দশ টাকায় শেখ মুজিবের ছবি
এক শুক্রবার সকালে অর্থমন্ত্রী কিবরিয়ার পি এস ডঃ পারভেজ, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে এসে দশ টাকায় শেখ মুজিবের ছবির লেআউট ডিজাইনের খসড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেখান। নতুন এই দশ টাকার লেআউট ডিজাইনের খসড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মৌখিকভাবে অনুমোদন করে দিলে তবেই তা ছেপে নতুন দশ টাকার নোট হিসেবে বাজারে ছাড়া হবে। এই দশ টাকার খসড়া লেআউট ডিজাইনের উপরে ছিল আল্লাহর ঘর মসজিদের ছবি এবং পিছনে ছিল শেখ হাসিনার পিতা শেখ মুজিবের ছবি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লেআউট ডিজাইনে খসড়াটি দেখে অর্থ মন্ত্রীর পিএস ডঃ পারভেজকে ক্ষিপ্ত হয়ে বলে উঠলেন, একি ! জাতির পিতার ছবি পিছনে কেন?
অর্থমন্ত্রীর পি এস ডঃ পারভেজ কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বললেন, বাজারে চালু বর্তমান দশ টাকার নোটের উপরে মসজিদের ছবি আছে। ধর্মীয় অনুভূতির কথা বিবেচনা করে উপরের মসজিদ এর ছবিটা ঠিক রেখে, পিছনে জাতির পিতার ছবি দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাগান্বিত কণ্ঠে বললেন, ওসব মসজিদ-টসজিদ বুঝি না, জাতির পিতার ছবি উপরে দিয়ে নতুন দশ টাকার নোট ছেপে বাজারে ছাড়বেন। আমার বাবা যে জাতির পিতা এটা শয়তানের জাতকে গিলাতে হবে।
এরপর অন্য আর একদিন ডঃ পারভেজ শেখ মুজিবের ছবি উপরে এবং মসজিদের ছবি পিছনে দিয়ে করা লেআউট ডিজাইন নিয়ে এলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা দেখেন ও খুশি হন এবং মৌখিক অনুমোদন করে দেন। বর্তমানে বাজারে শেখ মুজিবের ছবি সম্বলিত যে নতুন দশ টাকার নোট রয়েছে এটা সেটা।
‘৯২-‘৯৬ পুলিশের গুলিতে কেউ মারা যায়নি
শুধু লাশ চাই। মানুষের লাশ। ১৯৯০ সামরিক স্বৈরাচার নিপাত করে গণতন্ত্র মুক্ত করতে দেশের বহু লোককে জীবন দিতে হয়েছে। শহীদ নূর হোসেনের রক্তে ভেজা স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ আন্দোলনে সামরিক স্বৈরাচার জেনারেল হোসেইন মোহাম্মদ এরশাদের পুলিশ, বিডিআর ও সেনাবাহিনীর গুলিতে রাজধানী ঢাকাসহ এদেশের অনেক তাজা প্রাণ নিহত হয়েছে। কিন্তু ১৯৯০ সালে এরশাদ পতনের পর বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে পরিচালিত ১৯৯১ সালের নির্বাচনে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত বেগম খালেদা জিয়া সরকারের পতন আন্দোলনে রাজধানী ঢাকা শহরে পুলিশ, বিডিআর আর সেনবাহিনীর গুলিতে একজন লোকও নিহত হয় নি। যদিও ১৯৯১ সালের পর থেকেই খালেদা জিয়া সরকারের পতনের লক্ষ্যে নানান ইস্যুতে শুরু হওয়া শেখ হাসিনার আন্দোলনে ঢাকা শহরে মোট ১০৩ (একশত তিন) জন লোক নিহত হয়েছে। তথাপিও এই নিহত হওয়া ১০৩ জন লোকের মধ্যে ১ জন লোকও পুলিশের বা আইন প্রয়োগকারীর সংস্থার গুলিতে নিহত হয়নি।
১৯৯১ সালের নির্বাচনে জনগণের ভোটে বিজয়ী হয়ে বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসার পর থেকে, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা খালেদা জিয়াকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। কখনো ভ্যাট প্রত্যাহারের আন্দোলন, কখনো সচিবালয় ঘেরাও, কখনো সংসদ ভবন ঘেরাও, কখনো নির্বাচন কমিশন ঘেরাও, কখনো বাজেট বাতিলের দাবী, কখনো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও ইত্যাদি নানা ইস্যুতে ১৯৯২ থেকে শুরু হওয়া এবং ১৯৯৬ সালের ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবসে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাস করা পর্যন্ত, শেখ হাসিনার সকল আন্দোলন, সংগ্রাম, ও হরতালের প্রায় প্রতিটি কর্মসূচীতে ২জন, ৩জন, ৪জন করে মানুষ গুলিতে নিহত হয়েছে। এই নিহত হওয়া মানুষেরা কেউই পুলিশ, বিডিআর বা সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত হয়নি। আবার এই নিহত হওয়া ১০৩ জনের সকলেই নামগোত্রহীন, পরিচয়হীন, অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা পরিচালিত খালেদা জিয়া সরকার পতন আন্দোলনে আওয়ামী লীগের পরিচয় বহনকারী একজন কর্মীও নিহত হয়নি। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা নিহত হওয়া ব্যক্তিদের তার দল আওয়ামী লীগের কর্মী বলে দাবী করলেও, নিহতদের নাম পরিচয় খুঁজে পাননি এবং বেগম খালেদা জিয়া সরকার বলেছেন নিহতরা নিরীহ পথচারী। আন্দোলনের সময় গুলিতে নিহত হতভাগা ব্যক্তিরা নিরীহ পথচারী না, রাজনৈতিক কর্মী সেটা মুখ্য বিষয় না।
মুখ্য বিষয় হলো, গুলিতে নিহত ব্যক্তিরা, পুলিশের গুলিতে নিহত হলো না, বিডিআর-এর গুলিতে নিহত হলো না, নিহত হলো না সেনাবাহিনীর গুলিতে। তবে কাদের গুলিতে ১৯৯২ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত কেবল ঢাকা শহরেই ১০৩ জন মানুষ নিহত হলো। হোক না নিহতরা অজ্ঞাত পরিচয়। তবু নিহত হতভাগারা তো এদেশের মানুষ ছিল। কারা তাদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করলো? হত্যাকারীরা কারা? কি তাদের পরিচয়? কারা হত্যাকারীদের মানুষ খুন করার জন্য মদদ দিল? কারা হত্যার আয়োজন করলো? কার স্বার্থে এতগুলো মানুষ খুন করা হলো? বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ভাষায় নিহতরা পুলিশের গুলিতে নিহত না হলেও, খালেদা জিয়ার বিএনপির সন্ত্রাসীরা নিহতদের গুলি করে খুন করেছে। প্রতিটি আন্দোলন, হরতাল, ঘেরাও কর্মসূচীতেই এভাবে নিরীহ পথচারী মানুষ শেখ হাসিনার ভাষায় বিএনপির সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হতে লাগলো।
যে কোন ধরনের কর্মসূচীর নির্দিষ্ট দিনের দু’তিন আগে ঢাকা শহরের সকল পেশাদারী খুনীদের কাছে মানুষ খুন করার জন্য অগ্রিম টাকা পৌঁছে দেওয়া হতো। পেশাদার খুনীদের বলা হতো, আমাদের আগামী কর্মসূচীর নির্দিষ্ট দিনে লাশ চাই। মানুষের লাশ। হোক সে যে কোন মানুষের লাশ। এই দেওয়া হলো অগ্রিম টাকা। বাকি টাকা লাশ দেওয়ার পর। কর্মসূচীর নির্দিষ্ট দিনে কর্মসূচীর সফলতার দিকে নজর দেওয়া হতো না। গভীর উত্তেজনার সাথে তাকিয়ে থাকা হতো মানুষের লাশ পড়ার সংবাদের দিকে। মানুষের লাশ পড়ার নিশ্চিত সংবাদ না আসা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার পানাহার সম্পূর্ণ বন্ধ থাকতো। যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ খুন হওয়ার চূড়ান্ত খবর না আসতো, জননেত্রী শেখ হাসিনা শুধুমাত্র চা আর সেই সাথে ফেনসিডিল ছাড়া অন্য কোন কিছু খেতেন তো নাই-ই, শুধু ছটফট ছটফট করতেন-আর এখনো লাশ পড়লো না, এখনো লাশ পড়লো না, এরপর আমি কি করবো? কি কর্মসূচি দেব?
