বিভিন্ন দেশের, বিভিন্ন ধর্মীয় বহু সাধকদের সম্বন্ধেই প্রচলিত আছে, তাঁরা ঈশ্বরের দেখা পেয়েছেন। যারা ঈশ্বর দেখেছেন বাঁ ঈশ্বরের বাণী নিজের কানে শুনেছেন বলে দাবী করেন, মনোবিজ্ঞানের চোখে তাঁরা মানসিক রোগী মাত্র। ঠিকমতো চিকিৎসা হলে তাঁদের এই ধরনের মানসিক ভ্রান্তি কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাঁরা আবার ফিরে আসতে পারেন সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে। মনোবিজ্ঞানের ভাষায় এই ধরনের ভ্রান্ত অনুভূতিকে বলা হয় ‘illusion’ ‘hallucination’, ‘delusion’, ‘paranoia’ ইত্যাদি। মনোবিজ্ঞান কিন্তু একজন মানুষের মস্তিষ্কের বিষেষ কিছু কোষকে নিস্তেজ রেখে hallucination (হ্যালুসিনেশন) বাঁ delusion (ডিলিউশন) –এর অবস্থা সৃষ্টি করে ঈশ্বরের দেখা পাওয়া, ঈশ্বরের সঙ্গে কথা বলার অনুভূতি তৈরি করতে পারে।
মিচিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে ডঃ জেমস ওল্ডস, সুইজারল্যান্ডের প্রখ্যাত মনোবিজ্ঞানী ডঃ ওয়াল্টার হেজ, ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডঃ জে. ডেলাগাজো সহ বিশ্বের বহু মনোবিজ্ঞানী এবং এই লেখক বহু মানুষের মনে ঈশ্বর দর্শন ও ঈশ্বরের কথা শোনার অনুভূতি সৃষ্টি করতে সমর্থ হয়েছেন।
এঁরা প্রমাণ করেছেন, বৈদ্যুতিক শক্তির সাহায্য মস্তিষ্কের বিভিন্ন স্নায়ুকোষে উত্তেজনা ও নিস্তেজ অবস্থার সৃষ্টি করে আধ্যাত্মিক অনুভূতি আনা সম্ভব, একইভাবে সম্ভব প্রেম, ঘৃণা, ভয় ও সাহসের অনুভূতি তৈরি করা। আবার ধারণা সঞ্চারের সাহায্যেও এমন অবস্থা তৈরি করা সম্ভব।
Illusion (ভ্রান্ত অনুভূতি)
অভিধানে illusion ও delusion এর অর্থ দেওয়া আছে, ‘মোহ’ এবং ‘ভ্রান্তি’। কিন্তু মনোবিজ্ঞানে illusion, hallucination ও delusion প্রতিটি কথাই ভিন্ন ভিন্ন অর্থ বহন করে।
মনোবিজ্ঞানে illusion হচ্ছে, কোন বস্তু প্রকৃতপক্ষে যা, তাকে সেইভাবে উপলব্ধি না করা। একটা সোজা হাতলের চামচের কিছুটা অংশ জলে ডুবিয়ে রাখলে সোজা চামচটা আর সোজা দেখায় না। দেখলে মনে হয় চামচটা বেঁকে আছে। আমাদের দর্শানুভূতি ভুল করেছে। ছবি ১ দেখুন।
ছবি ২ দেখুন। এখানে যে চারটি দীর্ঘ রেখা দেখা যাচ্ছে সেগুলোকে দেখলে বাঁক মনে হলেও চারটি দীর্ঘ রেখাই সরল – সমান্তরাল।
ছবি ৩ দেখুন। চারটি অক্ষরই বাঁকা বলে আমাদের দৃষ্টিতে মনে হলেও বাস্তবে প্রতিটি অক্ষরই খাড়া।
ছবি ৪ দেখুন। বক্ররেখাগুলো দেখলে কুন্ডলী বলে মনে হচ্ছে। বাস্তবে বক্ররেখাগুও বৃত্ত।
১৯৯১ সালের অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহের একটা ঘটনা বলছি। আমার স্ত্রী সুমি চেয়ারে বসে বই পড়ছে। ডাইনিং টেবিলের আর একটা চেয়ারে বসে ছেলে পিংকি মেতে রয়েছে এর কার্টুন সিরিজ ‘বার্ডম্যান’ আঁকা নিয়ে। আমি ইজিচেয়ারে হেলান দিয়ে রেডিওতে সংকর্ষণ রায়ের বিজ্ঞানভিত্তিক গল্প শুনছিলাম। সুমি পড়তে পড়তেই একটা চড় বসাল কাঁধে। মুখে বলল, “মশা বেড়েছে।“
একটু পরেই দেখলাম পিংকি উঠে দাঁড়াল। আর তার একটু পরেই সুমি আবার চাপড় বসাল ঘাড়ের নিচে। পিংকি হো-হো করে হেঁসে উঠল। সুমি বলল, “দেখলে, তোমার ছেলে কেমন দুষ্টু হয়েছে?”
