‘কামধেনু’ মাঝে মাঝেই পুরাণের কাহিনি থেকে উঠে আসে এখানে ওখানে। এবার কামধেনুর আবির্ভাব ঘটেছে হুগলি জেলার শ্রীরামপুরের ‘টিনবাজার’-এ। সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দশ মাসের বাছুর না প্রসব, না গর্ভসঞ্চার দিব্যি দুধ দিচ্ছে। খবর পেয়ে ‘আজকাল’-এর তরফ থেকে ১ জানুয়ারি ’৯৪ দৌড়লাম। সঙ্গী চিত্রসাংবাদিক কুমার রায়। গোটা কুড়ি গরু-মোষ নিয়ে গোয়াল ঘর। অনেক ভক্তের ভিড়। ভিড় ঠেকাতে বাঁশ বাঁধা হয়েছে। ভক্তদের হাতে হাতে ফুল, বেলপাতা, কলা, ধূপ, দুধ সংগ্রহ করতে ঘটি। বাছুরের মালিক বসনায়েক সিংহ বিহারের আরা জেলা থেকে ৩০ বছর আগে এখানে এসেছিলেন দুধের ব্যবসা করতে। এখন কামধেনুর ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে

পড়ছেন। বসনায়েকের ব্যবস্থাপনায় দু’বেলা পুরুত আসছেন। ঘন্টা নেড়ে ফুল-বেলপাতা দিয়ে পুজো করছেন কামধেনু।

৩০ ডিসেম্বর থেকে বসনায়েকের আস্তানার পাশে গজিয়ে উঠেছে অস্থায়ী দোকানে বিক্রি হচ্ছে ফুল, বেলপাতা, কলা, বাতাসা, ধূপ। ভিড় ভালই জমে উঠেছে। প্রণামীও পড়ছে। দিনে নাকি প্রণামী পড়ছে অন্তত ২০০ টাকা। এসব জানালেন ২৫ ডিসেম্বর থেকে ওখানেই থানা গেড়ে থাকা যুক্তিবাদী সমিতির শেওড়াফুলি শাখার ছেলে-মেয়েরা।

এ বছর দুর্গাপুজোর সপ্তমীর দিন প্রথম দুধ দেয় সংকর জাতের এই বাছুরটি। খবরটা হিন্দি দৈনিক বিশ্বামিত্র’তে প্রথম প্রকাশিত হয় ৬ ডিসেম্বর। তারপর থেকে ভিড় প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত বসনায়েক বিশ্বাস করতেন সংকর জাতের বাছুরের এমন দুধ দেওয়ার মধ্যে অলৌকিক কিছু নেই। হরমোন ইঞ্জেকশন দিলে গরু-মোষ দুধ বেশি দেয়, এটা বসনায়েক জানেন। এও জানেন, বাছুরকে হরমোন ইঞ্জেকশন দিলে গাভিন না হলেও বাঁটে দুধ আসে। এ-সবই বসনায়েক আমাকে জানিয়েছেন। তবে কামধেনুকে কোনও ইঞ্জেকশন দেননি, দিব্যি গেলে জানালেন। এখন বসনায়েক বাছুরটিকে ‘কামধেনু’ বা ‘ভগবান’ বলে কেন বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন জিজ্ঞেস করায় জানালেন, ‘বিন্ ইঞ্জেকশনে গরুর দুধ হয়, এমনটা কোনও দিন শুনিনি । ভক্তরাই এর নাম দিয়েছে ‘কামধেনু’। যে যা অসুখ-বিসুখ সারাবার কামনা নিয়ে এই দুধ তিন ফোঁটা খাচ্ছে, অসুখ সেরে যাচ্ছে। এত ভক্ত সকলেই কি তবে ভুল করছেন?’ জানি না, প্ৰণামী দিন দিন বেড়ে চলাটাই মিথ্যে বলার কারণ কিনা? আজকালের এই চিত্রসাংবাদিক কুমার রায় গোয়ালঘর থেকেই কিন্তু কুড়িয়ে পান অ্যাস্ট্রোজেন ইঞ্জেকশনের খালি অ্যাম্পুল। একই জিনিস এসেছে যুক্তিবাদী সমিতির উপস্থিত কর্মীদের হাতেও, রতন পালিত জানালেন।

