হযরত উসায়দ ইব্ন হুযায়র (রাঃ) হইতে ধারাবাহিকভাবে মুহাম্মদ ইব্ন ইবরাহীম, যায়দ ইব্ন হা’দ, লায়ছ ও ইমাম বুখারী (রঃ) বর্ণনা করিয়াছেনঃ
একদা রাত্রিকালে উসায়দ ইব্ন হুযায়ের সূরা বাকারা তিলাওয়াত করিতেছিলেন। তাঁহার ঘোড়াটি তখন নিকটেই বাঁধা ছিল। সহসা উহা চতুর্দিকে লাফ দিতে লাগিল। তিনি চুপ করিলেন। ঘোড়াটিও থামিয়া গেল। তিনি আবার তিলাওয়াত করিতে লাগিলেন । ঘোড়াটিও আবার লাফাইতে লাগিল । তিনি চুপ করিলেন। ঘোড়াটিও থামিল। তিনি পুনরায় তিলাওয়াত করিতে লাগিলেন। ঘোড়াটিও পুনরায় লাফাইতে লাগিল। এবার তিনি (তিলাওয়াত ত্যাগ করিয়া ঘোড়াটির কাছে) ফিরিয়া আসিলেন। তাঁহার পুত্র ইয়াহিয়া ঘোড়াটির কাছে ছিল। তাঁহার মনে আশংকা হইয়াছিল, ঘোড়াটি তাঁহার পুত্রকে পদদলিত করিতে পারে। তিনি তাহাকে টানিয়া লইয়া আকাশের দিকে দৃষ্টিপাত করিলেন।……………. এক সময়ে উহা অদৃশ্য হইয়া গেল।(১) সকাল বেলায় তিনি নবী করীম (সাঃ)-এর খেদমতে ঘটনাটি বর্ণনা করিলেন। নবী করীম (সাঃ) বলিলেন— ‘ওহে ইব্ন হুযায়র! তুমি তিলাওয়াত করিতে থাকিলে না কেন? ওহে ইব্ন হুযায়র! তুমি তিলাওয়াত করিতে থাকিলে না কেন?’ হযরত উসয়দ ইবন হুযায়র বলিলেন- আমি আশংকা করিলাম যে, ঘোড়াটি (আমার পুত্র) ইয়াহিয়াকে পদদলিত করিবে। সে ঘোড়াটির কাছেই ছিল। আমি মস্তক উত্তোলিত করিয়া তাহার (স্বীয় পুত্রের) নিকট গেলাম । তথায় আমি আকাশের দিকে দৃষ্টিপাত করিয়া দেখিতে পাইলাম, ঊর্ধ্বে চাঁদোয়ার মত
একটি বস্তু রহিয়াছে। উহাতে লণ্ঠনের ন্যায় কতগুলি বস্তু (ঝুলন্ত) রহিয়াছে। আমি বাহিরে আসিবার পর উহা আর দেখিতে পাইলাম না। নবী করীম (সাঃ) বলিলেন— ‘উহা কি তাহা কি তুমি জান?’ হযরত উসায়দ (রাঃ) বলিলেন- (ইয়া রাসূলাল্লাহ্ !) তাহা আমি জানি না।’ নবী করীম (সাঃ) বলিলেন- ‘উহারা ছিলেন ফেরেশতা। উহারা তোমার কণ্ঠস্বর শুনিবার জন্যে নিকটে আগমন করিয়াছিলেন। তুমি সকাল বেলা পর্যন্ত তিলাওয়াত অব্যাহত রাখিলে লোকে সকাল বেলায় তাঁহাদিগকে দেখিতে পাইত। তাঁহারা তখন লোকদের নিকট হইতে পর্দার অন্তরালে থাকিতেন না।’ উক্ত রিওয়ায়েতের অন্যতম রাবী যায়দ ইবন হাদী বলেন- হযরত উসায়দ ইব্ন হুযায়র হইতে ধারাবাহিকভাবে হযরত আবূ সাঈদ খুদরী ও আবদুল্লাহ্ ইব্ন খাব্বাব (রাঃ) আমার নিকট উপরোক্ত রিওয়ায়েত বর্ণনা করিয়াছেন।
