শ্লোকঃ ২৬
কামক্রোধবিমুক্তানাং যতীনাং যতচেতসাম্ ।
অভিতো ব্ৰহ্মনির্বাণং বর্ততে বিদিতাত্মনাম্ ॥ ২৬ ॥
কাম—কাম, ক্রোধ— ক্রোধ; বিযুক্তানাম্—মুক্ত; যতীনাম্ — সন্ন্যাসীদের যতচেতসাম্—সংযতচিত্ত; অভিতঃ সর্বতোভাবে অচিরেই; ব্রহ্মনির্বাণম্—ব্রহ্মনির্বাণ, বর্ততে—উপস্থিত হয়; বিদিতাত্মনাম্ – আত্মজ্ঞ।
গীতার গান
কাম ক্রোধ বিনিমুক্ত যত চিত্ত ধীর.
আত্মতত্ত্ব জ্ঞানী যতি অতীব গম্ভীর ৷।
সদসদ্ বিচার করি ব্রহ্মেতে নির্বাণ ৷
প্রকৃতি অতীত তার ব্রহ্মে অবস্থান ৷৷
অনুবাদঃ কাম-ক্রোধশূন্য, সংযতচিত্ত, আত্মতত্ত্বজ্ঞ সন্ন্যাসীরা সর্বতোভাবে অচিরেই ব্রহ্মনির্বাণ লাভ করেন।
তাৎপর্যঃ মুক্তি লাভের জন্য যে সমস্ত সাধুসন্ত সতত পরমার্থ সাধনে রত, তাঁদের মধ্যে কৃষ্ণভক্তই হচ্ছেন শ্রেষ্ঠ। ভাগবতে (B / ২২/৩৯) এই কথার সমর্থনে বলা হয়েছে—
যৎপাদপঙ্কজ পলাশবিলাসভক্ত্যা
কর্মাশয়ং গ্রথিতমুদ্গ্রথয়ত্তি সন্তঃ ।।
তদ্বন্ন রিক্তমতয়ো যতয়োঽপি রুদ্ধ-
স্রোতোগণাক্তমরণং ভজ বাসুদেবম্ ॥
“কেবল ভগবৎ-সেবার মাধ্যমে পরম পুরুষোত্তম ভগবান বাসুদেবের ভজনা কর। যাঁরা সকাম কর্মের বদ্ধমূল বাসনা উৎপাটিত করে অপ্রাকৃত আনন্দের সঙ্গে ভগবানের পাদপদ্মের সেবায় রত আছেন, তাঁদের মতো সুষ্ঠুভাবে কোনও মহান মুনি-ঋষিরাও ইন্দ্রিয়বেগ দমন করতে পারেন না।”
বদ্ধ জীবের কর্মফল ভোগ করার বাসনা এত প্রবল যে, বড় বড় মুনি-ঋষিরা বহু তপস্যার ফলেও সেই বাসনাকে দমন করতে পারেন না। কিন্তু ভগবদ্ভক্ত নিরন্তর ভগবান কৃষ্ণের অপ্রাকৃত সেবায় নিযুক্ত হওয়ার ফলে, আত্ম-উপলব্ধি করে অতি শীঘ্রই ব্রহ্মনির্বাণ স্তর লাভ করেন। পূর্ণরূপে আত্ম-তত্ত্বজ্ঞান লাভ করার ফলে তিনি সর্বদাই সমাধিস্থ থাকেন। এর উপমামূলক উদাহরণ দিয়ে বলা যায়—
দর্শনধ্যানসংস্পর্শে সামবিহঙ্গমাঃ ।
স্বান্যপত্যানি পুঞ্চন্তি তথাহমপি পদ্মজ |
“দর্শন, ধ্যান ও স্পর্শের দ্বারাই কেবল মাছ, কুর্ম ও পাখিরা তাদের সন্তান প্রতিপালন করে। হে পদ্মজ (ব্রহ্মা)! আমিও তাই করি।”
মাছেরা কেবল দৃষ্টিপাতের দ্বারা তাদের সন্তান প্রতিপালন করে। কূর্ম ধ্যান করে তাদের সন্তান প্রতিপালন করে। সে ভাঙ্গায় ডিম পেড়ে তারপর জলের মধ্যে তাদের ধ্যান করতে থাকে। তেমনই, কৃষ্ণভক্ত ভগবৎ-ধাম থেকে অনেক দূরে থাকলেও সর্বক্ষণ ভগবানের ধ্যান করার ফলে এবং সর্বক্ষণ কৃষ্ণভাবনায় তৎপর থাকার ফলে ভগবৎ-ধাম প্রাপ্ত হন। তিনি জড় জগতের দুঃখ-কষ্টের প্রতি সম্পূর্ণ নির্বিকার। ভগবৎ-উপলব্ধির এই স্তরকে বলা হয় ব্রহ্মনির্বাণ, যার অর্থ হচ্ছে ভগবানের চিন্তায় নিমগ্ন থাকার ফলে প্রাকৃত দুঃখ-কষ্টের পূর্ণ নিবৃত্তি।