এখনো লাশ পড়লো না বলে উন্মাদিনী পাগলীর ন্যায় প্রলাপ বকতে থাকতেন এবং ২৯ নম্বর রোডের দোতলা, নিচতলা পায়চারী করতে থাকতেন।
যেই মুহূর্তে মানুষ খুন হওয়া বা লাশের সংবাদ নিয়ে আসা হতো, বঙ্গবন্ধু কন্যা স্বস্তিতে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে বলতেন, আমার ক্ষুধা লেগেছে, খাবার লাগাও।
এক-দেড়ঘন্টা স্বস্তি ও সুখের নিদ্রা শেষে, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ঘুম থেকে উঠে, খাওয়া- দাওয়া করে তৈরী হয়ে হাতে রুমাল নিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালের মর্গে লাশ দেখতে চলে যেতেন। হাসপাতালের মর্গে লাশ দেখে রুমাল চেপে ধরতেন। ফটো সাংবাদিকরা ছবি তুলতো। “লাশ দেখে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা অশ্রু সংবরণ করতে পারলেন না”- এই ক্যাপশন দিয়ে সে ছবি পত্রিকায় ছাপা হতো।
সচিবালয় ঘেরাওয়ের এক কর্মসূচীর দিনে দুপুর গড়িয়ে ২টা বেজে গেল। কিন্তু লাশ পড়ার কোন সংবাদ এলো না । এদিক-সেদিক কত লোক পাঠালেন। কিন্তু লাশের কোন সংবাদ নেই। বঙ্গবন্ধু কন্যা তীব্র উত্তেজনায় প্রায় উন্মাদ হয়ে প্রলাপ বকতে লাগলেন। সকাল দশটায় সচিবালয় ঘেরাও করার কথা। এখন পর্যন্ত একটি লাশও পড়েনি। পুলিশ একটি টিয়ার গ্যাসও ছোড়েনি। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা বর্তমানে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ শুধু জাতীয় প্রেসক্লাবের উল্টো দিকে এন এস আই বিল্ডিংয়ের সামনে বিশাল কড়ই গাছের নিচে দাঁড়িয়ে বাদাম খাচ্ছেন ও পুলিশ অফিসারদের সাথে গল্প করছেন। এদিকে বিজয় নগরে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার চাইনিজ রেস্টুরেন্ট সুংগার্ডেন এর সামনে বসে কনসুপ খাচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেত্রী বর্তমান খাদ্যমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। ২৯ নাম্বার রোডের সরকারী বাসভবনে বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার কাছে সংবাদ এলো, লাশ ফেলার মতো ন্যূনতম কোন ক্ষেত্রও তৈরী হচ্ছে না। আর তাই লাশ ফেলা যাচ্ছে না।
অর্থাৎ খুনীদের মানুষ খুন করতে যে গোলযোগপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করতে হয়, তার নিম্নতম পরিবেশও সৃষ্টি হচ্ছে না। শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগের আজকের সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচী ব্যর্থ হয়েছে। কোন রকম গোলযোগ হচ্ছে না। সব কিছু শান্ত ও স্বাভাবিক রয়েছে। ফলে খুনীরা মানুষ খুন করার সুযোগ পাচ্ছে না। এই কথা শুনে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বললেন, যাও দ্রুত যাও, তোফায়েল ভাইয়ের কাছে যাও, মতিয়া চৌধুরীর কাছে যাও। যেয়ে আমার কথা বল। সামান্য একটা কিছু করতে বল। আজ যদি কিছু না হয়, তাহলে আগামী দিনে কর্মসূচী দেওয়ার কোন পুঁজি থাকবে না। যাও, তাড়াতাড়ি যেয়ে বল সামান্য গোলযোগ সৃষ্টি করতে।
ছুটে যাওয়া হলো, যেয়ে তোফায়েল আহমদকে বলা হলো, তোফায়েল ভাই নেত্রী সামান্য গোলযোগ সৃষ্টি করতে বলেছেন।
শুনেই ভয়ানক রেগে গিয়ে তোফায়েল আহমদ বল্লেন, যাও এখান থেকে, আমি ঐসবে বিশ্বাস করি না। আমি নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। আমি ঐ সবে বিশ্বাস করি না। আর একবারও তুমি আমাকে ঐসব বলবে না। তুমি যাও এখান থেকে।
এই কথা বলে তোফায়েল তাকে আহমদ তাড়িয়ে দিল।
এরপর আসা হলো মতিয়া চৌধুরীর কাছে। মতিয়া চৌধুরী সব শুনে প্রথমে চড়া গলায় বললো, আমি এগুলো পারবো না।
সঙ্গে সঙ্গে চুপ করেন বলে মতিয়া চৌধুরীকে একটা ধমক দিতেই মতিয়া চৌধুরী ভেজা বিড়ালের মতো চুপ মেরে যেয়ে বললো, দেখ আমি মহিলা মানুষ, আমি কি করতে পারি। তুমি বস, তুমি বস, বলে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, স্যুপ খাও, স্যুপ খাও। এদিকে স্যুপ দেন বলে সুংগার্ডেন এর বয়কে ইশারা করলেন।
২৯ নং মিন্টু রোডে যেয়ে পরিস্থিতি বলা হলে, বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা নগদ এক লক্ষ টাকা দিয়ে বললেন, আমি লাশ চাই, যে করেই হোক লাশ চাই।
বেলা তখন ৩টা। কাপ্তান বাজারের উত্তর পাশে গুলিস্তান বাসস্ট্যান্ডের কাছে মানুষ খুনের জন্য খুনীরা অপেক্ষা করতে লাগলো। ঢাকার বাইরে থেকে একটা বাস এসে ভিড়লো। কত মায়ের সন্তান, কত বোনের স্বামী, কত সন্তানের পিতা বাস থেকে নামতে শুরু করলো। বাস থেকে নামা নাম না জানা নিরীহ ২০/৩০ জন যাত্রীর সামান্য ভিড়। খুনীদের দেশে তৈরী পাইপ- গান গর্জে উঠলো। পাইপ গানের এক ঝাঁক গুলি নাম না জানা নিরীহ যাত্রীদের বিদ্ধ করলো। ১৪/১৫ জন যাত্রী পিচঢালা রাজপথে লুটিয়ে পড়লো।
২৯ মিন্টু রোডে শকুনের মতো অপেক্ষায় থাকা বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে এই সংবাদ দেওয়ার সাথে সাথে তিনি পুলকিত হয়ে বললেন, মরছে তো? মরছে তো? যেভাবে গুলি করা হয়েছে তাতে না মরে বাঁচার কথা না। যাও যাও মেডিক্যাল হাসপাতালে যাও, দেখ কয়টা লাশ পড়েছে। দেখে আমাকে খবর দাও। এই ক্ষুধা লেগেছে, খাবার দাও। হাসপাতাল থেকে ফিরে তিনটা লাশ পড়ার কথা বললে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা তৈরী হয়ে হাতে রুমাল নিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালের মর্গে গিয়ে গুলিতে নিহতদের লাশ দেখে চোখে রুমাল দিলেন। ফটো সাংবাদিক ছবি তুললেন। পত্রিকায় সেই ছবি ছাপা হলো।
কুত্তার জাত
মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মহিলা সম্পাদিকা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বর্তমান এলজিআরডি মন্ত্রী জিল্লুর রহমান-এর স্ত্রী, আইভি রহমান ১৯৯২ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে জনৈক মহিলার নাম উল্লেখ করে বললেন, নেত্রী ওর নামে অনেক স্ক্যান্ডেল আছে।
জননেত্রী শেখ হাসিনা সঙ্গে সঙ্গে বললেন, কি, বেশ্যা এই তো? কুত্তার (কুকুরের) জাতকে তো বেশ্যা দিয়েই নেতৃত্ব দেয়াবো।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার মুখে এই কথা শোনার পর আই ভি রহমান ‘থ’ হয়ে যান। আর একটি কথাও না বাড়িয়ে বিদায় নেন।
জিল্লুর রহমান জেনারেল সেক্রেটারী
ধানমন্ডি বত্রিশে বঙ্গবন্ধু ভবনের লাইব্রেরী কক্ষে বসে শেখ হাসিনা, শেখ হাফিজুর রহমান টোকন, শেখ মারুফ এবং আরো কয়েকজন গল্প করছে। আওয়ামী লীগের আসন্ন কাউন্সিলে কাকে জেনারেল সেক্রেটারী করা যায় কথা উঠলে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, সাজেদা চৌধুরী মেয়ে মানুষ, তাকে জেনারেল সেক্রেটারী রাখা চলে না। তোমরা এমন একজন পুরুষের নাম বল, যে শুধু নামেই পুরুষ। কিন্তু কাজে-কর্মে মেয়ে মানুষের চেয়েও লেবেনডিস। পুরুষ চরিত্রের কোন পুরুষকে জেনারেল সেক্রেটারী বানানো যাবে না। পুরুষ চরিত্রের কোন পুরুষকে দলের সেক্রেটারী করলে, সে আব্দুল রাজ্জাকের মতো দল ভেঙ্গে ফেলবে। একজন পুরুষকেই দলের সাধারণ সম্পাদক করতে হবে, যে নামে পুরুষ কাজে পুরুষ নয়। এমন একজন মেরুদণ্ডহীন পুরুষকেই দলের সাধারণ সম্পাদক করতে হবে। তোমরা খুঁজে এমন একজনকে বের কর।
শেখ হাফিজুর রহমান টোকন বললো, ফুফু জিল্লুর রহমানকে বানালে কেমন হয়?
সঙ্গে সঙ্গে শেখ হাসিনা বললেন, ইয়েস, তুমি তো ঠিক বলেছ, ওই তো সবচাইতে ফিটেস্ট। শেখ মারুফ বললো, না, বুবু (আপা) জিল্লুর রহমানকে বানানো যাবে না। জিল্লুর রহমান আর তার বউ আই ভি রহমান ১৫ই আগস্টের পর খুনী ফারুক ডালিমদের দাওয়াতে করে বিরানী রান্না করে খাইয়েছিল। সুতরাং জিল্লুর রহমানকে তুমি জেনারেল সেক্রেটারী বানাতে পার না। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বললেন, হ্যাঁ, একেই আমার দরকার। এই-ই সব দিক থেকে উপযুক্ত। জিল্লুর রহমানকেই দলের জেনারেল সেক্রেটারী করলে ভেড়া বানিয়ে রাখা যাবে। এই ভেড়া গলায় রশি না থাকলেও উঠানের বাইরে যাবে না। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ঠিকই কাউন্সিল করে জিল্লুর রহমানকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক করলেন।
টাকা আর লাশ
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা তার রাজনৈতিক জীবনে দু’টি জিনিষ ছাড়া অন্য কোন কিছুই চিনেন নি। জিনিষ দু’টির একটি হলো অর্থ, মানে টাকা-পয়সা আর অন্যটি হলো লাশ, মানে মানুষের লাশ। এই দু’টি জিনিষ ছাড়া আর দলের নেতা, কর্মী, শুভানুধ্যায়ী এবং অন্যান্য যারা তার (বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার) কাছে এসেছেন তাদের কাছে কোনদিনই তিনি অন্য কোন কিছুই চান নি। এমন কি ২৮শে সেপ্টেম্বর তার জন্মদিনে যারা টাকা ছাড়া অন্য কোন কিছু উপহার নিয়ে আসতেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ভর্ৎসনার সাথে তাঁদের বলতেন, এগুলো আমি নেই না। আমি ক্যাশ চাই, ক্যাশ। নগদ টাকা ছাড়া অন্য উপহার আমি গ্রহণ করি না।
‘৯৬ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর গণভবনে বসেও তিনি একই কথা বলেছেন। অর্থের দাবী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার প্রধান দাবী। আপনি যেই হোন না কেন! যেখান থেকেই টাকা নিয়ে আসেন না কেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার কথা হচ্ছে তাকে টাকা দিতে হবে। যদি টাকা না দেন তাহলে তার (শেখ হাসিনার) কাছে মানুষ হিসেবেই গণ্য হবেন না। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ডান হাতে টাকা দেবেন, ডান হাতের টাকা বাঁ হাতে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি (শেখ হাসিনা আপনার কথা বেমালুম ভুলে যেয়ে টাকার জন্য নতুন মক্কেলের দিকে হাত বাড়িয়ে দেবেন। এমনভাবে তিনি টাকা নেবেন, যেন তার পিতার উত্তরাধিকার হিসেবে পিতার টাকাই আপনার কাছ থেকে নিচ্ছেন। টাকা চাই-ই চাই। টাকা দিতেই হবে। চুরি করে টাকা এনেছেন, তাও দিতে হবে। কালো বাজারী বা পাচার করে টাকা এনেছেন, তাও দিতে হবে। মানুষ খুন করে টাকা এনেছেন তাও দিতে হবে। ঘুষ খেয়ে টাকা এনেছেন তাও দিতে হবে।
ঘুষ খেতে ও ঘুষ দিতে শেখ হাসিনার জুড়ি মেলা ভার। টাকা না দিলে আপনাকে মুহূর্তের মধ্যে অপমান করে বের করে দিতে পারেন, আবার টাকা দিলেই আপনাকে সমাদর করে মর্যাদা দিয়ে চেয়ারে বসাতে পারেন।
একদিন ধানমণ্ডি বত্রিশে বঙ্গবন্ধু ভবনের লাইব্রেরী কক্ষে বসে আছেন শেখ হাসিনা এবং তার চাচাতো ভাই শেখ হেলাল। এমন সময়ে বজলুর রহমান (শেখ মুজিবের পি এ বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লিয়াজোঁ অফিসার) জনৈক ব্যক্তিকে সঙ্গে করে নিয়ে এসে বললো, নেত্রী ইনি একটা অনুষ্ঠান করতে চান …। বজলুর রহমানের কথা শেষ না হতেই শেখ হাসিনা রেগে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে উচ্চকণ্ঠে আগন্তুক লোকটিকে বললেন, এখানে কি ইতরামি করতে এসেছেন? বাঁদরামির আর জায়গা পান না? আপনাকে না বলে দিয়েছি, আমি যাব না। আবার এসেছেন বুঝি ফাতরামি করতে? আপনি কোথাকার কোন আলতু-ফালতু লোক তার ঠিক নাই ! আর আমি আলতু-ফালতু লোকের আলতু-ফালতু অনুষ্ঠানে যাব এটা ভাবলেন কি করে? আমি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা, আমার কি কোন দাম নেই? যান বেড়িয়ে যান। এই লোককে বের করে দাও। এই লোক যেন আর ঢুকতে না পারে। ভদ্রলোক প্রথমে হকচকিয়ে গেলেও নিজেকে কোনমতে সামলে নিয়ে ধীর পায়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন। ভদ্রলোক দরজা পর্যন্ত যেতেই শেখ হেলালকে শেখ হাসিনা বললেন, ইহ্ চান্দা দেয় না, আবার চিটাগাং-এর লোক। এই কথা শুনে ভদ্রলোক ঘুরে দাঁড়িয়ে এনেছি বলে তার প্যান্টের দু’পকেট থেকে দু’টি একশ’ টাকার বান্ডিল বের করে এক লাফে শেখ হাসিনার টেবিলের সামনে এসে পড়লেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা চিলের মতো ছোঁ মেরে একশ’ টাকার কন্ডিল দু’টি নিজের হাতে নিয়ে ভদ্রলোককে বলতে লাগলেন-বসেন, বসেন। এই, উনাকে চা-নাস্তা খাওয়াও। শেখ হেলাল আবার টাকার বান্ডিল দু’টি নেওয়ার জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনার সাথে ভদ্রলোকের সামনেই কাড়াকাড়ি শুরু করলো। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এর মধ্যেই ভদ্রলোককে বলতে লাগলেন, ঠিক আছে, ঠিক আছে, আমি যাব। অনুষ্ঠানটা একটু ভালো করে করেন। আপনি আসবেন। ঘনঘন আসবেন।
১৯৯২ সাল থেকে যমুনা সেতুর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কোরিয়ান হুন্দাই কোম্পানী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে নিয়মিত চাঁদা দিয়ে আসতো। আর সেই জন্যই যমুনা সেতু উদ্বোধনের কয়েক দিন আগে উত্তর বঙ্গের জন্য নির্মিত গ্যাস লাইন সম্পূর্ণ ভেঙ্গে যমুনা নদীতে পড়ে গেল। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গ্যাস লাইন নির্মাণে হুন্দাই কোম্পানীর ত্রুটি, অনিয়ম, নিম্নমানের অভিযোগ আনলেও শেখ হাসিনার সরকার বেমালুম নিরব থাকে।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের কোন নেতা-কর্মীকে কখনই নীতির কথা শোনাননি। আদর্শের কথা শোনাননি। ত্যাগের কথা শোনানানি। যে-ই তাঁর কাছে গিয়েছে তাকেই তিনি কারণে-অকারণে শুধু বলতেন, আমি নির্দেশ দিলাম মেরে লাশ ফেলে দাও। আমি লাশ চাই।
আওয়ামী লীগের বর্তমান মন্ত্রীরা অনেকেই বলতেন বঙ্গবন্ধু কন্যা সভানেত্রী শেখ হাসিনা তো টাকা আর লাশ ছাড়া কিছুই বোঝে না। আর কত টাকা, আর কত লাশ দেব? অবক্ষয়। অবক্ষয়।
শিল্পপতি জহির হত্যার প্রধান খুনী আসামী ইউসিবিএল ব্যাংকের পরিচালক চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, আর কত টাকা দেব, দিতে দিতে তো নিঃশেষ হয়ে গেলাম।
স্বামীর সাথে না থাকা
বঙ্গবন্ধু কন্যা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালের ১৭ই মে বাংলাদেশে আসার পর থেকে তার স্বামী ডঃ ওয়াজেদ মিয়ার সাথে কখনই একটি দিন বা একটি রাত স্বামী-স্ত্রী হিসেবে কাটাননি। আগেই বলেছি, শেখ হাসিনা বাংলাদেশে আসার পর প্রথমে তার স্বামীর মহাখালি সরকারী কোয়ার্টারে ওঠেন, পরে ধানমন্ডি বত্রিশে তার পিত্রালয় বঙ্গবন্ধু ভবন, তারপর ২৯ নম্বর মিন্টু রোড এবং তারও পরে ধানমন্ডি ৫ নম্বারে স্বামী ও নিজের বাড়িতে এবং এখন প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবন গণভবনে থাকেন। কিন্তু তার স্বামী ডঃ ওয়াজেদ প্রথম থেকে এখন পর্যন্ত তার (ডঃ ওয়াজেদের) মহাখালির আণবিক শক্তি কমিশনের কোয়ার্টারেই রয়েছেন। তিনি কখনোই ধানমন্ডি বত্রিশে, ২৯ মিন্টু রোডে, ধানমণ্ডি ৫ এবং গণভবনে আসেননি এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাও তাকে আনেননি। শুধু তাই-ই নয়, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যখন তার স্বামীর মহাখালি কোয়ার্টারে থাকতেন তখন ডঃ ওয়াজেদ থাকতেন ঐ কোয়ার্টারের ভিতরের রেস্ট হাউজে। উভয়ের সাথে রাতে-দিনে দেখা সাক্ষাৎ তো দূরের, মুখোমুখিও হতেন না।
মহাখালি স্বামীর কোয়ার্টারে থাকতে এবং পরবর্তীতে ধানমন্ডি বত্রিশের পিত্রালয় বঙ্গবন্ধু ভবনে থাকতে, ১৯৮৭ সালে মুন্সিগঞ্জ হরগঙ্গা কলেজ ছাত্র সংসদের ভি পি মৃনাল কান্তি দাস নামের তরুণ যুবক আসার আগ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা নিয়মিত, রুটিন মাফিকভাবে প্রতিদিন সন্ধ্যার ঠিক এক ঘন্টা আগে গোসল করে পাউডার, পারফিউম মেখে লম্বা চুলের একটা বেণী করে, চকচকে নতুন শাড়ী-ব্লাউজ পরে খুবই পরিপাটি হয়ে কাউকে সঙ্গে না নিয়ে শুধুমাত্র গাড়ির চালক ড্রাইভার জালালকে সঙ্গে নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে বেরিয়ে যেতেন এবং ঘন্টা দু’য়েক পরে ফিরে আসতেন। শুধু এই সময়ে ঐ অজ্ঞাত স্থানে যাওয়া ছাড়া বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আর কখনই একা শুধু জীপ গাড়ী আর চালক নিয়ে বাইরে যেতেন না। ঐ সময় এবং ঐ অজ্ঞাত স্থান ছাড়া যেখানেই তিনি যেতেন তার সাথের সকলকে অবশ্যই সঙ্গে নিয়ে যেতেন।
