প্রথম যৌবনে উত্তর ২৪ পরগনার কামদেবপুরের ‘ফকির বাবা’র অলৌকিক ক্ষমতার কথা শুনে এক সময় যথেষ্ট আকৃষ্ট হয়েছিলাম। শুনলাম ফকির বাবা নাকি যে কোন রোগীর রোগ সারিয়ে দিতে পারেন। চিত্রাভিনেত্রী সুচিত্রা সেনের নাকি লিউকোমিয়া হয়েছিল। এ-দেশ ও বিদেশের প্রচুর চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলেন। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান সুচিত্রাকে রোগমুক্ত করতে পারেনি। ফকির বাবার কথা শুনে শেষ ভরসা হিসেবে সুচিত্রা ছুটে এসেছিলেন কামদেবপুরে। ফকির বাবা নাকি প্রমাণ করেছিলেন বিজ্ঞানের বাইরেও কিছু আছে। বাবার কৃপায় সুচিত্রা নাকি রোগমুক্ত হয়েছিলেন।
শনি, মঙ্গলবার ফকির বাবা তাঁর গুরুদেব গোরাচাঁদ পীরের সমাধির উপর তৈরি একটা ঘরে বসেন। পীরের সমাধির উপর বসে থাকলে ফকির বাবার উপর গোরাচাঁদ পীরের ভর হয়। ঘরের দরজা থাকে বন্ধ। এক এক করে দর্শনার্থীদের নাম ডাকা হয়। দর্শনার্থী বন্ধ ঘরের বাইরে বসেন। ফকির বাবা অ-দেখা মানুষটির অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ এবং সমস্যা সমাধানের উপায় সবই বলে দেন ভরের ঝোঁকে। সমস্যার সমাধান বাঁ রোগমুক্তির ওষুধ নিতে প্রার্থীদের আবার আসতে হয় শুক্র ও রবিবার।
ঠিক করলাম ফকির বাবার কাছে আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে যাব। ১৯৬৬-র এপ্রিলের এক শনিবার সকালে আমরা পাঁচ বন্ধুতে বেরিয়ে পড়লাম। আমার সঙ্গী ছিল তপন, গোরা, দিলীপ ও সমীর। তপন ও গোরা তখন সরকারী চাকুরে। দিলীপ কস্টিং ও চার্টার্ড পড়ছে। সমীর বাবার কনস্ট্রাকশন বিজনেস দেখছে। আমি স্নাতক হতে তৈরি হচ্ছি ও ছাত্র পড়াচ্ছি।
বারাসাত থেকে আট কিলোমিটারের মত উত্তরে কামদেবপুরের ফকির বাবার আস্তানা। পৌঁছে অবাক। সাত সকালে প্রায় মেলা বসে গেছে। বহু সহযাত্রীদের সঙ্গে ইতিমধ্যে বাসেই আলাপ হয়ে গিয়েছিল। তাঁরা প্রত্যেকেই বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে বা রোগ মুক্তির আশায় চলেছেন। অনেকে আমাদের পরিচয় ও আসার উদ্দেশ্য জানতে চাইলেন, বললাম।
টাকা-পয়সা দিয়ে নাম লিখিয়ে এবার আমাদের দীর্ঘ অপেক্ষার পালা। ঘুরে-ঘুরে বিভিন্ন মানুষদের সঙ্গে আলাপ করে, দোকানে দোকানে চা, কচুরি, জিলিপি খেয়ে আর ফকির বাবার কয়েকজন ভক্ত শিষ্যের সঙ্গে কথা বলে সময় কাটালাম। ফকির বাবার সম্বন্ধে অনেক খবরই পেলাম। ফকির বাবা নাকি এই অলৌকিক ক্ষমতা পেয়েছেন তাঁর স্বপ্নে পাওয়া গুরুদেব গোরাচাঁদ পীরের কাছ থেকে। গোরাচাঁদ পীর দেহ রেখেছেন ৭০০ বছর আগে। আসল নাম ছিল পীর হযরত সৈয়দ আব্বাস আলী। গৌরবর্ণের সৌম্য দর্শন পীরটিকে সংখ্যাগুরু হিন্দুরা নাকি ভালবেসে নাম দিয়েছিলেন গোরাচাঁদ।
স্বপ্নাদেশ পেয়ে ফকির হবার আগে ফকির বাবা সূর্য নামে পরিচিত ছিলেন। পুরো নাম, সূর্যকুমার মাইতি। ব্যবসা ছিল দুধ বিক্রি করা ও কবিরাজি। সূর্য মাইতির বাবা প্রিয়নাথ ছিলেন কবিরাজ। ছেলে সূর্য ওষুধ তৈরিতে সাহায্য করতেন। বর্তমানে সূর্য মাইতি ওরফে ফকির বাবার চার মেয়ে দুই ছেলে। ছেলেরা বাবাকে সাহায্য করছেন। কামদেবপুরের দোকানি-পশারিরাও ফকির বাবার পরম ভক্ত। ফকির বাবার অনেক অলৌকিক ঘটনার কথাই শুনলাম। ভরে ফকির বাবা ত্রিকালদর্শী হয়ে ওঠেন। তখন বন্ধ দরজার ওপাশে মানুষটি বসলেই বাবা তাঁর সব-কিছুই জানতে পারেন। এটুকু বুঝতে অসুবিধে হয় না, সপ্তাহের চারটে দিন বাবার কল্যাণে কামদেবপুরের আশেপাশের বহু দোকান-পশার করে দু-পয়সা ঘরে তুলছে।
কোনও কিছু চুরি গেলে বা হারিয়ে গেলে অবশ্য ফকির বাবার কাছে এসে লাভ নেই। একটা সাইনবোর্ডে লেখাই আছে, চুরি বা হারানোর জন্য আসবেন না।
দেখলাম, ভক্তদের কৃপায় বাবার অর্থের অভাব নেই। গাড়ি, বাড়ি সবই আছে।
একসময় আমাদের ডাক পড়তে শুরু হল। আমার ডাক পড়তে ফকির বাবার কাছে প্রশ্ন রেখেছিলাম, “আমি কি শিগগির কোন চাকরী-বাকরী পাব বাবা?”
