ওঝারা সত্যি কামরু গুরুর কাছে শিখেছে বহু পূর্বে। তাঁর দেশ আর আমাদের দেশ লাগালাগি ছিল, মুরুব্বিরা সেকথা আমাদের বলেছেন। ওঝাদের কাজ হল ছয়টিঃ (১) খড়ি দেখে, (২) চাল ছড়ায়, (৩) কামড়ায় কিংবা লুন্ডা করে, (৪) দেখতা খুঁড়ে, (৫) দেবতা ছাড়ায়, (৬) লোককে ওষুধ দেয়। রোগী ঔষধে যদি ভাল না হয়, গ্রামের লোক ওঝাকে দিয়ে খড়ি দেখায়। তেল আর শালপাতা নিয়ে আসে, আর সে বসে দুটি পাতাকে তেল মাখাবে, আর মন্ত্র বলতে বলতে ঘষবে ‘তেল তেল রায়ে তেল, মাম তেল, কুসুম তেল, ই তেল পড় হায়েতে, কি উঠো, ডাম উঠো, ভূত উঠো, ফুগিন উঠো, বিষ উঠো, কে পড়হে, গুরু পড়হে, গুরু আগতা মাত্র পড়হে। এরপর মাটিতে একটু রাখবে। তারপর খুলে দেখবে। লোক ওঝাকে জিজ্ঞেস করবেঃ দেন বাবা অনুগ্রহ করুন, কি সব পেলেন? বললে তবে তো আমরা বুঝব। ওঝা খড়ি দেখবারই আগে ঠিক করে রেখেছে যে, এখানে হল জান, এখানে হল ঘরের দেবতা, দুঃখ হলে দুঃখ, আর বিষ হলে বিষই। ডাইন যদি উঠে, মাঝি পারামিক সন্ধ্যাবেলা বলে যায়। শুন অমুক, অমুকের অসুখ, ভাল যেন হয়, তোমাকেই ধরেছি, ভাল না হলে তোমাকে বলছি না। তাতে ভাল হলে ভালোই। তা না হলে দুইজন করে মাঝি চারদিকে তেল দেখাতে পাঠাবে। সন্ধ্যাবেলা জমা হয় আর তেল দেখাতে যেসব লোক গিয়েছিল তাদের একে একে জিজ্ঞাসা করবে। তিন দিক থেকে ডাইন ঠিক করে আনলে বাছবার জন্য ডাল পুঁতিবে, আর যদি মিল না হয়, আরও পুনরায় খড়ি দেখিয়ে আসবে।

ঘরের দেবতা যদি ওঠে তাহলে রোগীকে বলবেঃ নাও তোমার ঠাকুর সামলাও। তারপর জল দিয়ে মানৎ করবে যে ভাল হলে পূজা করব। বাইরের দেবতা উঠলে ওঝা মন্ত্র আওড়াতে আওড়াতে দেবতাকে চাল ছড়িয়ে দিবে, (‘নে তবে কালনা বঙ্গা বুল লেৎ মেটা ডোডে লেৎ মেরা উনিরেন সিরা হপমগে সঠুক সামবাড় কেম, তেঞে খা – দ নিয়া অড়া; দ ছিকেম হাড়িকেম, ওকাড়েতাম মাম বা থাম সেকজং বেরেৎজং মে।) মাও তরে কাল না বঙ্গা জাং এর রক্ত শিরায় রক্ত দিচ্ছি, ভাল যেন হয়ে যায়, যে তোমাকে লাগিয়ছিল তার সেবা ছেলেই সাবাড় করুন, আজ থেকে এ বাড়ি ছেড়ে দেন, নিজের থানে চলিয়া যান। মারাং বুরু আর পারগামাকেও চাল ছড়ায়ে ‘বাঁখের’ (মিনতি) করবে, এই যে অমুক মাঝির ঘরে ‘জজম বঙ্গা’ (যে দেবতা মানুষকে খায়।) জজম বুরু লেগেছিল পড়েছিল, ধরে সাবুদ করলাম, খুদ চাল তার দিয়ে দিলাম, তারই সাক্ষী সভা করুন, আজ থেকে যেন ভাল হয় রোগী। এইরূপ আলাদা আলাদা মারাং বুরু আর পারগামাদেরও ওঝা মিনতি করে। শেষে মুড়া ঢড়া সীমা আইলের দেবতাদের চাল ছড়িয়ে মিনতি করেঃ এই নিন তবে আপনারা মুড়ার খুঁটির, লাটার, লোপাকের সীমার আইলের বড় ছোট ঝুলি ঝলা কাঁধে, খড়ম হাতে যোগী ইত্যাদি, যাঁদের চলে তাঁরা আসুন, যাঁদের চলে না তাঁরা দূরে থেকে সাক্ষী শোভা করুন।

দুঃখ উঠলে ওষুধ বাঁটিয়া খাওয়ায় আর বিষ হলে কামড়ায় আর লুন্ডা করে (ওষুধের গোলা তৈয়ার করে সেটা দিয়ে মালিশ করে)। ওঝারা প্রথমে এক জায়গায় মন্ত্র দ্বারা ঝেড়ে জমা করে, তারপর মুখে কামড় দিয়ে বার করে পাতার খলাতে ফেলবে। কি যেখানে রোগ আছে, গুঁড়ির গোলা তৈরি করে মন্ত্র পড়ে লুন্ডা করে। লোকটি ভাল হলে ওঝাকে ‘সাকেৎ’ (মানসিকের) মুরগী দেয়। সেগুলি বলি দিয়ে খায়, আর গ্রামের দুই একজনকে ভাগ দেয়।

error: Content is protected !!
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x