আমি লেখক বলছি,

‘যুক্তিবাদীর চ্যালেঞ্জাররা’ প্রথম খণ্ড প্রকাশের পাঁচ বছর পরে দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশিত হল। সময়ের ব্যবধানটা বড়ো-ই দীর্ঘ। পাঠক-পাঠিকাদের কাছে আন্তরিকতার সঙ্গে ক্ষমা চাইছি। চিঠিতে বা ফোনে যাঁরা দ্বিতীয় খণ্ড লেখার জন্য তাগাদা দিয়েছেন, তাঁরাই এই বইটি লেখার প্রেরণা।

গত পাঁচ বছরে শ’দুয়েকের উপর তথাকথিত অলৌকিক ঘটনার পিছনের আসল সত্য ফাঁস করেছি। দু’শো থেকেই দশটি ঘটনা এখানে তুলে এনেছি। বলতে পারেন টপ টেন’। কাহিনিগুলো একশো ভাগ সত্যি।

যুক্তিবাদী সমিতির বহু রকমের কাজের মধ্যে একটি হল তথাকথিত অলৌকিক ঘটনা ফাঁস করা। এইসব ‘অলৌকিক’ ঘটনাগুলোকে আমরা দুটো শ্রেণিতে ভাগ করছি। এক শ্রেণির ঘটনার পিছনে অসাধারণ বুদ্ধি ও মুন্সিয়ানা থাকলেও ঘটনার পিছনের নায়ক-নায়িকারা অর্থ বলে বলীয়ান নয়। কিন্তু ওদের ফেরেববাজি ধরতে গেলে ঠোক্কর খেতে খেতে বুঝতে পারবেন, প্রতারণাকে কী শৈল্পিক পর্যায়ে নিয়ে গেছে ওরা। এই যেমন ধরুন, ফুটপাথে যারা জলের রং পালটে দেবার ক্ষমতাওয়ালা পাথর বেচে। তাদের প্রতারণা ধরার তাত্ত্বিক জ্ঞান আপনার আছে। অর্থাৎ রং পালটাবার বিজ্ঞানটা আপনার জানা। তারপরও ধরতে গেলে দেখবেন, বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন। ফুটপাথের এই শিল্পী-প্রতারকরা হাতের কৌশলে বারবার আপনার চোখকে ফাঁকি দেবে।

অনেক অলৌকিক ঘটনার পিছনে থাকে ছোটোদের দুষ্টুবুদ্ধি। তার মানে অবশ্য এই নয় যে, ধরে ফেলাটা খুব সোজা। দমদমের সেই হাড়কাঁপানো কাচ ভাঙা বাড়ির কথা মনে আছে? একটি কিশোর দিনের পর দিন ঘোল খাইয়ে ছেড়েছিল অনেক তাবড় নামী বিজ্ঞানীদের। এদের ক্ষমতার হাত ছোটো। তাই এদের বুজরুকি ফাঁস করলে বিপদের সম্ভাবনা খুব-ই কম।

দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে লম্বা হাতের ধনকুবের অবতার-জ্যোতিষী ইত্যাদিরা। ধরুন সেই ‘ইনামি’ গ্রুপের কথা, যারা দাঁত দিয়ে গোটা একটা প্লেন টানাবে। কিংবা ‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’র সহযোগিতা পাওয়া বিলিয়োনিয়ার হ্যারিস, যে নাকি স্পর্শ চিকিৎসায় সব রোগ সারিয়ে তুলবে। এদের মতো ক্ষমতাবানদের বুজরুকি বানচাল করলে তা হয়ে দাঁড়ায় সব রকমভাবেই অত্যন্ত ঝুঁকির।

ধরতে গেলে যা করতে হবেঃ

(১) কোনও গুণ শিখতে শত্রু-মিত্র বিচার করতে নেই। উদাহরণ (ক) জেমস বন্ডের সিনেমা থেকেও শেখা যায় মরার আগে মরতে নেই। (য) আমেরিকা পেন্টাগন থেকে শেখা যায় ‘মস্তিষ্ক যুদ্ধের’ নানা কূট ও প্রয়োগ কৌশল ; শত্রুদের মধ্যে মিত্র তৈরির পদ্ধতি।

(২) তথাকথিত অলৌকিক ঘটনা নিয়ে আমি বা আমরা শেষ কথা বলার ক্ষমতা রাখি, এমনটা কখনই ভাবি না। প্রয়োজন মতো এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিই। এই বিশেষজ্ঞদের মধ্যে পদার্থবিজ্ঞানী, রসায়নবিদ, উদ্ভিদবিজ্ঞানী, ভূ-তত্ত্ববিদ, শারীরবিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী, প্রাণীবিজ্ঞানী, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, ধাতুবিদ, চিকিৎসক, জাদুকর ইত্যাদিরা আছেন। আপনারাও তা-ই করুন। আখেরে লাভ হবে-ই।

(৩) সত্যানুসন্ধানে যাওয়ার আগে বিষয়টাকে নিয়ে দীর্ঘ বিশ্লেষণের প্রয়োজন আছে। এই প্রস্তুতি পর্বকে বলব ‘হোম ওয়ার্ক’। কিন্তু কোনও ভাবে-ই আগে থেকে একটা ধারণাকে মাথায় গুঁজে সত্যি খুঁজবেন না। তাতে ‘সত্যি’ অধরা থেকে যাবার সম্ভাবনা ।

