জ্যাগনিস দম্পতিরও অনেক আগে একই ধরনের টেলিপ্যাথি দেখিয়ে বিশ্বকে বিস্মিত করেছিলেন ফ্রান্সের বিখ্যাত জাদুকর রবেয়ার উদ্যা ও তাঁর ছেলে এমিল উদ্যা।
রবেয়ার উদ্যা যদিও জাদুকর, কিন্তু এই টেলিপ্যাথির খেলা দেখাবার সময় এটা জাদুর খেলা বলে দেখান নি। দেখিয়েছেন, অলৌকিক ক্ষমতার বিস্ময়কর প্রকাশ হিসেবে।
১৯৮৫-এর জুলাইতে এবং ১৯৮৬-এর ১২ ফেব্রুয়ারী বাপ-ছেলেতে দেখালেন টেলিপ্যাথির বিস্ময়কর ক্ষমতা। রবেয়ার উদ্যার ছাপানো অনুষ্ঠান সূচিতে যা লেখা ছিল তা হল-
“রবেয়ার উদ্যার পুত্র তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় ও বিস্ময়কর অতীন্দ্রিয় ক্ষমতার দ্বারা চোখে পুরু ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থায় দর্শকদের পছন্দ করা যে কোন জিনিসের বর্ণনা করবে।“
রবেয়ার যখন এই টেলিপ্যাথি দেখান তখন ছেলে এমিল এর বয়স বছর পনেরো মাত্র।
এই খেলা আমাদের দেশে
আমাদের দেশের কিছু ভবঘুরে সম্প্রদায় এই ধরনের খেলা রাস্তা-ঘাটে, হাটে-বাজারে সুন্দরভাবে দেখায়। তবে, ওরাও এটাকে জাদুর খেলা বা কৌশলের খেলা হিসেবে স্বীকার করতে নারাজ। ওরাও এটাকে সম্পূর্ণ অতীন্দ্রিয় ক্ষমতার দ্বারাই ঘটে থাকে বলে জানায়।
ওদের একজন চাদর ঢাকা দিয়ে শুয়ে থাকে। তার বুকের উপর রাখা হয় একটা সত্য সাঁইজির তাবিজ। প্রশ্ন করে তার সঙ্গী। নিখুঁত উত্তর দিয়ে চলে শুয়ে থাকা মানুষটি। এই বিষয়ে ওদের সাফ জবাব- এটা শুধু সত্য সাঁইয়ের তাবিজের গুণে হয়। দর্শকও বিশ্বাস করেন সে কথা। প্রতিটি খেলার শেষেই বেশ কিছু তাবিজও ওরা বিক্রি করে।
এই ধরনের টেলিপ্যাথির আসল রহস্য
এই একই ধরনের টেলিপ্যাথির খেলা কোন অতীন্দ্রিয় ক্ষমতার সাহায্য ছাড়াই আমি আর আমার পুত্র পিংকি বহু অনুষ্ঠানে ও সেমিনারে সুন্দরভাবে দেখাতে সক্ষম হয়েছি।
একদিনের ঘটনা ১৯৮৫-র ২২ শে সেপ্টেম্বর রবিবারের সকাল। ডাঃ ধীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়িতে জনা বারো বিশিষ্ট যুক্তিবাদী ও বিজ্ঞানমনস্ক ব্যক্তিদের সামনে ঠিক এই ধরনের টেলিপ্যাথির খেলাই আমরা দু’জনে দেখিয়েছিলাম। সেদিনের প্রদর্শনীতে যদিও আমি সোজাসুজি বলে নিয়েছিলাম যে, আমাদের এই খেলাগুলোর মধ্যে কোন অতীন্দ্রিয় ব্যাপার-স্যাপার নেই, অতএব অতীন্দ্রিয় বিশ্বাস নিয়ে দেখার মধ্যে যে নাটকীয়তা, উত্তেজনা ও রোমাঞ্চ আছে তা আমাদের খেলার মধ্যে পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা ছিল না। তবু চোখ বাঁধা পিংকি ওর স্মৃতিশক্তিকে ঠিক মতো কাজে লাগিয়ে আমার অতি সূক্ষ্ম সঙ্কেতগুলোকে ধরে প্রতিটি প্রশ্নের নিখুঁত উত্তর দিয়ে দর্শকদের বিস্মিত করেছিল।
-সেদিন আমার প্রশ্ন আর ওর উত্তরগুলো ছিল এই ধরনের –
-“এটা কি?”
-“ফ্যান।“
-“এটা কি?”
-“ক্যালেন্ডার।“
-“উনি কি পোশাক পরে আছেন?”
-“প্যান্ট-সার্ট।“
-“এই ভদ্রলোকের প্যান্টের রং কি?”
-“নীল।“
-“এটা কি?”
-“চশমা”
-“এই ভদ্রলোক পায়ে কি পরেছেন?”
-“চটি”।
-“এই ভদ্রলোক কি পোশাক পরে আছেন?”
-“উনি ভদ্রলোক নন, মহিলা। পরে আছেন নীল ছাপা শাড়ি।“
-“আমার হাতে এটা কি?”
-“কলম”।
-“এবার হাতে কি নিয়েছি?”
-“ডট পেন।“
-“আমার হাতে কি?”
-“একটা বই।“
-“এটা?”
-“একটা ব্যাগ।“
একটু লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন, আমি একাধিকবার প্রশ্ন করে বিভিন্ন ধরনের উত্তর পেয়েছি। যেমন –“এটা কি?” এই একই প্রশ্ন করে এক একবার এক এক ধরনের উত্তর পেয়েছে। ‘কখনো উত্তর ছিল “ফ্যান”, কখনো “ক্যালেন্ডার”, কখনো ‘চশমা”। অর্থাৎ সাধারণভাবে কেউ যদি ভেবে থাকেন, প্রশ্নের মধ্যে শব্দ সাজানোর হেরফেরই শুধু সঙ্কেত পাঠানো হয় তবে তাঁরা ভুল করবেন। একই শব্দের উচ্চারণের সামান্য পার্থক্যও ভিন্নতর সঙ্কেত বহন করে, যেটা বাইরের কারও পক্ষে অনেক সময় বুঝে ওঠা সম্ভব হয় না।
১১.২ ডুবোজাহাজে টেলিপ্যাথির পরীক্ষা
১১.৩ টেলিপ্যাথির সাহায্যে নোটের নম্বর বলা
১১.৪ টেলিফোনে টেলিপ্যাথিঃ আয়োজক লন্ডনের ‘সানডে মিরর’
১১.৭ টেলিফোন টেলিপ্যাথির আর এক আকর্ষণীয় ঘটনা
১১.৮ এমিল উদ্যা ও রবেয়ার উদ্যা’র টেলিপ্যাথি
১১.৯ অতীন্দ্রিয় ইউরি গেলারকে নিয়ে ‘নেচার’ (Nature)-এর রিপোর্ট
১১.১০ আই আই টি-তে টেলিপ্যাথি দেখালেন দীপক রাও