ইমাম বুখারী (রঃ) উপরোক্ত হাদীস উপরোক্ত রূপেই বিচ্ছিন্ন সনদে বর্ণনা করিয়াছেন। উক্ত হাদীসের উপরোক্ত দুইটি সনদের প্রথম সনদে দুইটি স্থানে বিচ্ছিন্নতা রহিয়াছেঃ প্রথমত, মুহাম্মদ ইব্ন ইবরাহীম তাবেঈ এবং হযরত উসায়েদ ইবন হু্যায়ের- এই দুইয়ের মধ্যে সাক্ষাৎ লাভ ঘটে নাই। মুহাম্মদের পরিচয় হইতেছে মুহাম্মদ ইবন ইবরাহীম ইব্ন হারিছ তায়মী মাদানী তাবেঈ । তিনি হিজরী বিশ সনে অল্প বয়সেই মারা যান। হযরত উমর (রাঃ) তাঁহার জানাযার নামাযে ইমামতী করেন। দ্বিতীয়ত, লায়ছ যেহেতু ইমাম বুখারীর উস্তাদ নহেন, তাই উক্ত হাদীস তিনি লায়ছের নিকট হইতে সরাসরি শুনেন নাই।
ইমাম বুখারীও বলেন নাই— ‘লায়ছ আমার নিকট বর্ণনা করিয়াছেন।’ বরং তিনি বলিয়াছেন- ‘লায়ছ বলিয়াছেন।’ অতএব সনদের এই স্থলেও বিচ্ছিন্নতা রহিয়াছে। ইমাম বুখারী বিচ্ছিন্ন সনদে হাদীস বর্ণনা করিবার কালে এইরূপ বাকধারা খুব কমই প্রয়োগ করিয়া থাকেন। হাফিজ আবুল কাসিম ইবন আসাকির স্বীয় ‘আতরাফ’ পুস্তকে অবশ্য উক্ত হাদীস লায়ছ নামক রাবীর পর্যায়ে অবিচ্ছিন্নভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি বলিয়াছেন- ‘লায়ছ হইতে ইয়াহিয়া ইব্ন আব্দুল্লাহ্ ইব্ন বুকায়র উহা উপরোক্ত রূপে বর্ণনা করিয়াছেন।’ আমি (ইবন কাছীর) উহা অন্য কোথাও উহার সনদের অন্যতম রাবী লায়েছের পর্যায়ে অবিচ্ছিন্নরূপে দেখিতে পাই নাই ।
ইমাম আবূ উবায়দ ‘ফাযায়েলুল কুরআন’ পুস্তকে বলিয়াছেনঃ হযরত উসায়দ ইব্ন হুযায়র হইতে ধারাবাহিকভাবে মুহাম্মদ ইব্ন ইবরাহীম ইব্ন হারিছ তায়মী, ইয়াযীদ ইব্ন আবদুল্লাহ্ ইব্ন উসামাহ ইব্ন হাদী, লায়ছ, আবদুল্লাহ্ ইব্ন সালিক ও ইয়াহিয়া ইব্ন বুকায়র আমার নিকট বর্ণনা করিয়াছেনঃ (অতঃপর রাবী উপরোক্ত হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন)। ইমাম আবূ উবায়দ অতঃপর বলিয়াছেন- হযরত উসায়দ ইব্ন হুযায়র হইতে ধারাবাহিকভাবে হযরত আবূ সাঈদ, আবদুল্লাহ্ ইব্ন খাব্বাবও আমার নিকট উপরোক্ত হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।’ হযরত উসায়দ ইব্ন হুযায়র হইতে ধারাবাহিকভাবে হযরত আবূ সাঈদ, আবদুল্লাহ্ ইব্ন খাব্বাব, ইয়াযীদ ইব্ন আবদুল্লাহ্ (ইব্ন হাদী), সাঈদ ইব্ন আবূ হিলাল, খালিদ ইব্ন ইয়াযীদ লায়ছ, দাউদ ইব্ন মানসূর, শুআয়ব ইব্ন লায়ছ এবং আলী ইব্ন মুহাম্মদ ইব্ন আলী, মুহাম্মদ ইব্ন আবদুল্লাহ্ ইব্ন আবদুল হাকাম ও ইমাম নাসাঈ উহা ‘ফাযায়েলুল কুরআন’ পুস্তকে বর্ণনা করিয়াছেন। লায়ছ হইতে উপরোক্ত ঊর্ধ্বতন সনদাংশে এবং লায়ছ হইতে ধারাবাহিকভাবে ইয়াহিয়া ইব্ন বুকায়রের অধস্তন সনদাংশেও ইমাম নাসাঈ উহা উক্ত পুস্তকে বর্ণনা করিয়াছেন । অতএব