কাতাদাহ হইতে ধারাবাহিকভাবে জারীর ইব্ন হাযিম ইযদী, মুসলিম ইব্ন ইবরাহীম ও ইমাম বুখারী বর্ণনা করিয়াছেন যে, কাতাদাহ বলেনঃ ‘একদা আমি হযরত আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ)-এর নিকট নবী করীম (সাঃ)-এর কিরাআত সম্বন্ধে প্রশ্ন করিলে তিনি বলিলেন- নবী করীম (সাঃ) ‘মদ’ (المد) -এর সহিত তিলাওয়াত করিতেন।’ ‘সুনান’-এর সংকলকগণও উপরোক্ত রাবী জারীর ইব্ন হাযিম হইতে অভিন্ন ঊর্ধ্বতন সনদাংশে এবং বিভিন্ন অধস্তন সনদাংশে উহা বর্ণনা করিয়াছেন। কাতাদাহ হইতে ধারাবাহিকভাবে হুমাম, আমর ইব্ন আসিম ও ইমাম বুখারী বর্ণনা করিয়াছেনঃ একদা হযরত আনাস ইবন মালিক (রাঃ)-এর নিকট জিজ্ঞাসা করা হইল— নবী করীম (সাঃ)-এর কিরাআত কিরূপ ছিল? তিনি বলিলেন— ‘উহা ছিল মদ (المد) -এর সহিত সম্পন্ন কিরাআত।’ অতঃপর হযরত আনাস (রাঃ) بسم اللهالرحمن الرحيم তিলাওয়াত করিলেন। উহাতে তিনি (الله) শব্দের ‘লাম’- (الرحمن) শব্দের ‘মীম’ এবং (الرحيم) শব্দের ‘হা’ টানিয়া পড়িলেন।
উক্ত রিওয়ায়েত হযরত আনাস (রাঃ) হইতে উপরোক্ত মাধ্যমে শুধু ইমাম বুখারী বর্ণনা করিয়াছেন। ইমাম মুসলিম উহা উপরোক্ত মাধ্যমে বর্ণনা করেন নাই। ইমাম আবূ উবায়দ প্রায় অনুরূপ একটি রিওয়ায়েত বর্ণনা করিয়াছেন। হযরত উম্মে সালামা (রাঃ) হইতে ধারাবাহিকভাবে ইয়া’লা ইব্ন মুমলিক, ইব্ন আবূ মুলায়কা, লায়ছ, ইব্ন সা’দ, আবদুল্লাহ্ ইব্ন মুবারক, আহমদ ইবন উসমান ও ইমাম আবূ উবায়দ বর্ণনা করিয়াছেন যে, হযরত উম্মে সালামা (রাঃ) নবী করীম (সাঃ)-এর কিরআতের পরিচয় এইরূপে দিয়াছেনঃ ‘নবী করীম (সাঃ) প্রতিটি অক্ষর পৃথকভাবে সুস্পষ্ট ও সুবোধ্য করিয়া সুন্দররূপে উচ্চারণ করিতেন। অর্থাৎ তিনি একটি অক্ষরের উচ্চারণকে আরেকটি অক্ষরের উচ্চারণের মধ্যে এরূপ প্রবিষ্ট করিয়া দিতেন না, যাহার কারণে অক্ষরের উচ্চারণ অস্পষ্ট ও অসম্পূর্ণ হইয়া যায়। ইমাম আহমদ উহা উপরোক্ত রাবী লায়ছ ইব্ন সা’দ হইতে উপরোক্ত অভিন্ন ঊর্ধ্বতন সনাদাংশে এবং লায়ছ ইব্ন সা’দ হইতে ইয়াহিয়া ইব্ন ইসহাকের ভিন্নরূপ অধস্তন সনদাংশে বর্ণনা করিয়াছেন। ইমাম আবূ দাউদ উহা উপরোক্ত রাবী লায়ছ ইব্ন সা’দ হইতে উপরোক্ত অভিন্ন ঊর্ধ্বতন সনদাংশে এবং লায়ছ ইব্ন সা’দ হইতে ইয়াযীদ ইব্ন খালিদ রামলীর অন্যরূপ অধস্তন সনদাংশে বর্ণনা করিয়াছেন। ইমাম তিরমিযী ও ইমাম নাসাঈ উহা উপরোক্ত রাবী লায়ছ ইব্ন সা’দ হইতে উপরোক্ত অভিন্ন ঊর্ধ্বতন সনদাংশে এবং লায়ছ ইব্ন সা’দ হইতে কুতায়বার অধস্তন সনদাংশে বর্ণনা করিয়াছেন। ইমাম তিরমিযী উহাকে সহীহ ও গ্রহণযোগ্য হাদীস বলিয়া অভিহিত করিয়াছেন।
হযরত উম্মে সালামা (রাঃ) হইতে ধারাবাহিকভাবে ইব্ন আবূ মুলায়কা, ইব্ন জুরায়জ, ইয়াহিয়া ইব্ন সাঈদ উমুবী ও হযরত ইমাম আবূ উবায়দ বর্ণনা করিয়াছেন যে, হযরত উম্মে সালামা (রাঃ) বলেনঃ ‘নবী করীম (সাঃ) স্বীয় কিরাআতে ওয়াক্ফ করিতেন। তিনি بسم اللهالرَحْمْنٍ الرّحيّم পড়িয়া থামিতেন। অতঃপর الحم لله رب العالمينَ পড়িয়া থামিতেন। অতঃপর الرَّحْدْن الرّحجّم পড়িয়া থামিতেন। অতঃপর مالِك يوم الدّيْن পড়িয়া থামিতেন।’ ইমাম আবূ দাউদ উহা উপরোক্ত রাবী ইব্ন জুরায়জ হইতে অভিন্ন ঊর্ধ্বতন সনদাংশে এবং অন্যরূপ অধস্তন সনদাংশে বর্ণনা করিয়াছেন। উক্ত হাদীস সম্বন্ধে ইমাম তিরমিযী মন্তব্য করিয়াছেন- ‘উহা অন্য কোন সনদে বর্ণিত হয় নাই এবং উহার সনদও বিচ্ছিন্ন।’ অর্থাৎ সনদের মূল বর্ণনাকারী আবদুল্লাহ্ ইব্ন উবায়দুল্লাহ্ ইব্ন আবূ মুলায়কা হযরত উম্মে সালামা (রাঃ) হইতে কোন হাদীস শ্রবণ করিবার সুযোগ পান নাই। উক্ত রাবী উহা প্রকৃতপক্ষে ইয়া’লা ইব্ন মুম্লিকের নিকট হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। ইতিপূর্বে উহা ঐরূপেই বর্ণিত হইয়াছে। আল্লাহ্ তা’আলা সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী।