আরজ মঞ্জিল পাবলিক লাইব্রেরীর বার্ষিক অধিবেশনে প্রদত্ত বক্তৃতা
মাননীয় সভাপতি সাহেব, সদস্যবৃন্দ এবং সুধী অতিথিবৃন্দ। আজ আমার ৮৩তম জন্মদিবস এবং আমার উৎসর্গীকৃত লাইব্রেরীটির ৩য় বার্ষিক অনুষ্ঠান। লাইব্রেরীর পরিচালক কমিটির স্থায়ী সভাপতি বাকেরগঞ্জ জেলা প্রশাসক মাননীয় এম.এ. বারী সাহেবের অনুস্থিতিতে আমি আজ পূর্ণানন্দ পাচ্ছি না, হয়তো আপনারাও পাচ্ছেন না। আজকের এ নিরানন্দের জন্য দায়ী একমাত্র আমিই। কেননা প্রায় দেড় মাসকাল নানাবিধ রোগাক্রান্ত হয়ে আমি শয্যাশায়ী থাকায় যথা সময়ে তাঁকে নোটিশ করতে না পারার কারণ। সে যা হোক, কমিটির বিধি মতে কোন কমিটির সভাপতির অনুপস্থিতিতে আর সহ-সভাপতিই তাঁর আসন পাবার অধিকারী বটে। তাই আজকের অধিবেশনে আমাদের কমিটির সহ-সভাপতি শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক কাজী গোলাম কাদির সাহেব এ অধিবেশনের সভাপতির আসনের অধিকারী এবং তিনি সুযোগ্য ও আমাদের মনোপূতও বটে। এখন আমরা তাঁর সভাপতিত্বে সভার কাজ শুরু করছি।
বার্ষিক বিবরণী
মাননীয় সভাপতি সাহেব এবং উপস্থিত সদস্যবৃন্দ। সরকারি বিধি মোতাবেক যে কোন প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বছর শেষ হয় ৩০শে জুন, অন্যথায় ৩১শে ডিসেম্বর তারিখে। কিন্তু আমাদের এ প্রতিষ্ঠানটিতে আর কোন তারিখই রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। কেননা এ প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক অধিবেশন নির্ধারণ করা হয়েছে ৩রা পৌষ, আমার জন্মদিনটিতে। ইংরেজি হিসাব মতে তা হয় প্রতি তিন বছরে দু’বছর। ১৯শে ডিসেম্বর এবং এক বছর ১৮ই। সুতরাং এ তারিখটি হচ্ছে জুন মাস থেকে প্রায় ছয় মাস পরে এবং ৩১শে ডিসেম্বরের ১২-১৩ দিন পূর্বে। কাজেই নির্ধারিত তারিখে অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে হলে অনুষ্ঠানের দিন বা তার আগের দিন আর্থিক বছর শেষ না করে গত্যন্তর নেই। তাই এ প্রতিষ্ঠানটির ক্ষেত্রে এর বার্ষিক অধিবেশনের পূর্বের দিন আর্থিক বছরের সমাপ্তির ঘোষণার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। এবং আপনাদের অনুমোদন না নিয়ে অদ্য তাই করা হচ্ছে বলে এ বার্ষিক বিবরণটি অনুমোদনের জন্য আপনাদের কাছে অনুরোধ করছি।
এখন আমি ১৯৮২ সালের ২০শে ডিসেম্বর থেকে বর্তমান ১৯৮৩ সালের ১৯শে ডিসেম্বর পর্যন্ত লাইব্রেরীর বার্ষিক আয়-ব্যয় ও অন্যান্য সম্বন্ধে আলোচনা করছি।
আয়-ব্যয়
প্রথমত আয়
ক্রমিক | আয়ের উৎস | টাকা |
---|---|---|
১. | আগত তহবিল | ১,৭৭৭.১০ টাকা |
২. | মজুত আয় | ৫,৭০০.০০ টাকা |
৩. | দানপ্রাপ্তি (নগদ) | ২৫.০০ টাকা |
৪. | ধার গ্রহণ | ১৯৩.০০ টাকা |
৫. | চাঁদা আদায় | ১৬.০০ টাকা |
মোট = | ৭,৭১১.১০ টাকা |
আয়-ব্যয়
প্রথমত আয়
ক্রমিক | ব্যয়ের উৎস | টাকা |
---|---|---|
১. | অনুষ্ঠান ও অতিথিসেবা | ৬২৯.৭৫ টাকা |
২. | সেরেস্তা খরচ | ২৬.০০ টাকা |
৩. | ভিক্ষাদান (১৯৮২) | ১০৭.০০ টাকা |
৪. | বৃত্তিদান (১৯৮২) | ৫৫০.০০ টাকা |
৫. | যাতায়াত (বরিশাল ও ঢাকায়) | ৪২৯.৪৫ টাকা |
৬. | পুকুর খনন | ১,১৩৭.০০ টাকা |
