ভারতবর্ষের পত্র-পত্রিকাগুলোর মধ্যে নস্ট্রাডামুস নিয়ে গাল-গপ্পো বা গুল-গপ্পোর পথিকৃৎ দিল্লি থেকে প্রকাশিত ‘অর্গানাইজার’ ও বোম্বে থেকে প্রকাশিত ‘তরুণ ভারত’ এবং কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘স্বস্তিকা’ পত্রিকা। এইসব পত্রিকাগুলোর তেমন জনপ্রিয়তা না থাকায় লেখাগুলোর তেমন প্রভাব পড়েনি সাধারণ মানুষের মধ্যে। আমাদের দেশে নস্ট্রাডামুসের গাল-গপ্পোর প্রথম অ্যাটোমবোমাটি ফাটালেন এলাহাবাদ থেকে প্রকাশিত ‘মায়া’ ও ‘আলোকপাত’ পত্রিকা। লেখা দু’টি প্রকাশিত হতেই দেশব্যাপী বিশাল এক চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছিল। এমন কথাটি লিখলাম, কারণ তারপর দেশের বহু ভাষা-ভাষী পত্র-পত্রিকাই হাঁউ- মাঁউ-কাঁউ’ করে লোভনীয় খাবারের গন্ধ পাওয়া গল্পের রাক্ষসের মতই ঝাঁপিয়ে পড়ল। তাদের প্রায় প্রত্যেকেরই একটিই লক্ষ্য ছিল- ‘ম্যাটারটা পাবলিক খাবে ভাল’। লক্ষ্য যখন যে কোনও উপায়ে পত্রিকার বিক্রি বাড়ান, অতএব পাবলিককে খাওয়াও। যতখানি রহস্যময়, যতখানি গা শিরশিরে করে পাতে ফেলা যাবে, ততই উপাদেয় হবে, পাঠক- পাঠিকারা হাপুস-হুপুস করে চেটে-পুটে খাবে। ফলে শুরু হয়ে গেল অলিখিত এক বিশাল গাল-গপ্পো, গুল-গল্পের সর্ব-ভারতীয় প্রতিযোগিতা। তাতে এ বলে, ‘আমায় দ্যখ’ তো, ও বলে, ‘আমায় দ্যাখ’। পত্রিকাগুলো নেমেছে ব্যবসা করতে। ওবা তো আর ‘দেশ সেবা’ করতে পত্রিকার ব্যবসা খোলেনি। অতএব সব জেনেও এইসব গপ্পো লেখক, সম্পাদক ও মালিকরা সত্যের দিক থেকে চোখ উল্টে রেখে নীতিকে ঝাঁট-কাট করে নিজের জুতোর সুখতলায় বসিয়ে নিয়েছে। সবারই অবস্থা প্রায়, ‘এলোমেলো করে দে মা, লুটে-পুটে খাই ।

এমনই সময়ে আর একটি গুলের পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটাল বাংলা ভাষার জনপ্রিয় পত্রিকা ‘আনন্দমেলা’। পাঠক-পাঠিকা যে-হেতু ‘গুঁড়ো থেকে বুড়ো”, তাই প্রতিক্রিয়াও হলো ব্যাপক। যে পড়ে, সেই ধরে নেয়—’নস্ট্রাডামুস মানেই এক অভ্রান্ত জ্যোতিষী।’ এমন এক আগা-পাশতলা গুল-গপ্পো পড়ে ও শুনে কত লক্ষ দ্বিধাগ্রস্ত মানুষ যে পুরোপুরি অদৃষ্টবাদী হয়ে গেল, একটা পরিপূর্ণ মিথ্যের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করল, তার হিসেব কে রাখে ? মগজ ধোলাই করে এমন এক সর্বনাশা মিথ্যা বিশ্বাস মানুষের মাথায় ঢোকাতে পেরে কারো কারো আরও কোনও বৃহত্তর স্বার্থ রক্ষিত হয়েছে, তারই এক নিষ্ঠুর উদাহরণ ‘বিশ্ব হিন্দু পরিষদ মুর্শিদাবাদ শাখা কর্তৃক প্রচারিত’ বই ‘নোস্ট্রাডামাসের সেঞ্চুরি ও পৃথিবীর ভবিষ্যৎ’। অনুবাদক শম্ভুনাথ বাগচী, এম. কম, এল. এল. বি. (এ্যাডভোকেট)। বইটির ১১ পৃষ্ঠার একটু অংশ তুলে দিচ্ছিঃ