১৯৮৭ সালে মুন্সিগঞ্জ হরগঙ্গা কলেজ ছাত্র সংসদের ভি পি তরুণ যুবক মৃনাল কান্তি দাসের সাথে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার পরিচয় হয় এবং পরিচয়ের পর থেকেই মৃনাল কান্তি দাস ধানমন্ডি বঙ্গবন্ধু ভবনে দিবা-রাত্রি সার্বক্ষণিকভাবে থাকতে শুরু করলো। শেখ হাসিনা তখন ঐ বাড়িতেই থাকেন। শেখ হাসিনা ধীরে ধীরে নিয়মিত রুটিন মাফিক সন্ধ্যার আগে অজ্ঞাত স্থানে যাওয়া ছেড়ে দিলেন। অধিক রাত পর্যন্ত, এমন কি গভীর রাত পর্যন্ত ধানমন্ডি বত্রিশের বঙ্গবন্ধু ভবনের লাইব্রেরী কক্ষে ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে মৃনাল কান্তি দাস আর শেখ হাসিনা কুটকুট করে কথা বলতেন এবং খিল খিল করে হাসাহাসি করতেন।
হ্যাংলা, পাতলা তরুণ মৃনাল কান্তি দাস অচিরেই ফুলে ফেঁপে এমন নাদুস নুদুস হলো যে, মৃনালের পাছার (নিতম্বের) আয়তন হলো প্রায় সত্তর ইঞ্চি। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কাছে মৃনালের গ্রহণযোগ্যতা এতোই বেড়ে গেল যে, তা সকলের কাছে ঈর্ষার ব্যাপার হয়ে দাঁড়ালো। মৃনাল কান্তি দাস হলো শেখ হাসিনার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার উপর মৃনাল কান্তি দাসের প্রভাব এতোই বেশি হলে যে, আওয়ামী রাজনীতির সকলেই মৃনাল কান্তি দাসকে শেখ হাসিনা রাজ্যের সম্রাট বলে, কুর্নিশ করতে কুণ্ঠিত হতো না। মৃনাল এতোই ক্ষমতাবান হলো যে, ১৯৯০ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির জেনারেল সেক্রেটারী বর্তমান পরিবেশ ও বনমন্ত্রী সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে অপমান-অপদস্ত করে বঙ্গবন্ধু ভবন থেকে বের করে দিলো। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদিকা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী আওয়ামী লীগের সভানেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কাছে এর বিচার ও প্রতিকার না পেয়ে, দলের ওয়ার্কিং কমিটির সভায় পর্যন্ত এই ঘটনা তুলেছিলেন। এরপরে মৃনাল কান্তি দাস সর্বেসর্বা হয়ে পড়লো। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার পোষ্য আত্মীয় বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর এ পি এস বাহাউদ্দিন নাসিম এবং বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীফ সিকিউরিটি নজিব আহাম্মেদেরা মৃনালের হুকুমে মৃনালকে সিগারেট এনে দিয়ে ধন্য হতো।
বঙ্গবন্ধু ভবনে একদিন মৃনালসহ চার পাঁচজন তাস খেলছে, বেলা তখন তিনটা সাড়ে তিনটা। এমন সময় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার একমাত্র আপন মামা আকরাম মামু এসে কুভঙ্গিতে কুইঙ্গিত করে মুনালকে বললেন, ‘এই মৃনাল যাও না, তোমার জন্য না খেয়ে বসে আছে।’ মৃনাল বললো, “আরে থাক, থাকতে দেন কিছুক্ষণ না খেয়ে।’
মৃনাল খেতে যাচ্ছে না, তাই শেখ হাসিনা না খেয়ে মৃনালের প্রতীক্ষা করছেন। আকরাম মামা সেই কথাই মৃনাল কান্তি দাসকে বললেন। কিন্তু আকরাম মামার এই কথা বলার বাচনভঙ্গি খুবই খারাপ এবং খুবই আপত্তিকর। আর মৃনাল কান্তি দাস যাদের সাথে বসে তাস খেলছিল, তাদের কাছে আরো ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য, আরো ডাট করে জবাব দিল, ‘আরে থাক, থাকতে দেন কিছুক্ষণ না খেয়ে’। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে না খেয়ে তার (মৃনালের) জন্য আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে দেন। মৃনাল কান্তি দাস হয়ে উঠলো বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা রাজ্যের একক অধিপতি। মৃনালের কথা-বার্তায়, চাল-চলনে, আচার-ব্যবহারে একক অধিপতির ছাপ পরিস্ফুটিত হতো লাগলো। একদিন মৃনাল কান্তি দাস বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার উপর রাগ করে চলে গেল। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা নিজে গিয়ে রাগ ভাঙ্গিয়ে মৃনাল কান্তি দাসকে সঙ্গে করে বঙ্গবন্ধু ভবনে নিয়ে এলেন। এর কিছুদিন পর মৃনাল আবারো রাগ করে বঙ্গবন্ধু ভবন ত্যাগ করে চলে গেলে শেখ হাসিনা অনন্যোপায় হয়ে মৃনালকে আবারো বঙ্গবন্ধু ভবনে ফিরিয়ে আনলেন।
১৯৯১ সালের নির্বাচনে হেরে গিয়ে ধানমন্ডি বত্রিশ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবন ত্যাগ করে বিরোধী দলীয় নেত্রী হিসেবে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা মৃনাল কান্তি দাস ও তার তিন পোষ্য-আত্মীয় নজিব, নাসিম ও নকিবকে সঙ্গে নিয়ে ২৯ নম্বর মিন্টু রোডের সরকারী বাসায় উঠলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা তার তিন পোষ্য আত্মীয় নজিব এবং নাসিম ও নকিবকে সঙ্গে নিয়ে মিন্টু রোডের বাসায় ওঠায় মৃনাল কান্তি দাস যার পরনাই অসন্তুষ্ট হলো। এই অসন্তুষ্টির এক পর্যায়ে মৃনাল কান্তি দাস বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার মিন্টু রোডের সরকারী বাসা ত্যাগ করে চলে গেল। মৃনাল চলে যাওয়ার পর শেখ হাসিনা তিন তিনবার নিজে স্বয়ং মৃনালকে ফিরিয়ে আনতে যান।
কিন্তু মৃনাল কান্তি দাস ফিরে না এসে, লোকের কাছে পরোক্ষভাবে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সাথে তার দৈহিক সম্পর্কের কথা প্রচার করতে থাকে। কথায় কথায় মৃনাল কান্তি দাস হাসতে হাসতে বলতে থাকে, শেখ হাসিনার শরীরে কোথায় কি আছে, কতটুকু আছে আমি মৃনালের জানতে বাকি নেই। মৃনালের এসব কথা লোকে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কানে পৌঁছাতে লাগলো।
বছর কয়েক পরে বাংলা নতুন শতাব্দী ১৪০১ সালের ১লা বৈশাখ প্রত্যুষে অন্য কেউ আসার আগেই মৃনাল কান্তি দাস ২৯ নম্বর মিন্টু রোডের দোতলার বারান্দায় এসে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সাথে দেখা করলে, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দূরে ঘাস খেতে থাকা একটি ছাগল দেখিয়ে মৃনালকে বলেন, দেখ, দেখ ঐটা হলো তুই।
এর বছরখানেক পরে মৃনাল কান্তি দাস পুনরায় নিয়মিত ভাবে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সাথে যোগ দিলেও পূর্বের অবস্থানে যেতে পারেনি। শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যাবেলা ধানমণ্ডি বঙ্গবন্ধু ভবনের ভেতরের গেটের সামনে-পিছন দিক থেকে মৃনাল কান্তি দাস-এর ভুঁড়ি জড়িয়ে ধরা ছাড়া আর তেমন কোন পাত্তা দেননি।
পাচার
এ দেশের হিন্দু সম্প্রদায় চাকুরীজীবীই হোক আর ব্যবসায়ী হোক, অবলীলাক্রমে এই দেশের সকল ধন-সম্পদ ভারতে পাচার করে। চাকুরীজীবী বৈধ-অবৈধ যেভাবেই অর্থ উপার্জন করুক অর্থাৎ অসৎ পথে ঘুষ দুর্নীতির মাধ্যমেই অর্থ উপার্জন করুক কিংবা চাকরীর বেতনের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করুক, যেভাবে উপার্জন করুক তাদের উপার্জিত সকল ধন-সম্পদই ভারতে পাচার করবে। হিন্দু ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। হিন্দু সম্প্রদায় কখনোই এই দেশকে তাদের দেশ মনে করে না। আর তাই এই দেশ থেকে বৈধ-অবৈধভাবে উপার্জিত সমুদয় অর্থ ভারতে পাচার করে।
অনুরূপভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার পরিবার-পরিজন সকলেই এই দেশকে নিজের দেশ মনে করে না। আর সেই কারণেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা বৈধ-অবৈধ যেভাবেই অর্থকড়ি-উপার্জন সকল ধন-সম্পদ বিদেশে পাচার করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারের লোকেরা প্রধানত ভারত, সিঙ্গাপুর, হংকং, লন্ডন এবং যুক্তরাষ্ট্রে ধন- সম্পদ পাচার করে।
ভ্যাট প্রত্যাহার
১৯৯২ সালে বেগম খালেদা জিয়ার বিএনপি সরকার বাংলাদেশে প্রথম ভ্যাট প্রথা চালু করে। খালেদা জিয়া ভ্যাট চালু করার সময় তখনকার বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ভ্যাট প্রথা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ে ভ্যাট প্রথা বাতিলের দাবিতে মিছিল সমাবেশ করে বেগম খালেদা জিয়া সরকারকে নির্দিষ্ট সময়সীমা দিয়ে বিরোধীদলীয় নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বললেন, এর মধ্যে ভ্যাট প্রথা বাতিল না করলে হরতাল করা হবে।
তখন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে বলা হলো আপনি যে ভ্যাট বাতিলের জন্য হরতাল আহ্বান করতে যাচ্ছেন, আপনি ক্ষমতায় গেলে কি করবেন? ভ্যাট প্রথা বাতিল করবেন?
