সাল ১৯৯৩। নভেম্বরের ২ তারিখ, মঙ্গলবার। যাচ্ছি ২৪ পরগণার কাকদ্বীপ অঞ্চলে ‘নাগের মহল’ গ্রামে। কলকাতা থেকে দূরত্ব ৮০ কিলোমিটারের মত। ‘আজকাল’ পত্রিকার তরফ থেকে চলেছি ‘অলৌকিক পুকুর’-এর মাহাত্ম্য দর্শন করতে। সঙ্গী চিত্র-সাংবাদিক কুমার রায়। সকাল থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে।
যতই নাগের মহলের কাছাকাছি হচ্ছি দেখা মিলছে লরি, মিনি-লরি, মেটাডোর বোঝাই স্নান সেরে ফেরা নারী-পুরুষ ও শিশুদের সঙ্গে। একই চিত্র। ভিজে কাপড়, ভিজে চুল, কপালে গোলা সিঁদুরের লম্বাটে টিপ। মাইল দুয়েক আগে থেকেই বুঝে যাই আমরা অলৌলিক পুকুরের কাছাকাছি এসে পড়েছি। ভ্যান রিকশায় স্নান সেরে ফেরা মানুষের ভিড়। ভিড় পায়ে হাঁটা মানুষের। অলৌকিক পুকুরের খোঁজটা দিয়েছিলেন এই অঞ্চলের কিছু মানুষ। তাঁরা চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন, এই পুকুরে স্নান করল নাকি সব রোগ সেরে যাচ্ছে। দ্রুত ভিড় বাড়ছে। পুকুরের
গাঁয়ে তোলা হচ্ছে বিশালাক্ষ্মীর মন্দির। গোটা ব্যাপারটা সরেজমিনে তদন্ত করাতেই আমাদের আসা।
পুকুরের মাইলখানেক দূরে পিচ রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে রিক্সো ভ্যানে চাপলাম। এখন বৃি নেই। তবে বেলা এখন দুপুর গড়িয়ে বিকেলের দিকে। ইট পেতে তৈরি রাস্তা। পিচ রাস্তা থেকে অলৌকিক পুকুর মাইল দেড়েকের পথ। এক মাইল দূর থেকেই ইট-রাস্তার দুপাশে বাঁশের খুঁটি পুতে খোড়ো ছাউনির অজস্র দোকান। চা, মণিহারি জিনিস, খেলনা, ঠাকুর-দেবতার ছবির ও খাবারের দোকান। মুড়ি-ঘুগনি ও পেটাপরোটার দোকান একটু বেশি। বিশাল আকারের পরোটা উনুন থেকে নামিয়েই দু-হাতে দমাদম পিটিয়ে দলা-মুচি করে রাখা হচ্ছে। ভাই নাম পেটাপরোটা—বিক্রি হচ্ছে কিলো দরে। ছবির দোকানগুলোয় বিশালাক্ষী মন্দির সহ অলৌকিক পুকুরের বাঁধানো ছবি বিক্রি হচ্ছে। ছবির দোকানেই পাওয়া যাচ্ছে আট পাতার নিউজপ্রিন্টে ছাপা পুস্তিকা ‘পুষ্করিণী মাহাত্ম্য’। দাম দু-টাকা। দেবেন ও নরেন মেঠাই বেচেছেন আজ ৯০০ এবং ১০০০ টাকার। শকুন্তলা পাড়ুই মুড়ি তেলেভাজা বেচেছেন ৪০০ টাকার। লক্ষ্মী, সরলা, সুবল মুড়ি ঘুগনি বিক্রি করেছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকার। প্রণব দাসের কলা বিক্রি হয়েছে ৫০০ টাকার। হরিপদ মণ্ডল, জয়া চা বিক্রি করেছেন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার।
এই পুষ্করিণী মাহাত্ম্যের রমরমা স্বল্পদিনের। এর মধ্যেই মন্দির কমিটি তৈরি হয়ে গেছে। মন্দিরের পাকা দেওয়াল তুলেছে কমিটি। ছাদটি এখনও ঢালাই হয়নি।