চতুস্পদী নং ৯৫—শতক নং ৩

মুসলমান সাম্রাজ্য ধ্বংস

হবে হিন্দুদের হাতে

বেশীর ভাগ মুসলমানই হবে নিহত,

ভারত করবে আনবিক

বোমা বিস্ফোরণ,

মহম্মদ হবে চিরদিনের

তরে নিথর ও নিস্তব্ধ।

‘আলোকপাত’ পত্রিকায় এই চতুস্পদী নং ৯৫-শতক নং-৩-এর অনুবাদ করা হয়েছে

এই ভাবেঃ

মূরদের মতাদর্শ চলে যাবে বিলুপ্তির পথে

জনপ্রিয়তর কোন অন্য এক অমিয় আহ্বানে

নীপার নদীটির কোলে সেই জন্মলব্ধ শিশু

সর্বত্র ভরিয়ে দেবে অন্য সূরে অন্য কোন গান।

নস্ট্রাডামুসের ফরাসী ভাষায় লেখা মূল শ্লোক

মূল শ্লোক ও এরিকা চিটহ্যামের অনুবাদের সঙ্গে ‘আলোকপাত’ এর অনুবাদের মিল খুঁজে পেলেও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের পক্ষে হাজির করা শ্লোকের মিল নেই তো শতকরা এক ভাগও। এই শ্লোকটির রচয়িতা যখন শম্ভুনাথ বাগচী এম. কম., এল. এল. বি. (এ্যাডভোকেট) স্বয়ং, তখন কেন যে নিজের রচনাকে নস্ট্রাডামুসের রচনা বলে চালাতে চাইছেন, এটা নিয়ে নিশ্চয়ই গভীর চিন্তার প্রয়োজন আছে। এ কি লেখকের অতি বিনয়ের ফল ? না কি, লেখক ও বিশ্বহিন্দু পরিষদের ‘জাতের নাম বজ্জাতি’ ?

‘আলোকপাত’-এর কথা মত কবিতাটিতে নস্ট্রাডামুসের নাকি ‘মুর’ কথাটা ব্যবহার কারণ শ্রীলঙ্কা, ইউরোপ ও এশিয়ার এইসব অঞ্চলের মুসলমানরা ‘নূর’ নামেও পরিচিত। ফরাসী ভাষায় ‘মূর’ শব্দটির প্রয়োগ না থাকলেও এই কারণেই নস্ট্রাডামুস ‘মূল’ কথাটি ব্যবহার করেছিলেন বলে কোনও কোনও ব্যাখ্যাকার ব্যাখ্যা করেছেন।

এই ধরনের যুক্তির ওপর নির্ভর করলে ব্যাখ্যাটা একটু অন্য রকমও হতে পারে। ‘মূর’ ও ‘মূঢ়’ কথাটার উচ্চারণগত মিল লক্ষনীয়। কবিতায় ‘মূঢ়’ কথাটিকেই যে নস্ট্রাডামুস ব্যবহার করেছিলেন, এমনটি ভাবার মত যথেষ্ট কারণ আছে। ভারতবর্ষের বিস্তৃর্ণ অঞ্চলের অধিবাসীদের কাছে ‘মূঢ়’ শব্দটি অর্থবহ, ‘মূঢ়’ অর্থে ‘নির্বোধ’। আর ‘নিপার নদীর’ অর্থে নিশ্চয় এ-পার থেকে ও-পার দেখা যায় না, এমনই এক পারহীন নদীর কথাই বলতে চেয়েছিলেন। ভারতবর্ষে ‘পার’ কথাটিও প্রচলিত। নস্ট্রাডামুস ভারতবর্ষকে বোঝাতেই ভারতের বহুল প্রচারিত শব্দ দুটি এই শ্লোকে ব্যবহার করেছিলেন। তাহলে কবিতা বা শ্লোকটি থেকে আমরা কি অর্থ পেলাম ?