শ্লোকঃ ২৭-২৮
স্পর্শান্ কৃত্বা বহির্বাহ্যাংশ্চক্ষুশ্চৈবান্তরে ভ্রুবোঃ ।
প্রাণাপানৌ সমৌ কৃত্বা নাসাভ্যন্তরচারিণৌ ॥ ২৭ ॥
যতেন্দ্রিয়মনোবুদ্ধির্মুনির্মোক্ষপরায়ণঃ ।
বিগতেচ্ছাভয়ক্রোধো যঃ সদা মুক্ত এব সঃ ॥ ২৮ ॥
স্পর্শান্—শব্দ আদি ইন্দ্রিয়ের বিষয়; কৃত্বা করে; বহিঃ – বহিষ্কৃত; বাহ্যান্ বাহ্য; চক্ষুঃচক্ষু; চ—ও; এব—নিশ্চিতভাবে; অন্তরে – মধ্যে; ক্রবোঃ—হৃদ্বয়ের; প্রাণাপানৌ–প্রাণ ও অপান বায়ু; সমৌ—সমান; কৃত্বা—করে; নাসাভ্যন্তর- নাসিকার মধ্যে; চারিণৌ – বিচরণশীল; যত—সংযত; ইন্দ্রিয়—ইন্দ্রিয়; মনঃ – মন; বুদ্ধিঃ—বুদ্ধি; মুনিঃ —মুনি; মোক্ষ —মুক্তি; পরায়ণঃ—পরায়ণ; বিগত—বর্জিত; ‘ইচ্ছা—ইচ্ছা; ভয়—ভয়; ক্রোধঃ – ক্রোধ: যঃ – যিনি; সদা সর্বদা; মুক্তঃ – মুক্ত; এর—অবশ্যই; সঃ – তিনি।
গীতার গান
এ ছাড়া অষ্টাঙ্গ যোগ তাহা বলি শুন ।
অভ্যাস যাহার হয় অতীব ত্রিগুণ ৷।
শব্দ স্পর্শ রূপ রস আর যাহা গন্ধ।
বহির্বাহ্য করি রাখি না রাখি সম্বন্ধ ॥
চক্ষু সেই ভ্রমধ্যে রাখিয়া নিশ্চল ।
প্রাণাপান বায়ু ধরি নাসা অভ্যন্তর ।।
নাসিকার অগ্রভাগ কেবল দর্শন ৷
উত্তম প্রক্রিয়া সেই যোগের সাধন ॥
ইন্দ্রিয় সংযম সেই যোগ প্রকরণ ৷
মন বুদ্ধি দ্বারা মুনি মোক্ষ পরায়ণ ॥
সে ভাবে যে বীত ইচ্ছা ভয় আর ক্রোধ ।
মুক্ত হয় সে পুরুষ সংযত নিরোধ ॥
অনুবাদঃ মন থেকে বাহ্য ইন্দ্রিয়ের বিষয় প্রত্যাহার করে, ভ্রূযুগলের মধ্যে দৃষ্টি স্থির করে, নাসিকার মধ্যে বিচরণশীল প্রাণ ও অপান বায়ুর ঊর্ধ্ব ও অধোগতি রোধ করে, ইন্দ্রিয়, মন ও বুদ্ধি সংযম করে এবং ইচ্ছা, ভয় ও ক্রোধ শূন্য হয়ে যে মুনি সর্বদা বিরাজ করেন, তিনি নিশ্চিতভাবে মুক্ত।
তাৎপর্যঃ ভক্তিযোগে ভগবানের সেবায় নিয়োজিত হলে অচিরেই স্বরূপ উপলব্ধি হয়। ভক্তির মাধ্যমে ভগবানকে জানা যায়। নিষ্ঠার সঙ্গে ভক্তিযোগ সাধন করার ফলে কৃষ্ণভক্ত অপ্রাকৃত স্থিতি লাভ করে তাঁর কর্মের গণ্ডিতে ভগবানের উপস্থিতি অনুভব করার যোগ্যতা অর্জন করেন। এই বিশেষ অবস্থাকে ব্রহ্মানির্বাণ বলা হয়।