আসল ঘটনা ছিল, পিংকি ওর মায়ের ঘাড়ের নীচে আলতো করে আঁকার তুলিটা ছুঁইয়েছে। তুলির ছোঁয়াকে মশার উপস্থিতি ভেবে সুমি চড় চালিয়েছে। এটা স্পর্শানুভূতির ভ্রমের উদাহরণ।
১৯৮৪-র ডিসেম্বরের শীত শীত সন্ধ্যায় ঘরের জানলা-দরজা বন্ধ করে লিখতে বসেছি, হঠাৎ ‘ঘেউ ঘেউ’ ‘ঘেউ ঘেউ’ একটানা চিৎকারে বিরক্ত হয়ে দরজা খুলে বারান্দায় বেরোলাম, কি ব্যাপার হঠাৎ এতো কুকুরের চেঁচামেচি? দেখি না ‘ঘেউ ঘেউ’ নয়, ভোটের মিছিল বেরিয়েছে, তারাই চেঁচাচ্ছে ‘ভোট দিন’। ‘ভোট দিন’ শব্দটাই ‘ঘেউ-ঘেউ’ হয়ে আমার কানে পৌছাচ্ছে। শ্রবণানুভূতির ভুলে এমনটি হয়েছে।
আপনি হয়তো সকালবেলায় চায়ের কাপটা নিয়ে ইজি চেয়ারে বসে আয়েশ করে খবরের কাগজটা পড়ছেন। পড়ছেন আপনার প্রিয় দলের ফেডারেশন কাপ জেতার বিবরণ, এমনি সময় গিন্নি বাজারের ব্যাগটা নিয়ে এসে হাজির হলেন। বললেন, “আজ কিন্তু চা আনতে হবে। দুশো গ্রামের একটা হলুদ গুঁড়ো আনবে।“
আপনার পড়ায় মন দিতে অসুবিধা হচ্ছে। বললেন, “আর কিছু লাগবে না তো? ঠিক আছে ব্যাগ এখানেই –“
কথা শেষ করতে পারলেন না। লাফিয়ে উঠলেন শিরশিরে এক আতঙ্কে। খোলা কাঁধের উপর কি যেন একটা –বিছে নয় তো? চলকানো চায়ের কাপটা ইজিচেয়ারের সামনে রাখা টুলটায় নামিয়ে রেখে প্রায় লাফাতে লাফাতে ডান হাত দিয়ে কাঁধটা ঝেড়ে ফেলতেই মেঝেতে পড়ল এক টুকরো সুতো। গিন্নির হাত থেকে বা ব্যাগ থেকে কাঁধে পড়েছে। স্পর্শানুভূতির ভ্রান্তিতে আপনি সুতোকেই ভেবেছিলেন বুঝি বিছে।
এই ধরনের ভ্রম স্বাদগ্রহণের অনুভূতি ও ঘ্রাণানুভূতির ক্ষেত্রেও হতে পারে।
পঞ্চেন্দ্রিয়কে ভিত্তি করে বাঁ ভ্রান্তিকে (illusion) পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে –(১) দর্শানুভূতির ভ্রম (Optical illusion অথবা visual Illusion), (২) শ্রবণাভূতির শ্রম (auditory illusion) (৩) স্পর্শানুভূতির ভ্রম (talctile illusion), (৪) ঘ্রাণানুভূতির ভ্রম (offactory illusion), (৫) স্বাদগ্রহণের বাঁ জিহ্বানুভূতির ভ্রম (taste illusion)।