দেখা যাইতেছে, ইমাম নাসাঈ উক্ত পুস্তকে উহা দুইটি সনদে বর্ণনা করিয়াছেন। হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) হইতে ধারাবাহিকভাবে আবদুল্লাহ্ ইব্ন খাব্বাব, ইয়াযীদ ইব্ন হাদী, ইবরাহীম, ইয়া’কুব ইব্ন ইবরাহীম, আহমদ ইব্ন সাঈদ রিবাতী ও ইমাম নাসাঈ উহা ‘সাহাবীগণের ব্যক্তিগত গুণাবলী’ নামক পুস্তকেও বর্ণনা করিয়াছেন । উহাতে বর্ণিত হইয়াছেঃ ‘হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন- ‘একদা উসায়দ ইব্ন হুযায়র (রাঃ) স্বীয় অশ্বশালায় কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করিতেছিলেন ।… … … । উহাতে একথা উল্লেখিত নাই যে, হযরত আবূ সাঈদ (রাঃ) হযরত উসায়দ ইব্ন হুযায়র (রা) হইতে উহা বর্ণনা করিয়াছেন । তবে বাহ্যত উহাই মনে হয় । আল্লাহ্ই সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী।
হযরত উসায়দ ইব্ন হুযায়র (রাঃ) হইতে ধারাবাহিকভাবে ইবন কা’ব, ইবন মালিক, ইব্ন শিহাব, লায়ছ, আবদুল্লাহ্ ইব্ন সালেহ ও ইমাম আবূ উবায়দ বর্ণনা করিয়াছেনঃ হযরত উসায়দ বলেন যে, ‘একদা তিনি স্বীয় একদা তিনি স্বীয় গৃহের উন্মুক্ত স্থানে বসিয়া কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করিতেছিলেন । তাঁহার কণ্ঠস্বর ছিল মধুর। অতঃপর রাবী পূর্বে বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা প্রদান করিয়াছেন।
হযরত উসায়দ ইব্ন হুযায়র (রাঃ) হইতে ধারাবাহিকভাবে আবদুর রহমান ইব্ন আবূ লায়লা, ছাবিত বান্নাঈ, হাম্মাদ ইব্ন সালমাহ কুবায়সা ও ইমাম বুখারী (রঃ) বর্ণনা করিয়াছেনঃ হযরত উসায়দ (রাঃ) বলেন- একদা আমি নবী করীম (সাঃ)-এর খেদমতে আরয করিলাম হে আল্লাহ্র রাসূল ! গত রাত্রিতে আমি একটি সূরা তিলাওয়াত করিতেছিলাম। উহা শেষ করিবার পর আমি আমার পশ্চাতে ধপাস করিয়া কোন কিছুর পড়িয়া যাইবার শব্দ শুনিতে পাইলাম। আমি ভাবিলাম, আমার ঘোড়াটি হাঁটিতেছে। নবী করীম (সাঃ) বলিলেন- ওহে আবূ উসায়দ ! তুমি বলিতে থাকো। তিনি ইহা দুইবার বলিলেন। হযরত উসায়দ বলিলেনঃ(১) আমি তাকাইয়া দেখি, আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যবর্তী স্থানে লণ্ঠনের মত কতগুলি বস্তু রহিয়াছে। নবী করীম (সাঃ) বলিলেন- ওহে আবূ উসায়দ। তুমি বলিতে থাক। হযরত উসায়দ বলিলেন- আল্লাহর কসম ! আমি আর বলিতে পারিলাম না। নবী করীম (সাঃ) বলিলেন— ‘উহারা ছিলেন ফেরেশতা। উহারা কুরআন মজীদের তিলাওয়াত শ্রবণের উদ্দেশ্যে অবতীর্ণ হইয়াছিলেন । তুমি তোমার তিলাওয়াত কার্য চালাইয়া গেলে আশ্চর্যকর বিষয়সমূহ দেখিতে পাইতে।’
