এই পরিচ্ছেদে কুরআন মজীদের তিলাওয়াত, উহার ফযীলত এবং তিলাওয়াতকারীর মর্যাদার সহিত সম্পর্কিত কতিপয় হাদীস বর্ণিত হইতেছে।

হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) হইতে ধারাবাহিকভাবে আতিয়্যা, ফিরাস, শায়বান, মুআবিয়া ইবন হিশাম ও ইমাম আহমদ বর্ণনা করিয়াছেনঃ

নবী করীম (সাঃ) বলিয়াছেন—‘কুরআন মজীদের ধারক, সংরক্ষক ও হাফিজ যখন জান্নাতে প্রবেশ করিবে, তখন তাহাকে বলা হইবে, পড়িতে থাক আর (জান্নাতের উপর তলায়) উঠিতে থাক। সে পড়িতে থাকিবে এবং প্রতিটি আয়াতে একটি করিয়া স্তর অতিক্রম করত উপরে উঠিতে থাকিবে। এইরূপে তাহার নিকট সংরক্ষিত শেষ আয়াতটি তিলাওয়াত করা পর্যন্ত সে উপরে উঠিতেই থাকিবে।’

হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রঃ) হইতে ধারাবাহিকভাবে ওয়ালীদ ইব্‌ন কয়স তাজীবী, বশীর ইব্‌ন আবূ আমর খাওলানী, হায়াত, আবূ আবদুর রহমান ও ইমাম আহমদ বর্ণনা করিয়াছেনঃ

নবী করীম (সাঃ) বলিয়াছেন—‘ষাট বৎসর পর একদল লোক আবির্ভূত হইবে যাহারা সালাত পরিত্যাগ করিবে এবং স্বীয় কুপ্রবৃত্তিসমূহ চরিতার্থ করিবার পশ্চাতে লাগিয়া থাকিবে তাহারা ধ্বংস ও গোমরাহীতে নিপতিত হইবে। অতঃপর একদল লোকের আবির্ভাব ঘটিবে যাহারা কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করিবে, কিন্তু উহা তাহাদের কণ্ঠদেশ অতিক্রম করিবে না। আর তিন শ্রেণীর লোক কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করিয়া থাকেঃ মু’মিন, মুনাফিক ও ফাজির (পাপাসক্ত শ্রেণী)।’

উক্ত হাদীসের রাবী বশীর বলেন, আমি আমার উস্তাদ ওয়ালীদকে জিজ্ঞাস! করিলাম, এই তিন শ্রেণীর লোকের পরিচয় কি? তিনি বলিলেন, মুনাফিক শ্রেণী হইতেছে কুরআন মজীদের প্রতি অবিশ্বাসী সম্প্রদায়। ফাজির শ্রেণী হইতেছে লোক দেখানো রিয়াকার সম্প্রদায়। ইহারা শুধু মানুষকে দেখাইবার জন্যে কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করিয়া থাকে। মু’মিন শ্রেণী হইতেছে কুরআন মজীদের প্রতি পরিপূর্ণরূপে বিশ্বাস স্থাপনকারী সম্প্রদায়।’

হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) হইতে ধারাবাহিকভাবে আবুল খাত্তাব, আবুল খায়ের, ইয়াযীদ ইব্‌ন আবূ হাবীব, লায়ছ, হাজ্জাজ ও ইমাম আহমদ বর্ণনা করিয়াছেনঃ

নবী করীম (সাঃ) তাবূকের যুদ্ধের বৎসরে একটি খেজুর বৃক্ষে হেলান দিয়া লোকদিগকে সম্বোধন করিয়া বলিয়াছিলেন—’ওহে ! আমি কি তোমাদিগকে সর্বোত্তম ব্যক্তি ও নিকৃষ্টতম ব্যক্তির পরিচয় প্রদান করিব? সর্বোত্তম সেই ব্যক্তি, যে স্বীয় অশ্ব অথবা উষ্ট্রে আরোহণ করিয়া অথবা পদব্ৰজে গমনাগমন করিয়া মৃত্যু পর্যন্ত আল্লাহর পথে কাজ করিয়া যায় ও জিহাদ করিতে থাকে। আর নিকৃষ্টতম ব্যক্তি হইতেছে সেই পাপাসক্ত ব্যক্তি যে কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করে, কিন্তু উহার কোন আদেশ-নিষেধের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করে না ও উহা পালন করে না।’

হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) হইতে ধারাবাহিকভাবে আতিয়্যা, আমর ইব্‌ন কায়স, মুহাম্মদ ইব্‌ন হাসান হামদানী, হুসাইন ইব্‌ন আবদুল আ’লা, মুহাম্মদ ইবন উমর ইব্‌ন হাইয়াজ কূফী ও হাফিজ আবূ বকর আল- বায্যার বর্ণনা করিয়াছেনঃ

নবী করীম (সাঃ) বলিয়াছেন—’আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, কুরআন মজীদের তিলাওয়াতে মগ্ন থাকিবার কারণে যে ব্যক্তি আমার নিকট দোয়া করিবার সময় ও সুযোগ পায় নাই, আমি তাহাকে শোকরগুযার কৃতজ্ঞ ব্যক্তিদের জন্যে সংরক্ষিত উৎকৃষ্টতম পুণ্য ও নেকী প্রদান করিব ।’ নবী করীম (সাঃ) আরও বলিয়াছেন, যেরূপে সমস্ত সৃষ্টির উপর আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব রহিয়াছে, সেইরূপে অন্যান্য সকল বাণী ও কালামের উপর আল্লাহর বাণী ও কালামের শ্রেষ্ঠত্ব রহিয়াছে।’ উক্ত হাদীস বর্ণনা করিবার পর হাফিজ আবূ বকর আল বায্যার মন্তব্য করিয়াছেনঃ ‘উক্ত হাদীস মুহাম্মদ ইব্‌ন হাসান ভিন্ন অন্য কাহারও মাধ্যমে বর্ণিত হয় নাই।

হযরত আনাস ইবন মালিক (রাঃ) হইতে ধারাবাহিকভাবে বুদায়ল ইব্‌ন মায়সারাহ, আবদুর রহমান ইব্‌ন বুদায়ল ইব্‌ন মায়সারাহ, আবূ উবায়দা আল হাদ্দাদ ও ইমাম আহমদ বর্ণনা করিয়াছেনঃ

একদা নবী করীম (সাঃ) বলিলেন—‘মানুষের মধ্যে আল্লাহ্ তা’আলার আপনজন ও নিজস্ব লোক রহিয়াছে।’ নবী করীম (সা) জিজ্ঞাসিত হইলেন-হে আল্লাহ্র রাসূল ! তাহারা কাহারা? নবী করীম (সাঃ) বলিলেন— কুরআন মজীদের ধারক, সংরক্ষক ও বাস্তবায়নকারীগণই হইতেছে আল্লাহ্ তা’আলার আপনজন ও নিজস্ব লোক।’

হযরত আনাস ইবন মালিক (রাঃ) হইতে ধারাবাহিকভাবে সাবিত, জা’ফর ইব্‌ন সুলায়মান, খালিদ ইব্‌ন খিদাশ, মুহাম্মদ ইব্‌ন আলী ইব্‌ন শুআয়ব, সিমসার ও ইমাম আবুল কাসিম তাবারানী বর্ণনা করিয়াছেনঃ ‘হযরত আনাস (রাঃ) যখন কুরআন মজীদ খতম করিতেন, তখন তিনি স্বীয় সন্তান-সন্ততি ও পরিবারের অন্যান্য লোকজনকে একত্রিত করিয়া তাহাদের জন্যে দোয়া করিতেন।’

হযরত আনাস (রাঃ) হইতে ধারাবাহিকভাবে হাসান, যায়দ ইবন ইব্বান, আ’মাশ, শরীক, হাতিম ইব্‌ন ইসমাঈল, মুহাম্মদ ইব্‌ন উব্বাদ মক্কী, আবদুল্লাহ ইব্‌ন আহমদ ইব্‌ন হাম্বল ও হাফিজ আবুল কাসিম তাবারানী বর্ণনা করিয়াছেনঃ