আগরপাড়ার একটা বাড়িতে যখন-তখন আগুন জ্বলে উঠছিল। আপনা-আপনি আগুন ধরে যাচ্ছিল বিছানায়, পরদায়, কাপড়ে। বেশ কিছুদিন ধরেই এ’নিয়ে পত্রিকাগুলো বাজার গরম করে রেখেছিল। কাজে ব্যস্ত থাকায় ঘটনাস্থলে সঙ্গে সঙ্গে যেতে পারিনি। ইতিমধ্যে কিছু বিজ্ঞান সংগঠন কারণ খোঁজার ব্যর্থ চেষ্টাও চালিয়েছে। আমরা যেদিন গেলাম, সেদিন আমাদের সঙ্গী ছিল বিভিন্ন প্রচার মাধ্যম

সে’দিনই পুড়েছে, এমন কিছু নমুনা আলাদা আলাদা করে সংগ্রহ করলাম। কয়েকটা চিনেমাটির সাদা প্লেট নিলাম। একটি করে নমুনা প্লেটে রেখে সামান্য জল ঢেলে একটা কাঠি দিয়ে নাড়ছিলাম । জলের রং হালকা বেগুনি হল। বাড়ির লোকেদের সঙ্গে আলাদা আলাদা করে কথা বললাম। শেষে বাড়ির-ই একটি বালক স্বীকার করল ঘটনাটি ঘটাচ্ছিল। বিছানায় বা পর্দায় সামান্য গ্লিসারিন ঢেলে দিচ্ছিল। ভারী তরল ধীরে ধীরে নিচে নামছিল। কিছুটা নিচে কাপড়ে বা পর্দাতেই ছড়িয়ে রাখছিল পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট। গ্লিসারিন ও পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট মিলিত হলেই বিক্রিয়ায় প্রচণ্ড উত্তাপ তৈরি হচ্ছে ও শেষে আগুন ধরে যাচ্ছে।

আমি বললেই লোকে তা মানবেন কেন? বাজার থেকে গ্লিসারিন ও পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট আনালাম। একটা কাপড়ে একই পদ্ধতিতে আগুন লাগালাম। পোড়া নমুনা একটা প্লেটে রেখে জল ঢেলে দেখালাম, এই জলের রংও বেগুনি হয়ে গেল। পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গ ানেট থাকার জন্যই বেগুনি।

জানালাম, যে স্কুল পড়ুয়া একটি বালক এমন কাণ্ডটি ঘটাচ্ছিল সে আমাকে কথা দিয়েছে, আর এমন দুষ্টুমি করবে না। অনেকের অনুরোধ সত্ত্বেও ছেলেটির নাম জানাইনি। ছেলেটিকে শোধরাবার সুযোগ দিতে-ই জানাইনি।

এই সত্যানুসন্ধানের কথা অনেক পত্রিকাতেই প্রকাশিত হল। আর তারপরই ঘটতে লাগল মজার মজার কাণ্ডকারখানা। এর থেকেই দুটি উদাহরণ হাজির করছি।

এই ঘটনার পরে বরাহনগরে একটি বাড়িতে ভূতুড়ে উপদ্রব শুরু হয়। রহস্যটা ধরতে বেশ কয়েকটি বিজ্ঞান সংগঠন হাজির হয়েছিল। উপদ্রুতদের কাছে শুনেছি, সংগঠনগুলোর মূল প্রশ্ন ছিল একটাই—এ বাড়িতে কোনও বালক বা বালিকা নেই? বালক-বালিকা ছিল না। অতএব তাদের আর ভূত ধরা সম্ভব হয়নি।

শিলিগুড়ির একটি বাড়িতে শুরু হল ভূতুড়ে-কাণ্ড। আপনা-আপনি হঠাৎ হঠাৎ জ্বলে উঠছে আগুন। একটি বিজ্ঞান সংগঠনের তরফ থেকে একজন আমাকে ফোন করলেন। জানালেন, পোড়া নমুনা প্লেটে রেখে জল দিচ্ছি, কিন্তু জল তো বেগুনি হচ্ছে না।”

শুনে হাসব, না কাঁদব ? যেন আগুন জ্বালার একমাত্র উপকরণ গ্লিসারিন আর পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেটের মিশ্রণ।

(৪) স্থান-কাল-পাত্র অনুসারে নিজেকে পালটাই। পালটে ফেলি ‘বডিল্যাঙ্গুয়েজ’। কখনও বুদ্ধুরাম, কখনও বাচাল। আমার সঙ্গে কিছুক্ষণ থাকলেই সব্বাই বুঝে যান—আমি ধারে কাটি না, ভারে কাটি। কখনও তরলমতি, তো কখনও ভয়াবহ। মোদ্দা কথায় কাজ উদ্ধারের জন্য যেখানে যেমন, সেখানে তেমন। কোথায় কেমন ভাবে নিজেকে হাজির করব, সেটা শিখেছি লড়তে লড়তে। আপনারাও আমার অভিজ্ঞতা গ্রহণ করে দেখতে পারেন।

(৫) চ্যালেঞ্জারের অশিক্ষিত-গরিব-বোকা বোকা কথা শুনে অথবা অল্প বয়স দেখে একটুও আত্মতুষ্ট থাকতে নেই। বিরুদ্ধ শক্তিকে আন্ডার-এস্টিমেট করাই পতনের কারণ হতে পারে। হয়ও।

