কথিত আছে, খলীফা আবদুল মালিক ইব্ন মারওয়ান কুরআন মজীদে নুকতা লাগাইবার জন্যে সর্বপ্রথম নির্দেশ প্রদান করেন। তাহার নির্দেশে হাজ্জাজ বিন ইউসুফ কুরআন মজীদের অক্ষরসমূহ নুকতা দ্বারা চিহ্নিত করিবার কার্যে প্রবৃত্ত হন। হাজ্জাজ তখন ওয়াসিত নামক অঞ্চলের শাসনকর্তা ছিলেন। তিনি হযরত হাসান বসরী ও হযরত ইয়াহিয়া ইব্ন ইয়ামারকে উক্ত কার্যে নিয়োজিত করেন। তাঁহারা উহা সম্পন্ন করেন। ইহাও কথিত আছে- আবুল আসওয়াদ দুয়েলী সর্বপ্রথম কুরআন মজীদের অক্ষরসমূহ নুকতা দ্বারা চিহ্নিত করেন । কেহ কেহ উল্লেখ করিয়াছেন- মুহাম্মদ ইব্ন সীরীনের একখানা কুরআন মজীদ ছিল। ইয়াহিয়া ইব্ন ইয়ামা’র উহার অক্ষরসমূহকে নুকতা দ্বারা চিহ্নিত করিয়া তাহাকে উহা প্রদান করিয়াছিলেন। আল্লাহ্ই সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী।
কুরআন মজীদের পার্শ্বদেশে দশমাংশসূচক চিহ্ন সর্বপ্রথম কে লাগাইয়াছিলেন, সে সম্বন্ধেও ইতিহাসকারদের মধ্যে মতভেদ রহিয়াছে। কেহ কেহ বলেন- উহাও হাজ্জাজ কর্তৃক সংযোজিত হইয়াছিল । আবার কেহ কেহ বলেন- খলীফা মামূন সর্বপ্রথম উক্ত কার্য সম্পাদন করেন। আবূ আমর দানী বর্ণনা করিয়াছেনঃ হযরত ইবন মাসউদ (রাঃ) কুরআন মজীদে দশমাংশসূচক চিহ্ন লাগানোকে অপছন্দ করিতেন। তিনি উহা ঘষিয়া উঠাইয়া দিতেন। মুজাহিদও উহা অপছন্দ করিতেন। ইমাম মালিক বলেন- ‘কুরআন মজীদে কালি দ্বারা দশমাংশসূচক চিহ্ন লাগানোতে কোন দোষ নাই; তবে ভিন্ন রং দ্বারা উহা করা সঙ্গত নহে। মূল কুরআন মজীদে সূরাসমূহের প্রথম দিকে উহাদের আয়াতের সংখ্যা লিখিয়া রাখাকে আমি পছন্দ করি না; তবে ছোট ছোট বালক-বালিকা কুরআন মজীদের যে (খণ্ডিত বা সম্পূর্ণ) সংস্করণ দেখিয়া শিক্ষা লাভ করিয়া থাকে, তাহাতে উহা ঐরূপে লিখিয়া রাখার দোষ নাই।(১) কাতাদাহ বলেন- ‘লোকগণ প্রথমে কুরআন মজীদের অক্ষরসমূহের নুকতা লাগাইয়াছে; অতঃপর উহাতে পঞ্চমাংশের চিহ্ন ও পরে দশমাংশের চিহ্ন লাগাইয়াছে।’ ইয়াহিয়া ইব্ন কাছীর বলেন- মানুষ কুরআন মজীদের অক্ষরসমূহে প্রথমে নুকতা লাগাইয়াছে। উহা অক্ষরের নূর। অতঃপর তাহারা আয়াতের শেষে নুকতা লাগাইবার ব্যবস্থা উদ্ভাবন করিয়াছে। অতঃপর তাহারা কুরআন মজীদ ও উহার সূরাসমূহের প্রারম্ভে প্রারম্ভিক দোয়া এবং উহার সূরাসমূহের শেষে সমাপ্তিকালীন দোয়া সংযোজিত করিয়া দিয়াছে। ইবরাহীম নাখঈ একদা একটি সূরার প্রারম্ভে প্রারম্ভিক দোয়া লিখিত দেখিয়া উহা মুছিয়া ফেলিতে নির্দেশ দিলেন। তিনি বলিলেন- হযরত ইব্ন মাসউদ (রাঃ) বলিয়াছেন- কুরআন মজীদ বহির্ভূত কোন কথা তোমরা কুরআন মজীদের সহিত মিলাইয়া দিও না। আবূ আমর দানী বলেন- পরবর্তীকালে মুসলমানগণ কুরআন মজীদের সকল সংস্করণে বিভিন্ন প্রকারের চিহ্ন লাগাইবার বিষয়ে একমত হইয়াছেন। তাহারা উহাকে জায়েয ও বৈধ বলিয়া গ্রহণ করিয়াছেন।