নির্বোধদের মতাদর্শ শেষ পর্যন্ত বিলুপ্ত হবে,

বোধযুক্ত অর্থাৎ যুক্তিবাদের অমোঘ জনপ্রিয়তায়

এ-পার ও-পার দেখা যায় না, এমনই এক নদীর পারে জন্মাবে এক শিশু

যার দর্শন, নতুন এক দর্শন ভরিয়ে দেবে সারা পৃথিবীকে নতুন ভাবে, সুন্দর ভাবে।

নস্ট্রাডামুস যুক্তিহীন, অন্ধবিশ্বাস-নির্ভর নির্বোধদের গড়ে তোলা তথাকথিত মতাদর্শের পতন অবশ্যম্ভাবি, এ-কথা বুঝতে পেরেছিলেন। বুঝেছিলেন যুক্তিবাদের নির্ভর সাংস্কৃতিক আন্দোলনে পাল্টে যাবে সমাজের পরিবেশ, শোষিত মানুষদেব সচেতনতার কাছে ধরা পড়ে যেতে থাকবে একের পর এক শোষণ কৌশল। ফলে যে আন্দোলন, জনজাগরণের যে আন্দোলন, তা জয় যুক্ত হবেই। সেনা দিয়ে জন-আন্দোলন কখনই রোখা যায়নি; ইউরোপের দেশগুলো থেকে মার্কসবাদের নামে কিছু ‘এলোমেলা করে দে মা, লুটে-পুটে খাই’ পার্টিদের রাজ্য-পাট হারাণ তারই জ্বলন্ত উদাহরণ।

নস্ট্রাডামুস এ-কবিতায় বলেছিলেন, এই যুক্তিবাদী দর্শন, নিপীড়িত মানুষকে সচেতন করার দর্শন, শোষণ-মুক্তির দর্শনের স্রষ্টা জন্মাবেন ‘নিপার’ নদীর তীরে। বাস্তব ঘটনাও তো তাই-ই। আধুনিক যুক্তিবাদী দর্শনের স্রষ্টা, বন্ধু ও নির্দেশক প্রবীর ঘোষ জন্মেছিলেন পদ্মা নদীর পাড়ে ফরিদপুর জেলার উমেদপুর গ্রামে। উমেদপুর আজ বাংলাদেশে হলেও প্রবীর ঘোষের জন্মের সময় তা ছিল ভারতের এক গ্রাম। আর পদ্মা, এ-পার, ও-পার দেখা যায় না, এমনই এক নদী। অতএব আমার এই ব্যাখ্যাটা অন্য ব্যাখ্যার থেকে যখন আরো বেশি গ্রহণযোগ্য তখন এই ব্যাখ্যাটিকেই তো লুফে নেওয়া উচিত ব্যাখ্যাকারদের । তাহলে অন্তত একটি ক্ষেত্রে গোঁজামিল দিয়ে হলেও মেলাবার কৃতিত্ব দাবি করতে পারেন ওঁরা। কারণ এরিকা চিটহ্যাম ও তাঁর ব্যাখ্যার সূত্র ধরে লেখা গণ্ডা-গুচ্ছের লেখক ও আলোকপাত এই কবিতাটির যে ব্যাখ্যা হাজির করেছিলেন, সে তো এখন পা হড়কে গোবরে । এদের মতে কবিতাটিতে না কি মুসলমানদের মতাদর্শকে বিনষ্ট করে সোভিয়েত রাশিয়ায় মার্কসবাদের অনন্ত জয়যাত্রার কথাই বলা হয়েছে। কিন্তু সোভিয়েত রাশিয়ায় মার্কসবাদ প্রয়োগের ক্ষেত্রে না থেকে কাগজে-কলমে, নামে যতটুকুও বা ছিল গোরবাচেভ ও ইয়েলেতসিন-এর নেতৃত্বে মার্কসবাদের ‘শবযাত্রা’র সঙ্গে সঙ্গে নস্ট্রাডামুসের এই কবিতার ব্যাখ্যাটাও যে ফালতু হয়ে গেল ? এর পর চিটহ্যাম, তাঁর অনুগামীরা এবং আলোকপাত কি বলবেন ? সত্যিই বলছি জানতে বড় ইচ্ছে হচ্ছে।

শম্ভুবাবুর চটি বইতে এমনি সব উল্টো-পাল্টা ব্যাখ্যার ফাটাফাটি। নস্ট্রাডামুসের কবিতা ব্যাখ্যার নামে যত বই-ই প্রকাশিত হয়েছে, সবই এমনি গুল-গপ্পো ঠাসা, পড়তে লাগে খাসা ৷