বাবা উত্তর দিয়েছিলেন, “না, চাকরি তোর হবে না। কাঁচা আনাজের যে ব্যবসা এখন করছিস, তাই আরো বেশ কিছু বছর করতে হবে।“
১৯৬৬-র মে মাসেই, অর্থাৎ ঠিক তার পরের মাসেই আমি স্টেট ব্যাঙ্কে যোগ দিই।
কাঁচা-আনাজের সঙ্গে আমার সম্পর্ক চিরকালই ক্রেতা হিসেবে। ফকির বাবার এই ধরনের ভুল করার কারণ, আমাদের পাঁচ বন্ধুর পোশাক, কথাবার্তা, আলোচনা সবই ছিল মুদির দোকানি ও কাঁচা-আনাজের ব্যবসায়ীর মতো। ফকির বাবার খবর সংগ্রহকারীরা তাই আমাদের সঙ্গে আলাপ করে আমাদের নামের সঙ্গে যে পরিচয় ফকির বাবাকে দিয়েছিল, ফকির বাবা সেই পরিচয়কেই সত্যি বলে ধরে নিয়ে ছিলেন। তাই আমাদের পাঁচ বন্ধুর সমস্যা ও জীবিকা সম্পর্কেই পুরোপুরি ভুল করতে বাধ্য হয়েছিলেন।
১. অধ্যায়ঃ এক
১.৩ যুক্তিবাদী, মুক্তচিন্তার সেইসব মানুষ
২. অধ্যায়ঃ দুই
২.১ কুসংস্কারের বিরুদ্ধে বিজ্ঞান
২.২ শাসক শ্রেণির স্বার্থে কুসংস্কার পুষ্ট হচ্ছে
৩. অধ্যায়ঃ তিন
৩.২ বিখ্যাত মহারাজের শূন্যে ভাসা
৩.৩ ব্ল্যাক আর্ট ছাড়া সাধিকার শূন্যে ভাসা
৩.৪ লাঠিতে হাতকে বিশ্রাম দিয়ে শূন্যে ভাসা
৩.৫ বেদে-বেদেনীদের শূন্যে ভাসা
৩.৭ সাঁই বাবাঃ সাঁইবাবার অলৌকিক ঘড়ি-রহস্য
৩.১১ শূন্য থেকে হার আনলেন ও হার মানলেন সাঁই
৩.১২ সাঁইবাবার চ্যালেঞ্জঃ পেটে হবে মোহর!