আবূ ইসহাক হইতে ধারাবাহিকভাবে শু’বা ও ইমাম আবূ দাউদ তায়ালেসী (রঃ) বর্ণনা করিয়াছেন যে, আবূ ইসহাক হযরত বারা (রাঃ)-কে এইরূপ বলিতে শুনিয়াছেনঃ একদা রাত্রিকালে এক লোক সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করিতেছিল। সহসা সে স্বীয় বাহন অথবা অশ্বকে লাফাইতে দেখিল। সে লক্ষ্য করিয়া দেখিল, (ঊর্ধ্বে) একখণ্ড মেঘের মতো কি যেন রহিয়াছে। লোকটি উক্ত ঘটনা নবী করীম (সাঃ)-এর নিকট বর্ণনা করিলে তিনি বলিলেন— “উহা ছিল সাকীনাহ (প্রশান্তি)। উহা কুরআন মজীদের উদ্দেশে অথবা কুরআন মজীদের উপর নাযিল হইয়াছিল ।’ ইমাম বুখারী এবং ইমাম মুসলিম (রঃ)-ও উহা উপরোক্ত রাবী শু’বার মাধ্যমে বর্ণনা করিয়াছেন। বাহ্যত প্রতীয়মান হয় যে, উক্ত লোকটি ছিলেন, হযরত উসায়দ ইব্ন হুযায়র (রাঃ)। এই বিষয়টি সনদ শাস্ত্রের সহিত সম্পর্কিত। ইমাম বুখারী কর্তৃক বর্ণিত বিচ্ছিন্ন সনদের হাদীসসমূহের মধ্যে উপরোক্ত হাদীস হইতেছে অতি বিরল বর্ণনাভঙ্গিতে বর্ণিত। তিনি উহা
ব্যতিক্রমধর্মী বর্ণনাভঙ্গিতে বর্ণনা করিয়াছেন। অতঃপর লক্ষণীয় যে, উক্ত হাদীসের বক্তব্য বিষয় বক্ষ্যমান পরিচ্ছেদের ইমাম বুখারী (রঃ) কর্তৃক প্রদত্ত ‘কুরআন মজীদের তিলাওয়াতের সময়ে রহমতের ফেরেশতার অবতরণ’ এই শিরোনামে বিধৃত হইয়াছে। এই প্রসঙ্গে আরও উল্লেখ করা যাইতে পারে যে, হযরত উসায়দের উপরোক্ত ঘটনার অনুরূপ একটি ঘটনা হযরত ছাবিত ইব্ন কয়স ইব্ন শাম্মাসের বেলায়ও ঘটিয়াছিল। জারীর ইবন ইয়াযীদ হইতে ধারাবাহিকভাবে জারীর ইব্ন হাযিম (জারীর ইবন ইয়াযীদের ভ্রাতুষ্পুত্র) ইবাদ ইব্ন উব্বাদ ও ইমাম আবূ উবায়দ বর্ণনা করিয়াছেনঃ জারীর ইবন ইয়াযীদ বলেন- মদীনার বৃদ্ধেরা তাঁহার নিকট বর্ণনা করিয়াছেন যে, একদা নবী করীম (সাঃ)-এর নিকট আরয করা হইল— হে আল্লাহ্র রাসূল ! আপনি কি শুনেন নাই যে, গত রাত্রিতে সারাক্ষণ ছাবিত ইব্ন কয়স ইন শাম্মাসের গৃহ আলোকমালায় সুসজ্জিত ছিল? নবী করীম (সাঃ) বলিলেন- ‘তবে সে হয়ত সূরা বাকারা তিলাওয়াত করিয়াছিল।’ অতঃপর ছাবিতের নিকট এ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করা হইলে তিনি বলিলেন- ‘আমি সূরা বাকারা তিলাওয়াত করিয়াছিলাম।’
