চারদিকে শুনছি তোমার রোমাঞ্চকর কণ্ঠস্বর।
মেঘে মেঘে ঝিলিক দিচ্ছে তোমার দীর্ঘ শরীরের রূপরেখা।
ঘন কালো ছায়া ছড়িয়ে পড়ছে পুব থেকে পশ্চিমে,
উত্তর থেকে দক্ষিণে, মেঘ থেকে মাটিতে।
তোমার ঢেউ খেলানো মস্তক থেকে পল্লীর পথপ্রান্তে খ’সে পড়ছে
দু-চারটি ঝলমলে বিস্ময়কর চুল,
তোমার হাত থেকে খসে পড়া অশুভ রুমালে ঢেকে যাচ্ছে
শহরের পর শহর, সমুদ্র আর বিমানবন্দর।
হে অশুভ, হে অশুভ, হে সমকালীন দেবতা, তুমি মহাসমারোহে এসো।
তোমার জন্যে খোলা স্থলপথ, তুমি স্থলপথে এসো।
তোমার জন্যে খোলা জলপথ, তুমি জলপথে এসো।
তোমার জন্যে খোলা সমস্ত আকাশ, তুমি আকাশপথে এসো।
হে অশুভ, হে অশুভ, হে সমকালীন দেবতা, তুমি মহাসমারোহে এসো।
তোমার জন্যে খোলা সব গৃহ, তুমি সব গৃহে এসো।
তোমার জন্যে খোলা সব প্রাঙ্গণ, তুমি সব প্রাঙ্গণে এসো।
তোমার জন্যে খোলা সব মন্দির, তুমি সব মন্দিরে এসো।
হে অশুভ, তুমি ফাল্গুনের ফুল হয়ে এসো
হে অশুভ, তুমি চৈত্রের কৃষ্ণচুড়া হয়ে এসো
হে অশুভ, ঝড় হয়ে এসো তুমি বোশেখের প্রত্যেক বিকেলে
হে অশুভ, শ্রাবণের বৃষ্টি হয়ে এসো তুমি অঝোর ধারায়।
এখানে কি কেউ জনককে হত্যা করে জননীর সাথে
লিপ্ত অজাচারে? বাঙলা কি পৃথিবীর নতুন করিন্থ?
হে অশুভ, দিন হয়ে এসো তুমি রাত্রি হয়ে এসো
হে অশুভ, সূর্য হয়ে ওঠো পুবে চাঁদ হয়ে ওঠো পশ্চিমে
হে অশুভ, শস্য হয়ে ফুলে ওঠো প্রতিটি পাকা ধান্যবীজে
হে অশুভ, হে সমকালীন বাঙলার দেবতা,
তুমি সমস্ত দিক আর দিগন্ত থেকে এসো।
পাড়ার গুণ্ডা হয়ে এসো তুমি পাড়ায় পাড়ায়
ধর্ষণকারী হয়ে এসো তুমি প্রতিটি রাস্তায়
ওৎ পেতে দাঁড়িয়ে থাকো বালিকা বিদ্যালয়ের পাশের গলিতে
দশটা হেডলাইট জ্বালিয়ে এসো শহরের প্রধান সড়কে
এসো তুমি সাইলেন্সরহীন মোটর সাইকেলে
এসো তুমি দূরপাল্লার লাকশারি কোচে
হে অশুভ, হে সমকালীন বাঙলার দেবতা, সর্বব্যাপী
হয়ে তুমি এসো।
এসো বুট পায়ে ইউনিফর্ম প’রে
এসো পতাকাখচিত মার্সিডিস চ’ড়ে
এসো বাসে ঝুলে রিকশায় চেপে
এসো ব্যাংকের কাউন্টারে ঝলমলে নোটের বাণ্ডিল হয়ে
এসো গ্রন্থাগারে সারিসারি গ্রন্থ হয়ে
আমার ছাত্র হয়ে এসো তুমি ঘণ্টায় ঘণ্টায়
অধ্যাপক হয়ে এসো শ্রেণীতে শ্রেণীতে
এসো সচিব ও যুগ্ম সচিব হয়ে
এসো মন্ত্রী হয়ে
ব্যবস্থাপক হয়ে এসো সংস্থায় সংস্থায়।
হে অশুভ, তুমি প্রেমিকপ্রেমিকার প্রেমালাপে এসো
হে অশুভ, তুমি প্রত্যেকের চুম্বনে আলিঙ্গনে এসো
হে অশুভ, প্রতিটি শয্যায় তুমি পুলক হয়ে এসো
হে অশুভ, তুমি প্রতিটি কবিতার প্রতিটি পংক্তিতে
এসো হে অশুভ, তুমি আমাদের প্রত্যকের প্রার্থনায় এসো
হে অশুভ, ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইল হয়ে তুমি এসো।
“যতোই গভীরে যাই মধু, যতোই ওপরে যাই নীল” কবিতা সমগ্র সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ
♦ নষ্ট হৃৎপিণ্ডের মতো বাংলাদেশ
♦ পুত্রকন্যাদের প্রতি, মনে মনে
♦ যদি ওর মতো আমারও সব কিছু ভালো লাগতো