৭. | বই খরিদ | ৭৬.৫০ টাকা |
৮. | ধার শোধ | ১৯৩.০০ টাকা |
৯. | বই ছাপা (‘অনুমান’) | ৩,০৩৩.৫৫ টাকা |
১০. | পরিচালক ও পরিচারক ভাতা | ৪৫০.০০ টাকা |
১১. | বিবিধ | ৩০২.১০ টাকা |
মোট = | ৬,৯৩৪.৩৫ টাকা | |
মজুত তহবিল = | ৭৭৬.৭৫ টাকা |
স্বাক্ষর, কোষাধ্যক্ষ
আলোচ্য ব্যয়ের মধ্যে ‘বই ছাপা’ দফাটির ব্যয় প্রকৃত ব্যয় নয়, কেননা সদ্য প্রকাশিত আমার ‘অনুমান’ নামের বইখানায় সর্বস্বত্ব আমি আপনাদের এ লাইব্রেরীটির অনুকূলে দান করেছি এবং তজ্জন্যই লাইব্রেরীর অর্থে প্রকাশিত হয়েছে। সুতরাং বই ছাপা খাতের ৩,০৩৩.৫৫ টাকা লাইব্রেরীর মজুত তহবিল বটে এবং প্রকাশনার লভ্যাংশ হবে লাইব্রেরীরই প্রাপ্য।
পুস্তকাদির বিবরণ
বর্তমানে লাইব্রেরীর পুস্তক-পুস্তিকার সংখ্যা হচ্ছে –
ক্রমিক | পুস্তকের ধরণ | সংখ্যা |
---|---|---|
১. | বিজ্ঞান | ৮৫ |
২. | দর্শন | ২১ |
৩. | ধর্ম | ৪২ |
৪. | গণিত | ১৩ |
৫. | ভূগোল | ১২ |
৬. | ইতিহাস | ৪৩+১ |
৭. | গল্প | ৩৪ |
৮. | উপন্যাস | ১৩০ |
৯. | নাটক | ১১ |
১০. | জীবনী | ৩২ |
১১. | ভ্রমণ | ১৩ |
১২. | প্রবন্ধ | ২০ |
১৩. | অভিধান | ৫ |
১৪. | ব্যাকরণ | ৭ |
১৫. | সাহিত্য | ৪৭ |
১৬. | আইন | ১৪ |
১৭. | চিকিৎসা | ৮+১ |
১৮. | ইংরেজি | ৩৩ |
১৯. | রাজনীতি | ৬৩+১ |
২০. | কৃষি | ৪৮ |
২১. | বিবিধ | ৩২৯ |
উপরোক্ত পুস্তকসমূহের মোট মূল্য= ১০,৫৭৬.৪০+৮৫.০০=১০,৬৬১.৪০ টাকা |
পাঠক ও পাঠোন্নতি
ক্রমিক | পাঠকের ধরণ | সংখ্যা |
---|---|---|
১. | লাইব্রেরীটির সাধারণ পাঠকের সংখ্যা নগণ্য, তবে বর্তমান বছরে সদস্য পাঠকের সংখ্যা | ১৩ |
২. | সদস্য পাঠকের পঠিত বইয়ের মোট সংখ্যা | ২৮৬ |
৩. | প্রতি সদস্য পঠিত বইয়ের গড় সংখ্যা | ২২ |
দান প্রাপ্তি
ক. নগদ অর্থ
ক্রমিক | দাতা | টাকা |
---|---|---|
১. | মহকুমা প্রশাসক | ১৫০০.০০ টাকা |
২. | ইউনিয়ন পরিষদ | ৪০০.০০ টাকা |
৩. | মার্শাল ল অফিস | ৩,০০০.০০ টাকা |
৪. | মো. হোসেন চাপ্রাসী | ২৫.০০ টাকা |
মোট = | ৪,৯২৫.০০ টাকা |
দান প্রাপ্তি খ. পুস্তকাদি
দাতাগণের নাম | ঠিকানা | সংখ্যা | মূল্য |
---|---|---|---|
জনাব কাজী নুরূল ইসলাম | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় | ১ | ৮.০০ টাকা |
জনাব খায়রূল আলম | ঢাকা | ১ | ৮.০০ টাকা |
জনাব রামেন্দু মজুমদার | বিটপী, ঢাকা | ১ | ৬.০০ টাকা |
জনাব বদরুদ্দিন উমর | লেখক শিবির, ঢাকা | ৬ | ৩৩.০০ টাকা |
জনাব বশীর আল হেলাল | বাংলা একাডেমী | ৬০ | ১,০১৪.০০ টাকা |
জনাব জুয়েল | ঢাকা | ১ | ২.৬৫ টাকা |
বাংলা একাডেমী | ঢাকা | ২৫ | ৪০৫.০০ টাকা |
জনাব ফিরোজ সিকদার | লামচরি | ৩ | ২৩.৫০ টাকা |
জনাব আরজ আলী মাতুব্বর (সম্পাদক) | লামচরি | ৪ | ৩১.০০ টাকা |
মোট = | ১০২ | ১,৫৩১.১৫ টাকা |
লামচরির মতো গণ্ডগ্রামে অবস্থিত এ নগণ্য লাইব্রেরীটির উন্নয়নকল্পে যে সমস্ত মহৎ ব্যক্তি উপরোক্ত নগদ অর্থ ও পুস্তকাদি দান করেছেন, লাইব্রেরীর পরিচালক কমিটির পক্ষ থেকে আমি তাঁদেরকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
