বারা বাঁধা উটের অবস্থার সমতুল্য। মালিক তাহার প্রতি দৃষ্টি রাখিলে এবং উহা বাঁধিয়া রাখিলে উহা তাহার অধিকারে থাকে। পক্ষান্তরে, সে উহার প্রতি দৃষ্টি না রাখিলে এবং উহা ছাড়িয়া দিলে উহা তাহার অধিকারের বাহিরে চলিয়া যায়।’ ইমাম আহমদ আবার উহা উপরোক্ত রাবী উবায়দুল্লাহ আমরী হইতে উপরোক্ত বিভিন্ন উর্ধ্বতন সনদাংশে এবং উবায়দুল্লাহ আমরী হইতে ধারাবাহিকভাবে মুহাম্মদ ইব্‌ন উবায়দ ও ইয়াহিয়া ইব্‌ন সাঈদের ভিন্নরূপ অধস্তন সনদাংশে বর্ণনা করিয়াছেন। ইমাম আহমদ আবার উহা হযরত ইব্‌ন উমর (রাঃ) হইতে ধারাবাহিকভাবে আবদুর রায্যাকের সনদে নাফে’, আইয়ুব ও মা’মারও প্রায় অনুরূপ অর্থে বর্ণনা করিয়াছেন।

হযরত ইব্‌ন উমর (রাঃ হইতে ধারাবাহিকভাবে আবদুল্লাহ ইব্‌ন দীনার, মূসা‘আর, হামীদ ইব্‌ন হাম্মাদ ইব্‌ন আবুল হাওয়ার, মুহাম্মদ ইব্‌ন মা’মার ও হাফিজ (আবূ বকর) আল-বায্যার বর্ণনা করেনঃ

‘একদা নবী করীম (সাঃ) জিজ্ঞাসিত হইলেন—কোন্ ব্যক্তির কিরাআত সর্বোত্তম? নবী করীম (সাঃ) বলিলেন—’যাহার কিরাআত শুনিলে মনে হয় যে, সে আল্লাহকে ভয় করে, তাহার কিরাআত সর্বোত্তম কিরাআত।’

হযরত আবদুল্লাহ ইব্‌ন আমর (রাঃ) হইতে ধারাবাহিকভাবে যর, আসিম, সুফিয়ান, আবদুর রহমান ও ইমাম আহমদ বর্ণনা করিয়াছেনঃ

নবী করীম (সাঃ) বলিয়াছেন—'(কিয়ামতের দিন) কুরআন মজীদের ধারক, সংরক্ষক ও বাস্তবায়নকারীকে বলা হইবে, তুমি উহা পড়িতে থাকো এবং (জান্নাতের সিঁড়ি দিয়া) উপরে উঠিতে থাকো। আর তুমি দুনিয়াতে যেরূপে ধীরগতিতে সুন্দর করিয়া তিলাওয়াত করিতে, সেইরূপেই তিলাওয়াত করিবে। তুমি সর্বশেষ আয়াত (জান্নাতের) যে স্তর বা মনযিলে তিলাওয়াত করিবে, উহাই তোমার মনযিল বা বাসস্থান হইবে।’

হযরত আবদুল্লাহ ইব্‌ন আমর (রাঃ) হইতে ধারাবাহিকভাবে আবূ আবদুর রহমান হাবলী, হাই ইব্‌ন আবদুল্লাহ, ইব্‌ন লাহীআ, হাসান ও ইমাম আহমদ বর্ণনা করেনঃ

একদা জনৈক ব্যক্তি নবী করীম (সাঃ)-এর খেদমতে হাযির হইয়া আরয করিল—হে আল্লাহর রাসূল ! আমি কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করি; কিন্তু আমার স্মৃতি উহা ধরিয়া রাখিতে পারে না। নবী করীম (সাঃ) বলিলেন—’তোমার অন্তরের ঈমান অপর্যাপ্ত ও অপ্রতুল ৷ বান্দা কুরআন মজীদ লাভ করিবার পূর্বে ঈমান লাভ করিয়া থাকে।’ ইমাম আহমদ উপরোক্ত সনদেই বর্ণনা করেনঃ

একদা এক লোক তাহার এক পুত্রকে লইয়া নবী করীম (সাঃ)-এর খেদমতে হাযির হইল। লোকটি আরয করিল—হে আল্লাহর রাসূল ! আমার পুত্র দিনের বেলায় কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করে এবং রাত্রিবেলায় ঘুমাইয়া থাকে। নবী করীম (সাঃ) বলিলেন—’তুমি তাহার মধ্যে কি দোষ দেখিতেছ? সে তো দিনের বেলায় আল্লাহর যিকিরে মশগুল থাকে এবং গুনাহমুক্ত অবস্থায় রাত্রি যাপন করে।’