পরেরটা পরে হবে, এই কথা বলে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ঠিকই ভ্যাট বাতিলের দাবিতে হরতাল করলেন। আর তিনি (শেখ হাসিনা) যখন ক্ষমতায় এলেন তখন ভ্যাট বাতিল তো দূরের কথা, উল্টো ভ্যাটের আওতা আরো বাড়িয়ে দিলেন। অর্থাৎ বেগম খালেদা জিয়া সরকার যে সকল পণ্যের উপর ভ্যাট বসিয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সেই সকল পণ্যের উপর ভ্যাট বহাল তো রাখলেনই বরং যে সমস্ত পণ্যের উপর ভ্যাট ছিল না সেই সমস্ত পণ্যের উপরও ভ্যাট ধার্য করলেন।
খেলা
জননেত্রী শেখ হাসিনা নিজেকে একজন বড় খেলোয়াড় মনে করেন। তিনি মনে করেন, তিনি দুনিয়ার সবচাইতে দক্ষ খেলোয়াড় এবং তার মতো খেলোয়াড়ের সারা বিশ্বে জুড়ি নেই । তিনি খেলতে ভালবাসেন। বলতে গেলে খেলাই তার একমাত্র কাজ। তিনি সকলের সাথেই খেলেন। জনতার সাথে খেলেন। রাজনৈতিক নেতাদের সাথে খেলেন। নিজেদের দলের কর্মীদের সাথে খেলেন। স্বামীর সাথে খেলেন। আত্মীয়স্বজনের সাথেও খেলেন, তবে কম খেলেন। নিজের বোনের সাথে খেলেন, তবে পেরে ওঠেন না, ধরা পরে হেরে যান। ছেলে-মেয়ের সাথে খেলতে গিয়ে প্রচণ্ড মার খেয়ে যান।
জননেত্রী শেখ হাসিনা মনে করেন তার মতো এতো বড় খেলোয়াড় আর নেই এবং তিনি যে খেলা খেলেন, এ খেলা ধরা বা বোঝার শক্তি কারো নেই। পৃথিবীর কেউই তার খেলা ধরতে পারবে না। বুঝতে পারবে না। এ খেলায় তিনি অনন্যা, অদ্বিতীয়।
বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা যে খেলা খেলেন, সে খেলার নাম হচ্ছে, প্রতারণার খেলা। তিনি সকলের সাথেই প্রতারণার খেলা খেলেন।
প্রিয়-অপ্রিয়, পছন্দ-অপছন্দ
প্রিয় খাদ্যঃ গরুর ভুঁড়ি।
প্রিয় গানঃ জিন্দেগি জেন্দেগি।
প্রিয় ব্যক্তিত্বঃ মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু।
সবাইতে বেশি লোভঃ টাকার প্রতি।
সব চাইতে অপছন্দেরঃ নামাজী মানুষ
সবচাইতে স্বস্তি এবং আনন্দেরঃ মানুষের লাশ
সব চেয়ে বেশি পটুঃ মিথ্যে বলায়।
প্রথম নির্দেশ
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার প্রথম নির্দেশ মেরে ফেল। মেরে লাশ ফেলে দাও। আওয়ামী লীগের কোন নেতা, কর্মী কিংবা সমর্থক কথা প্রসঙ্গেও যদি বলে প্রশাসনের অথবা অন্য রাজনৈতিক দলের অমুক আমাদের বিপক্ষের, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রথমেই যে নির্দেশ বা আদেশ দেন তাহলো মেরে ফেল। মেরে ফেলে দাও। আমি হুকুম দিলাম খুন করে ফেল।
যদি কোন কারণে উক্ত ব্যক্তিকে হত্যা করা না যায়, তাহলে বলবেন ঘুষ দাও। টাকা দাও ৷ টাকা দিয়ে ওকে আমাদের পক্ষে নিয়ে আসো।
১৯৯৫ সালে মাওয়া রোড দিয়ে টুঙ্গিপাড়ায় যাওয়ার সময় ফেরীতে ৩০/৪০ বৎসর আগে দেশ থেকে যুক্তরাজ্যে চলে যাওয়া, যুক্তরাজ্যের নাগরিক শেখ হাসিনা সরকার কর্তৃক নিয়োগকৃত শিল্প ঋণ সংস্থার পরিচালক প্রফেসর আবুল কাসেম তার নিজ থানা নবাবগঞ্জ সম্পর্কে বললেন, নবাবগঞ্জ (ঢাকা জিলার) আওয়ামী লীগের প্রার্থী দেওয়া না দেওয়া সমান কথা। নবাবগঞ্জের মানুষ আওয়ামী লীগকে পছন্দ করে না, ভোটও দেয় না।
এই কথা শুনে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বললেন, রাতের অন্ধকারে ঘরে ঘরে আগুন লাগিয়ে দেন। আগুন লাগিয়ে ওদের পুড়িয়ে মেরে ফেলেন।
কোন নেতা ছিল না
শেখ হাসিনার কখনোই কোন সিদ্ধান্তই কোন নেতা বা নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি অথবা উপদেষ্টা কিংবা জ্ঞানী-গুণী কোন ব্যক্তির সাথে আলাপ-আলোচনা করে নিতেন না। মূলত তিনি সিদ্ধান্ত নিতেন তার চারপাশে থাকা ছেলে- ছোকরা এবং আত্মীয়দের কথার উপর ভর করে। এমন কি বঙ্গবন্ধু কন্যা কোন পদযাত্রা, মিছিল ইত্যাদিতে যখন অংশ নেন তখন কোন নেতা বা নেতৃস্থানীয় কোন ব্যক্তি তাঁর সাথে কখনোই থাকতেন না। কোন নেতা বা ঐ জাতীয় কোন ব্যক্তি ভুলক্রমে যদি বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রীর পাশে এসে পড়তো তাহলে তাঁর সাথে থাকা ছেলে-ছোকরারা ঐ নেতা বা ব্যক্তিকে কিলঘুষি, চড় থাপ্পর এমনকি লাথি গুঁতা দিয়ে তাড়িয়ে দিতো। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এসব বুঝতেন না বা দেখতেন না তা নয়, তিনি এ সবই আড়চোখে দেখতেন, মজা নিতেন, আর খিল খিল করে হাসতেন। মূলত শেখ হাসিনার ইন্ধন ও আস্কারার ফলেই তার সাথে থাকা ছেলে-ছোকরারা নেতাদের সাথে ঐ রকম চরম বেয়াদবী আচার-আচরণ করতে সাহস পেতো।
চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই বলা
কোন কথাবার্তা ঘোষণা দেয়ার ব্যাপারেও কারো সাথে কখনোই কোন আলোচনা করা তো দূরের কথা নিজেও কোন চিন্তা ভাবনা না করেই জননেত্রী শেখ হাসিনা মুখে যাই আসে, তাই বলে ফেলেন বা তাই ঘোষণা দিয়ে দেন। আওয়ামী লীগের নেতা ও শুভানুধ্যায়ীরা সব সময় তটস্থ থাকেন, এই বুঝি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বেফাঁস কিছু বলে ফেলেন।
১৯৯৭ সালের ১০ই জানুয়ারী রমনা বটমূলে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে বক্তৃতা করার সময় জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার মন্ত্রী সভার মন্ত্রী তোফায়েল আহমদকে হাত তুলে দেখিয়ে হঠাৎ বলে উঠলেন, “ঐ যে, তোফায়েল ভাইয়েরা ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ ক্যাডার সার্ভিসে অযোগ্য লোকদের চাকরী দিয়েছিলো, তার এই কথায় দাঁড়ালো তিনি বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বলছেন বা ঘোষণা করছেন বর্তমানে তারই মন্ত্রী তোফায়েল আহমদ সাবেক প্রধানমন্ত্রী তারই পিতা শেখ মুজিবর রহমানের আমলে ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের প্রথম ক্যাডার (বিসিএস) সার্ভিসে অযোগ্য লোকদের চাকরী বা নিয়োগ দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী হিসেবে এই কথা প্রকাশ্যে বলার পর (তার পরদিন সমস্ত পত্র-পত্রিকায় এই সংবাদ ছাপা হয়েছে) বাংলাদেশ ক্যান্ডার সার্ভিস (বিসিএস’ ৭৩) ১৯৭৩-এর সকলের অযোগ্যতা অভিযোগে চাকরী যাওয়া উচিৎ এবং রাষ্ট্রের তৎকালীন প্রধান নির্বাহী বা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবর রহমানের অযোগ্য লোককে চাকরী দেওয়ার অভিযোগে বিচার হওয়া উচিৎ। নইলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরুদ্ধে মানহানির মামলা হওয়া উচিৎ।
রাজা-বাদশা রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী
আওয়ামী লীগের জুনিয়র সারির নেতারা একদিন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার পুত্র জয়কে বলছে, আপনি যখন প্রধানমন্ত্রী হবেন তখন আপনার সাথে আমরা আছি।”
জয় বলছে, “প্রধানমন্ত্রী ! রাষ্ট্রপতি ! মানুষের কাছে ভোট ভিক্ষা করে? আমি কোন দিন রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী হব না। যদি রাজা বানান তাহলে আছি, নইলে নাই। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সঙ্গে সঙ্গে বললেন, “বাবা আমরা তো রাজাই, তার মতে তো তুমিই রাজা হবা। তোমর নানা তো এদেশের রাজাই ছিলেন। তোমার নানাই তো এই দেশ সৃষ্টি করেছে, এই দেশের মালিক ছিল। চাকর-বাকররা তোমার নানাকে মেরে সিংহাসন দখল করেছে।
আলীবর্দী খাঁ যেমন বাংলার নবাব ছিলেন, তারপরে তাঁর নাতি সিরাজদ্দৌলা নবাব হয়েছিল। তোমার নানা শেখ মুজিবর রহমানও বাংলাদেশের রাজা ছিল, আগামীতে তুমিই বাংলাদেশের রাজা হবে। রাজা-বাদশাদের আধুনিক নামই রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী।
ওয়াদা
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা নির্বাচনের আগে মূলত এবং প্রধানত তিনটি ওয়াদা করেছিলেন। এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ওয়াদার প্রথমটি হচ্ছে রেডিও টেলিভিশন এর স্বায়ত্তশাসন। দ্বিতীয়টি হচ্ছে বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ (যে আইনে বিনা বিচারে যে কাউকে কারাগারে আটক রাখা যায়) বাতিল করবেন এবং তৃতীয় হচ্ছে বিচার বিভাগকে প্রশাসন থেকে আলাদা বা পৃথক করবেন।
এই তিনটি ওয়াদার প্রথমটি টেলিভিশন ও রেডিওর স্বায়ত্তশাসন মাশাআল্লাহ। এটা বলা- বা লেখার কোনই প্রয়োজন পড়ে না। এরশাদ-এর আমলে শেখ হাসিনা লক্ষ লক্ষ বার টেলিভিশনকে বলেছেন, সাহেব-বিবি- গোলামের বাক্স।
বেগম খালেদা জিয়ার আমলে বিরতিহীন ও লাগামহীনভাবে এমন কোন অনুষ্ঠান নেই যেখানে টেলিভিশনের কথা তিনি বিবি, গোলামের বাক্স বলেননি।
এখন সেই শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রী হয়ে তার ওয়াদা এমনভাবে পূরণ করেছেন যে মানুষ এখন বলে বাপ-বেটির বাক্স।
আর দ্বিতীয় ওয়াদা বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিনা বিচারে মানুষকে কারাগারে রাখার এই কালো আইনটি বাতিল করবেন কিভাবে? কোন যুক্তিতে? এ যে তার পিতা শেখ মুজিবের তৈরি করা কালো আইন। এই বিশেষ ক্ষমতা আইনেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পিতা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবর রহমান মুক্তিযোদ্ধাসহ এদেশের হাজার হাজার নির্দোষ-নিরপরাধ মানুষকে বিনা বিচারে কারাগারে আটকে রেখেছিল। পিতার সৃষ্টি করা মানুষকে নিগৃহীত করা ও অত্যাচার করা এই কালো আইন তিনি বাতিল করলে, পিতার যোগ্য কন্যা ও উত্তরসূরী তিনি কিভাবে দাবি করবেন?