‘আজ একদম ভিড় হয়নি’ কর্মাধ্যক্ষ সমীররঞ্জন বৈরাগী জানালেন। ‘সকাল থেকে যা বৃষ্টি, ভক্তের ভিড় তাই আজ বেজায় রকম কম’ জানালেন কমিটির প্রভাবশালী নেতা দিবাকর প্রামাণিক । মন্দির কমিটির অন্যান্য প্রভাবশালী নেতারা হলেন জগদীশ বৈরাগী, শক্তিপদ কর, ঝন্টুপদ প্রামাণিক, বাবুলাল তাঁতী প্রমুখ। এঁরা কেউই বি জে পি করেন না। মন্দির কমিটির একজনও বিজেপি করেন না। বরং সি পি এম কেউ কেউ। গ্রাম পঞ্চায়েতেও আছেন কেউ কেউ।
গত মাস তিনেকে কত মানুষ স্নান সেরেছেন এই দৈব জলাশয়ে? মন্দির কমিটির কেউ বললেন দু লাখ, কেউ বললেন, দশলাখ। সমীররঞ্জন জানালেন গত পূর্ণিমায় দশ হাজার লোক স্নান করেছে । গত শনিবার মন্দিরে প্রণামী পড়েছে ৫ হাজার টাকা। কমিটির কাছে ডোনেশন পড়েছে ২৬০০ টাকা। পূর্ণিমার দিন দান ও প্রণামীতে পাওয়া গেছে ৫০ হাজার টাকা মত।
‘এই দৈব পুকুরের মালিক কি বিশালাক্ষ্মী মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা স্থানীয় প্রাক্তন জমিদার?” কথাটা জিজ্ঞেস করতেই কমিটির কয়েকজন রে-রে করে উঠলেন। তাঁরা সমস্বরে জানালেন— দু’পয়সা রোজগারের গন্ধ পেয়ে জমিদার বিষ্ণুপদ ও জ্ঞানেন্দ্রনাথ মিথ্যে দাবির গুজব ছড়াচ্ছে। এই পুকুর সরকারের খাস জমিতে।
‘কী কী রোগ সেরেছে?’
‘কী রোগ সারছে না বরং জানতে চান?’ বললেন সমীররঞ্জন, ‘কুষ্ঠ থেকে ক্যান্সার—সমস্ত সারছে।’
‘এইডস ?’
একটু লাজুক হেসে কমিটির একজন জানালেন, ‘কেউ তো মুখ ফুটে জানাবে না এইডস নিয়ে এসেছে। তবে কোনও এইডস রোগী এলেও এখানে স্নান করলে রোগ পালাবেই গ্যারান্টি দিচ্ছি।’
মন্দির কমিটির সামনে হাজির করতে একটি উদাহরণ সঙ্গে এনেছিলাম। স্নানার্থীদের থেকে সংগ্রহ করা উদাহরণ। উদাহরণটি দেখিয়ে মন্দির কমিটিতে বললাম, ‘এই ছেলেটা। গৌতম। কানের লতিতে ছোট্ট একটা ঘা। তিন বার স্নান করেছে। আজ নিয়ে চার বার। কই এর তো সারেনি।’ আমাদের ঘিরে-ধরা কমিটির একাধিক সদস্য গ্রিক কোরাস ধরনে সমস্বরে বলে উঠলেন, ‘ভক্তি থাকা চাই। বিশ্বাস থাকা নিয়ে কথা।’
অধিকাংশ মানুষের রোগ সারেনি। তাঁরা বারবার আসছেন। যদিও কমিটির সদস্যের মতে তিনটি ডোজই আরোগ্যের পক্ষে যথেষ্ট। সাধারণত, অর্থাৎ কিনা, তিনদিনে তিনটি ডুব। তবে, অসুখ দীর্ঘকালের হলে বেশ ক-বার আসা যাওয়া করতে হবে বৈকি। পথ্যি বলতে ঐ – বিশ্বাস ও ভক্তি।