ব্রহ্মনির্বাণ সম্বন্ধে উপরোক্ত সিদ্ধান্ত প্রতিপাদন করার পর ভগবান অর্জুনকে অষ্টাঙ্গযোগ (যম, নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার, ধারণা, ধ্যান ও সমাধি) অভ্যাস করার মাধ্যমে কিভাবে এই স্তরে উন্নীত হওয়া যায়, সেই সম্বন্ধে উপদেশ দিয়েছেন। ষষ্ঠ অধ্যায়ে যোগের বিশদ ব্যাখ্যা করা হয়েছে, তাই পঞ্চম অধ্যায়ের শেষে, এখানে কেবল তার অবতারণা করা হয়েছে। যোগের প্রত্যাহার পদ্ধতির মধ্যমে শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস ও গন্ধ- এই ইন্দ্রিয়জ বিষয়গুলিকে পরিত্যাগ করে, দুই ভ্রুর মধ্যে দৃষ্টি নিবন্ধ করে, অর্ধনিমীলিত নেত্রে নাসিকাগ্রে একাগ্র করতে হয়। এখানে সম্পূর্ণভাবে চোখ বন্ধ করতে নিষেধ করা হয়েছে, কারণ তা হলে ঘুমিয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। সম্পূর্ণভাবে চোখ খুলে রাখতেও নিষেধ করা হয়েছে, কারণ তা হলে ইন্দ্রিয়-বিষয়ের প্রতি আকৃষ্ট হবার ভয় থাকে। দেহের অভ্যন্তরে প্রাণ ও অপান বায়ুকে রোধ করার ফলে নাসিকার অভ্যন্তরে শ্বাস-প্রশ্বাসের ক্রিয়া নিয়ন্ত্রিত হয়। এভাবেই অভ্যাস করার ফলে ইন্দ্রিয়-বিষয় পরিত্যাগ করে ইন্দ্রিয়বেগ দমন করা সম্ভব হয় এবং তার ফলে সাধক ব্রহ্মনির্বাণ লাভ করতে সক্ষম হন।
এই যোগপদ্ধতি সব রকম ভয়, ক্রোধ আদি থেকে মুক্ত করতে সাহায্য করে এবং এভাবেই অপ্রাকৃত শুদ্ধ সত্ত্বময় অবস্থায় পরমাত্মার উপস্থিতি অনুভব করা যায়। তবে, কৃষ্ণভাবনামৃতই হচ্ছে যোগসাধন করার সবচেয়ে সহজ ও সাবলীল পন্থা। পরবর্তী অধ্যায়ে তা বিশদভাবে ব্যাখ্যা করা হবে। কৃষ্ণভাবনাময় ভক্ত সর্বদাই ভগবৎ-সেবায় নিয়োজিত, তাই তাঁর ইন্দ্রিয়গুলি অন্য কোন বিষয়ে প্রবৃত্ত হতে পারে না। সুতরাং, ইন্দ্রিয়-সংযম করার জন্য অষ্টাঙ্গ-যোগের চেয়ে ভক্তিযোগ অধিক উত্তম।
শ্লোকঃ ২৯
ভোক্তারং যজ্ঞতপসাং সর্বলোকমহেশ্বরম্ ।
সুহৃদং সর্বভূতানাং জ্ঞাত্বা মাং শান্তিমৃচ্ছতি ॥ ২৯ ৷৷
ভোক্তারম্–ভোক্তা; যজ্ঞ – যজ্ঞ, তপসাম্— তপস্যার; সর্বলোক—সর্বলোকের; মহেশ্বরম্—পরম ঈশ্বর; সুহৃদম্—সুহৃদ; সর্ব—সমস্ত; ভূতানাম্—জীবের; জ্ঞাত্বা- এভাবে জেনে; মাম্—আমাকে (শ্রীকৃষ্ণকে); শান্তিম্ — জড় দুঃখ-দুর্দশা থেকে মুক্তি; ঋচ্ছতি লাভ করেন।
গীতার গান
যোগেশ্বর আমি হই আমি সেই লক্ষ্য।
