(৩)
বেলা দুটো নাগাদ ঈশ্বরপুকুর লেন চনমনিয়ে উঠল। বস্তির সরু সরু গলিতে ছোটাছুটি শুরু হয়ে গেল। পিলপিল করে স্ত্রীলোক এবং শিশুরা বেরিয়ে আসছে বাইরে। অনুর মাকে যেন শব্দের রথে চাপিয়ে নিয়ে আসছে ছেলেরা। দশ বারোটা কণ্ঠ থেকে ছিটকে উঠছে হরি বোল। ট্রাম রাস্তা থেকে জানান দিতে দিতে আসছে ওরা। সেই ডাকে ঘরে থাকা তিন নম্বরের বাসিন্দাদের পক্ষে অসম্ভব।
খাঁটিয়াটা নামানো হল গলির মুখে। দলটার অনেক পেছনে আসছিল অনুপমা, বোধহয় তাল রাখতে পারছিল না ওদের চলার সঙ্গে। মিনিট খানেক বাদেই ভিড় সরিয়ে মায়ের বুকের ওপর আছড়ে পড়ল, ওমা, মা গো, কেন চলে গেলে গো!
তিন নম্বরের এক বউ বলল, সতী সাবিত্রী ছিল, মরার সময় একটুও কষ্ট পায়নি। আর একজন বলল, অনুর ছোট ভাই দুটোকে নিয়ে এস, শেষবার মাকে দেখে নিক।
অনুপমা কান্না থামাচ্ছিল না। মায়ের শরীরের ওপর বারংবার আছড়ে পড়ছিল সে। হঠাৎ ন্যাড়া চেঁচালো, এই দিদি, তোর বুক দেখা যাচ্ছে!
ন্যাড়া দাঁড়িয়েছিল মায়ের পায়ের পাশে। আলুথালু অনুপমার বুকের আঁচল সরে গিয়েছিল অনেকক্ষণ। ভোর বেলায় অন্তর্বাস পরা ছিল না, সেই অবস্থায় হাসপাতালে ছুটেছিল! এখন চাপাচাপিতে বোতাম ছিঁড়েছে ওপরের, অনেকটা দেখা যাচ্ছে যা কিনা শোকের সময় লোকে খেয়াল করে না। কিন্তু ন্যাড়া দেখতে পেল, লোকগুলো মাকে দেখার নাম করে দিদির বুকের দিকে তাকিয়ে আছে। সে সহ্য করতে পারছিল না। তাই আর একবার চিৎকার করল, এই দিদি!
এবার অনুপমা সম্বিত ফিরে পেয়ে আঁচলটা টানল কিন্তু কান্না থামাল না। এই সময় পেছনে মোক্ষবুড়ির কনকনে গলা বাজল, এই হাভাতের দল, মচ্ছব দেখতে এয়েছে না মড়া দেখছে না। আমাদের ঠাকুর দেখছে, সর সর, আমায় যেতে দে। জমাট ভিড়টাকে যেন ছুরির মত কাটল শব্দগুলো। তার ফাঁক দিয়ে ঘুর ঘুর করে বুড়ি এসে দাঁড়াল খাটের পাশে। বুড়ির লিকলিকে হাত বাচ্চা দুটোকে ধরে রয়েছে। তাদের মাকে শুয়ে থাকতে দেখল তারা। একটা চাদরের ওপর মাথা কাত করে শুয়ে আছে অনুর মা। আর একটা সাদা চাদর তার গলা অবধি টানা। মোক্ষবুড়ি খাটিয়ার পাশে হাঁটু ভেঙ্গে বসল। তারপর হাতড়ে হাতড়ে বউটির চিবুক স্পর্শ করল, যাও বউ মা, যাও। কিন্তু আমার যে যেতে ইচ্ছে করে না! কর্তা গেল, ছেলে গেল, নাতিরা দুবেলা লাথি মারে তবু থাকতে ইচ্ছে করে! কর্তাকে গিয়ে আমার কথা–। বুড়ি বিড়বিড় করছিল। হঠাৎ অনুপমা মাকে ছেড়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল বুড়ির ওপর, তোমার জন্যে, তোমার জন্যে মা মরেছে। হাতে পায়ে ধরে চা খেয়ে আবার চুকলি কাটতে গিয়েছিলে। মানুষটাকে রাগিয়ে দিয়ে মেরে ফেলল রে!