তবে, সমীক্ষা চালাবার পর, সত্যের খাতিরে, আমরা এটা স্বীকার করতে বাধ্য যে কেউ কেউ বলেছেন, তাঁদের অসুখ সেরে গেছে। হাসনার কল্পনা মণ্ডল, ‘ফল পাচ্ছি না।’ কাকদ্বীপের জ্যোৎস্না বিশ্বাস—হাঁপানি। সারছে না। নামখানার নূর বিবি। গেঁটে বাত। চারদিন এলেন। ফলং নাস্তি। কিন্তু ডায়মন্ডহারবারের পূর্ণ মণ্ডল? পেটের অসুখ, গ্যাস। দুই স্নানে সেরে গেছে। ফতেমার (ফলতা) ব্লাড প্রেসার। সে কী আজকের! তাই বোধহয় তিন ডুবে সারেনি। নীলা দাসীর মাথা ধরা? টিভি-তে সারিডন ধাঁচে হেসে কপালে হাত বুলিয়ে নীলা বললেন, ‘চোলে গেছে।’ অনন্ত মণ্ডল এসেছেন আমতা থেকে। অসুস্থ ভগিনীকে নিয়ে। অসুখের নাম বললেন না। তবে, সারছে। মানসিক কারণে শারীরিক অসুখ হলে অনেক সময়েই বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে রোগ সারানো হয়। আধুনিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে এই বিশ্বাস নির্ভর চিকিৎসা পদ্ধতিকে বলে ‘প্ল্যাসিবো’। এইসব বিশ্বাস-নির্ভর রোগ মুক্তির ক্ষেত্রে কোনও দৈব চিকিৎসার কেরামতি নেই এক পয়সাও। এই বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেছি ‘অলৌকিক নয়, লৌকিক’ গ্রন্থের প্রথম খণ্ডে।
যাই হোক। আমরা কিন্তু যা দেখে এলাম, এই পুণ্যপুষ্করিণী প্রকৃতপক্ষে একটি পচা ডোবা এখানে আগে গরু-মোষকে নিয়মিত স্নান করানো হত। এখান স্নান করে মারাত্মক কোনও অসুখ হলে, আমাদের ভয় হল, রোগী বা তাঁর আত্মীয়-স্বজন কনজিউমার্স ফোরামে চলে যাবেন না তো? চাইবেন না লাখ লাখ টাকার ক্ষতিপূরণ? এই পুণ্যপুষ্করিণী সরকারের খাস জমিতে। ভয় সেই জন্যে। সরকারকেই হয়ত গ্যাটের কড়ি খসাতে হবে শেষ পর্যন্ত। সাধু সাবধান !
দৈব-পুকুরে দ্বিতীয় বার
আজ ১৩ নভেম্বর। এগারো দিনের মাথায় আবার এনেছি নাগের মহল গ্রামের দৈব-পুকুরে। শনি আর মঙ্গল এমনিতেই আরোগ্য স্নানের দিন। তার ওপর আজ শনিবার পড়েছে কালীপুজো । ৪ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার ‘আজকাল’ পত্রিকায় ছবি সমেত দৈব-পুকুরের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। চার কলম জুড়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনটির শিরোনাম ছিল—’পুণ্যিপুকুর’ ঘিরে ব্যবসা জমজমাট। আজকালের প্রতিবেদনটির পর প্রত্যাশা করেছিলাম, অন্তত একটা ভাটার টান দেখব। পরিবর্তে গত দিনের তুলনায় আজ ভিড় বহুগুণ বেশি। খবর নিয়ে জানলাম এরই মধ্যে চল্লিশ হাজার মানুষের স্নান সারা।
আজও সেই একই। পিচ রাস্তায় গাড়ি ছেড়ে রিকশা ভ্যানে সওয়ার হলাম। আজও সঙ্গী কুমার রায়। ভ্যান থেকে নামতেই ঘিরে ধরলেন কমিটির লোকজন। ৪ নভেম্বর আজকালে প্রকাশিত লেখাটি নিয়ে তাঁদের আপত্তি। ক্ষোভ! কর্মাক্ষ্যক্ষ সমীররঞ্জন বৈরাগী বললন, ‘এখানে স্নান করলে ক্যানসার সারে, কুষ্ঠ সারে—এ সব আমি কখন বললাম ?”