(৬) কোনও চ্যালেঞ্জারকে নিজের তুলনায় বিশাল ভাবলে তা হবে আত্মহত্যার সামিল। হারার আগেই হেরে বসে থাকা। মনে রাখতে হবে—আমি কারও চেয়ে ছোটো নই। এই মনে রাখাটা প্রত্যয়ে পালটাতে হবে।

(৭) প্রতিটি চ্যালেঞ্জ নতুন লড়াই। কঠিন লড়াই। এটা মনে রেখে একশো ভাগ আন্তরিকতার সঙ্গে, নিষ্ঠার সঙ্গে নিজেকে উজাড় করে না দিলে লাগাতার জয় ধরে রাখা অসম্ভব।

(৮) যুক্তিবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সকলেই যুক্তিবাদী নন। অনেকেই প্রগতিশীল সাজতে যুক্তিবাদী বলে পরিচয় দেন। কিন্তু প্রত্যয়ের সঙ্গে মনে করেন না যে, ঈশ্বর-আত্মা-জ্যোতিষ ‘সবই মিথ্যে ; অলৌকিক বলে কোনও কিছুর অস্তিত্ব থাকতেই পারে না। এমন দ্বিধাগ্রস্ত মন নিয়ে আর যা-ই হোক ‘অলৌকিক’ নিয়ে সত্যানুসন্ধান করা যায় না।

বছর কয়েক আগের ঘটনা। যুক্তিবাদী সমিতির কেন্দ্রীয় শাখার ফিস্ট ঠাকুরনগরে। শ’খানেক সদস্য-সদস্যা হাজির। প্রথামতো সকাল থেকে গান, কবিতা পাঠ, আবৃত্তি, ম্যাজিক নিয়ে ফিস্ট জমে গেছে। আশিস সমিতির কট্টর যুক্তিবাদী। আমাদের কুসংস্কার বিরোধী অনুষ্ঠানে ও হিরো। সোচ্চারে বলেন, “অলৌকিক” বলে কিছু নেই।” ফিস্টে আশিস অনেক বাক্স সাজিয়ে সহকারিণী নিয়ে গেছেন। ম্যাজিক দেখিয়েছেন। আমরা উপভোগ করেছি। কয়েকজন জ্যোতি মুখার্জিকে অনুরোধ করলেন ম্যাজিক দেখাতে। জ্যোতিদা শখে আমাদের একটু-আধটু ম্যাজিক দেখান । বয়স আর অসুস্থতায় কাবু। তাও সবার অনুরোধে উঠলেন। বললেন, একটাই ম্যাজিক দেখাবেন। দর্শকদের কাছ থেকে তিনটে কয়েন চেয়ে নিলেন। এক টাকা, পঞ্চাশ পয়সা ও পঁচিশ পয়সার। তিনটে কয়েনেই পেনসিল দিয়ে স্বাক্ষর করলেন তিন বিশিষ্ট দর্শক। জ্যোতিদা কয়েনগুলো একটা ছোট্ট গোল ধাতুর বাক্সে রাখলেন। একটু পরেই খুললেন। বাক্স উপুড় করে দেখালেন, কয়েনগুলো ভ্যানিস ।

এতটা পর্যন্ত দেখানো সম্ভব। ম্যাজিকের এ বি সি ডি জানা প্রত্যেকেই এই ম্যাজিক জানেন। কিন্তু তারপর যা হল, সেটাই গল্পের আসল অংশ। সেটাই ম্যাজিকের বাইরে বাড়তি কিছু। জ্যোতিদা বললেন, এই কয়েনগুলো কার পকেটে চালান করব—আপনারাই ঠিক করে দিন। সকলেই একজন বিশিষ্ট অতিথির পকেটে কয়েনগুলো চালান করতে অনুরোধ করলেন। জ্যোতিদা ডান হাতটা মুঠো করে বিশিষ্ট অতিথির দিকে অদৃশ্য কয়েনগুলো ছুড়ে দিলেন। বললেন, “দেখুন, আপনার পকেটে চলে গেছে।” ভদ্রলোক কোটের ডান পকেটে হাত ঢোকালেন, নেই। বাঁ পকেটে হাত ঢুকিয়ে অবাক। তিনটে কয়েন। একটাকা, পঞ্চাশ পয়সা ও পঁচিশ পয়সা। যাঁরা কয়েনে স্বাক্ষর করেছিলেন, তাঁরা কয়েন দেখে বললেন, হ্যাঁ এ তাঁদেরই স্বাক্ষর। মুহূর্তে সব আলো টেনে নিলেন জ্যোতিদা ।

আশিস ছাড়াও কয়েকজন ম্যাজিশিয়ান হাজির ছিলেন। ওঁরা প্রত্যেকেই অবাক। কারণ ম্যাজিকের ব্যাকরণ অনুসারে এমনটা ঘটান অসম্ভব। অর্থাৎ সোজা বাংলায় অলৌকিক ।

এরপর আশিস জ্যোতিদার পিছনে চিটেগুড়ের মতো লেগে ছিলেন বছরের পর বছর। উদ্দেশ্য, জ্যোতিদার কাছ থেকে সেই তন্ত্র-মন্ত্র শেখা, যা দিয়ে এমনটা ঘটান সম্ভব। আশিসের এমন মানসিকতার কারণ, ওঁর মনে ‘অলৌকিক’ নিয়ে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল। জ্যোতিদার ম্যাজিক দেখে তাই এর পিছনের সত্যিকে খুঁজতে আন্তরিক চেষ্টা করেননি। কার্য-কারণ সম্পর্ক খুঁজে না পেয়ে জ্যোতিদার কাছে ম্যাজিকের বিজ্ঞানটা জানতে চাননি আশিস। ঘটনাটা দেখলেন। প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় কারণ খুঁজে পেলেন না। আর কারণ খোঁজার চেষ্টা করলেন না। ধরেই নিলেন ব্যাপারটা অলৌকিক ।

