কালি লিনাক্স কি, কেন এবং কিভাবে?
কালি লিনাক্স (Kali Linux) মূলত একটি ডেবিয়ান ভিত্তিক গ্নু/লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন, যা ডিজাইন করা হয়েছে আধুনিক ফরেনসিক এবং অনুপ্রবেশ মূল্যায়নের জন্য। ডেবিয়ান সমগ্র পৃথিবীর স্বেচ্ছাসেবকের যৌথ প্রয়াসে একটি মুক্ত ও সম্পূর্ণ অপারেটিং সিস্টেম। অন্যদিকে গ্নু (GNU) হল- একটি অপারেটিং সিস্টেম এবং বিস্তৃত কম্পিউটার সফটওয়্যারের সম্মিলন। অর্থাৎ কালি লিনাক্স (Kali Linux) বলতে মূলত গ্নু (GNU) ও অন্যান্য উপাদানের সংমিশ্রণে প্যাকেজ করা অপারেটিং সিস্টেমের একটি পরিবার।
লিনাক্স ও উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বৈসাদৃশ্য উল্লেখ করছি।
১. উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে সুযোগ পেলেই বিভিন্ন রকমের ভাইরাস এ্যাটাক করে এবং প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ ফাইল ছাড়াও কম্পিউটারের নানাবিধ সমস্যা সৃষ্টি করে। অন্যদিকে লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে যে, এতে অবাঞ্চিত কোন ভাইরাস এ্যাটাক করতে পারে না, কাজেই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নাই বললেই চলে।
২. উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের তুলনায় লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম কিছুটা হলেও দ্রুত কাজ সম্পন্ন করে।
৩. উইন্ডোজের কোন সফটওয়্যার বা টুলসে প্রব্লেম হলে তা কাজ করা বন্ধ করে দেয়, কিন্তু উক্ত সফটওয়্যার বা টুলসের মূলত কি সমস্যা হয়েছে, তা আপনাকে ডিটেক্ট করে দেখাতে অক্ষম। অন্যদিকে লিনাক্সের কোন সফটওয়্যার বা টুলসে যদি কোন সমস্যা সৃষ্টি হয়, তাহলে উক্ত সফটওয়্যার বা টুলস যেমন সমস্যার কারণ দেখিয়ে দেয়, অন্যদিকে উক্ত সমস্যার সমাধানটাও দেখিয়ে দিতে সক্ষম, ফলে তা দ্রুত রিপিয়ার করে পুনরায় রান করা সম্ভব।
৪. উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের কোন সফটওয়্যার বা টুলসের বাটন বা মেনুতে ক্লিক করলেই, উক্ত টুলস কাজ সম্পন্ন করে তার রেজাল্ট দেখিয়ে দেয়। কিন্তু কাজটি সে কোন প্রক্রিয়ায় কিভাবে সম্পন্ন করছে, তা দেখাতে অক্ষম। অন্যদিকে কালি লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমের কোন টুলসের ক্লিক করার জন্য বাটন থাকে না। ইহাকে পরিচালনা করতে হয় কমান্ডের মাধ্যমে। অর্থাৎ যে কাজ করতে চান, তার নির্দেশ দিতে হবে কমান্ড টাইপ করে, ফলে উক্ত কাজ লিনাক্স কিভাবে সম্পন্ন করছে, সেই প্রসেসটিও আমরা রেজাল্টের সাথে সাথে দেখতে পাই।
৫. হ্যাকিং পরিচালনার জন্য অল্প সংখ্যক কিছু টুলস উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে থাকলেও, বেশির ভাগ গুরুত্বপূর্ণ সফটওয়্যার বা টুলস-ই নাই। কাজেই উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে লিনাক্সের বেশিরভাগ কাজ তথা হ্যাকিং পরিচালনা সম্ভব নয়। অন্যদিকে লিনাক্স হ্যাকিং পরিচালনার জন্যে যেমন একদিকে পারফেক্ট অপারেটিং সিস্টেম, অন্যদিকে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমেরও বেশিরভাগ কাজই সম্পন্ন করা যায়।
যেহেতু আমরা কালি লিনাক্স জগতে একেবারে নতুন ভাবে পদার্পণ করছি, সেহেতু শুরুতেই লিনাক্সের কিছু প্রয়োজনীয় মেন্যু এবং টুলসের সঙ্গে পরিচিত হই।
আপনি যেহেতু কালি লিনাক্স পূর্বে কোনদিন ব্যবহার করেননি, সেহেতু আপনি কিছুই বুঝতে পারবেন না। আমি এখানে অতীব প্রয়োজনীয় দু’চারটি টুলসের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি, যা শুরু করতেই প্রয়োজন। বাঁকিগুলো আস্তে আস্তে কাজের মাধ্যমে জানতে পারবেন। লিনাক্সের হোম পেজের একদম উপরে একটি মেন্যুবার দেখতে পাবেন, যেখানে হলুদ মার্ক করা কালো রঙ্গের একটি টুলসের আইকন দেয়া আছে। এটাকে বলা হয় টার্মিনাল (Terminal)। আপনাকে যেহেতু কমান্ড টাইপ করার মাধ্যমে কাজের নির্দেশ দিতে হবে, সেক্ষত্রে আপনি কমান্ড টাইপ করবেন কোথায়?
হ্যাঁ, এটাই সেই জায়গা, যেখানে আপনাকে কমান্ড টাইপ করতে হবে। বলতে পারেন এটি একটি ফাঁকা ব্লাক বোর্ড, যেখানে আপনাকে লিখতে হবে।
এরপর সবুজ মার্ক করা ড্রাগন এর আইকনটি হল মূল মেন্যু। এখানে ক্লিক করলে লিনাক্সে পূর্বে থেকেই সেটাপ থাকা যাবতীয় টুলসের লিস্ট পেয়ে যাবেন। নিচের দিকে টুলসের সংক্ষিপ্ত একটি লিস্ট দেখতে পাচ্ছেন। উপর থেকে তিন নাম্বার অপশনটি হল- All Applications এখানে ক্লিক করলে সমস্ত টুলসের লিস্ট পেয়ে যাবেন।
ঠিক তার নিচেই রয়েছে 01- Information Gathering – টুলস, যার মাধ্যমে টার্গেটের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
এর নিচে রয়েছে ধারাবাহিকভাবে,
02 – Vulnerability Analysis
03 – Web Application Analysis
04 – Database Assessment
05 – Password Attacks
06 – Wireless Attacks, ইত্যাদি।
আপনি যদি মনে করেন, এসব টুলস উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের টুলসের মত একাকি রান করে প্র্যাকটিস শুরু করবেন, তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন। কাজেই, তাড়াহুড়ো না করে ধীরে ধীরে সামনের দিকে এগোতে থাকুন। হ্যাকিং যদি এতোটাই সহজ হতো, তাহলে সবাই রাতারাতি হ্যাকার বনে যেত।