তাই তিনি ক্ষমতায় যেয়েই বললেন, বিশেষ ক্ষমতা আইন ‘৭৪ সে তো বাতিল করার প্রশ্নই আসে না ! এই তো যোগ্য পিতার যোগ্য কন্যা ও উত্তরসূরী। বাপকা বেটি এই কালো আইনটি শুধু পুরোপুরি বহালই রাখলেন না, এর কার্যকারিতাও প্রয়োগ করতে লাগলেন। কালো আইনের এই প্রয়োগ করতে যেয়ে বিরোধী দলের নেতাকে বিনা কারণে, বিনা বিচারে কারাগারে আটকে রাখলে, মহামান্য আদালত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারকে শাস্তিস্বরূপ অর্থদণ্ড দেয়। এর পরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওয়াদার কথা তো মনে হয়ইনি, লজ্জা ও হয়নি। হাজার হলেও বাবার তৈরি করা এবং রেখে যাওয়া, তাই কালো আইনটি বহালই রেখেছেন এবং তৃতীয় ওয়াদা বিচার বিভাগকে প্রশাসন থেকে আলাদা বা পৃথক করা নিয়ে তিনি ভুলেও টু শব্দ করছেন না। বেমালুম চেপে যাচ্ছেন।
সপ্তাহে দু’দিন ছুটির কাহিনী
এক শুক্রবার বিকেলে নির্মাণে শেখ মুজিবের একমাত্র আপন ভাই শেখ নাসেরের বিধবা স্ত্রী শেখ হেলালের মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচী প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবন গণভবনে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বললেন, “মা তোমাকে তো পাই-ই না। তুমি এতো ব্যস্ত থাকো। এজন্য আমি আসিই না। খাটতে খাটতে তুমি একদম কাহিল হয়ে গেলে। এক কাম কর মা, সপ্তাহে দু’দিন ছুটি দিয়ে যাও। কর্মচারীরাও খুশি হবেনে। আমরাও তোমারে পাবানে। আপনি ঠিকই তো কইছেন চাচি। এই কথা বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পরের দিনই সপ্তাহে দু’দিন ছুটি ঘোষণা করলেন। চারদিকে এবং পত্র-পত্রিকায় সপ্তাহে দু’দিন ছুটি ঘোষণা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠলো। পত্র-পত্রিকায় আলোচনা-সমালোচনায় সবচাইতে বেশি গুরুত্ব সহকারে বিস্ময়ের সাথে যা বলা হলো, তা হলো, সরকারের নীতি নির্ধারকরা সপ্তাহে দু’দিন ছুটির ব্যাপারে কিছুই জানেন না। এমন কি মন্ত্রী সভার সদস্যরাও এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না এবং সপ্তাহে দু’দিন ছুটির দাবীও কেউ করেনি। তাহলে কার সাথে আলোচনা করে পরামর্শ করে সপ্তাহে দু’দিন ছুটি দেওয়া হলো? এই নিয়ে পত্র-পত্রিকায় অনেক দিন পর্যন্ত হৈ চৈ চললো। প্রশ্ন প্রশ্নই থেকে গেল। উত্তর মিললো, না। কেউ জানতে পারলো না। বুঝতে পারলো না। আবিষ্কার করতে পারলো না এ যে চাচী ভাতিজির কাণ্ড।
কাকে প্রথম সৎ হতে হবে
কাকে প্রথম সৎ হতে হবে? আমাদের দেশের যে করুণ অবস্থা, এই অবস্থায় কার প্রথম সৎ হওয়া প্রয়োজন বা কাকে প্রথম সৎ করা দরকার? সারা দেশের সমস্ত প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অসৎ ব্যক্তিদের যে অসততা, এই অসততার হাত থেকে মুক্তি পেতে হলে, দেশকে বাঁচাতে হলে, প্রশাসনের কোন ব্যক্তিকে প্রথম সৎ হতে হবে? এই রকম একটা চিন্তা, একটা ভাবনা এবং অনুসন্ধান দীর্ঘ দিন ধরে মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো।
কিন্তু এই চিন্তা, ভাবনা এবং অনুসন্ধানের খুব একটা ফল পাওয়া যাচ্ছিল না। আবার মাথা থেকে এটা ফেলে দেওয়াও যাচ্ছিল না। দেশের এই অহিনকূল অবস্থায় প্রশাসনের কাকে প্রথম সৎ হওয় উচিৎ, কে প্রথম সৎ হলে প্রশাসনের অসৎ ব্যক্তিরা নিয়ন্ত্রণে আসবে? এবং আস্তে, আস্তে, ধীরে, ধীরে প্রশাসন ও দেশ থেকে ঘুষ ও দুর্নীতি দূর হবে? মাথার এই ভাবনাটা দূর না হতেই, ১৯৯৮ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ বন বিভাগের কক্সবাজার রেস্ট হাউস-এ বন বিভাগের ডি, এফ ও (ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার) দের এক বৈঠক বসলো । প্রায় বিশ-পঁচিশ জন ডি, এফ ও বৈঠকে উপস্থিত হলেন।
বৈঠকের আলোচ্য বিষয় সরকার কর্তৃক নতুন সি সি এফ (চীফ কনজারভেটর অফ ফরেস্ট) বা প্রধান বন সংরক্ষক নিয়োগ দান প্রসঙ্গ। ডি এফও দের বৈঠকে আলোচনা হলো, নতুন সি সি এফ প্রার্থী পাঁচ জন। এই পাঁচ জনের মধ্যে বর্তমানে যিনি সি সি এফ আছেন তিনি চাকরীর মেয়াদ বাড়িয়ে সি সি এফ পদে আরো থাকতে চান এবং বাকি চারজন সি এফ (কনজার্ভেটর অফ ফরেস্ট) সি সি এফ হতে চান। এই পাঁচ জন সি সি এফ প্রার্থীই আলাদা আলাদা ভাবে ডি এফ ওদের কাছে ঘুষ বা চাঁদা হিসেবে মোটা অঙ্কের টাকা চাচ্ছেন। ডি এফ ওদের কাছ থেকে এই মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে সি সি এফ প্রার্থীরা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বা চ্যানেলে সি সি এফ হওয়ার জন্য বনমন্ত্রীকে ঘুষ দেবেন এবং যেহেতু সি সি এফ একটা গুরুত্বপূর্ণ পদ তাই এই পদে কাউকে নিয়োগ দেওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রীর একটা সম্মতি বনমন্ত্রীকে নিতেই হবে। আর তাই সি সি এফ প্রার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া ঘুষের টাকা থেকে একটা বড় অংশ প্রধানমন্ত্রীকে বনমন্ত্রীর দিতে হবে। নইলে সি সি এফ পদে নিয়োগ দেওয়া হবে না। বনমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীকে ঘুষ দেওয়ার এই প্রতিযোগিতায় যে প্রার্থী সর্বোচ্চ ঘুষের টাকা দেবেন তিনিই সি সি এফ হবেন। এ জন্যই সি সি এফ প্রার্থীরা ডি এফ ওদের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেছে। ডি এফও’দের আলোচ্য বিষয় হলো, আমরা সি সি এফ প্রার্থীকে টাকা দেব, তিনি সি সি এফ না হয়ে, যে প্রার্থীকে টাকা দেব না সেই প্রার্থীই যদি সি সি এফ হয়ে যায় তাহলে তো আমাদের বদলি করে হেড কোয়ার্টারে নিয়ে কর্মহীন করে রাখা হবে। ডি এফ ও হিসেবে ফিল্ডে থেকে দেদারচে যে টাকা তারা কামাচ্ছে তা বন্ধ হয়ে যাবে। তাই সর্বসম্মতিক্রমে ডিএফওগণ সিদ্ধান্ত নিল যে, সকল সি সি এফ প্রার্থীকে সমান টাকা দেওয়া হবে এবং দেওয়া হলোও তাই।
যিনি নতুন সি সি এফ হয়েছেন (আব্দুস সাত্তার), তিনি মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর টাকা একত্রে বনমন্ত্রীর কাছে না দিয়ে, আলাদাভাবে ভিন্ন ভিন্ন করে দিয়েছেন। নতুন সি সি এফ জনাব আব্দুস সাত্তার প্রধানমন্ত্রীর অংশ বনমন্ত্রীর হাতে না দিয়ে সোজা চলে গেলেন ঢাকার বেইলী রোডের টাঙ্গাইল মিষ্টিঘরের ঠিক সাথে লাগা পিছনে তৃতীয় তলা বিল্ডিং, ১২ নং নিউ বেইলী রোডে, যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্যাশিয়ার কাম ছোট বোন শেখ রেহানা অর্ধ বিকলাঙ্গ স্বামী শফিক সিদ্দিকী ঢাক-ঢোল পিটিয়ে তদবিরকারক চেম্বার খুলেছেন। সেখানে গিয়ে শফিক সিদ্দিকীকে না পেয়ে সি সি এফ প্রার্থী আব্দুস সাত্তার গেলেন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানারা মালিকানাধীন বিজয় নগরের সুংগার্ডেন চায়নিজ রেস্টুরেন্টে।
এই রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার ইসলামকে তদবিরের বিষয় খুলে বলার পর ম্যানেজার ইসলাম সি সি এফ প্রার্থী আব্দুস সাত্তারকে সঙ্গে নিয়ে চলে গেলেন বনানীর আবেদ টাওয়ারের নিচ তলায় অবস্থিত শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাদের মালিকানাধীন অপর রেস্টুরেন্ট ‘ফাউন্টেন ফরচুন রেস্টুরেন্ট এন্ড বার’-এ। সি সি এফ প্রার্থী আব্দুস সাত্তার এখানেই শফিক সিদ্দিকীর হাতে প্রধানমন্ত্রীর অংশটা দিলেন এবং তিনি (জনাব আব্দুস সাত্তার) নতুন সি সি এফ নিয়োগ পেলেন।
সুরে সুরে কথা বলা
রাজনীতিতে সুরে সুরে কথা বলতে হয়। পার্টি বা সংগঠনের মূল নেতা বা নেত্রী যিনি, তার সুরে সুরে কথা বলতে হয়। আপনি যে পর্যায়ের নেতা বা কর্মীই হন না কেন, পার্টি বা সংগঠনের অথবা রাষ্ট্রের মূল নেতা যিনি, যার হাতে মূল ক্ষমতা, তিনি যদি চৈত্রের ভর দুপুরেও বলেন, এখন রাত, আপনাকেও তাই বলতে হবে। যদিও তখন ভর দুপুর, তবু ভুলেও তা বলতে পারবেন না। যদি সুরে সুরে কথা না বলে, সত্য কথা বলেন, তাহলেই আপনি নেতার কাছে হবেন অগ্রহণযোগ্য ব্যক্তি। নেতা বা নেত্রী যা বলবেন তা যতই অসত্য বা ভুল হোক না কেন, তা আপনাকে তালে তালে সুরে সুরে ঠিক সব ঠিক বলে যেতে হবে। যদি তা না পারেন, তাহলে আর যা হোক অন্তত রাজনীতিতে সাইন করতে পারবেন না। যোগ্য হতে পারবেন না। আর রাজনীতিতে যিনি মূল নেতা-নেত্রী বা ক্ষমতার মূল মালিক, অর্থাৎ যিনি ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু, তার কাজ হয়, যে তার সাথে তাল মিলিয়ে সুরে সুরে কথা বলবে বা কাজ করবে, তাকেই সবচেয়ে যোগ্য ও আনুগত্যশীল মনে করা। এর বাইরে তিনি আর কিছুই মনে করতে পারবেন না। অর্থাৎ ভুল করেই হোক, অথবা ইচ্ছে করেই হোক, তিনি দিনকে রাত বলেছেন, আর অধীনস্থ কোন নেতা বা কর্মী যদি তা শুধরে দেয় তাহলেই তিনি ধরে নেন অধীন এই লোক তার প্রতি আনুগত্যশীল নয়, যোগ্যও নয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে তিনি যা বলবেন বা করবেন তা সঠিক হোক, না হোক, অবশ্যই বলতে হবে ঠিক, সবটাই ঠিক।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার রাজনীতিতে প্রথম কথা হচ্ছে, তার (শেখ হাসিনার) কোন ভুল থাকতে পারে না। কেউ যদি মনে করে তার (শেখ হাসিনার) ভুল হয়েছে তাহলে তাকে রাজনীতির প্রথম কথা পুনরায় স্মরণ করতে হবে। ঠিক, ঠিক, নেত্রী আপনি যা বলেছেন বা যা করেছেন তা সব ঠিক। শেখ হাসিনার রাজনীতিতে যারা এভাবে চলেছে তারাই উপরে উঠেছে এবং সফল হয়েছে।