বসনায়েককে বললাম, ‘চারজন রোগী দেব, তাঁরা এখানে এসে আপনার সামনেই দুধ খাবে। না সারলে ধরে নেব, আপনি সবার সঙ্গে প্রতারণা করছেন। আমার প্রস্তাবে রাজি আছেন?” বসনায়েক জানালেন, ‘আমার ইচ্ছে ছিল না হুজুর। নাম বলতে পারব না, তবে তারাই এটা নিয়ে ব্যবসা করছে। অবশ্য প্রণামীর ভাগ আমিও পাই। ওইসব চ্যালেঞ্জে আমি নেই।’

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পশুচিকিৎসা বিভাগের প্রাক্তন রোগ অনুসন্ধান আধিকারিক ডা: পরিতোষকুমার বিশ্বাসের মতে, ‘ল্যাকটোজেনিক হরমোন ইনজেক্ট করে বকনার বাঁটে দুধ আনা সম্ভব। এমন যদি হয়, গরুটা গর্ভবতী হয়েছিল এবং কোনও কারণে গর্ভ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, সে ক্ষেত্রেও এমনটা ঘটা সম্ভব। শরীরের বিভিন্ন হরমোনের কাজের ভারসাম্যে পরিবর্তনের ফলে বকনার দুধ আসতে পারে। মোট কথা, বকনার বাঁটে দুধ শারীরিক নিয়মেই আসে। এর মধ্যে অলৌকিক কিছু নেই। সংকর জাতের বাছুরদের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা বেশি ঘটে। প্রায় সব পশু চিকিৎসকেরই কম বেশি এমন ধরনের ঘটনা দেখার অভিজ্ঞতা আছে।

আর বকনার দুধ ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করালেও দেখবেন তা সাধারণ দুধই, বাড়তি কোনও মাহাত্ম্য নেই। আমরা কামধেনুর গোয়াল থেকে যখন বের হচ্ছি, তখন দর্শক অন্তত ২০০। প্রায় প্রত্যেকের হাতেই যুক্তিবাদী লিফলেট। শিরোনাম ‘শ্রীরামপুরের কামধেনুর রহস্য ফাঁস।’ স্লোগান ও পাল্টা স্লোগানের লড়াই চলছে দস্তুরমত—‘গোমাতা কী জয়’, ‘যুক্তিবাদ জিন্দাবাদ।’

♦ কিছু কথা

প্রথম খন্ড

♦ কিছু কথা

অধ্যায়ঃ এক

♦ মার্কিন গডম্যান মরিস সেরুলোঃ একটি ইতিহাস

অধ্যায়ঃ দুই

♦ যোগী-জ্যোতিষী হরেকৃষ্ণবাবা !

অধ্যায়ঃ তিন

♦ পঞ্চাশ বছর আগের বালক ব্রহ্মচারী এবং…

অধ্যায়ঃ চার

♦ মেঠাইবাবার রহস্যভেদ

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ হাড় ভাঙ্গার দৈব-চিকিৎসা

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ কাকদ্বীপের দৈব-পুকুর

অধ্যায়ঃ সাত

♦ আগরপাড়ায় ‘ভূতুরে’ আগুন

অধ্যায়ঃ আট

♦ প্রদীপ আগরওয়ালের সম্মোহনে ‘পূর্বজন্মে’ যাত্রা

অধ্যায়ঃ নয়

♦ কামধেনু নিয়ে ধর্মব্যবসা

অধ্যায়ঃ দশ

♦ বরানগরের হানাবাড়িঃ গ্রেপ্তার মানুষ- ভূত

অধ্যায়ঃ এগারো

♦ এফিডেভিট করে ডাক্তারের প্রশংসাপত্র নিয়ে ওঝাগিরি !

অধ্যায়ঃ বারো

♦ ‘গ্যারান্টি চিকিৎসা’র নামে হত্যাকারীর ভূমিকায় সর্পবিদ হীরেন রায়

অধ্যায়ঃ তেরো

♦ চলো যাই ফকিরবাড়ি

অধ্যায়ঃ চোদ্দ

♦ সাঁইবাবার চ্যালেঞ্জঃ পেটে হবে মোহর !