নবী করীম (সাঃ) বলিয়াছেন—‘কুরআন মজীদ হইতেছে এইরূপ একটি সম্পদ যাহা অর্জিত হইবার পর কোন অভাবকেই অভাব বলা যায় না এবং যাহা ভিন্ন অন্য কোন সম্পদকেই সম্পদ বলা যায় না।’

হযরত আনাস (রাঃ) হইতে ধারাবাহিকভাবে কাতাদাহ, আবদুল্লাহ ইব্‌ন মুহাররির, আবদুর রায্যাক, সালমা ইব্‌ন শাবীব ও হাফিজ আবূ বকর বায্যার বর্ণনা করিয়াছেনঃ

নবী করীম (সাঃ) বলিয়াছেন—’প্রত্যেক বস্তুরই অলংকার থাকে। কুরআন মজীদের অলংকার হইতেছে সুমধুর সুর।’ উক্ত হাদীসের অন্যতম রাবী আবদুল্লাহ ইব্‌ন মুহাররির একজন দুর্বল রাবী।

হযরত আনাস ইবন মালিক (রাঃ) হইতে ধারাবাহিকভাবে ওয়াফা খাওলানী, বিকর ইব্‌ন সাওয়াদা, ইব্‌ন লাহীআ, হাসান ও ইমাম আহমদ বর্ণনা করিয়াছেনঃ

হযরত আনাস (রাঃ) বলেন—একদা আমরা একদল লোক একস্থানে সমবেত ছিলাম। আমাদের মধ্যে আরব, অনারব, কৃষ্ণাঙ্গ ও শ্বেতাঙ্গ সকল শ্রেণীর লোকই ছিল। এই অবস্থায় নবী করীম (সাঃ) আমাদের নিকট আগমন করিয়া বলিলেন—’তোমরা সৌভাগ্য দ্বারা পরিবেষ্টিত রহিয়াছ। তোমরা আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করিয়া থাকো। তোমাদের মধ্যে আল্লাহ্র রাসূল বর্তমান রহিয়াছেন। অদূর ভবিষ্যতে মানুষের নিকট এইরূপ এক যামানা আসিবে, যখন তীরের ফলক কিংবা দণ্ড যেরূপ সরল ও সোজা করা হয়, লোকেরা উহাকে (কুরআন তিলাওয়াতকে ঠিক সেইরূপ সরল ও সোজা করিবে। তাহারা দ্রুত তিলাওয়াত করিয়া নিজেদের পারিশ্রমিক আদায় করিবে এবং উহাতে তাহাদের বিলম্ব সহ্য হইবে না।’

হযরত আনাস (রাঃ) হইতে ধারাবাহিকভাবে হাসান, উমর ইব্‌ন নাবহান, আবদু রব্বিহী ইব্‌ন আবদুল্লাহ, আমর ইব্‌ন আবূ কয়স, আবদুল্লহ ইব্‌ন জুছাম, ইউসুফ ইব্‌ন মূসা ও হাফিজ আবূ বকর আল-বায্যার বর্ণনা করিয়াছেনঃ

নবী করীম (সাঃ) বলিয়াছেন—‘যে গৃহে কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করা হয়, উহাতে অধিক পরিমাণে কল্যাণ বর্ষিত হয়। পক্ষান্তরে যে গৃহে কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করা হয় না, উহার কল্যাণের পরিমাণ কমিয়া যায়।’

হযরত আনাস (রাঃ) হইতে ধারাবাহিকভাবে ইয়াযীদ রাক্কাশী, আবূ উবায়দা, ফযল ইব্‌ন সুবহ ও হাফিজ আবূ ইয়ালা বর্ণনা করিয়াছেনঃ