আমি এমন একটা পরিস্থিতির জন্য তৈরিই ছিলাম। একটা ক্যাসেট কপি নিয়ে গিয়েছিলাম। টেপ রেকর্ডারে ক্যাসেটটা রেডি করাই ছিল। রেকর্ডারটা দেখিয়ে বললাম, ‘তাহলে এটা চালাই। নিজের গলা নিশ্চয়ই চিনতে পারবে ?”
সমীর এম এসসি পড়ে। মার্কসের ভক্ত। মার্কসের আর কোনও কথাকে মান্য করুক বা না করুক, মার্কস কথিত ‘প্রয়োজনে এক পা এগিয়ে দু-পা পিছোবে’ নীতিকে মান্য করে পিছিয়ে গেল। বলল, ‘না না। টেপ চালাবার দরকার নেই। যদি বলে থাকি তাহাহুড়োয় ভুল বলেছি। আমি বিজ্ঞানের ছাত্র, মার্কসবাদে বিশ্বাস করি। আপনি কী করে আশা করেন আমি এ-সব কথা বলবো বা এ-সব কথায় বিশ্বাস করবো?”
‘তাহলে মন্দির কমিটিতে ঢুকে কর্মাধ্যক্ষ হয়ে বসে আছ কেন? এতে কি তোমার চরিত্রের স্ববিরোধী দিকটাই প্রকাশিত হয়ে পড়ছে না?’
‘সে তো সব পুজো কমিটিতেই এখন মার্কসবাদী দলগুলো ঢুকছে। এদের বেলায় আপনি কী বলবেন?’
‘তুমি এই কথার মধ্যে দিয়ে কী জাস্টিফাই করতে চাইছ? পার্টির অনেকেই নীতিভ্রষ্ট, অতএব তোমারও নীতি মানার বালাই থাকতে পারে না ! মন্দিরে হাজার হাজার টাকার প্রণামী পড়ছে। তোমাদের কমিটিতে পড়ছে হাজার হাজার টাকার ডোনেশন। এতো দেখছি দৈব-পুকুর ঘিরে জম-জমাট ব্যবসা গড়ে তুলেছ তোমরা।’
আজ সমীর উত্তর দিচ্ছে খুব ভেবেচিন্তে ।
‘মন্দির কমিটি গড়া হয়েছে হাজার মানুষদের দেখ-ভাল করার জন্যে’, সমীর বলল, ‘এই যে সব টাকা আসছে তা দিয়ে ভক্তদের জন্য পায়খানা-বাথরুম এইসব করে দেব আমরা।’ ‘এখন পর্যন্ত তো কম টাকা জমা পড়েনি ভাই। সে-সব টাকা দিয়ে কিছু পায়খানা তৈরির কাজে তো হাত দিতে পারতে। দাওনি কেন?”
আমার প্রশ্নের কোনও জবাব দিল না। জবাব দেওয়ার নেই, তাই এই নীরবতা।
বললাম, ‘তুমি তো আজ বলছ, এগারো দিন আগে আমাকে যা বলেছ তা বলনি। পুকুরের বিজনেসটা জমে গেলে আবার ডিগবাজি খেয়ে বলবে না তো, আজ যা বলছ, সেগুলো বলনি।’ ‘এমনটা কেন ভাবছেন ?’