আসলে এই পুরো ঘটনার মধ্যে কার্য-কারণ সম্পর্ক ছিল। তবে প্রথাগত ম্যাজিক ছিল না। ম্যাজিকের সঙ্গে একটু মনস্তত্ত্বের মজা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। দর্শকরা কাকে চিহ্নিত করবেন, আগাম বুঝে আমি এক সময় কয়েন তিনটে বিশিষ্ট মানুষটির পকেটে চালান করে নিরাপদ দুরত্বে সরে গিয়েছিলাম। স্বাক্ষরিত কয়েনগুলো হাত ঘুরে আমার হাতে এসে গিয়েছিল—এটা নিশ্চয়ই পাঠক-পাঠিকারা বুঝতে পারছেন।

এমন দ্বিধা থাকলে সত্যি খোঁজা যায় না।

(৯) কোনও ভূতুড়ে রহস্যের সত্যানুসন্ধানে নামলে প্রচুর প্রত্যক্ষদর্শী পাবেন। তাঁরা দেখেছেন, শূন্যে চেয়ার-টেবিল ভেসে বেড়াচ্ছে, সন্দেশ-রসগোল্লা ভাসতে ভাসতে চলে যাচ্ছে। হাত থেকে চুড়ি আপনা-আপনি বেরিয়ে আসছে। অন্তর্বাস ছাড়তে গিয়ে দেখা যাচ্ছে ধারাল কিছু দিয়ে কাটা। অথচ পরার সময় ছিল গোটা। জিনিস-পত্তর নিজে থেকে আছড়ে পড়ছে, ইত্যাদি। ভূতের কাণ্ডকারখানা যত শুনতে চাইবেন, প্রত্যক্ষদর্শীরা ততই শোনাবেন। এইসব প্রত্যক্ষদর্শীর মধ্যে ৮ থেকে ৮০ সব বয়সের নারী-পুরুষ পাবেন। বিখ্যাত মানুষও পাবেন।

মনে রাখবেন, ওঁরা প্রত্যেকেই মিথ্যে বলছেন। প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে গুরুত্ব পাওয়ার মানসিকতায় ওঁরা মিথ্যে বলেন। আজ পর্যন্ত পাওয়া কয়েক’শো ভূতুড়ে ঘটনার প্রতিটি সমাধান করে-ই এ’কথা বলছি।

বরং খুব মন দিয়ে মিথ্যেগুলোই শুনতে থাকুন। ওদের মিথ্যের ফাঁক দিয়েই সত্যির আলোর খোঁজ পেয়ে যাবেন ।

(১০) অনেকে রহস্য ফাঁস করার মধ্যে শুধু উত্তেজনার আনন্দ অনুভব করেন। ‘হিরো’ হতে ভালোবাসেন। কিন্তু এইসব অলৌকিক ঘটনা ফাঁসের বড়ো উদ্দেশ্য হওয়া উচিত—সাধারণ মানুষের কাছে এই সত্যকে তুলে ধরা যে, অলৌকিক-আত্মা-জন্মান্তর-নিয়তিবাদ-অবতারবাদ মিথ্যে। এ’সবই রাজাদের স্বার্থে পুরোহিতদের তৈরি মিথ্যে। আমাদের কাজ বিজ্ঞানের সত্য খোঁজা, জনতাকে সত্যের খোঁজ দেওয়া। পরিবর্তে শুধু রহস্য ফাঁস করতে যাওয়া ভুল অ্যাপ্রোচ।

 

শত্রুর হাত যখন লম্বা

আমার নানা অভিজ্ঞতার কথা ইতিমধ্যে বিভিন্ন বইয়ে লিখেছি। কিছু কিছু কাহিনি পড়লে মনে হতে পারে, অ্যাডভেঞ্চার গপ্পো। স্বভাবতই কেউ কেউ মনে করতেই পারেন যে কাহিনীকে উত্তেজক করতে, আকর্ষণীয় করতে কিছুটা রং চড়িয়েছি। বিশেষ করে প্রতিবেশী, সহকর্মী বা মধ্যবর্তী বাঙালিদের মধ্যে এমন ভাবার একটা প্রবণতা আমি লক্ষ্য করেছি।

এক দিনের ঘটনা। যুক্তিবাদী সমিতির সদস্য সুপ্রিয়র অফিসে গিয়েছি। অনেকেই ঘিরে ধরলেন। অনেকের অনেক প্রশ্ন, অনেক কৌতূহল। একজন ঠোটকাটা মানুষ জিজ্ঞেস করেই ফেললেন, “অনেক সময় মনে হয়, হয়তো বা কাহিনিতে কিছুটা রং মিশেছে। কাহিনিকে আকর্ষণীয় করতে কি একটু রং চড়ান? নিশ্চয়ই পুরোপুরি সত্যিটুকু নিপাট তুলে ধরেন না?”