একদা হযরত আবূ মূসা (রাঃ) একটি ঘরে আসিয়া বসিলেন। তাঁহার চতুষ্পার্শে লোকজন জড়ো হইয়া গেল। তিনি তাহাদিগকে কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করিয়া শুনাইতে আরম্ভ করিলেন। একটি লোক নবী করীম (সাঃ)-এর খেদমতে উপস্থিত হইয়া আরয করিল—হে আল্লাহর রাসূল ! আপনি শুনিয়া আনন্দিত হইবেন যে, হযরত আবূ মূসা একটি গৃহে বসিয়া লোকদিগকে কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করিয়া শুনাইতেছেন। নবী করীম (সাঃ) বলিলেন—তুমি কি আমার জন্যে এইরূপ একটি স্থানে বসিবার ব্যবস্থা করিতে পার যেখানে তাহাদের কেহ আমাকে দেখিতে পাইবে না? লোকটি নবী করীম (সাঃ)-কে সেইরূপ একটি জায়গায় রাখিল। তিনি হযরত আবূ মূসা (রাঃ)-এর তিলাওয়াত শুনিলেন। অতঃপর বলিলেন—’সে যেন হযরত দাউদ (আঃ)-এর একটি বাঁশীর সাহায্যে কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করিয়া থাকে।’ উক্ত হাদীস অন্য কোন সনদে বর্ণিত হয় নাই। উহার অন্যতম রাবী ইয়াযীদ রাক্কাশী একজন দুর্বল রাবী।

হযরত জাবির ইব্‌ন আবদুল্লাহ (রাঃ) হইতে ধারাবাহিকভাবে মুহাম্মদ ইব্‌ন আলী ইব্‌ন হুসাইন, জা’ফর ইব্‌ন মুহাম্মদ ইব্‌ন আলী ইব্‌ন হুসাইন, মুসআব ইব্‌ন সালাম ও ইমাম আহমদ (রঃ) বর্ণনা করিয়াছেনঃ

হযরত জাবির (রাঃ) বলেন—একদা নবী করীম (সাঃ) আমাদের সম্মুখে খুতবা প্রদান করিলেন। তিনি আল্লাহ্ তা’আলার যথাযোগ্য প্রশংসা বর্ণনা করিবার পর বলিলেন—অতঃপর বলিবার বিষয় এই যে, সকল বাণীর মধ্যে অধিকতর সত্য বাণী হইতেছে কুরআন (আল্লাহ্ বাণী)। সকল পথের মধ্যে উৎকৃষ্টতম পথ হইতেছে সুন্নাহ (মুহাম্মদ (সাঃ) কর্তৃক প্রদর্শিত পথ)। সকল বিষয়ের মধ্যে নিকৃষ্টতম বিষয় হইতেছে বিদআত (নব-উদ্ভাবিত বিষয়)। আর প্রতিটি বিদআত (শরীআত বিরোধী) হইতেছে গোমরাহী।’ অতঃপর নবী করীম (সাঃ)-এর কণ্ঠস্বর ক্রমশ উচ্চ হইতে উচ্চতর এবং তাঁহার গণ্ডদ্বয় ক্রমশ রক্তিম হইতে রক্তিমতর হইতে লাগিল।’ এখানে উল্লেখ্য যে, নবী করীম (সাঃ) যখন কিয়ামতের কথা উল্লেখ করিতেন, তখন তাঁহার মধ্যে ভীতিমূলক উত্তেজনা দেখা দিত। তিনি তখন এইরূপ ভঙ্গিতে কথা বলিতেন যাহাতে মনে হইত, যেন তিনি কোন সেনাদলের বিরুদ্ধে লোকদিগকে সতর্ক করিয়া দিতেছেন। অতঃপর বলিলেন—’তোমাদের নিকট কিয়ামত আসিয়া পড়িয়াছে। আমার এবং কিয়ামতের মধ্যে এতটুকু দূরত্ব থাকা অবস্থায় আমি তোমাদের নিকট প্রেরিত হইয়াছি—এই বলিয়া নবী করীম (সাঃ) স্বীয় তর্জনী এবং মধ্যমা অঙ্গুলির মধ্যকার ফাঁকটুকু দেখাইলেন—‘কিয়ামত সকাল-বিকাল সর্বদা তোমাদের নিকট আগমন করিয়া থাকে। কোন ব্যক্তি মৃত্যুকালে কোন সম্পত্তি রাখিয়া গেলে উহা তাহার আপনজনদের প্রাপ্য হইবে। পক্ষান্তরে তাহার উপর কোন ঋণ থাকিয়া গেলে উহা পরিশোধ আমার দায়িত্ব। এইরূপে সে কোন সম্পত্তি না রাখিয়া গেলে তাহার (অসহায়) পরিজনের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব আমি বহন করিব।’