অনুপমার ভরা স্বাস্থ্যের তলায় পড়ে মোক্ষদা বুড়ি চিঁ চিঁ করছিল। সঙ্গে সঙ্গে হই হই শব্দ উঠল। কয়েকটা হাত দ্রুত টেনে সরিয়ে আনল অনুপমাকে। সে আবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছে। প্রথমে মনে হয়েছিল মোক্ষবুড়ি উঠবে না। একজন টেনে তুলে বসিয়ে দিতে মোক্ষবুড়ি চেঁচিয়ে উঠল, ওরে তোরা আমায় এই খাটিয়ায় শুইয়ে দে, বউমার সঙ্গে আমিও চলে যাই।
তিন নম্বরের তাবৎ মানুষ কথাটা শুনে হ্যাঁ হ্যাঁ করে হেসে উঠল। শুধু নিমু চা-ওয়ালা চেঁচিয়ে উঠল, তোরা কি রে, একটা জ্বলজ্যান্ত মড়ার সামনে দাঁড়িয়ে হাসছিস।
মোক্ষবুড়ি বলল, ওর মাথায় সিঁদুর দাও সকলে, পুণ্যবতী ছিল লা।
এই সময় একটি কালো প্যান্ট আর লাল গেঞ্জি পরা ছেলে এসে ন্যাড়াকে ডাকল, এই ন্যাড়া শোন!
ন্যাড়া ঘাড় ঘুরিয়ে তাকে দেখল, কি?
তোর বাপ খবর পেয়েছে?
জানি না। ন্যাড়া মাথা ঝাঁকাল।
নিমু বলল, যাচ্চলে। মা মরল আর বাপকে খবর দিসনি?
ন্যাড়া খিঁচিয়ে উঠল, আমি টাইম পেলাম? সকাল থেকে শালা কিছু খাইনি মাইরি। দিদিটা তো শুধু কেঁদেই যাচ্ছে।
নিমু বলল, ডিউটি থেকে তো আসার সময় হল। ভোর বেলায় যেতে দেখেছিলাম। তোমরা আর একটু অপেক্ষা কর ওর জন্যে।
লাল গেঞ্জি ন্যাড়ার হাত ধরল, এদিকে আয়।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও ন্যাড়া ওর সঙ্গে জটলা থেকে বেরিয়ে এল। রাস্তার উল্টো দিকে শিব মন্দিরের পাশের রকে বসে শুয়ে শরীর এলিয়ে রয়েছে তিন নম্বরের কয়েকজন। ওরা ন্যাড়ার চেয়ে বয়সে ঢের বড়। হাসপাতাল থেকে ডেডবডি এনে জিরোচ্ছে সবাই। ন্যাড়াকে ওদের সামনে নিয়ে গিয়ে লাল গেঞ্জি বলল, নে কি বলবি বল।
খুরকি পা নাচাতে নাচাতে বলল, তোর মায়ের জন্যে শ্মশানে যাচ্ছি, বাড়ির ভাত তো চোট হয়ে গেল। আমাদের খাওয়ানোর জন্যে মাল নিচ্ছিস তো?
মাল? টাকা?
হ্যাঁ রে।
আমার কাছে টাকা নেই।
আর জি কর থেকে বডি কাঁধে বয়ে নিয়ে এসে অর্কর ঘাড় টনটন করছিল। কথাটা শুনে বলল, সে কি রে? টাকা না হলে সৎকার হবে কি করে?
ন্যাড়া বলল, বাপ তো বাজারের টাকাই দিয়ে যায় নি আজ।
খুরকি বলল, তোর দিদির কাছে আছে কি না দ্যাখ!
ন্যাড়া আবার ফিরে গেল ভিড়ের মধ্যে। অনুপমা মায়ের পায়ের ওপর মাথা রেখে পড়েছিল। ন্যাড়া গিয়ে তার পাশে বসল, এই দিদি, তোর কাছে টাকা আছে? মাকে পোড়াতে লাগবে!
নিস্তেজ অনুপমার কানে টাকা শব্দটা প্রবেশ করল। সে ওই অবস্থায় মাথা নাড়ল, না! সেইসময় গুঞ্জন উঠল। ঈশ্বরপুত্র লেনের মুখে অনুর বাবা হরিপদকে দেখা যাচ্ছে। অলস পায়ে যেন ঝিমোতে ঝিমোতে আসছে লোকটা। মাটিতে চোখ রেখে যেন কিছু ভাবতে ভাবতে হাঁটছে। সঙ্গে সঙ্গে তিন নম্বরের বাসিন্দারা চুপ করে গেল। এখনই একটা নাটক অভিনীত হতে যাচ্ছে, পর্দা উঠছে যেন। আর একটু কাছে এসে ভিড়টাকে দেখে হরিপদ থমকে দাঁড়াল। এরকম ভিড় এই রাস্তায়। ব্যাণ্ড পার্টি গেলে হয়, ঠাকুর গেলে হয় আবার বর এলেও। সে বেশী গা না করে পাশ কাটিয়ে ভেতরে ঢুকতে যাচ্ছিল কিন্তু নিমু তাকে থামাল, ও হরিপদ। একটু দাঁড়াতে হবে যে!
ভিড়ের জন্যে বোধহয় খাটিয়াটা নজরে পড়েনি হরিপদর, চোখ তুলে জিজ্ঞাসা করল, কি ব্যাপার? আমি কেন?