‘তোমার দ্বিচারিতা দেখে। তুমি যখন বিশ্বাসই কর না দৈব পুকুরের দৈব শক্তিতে, তখন কেন ফি-হপ্তায় হাজার হাজার রোগীদের প্রতারিত হতে দিচ্ছ? কত দূর-দূরান্ত থেকে গরিব-গুর্বো মানুষরা কষ্টের টাকা খরচ করে আসছেন ও ঠকছেন। এ-সব জেনেও তুমি এই কমিটির কর্মাধ্যক্ষ হয়ে বসে আছ ?’
আমরা কথার উত্তরে সমীর বললেন, ‘কাউকে তো আমরা আসতে বলছি না। কারও বিশ্বাসে আঘাতও করতে চাই না। কমিটি কারও বিশ্বাসে আঘাত হানতে যাবে না। তা ছাড়া এও তো ঠিক, আমি কী বিশ্বাস করি, তার ধার না ধরেই অনেকে দাবি করছে তাদের অসুখ সেরে গেছে।’ আর এক দফা ডিগবাজি খেলেন সমীর।
সমীরকে প্রায় সরিয়ে এগিয়ে এলেন কমিটির নেতা দিবাকর, ‘বিজ্ঞান পড়া মানুষ কি বিশ্বাস করল, না করল, তাতে কি এসে যায়? এই যে আপনি দৈব পুকুরের বিরুদ্ধে, আমাদের বিরুদ্ধে এত কিছু লিখলেন, এতে কি একটা লোকের আসা কমল? কমবে না। মানুষ যদি দেখে এই পুকুরে ডুব দিলে রোগ সারে, তাহলে আপনি হাজারটা বিরুদ্ধ লেখা ছাপলেও বিশ্বাসীদের ভিড় বাড়তেই থাকবে। সমীর দু-কলম বিজ্ঞান পড়ে ভাবছে অলৌকিক বলে কিছু থাকতে পারে না । আর চোখের সামনে দেখছে রোগীরা আসছে, ডুব দিচ্ছে, সেরে যাচ্ছে। তাইতে সীমার দ্বিধায় স্পষ্ট করে আমরা মন্দির কমিটি জানাচ্ছি, এই পুকুরে ডুব দিলে সব রোগ সারে। সব রোগ সারে।’
বললাম, ‘ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি আপনাদের কমিটির সামনে একটা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। ছ’জন ক্লিনিক্যালি অসুস্থ রোগী দেওয়া হবে। পরপর তিনটি শনি বা মঙ্গলবার তারা স্নান করবে। যদি একজনও সারে এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা পুরস্কার। না সারলে, ওদের কিছু দিতে হবে না। শুধু কমিটি ভেঙে দিতে হবে। আপনারা কি রাজি আছেন ?