“সত্যি উত্তর দিয়েছিলাম, আংশিক সত্য লিখি। একটু রং কমিয়ে লিখি। যে সব কীর্তিমান অবতার, জ্যোতিষী ও ফেরেববাজদের নাঙ্গা করে ছাড়ি, তাদের অনেকেই শতকোটি বা সহস্রকোটির মালিক। গলা পর্যন্ত দুর্নীতিতে ডুবে থাকে। এই পোড়া দেশে টাকা থাকলেই সব আছে। দুর্নীতিবাজ জানলেও পাবলিক আর ওসব নিয়ে মাথা ঘামায় না। ধনী দেখলেই তাকে মাথায় তুলে রাখবে। স্বার্থের সম্পর্কে এইসব কুবেররা বেঁধে রাখে পাড়ার ক্লাব থেকে মাফিয়া ডন। পুলিশ থেকে প্রশাসনের বড়-মেজ কর্তারা কুবেরের আমন্ত্রণ পেলে বর্তে যান। হৃদ্যতা বজায় রাখতে তারকা রাজনীতিকরা হাঁকপাঁক করেন। এই একই ছবি সাঁইবাবা থেকে আম্মা গর্বত্র। এঁদের পিছনে লাগতে গেলে মৃত্যু নয়, মৃত্যুর চেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

এই ধরনের শক্তিধরদের বিরুদ্ধে লড়াইতে নামার আগে নিজের ক্ষমতা ও শক্তির সীমাবদ্ধতা ভালোমতো বুঝে নেওয়ার দরকার আছে। আক্রমণ সামলাবার ক্ষমতা থাকলে-ই নামানো উচিত ।

“তারপর সত্যি যখন লড়াইটা হয়, তখন তার ভয়াবহতা পরিমাপ করা সাধারণ মানুষের পক্ষে অসম্ভব। এ’সব ডিটেলে লেখা আমাদের পক্ষেও নানা কারণে অনুচিত বা বোকামো । “এই সত্যিটা তো মানবেন যে, পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মস্তানি সামলাতে হলে নিজেরও পারমাণবিক শক্তি প্রয়োগের ক্ষমতা রাখতে হয়।”

কয়েক বছর আগে সুপ্রিয়র অফিসে শত্রুর লম্বা হাত নিয়ে যেসব কথা বলেছিলাম, বর্তমানে সেই অবস্থার গুণগত কিছু পার্থক্য হয়েছে। দেশ দুর্নীতিতে বহুগুণ এগিয়েছে। দুর্নীতি আজ সর্বগ্রাসী—এ’কথা সাংবাদিকরা জানেন। ততটা না হলেও কিছুটা জানেন পত্রিকার পাঠক ও টিভি খবরের দর্শকরা। এখন অবতারমার্কা প্রতারকদের লম্বা হাত আরও লম্বা হয়েছে। তাদের খুল্লামখুল্লা স্পনসর করতে নেমে পড়েছে ভারতের বৃহৎ পত্রিকাগোষ্ঠী থেকে বিখ্যাত প্রসাধন নির্মাণকারী সংস্থা। এই তালিকাকে আরও দীর্ঘ করা যায়। কিন্তু আমার উদ্দেশ্য তালিকা তৈরি নয়, উদাহরণ হাজির করা। বর্তমানে ক্ষমতাবান বুজরুকদের ধরা আরও বেশি বিপদ নিয়ে খেলা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ওদের বুজরুকি ফাঁস করলে ওরা প্রত্যাঘাত করবেই। প্রত্যাঘাত সামলাবার মতো ক্ষমতা না থাকলে চুপ থাকা ভালো। যদি মনে করে থাকেন, ফাঁকা আওয়াজ দিয়ে বেরিয়ে যাবেন, তবে বলতেই হবে আপনি অতি বোকা ।

ফাকা আস্ফালন যাদের বিরুদ্ধে করা, তারা কিন্তু ঠিক বুঝে ফেলে। ভয় করে না। উপেক্ষা করে। অথবা বাড়াবাড়ি দেখলে শেষ করে দেয়।

আবার কারও কারও কথায় অনেক কিছুই ওলট-পালট হয়ে যায়। যাদের উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলা, তারা ঠিক বুঝে যায়—এ’বার থামতে হবে। পালটাতে হবে। নতুবা দিন শেষ অতি সম্প্রতি একটা ঘটনার দিকে তাকাই আসুন। ঘটনাস্থল বিহার, ঝাড়খণ্ড ও আশেপাশের এলাকা। এই এলাকার অরণ্যের গাছ রক্ষার জন্য রয়েছে বিশাল সশস্ত্র রক্ষী বাহিনী। তবু অরণ্য- মাফিয়াদের নেতৃত্বে গাছ কাটা হচ্ছে প্রতিদিন। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। রক্ষীরা অবশ্য নীরব দর্শক নয়। ওরা হিসেব রাখে বিভিন্ন মাফিয়াদের কে কত গাছ কাটল। পাওনা কত হল। হিসেব কষে পাওনা আদায় করে। এই সব চোরাই গাছ প্রকাশ্যে বিভিন্ন হাটে বিক্রি হয়। সেখান থেকে লরিতে চেপে গাছগুলো যায় করাত কলে। চোরাই গাছের কল্যাণে করাত কলের সংখ্যাও রমরম করে বেড়েছে। সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলোর মন্ত্রী-সচিব-পুলিশ-প্রশাসন-পরিবেশ দপ্তর সব্বাই এ’সব খবর সুদীর্ঘ বছর ধরে জানেন। রাজ্যের মানচিত্র পালটেছে, সরকার পালেটেছে, কিন্তু জঙ্গল মাফিয়া-রাজ পালটায়নি। ওয়াকিবহাল মহল বলে, এ’এক বিরাট চক্র, যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে মন্ত্রী, আমলা, পুলিশ সব্বাই। প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকার কাঠ লুঠ হয়ে যাচ্ছে, করার কিচ্ছু নেই।