নিমু যেন একটু ইতস্তত করল, তোমাকে তো পাওয়া যায় না, বাস নিয়ে ঘুরছ তাই খবরটা দেওয়া হয়নি। তোমার বউ আজ সকালে, মানে ইয়ে, মরে গেছে।
হরিপদ যেন বুঝতেই পারল না কথাটা, মরে গেছে মানে?
নিমু ততক্ষণে ওর কাঁধে হাত রেখেছে, শরীর খারাপ করছিল, ছেলেরা হাসপাতালে নিয়ে গেল। ওই তো, এইমাত্র নিয়ে এসেছে ওরা।
মুহূর্তে জড়ভরত হয়ে গেল মানুষটা। থপথপ পায়ে এগিয়ে গেল দ্বিভক্ত ভিড়ের মধ্যে দিয়ে। অনুপমা মুখ তুলে তার পায়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল বাবা গো বলে। হরিপদ শীতল চোখে স্ত্রীকে দেখছিল। এত বছর ধরে যে শরীরটা তাকে সুখ দিয়ে গেছে সেটা নিঃসাড়ে পড়ে আছে খাটিয়ায়। হরিপদর ঠোঁট নড়ল, মরে গেল!
নিমু সঙ্গে ছিল। বলল, হার্টের অসুখ ছিল নাকি?
হরিপদ ঘাড় নাড়ল, জানি না। বাজারের টাকা দিইনি আজ। নিজের সঙ্গেই কথা বলছিল সে। এমনকি পায়ের ওপর আঁকড়ে থাকা মেয়ের অস্তিত্ব যেন টের পাচ্ছিল না।
নিমু বলল, আর ভেবে কি হবে। তবে কিনা তোমার বউ একটুও কষ্ট পায়নি। এরকম যাওয়া খুব ভাগ্য হলে হয়।
পায়ের ওপর পড়ে থাকা মেয়েকে সরিয়ে আরও কয়েকটা পা এগিয়ে গেল হরিপদ। তারপর ধীরে ধীরে স্ত্রীর মুখের সামনে উবু হয়ে বসে পড়ল। তার একটা হাতের ওপর খোঁচা খোঁচা দাড়িময় গাল, একদৃষ্টে সে স্ত্রীর মুখ দেখতে লাগল। বন্ধ চোখের পাতা, ঠোঁট ঈষৎ খোলা-হরিপদর মাথার ভেতরটা হঠাৎ অন্ধকার হয়ে গেল।
হই হই করে ছুটে এল সবাই। ধরাধরি করে নিমুর চায়ের দোকানের বেঞ্চিতে নিয়ে গেল ওরা হরিপদকে। মাথাটা ঝট করে পড়েছিল খাটিয়ার ওপর, ঠিক বউএর মুখের সামনে। সেখানটা কেটে গেছে। অজ্ঞান হরিপদকে নিয়েই এখন সবাই ব্যস্ত। ন্যাড়া সমস্ত ব্যাপারটা দেখল। তারপর ধীরে ধীরে উল্টো ফুটের রকে চলে এল; দিদির কাছেও টাকা নেই।
খুরকি বলল, চল রে, এ শালার মড়া পোড়াতে কে যাবে!
যাকে বলল সে শরীরটা দুমড়ে মুচড়ে বলল, তোর বাপের কাছে পয়সাকড়ি নেই? জিজ্ঞাসা করেছিস?
ন্যাড়া বলল, বাপ বাজারের টাকাই দেয়নি আজ। তার ওপর অজ্ঞান হয়ে আছে এখন।
খুরকি বলল, নক্সা! খেতে দেয় না আর মরে গেলে নক্সা মারায়। আবে কিলা, বডিটাকে হাপিস করতে কত মাল লাগবে রে?
কিলা বলে যাকে সম্বোধন করেছিল সে একমনে মশলা মিশিয়ে কাগজটা পাকাচ্ছিল। বলল, দেড়শ।
খুরকি বলল, ফোট। এত লাগবে কেন?
কিলা বলল, শ্মশান তো চিনিস না? সোনাগাছির চেয়েও হারামি। একটা না একটা ফ্যাকড়া বের করবেই। আমি মাইরি আটানব্বইটা বডি পার করলাম, আমাকে শেখাস না।
বলতে বলতে কিলার সিগারেট পাকানো হয়ে গিয়েছিল। পাশের ছেলেটি অনেকক্ষণ থেকেই দেশলাই বের করে তাক করেছিল, এবার ফস করে আগুন জ্বেলে হাতের আড়ালে ধরল। কিলার সিগারেট ধরতেই একটা কটু গন্ধ বের হল। খুরকি বলল, আমাকে দে।
কিলার কানে কথাটা যাবে না তা সবাই জানে। চোখ বন্ধ করে একটানে অর্ধেকটা কমিয়ে তবে সে সেটাকে হাত বদল করবে! সবাই এখন ওর মুখের দিকে তাকিয়ে, শুধু অর্ক ন্যাড়াকে দেখছিল। একটা খাটো ময়লা সাদা কাপড়ের হাফপ্যান্ট আর গেঞ্জি পরে কিলাকে দেখছে। মা মরে যাওয়ার পর এক ফোঁটা কাঁদেনি। ওপাশের জটলাটা একটু একটু করে হালকা হচ্ছে। মড়ার আকর্ষণ বোধহয় বেশীক্ষণ থাকে না। কিন্তু বডিটাকে পোড়ানো দরকার। আজ অবধি কখনও শ্মশানে মড়া নিয়ে যায়নি সে। এরকম চান্স ছাড়া যায় না। অর্ক রক ছেড়ে উঠে দাঁড়াল, একবার পার্টি অফিসে গেলে হয় না?