মাননীয় সভাসদবৃন্দ, কোনো প্রতিষ্ঠানের বেতনভোগীকে ‘কর্তব্য’ পালন করতে হয় এবং অবৈতনিককে পালন করতে হয় ‘দায়িত্ব’। আর প্রতিষ্ঠানের কর্তব্য বা দায়িত্ব কোনোটিই থাকে না, থাকে শুধু দরদ। আমি এ প্রতিষ্ঠানটির বেতন বা ভাতা ভোগী লাইব্রেরীয়ান ও অবৈতনিক সম্পাদক এবং প্রতিষ্ঠাতাও। তাই এ লাইব্রেরীটির কাজ করতে হচ্ছে আমাকে থাকলেও বিদ্যা নেই, মন আছে ধন নেই, ইচ্ছা আছে, উপায় নেই এবং সাধ আছে সাধ্য নেই, যেহেতু আমি এখন অতিবৃদ্ধ। একখানা ইংরেজি চিঠি পড়াতে যেতে হয় সিকদার বাড়ি ও মৃধা বাড়ি ইয়াসিন আলী সিকদার ও ফজলুর রহমান মৃধার কাছে। অর্থের জন্য যেতে হয় ধনীর দুয়ারে এবং নিজ শক্তিতে কোনো কাজ করতে পারি না, অন্যের সাহায্য ছাড়া।
আগেই বলেছি যে, আমার সাধ আছে সাধ্য নেই। অর্থ আমার নেই। নিজ উপার্জিত কানি তিনেক জমি ছিলো, তাই বিক্রি করে প্রতিষ্ঠা করেছি এ ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানটি। আমার আর কোনো সম্পত্তিই নেই, ছেলেদের দান করা সম্পত্তি ছাড়া। এ লাইব্রেরীটির উন্নয়নকল্পে এখনও বহু অর্থের প্রয়োজন, যা বহন করা আমার সামর্থের বাইরে।
আপনারা হয়তো জানেন যে, আমার এ প্রতিষ্ঠানটি দান করে দিয়েছি রেজিস্ট্রিকৃত ‘ট্রস্টনামা’ দলিল দ্বারা জনগণের কল্যাণের উদ্দেশ্যে। এ প্রতিষ্ঠানটি এখন আমার নয়, আপনাদের। আমার আছে শুধু দরদ। তাই আমার সেও দরদটুকু নিয়ে এ ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানটির উন্নয়নকল্পে বাংলাদেশ সরকারের ও দেশের মহান ব্যক্তিদের বিশেষত সভায় উপস্থিত সুধীবৃন্দের কৃপাদৃষ্টি প্রার্থনা করছি।
মাননীয় সভাপতি সাহেব, সদস্যবৃন্দ ও সুধী অতিথিবৃন্দ। আপনারা আপনাদের মূল্যবান সময় নষ্ট ও নানাবিধ কষ্ট স্বীকার করে এ লামচরির মতো জঙ্গল ও দুর্গন্ধময় স্থানে পদার্পণ করেছেন। আপনাদের সব রকম কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকারের জন্য সকৃতজ্ঞ ধন্যবাদ জানিয়ে আমার বার্ষিক বিবরণী শেষ করছি।
ধন্যবাদ, শুভ হোক।
৩.৯.১৩৯০
অপ্রকাশিত
৮.১ মুসলিম সাহিত্য সমাজের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে ভাষণ
৮.২ বাংলাদেশ সোসিও-ফিলসফিক হিউম্যানিস্ট গিল্ড সেমিনারে ভাষণ
৮.৩ আরজ মঞ্জিল লাইব্রেরীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণ
৮.৪ নজরুল জয়ন্তী অনুষ্ঠানে ভাষণ
৮.৫ গুণী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভাষণ
৮.৬ বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর অনুষ্ঠানে ভাষণ
৮.৭ আরজ মঞ্জিল লাইব্রেরীর বার্ষিক বিবরণী ভাষণ
৮.৮ মানবিক উন্নয়নে যুব সমাজের ভূমিকা সেমিনারে ভাষণ
৮.৯ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সভায় ভাষণ
৮.১০ আরজ মঞ্জিল লাইব্রেরীর বার্ষিক অধিবেশনে ভাষণ
৮.১১ বার্ষিক বৃত্তিপ্রদান উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণ
৮.১২ বাংলাদেশ কুটির শিল্প সংস্থায় ভাষণ
৮.১৩ আরজ মঞ্জিল লাইব্রেরীর বার্ষিক বিবরণী ভাষণ
৮.১৪ বাংলাদেশ দর্শন সমিতিতে ভাষণ
৮.১৫ বার্ষিক বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে ভাষণ
৮.১৬ আরজ মঞ্জিল লাইব্রেরীতে ভাষণ
৮.১৭ বাংলা একাডেমীর সংবর্ধনা ভাষণ