কালকে সে নাকি আসিবে মোদের ওপারের বালুচরে,

এ পারের ঢেউ ওপারে লাগিছে বুঝি তাই মনে করে।

বুঝি তাই মনে করে,

বাউল বাতাস টানাটানি করে বালুর আঁচল ধরে।

কাল সে আসিবে, মুখখানি তার নতুন চরের মত,

চখা আর চখী নরম ডানায় মুছায়ে দিয়েছে কত।

চরের চাষীর ধানের খেতের মতই তাহার গা,

কোথাবা হলুদ, আব্ছা হলুদ, কোথাবা হলুদ না।

কাল সে আসিবে, হাসিয়া হাসিয়া রাঙা মুখখানি ভরি,

এপারে আমার পাতার কুটিরে আমি কি বা আজ করি!

কাল সে আসিবে, ওই বালুচরে, ওপারে আমার ঘর,

তাজ পরে নদী-ঘাটের ডিঙা কাঁপে নদীটির পর।

কাল সে আসিবে, নোঙর ছিঁড়িল, দুলিছে নায়ের পাল,

কারে হারায়েছি, কারে যেন আমি দেখি নাই কতকাল।

ওপারেতে চর বালু লয়ে খেলে, উড়ায় বালুর রথ,

ওখানে সে কাল দুটি রাঙা পায়ে ভাঙিয়া যাইবে পথ।

কাল সে আসিবে ওই বালুচরে, আমি কি আবার হায়,

আসমান-তারা শাড়ীখানি আজ উড়াব সারাটি গায়?

রামলক্ষ্মণ শঙ্খ দুগাছি পরিব আবার হাতে,

খোঁপায় জড়াব কিংশুক-কলি, কাজল চোখের পাতে;

গলায় কি আজ পরিতে হইবে পদ্ম-রাগের মালা,

কানাড়া ছান্দে বাঁধিব কি বেনী কপালে সিঁদুর জ্বালা?

কাল সে আসিবে, মিছাই ছিঁড়িছি আঁধারের কালো কেশ,

আজকের রাত পথ ভুলে বুঝি হারাল ঊষার দেশ।

এই বালুচরে আসিবে সে কাল, তরে রাঙা মুখে ভরি,

অফুট ঊষার সোনার কমল আসিবে সোহাগে ধরি।

সে আসিবে কাল, গলায় পরিয়া কুসুম ফুলের হার,

দুখানি নূপুর মুখর হইবে চরণে জড়ায়ে তার।

মাথায় বাঁধিবে দুধালীর লতা কচি সীমপাতা কানে,

বেণুর অধর চুমিয়া চুমিয়া মুখর করিবে গানে।

কাল সে আসিবে, রাই সরিষাল হলদী কোটার শাড়ী,

মটর কনেরে সাথে করে যেন খুলে দেখে নাড়ি নাড়ি।

কাল সে আসিবে ওই বালুচরে, ধারে তার এই নদী,

তারি কূলে মোর ভাঙা কুঁড়ে ঘর, বহুদূরে নয় যদি;

তবু কি তাহার সময় হইবে হেথায় চরণ ধরি,

মোর কুঁড়ে ঘর দিয়ে যাবে হায়, মণি-মানিকেতে ভরি।

সে কি ওই চরে দাঁড়ায়ে দেখিবে বরষার তরুগুলি,

শীতের তাপসী কারে বা স্মরিছে আভরণ গার খুলি?

হয়ত দেখিবে, হয় দেখিবে না;

কাল সে আসিবে চরে, এপারে আমার ভাঙা ঘরখানি, আমি থাকি সেই ঘরে।

error: Content is protected !!
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x