খুরকির কপালে ভাঁজ পড়ল, কেন?
অর্ক বলল, সৎকারের টাকার জন্যে?
খুরকি মুখ বেঁকালো, আমি যাব না। সতীশটা এক নম্বরের হারামি। যদি পার্টি না করত অ্যাদ্দিনে ওর পেট টানতাম।
কিলা চোখ খুলল। হাতের সিগারেটটা পাচার করে দিয়ে বলল, চল রে অক্ক! আমি যাব। সতীশের বাপ দেবে টাকা। পার্টির জন্যে জান লড়িয়ে দিয়েছি আর এখন দেবে না বললেই হল!
খুরকি ছাড়া সবাই উঠল। সিগারেটটা এখন খুরকির হাতে। এপাড়ায় সবাই জানে কিছুদিন আগে খুরকির সঙ্গে সতীশের খিচু হয়ে গেছে। ফালতু কেসে তুলে নিয়ে গিয়েছিল বড়বাবু। বেধড়ক পেঁদিয়েছিল লক আপে পুরে। খুরকির মা তখন ছুটেছিল সতীশের কাছে। সতীশ থাকে তিন নম্বরেই, একটু ভেতরের দিকে। সি পি এমের লোকাল সেক্রেটারি। নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক। বিয়ে থা করেনি, কাঁধে কাপড়ের ব্যাগ আর পাজামা পরে খুব সিরিয়াসলি পার্টি করে। খুরকির মাকে সতীশ নাকি বলেছিল, সমাজবিরোধীদের সঙ্গে পার্টির কোন সম্পর্ক নেই। আপনার ছেলে খুর চালায় তা সবাই জানে। আমি গেলে পার্টির ইমেজ খারাপ হবে। খুরকির মা নাকি খুব কেঁদেছিল কিন্তু সতীশ কথা শোনেনি। বলেছিল, কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশ, সমাজবিরোধীদের প্রশ্রয় দেওয়া চলবে না। তখন খুরকির মা গিয়েছিল নুকু ঘোষের কাছে। একসময়, কংগ্রেসের আমলে নুকু ঘোষ ছিল এপাড়ার সর্বেসর্বা। সি পি এম ক্ষমতায় আসার পর থেকে নুকু ঘোষের দিন গিয়েছে। কিন্তু পাড়ায় ওর জনপ্রিয়তা ছিল সেটা যায়নি। নুকু ঘোষ বলেছিল, কেন? আমার কাছে কেন? কমরেড সতীশ কি বলল?
খুরকির মা ঘটনাটা বলেছিল। শুনে নুকু ঘোষ নাকি খুব হেসেছিল। বলেছিল, কেন, কিলাটা সমাজবিরোধী নয়? গাঁজা খায়, সিনেমায় টিকিট ব্ল্যাক করে। তা ওকে যখন ধরে তখন সতীশ ছাড়াতে যায় কেন? খুরকির ওপর সতীশের নিশ্চয়ই কোন কারণে খার আছে। কিন্তু তোমার ছেলে কি আমার কথা শুনবে?
খুরকির মা মাথা নেড়েছিল, হ্যাঁ শুনবে।
ছাই শুনবে। এসব হারামির বাচ্চাদের আমার জানা আছে। আমরা পাওয়ারে না আসা অবধি শুনবে না। অলরাইট, আমি দেখছি, ছাড়া পেলে আমার সঙ্গে দেখা করতে বলল। তা নুকু ঘোষ কিন্তু কথা রেখেছিল। সেই লালবাজার থেকে বড়বাবুকে বলিয়ে ছাড়িয়ে এনেছিল খুরকিকে। খুরকি বলেছিল, সতীশের পেট টানবে। তাই এখন সে পার্টি অফিসে যাবে না তা বলাই বাহুল্য।
ঈশ্বরপুকুর লেনের শেষপ্রান্তে পার্টির অফিস। সামনে একটা লাল ফ্ল্যাগ ঝুলছে। এই ভর দুপুরেও দরজা খোলা। ভেতরে মেঝেয় সতরঞ্চির ওপর দুটো ছেলে ঘুমুচ্ছে। কিলা চেঁচালো, সতীশদা!