কোন শিক্ষা নেয়নি
রাষ্ট্রনায়ক বা রাজনৈতিক নেতাদের ইতিহাসে সবচাইতে ক্ষমতাধর ব্যক্তি, যার মুখের কথায় লক্ষ কোটি মানুষ উদ্বেলিত হতো, যার অঙ্গুলীর ইশারায় সারি সারি মানুষ মৃত্যুর দিকে ছুটে যেতো, পরম করুণাময় আল্লাহ্র দরবারে হাত তুলে নিজের জন্য দোয়া করার কথা ভুলে গিয়ে যার জন্য মানুষ দোয়া করতো, তিনি শেখ মুজিবর রহমান। কেউ কেউ তাকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বলেন, কেউ কেউ বলেন না। এদেশের বেশিরভাগ মানুষ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বলেন না, স্বীকার করেন না এবং মানেন না। কিন্তু তিনি যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি/প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতি এটা সকলেই স্বীকার করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট মসজিদে ফজরের আযান হচ্ছে, আস্সালাতু খায়রুম মিনান নাউম, আসসালাতু খায়রুম মিনান নাউম। মুসল্লিরা শয্যা ছেড়ে নামাজে যাচ্ছে ঠিক সেই সময় বাংলাদেশের সবচাইতে ক্ষমতাধর ব্যক্তি, রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবর রহমান বাঁচার জন্য, শুধু বাঁচার জন্য, দীর্ঘ তিন ঘন্টা সাড়ে তিন ঘন্টা কত চেষ্টা-তদবিরই না করেছেন। তার প্রাণ বাঁচানোর জন্য সেনাবাহিনীর প্রধানের কাছে ফোন করেছেন। সেনাবাহিনীর ঢাকা ব্রিগেড কমান্ডারের কাছে ফোন করেছেন। তার নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত সেনা ইউনিট প্রধানের কাছে ফোন করেছেন। পুলিশের আইজির কাছে ফোন করেছেন। পুলিশ কন্ট্রোল রুমে ফোন করলেন। গণভবনে ফোন করলেন। কিন্তু কোন জায়গা থেকেই একটু সাড়াশব্দও এলো না। সর্বশক্তিমান পরম করুণাময় আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন শেখ মুজিবর রহমান ও তার পরিবার- পরিজনের জীবন রক্ষার জন্য একটি মানুষকেও পাঠালেন না। যে ব্যক্তির এতো লোকজন, এতো ঢল তলোয়ার, এতো অনুসারী, এতো ক্ষমতা, তাকে সাহায্য করতে, তার প্রাণ বাঁচাতে কেউ-ই এগিয়ে এলো না।
মানুষের জন্য নিবেদিতপ্রাণ, দেশপ্রেমিককে বন্দী করে বিচার না করে বন্দিদশায় হাতে হ্যান্ডকাপ পরা অবস্থায় সামনে থেকে বুকে গুলি করে হত্যা করে পবিত্র পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে দম্ভের সাথে কোথায় সিরাজ সিকদার বলে, ও দম্ভ করা, স্বাধীনতার ইস্তেহার পাঠকারী এম এ রশিদ শেখ মুজিবের ভাগ্নে শেখ শহীদ যখন ছাত্রলীগের সভাপতি তখন এম এ রশিদ, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। শেখ কামালের সাথে দ্বন্দ্বের কারণে এম এ রশিদ দীর্ঘদিন শেখ মুজিবর রহমানের কাছে যাননি।
এম এ রশিদ বলেন, বঙ্গবন্ধু যে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই মারা যাবেন এটা আমি বুঝতে পরেছিলাম। শেখ মনি ভাইয়ের অনুরোধে ‘৭৫-এর জুলাই আগস্টে আমি যখন গণভবনে বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করতে যাই, আমাকে দেখেই বঙ্গবন্ধু বলে উঠলেন, পৃথিবীতে এমন কেউ আছে, যে আমার দরবারে হাজির হবে না? বলে, অট্টহাসি দিলেন। সেই বলা আর হাসিতে ছিল ভয়ানক অহংকার প্রচণ্ড গরিমা। তখনই আমার মন বলে উঠল, বঙ্গবন্ধু আর বেশিদিন পৃথিবীতে নেই।
১৫ই আগস্টের শিক্ষা হচ্ছে, আল্লাহকে ভয় করা। সব সময় আল্লাহকে স্মরণে রাখা। মানুষের প্রতি অমানুষের মত আচরণ না করা। মানুষকে সম্মান করা। নিজেকে সর্বেসর্বা মনে না করা। মানুষকে ভালবাসা।
আত্মঅহমিকা ও গরিমা বর্জন করা। কিন্তু দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা এবং তাদের পরিবার-পরিজন আত্মীয়রা ১৫ই আগস্ট থেকে বিন্দুমাত্র শিক্ষাও নেয়নি। বরং ১৫ই আগস্টের ঘটনা থেকে তারা আরো কুশিক্ষা অর্জন করলো। তারা মানুষকে চুল পরিমাণেও ভালবাসে না। মানুষকে অপমান-অপদস্ত করে প্রচণ্ড আনন্দ বোধ করে।
কার কত টাকা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছোট বোন শেখ রেহানার এখন একই একাউন্ট, একই হিসাব। দুই বোনের মধ্যে অনেক ঝগড়া-ঝাটির পর দু’জনে মিলে একটি একাউন্ট হওয়ার বিনিময়ে আপোষ করা হয়েছে। এই দুই বোনের বর্তমানে আমেরিকায় (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) তিনটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোর হয়েছে। এর একটি চালায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে পুতুল ও তার স্বামী। অপরটি চালায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে জয় এবং তৃতীয়টি চালায় প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানার ছেলে ববি। এছাড়া এই দুই বোনের বিভিন্ন দেশে প্রায় তিন থেকে চার হাজার কোটি টাকা নগদ আছে।
প্রধানমন্ত্রীর চাচাতো ভাই শেখ হেলাল এমপি প্রায় হাজার কোটি কোটি টাকার উপরে মালিক। প্রধানমন্ত্রীর চাচাতো বোন লুনা এবং মিনা শত শত কোটি টাকার মালিক। প্রধানমন্ত্রীর অপর চাচাতো ভাই রুবেল ও তার অন্যান্য ভাইয়েরা শত কোটি টাকার মালিক হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী চাচাতো চাচা শেখ হাফিজুর রহমান টোকন প্রায় পাঁচশ কোটি টাকার মালিক। প্রধানমন্ত্রীর বাবার ফুফাতো ভাইয়ের ছেলে প্রধানমন্ত্রীর এ পি এস বাহাউদ্দিন নাসিম এবং তার চাচাতো ভাই প্রধানমন্ত্রীর চীফ সিকিউরিটি নজিব আহাম্মেদ নজিব ও তার ভাইয়েরা মিলে বর্তমানে কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট এবং দূর সম্পর্কের আত্মীয়-স্বজনেরা এমন কেউ নেই, যিনি বর্তমানে শত কোটি টাকার মালিক হননি।
ধিক শেখ মুজিব ধিক
‘৭১ সালের ২৫শে মার্চ পাকিস্তানী সৈন্যরা দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকা জ্বালিয়ে দিলে, ত্বরিৎগতিতে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ইত্তেফাকের মালিক ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেনদের ক্ষতিপূরণ বাবদ নগদ দশ লক্ষ টাকা দেয় এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় মঈনুল হোসেনরা লন্ডন-জার্মানী ঘুরে অত্যাধুনিক অফসেট মেশিন কিনে আনলেন, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেন না। পাকিস্তানী হানাদার কবলিত গোটা সময়, অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের সময়, অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের গোটা নয় মাস মঈনুল হোসেনরা পাকিস্তান প্রেস থেকে বিনা পয়সায় (পাকিস্তান সরকারের খরচে) ইত্তেফাক পত্রিকা বের করলেন।
বলা বাহুল্য, ঐ সময় ইত্তেফাকে পাকিস্তানী জেনারেল ইয়াহিয়া খান, টিক্কা খান, ফরমান আলী, নিয়াজি ও পাকিস্তানী অন্যান্য জেনারেল ও সৈন্যদের এবং ঘাতক গোলাম আযমসহ অন্যান্য আলবদর, রাজাকাদের প্রশংসা করে খবর ছাপা হতো। আর মুক্তিযোদ্ধাদের বলা হতো দেশদ্রোহী ভারতীয় চর। অর্থাৎ ইত্তেফাক তখন মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানী তাঁবেদারি ও দালালিতে লিপ্ত ছিল এবং দালালি ও তাঁবেদারির পুরস্কার হিসেবে পকিস্তান সরকারের সমস্ত বিজ্ঞাপন ইত্তেফাক পেতো। অপ্রত্যাশিতভাবে হঠাৎ ১৬ই ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হয়ে যাওয়ায় ইত্তেফাকের মালিক আনোয়ার হোসেন মঞ্জুরা পাকিস্তান সরকারের কাছে থেকে দালালি ও তাঁবেদারির পুরস্কারস্বরূপ পাওয়া বিজ্ঞাপনের বিলের টাকা নিতে পারেনি। লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে দেশ স্বাধীনের পরে পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে স্বাধীন দেশের কর্ণধার শেখ মুজিবর রহমানের কাছ থেকে পাকিস্তানী দালালির ও তাঁবেদারির সেই বিলের টাকা নেয়। কোন বিবেকবান মানুষ কি এই বিলের টাকা দিতে পারে?