‘কোন জামাআত আল্লাহ্র কোন ঘরে একত্রিত হইয়া যদি তাঁহার কিতাব তিলাওয়াত’ করে এবং একজন আরেকজনকে উহা শিক্ষা দেয়, তবে তাহাদের উপর নিশ্চিতভাবে প্রশান্তি নাযিল হয়, তাহাদিগকে রহমত বেষ্টন করিয়া লয়, ফেরেশতাগণ তাহাদিগকে ঘিরিয়া রাখে এবং যাহারা আল্লাহ্ তা’আলার নিকট রহিয়াছেন, তিনি তাহাদের নিকট সেই জামাআতের লোকদের বিষয় আলোচনা করেন।’ ইমাম মুসলিম (রঃ) উহা হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন । আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
وقران الفجر ط اث قران الفجر كان مشِهودًا
‘আর তুমি ফজরে কুরআন তিলাওয়াত করো; ফজরের তিলাওয়াত নিশ্চয় পর্যবেক্ষিত হইয়া থাকে ।’
কোন কোন তাফসীরকার উক্ত আয়াতের তাফসীরে বর্ণনা করিয়াছেন- ‘ফেরেশতাগণ ফজরের তিলাওয়াত প্রত্যক্ষ করিয়া থাকেন।’ বুখারী ও মুসলিম শরীফে হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) হইতে বর্ণিত হইয়াছেঃ নবী করীম (সাঃ) বলিয়াছেন- তোমাদের নিকট ফেরেশতাগণ রাত্রিতে ও দিনে পালাক্রমে আগমন করেন। তাঁহারা উভয় দলই ফজরের নামাযে এবং আসরের নামাযে (তোমাদের নিকট) একত্রিত হন। কোন দল যখন তোমাদের নিকট থাকিবার পর তাঁহার (আল্লাহ্ তা’আলার) নিকট প্রত্যাবর্তন করে; তখন তিনি তাঁহাদের নিকট জিজ্ঞাসা করেন— অবশ্য তিনি তোমাদের অবস্থা সম্বন্ধে সর্বোত্তম অবগত রহিয়াছেন- তোমরা আমার বান্দাদিগকে কোন অবস্থায় দেখিয়া আসিয়াছ? তাঁহারা বলেন- ‘আমরা তাহাদের নিকট গিয়া তাহাদিগকে নামায আদায়রত অবস্থায় পাইয়াছি; আবার তাহাদের নিকট হইতে প্রত্যাবর্তন করিবার কালে তাহাদিগকে নামায আদায়রত অবস্থায় দেখিয়া আসিয়াছি।
তিনি দুই মলাটের মধ্যে রক্ষিত কিতাব ভিন্ন অন্য কিছুই রাখিয়া যান নাই
আবদুল আযীয ইব্ন রফী’ হইতে ধারাবাহিকভাবে সুফিয়ান, কুতায়বা ইব্ন সাঈদ ও ইমাম বুখারী (রঃ) বর্ণনা করিয়াছেনঃ আবদুল আযীয ইব্ন রফী’ বলেন- একদা শাদ্দাদ ইব্ মা’কাল এবং আমি হযরত ইব্ন আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট গমন করিলাম। শাদ্দাদ ইব্ন মা’কাল তাঁহার নিকট জিজ্ঞাসা করিলেন- নবী করীম (সাঃ) কি কোন সম্পত্তি রাখিয়া যান নাই।’ আবদুল আযীয ইব্ন রফী’ বলেন- আমরা মুহাম্মদ ইব্ন হানফিয়ার নিকট গমন করত তাঁহার নিকট সেই একই প্রশ্ন করিলে তিনিও বলিলেন— ‘নবী করীম (সাঃ) দুই মলাটের মধ্যে রক্ষিত কিতাব ভিন্ন অন্য কিছুই রাখিয়া যান নাই ৷ ‘