‘বিশ্ব হিন্দু বার্তা’র ১৪শ বর্ষ, ৬ষ্ঠ সংখ্যার ২৭, ২৮ ও ২৯ পৃষ্ঠার হাজার হাজার জেরক্স কপি কলকাতার মানুষদের হাতে হাতে ঘুরেছে। শিরোনাম ছিল, “হিন্দুরাষ্ট্র হবে বিশ্বের ত্রাণকর্তা—নস্ত্রাদামাস”। তারপর বিশাল একটা বক্স করে তাতে লেখা ছিলঃ নস্ত্রাদামাসের কয়েকটি ভবিষ্যদ্বাণীঃ

১। ১৯৯৯ সালে চীন আণবিক যুদ্ধ বাধাবে

২। ধর্মান্ধ মুসলমানরা চীনের সঙ্গে হাত মেলাবে

৩। ভারত, আমেরিকা ও রাশিয়া মিত্রশক্তি হবে

৪। ২০০৬ সালে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বন্ধ হবে

৫। চীন ও মুসলমানরা ধ্বংস হবে

৬। রাশিয়া কম্যুনিজম বর্জন করবে

৭। ২০০৬ সালের পর ইউরোপ খৃষ্টধর্ম বিসর্জন দেবে

৮। ভারত হিন্দু-শিখ রাষ্ট্র হবে

৯। দক্ষিণ ভারত থেকে এক নেতার আবির্ভাব হবে যিনি সমগ্র বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবেন

১০। ২০০৬ সালের মধ্যে পৃথিবীর দুই তৃতীয়াংশ লোক মারা যাবে

১১ । কিন্তু একবিংশ শতাব্দীতে হিন্দু-শিখ ও ইহুদীদের মিলিত প্রয়াসে এক স্বর্ণযুগের সূচনা হবে

১২। নানা শাখা-প্রশাখা দিয়ে হিন্দুধর্ম সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে

নস্ট্রাডামুসের কোনও ভবিষ্যৎবাণীতে যে-হেতু সুনির্দিষ্ট ভাবে কোনও কিছুই বলা হয়নি, সুতরাং তাঁর ভবিষ্যৎবাণীগুলোর মধ্যে অন্তত একটি সত্যি হয়েছিল, এমন কথা জোর করে বলার মত কোনও সুযোগই নেই। তাই এমন কথাও আদৌ বলা চলবে না, “নস্ট্রাডামুসের আগের ভবিষ্যৎবাণীগুলো যে-হেতু ঠিক হয়েছে, সুতরাং পরেরগুলোও ঠিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।” তবু এমন কথা কেউ কেউ বলে। এমন কথা তাবাই বলে-যারা হয় রজক-বন্ধু গর্দভ, অথবা রজত-বন্ধু খচ্চর ।

যদি এমনটা সত্যিই হতো যে, নস্ট্রাডামুসের অতীতের প্রতিটি ভবিষ্যৎবাণীই ঠিক হয়েছে; তবুও বলা চলত না—“অতএব এই এক ডজন ভবিষ্যৎবাণীও ঠিক হবার সম্ভাবনা উজ্জ্বল”, কারণ ওই এক ডজন ভবিষ্যৎবাণী তো নস্ট্রাডামুসেব লেখাই নয়, তাঁর কোনও সেঞ্চুরিতেই নেই। আর দশজন নস্ট্রাডামুসের কবিতার ব্যাখ্যাকারের মতই এই এক ডজন ব্যাখ্যার লেখকও নস্ট্রাডামুসের নাম ভাঙিয়ে নিজের ইচ্ছে মত যা খুশি তাই লিখে গেছেন । তবে অনেক লেখকের লক্ষ্যের সঙ্গে এই লেখকের লক্ষ্যের অনেক পার্থক্য আছে বলেই মনে হয়। অন্যেরা গুল-গপ্পো ফেঁদে ছিলেন কিছু কামিয়ে নিতে, কিছু ফালতু নাম কুড়োতে; আর ইনি গুল-গপ্পো ফেঁদেছেন হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে অবিশ্বাস, শত্রুতা ও ঘৃণা সৃষ্টি করতে।

