হযরত আবূ মাসউদ উতবা ইবন আমর আনসারী বদরী (রাঃ) হইতে ধারাবাহিকভাবে আলকামা, আবদুর রহমান ইবন ইয়াযীদ, ইবরাহীম, আ’মাশ, হাফস ইব্‌ন গিয়াছ, উমর ইবন হাফস ইব্‌ন গিয়াছ ও ইমাম বুখারী বর্ণনা করেনঃ নবী করীম (সাঃ) বলিয়াছেন- ‘যে ব্যক্তি রাত্রিতে সূরা বাকারার শেষ দুইটি আয়াত তিলাওয়াত করে, তাহার জন্যে উহা যথেষ্ট।’

সিহাহ সিত্তার সকল সংকলকই উক্ত হাদীস উপরোক্ত রাবী আবদুর রহমান ইব্‌ন ইয়াযীদ হইতে উপরোক্ত অভিন্ন ঊর্ধ্বতন সনদাংশে এবং বিভিন্ন অধস্তন সনদাংশে বর্ণনা করিয়াছেন। ইমাম বুখারী, ইমাম মুসলিম, ইমাম নাসাঈ এবং ইমাম ইব্‌ন মাজাহ (রঃ) উহা আবার উপরোক্ত রাবী আলকামা হইতে উপরোক্ত অভিন্ন ঊর্ধ্বতন সনদাংশে এবং বিভিন্ন অধস্তন সনদাংশে বর্ণনা করিয়াছেন।

উমর (রাঃ) হইতে ধারাবাহিকভাবে মূসাওয়ার আবদুর রহমান ইব্‌ন আবদুল কারী, উরওয়া ও যুহরী প্রমুখ রাবীর সনদে ইমাম বুখারী (রঃ) বর্ণনা করিয়াছেন যে, উমর (রাঃ) বলেন- ‘একদা আমি হিশাম ইব্‌ন হাকীম ইব্‌ন হিযামকে সূরা ফুরকান তিলাওয়াত করিতে শুনিলাম। অতঃপর তিনি তাঁহার বর্ণিত দীর্ঘ হাদীসটির অবশিষ্ট অংশ বর্ণনা করিয়াছেন। ইতিপূর্বে উহা বর্ণিত হইয়াছে এবং ভবিষ্যতেও উহা বর্ণিত হইবে।

হযরত আয়েশা (রাঃ) হইতে ধারাবহিকভাবে উরওয়াহ ও হিশাম ইব্‌ন উরওয়াহ প্রমুখ রাবীর সনদে ইমাম বুখারী (রঃ) বর্ণনা করিয়াছেনঃ একদা নবী করীম (সাঃ) একটি লোককে রাত্রিতে মসজিদে কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করিতে শুনিয়া বলিলেন— ‘আল্লাহ্ তাহাকে অনুগ্রহ করুন। সে আমাকে অমুক অমুক আয়াত স্মরণ করাইয়া দিয়াছে। আমি সেইগুলি অমুক সূরা হইতে বিস্মৃত হইয়াছিলাম।

এইরূপে বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফে হযরত আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন মাসউদ (রাঃ) হইতে বর্ণিত রহিয়াছে যে, তিনি (হজ্জের সময়ে) উপত্যকা ভূমিতে দাঁড়াইয়া কংকর নিক্ষেপ করিবার কালে বলিতেন, এই স্থানে সূরা বাকারা নাযিল হইয়াছিল।

(চলমান) আল্লাহ্ তা'আলা মানুষকে শিক্ষা দিতে গিয়া বলেনঃ ربنًا لأتؤاخذنًا ان تُسيِْنا أو أَخَطّنْث (প্রভু হে। যদি ভুলিয়া যাই অথবা ভুল করি, তবে তুমি আমাদিগকে পাকড়াও করিও না।) আল্লাহ্ তা'আলা হযরত মূসা (আঃ) ও তাঁহার শিষ্যের সফরের ঘটনার বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেনঃ فَلَمًا بَلَغَا مُجْمع بَيْنهمًا نسيًا حوتهمًا (তাহারা দুইজনে দুই সমুদ্রের সঙ্গমস্থলে পৌঁছিবার পর নিজেদের মৎস্যকে ভুলিয়া গেল।) তেমনি আল্লাহ্ তা'আলা অন্যত্র বলেনঃ واذكر ربك اذا سيت (আর যখন তুমি ভুলিয়া যাও, তখন স্বীয় প্রতিপালক প্রভুকে স্মরণ কর।) এইস্থলে উহা অনুধাবনযোগ্য যে, মানুষ নিজেই ভুলিয়া যায়। ভুলের কারণ যাহাই হউক না কেন, উহা মানুষের হৃদয় হইতে আল্লাহ্ যে কুরআন মজীদ ভুলাইয়া দেয়। ইমাম ইব্‌ন কাছীর (রঃ) শেষোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় যাহা বলিয়াছেন, তাহাতে আয়াতটির অর্থ এই দাঁড়ায়ঃ আর তোমার অবহেলা যখন তোমাকে ভুলাইয়া দেয়, তখন তুমি স্বীয় প্রতিপালক প্রভুকে স্মরণ কর। এইরূপ অর্থ যে আয়াতের একটি কষ্টসাধ্য অর্থ, তাহা সহজেই বোধগম্য। উপরোল্লেখিত অপর দুইটি আয়াতের অর্থ বর্ণনা সম্বন্ধেও অনুরূপ কথা বলা চলে।

পূর্বসূরী কোন কোন ফকীহ্ অবশ্য বলিয়াছেন যে, কোন সূরাকে নির্দিষ্ট কোন নামে অভিহিত করা মাকরূহ। বরং কোন সূরাকে বুঝাইতে হইলে বলিতে হইবে- ‘যে সূরায় অমুক অমুক আয়াত রহিয়াছে, সেই সূরা। তাহাদের অভিমতের সমর্থনে তাহারা ইতিপূর্বে বর্ণিত নিম্নোক্ত হাদীস উল্লেখ করিয়াছেনঃ

‘হযরত উসমান (রাঃ) হইতে ধারাবাহিকভাবে হযরত ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) ও ইয়াযীদ ফারসী প্রমুখ রাবীর মাধ্যমে বর্ণিত হইয়াছে যে, হযরত উসমান (রাঃ) বলেন- কুরআন মজীদের কোন আয়াত নাযিল হইলে নবী করীম (সাঃ) বলিতেন- ‘যে সূরায় অমুক অমুক আয়াত রহিয়াছে, ইহা সেই সূরার অন্তর্ভুক্ত কর। ‘

ইহাতে অবশ্য সন্দেহ নাই যে, উপরোক্ত পথই অধিকতর শ্রেয়। তবে পূর্ববর্ণিত হাদীসসমূহ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সূরাসমূহকে বিশেষ বিশেষ নামে অভিহিত করা বৈধ ও অনুমোদিত। আর এই ব্যবস্থাই বর্তমান যামানায় সাধারণ ও ব্যাপক ব্যবস্থা হিসাবে গৃহীত হইয়াছে। কুরআন মজীদের সূরাসমূহ বিভিন্ন নামে আখ্যায়িত হইয়া থাকে।

error: Content is protected !!