ওর উচ্চারণ জড়ানো, গাঁজা টানবার পরই গলার স্বর ভারী হয়ে যায়। ছেলেদুটোর ঘুম ভাঙ্গছে না। অর্ক বলল, নেই বোধহয়। হয়তো অফিসে গিয়েছে।
কিলা মাথা নাড়ল, সতীশদা সাতদিনে একদিন অফিসে যায়। সোমবার। তুই গিয়ে ওদের তোল তো!
অর্ক এক লাফে রকে উঠে ঘরে ঢুকল। তারপর ঝুঁকে পড়ে জিজ্ঞাসা করল, এই, সতীশদা কোথায় রে?
দুজনেরই একসঙ্গে ঘুম ভাঙ্গল। অর্ক একটু হকচকিয়ে গিয়েছিল। পাশ ফিরে থাকায় সে বুঝতে পারেনি। কর্পোরেশন স্কুলের রঘুমাস্টার আর হরি মিষ্টান্নের কারিগরটা শুয়েছিল। দুজনেই তার চেয়ে বয়সে দ্বিগুণ। অথচ এদের সে তুই বলে ফেলেছে। রঘু মাস্টার বলল, সতীশ নেই।
নেই মানে? কোথায় গিয়েছে?
হরি মিষ্টান্নের কারিগর বলল, খেতে। ভজনদের বাড়িতে।
কিলা চেঁচিয়ে উঠল, চলে আয় অক্ক। ওটা শালা সতীশদার ফুলটুসের বাড়ি। ওখানেই যাই।
রঘু মাস্টার ঘাড় বেঁকিয়ে কিলাকে দেখল। কিলা বলল, আরে রঘু, তুই শালা চুকলি খোর?
না। রঘু মাস্টার দ্রুত মাথা নাড়ল।
কথাটা মনে রাখিস।
রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে অর্ক বলল, সতীশদার বোনের সঙ্গে রঘু মাস্টারের বিয়ে হবে।
বিলু বলল, কথা ছিল সেরকম কিন্তু এখন পাখি উড়ে গেছে।
অর্ক রেগে গেল, যা! যা জানিস না তা বলিস না। আমি শালা নিজের চোখে দেখেছি রঘু মাস্টার তানুদিকে চুমু খাচ্ছে!
কিলা থমকে দাঁড়াল, তুই নিজের চোখে দেখেছিস?
হা। একদিন অনেক রাত্তিরে। সতীশদার ঘরে। কেউ ছিল না তখন। আমি পেছন দিয়ে যেতে যেতে শব্দ শুনে জানলার ফাঁক দিয়ে দেখলাম। অর্ক বলল।
কিলা ঘুরে দাঁড়াল, আমি শালা রঘুটাকে খুন করব। আমি কথা বললে উত্তর দেয় না আর ও শালা চুমু খায়!
বিলু খপ করে কিলার হাত ধরল, এখন মাপ করে দাও ওস্তাদ। পরে এ নিয়ে ভাবা যাবে। ন্যাড়ার মা ওদিকে শুয়ে আছে।
কিলা সামান্য টলল। ওর চোখ এমনিতেই বেশ লাল, এখন যেন রক্ত ঝরছে। বিলু ওর হাত ধরে টানতে সে আবার ফিরল। ওরা দল বেঁধে পাশের সরু গলিটায় ঢুকে পড়তেই দেখল সতীশ আসছে। হ্যাণ্ডলুমের পাঞ্জাবি, পাজামা এবং কাঁধে ব্যাগ। ওদের দেখে সতীশ থমকে দাঁড়াল, কি ব্যাপার?
কিলা সবাইকে সরিয়ে তার সামনে গিয়ে দাঁড়াল, মাইরি সতীশদা, তুমি বল আমি ছিপিএম করি কি করি না?
সতীশ বিরক্ত হল, কি বলছিস বল!
কিলা হাত নাড়ল, না আগে তোমাকে বলতে হবে। খুরকি নুকু ঘোষের গেঞ্জি হয়েছে আর আমি? আমি ছিপিএমের জন্যে জান লড়িয়ে দিয়েছি, কিনা বল? ওই শালা রঘু মাস্টার কি করেছে?
সতীশ একটু অবাক গলায় বলল, রঘু মাস্টারের কথা আসছে কেন?
কিলা বোধহয় এতক্ষণে বুঝতে পেরেছে যে উত্তেজনাটা বেশী হয়ে গিয়েছে। সে বিলুকে বলল, বল না বে।
বিলু বলল, তোমাকে খুঁজতে গিয়েছিলাম পার্টি অফিসে। রঘু মাস্টার হেভি রঙ নিল। যাক ছেড়ে দাও এসব কথা। ন্যাড়ার মা মরে গেছে, বডি নিয়ে এসেছি পাড়ায়। কিন্তু পোড়াবার মাল নেই।
সতীশ বলল, আমি কি করব?