সম্প্রতি নকশালরা আদেশ জারি করেছে—বে-আইনিভাবে গাছ কেটে যারা অরণ্য উজাড় করছে, তাদের এবার কেটে উজাড় করা হবে। রেহাই পাবে না এঁদের সঙ্গে যুক্ত অরণ্যরক্ষী থেকে করাত মালিক কেউ-ই। ম্যাজিকের মতো কাজ হয়েছে। মাফিয়া-রক্ষী-কাঠ ব্যবসায়ীদের সুদীর্ঘকালের আঁতাত শিকেয় তুলে ত্রিমূর্তি এখন ‘ধোয়া তুলসীপাতা’। গাছ কাটা, গাছের বাজার রাতারাতি বন্ধ।

মাফিয়া-রক্ষী-পুলিশ-প্রশাসকদের শক্তিশালী আঁতাতও বোঝে কোনটা ফাঁকা আওয়াজ, কোনটা সারগর্ভ।

আমাদের শত্রুরাও জেনে গেছে আমাদের ‘পাস্ট রেকর্ড’। কোনও লড়াই হারার রেকর্ড আমাদের নেই। শত্রুর আক্রমণ মোকাবিলা করার ক্ষমতা আমাদের আছে। শত্রুদের মধ্যেও গোপন-বন্ধু আছে। তাই আক্রমণ নেমে আসার আগে খবর পেয়ে যাই। সাম্প্রতিক একটি ঘটনা। এক কোটিপতি জ্যোতিষী তার একান্ত বিশ্বাসভাজনদের নিয়ে গোপন বৈঠক করল। আমাকে হত্যা করার ‘সুপারি’ নিল এক টপ’ উত্তর কলকাতাবাসী। টেপ বাজিয়ে ষড়যন্ত্রীদের কথোপকথন আমাকে শুনিয়ে দিলেন ওই জ্যোতিষীরই এক ‘বিশ্বস্ত’ সঙ্গী। খবর পেলাম, কয়েক দিন পরেই টপকাবার দায়িত্ব নেওয়া মানুষটির জন্মদিন। জন্মদিনের উৎসবে হাজির হলাম। রাজনীতিক থেকে মস্তানদের হুল্লোড়ে মজলিস জমজমাট। আমাকে দেখেই তার ‘টপ’-এর থেকে বোতল গেল পড়ে। চোখ ছানাবড়া। গলা দিয়ে কথা বেরুচ্ছে না। জড়িয়ে ধরে শুভেচ্ছা জানালাম। “আমাকে টপকালে যে বহুত ভোগান্তি আছে”–কানে কানে সে কথাটাও জানিয়ে দিলাম। তারপর ওর দিক থেকে সব ঠিক ঠিক।

আমরা গুরু পাকড়েছি আমেরিকাকে। আমাদের মতো সাম্যের সুন্দর স্বপ্ন দেখা মানুষগুলোর শত্রু আমেরিকাকে। আমেরিকাই প্রথম বুঝেছিল, অস্ত্রযুদ্ধের চেয়ে লক্ষগুণ কার্যকর মস্তিষ্কযুদ্ধ। মস্তিষ্ক যুদ্ধের প্রথম সফল৷ প্রয়োগ করে সোভিয়েত রাশিয়ার উপর। একটিও বোমা বা গুলি খরচ না করেই কমিউনিস্ট দেশটাকে ধসিয়ে দিয়েছিল।

আমরা একই ভাবে মস্তিষ্ক যুদ্ধ জিতে শেষ জয় ছিনিয়ে আনি। আক্রমণ প্রতিহত করি। যস নামাই। শেষ কাহিনিতে তার ই একটা স্পষ্ট চিত্র পাবেন। সে এক অসম্ভব জয়ের ছবি।

 

টিনের তলোয়ার অথবা রেড কার্পেট

মাদারকে ‘সেন্ট’ বানাতে পোপের দরকার একটা ‘মিরাকেল’-এর। গরিব আদিবাসী একটি মেয়েকে দিয়ে বলানো হল, তার পেটের বিশাল টিউমার রাতারাতি সারিয়ে দিয়েছে মাদার টেরিজার লকেটের ছবি। বিনিময়ে মেয়েটি পেলেন আর্থিক নিরাপত্তা।

শেষ পর্যন্ত মিথ্যে ফাঁস হল। যুক্তিবাদী সমিতি সত্য উদ্ঘাটন করল। লড়াইটায় আমরা কোনও বিজ্ঞান আন্দোলনকারী বা যুক্তিবাদী আন্দোলনে সামিল সংগঠনকে দেখতে পেলাম না। অথচ এই বঙ্গে যুক্তিবাদী ও বিজ্ঞান সংস্থার তেমন অভাব নেই। শীতে বিজ্ঞান মেলা, মডেল প্রদর্শনী, পুমহীন চুল্লি, অনেক কিছুতেই ওরা থাকে। কিন্তু পোপ ভ্যাটিকান ও মিশনারিজ অফ চ্যারিটির গুঞ্জরুকির বিরুদ্ধে ওরা চুপ কেন? গোলমালটা কোথায় ?