কমিটির এক তরুণ স্বেচ্ছাসেবক বললেন, ‘চ্যালেঞ্জ নেবার কী আছে। বিশ্বাস হল ওষুধ। আপনার যদি বিশ্বাস না থাকে, তাহলে তো ভগবানও নেই।’
কমিটির কেউ কেউ জানালেন, দু’হাতে টাকা লুটছে যারা, তাদের কথা। তাঁরা আরও জানালেন স্থানীয় ব্যাঙ্কগুলোয় খোঁজ নিয়েছি। কমিটির নামে কোথাও কোনও অ্যাকাউন্ট নেই। একটা ফার্সিং জমা পড়েনি।
বিশালাক্ষ্মীর থানের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন স্থানীয় জমিদার বিষ্ণুপদ ও জ্ঞানেন্দ্রনাথ প্রামাণিক জমি (পুকুরসহ) মোট দু’বিঘে আট কাঠা। প্রামাণিকরা ছিলেন চকদার। যদিও মন্দির কমিটি আগাগোড়া বলে যাচ্ছে, এটা সরকারের খাস জমি। ওঁদের প্রাচীন প্রাসাদের বাইরে মহলে বসিয়ে প্রামাণিকরা দলিল দেখালেন। গাজন, পুজো, মেলা সবই হত এখানে। বিষ্ণুবাবুর ছেলে ডাঃ
পুলাকেশ প্রামাণিকের সঙ্গে কথা হল। ‘জানেন, মন্দির কমিটি এখন ওই জমিতে পা রাখতে দেয় না আমাদের?’ ডাঃ প্রামাণিক বললেন। খুলেই প্রামাণিকরা কেস করেছেন। আর্টিকেল টু টোয়েন্টি সিক্স। অভিযোগ : প্রতারণা। অভিযোগ : জবর দখল।
একটি সমীক্ষা চালিয়ে আমরা দেখলাম, শতকরা ৮৫ জনের স্নান করে কোনও উপকার হয়নি। সুজাতা সর্দার (১৫)। বাড়ি মন্দির-বাড়ি। মুখভর্তি গোটা গোটা ফোনার মত মাংসের গুটি। বেড়ে গেছে। মিহির (১০)। বাড়ি : সুতাচেতা। পোলিও। পরেশ মণ্ডল (৬০)। বাড়ি : বাগনান। বাত অজয় মিস্ত্রি। কামারহাট। হাতে পায়ে সাড় নেই, কেউ সারেনি। অসুখ বেড়ে গেছে শতকরা ৭৩ জনের। প্রশ্ন হল : স্বাস্থ্য দপ্তরের নড়ে চড়ে বসার সময় হয়েছে কি না। নাকি ওরাও তিথি নক্ষত্র দেখছেন ?
চন্দ্রশেখর মাইতি। বয়স ২৬। এম এ পরীক্ষা দিয়ে বসে আছে। কমিটির মেম্বার। ‘চ্যালেঞ্জ নিলাম।’ সে বলেছে, ‘কমিটিতে চ্যালেঞ্জের কথা তুলব। ওরা যদি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ না নেয়, আমি পদত্যাগ করব।’ চন্দ্রশেখর আমার ঠিকানা ও ফোন নম্বর নিলেন।
আজও চন্দ্রশেখরের কাছ থেকে কোনও চিঠি বা ফোন পাইনি। তবে এটুকু খবর পেয়েছি ১৬ নভেম্বর ১৯৯৩-তে চার কলম ছবিসহ প্রথম পৃষ্ঠায় ‘পুণ্যিপুকুর’-এর দ্বিতীয় কিস্তি প্রকাশিত হওয়ার পর দৈব-পুকুরের ব্যবসা মুখ থুবড়ে পড়েছে ভক্তের ভাটার টানে।
প্রথম খন্ড
অধ্যায়ঃ এক
♦ মার্কিন গডম্যান মরিস সেরুলোঃ একটি ইতিহাস
অধ্যায়ঃ দুই
♦ যোগী-জ্যোতিষী হরেকৃষ্ণবাবা !
অধ্যায়ঃ তিন
♦ পঞ্চাশ বছর আগের বালক ব্রহ্মচারী এবং…
অধ্যায়ঃ চার
অধ্যায়ঃ পাঁচ
অধ্যায়ঃ ছয়
অধ্যায়ঃ সাত
অধ্যায়ঃ আট
♦ প্রদীপ আগরওয়ালের সম্মোহনে ‘পূর্বজন্মে’ যাত্রা
অধ্যায়ঃ নয়
অধ্যায়ঃ দশ
♦ বরানগরের হানাবাড়িঃ গ্রেপ্তার মানুষ- ভূত
অধ্যায়ঃ এগারো
♦ এফিডেভিট করে ডাক্তারের প্রশংসাপত্র নিয়ে ওঝাগিরি !