উক্ত রিওয়ায়েতটি শুধু ইমাম বুখারী বর্ণনা করিয়াছেন। ইমাম মুসলিম উহা বর্ণনা করেন নাই। উহার তাৎপর্য এই যে, নবী করীম (সাঃ) এইরূপ কোন ধন-সম্পত্তি রাখিয়া যান নাই যাহা উত্তরাধিকারের নিয়মে বণ্টিত হইতে পারে। এইরূপে জুওইরিয়ার ভ্রাতা আমর ইব্ন হারিছও বলেন— নবী করীম (সাঃ) দীনার, দিরহাম, দাস-দাসী বা অন্য কোন ধন-সম্পত্তি রাখিয়া যান নাই। হযরত আবূ দারদা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে রহিয়াছেঃ ‘নবীগণ দীনার-দিরহামকে উত্তরাধিকারের সম্পত্তি হিসাবে রাখিয়া যান নাই; তাঁহারা শুধু দীনী ইলমকে উত্তরাধিকারের সম্পদ হিসাবে রাখিয়া গিয়াছেন। যে ব্যক্তি উহা গ্রহণ করে, সে বিরাট সৌভাগ্যই গ্রহণ করে।’ এই কারণেই হযরত ইব্ন আব্বাস (রাঃ) বলিয়াছেন— ‘নবী করীম (সাঃ) দুই মলাটের মধ্যে রক্ষিত কিতাব রাখিয়া গিয়াছেন।’ দুই মলাটের মধ্যে রক্ষিত কিতাব হইতেছে কুরআন মজীদ। সুন্নাহ হইতেছে, কুরআন মজীদের ব্যাখ্যা। উহা কুরআন মজীদের অধীন ও অনুসারী। মুখ্য কাম্য বস্তু হইতেছে কুরআন মজীদ। তাই আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
شم أوْرمْنًا الكتاب الَّذْيْنَ اصطفينًا من عبادنًا (স্বীয় বান্দাদের মধ্য হইতে যাহাদিগকে আমি মনোনীত করিয়া লইয়াছি, অতঃপর তাহাদিগকে কিতাবের উত্তরাধিকারী বানাইয়াছি।)
দুনিয়ার ধন-সম্পত্তি জমা করিবার এবং উহা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্তব্য সম্পদ হিসাবে রাখিয়া যাইবার জন্যে আম্বিয়ায়ে কিরাম সৃষ্ট হন নাই। তাঁহারা সৃষ্ট হইয়াছেন আখিরাতের জন্যে। তাঁহাদের ব্রত হইতেছে মানুষকে আখিরাতের দিকে আহ্বান করা এবং তৎপ্রতি তাহাদের মনে আগ্রহ ও অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করা। এই কারণেই নবী করীম (সাঃ) বলিয়াছেন- ‘আমরা নবীগণ যে পার্থিব সম্পত্তি রাখিয়া যাই, তাহা সাদকা হিসাবে বণ্টিত হইয়া থাকে ৷’ নবী করীম (সাঃ)-এর উক্ত মহৎ গুণকে উপরোক্ত পন্থায় হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রা) সর্বপ্রথম প্রকাশ করিয়াছেন। একদা তাঁহার নিকট নবী করীম (সাঃ)-এর মীরাছ (উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্তব্য সম্পত্তি) সম্বন্ধে প্রশ্ন করা হইলে তিনি নবী করীম (সাঃ)-এর উপরোক্ত বাণী প্ৰকাশ করিয়াছিলেন । তাঁহার ন্যায় একাধিক সাহাবী উপরোক্ত হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন । হযরত উমর, হযরত উসমান, হযরত আলী, হযরত আব্বাস, হযরত তালহা, হযরত যুবায়র, হযরত আবদুর রহমান ইব্ন আওফ, হযরত আবূ হুরায়রা, হযরত আয়েশা (রাঃ) প্রমুখ সাহাবীর নাম তাঁহাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য । হযরত ইব্ন আব্বাস (রাঃ)-ও অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।