কিলা হাত নেড়ে অর্ককে দেখাল, অক্ক বলল তোমার কাছে আসতে।
সতীশ মুখ ফিরিয়ে অর্ককে দেখল। তারপর হেসে বলল, তোমার কি করে মনে হল আমার কাছে এলেই টাকা পাওয়া যাবে?
অর্কর এসব কথা ভাল লাগছিল না। লোকটা মাইরি সোজাসুজি কিছু বলছে না। সতীশ তাকিয়ে আছে দেখে সে বলল, আপনি ছাড়া অন্য কারো কথা মনে পড়ল না তাই।
সতীশ খুশি হল, ঠিক আছে। আমাদের এলাকায় কেউ মারা গেলে, অবশ্যই কিছু দায়িত্ব আমরা নেব। শোষিত মানুষের পাশে না দাঁড়ালে আমাদের সমস্ত কাজই বৃথা যাবে। কিন্তু মুশকিল হল আমার কাছে তো টাকা বেশী নেই। সমীরকে তো সন্ধ্যের আগে পাওয়া যাবে না। এক কাজ কর। তুমি এই টাকাটা রাখ।
পাঞ্জাবির ভেতরের পকেট থেকে দুটো দশ টাকার নোট বের করে সতীশ অর্কর হাতে দিল। অর্ক টাকাটা ধরে বলল, কিন্তু সন্ধ্যে অবধি তো ন্যাড়ার মাকে রাখা যাবে না! সতীশ মাথা নাড়ল, হ্যাঁ ঠিকই। আমাদের যা ফাণ্ড তা সমীরের কাছেই থাকে। তোমরা জানো আমি টাকা পয়সা হাতে রাখি না। এক কাজ কর। পাড়ার সম্পন্ন মানুষদের কাছে সামান্য চাঁদা তুলে নাও। এরকম ইস্যুতে কেউ না বলবে না। যদি তাতেও টাকা না ওঠে কারো কাছ থেকে ধার নিয়ে নিও সমীর এলে আমি ব্যবস্থা করব।
সতীশের সঙ্গেই ওরা গলি থেকে বেরিয়ে এল। এই ব্যবস্থাটা সবারই যেন মনের মতন হয়েছে। সতীশ বলল, অর্ক, তোমার নামটি কিন্তু ভারী সুন্দর।
কিলা বলল, তুমি মাইরি মাল না খেয়ে আনসান কথা বল। অক্ক মানে তো অক্কা পাওয়া। সুন্দর হল? ফোট।
অর্ক হেসে ফেলল, যা বে! অর্ক মানে হল সূর্য! সান।
.
সতীশ পার্টি অফিসে ঢুকে গেলে ওরা তিন নম্বরের সামনে চলে এল। ন্যাড়ার মাকে ঘিরে তখনও কিছু বউ এবং বৃদ্ধ দাঁড়িয়ে। খুরকি ওদের দেখে উঠে দাঁড়াল রক থেকে, কি বে, সতীশ মাল দিল?
কিলা মাথা নাড়ল, কুড়কুড়ি ছেড়েছে। বলল, পার্টির নাম করে চাঁদা তুলতে।
খুরকির মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। যদিও একটু আগে কিলার সিগারেট তাকে আচ্ছন্ন করেছে তবু অতিরিক্ত কলজের জোরেই বলল, সাবাস। চল মাইরি খেপ ধরি।
ঠিক হল তিন নম্বরের কোন ঘরে খাওয়া হবে না। কিলা বলল, চাঁদা তুলতে গেলে রসিদ চাইবে না? বিলু ব্যাপারটাকে উড়িয়ে দিল, দুব্বে, চাঁদা বলবি কেন? ডোনেশন নেব।
দলটা ক্রমশ বড় হচ্ছিল। একগাদাকুচো জুটে গেছে সঙ্গে। কিলা সেদিকে তাকিয়ে খেপে গেল, আরে, তোরা বাড়ি যা! পেছন পেছন এলে চামচিকে সেদ্ধ করে দেব।
বাচ্চাগুলো সরলো সামান্য, কিন্তু ভয় পেল না। বিলু বলল, থাকনা ওরা, দেখতে ভাল লাগবে। বেশ বড় দল হলে ওজন বাড়ে।
প্রথম আক্রমণটা হল নিউ তরুণ ডেকরেটর্সের ওপর। নিউ তরুণের মালিকের ব্যবসা এখন ভাল। দুপুরের খাওয়া সেরে ভদ্রলোক সবে তাঁর ঈশ্বরপুকুর লেনের দোকানে এসে বসেছেন এমন সময় ওরা হাজির হল। ছেলেগুলোকে তিনি চেনেন। প্রত্যেকটা পুজোয় চাঁদা দিতে হয়। ক্যানসারের মত এখন পুজোর সংখ্যা বাড়ছে।
নিরীহ মুখ করে বললেন, কি চাই ভাই?