হযরত জাবির ইব্‌ন আবদুল্লাহ (রাঃ) হইতে ধারাবাহিকভাবে মুহাম্মদ ইব্‌ন মুনকাদির, উসামা ইব্‌ন যায়দ, লায়ছী, আবদুল ওহাব ইব্‌ন আতা ও ইমাম আহমদ বর্ণনা করিয়াছেনঃ

‘নবী করীম (সাঃ) মসজিদে প্রবেশ করিলেন। সেই সময় তথায় একদল লোক কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করিতেছিল। এতদ্দর্শনে তিনি বলিলেন—তোমরা কুরআন মজীদ তিলাওয়াত কর এবং উহার সাহায্যে মহান আল্লাহকে পাইতে চেষ্টা কর। তোমাদের পর এক সময়ে এমন একদল লোক আবির্ভূত হইবে যাহারা উহাকে তীরের মত সোজা করিবে। তাহারা উহার ব্যাপারে ক্ষিপ্রতা ও তাড়াহুড়া করিবে এবং উহার বিনিময়ে যেহেতু পারিশ্রমিক পাইবে, তাই তাহা করিবে, উহাতে তাহাদের বিলম্ব সহ্য হইবে না ।

হযরত জাবির ইব্‌ন আবদুল্লাহ্ (রাঃ) হইতে ধারাবাহিকভাবে মুহাম্মদ ইব্‌ন মুনকাদির, হামীদ আল আ’রাজ, খালিদ, খালফ ইব্‌ন ওয়ালীদ ও ইমাম আহমদ বর্ণনা করিয়াছেনঃ

হযরত জাবির (রাঃ) বলেন-একদা নবী করীম (সাঃ) আমাদের নিকট আগমন করিলেন। সেই সময়ে আমরা কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করিতেছিলাম। আমাদের মধ্যে অনারব এবং দেহাতী (বেদুইন) লোকও ছিল। তিনি মনোযোগ সহকারে তিলাওয়াত শুনিলেন। অতঃপর বলিলেন-তোমরা কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করিবে। কারণ, উহার সবটুকুই নেকীর কাজ। অদূর ভবিষ্যতে এইরূপ একদল লোকের আবির্ভাব ঘটিবে যাহারা উহা তীরের ন্যায় সোজা করিবে। তাহারা উহার ব্যাপারে ত্বরা করিবে। বিলম্ব তাহাদের নিকট সহ্য হইবে না।’

হযরত আবদুল্লাহ্ ইবন মাসউদ (রাঃ) হইতে ধারাবাহিকভাবে মুআল্লা কিন্দী, আ’মাশ, আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন আজলাহ, আবূ কুরায়ব, মুহাম্মদ ইব্‌ন আ’লা ও ইমাম আবূ বকর বাযযার বর্ণনা করিয়াছেনঃ

হযরত জাবির ইব্‌ন আবদুল্লাহ (রাঃ) হইতে ধারাবাহিকভাবে মুআল্লা কিন্দী, আ’মাশ, আবদুল্লাহ ইব্‌ন আজলাহ, আবূ কুরায়ব, মুহাম্মদ ইব্‌ন আ’লা ও ইমাম আবূ বকর বায্যার বর্ণনা করিয়াছেনঃ