অধ্যায়ঃ বারো
♦ ‘গ্যারান্টি চিকিৎসা’র নামে হত্যাকারীর ভূমিকায় সর্পবিদ হীরেন রায়
অধ্যায়ঃ তেরো
অধ্যায়ঃ চোদ্দ
♦ সাঁইবাবার চ্যালেঞ্জঃ পেটে হবে মোহর !
অধ্যায়ঃ পনেরো
♦ হুজুর সাইদাবাদীঃ মন্তরে সন্তান লাভ !
অধ্যায়ঃ ষোলো
অধ্যায়ঃ সতেরো
♦ বিশ্বাসের ব্যবসায়ীরা ও নপুংসক আইন
দ্বিতীয় খন্ড
অধ্যায়ঃ এক
♦ খেজুর তলার মাটি সারায় সব রোগ
অধ্যায়ঃ দুই
অধ্যায়ঃ তিন
♦ স্বামী রামদেবঃ সন্ন্যাসী, সর্বযোগসিদ্ধ যোগী, যোগচিকিৎসক !
অধ্যায়ঃ চার
♦ নাকালের দৈব-পুকুরঃ হুজুগের সুনামী
অধ্যায়ঃ পাঁচ
♦ সায়েব যখন রেইকি করে রাঘব বোয়াল চামচা ঘোরে
অধ্যায়ঃ ছয়
♦ লক্ষ্মীমূর্তি কালি হলেন আপন খেয়ালে
অধ্যায়ঃ সাত
অধ্যায়ঃ আট
অধ্যায়ঃ নয়
♦ বিশ্বের বিস্ময় অলৌকিক মাতা জয়া গাংগুলী’র বিস্ময়কর পরাজয় এবং…
অধ্যায়ঃ দশ
♦ আই আই টিতে টেলিপ্যাথি দেখালেন দীপক রাও
অধ্যায়ঃ এগারো
♦ জন্ডিস সারাবার পীঠস্থান ইছাপুর
অধ্যায়ঃ বারো
♦ মালপাড়ার পেশা দাঁতের পোকা বের করা
অধ্যায়ঃ তেরো
তৃতীয় খন্ড
অধ্যায়ঃ এক
♦ ওঝার ঝাড়ফুঁক আর টেরিজার লকেটে মণিহার রোগমুক্তিঃ কুসংস্কারের দু’পিঠ
অধ্যায়ঃ দুই
♦ ‘মেমারিম্যান’ বিশ্বরূপ-এর একটি বিশুদ্ধ প্রতারণা
অধ্যায়ঃ তিন
♦ কোটিপতি জ্যোতিষী গ্রেপ্তার হলেন
চতুর্থ খন্ড
অধ্যায়ঃ এক
♦ কিস্যা অক্টোপাস পল বিশ্বকাপ ফুটবলের ভবিষ্যৎ বক্তা
অধ্যায়ঃ দুই
♦ কিস্যা জ্যোতিষী বেজান দারওয়ালা
অধ্যায়ঃ তিন
♦ সাধারণ নির্বাচন ২০০৯ নিয়ে সব জ্যোতিষী ফেল
অধ্যায়ঃ চার
♦ মা শীতলার পায়ের ছাপ পুকুরঘাটেঃ রহস্যভেদ
অধ্যায়ঃ পাঁচ
অধ্যায়ঃ ছয়
অধ্যায়ঃ সাত
♦ অলৌকিক উপায়ে সন্তান দেন ডা. বারসি
অধ্যায়ঃ আট
♦ জ্যোতিষীর বাড়িতে অলৌকিক আগুন
অধ্যায়ঃ নয়
♦ সম্মিলিত দুর্নীতির ফসল ‘মোবাইলবাবা’
অধ্যায়ঃ দশ
“যুক্তিবাদীর চ্যালেঞ্জাররা” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