কিলা বলল, ন্যাড়ার মা টেসে গেছে, তাই ডোনেশন চাই।
হকচকিয়ে গেলেন ভদ্রলোক, ন্যাড়ার মা?
কিলা ডাকল, আব্বে ন্যাড়া, এদিকে আয়।
ভিড় ঠেলে ন্যাড়া সামনে এসে দাঁড়াল। ভদ্রলোক ছেলেটিকে দেখলেন। সামান্য বয়স কিন্তু এর মধ্যেই মুখের চোয়াল চোয়াড়ে হয়ে গেছে। মাতৃবিয়োগের কোন চিহ্ন অভিব্যক্তিতে নেই।
ডোনেশন কেন?
পোড়াতে হবে না? বডি পচবে? একি ধুর মাইরি। কিলা অবাক গলায় বলল। ভদ্রলোকের মুখে রক্ত জমল। অর্ক তখন এগিয়ে এল, বুঝতেই পারছেন ওদের টাকা পয়সা নেই। সকারের জন্যে যে খরচ হবে তাই পাড়ার লোকদের কাছে চাইছি। সতীশদা বলে দিয়েছেন।
কথাটা শুনে মুখ বিকৃত করে ভদ্রলোক পাঞ্জাবির পকেটে হাত ঢুকিয়ে একটা পাঁচটাকার নোট বের করে বলল, এ ভাই ঠিক হচ্ছে না। তোমরা পাড়ার ছেলে তাই না বলতে পারি না। কিন্তু রোজ রোজ যদি আস।
খুরকি বলল, নক্সা মারাবেন না। রোজ রোজ কে আসে বে?
অর্ক টাকাটা তুলে নিয়ে বলল, চল।
কার বাইরে বেরিয়ে এসে কিলা বলল, এশালা অক্কটা মাইরি পাঁচ টাকায় ছেড়ে দিল! এর পর থেকে তুই একদম কথা বলবি না।
অর্ক টাকা রাখছিল। ঘুরে ঘুরে ঘন্টাখানেকের মধ্যে শ দেড়েক উঠে গেল। এর মধ্যে শুধু হরিনাথ দের বাড়িতে বেশ ঝামেলা হয়েছিল। অর্ক বলল, মাল তো উঠে গেছে এবার চল।
খুরকি বলল, কত উঠেছে?।
দেড়শো।
ওটা তো পোড়াতেই যাবে। এতগুলো শ্মশানযাত্রী খাবে তার টাকা? চল সেক্রেটারির বাড়িতে যাই। শালা কংগ্রেসী।
পাড়ার একমাত্র স্কুলের সেক্রেটারি ব্রজমাধব পাল এ পাড়া থেকেই এককালে কংগ্রেসের কাউন্সিলার ছিলেন। অতুল্য ঘোষ পার্টি ছাড়ার পর থেকে তিনিও রাজনীতি করেন না। স্কুলটাকে খুব ভাল চালাচ্ছেন ভদ্রলোক। বাপের প্রচুর বাড়ি আর পয়সা থাকায় এখন কোন কাজকর্ম করতে হয় না। বিরাট কোলাপসিবল গেটের সামনে দাঁড়াল ওরা। দারোয়ানকে বলল, পালবাবুর সঙ্গে দেখা করব।
দারোয়ান বলল কি চাই?
কিলা খিঁচিয়ে উঠল, তোর বাপের বিয়ে দেব! যা বলছি তাই কর।
খুরকি চাপা গলায় বলল, কিলা, মুখ সামলে, আমার পার্টির লোক।
বিলু বলল, ছোড় গুরু। ও এখন পার্টি করে না।
দারোয়ান ফিরে এল। পেছন পেছন নেমে এলেন ব্রজমাধব পাল। বিশাল শরীর। গিলেকরা পাঞ্জাবি আর চওড়া পাড় ধুতি পরে থাকেন সব সময়। ফসা মুখটা যেন ঈষৎ বিরক্ত, কি চাই?
ডোনেশন! বিলু বলল।
ডোনেশন? কি জন্যে?
খুরকি এগিয়ে গেল গেটের কাছে, স্যার আমি খুরকি।
কি নাম বললে?
খুরকি।
এরকম নাম কোন মানুষের হয়? বাপ মা রেখেছিল? কিলা চেঁচিয়ে উঠল, বাপ মা তুলে কথা বলবেন না! খুরকি ধমকালো, অ্যাই চুপ কর। ও আমাদের পার্টির লোক না স্যার! আমাকে চিনতে পারছেন না? সেই যে একবার নুকুদা আমাকে নিয়ে আপনার কাছে গিয়েছিল!
কবে বল তো?