পশ্চিমবঙ্গে যে সব বিজ্ঞান সংগঠন আছে, তাদের অনেকেরই নানা সীমাবদ্ধতা আছে। সি পি আই (এম)-এর একটি শাখা পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ। এস ইউ সি আই-এর বিজ্ঞান সংগঠনের •নাম ‘ব্রেকফ্লু’। সি পি আই এবং আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দলের বিজ্ঞান সংগঠন আছে। কাজে না থাকলেও সাইনবোর্ডে ওরা আছে।

ওরা রাজনৈতিক দলের বিজ্ঞান সংগঠন। রাজনৈতিক দলগুলো যেহেতু নির্বাচন নির্ভর দল, সেহেতু ভোটারদের খুশি রাখার কথা ভাবতে হয়। ভোটারদের ধর্মীয় আবেগকে গুরুত্ব দিতে।

পোপের বুজরুকির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামলে বিপদ দু-দিক থেকে। এক তো খ্রিস্টান ভোটারদের ধর্মীয় আবেগকে আঘাত দেওয়া। দুই হল, মাদার-আবেগে গা ভাসানো বাঙালির নবম মনে দুঃখ দেগে দেওয়া।

পোড় খাওয়া মার্কসবাদী নেতৃত্ব এত বছর বাঙালি ঘেঁটে বুঝে নিয়েছেন, আমবাঙালি কোনও কিছুই তলিয়ে বুঝতে চায় না। না বুঝেই সব বোঝে। ওদের বোঝানো মুশকিল যে—মাদারের সঙ্গে একটা প্রকট মিথ্যেকে জড়িয়ে যে ভাবে ‘সেন্ট’ বানাবার চেষ্টা পোপ করছেন, সেটা মাদারকেই অপমান করা। পোপের বুজরুকির বিরুদ্ধে প্রচারে নামলে সেটাকে ‘মাদারের বিরুদ্ধে পান্দোলন’ বলে ধরে নেওয়ার মত বাঙালি মধ্যবিত্তরা সংখ্যায় যথেষ্ট ভারী। সুতরাং, এই বঙ্গের নির্বাচনে দাঁড়ানো রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষে পোপ বিরোধিতায় নামাটা ছিল ‘ঝুঁকি’র। করে। তাদের বিজ্ঞান সংগঠনগুলোর পক্ষে এমন একটা আন্দোলনে সামিল হওয়া ছিল অসম্ভব।

কিছু বিজ্ঞান সংস্থা আছে, যাদের ফান্ড আসে আমেরিকা, ব্রিটেন, সুইডেন, ডেনমার্ক ইত্যাদি দেশের মাল্টিন্যাশানাল কোম্পানিগুলো থেকে। মালিকরা ধর্মে খ্রিস্টান। এইসব বিজ্ঞান সংস্থাগুলো জানেন, খ্রিস্ট ধর্মগুরুর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামলে পেটে হাত পড়তে পারে। তাই অস্তিত্ব রাখতে নীরব। ‘জনগণের জন্য বিজ্ঞান’ ইত্যাদি স্লোগান সম্বল করে ধনীর ধনে জনগণের সচেতনতা বাড়াতে আর যা-ই করা যাক, পোপের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামা যায় না।

তান্ত্রিক-জ্যোতিষী-বিদেশি সাহায্যপুষ্ট এন জি ও’র সহযোগিতায় চলছে আরও একটি পাকথিত যুক্তিবাদী সংগঠন। ওদের জন্ম দেওয়া হয়েছিল যুক্তিবাদী সমিতি ভাঙতে; যুক্তিবাদী আন্দোলনের দুর্বার গতিতে, স্তব্ধ করতে। সুতরাং ওদের কম্ম পোপ-ভ্যাটিকান মিশনারিজ অফ চ্যারিটির ভণ্ডামির বিরোধিতা নয়। কর্তারা চায়নি, তাই পুতুলরা নাচেনি।

এইসব সংগঠনগুলোর সীমাবদ্ধতা বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকলে ওদের নীরবতার কারণ খুঁজে পাওয়া যায়।

একই সঙ্গে এও সত্যি যে, এইসব সংগঠনে অনেক সদস্য আছেন যাঁরা লড়াকু, অকুতোভয়, সৎ। তাঁরাই ঠিক করতে পারেন সংগঠনের কর্ম-পদ্ধতি। সংগঠন টিনের তলোয়ার নিয়ে লড়াইয়ের অভিনয় করবে, নাকি সত্যি লড়াইতে নামবে।

যাঁরা আপস করে আখের গোছানোকে জীবনের লক্ষ্য করেছেন,—তাঁদের চিনে নিন। জানবেন, আপস করে পাপোশ হওয়া যায়, বড়ো জোর রেড কার্পেট; কিন্তু যুক্তিবাদী হওয়া যায় না।

প্রিয় পাঠক-পাঠিকা, আপনাদের সবাইকে আন্দোলনের সঙ্গী হতে উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। সদস্য হতে বা কোনও প্রশ্নের উত্তর পেতে জবাবি খাম পাঠান। ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির সদস্য হন। আনন্দ পাবেন। আগামী প্রজন্মের জন্য কিছু করার আনন্দ।

প্রবীর ঘোষ

৭২/৮, দেবীনিবাস রোড

কলকাতা ৭০০ ০৭৪

আট জানুয়ারি (মিরজাফর-বিজয় দিবস) দু’হাজার চার।

♦ কিছু কথা

প্রথম খন্ড

♦ কিছু কথা

অধ্যায়ঃ এক

♦ মার্কিন গডম্যান মরিস সেরুলোঃ একটি ইতিহাস

অধ্যায়ঃ দুই

♦ যোগী-জ্যোতিষী হরেকৃষ্ণবাবা !