সে কথা যে বুঝে ভাল সেই যোগী দক্ষ ॥
সকল যজ্ঞ তপস্যার আমি ভোক্তা হই ।
সমস্ত লোকের স্বামী কেহ নহে সেই ॥
সমস্ত জীবের বন্ধু আমি একমাত্র।
জগতের শান্তি হয় জানিলে সর্বত্র ॥
অনুবাদঃ আমাকে সমস্ত যজ্ঞ ও তপস্যার পরম ভোক্তা, সর্বলোকের মহেশ্বর এবং সমস্ত জীবের সুহৃদরূপে জেনে যোগীরা জড় জগতের দুঃখ-দুর্দশা থেকে মুক্ত হয়ে শাস্তি লাভ করেন।
তাৎপর্যঃ মায়ার দ্বারা আচ্ছন্ন হয়ে বদ্ধ জীব এই জড় জগতে শান্তির অন্বেষণ করে, কিন্তু ভগবদ্গীতার এই অংশে বর্ণিত শান্তি লাভের যথার্থ পন্থার কথা তারা জানে না। শান্তি লাভের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ নীতি হচ্ছে—ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন সমস্ত কর্মের ভোক্তা, এটি উপলব্ধি করা। তাই, মানুষের কর্তব্য হচ্ছে ভগবানের সেবায় সব কিছু উৎসর্গ করা, কারণ তিনি হচ্ছেন সমস্ত গ্রহলোকের এমন কি দেবতাদের অধীশ্বর। তাঁর চেয়ে শ্রেষ্ঠ আর কেউ নেই। শিব, ব্রহ্মা আদি শ্রেষ্ঠ দেবতারাও তাঁর অনুগত ভৃত্য। বেদে (শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ৬/৭) ভগবানকে বলা হয়েছে— তমীশ্বরাণাং পরমং মহেশ্বরম্ । মায়ার দ্বারা মোহাচ্ছন্ন হয়ে জীব সব কিছুর উপর আধিপত্য করার প্রয়াসী হয়, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সে ভগবানের মায়ার অধীন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন মায়াধীশ, কিন্তু জীব জড়া প্রকৃতির কঠোর নিয়মের দ্বারা আবদ্ধ। এই সরল সত্যটিকে উপলব্ধি করতে না পারলে, ব্যক্তিগতভাবে অথবা সঙ্ঘবদ্ধভাবে, কোনমতেই এই সংসারে শান্তি লাভ করা সম্ভব নয়। কৃষ্ণভাবনার অর্থ হচ্ছে যে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণই হচ্ছেন পরমেশ্বর এবং আর সমস্ত জীব, এমন কি বড় বড় দেবতারাও হচ্ছেন তাঁর অনুগত ভৃত্য। এই পরম সত্যকে উপলব্ধি করতে পারলেই পূর্ণ শান্তি লাভ করা যায়।
ভগবদ্গীতার এই পঞ্চম অধ্যায়ে কৃষ্ণভাবনামৃত বা কৃষ্ণভক্তির ব্যবহারিক ব্যাখ্যা করা হয়েছে, যাকে সাধারণত কর্মযোগ বলা হয়। কর্মযোগ কিভাবে মুক্তি প্রদান করতে পারে—মনোধর্ম-প্রসূত এই যে প্রশ্ন, তার উত্তর এখানে দেওয়া হয়েছে। কর্মযোগের অর্থ হচ্ছে, পূর্ণজ্ঞানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পরমেশ্বরত্ব