“অলৌকিক নয়,লৌকিক- ১ম খন্ড ” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ
১. অধ্যায়ঃ এক
১.৩ যুক্তিবাদী, মুক্তচিন্তার সেইসব মানুষ
২. অধ্যায়ঃ দুই
২.১ কুসংস্কারের বিরুদ্ধে বিজ্ঞান
২.২ শাসক শ্রেণির স্বার্থে কুসংস্কার পুষ্ট হচ্ছে
৩. অধ্যায়ঃ তিন
৩.২ বিখ্যাত মহারাজের শূন্যে ভাসা
৩.৩ ব্ল্যাক আর্ট ছাড়া সাধিকার শূন্যে ভাসা
৩.৪ লাঠিতে হাতকে বিশ্রাম দিয়ে শূন্যে ভাসা
৩.৫ বেদে-বেদেনীদের শূন্যে ভাসা
৩.৭ সাঁই বাবাঃ সাঁইবাবার অলৌকিক ঘড়ি-রহস্য
৩.১১ শূন্য থেকে হার আনলেন ও হার মানলেন সাঁই
৩.১২ সাঁইবাবার চ্যালেঞ্জঃ পেটে হবে মোহর!
৩.১৬ যে সাধকরা একই সময়ে একাধিক স্থানে হাজির ছিলেন
৩.১৭ অতিন্দ্রীয় ক্ষমতার তান্ত্রিক ও সন্ন্যাসীরা
৩.২০ অবতারদের নিজদেহে রোগ গ্রহণ
৩.২৬ বকনা গরুর অলৌকিক দুধ ও মেহবেব আলি
৩.২৭ বাবা তারক ভোলার মন্দির ও শ্রীশ্রীবাসুদেব
৩.২৮ যোগে বৃষ্টি আনলেন শিববাল যোগী
৩.২৯ চন্দননগরে সাধুর মৃতকে প্রাণ-দান
৩.৩০ ভগবান শ্রীসদানন্দ দেবঠাকুর
৪. অধ্যায়ঃ চার
৫. অধ্যায় পাঁচ
৬. অধ্যায়ঃ ছয়
৬.১ হিস্টিরিয়া, গণ-হিস্টিরিয়া, আত্ম-সম্মোহন, নির্দেশ
৭. অধ্যায়ঃ সাত
৭.২ সম্মোহনে আত্মা এলো ‘সানন্দা’য়
৭.৩ সম্মোহন নিয়ে নানা ভুল ধারণা
৮. অধ্যায়ঃ আট
৮.১ Illusion (ভ্রান্ত অনুভূতি)
৮.২ Hallucination (অলীক বিশ্বাস)
৮.৩ Delusion মোহ, অন্ধ ভ্রান্ত ধারণা
৯. অধ্যায়ঃ নয়
৯.২ ধর্মের নামে লোক ঠকাবার উপদেশ কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে
৯.৩ সোমনাথ মন্দিরের অলৌকিক রহস্য
৯.৪ প্রাচীন মিশরের ধর্মস্থান রহস্য
৯.৫ কলকাতায় জীবন্ত শীতলাদেবী ও মা দুর্গা
৯.৭ খেজুরতলার মাটি সারায় যত রোগ
৯.১৩ বার্মুডা ট্র্যাঙ্গেল রহস্য
১০. অধ্যায়ঃ দশ
১১. অধ্যায়ঃ এগারো
১১.২ ডুবোজাহাজে টেলিপ্যাথির পরীক্ষা