৩.১৬ যে সাধকরা একই সময়ে একাধিক স্থানে হাজির ছিলেন
৩.১৭ অতিন্দ্রীয় ক্ষমতার তান্ত্রিক ও সন্ন্যাসীরা
৩.২০ অবতারদের নিজদেহে রোগ গ্রহণ
৩.২৬ বকনা গরুর অলৌকিক দুধ ও মেহবেব আলি
৩.২৭ বাবা তারক ভোলার মন্দির ও শ্রীশ্রীবাসুদেব
৩.২৮ যোগে বৃষ্টি আনলেন শিববাল যোগী
৩.২৯ চন্দননগরে সাধুর মৃতকে প্রাণ-দান
৩.৩০ ভগবান শ্রীসদানন্দ দেবঠাকুর
৪. অধ্যায়ঃ চার
৫. অধ্যায় পাঁচ
৬. অধ্যায়ঃ ছয়
৬.১ হিস্টিরিয়া, গণ-হিস্টিরিয়া, আত্ম-সম্মোহন, নির্দেশ
৭. অধ্যায়ঃ সাত
৭.২ সম্মোহনে আত্মা এলো ‘সানন্দা’য়
৭.৩ সম্মোহন নিয়ে নানা ভুল ধারণা
৮. অধ্যায়ঃ আট
৮.১ Illusion (ভ্রান্ত অনুভূতি)
৮.২ Hallucination (অলীক বিশ্বাস)
৮.৩ Delusion মোহ, অন্ধ ভ্রান্ত ধারণা
৯. অধ্যায়ঃ নয়
৯.২ ধর্মের নামে লোক ঠকাবার উপদেশ কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে
৯.৩ সোমনাথ মন্দিরের অলৌকিক রহস্য
৯.৪ প্রাচীন মিশরের ধর্মস্থান রহস্য
৯.৫ কলকাতায় জীবন্ত শীতলাদেবী ও মা দুর্গা
৯.৭ খেজুরতলার মাটি সারায় যত রোগ
৯.১৩ বার্মুডা ট্র্যাঙ্গেল রহস্য
১০. অধ্যায়ঃ দশ
১১. অধ্যায়ঃ এগারো
১১.২ ডুবোজাহাজে টেলিপ্যাথির পরীক্ষা
১১.৩ টেলিপ্যাথির সাহায্যে নোটের নম্বর বলা
১১.৪ টেলিফোনে টেলিপ্যাথিঃ আয়োজক লন্ডনের ‘সানডে মিরর’
১১.৭ টেলিফোন টেলিপ্যাথির আর এক আকর্ষণীয় ঘটনা
১১.৮ এমিল উদ্যা ও রবেয়ার উদ্যা’র টেলিপ্যাথি
১১.৯ অতীন্দ্রিয় ইউরি গেলারকে নিয়ে ‘নেচার’ (Nature)-এর রিপোর্ট
১১.১০ আই আই টি-তে টেলিপ্যাথি দেখালেন দীপক রাও
১১.১১ তবু প্রমাণ করা যায় তেলিপ্যাথি আছে
১২. অধ্যায়ঃ বার
১২.২ নায়াগ্রা জলপ্রপাত ভেঙ্গে পড়ার ভবিষ্যদ্বাণী
১৩. অধ্যায়ঃ তের
১৩.২ সাধু-সন্ন্যাসীদের অতীন্দ্রিয় দৃষ্টি
১৩.৩ ইউরি গেলারের অতীন্দ্রিয় দৃষ্টি
১৪. অধ্যায়ঃ চোদ্দ
১৪.২ মানসিক শক্তিতে রেলগাড়ি থামানো
১৪.৪ স্টীমার বন্ধ করেছিলেন পি.সি. সরকার
১৪.৬ লিফট ও কেবল-কার দাঁড় করিয়েছিলেন ইউরি গেলার
১৪.৭ মানসিক শক্তি দিয়ে গেলারের চামচ বাঁকানো
১৪.৯ ‘নিউ সায়েন্টিস্ট’ –এর পরীক্ষায় ইউরি এলেন না
১৫. অধ্যায়ঃ পনের
১৬. অধ্যায়ঃ ষোল
১৬.১ অধ্যায়ঃ ভাববাদ বনাম যুক্তিবাদ বা বস্তুবাদ
১৬.২ মুক্ত চিন্তার বিরোধী ‘মনু সংহিতা’
১৬.৩ আধ্যাত্মবাদ ও যুক্তিবাদের চোখের আত্মা
১৬.৪ আত্মা, পরলোক ও জন্মান্তর বিষয়ে স্বামী অভেদানন্দ
১৬.৫ স্বামী বিবেকানন্দের চোখে আত্মা
১৬.৬ আত্মা নিয়ে আরও কিছু বিশিষ্ট ভাববাদীর মত
১৬.৭ আত্মা প্রসঙ্গে চার্বাক বা লোকায়ত দর্শন
১৭. অধ্যায়ঃ সতের
১৭.১ জাতিস্মররা হয় মানসিক রোগী, নয় প্রতারক
১৮. অধ্যায়ঃ আঠারো
১৮.১ জাতিস্মর তদন্ত-১: দোলনচাঁপা
১৮.২ জাতিস্মর তদন্ত ২: জ্ঞানতিলক
১৮.৩ জাতিস্মর তদন্ত ৩: ফ্রান্সিস পুনর্জন্ম
১৮.৪ জাতিস্মর তদন্ত ৪: সুনীল দত্ত সাক্সেনা
১৮.৬ জাতিস্মর তদন্ত ৬: কলকাতায় জাতিস্মর
১৯. অধ্যায়ঃ ঊনিশ
১৯.২ উনিশ শতকের দুই সেরা মিডিয়া ও দুই জাদুকর
১৯.৩ প্ল্যানচেটের ওপর আঘাত হেনেছিল যে বই
১৯.৪ স্বামী অভেদানন্দ ও প্রেত-বৈঠক
১৯.৫ বন্ধনমুক্তির খেলায় ভারতীয় জাদুকর
১৯.৬ রবীন্দ্রনাথের প্ল্যানচেট-চর্চা
২০. অধ্যায়ঃ বিশ
“অলৌকিক নয়,লৌকিক- ১ম খন্ড ” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