শ্লোকঃ ৪৩

এবং বুদ্ধেঃ পরং বুদ্ধা সংস্তভ্যাত্মানমাত্মনা ।

জহি শত্রুং মহাবাহো কামরূপং দুরাসদম্ ॥ ৪৩ ॥

এবম্—এভাবে; বুদ্ধেঃ বুদ্ধির; পরম্পরতর; বুদ্ধা – জেনে; সংস্তভ্য— স্থির করে; আত্মানম্মনকে; আত্মনা – নিশ্চয়াত্মিকা বুদ্ধির দ্বারা; জহি—জয় করে; শত্রুম্— শত্রুকে; মহাবাহো – হে মহাবীর; কামরূপম্ — কামরূপ; দুরাসদম্—দুর্জয়।

গীতার গান

অপ্রাকৃত বুদ্ধি দ্বারা কর দাস্য তার ৷

ঘুচিবে সকল মোহ কাম ব্যবহার !!

সেই সে উপায় এক শত্রু জিনিবার ।

কামরূপ দুরাসদ কেহ নাহি আর ।।

অনুবাদঃ হে মহাবীর অর্জুন! নিজেকে জড় ইন্দ্রিয়, মন ও বুদ্ধির অতীত জেনে, নিশ্চয়াত্মিকা বুদ্ধির দ্বারা মনকে স্থির কর এবং এভাবেই চিৎ-শক্তির দ্বারা কামরূপ দুর্জয় শত্রুকে জয় কর।

তাৎপর্যঃ ভগবদ্গীতার এই তৃতীয় অধ্যায়ে আমাদের স্বরূপ যে পরম পুরুষোত্তম ভগবানের নিত্যকালের দাস, সেই সত্য উপলব্ধি করতে পেরে ভগবানের সেবায় নিয়োজিত হবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই অধ্যায়ে ভগবান বিশদভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, নির্বিশেষ ব্রহ্মে লীন হওয়া জীবনের চরম উদ্দেশ্য নয়। জড় জীবনে আমরা স্বাভাবিকভাবে কাম-প্রবৃত্তি ও জড়া প্রকৃতিকে ভোগ করবার প্রবৃত্তির দ্বারা প্রলোভিত হই। কিন্তু জড়া প্রকৃতির উপর আধিপত্য বিস্তার করা এবং জড় ইন্দ্রিয় উপভোগ করার বাসনা হচ্ছে বন্ধ জীবের পরম শত্রু। কিন্তু কৃষ্ণভাবনা অনুশীলন করার ফলে আমরা আমাদের ইন্দ্রিয়, মন ও বুদ্ধিকে নিয়ন্ত্রিত রাখতে পারি। আমাদের প্রবৃত্তিগুলিকে মুহূর্তের মধ্যে সংযত করা সম্ভব নয়, কিন্তু আমাদের অন্তরে কৃষ্ণভাবনার বিকাশ হবার ফলে আমরা অপ্রাকৃত স্তরে উন্নীত হতে পারি, বুদ্ধির দ্বারা মন ও ইন্দ্রিয়গুলিকে ভগবানের শ্রীচরণারবিন্দে একাগ্র করতে পারি। এটিই হচ্ছে এই অধ্যায়ের মর্মার্থ। জড় জীবনের অপরিণত অবস্থায়, নানা রকম দার্শনিক জল্পনা-কল্পনা এবং তথাকথিত যৌগিক ক্রিয়ার মাধ্যমে ইন্দ্রিয়-সংযমের প্রচেষ্টার দ্বারা আমরা অপ্রাকৃত স্তরে উন্নীত হবার যতই চেষ্টা করি না কেন, পারমার্থিক জীবনধারার অগ্রগতির ক্ষেত্রে সেই সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে। উন্নত বুদ্ধিযোগের দ্বারা কৃষ্ণভাবনার অমৃত লাভ করলেই পারমার্থিক উদ্দেশ্য সাধিত হবে।

ভক্তিবেদান্ত কহে শ্রীগীতার গান ৷

শুনে যদি শুদ্ধ ভক্ত কৃষ্ণগত প্ৰাণ ৷৷

ইতি—কৃষ্ণভাবনাময় কর্তব্যকর্ম সম্পাদন বিষয়ক ‘কর্মযোগ’ নামক শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার তৃতীয় অধ্যায়ের ভক্তিবেদান্ত তাৎপর্য সমাপ্ত ।

error: Content is protected !!