হযরত আবদুল্লাহ ইব্‌ন আমর (রাঃ) হইতে ধারাবাহিকভাবে আবূ আবদুর রহমান, হাই, ইব্‌ন লাহীআ, মূসা ইব্‌ন দাউদ ও ইমাম আহমদ বর্ণনা করেনঃ

নবী করীম (সাঃ) বলিয়াছেন—সিয়াম এবং কুরআন মজীদ কিয়ামতের দিনে বান্দার জন্যে আল্লাহ্ তা’আলার নিকট সুপারিশ করিবে। সিয়াম বলিবে—হে প্রভু ! আমি তাহাকে দিনের বেলায় খাদ্য পানীয় গ্রহণ এবং যৌন বাসনা চরিতার্থকরণ হইতে বিরত রাখিয়াছি। অতএব তাহার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবূল করো। পক্ষান্তরে কুরআন মজীদ বলিবে, আমি তাহাকে রাত্রিবেলায় নিদ্রা হইতে বিরত রাখিয়াছি। অতএব তাহার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবূল করো। উভয়ের সুপারিশই গৃহীত হইবে।’

হযরত আবদুল্লাহ ইব্‌ন আমর (রাঃ) হইতে আবদুর রহমান ইবন জুবায়র, ইব্‌ন লাহীআ, হাসান ও ইমাম আহমদ বর্ণনা করেনঃ

নবী করীম (সাঃ) বলিয়াছেন- ‘আমার উম্মতের অধিকাংশ কারী হইবে মুনাফিক।’

নবী করীম (সাঃ) বলিয়াছেন— ‘কুরআন মজীদকে তোমরা শুদ্ধ ও সুস্পষ্ট করিয়া তিলাওয়াত করিও এবং উহার গভীর তাৎপর্যসমূহ বুঝিতে চেষ্টা করিও।’

হযরত ফুযালা ইবন উবায়দ ও হযরত তামীম দারী হইতে ধারাবাহিকভাবে কাসিম, আবূ আবদুর রহমান, ইয়াহিয়া ইব্‌ন হারিছ মিযমারী, ইসমাঈল ইব্‌ন আব্বাস, মুহাম্মদ ইব্‌ন বুকায়র হারামী, মূসা ইব্‌ন হাযিম ইস্পাহানী ও ইমাম আবুল কাসিম তাবারানী বর্ণনা করিয়াছেনঃ

নবী করীম (সাঃ) বলিয়াছেন—’যে ব্যক্তি রাত্রিতে দশটি আয়াত তিলাওয়াত করিবে, তাহার আমলনামায় এক কিনতার পরিমাণ নেকী লেখা হইবে। এক কিনতার পরিমাণ নেকী দুনিয়া ও উহাতে যাহা আছে, তাহা অপেক্ষা অধিকতর মূল্যবান। কিয়ামতের দিন তোমার প্রভু বলিবেন—’তুমি তিলাওয়াত করিতে থাকো আর প্রতিটি আয়াতের পরিবর্তে (জান্নাতের) একটি স্তর উপরে উঠিতে থাকো।’ বান্দা যখন তাহার নিকট রক্ষিত সর্বশেষ আয়াতটির তিলাওয়াত সম্পন্ন করিবে, তখন তোমর প্রভু বলিবেন—’তুমি স্বীয় অধিকারে উহা গ্রহণ করো এবং দখল লও।’ বান্দা তখন স্বীয় হস্তের ইঙ্গিতে আরয করিবে—প্রভু হে ! তুমি তো শ্রেষ্ঠতম জ্ঞানী। (অর্থাৎ আমি কতটুকু অংশের দখল লইব, তাহা তো জানি না, বরং উহা সম্বন্ধে তুমিই শ্রেষ্ঠতম জ্ঞানী।) তোমার প্রভু বলিবেন—‘তুমি এই সম্পূর্ণ জান্নাত ও উহার নিয়ামতের পরিপূর্ণ দখল লও।’

تمت بالخير

‘ফাযায়েলুল কুরআন’ অধ্যায় সমাপ্ত হইল এবং এতদ্বারা ‘তাফসীরুল কুরআন’ অধ্যায়ের উদ্বোধন করা হইল।

وَاللهُ الْمُسْتَعَانُ عَلَى مَا تَصِفُونَ

error: Content is protected !!