ডঃ সুধীর বেরা’র ‘নস্ট্রাডামের ভবিষ্যৎবাণী ও ভারতের ভবিষ্যৎ’ তো ‘হট কেকে’র মতই বিক্রি হয়েছে। তাঁর বইয়ে তাই-ই আছে যা বইটি প্রকাশের আগে আলোকপাত ও আনন্দমেলা’য় প্রকাশিত হয়েছিল। বাড়তির মধ্যে আছে একটি বড় খবর; খবরটা ওর বইয়ের ৫১ পৃষ্ঠা থেকে তুলে দিচ্ছিঃ

“প্রখ্যাত সাংবাদিক খুশবন্ত সিং নস্ট্রাডামের ভবিষ্যৎবাণীগুলি অভ্রান্ত এ কথা বিশ্বাস করতে চাননি। তিনি লিখেছিলেন যারা বিশ্বাস করেন তাদের মাথার স্বাভাবিকত্ব সম্বন্ধে তিনি সন্দিহান ছিলেন। পরে নস্ট্রাডামের আগাম ভবিষ্যৎবাণীগুলির হিরণ্যাপ্পা ও অন্যান্যদের কৃত অনুবাদগুলি পড়ে এবং পরবর্তী ঘটনাগুলি মিলিয়ে দেখে তিনি তাঁর পূর্বের মত আমূল পরিবর্তন করেন।”

নস্ট্রাডামুসের কবিতার ব্যাখ্যার নামে দু-মলাটের মাঝে এত গুল-গল্পের দাপাদাপি দেখে আমার বাবার (প্রবীর ঘোষেব) কিঞ্চিৎ সন্দেহের উদ্বেগ হয়েছিল-খুশবন্ত সিং-এর ব্যাপারটাও

আবার….

বইটা পড়েই বাবা একটা চিঠি লিখলেন খুশবন্ত সিংকে। ডঃ সুধীর বেরা’র বইয়ের ওই অংশটা তুলে দিয়ে এই বিষয়ে তার বক্তব্য জানতে চাইলেন। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই উদ্ভব পাঠালেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন সাংবাদিক খুশবন্ত সিং। ছোট্ট চিঠি।

 

প্ৰিয় শ্ৰীঘোষ

তারিখ ২৩ জুলাই ‘৯১

ডঃ সুধীর বেরা একজন মিথ্যেবাদী, অথবা হিরণ্যাপ্পা একটি আরও বড় মিথ্যেবাদী। আমি মনে করি নস্ট্রাডামুস একটা ফালতু ব্যাপার …..

মার্কসবাদ, গান্ধীবাদ, জাতীয়তাবাদ ইত্যাদি ভাঙিয়ে অনেকে যেমন ভালই করে-কম্মে খাচ্ছেন, নস্ট্রাডামুসও তেমনই এক রহস্যবাদ, যা ভাঙিয়ে অনেকেই দিব্বি করে-কন্মে খাচ্ছেন। নস্ট্রাডামুস নিশ্চিতভাবেই একজন বুজরুক জ্যোতিষী, প্রতারক ভবিষ্যত্বক্তা। কিন্তু কথাটা হলো নস্ট্রাডামুস ৪২০ হলে তার ব্যাখ্যাকারেরা অর্থাৎ আরো বড় বুজরুকেরা, মিথ্যাচারীরা কী ? পাঠক-পাঠিকারা কী বলেন?

এইসব ধান্ধাবাজ মিথ্যেবাদীদের বিরুদ্ধে প্রতিটি সৎ মানুষ কেন ধিক্কার জানাবেন না ? কেন ওদের প্রতি বর্ষিত হবে না ঘৃণা ? কেন এইসব সমাজ-বিরোধীদের সামাজিকভাবে বয়কটকরা হবে না? আমরা কাদা-নরম মেরুদণ্ডী প্রাণীর মত আপোস করতে করতে পাপোশ হয়ে অত্যাচারী, বঞ্চনাকারীদের পায়ের তলায় থেকেই বাধিত হবো, না কি শক্ত সবল পায়ে, আপোসহীন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার আনন্দকে উপভোগ করব তা ঠিক করতে হবে আপনাকে, আমাকে, আমাদেরকে ।

সত্যিকথাগুলো লেখার জন্য আমার ওপর যদি কোনও আক্রমণ নেমেই আসে, সে-দিন আপনারা প্রত্যেকে আমার পাশে থাকবেন, বিশ্বাস রাখি। মানুষের শ্রুতি এই বিশ্বাসই আমাকে লড়াই চালাবার শক্তি দিয়েছে, দেবে।

error: Content is protected !!