১১.৩ টেলিপ্যাথির সাহায্যে নোটের নম্বর বলা
১১.৪ টেলিফোনে টেলিপ্যাথিঃ আয়োজক লন্ডনের ‘সানডে মিরর’
১১.৭ টেলিফোন টেলিপ্যাথির আর এক আকর্ষণীয় ঘটনা
১১.৮ এমিল উদ্যা ও রবেয়ার উদ্যা’র টেলিপ্যাথি
১১.৯ অতীন্দ্রিয় ইউরি গেলারকে নিয়ে ‘নেচার’ (Nature)-এর রিপোর্ট
১১.১০ আই আই টি-তে টেলিপ্যাথি দেখালেন দীপক রাও
১১.১১ তবু প্রমাণ করা যায় তেলিপ্যাথি আছে
১২. অধ্যায়ঃ বার
১২.২ নায়াগ্রা জলপ্রপাত ভেঙ্গে পড়ার ভবিষ্যদ্বাণী
১৩. অধ্যায়ঃ তের
১৩.২ সাধু-সন্ন্যাসীদের অতীন্দ্রিয় দৃষ্টি
১৩.৩ ইউরি গেলারের অতীন্দ্রিয় দৃষ্টি
১৪. অধ্যায়ঃ চোদ্দ
১৪.২ মানসিক শক্তিতে রেলগাড়ি থামানো
১৪.৪ স্টীমার বন্ধ করেছিলেন পি.সি. সরকার
১৪.৬ লিফট ও কেবল-কার দাঁড় করিয়েছিলেন ইউরি গেলার
১৪.৭ মানসিক শক্তি দিয়ে গেলারের চামচ বাঁকানো
১৪.৯ ‘নিউ সায়েন্টিস্ট’ –এর পরীক্ষায় ইউরি এলেন না
১৫. অধ্যায়ঃ পনের
১৬. অধ্যায়ঃ ষোল
১৬.১ অধ্যায়ঃ ভাববাদ বনাম যুক্তিবাদ বা বস্তুবাদ
১৬.২ মুক্ত চিন্তার বিরোধী ‘মনু সংহিতা’
১৬.৩ আধ্যাত্মবাদ ও যুক্তিবাদের চোখের আত্মা
১৬.৪ আত্মা, পরলোক ও জন্মান্তর বিষয়ে স্বামী অভেদানন্দ
১৬.৫ স্বামী বিবেকানন্দের চোখে আত্মা
১৬.৬ আত্মা নিয়ে আরও কিছু বিশিষ্ট ভাববাদীর মত
১৬.৭ আত্মা প্রসঙ্গে চার্বাক বা লোকায়ত দর্শন
১৭. অধ্যায়ঃ সতের
১৭.১ জাতিস্মররা হয় মানসিক রোগী, নয় প্রতারক
১৮. অধ্যায়ঃ আঠারো
১৮.১ জাতিস্মর তদন্ত-১: দোলনচাঁপা
১৮.২ জাতিস্মর তদন্ত ২: জ্ঞানতিলক
১৮.৩ জাতিস্মর তদন্ত ৩: ফ্রান্সিস পুনর্জন্ম
১৮.৪ জাতিস্মর তদন্ত ৪: সুনীল দত্ত সাক্সেনা
১৮.৬ জাতিস্মর তদন্ত ৬: কলকাতায় জাতিস্মর
১৯. অধ্যায়ঃ ঊনিশ
১৯.২ উনিশ শতকের দুই সেরা মিডিয়া ও দুই জাদুকর
১৯.৩ প্ল্যানচেটের ওপর আঘাত হেনেছিল যে বই
১৯.৪ স্বামী অভেদানন্দ ও প্রেত-বৈঠক
১৯.৫ বন্ধনমুক্তির খেলায় ভারতীয় জাদুকর
১৯.৬ রবীন্দ্রনাথের প্ল্যানচেট-চর্চা
২০. অধ্যায়ঃ বিশ