এবার যে ঘটনার কথা বলছি সেটা ঘটেছিল তেলাড়ী গ্রামে। তেলাড়ী, সাতগাছিয়া বিধানসভার অন্তর্গত একটি গ্রাম। খেটে খাওয়া গরিবরাই সংখ্যাধিক। শিক্ষিতের হার শতকরা কুড়ি ভাগ। গ্রামের প্রভাবশালী মণ্ডল পরিবারের উদ্যোগে প্রতি বছর একবার মহোৎসব হয়। গ্রামের প্রতিটি বাড়ি থেকেই চাল, ডাল, টাকা তোলা হয়। হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে সকলেই এই মহোৎসবে যোগ দেয়।

বছর কয়েক আগে পূর্ণিমার পরের দিন মহোৎসবের অনুষ্ঠানে সহদেব পণ্ডিতের বউয়ের ভর হল। বউটি উপোস করে ঘুরে ঘুরে মাগন মেগে (ঈশ্বরের নামে ভিক্ষা চাওয়া) এসে স্নান করে ভিজে কাপড়ে গণ্ডী কাটছিলেন। দু’তিনটে গণ্ডী কাটার পর উঠেই কেমন নাচতে লাগলেন। নেচে নেচে ঘুরতে ঘুরতে বলতে লাগলেন, “তোরা ঠিকমত আমার পুজো দিসনি। তোদের পুজোয় ত্রুটি রয়েছে।”

ধুলো-কাদা মাখা শাড়ি, খোলা লম্বা ধুলো মাখা ভেজা চুল, পাগলের মত দৃষ্টি, অনর্গল কথা শুনে উপস্থিত প্রায় সকলেই ধরে নিলেন- সহদেবের বউয়ের উপর ঠাকুরের ভর হয়েছে।

মহিলাটি পুজো মণ্ডপ ঘুরছেন আর নির্দেশ দিয়ে চলেছেন কি কি করতে হবে। ব্যবস্থাপকরা প্রত্যেকেই ওঁর কথাকেই ঠাকুরের নির্দেশ ধরে নিয়ে তা পালন করতে দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দিলেন। ঠাকুরের আদেশ অমান্য করার পরিণতির কথা ভেবে তাঁদের চেষ্টার কোনও ত্রুটি ছিল না।

আবার নতুন করে পুজোর আয়োজন চলতে লাগল। মহিলার আদেশে হরিনামের দল নামগান সর্বোচ্চসুর তুলে শুরু করলেন, খোলের উপর চাঁটিো পড়তে লাগল আরও জোরে। এমন এক অসাধারণ অলৌকিক দেবমাহাত্ম্য যারা দেখার সুযোগ পেলেন তাঁরা নিজের জীবন ধন্য মনে করে অনেকেই আনন্দে কেঁদে ফেললেন। ঝড়ের মত খবরটা ছড়িয়ে পড়ল। কিছুক্ষণের মধ্যেই মহোৎসবের চারিপাশে শুধু মানুষ, আর মানুষ। অনেকেই ধারণা ব্যক্ত করলেন, “আজকালকার ছেলে-ছোকরাদের দিয়ে কি আর আগের মত করে ভক্তি ভরে পুজো হয়? কেউবা বিড়ি ফুঁকতে ফুঁকতে হাতটাও বাল করে না ধুয়ে পুজোর আয়োজনে লেগে পড়ল। আরে, পুজো কি তোদের ছেলেখেলা?”

এই ধরনের একটা মানসিকতা হয় তো মহিলাটিরো ছিল। হয়তো পরম ভক্ত মহিলাটির পুজর আয়োজনের অনেক কিছুই মনে ধরেনি। বরং বিরক্তিতে মন ভরেছে। তারই ফলে এক সময় মেয়েটি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন তার উপর দিয়েই বর্ষিত হচ্ছে ঈশ্বর নির্দেশ- বাস্তবে যা ছিল একান্তভাবে তাঁরই নির্দেশ।

error: Content is protected !!