সম্বন্ধে অবগত হয়ে তাঁর সেবায় কর্ম করা। এই কর্মযোগ ও জ্ঞানযোগ অভিন্ন। কৃষ্ণভাবনামৃত হচ্ছে সাক্ষাৎ ভক্তিযোগ, আর জ্ঞানযোগ হচ্ছে ভক্তিযোগে অধিষ্ঠিত হওয়ার একটি পন্থাবিশেষ। কৃষ্ণভাবনামৃতের অর্থ হচ্ছে পরম-তত্ত্বের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের কথা পূর্ণরূপে অবগত হয়ে তাঁর সেবায় কর্ম করা এবং এই ভাবনার পূর্ণতা আসে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সম্বন্ধে পূর্ণজ্ঞান লাভ করার মাধ্যমে। শুদ্ধ আত্মা ভগবানের অবিচ্ছেদ্য অংশরূপে তাঁর নিত্যদাস। মায়াকে ভোগ করবার বাসনার ফলে সে মায়ার সংসর্গে আসে এবং সেটিই তার নানা রকম দুঃখকষ্ট ভোগের কারণ। যতক্ষণ সে জড়ের সংসর্গে থাকে, ততক্ষণ সে জাগতিক আবশ্যকতা অনুযায়ী কর্ম করতে বাধ্য হয়। কিন্তু কৃষ্ণভাবনামৃতের বিশেষত্ব হচ্ছে এই যে, প্রকৃতির গণ্ডির মধ্যে থাকলেও তা মানুষকে পারমার্থিক জীবন দান করে, কারণ জড় জগতে ভক্তির অভ্যাস করলে জীবের চিন্ময় স্বরূপ পুনর্জাগরিত হয়। ভক্তিমার্গে উত্তরোত্তর উন্নতি সাধনের অনুপাতে মায়ার বন্ধন থেকে মুক্তি লাভ হয়। ভগবান কোন জীবের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করেন না। সব কিছু নির্ভর করে ইন্দ্রিয়-নিগ্রহ ও কাম- ক্রোধ দমন করবার জন্য কৃষ্ণভাবনাময় হয়ে ব্যবহারিক কর্তব্য পালন করার উপর । এই সমস্ত বিকারগুলি নিগ্রহ করে কৃষ্ণভাবনামৃত লাভ করলে বাস্তবিকপক্ষে অপ্রাকৃত স্তর অথবা ব্রহ্মনির্বাণ লাভ করা যায়। অষ্টাঙ্গ যোগের পরম লক্ষ্য হচ্ছে এই কৃষ্ণভাবনামৃত লাভ করা। তাই, কৃষ্ণভাবনামৃতে অষ্টাঙ্গযোগ আপনা থেকেই সাধিত হয়ে যায়। যম, নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার, ধারণা, ধ্যান ও সমাধি অভ্যাসের দ্বারা ধীরে ধীরে প্রগতি হয়। কিন্তু ভক্তিযোগের প্রারম্ভেই এই সব কয়টিতে সিদ্ধিলাভ হয়ে যায়। তাই, একমাত্র ভক্তিযোগই মানুষকে প্রকৃত শাস্তি দিতে পারে—ভক্তিযোগেই জীবনের পরম প্রাপ্তি।
ভক্তিবেদান্ত কহে শ্রীগীতার গান ।
শুনে যদি শুদ্ধ ভক্ত কৃষ্ণগত প্ৰাণ ॥
ইতি—কৃষ্ণভাবনাময় কর্তব্যকর্ম বিষয়ক কর্মসন্ন্যাস-যোগ’ নামক শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার পঞ্চম অধ্যায়ের ভক্তিবেদান্ত তাৎপর্য সমাপ্ত।