হযরত ইব্‌ন মাসউদ (রাঃ) বলেন—‘নিশ্চয় এই কুরআন মজীদ সুপারিশ করিবে এবং উহার সুপারিশ গৃহীতও হইবে। যে ব্যক্তি উহা মানিয়া চলিবে, উহা তাহাকে জান্নাতে লইয়া যাইবে। পক্ষান্তরে, যে ব্যক্তি উহা হইতে মুখ ফিরাইয়া লইবে, উহা তাহাকে ঘাড়ে ধরিয়া ঠেলিতে ঠেলিতে দোযখে ফেলিয়া দিবে।’ হযরত আবদুল্লাহ্ (রাঃ) হইতে ধারাবাহিকভাবে হযরত জাবির (রাঃ), আবূ সুফিয়ান, আ‘মাশ, আবদুল্লাহ ইব্‌ন আজলাহ, আবূ কুরায়ব ও ইমাম আবূ বকর বায্যারও অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। নবী করীম (সাঃ)-এর বরাত দিয়া তিনি উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ একটি হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।

হযরত জাবির ইব্‌ন আবদুল্লাহ (রাঃ) হইতে ধারাবাহিকভাবে ইয়াহিয়া ইব্‌ন আবূ কাছীর, আলী, মূসা ইব্‌ন আলী, বুকায়র ইব্‌ন ইউনুস, আহমদ ইব্‌ন আবদুল আযীয ইব্‌ন মারওয়ান আবূ সখর ও হাফিজ আবূ ইয়া’লা বর্ণনা করিয়াছেনঃ

নবী করীম (সা) বলিয়াছেন—‘যে ব্যক্তি কুরআন মজীদের এক হাজার আয়াত তিলাওয়াত করে, তাহার জন্যে এক কিনতার (قنطار ) পরিমাণ নেকী লেখা হয়। এক কিন্তার একশত রতল (ر طل)-এর সমান। এক রতল বারো উকিয়ার (أوقية) সমান। এক উকিয়া ছয় দীনারের (دينار) সমান। এক দীনার চব্বিশ কীরাতের (قيراط) সমান এবং এক কীরাত উহুদ পাহাড়ের সমান। আর যে ব্যক্তি তিনশত আয়াত তিলাওয়াত করে, তাহার সম্বন্ধে আল্লাহ্ তা’আরা স্বীয় ফেরেশতাগণকে বলেন—’আমার বান্দা ইহা নির্ধারিত করিয়া দিয়াছে যে, আমি তোমাদিগকে সাক্ষী বানাইব। হে ফেরেশতাগণ! তোমরা সাক্ষী থাকো——আমি তাহাকে মাফ করিয়া দিলাম।’ আর যদি কোন ব্যক্তির নিকট আল্লাহর তরফ হইতে কোন নেক কার্যের বিশেষ কোন ফযীলত বর্ণিত হয় এবং সে উহার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করিয়া তাঁহার নিকট হইতে সওয়াব লাভ করিবার আশায় উক্ত ফযীলতের কার্য সম্পাদন করে, তবে আল্লাহ্ তা’আলা তাহাকে সেই সওয়াব ও নেকী প্রদান করিয়া থাকেন। যদি উক্ত কার্য প্রকৃতপক্ষে সেইরূপ ফযীলতের কার্য নাও হয়, তথাপি সে আল্লাহ্ তা’আলার নিকট হইতে সেইরূপ সওয়াব লাভ করিবে।’

হযরত ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) হইতে ধারাবাহিকভাবে আবূ কাবূস, জারীর ও ইমাম আহমদ বর্ণনা করিয়াছেনঃ নবী করীম (সাঃ) বলিয়াছেন—‘যাহার পেটে কুরআন মজীদের অংশ নাই, সে পরিত্যক্ত গৃহের সমতুল্য।’ ইমাম আবূ বকর বায্যার বলেন—উক্ত হাদীস হযরত ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) হইতে উপরোক্ত মাধ্যম ভিন্ন অন্য কোন মাধ্যমে বর্ণিত হইয়াছে বলিয়া আমি জানি না।