সেই যে যেবার ছিপিএমরা আপনাদের স্কুলে বোমা মেরেছিল!
হ্যাঁ হ্যাঁ। ও, আচ্ছা তুমিই সেই? তা কি ব্যাপার?
এই যে ন্যাড়া, ওর মা ঝপ করে মরে গেছে। তাই আপনার কাছে এসেছি। কিছু টাকা কড়ি যদি দেন! খুরকির গলা খুব নরম শোনাচ্ছিল।
মড়া পোড়ানোর টাকা? ওতে তো তোমরা চোলাই গিলবে! ভদ্রলোক মুখ বিকৃত করে পিছু ফিরলেন।
সঙ্গে সঙ্গে কিলা চেঁচিয়ে উঠল, আবে খানকির ছেলে, তাতে তোর বাপের কি?
ব্ৰজমাধব পাল চটপট ঘুরে দাঁড়ালেন, কে বলল কথাটা? কে? জুতিয়ে মুখ ভেঙ্গে দেব হারামজাদা। আমার সঙ্গে ইতরামি? তোদের মত ইতর নিয়ে কত কারবার করেছি এককালে! কে বলল?
বাঘের মত ব্ৰজমাধবের গর্জনে সবাই চুপসে গেল। অর্ক চট করে সরে গেল আড়ালে। ব্রজমাধব ওর স্কুলের সেক্রেটারি, মায়ের সঙ্গে বেশ আলাপ আছে। খুরকি দুহাত তুলে বলল, ও স্যার আমাদের অ্যান্টি পার্টি! ওর কথা ছেড়ে দিন।
ছেড়ে দেব? তুমি বলছ কি! আমি খানকির ছেলে? অত বড় স্কুলটাকে চালাই আমি। প্রতিবছর চারপাঁচজন স্টার পায় আর আমাকে গালাগালি দিচ্ছে!
বিলা বলল, তা স্যার আপনি তো গবমেন্টের অর্ডার মানছেন না।
কি মানছি না?
আপনি স্কুলে ইংরেজি পড়াচ্ছেন। শালা দেশটাকে সাহেবদের চাকর করে দিতে চাইছেন। এটা কি ঠিক হচ্ছে? যেন বেশ ফাঁদে ফেলে দিয়েছে এমন ভঙ্গীতে কথা বলল বিলা।
বেশ করেছি। আমি ইংরেজি বলে কোন সাবজেক্ট রাখিনি। জেনারেল নলেজ হিসেবে আমি যা খুশি পড়াতে পারি! এ বিষয়ে তোদর সঙ্গে কথা বলব না। প্রচণ্ড উত্তেজিত দেখাচ্ছিল ব্ৰজমাধবকে।
খুরকি নরম গলায় বলল, স্যার রাগ করবেন না।
এসব শুনে কেউ চুপ করে থাকতে পারে না।
ছেড়ে দিন। ওরা সব অ্যান্টি পার্টি!
ওদের নিয়ে এসেছ কেন তুমি?
কি করব! এক বস্তিতেই থাকি! কিন্তু আপনি কিছু না দিলে আমার মুখ থাকে না। বেইজ্জত হয়ে যাব।
ব্ৰজমাধব ভাল করে খুরকিকে দেখলেন। তারপর বললেন, তুমি কাল সকালে নুকুকে নিয়ে আমার কাছে এসো।
আচ্ছা স্যার। কিন্তু—
কোন শ্মশানে নিয়ে যাবে?
নিমতলা!
ওখানে তো ইলেকট্রিক আছে! ঠিক আছে, ছেলেটার মায়ের নামটা আমাকে বলে যাও। তোমরা বডি নিয়ে গেলে ওরা পোড়াবার চার্জ নেবে না। আমি লোক পাঠিয়ে ব্যবস্থা করব।
প্রচণ্ড হতাশ হল মুখগুলো। শেষপর্যন্ত বিলু বলল, পুরো টাকাটাই ফিরি হয়ে যাবে?
ব্ৰজমাধব বললেন, বললাম তো! তোমাদের হাতে টাকা দেব না। নাম কি ওর মায়ের?
খুরকি ন্যাড়াকে বলল, আবে, তোর মায়ের নাম কি?
ন্যাড়া মাথা নাড়ল। একটু ভাবল, তারপর বলল, পুরো নাম জানি না, বাপ তো পুনি বলে ডাকত।
ব্রজমাধব বললেন, বাঃ, ছেলে হয়ে মায়ের নাম জানে না! হাসপাতালে কি নাম লিখিয়েছ?
বিলুর মনে পড়ল সেটা লিখিয়েছে অনু, অনুপমা। কাগজটা তার কাছেই আছে। পকেট থেকে সার্টিফিকেট বের করে সে অর্কর দিকে বাড়িয়ে দিল, পড় তো নামটা।
অর্ক পড়ল, অন্নপূর্ণা!
“কালপুরুষ” গল্প সমগ্র সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