অধ্যায়ঃ পনেরো

♦ হুজুর সাইদাবাদীঃ মন্তরে সন্তান লাভ !

অধ্যায়ঃ ষোলো

♦ জলাতঙ্ক ও দৈব-চিকিৎসা

অধ্যায়ঃ সতেরো

♦ বিশ্বাসের ব্যবসায়ীরা ও নপুংসক আইন

দ্বিতীয় খন্ড

♦ কিছু কথা

অধ্যায়ঃ এক

♦ খেজুর তলার মাটি সারায় সব রোগ

অধ্যায়ঃ দুই

♦ পক্ষিতীর্থমের অমর পাখি

অধ্যায়ঃ তিন

♦ স্বামী রামদেবঃ সন্ন্যাসী, সর্বযোগসিদ্ধ যোগী, যোগচিকিৎসক !

অধ্যায়ঃ চার

♦ নাকালের দৈব-পুকুরঃ হুজুগের সুনামী

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ সায়েব যখন রেইকি করে রাঘব বোয়াল চামচা ঘোরে

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ লক্ষ্মীমূর্তি কালি হলেন আপন খেয়ালে

অধ্যায়ঃ সাত

♦ পাথর যখন কথা বলে

অধ্যায়ঃ আট

♦ ফাঁদে পড়ে জ্যোতিষী শ্রীঘরে

অধ্যায়ঃ নয়

♦ বিশ্বের বিস্ময় অলৌকিক মাতা জয়া গাংগুলী’র বিস্ময়কর পরাজয় এবং…

অধ্যায়ঃ দশ

♦ আই আই টিতে টেলিপ্যাথি দেখালেন দীপক রাও

অধ্যায়ঃ এগারো

♦ জন্ডিস সারাবার পীঠস্থান ইছাপুর

অধ্যায়ঃ বারো

♦ মালপাড়ার পেশা দাঁতের পোকা বের করা

অধ্যায়ঃ তেরো

♦ নিমপীঠের গুগি মা

তৃতীয় খন্ড

♦ কিছু কথা

অধ্যায়ঃ এক

♦ ওঝার ঝাড়ফুঁক আর টেরিজার লকেটে মণিহার রোগমুক্তিঃ কুসংস্কারের দু’পিঠ

অধ্যায়ঃ দুই

♦ ‘মেমারিম্যান’ বিশ্বরূপ-এর একটি বিশুদ্ধ প্রতারণা

অধ্যায়ঃ তিন

♦ কোটিপতি জ্যোতিষী গ্রেপ্তার হলেন

চতুর্থ খন্ড

অধ্যায়ঃ এক

♦ কিস্যা অক্টোপাস পল বিশ্বকাপ ফুটবলের ভবিষ্যৎ বক্তা

অধ্যায়ঃ দুই

♦ কিস্যা জ্যোতিষী বেজান দারওয়ালা

অধ্যায়ঃ তিন

♦ সাধারণ নির্বাচন ২০০৯ নিয়ে সব জ্যোতিষী ফেল

অধ্যায়ঃ চার

♦ মা শীতলার পায়ের ছাপ পুকুরঘাটেঃ রহস্যভেদ

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ যিশুর মূর্তি থেকে রক্তপাত

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ সত্য সাঁই-এর সত্যি-মিথ্যে

অধ্যায়ঃ সাত

♦ অলৌকিক উপায়ে সন্তান দেন ডা. বারসি

অধ্যায়ঃ আট

♦ জ্যোতিষীর বাড়িতে অলৌকিক আগুন

অধ্যায়ঃ নয়

♦ সম্মিলিত দুর্নীতির ফসল ‘মোবাইলবাবা’

অধ্যায়ঃ দশ

♦ জাতিস্মরঃ রাজেশ কুমার

♦ অলৌকিক শক্তিধরদের প্রতি চ্যালেঞ্জ

“যুক্তিবাদীর চ্যালেঞ্জাররা” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ

⇒ মন্তব্য করুন⇐

error: Content is protected !!