হযরত ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) হইতে ধারাবাহিকভাবে সাঈদ ইব্‌ন জুবায়র, ইমরান ইব্‌ন আবূ ইমরান, আবূ শায়বাহ, উসমান ইব্‌ন আবূ শায়বাহ, মুহাম্মদ ইব্‌ন উসমান ইব্‌ন আবূ শায়াবাহ ও ইমাম তাবারানী বর্ণনা করিয়াছেন।

নবী করীম (সাঃ) বলিয়াছেন—’যে ব্যক্তি আল্লাহ্র কিতাব অনুসরণ করিয়া চলে, আল্লাহ্ তা’আলা তাহাকে গোমরাহী হইতে বাঁচাইয়া সত্যপথে আনয়ন করেন এবং কিয়ামতের দিনে তিনি তাহাকে হিসাব-নিকাশের ভয়াবহতা হইতে মুক্ত রাখিবেন। কারণ, আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ فَمَنْ اتُبَعْ هداى فلا يُضل ولأيشقى 

ভাত আর এতে ভর্তির হার (যে ব্যক্তি আমার হিদায়েত অনুসরণ করিয়াছে, সে পথভ্রষ্ট হইবে না আর বদনসীবও হইবে না।)

হযরত ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) হইতে ধারাবাহিকভাবে তাউস, আমর ইব্‌ন দীনার, ইব্‌ন লাহীআ, উসমান ইব্‌ন সালেহ, ইয়াহিয়া ইব্‌ন উসমান ইব্‌ন সালেহ ও ইমাম তাবারানী বর্ণনা করিয়াছেনঃ

নবী করীম (সাঃ) বলিয়াছেন—“যে ব্যক্তি কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করিয়া চিন্তান্বিত ও শংকাকুল হয়, সে কুরআন মজীদের সর্বোত্তম তিলাওয়াতকারী।

হযরত ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) হইতে ধারাবাহিকভাবে যিহাক, সাঈদ, আবূ সাঈদ বাক্কাল, আবদুল্লাহ ইব্‌ন সুলায়মান, নাঈম ইব্‌ন হাম্মাদ, আবূ ইয়াযীদ কারাতেসী ও ইমাম তাবারানী বর্ণনা করিয়াছেনঃ

নবী করীম (সাঃ) বলিয়াছেন—’তোমরা মধুর সুরে কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করিও।’ ইমাম তাবারানী উপরোল্লিখিত সনদেই বর্ণনা করিয়াছেনঃ

নবী করীম (সাঃ) বলিয়াছেন—‘যাহারা কুরআন মজীদের ধারক, বাহক ও অনুসারী, তাহারাই আমার উম্মতের মধ্যে অধিকতর সম্ভ্রান্ত !’

হযরত ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) ধারাবাহিকভাবে যুরারাহ ইন আওফা, কাতাদাহ, সালেহ মাররী, ইবরাহীম ইব্‌ন আবূ সুআয়দ যাররা, মু’আয ইব্‌ন মুছান্না ও ইমাম তাবারানী বর্ণনা করিয়াছেনঃ

হযরত ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) বলেন—একদা জনৈক ব্যক্তি নবী করীম (সাঃ)-এর নিকট প্রশ্ন করিল- কোন কাজ আল্লাহ্ তা’আলার নিকট প্রিয়তম? নবী করীম (সাঃ) বলিলেন—আল হালুল মুরতাহিল (স্থান হইতে স্থানান্তরে গমনশীল আগন্তুক)। প্রশ্নকারী আরয করিল—হে আল্লাহর রাসূল ! আল হালুল মুরতাহিল কে? নবী করীম (সাঃ) বলিলেন- কুরআন মজীদের যে ধারক ও সংরক্ষক এবং উহার প্রথমাংশ হইতে আরম্ভ করিয়া শেষাংশ পর্যন্ত ও উহার শেষাংশ হইতে আরম্ভ করিয়া প্রথমাংশ পর্যন্ত সমগ্র কুরআন মজীদ লইয়া চিন্তা ও গবেষণা করে, সেই হইতেছে ألحال المرتحل

error: Content is protected !!