অধ্যায়ঃ তিন

♦ পঞ্চাশ বছর আগের বালক ব্রহ্মচারী এবং…

অধ্যায়ঃ চার

♦ মেঠাইবাবার রহস্যভেদ

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ হাড় ভাঙ্গার দৈব-চিকিৎসা

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ কাকদ্বীপের দৈব-পুকুর

অধ্যায়ঃ সাত

♦ আগরপাড়ায় ‘ভূতুরে’ আগুন

অধ্যায়ঃ আট

♦ প্রদীপ আগরওয়ালের সম্মোহনে ‘পূর্বজন্মে’ যাত্রা

অধ্যায়ঃ নয়

♦ কামধেনু নিয়ে ধর্মব্যবসা

অধ্যায়ঃ দশ

♦ বরানগরের হানাবাড়িঃ গ্রেপ্তার মানুষ- ভূত

অধ্যায়ঃ এগারো

♦ এফিডেভিট করে ডাক্তারের প্রশংসাপত্র নিয়ে ওঝাগিরি !

অধ্যায়ঃ বারো

♦ ‘গ্যারান্টি চিকিৎসা’র নামে হত্যাকারীর ভূমিকায় সর্পবিদ হীরেন রায়

অধ্যায়ঃ তেরো

♦ চলো যাই ফকিরবাড়ি

অধ্যায়ঃ চোদ্দ

♦ সাঁইবাবার চ্যালেঞ্জঃ পেটে হবে মোহর !

অধ্যায়ঃ পনেরো

♦ হুজুর সাইদাবাদীঃ মন্তরে সন্তান লাভ !

অধ্যায়ঃ ষোলো

♦ জলাতঙ্ক ও দৈব-চিকিৎসা

অধ্যায়ঃ সতেরো

♦ বিশ্বাসের ব্যবসায়ীরা ও নপুংসক আইন

দ্বিতীয় খন্ড

♦ কিছু কথা

অধ্যায়ঃ এক

♦ খেজুর তলার মাটি সারায় সব রোগ

অধ্যায়ঃ দুই

♦ পক্ষিতীর্থমের অমর পাখি

অধ্যায়ঃ তিন

♦ স্বামী রামদেবঃ সন্ন্যাসী, সর্বযোগসিদ্ধ যোগী, যোগচিকিৎসক !

অধ্যায়ঃ চার

♦ নাকালের দৈব-পুকুরঃ হুজুগের সুনামী

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ সায়েব যখন রেইকি করে রাঘব বোয়াল চামচা ঘোরে

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ লক্ষ্মীমূর্তি কালি হলেন আপন খেয়ালে

অধ্যায়ঃ সাত

♦ পাথর যখন কথা বলে

অধ্যায়ঃ আট

♦ ফাঁদে পড়ে জ্যোতিষী শ্রীঘরে

অধ্যায়ঃ নয়

♦ বিশ্বের বিস্ময় অলৌকিক মাতা জয়া গাংগুলী’র বিস্ময়কর পরাজয় এবং…

অধ্যায়ঃ দশ

♦ আই আই টিতে টেলিপ্যাথি দেখালেন দীপক রাও

অধ্যায়ঃ এগারো

♦ জন্ডিস সারাবার পীঠস্থান ইছাপুর

অধ্যায়ঃ বারো

♦ মালপাড়ার পেশা দাঁতের পোকা বের করা

অধ্যায়ঃ তেরো

♦ নিমপীঠের গুগি মা

তৃতীয় খন্ড

♦ কিছু কথা

অধ্যায়ঃ এক

♦ ওঝার ঝাড়ফুঁক আর টেরিজার লকেটে মণিহার রোগমুক্তিঃ কুসংস্কারের দু’পিঠ

অধ্যায়ঃ দুই

♦ ‘মেমারিম্যান’ বিশ্বরূপ-এর একটি বিশুদ্ধ প্রতারণা

অধ্যায়ঃ তিন

♦ কোটিপতি জ্যোতিষী গ্রেপ্তার হলেন

চতুর্থ খন্ড

অধ্যায়ঃ এক

♦ কিস্যা অক্টোপাস পল বিশ্বকাপ ফুটবলের ভবিষ্যৎ বক্তা

অধ্যায়ঃ দুই

♦ কিস্যা জ্যোতিষী বেজান দারওয়ালা

অধ্যায়ঃ তিন

♦ সাধারণ নির্বাচন ২০০৯ নিয়ে সব জ্যোতিষী ফেল

অধ্যায়ঃ চার

♦ মা শীতলার পায়ের ছাপ পুকুরঘাটেঃ রহস্যভেদ

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ যিশুর মূর্তি থেকে রক্তপাত

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ সত্য সাঁই-এর সত্যি-মিথ্যে

অধ্যায়ঃ সাত

♦ অলৌকিক উপায়ে সন্তান দেন ডা. বারসি

অধ্যায়ঃ আট

♦ জ্যোতিষীর বাড়িতে অলৌকিক আগুন

অধ্যায়ঃ নয়

♦ সম্মিলিত দুর্নীতির ফসল ‘মোবাইলবাবা’

অধ্যায়ঃ দশ

♦ জাতিস্মরঃ রাজেশ কুমার

♦ অলৌকিক শক্তিধরদের প্রতি চ্যালেঞ্জ

“যুক্তিবাদীর চ্যালেঞ্জাররা” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ

⇒ মন্তব্য করুন⇐

error: Content is protected !!