এ জন্যই কি লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন আর মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করা হয়েছে? ধিক, শেখ মুজিব, ধিক।
এদেশের মুক্তিপাগল দামাল ছেলেরা প্রাণের মায়া ছিন্ন করে দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য প্রাণপণ লড়াই করছে। হানাদার পাকিস্তানী বাহিনীর সাথে মুখোমুখি যুদ্ধ করছে। ঠিক তখন পাকিস্তান সরকার মুক্তিযুদ্ধ নস্যাৎ করার জন্য কুমলতবে ই পি সি এস (ইস্ট পাকিস্তান ক্যাডার সার্ভিস)- এর পরীক্ষা নিল। নিজের প্রাণের বিনিময়ে পাকিস্তানী হানাদারদের কবল থেকে দেশ ও দেশের মানুষকে বাঁচানোর সেই অগ্নিপরীক্ষার দিনে, বাংলার দামাল ছেলেরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করলো । আর স্বার্থান্বেষী চরম সুবিধাবাদী কতিপয় ব্যক্তি পাকিস্তান সরকারের দেওয়া সেই ই পি সি এস পরীক্ষায় অংশ নিল এবং দেশপ্রেম বিবর্জিত ঐ ব্যক্তিরা ই পি সি এস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ইস্ট পাকিস্তান ক্যাডার সার্ভিসের চাকরীতে যোগ দিল। লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে দেশ স্বাধীনের পরে মুক্তিযুদ্ধের সাথে সম্পর্কহীন শেখ মুজিবর রহমান ঐ বিশ্বাসঘাতক দেশদ্রোহীদের স্বাধীন বাংলাদেশ ক্যাডার সার্ভিসের চাকরীতে পুর্নবহাল করলেন। কিন্তু কেন? ন্যূনতম বিবেক থাকলে কি এটা সম্ভব? শেখ মুজিব, ধিক।
মানুষের জন্য নিবেদিতপ্রাণ দেশপ্রেমিক সর্বহারা দলের নেতা কমরেড সিরাজ সিকদারকে বিনা বিচারে বন্দীদশায় হাতে হ্যান্ডকাপ পরা অবস্থায় সম্মুখ থেকে গুলি করে হত্যা করে, মহান জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে আজ কোথায় সিরাজ সিকদার বলে আস্ফালন করে শেখ মুজিব হয়েছে বিবেকহীন এক কাপুরুষ।
ডায়েরীর পাতা
তুমি যা চেয়েছিলে তাই হয়েছে। তুমি চেয়েছিল যেনতেন প্রকারে একবার শুধু ক্ষমতায় যাওয়া। তাই হয়েছে। দেশের জন্য, জাতির জন্য কিছু করতে হলে যে ত্যাগ স্বীকার করা প্রয়োজন তা তুমি করতে কখনই প্রস্তুত ছিলে না। প্রথম থেকেই শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য তুমি সর্বদা ব্যস্ত ছিলে এবং তাই হয়েছে।
১৫/৬/৯৬ না, তুমি দেশের জন্য কিছুই করতে পারবে না। কেননা দেশের জন্য কিছু করার মন তোমার নেই। মানুষের জন্য কিছু করার মন নেই বলেই, তোমার ইচ্ছেও নেই। আর ইচ্ছে নেই বলেই তোমার উপায়ও নেই। যদি তোমার ইচ্ছে থাকতো, তাহলে কিছু একটা উপায় হতো। কিন্তু জাতির জন্য কিছু করার ইচ্ছে তোমার নেই। কাজেই উপায়ও নেই। ১৫/১২/৯৬ইং আমরা তোমাকে ক্ষমা করতে চাই। কিন্তু কোন বিচারেই ক্ষমা করতে পারি না। তুমি ক্ষমার অযোগ্য। তুমি প্রার্থনা কর আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন যেন তোমাকে ক্ষমা করার সামর্থ্য ২৭/০২/৯৭ইং আমাদের দেন।
১৯৮১ সালের ১২ই জুন যখন তুমি তোমার পিতার ধানমন্ডি বত্রিশ নম্বরের বাড়িটি এবং অলঙ্কারসহ যাবতীয় জিনিষ, ৭২ পৃষ্ঠার একটি ইনফেন্ট্রিতে সই করে বুঝে নিচ্ছিলে, তখনই মনে হচ্ছিল তুমি মানুষ নাও অন্য কিছু। তুমি যখন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব বুঝে নিচ্ছিলে, সবাই হতবাক হয়ে তোমার দিকে তাকিয়েছিল। কি রকম ধীর স্থীর এবং অবলীলাক্রমে তুমি বলছিলে, আমার কানের দুল তিনটা কই? আমার নাকের ফুল দুইটা কই? আমার হাতের চল্লিশটা চুরি কই? ইত্যাদি ইত্যাদি, তুমি বলছিলে আর সরকারী কর্তৃপক্ষ একটা একটা করে সব বুঝিয়ে দিচ্ছিল। সে দিনটার কথা আমার আজো মনে আছে। সেদিন তোমাকে দেখে মনেই হয়নি যে, এই বাড়িতেই তোমার পিতৃকুলের সব শেষ হয়ে গেছে। তুমি এমন ভাবে গুনে প্রায় সত্তর লক্ষ টাকার গয়নাসহ অন্যান্য মালামাল বুঝে নিলে যে, তাতে মনে হলো, তুমি মানুষ নও। অন্য কোন কিছু।
কারো লেখা পড় না; কোন বই পড় না। ভাল কথা শোন না। তোমার নাম শেখ হাসিনা। তুমি পিতৃমাতৃহীন স্বামী কর্তৃক পরিত্যাক্ত এক রমণী। তোমার মেয়ের ভাষায় তুমি বহুরূপী। তোমার প্রিয় গৃহভৃত্য রমাকান্ত, যাকে তুমি ভালবাসতে, সেও তোমাকে ভালবাসতো। কিন্তু সেও তোমার কাছে রইল না। তুমি এমন এক প্ৰাণী।
শিক্ষা
এসবই তুমি আমাদের দিয়েছ।
তোমার কাছ থেকেই এসব আমাদের পাওয়া।
তুমি যা দিয়েছ, তার সবটুকুই আমরা পেয়েছি।
নতুন করে তোমার কাছ থেকে আমাদের আর পাওয়ার কিছুই নেই।
তাই, তুমি যা দিয়েছ, তা আমরা সকলের কাছে ফাঁস করে দিতে চাই।
তাতে তুমি দুঃখ পেলে, আমাদের কিছু করার নেই।
এ শিক্ষা তুমিই আমাদের দিয়েছ। তোমার কাছ থেকেই আমরা এ শিক্ষা পেয়েছি। সেদিন হয়তো তুমি ভাব নাই, তোমার শিক্ষাই তোমার বিরুদ্ধে কাজে লাগিয়ে দেব।
এই হয়। আসলে এই হয়। তোমার মতো যারা এ শিক্ষা দেয় তারা কেউই ভাবে না, এই শিক্ষা একদিন তাদের বিরুদ্ধেই কাজে লেগে যাবে।
তই হয়তো তুমিও ভাব নি।
তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ, একেবারে খালি হাতে বিদায় না দিয়ে অন্তত শিক্ষাটা দিয়ে দিয়েছিলে।
নইলে তো মাঠে মারা যেতে হতো। (অবশ্য তুমি তাই চেয়েছিলে)
তোমার দেয়া শিক্ষাটা বেঁচে কিনে, অন্তত বাঁচার চেষ্টা করি।
শেষবারের মতো বলি, তুমি দুঃখ করো না। বিশ্বাস কর, তোমার বিরুদ্ধে এ ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার ছিল না।
জানি বিশ্বাস করবে না। কারণ, তোমার মাঝে বিশ্বাস বলে কিছু নেই।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হচ্ছে মানুষের মনন জগতের এক ধরনের অনুভূতি। যে অনুভূতির ফলে একটা জাতির মন-মানসিকতার আমূল পরিবর্তন ঘটে এবং এই পরিবর্তনের ফলে গোটা জাতি মন থেকে পুরনো ধ্যানধারণা ব্যক্তি স্বার্থপরতা, ঝেড়ে ফেলে নতুন মন ও ভাবনা নিয়ে গড়ে ওঠে। এই মন ও ভাবনাকে বলা হয় চেতনা।
আর এই গড়ে ওঠা নতুন মন ও ভাবনা বা চেতনা হচ্ছে, নিজের চাইতে অন্যকে (অপরকে) বেশি বড় করে দেখা। বেশি ভালবাসা। নিজের ব্যক্তি স্বার্থের চাইতে দেশ ও জাতির স্বার্থকে বেশি বড় করে দেখা। নিজের সুখ-দুঃখ ভুলে গিয়ে অন্যের সুখ-দুঃখকে প্রাধান্য দেওয়া। একটা জাতির জীবনে এই চেতনা বছর বছর আসে না। একটি বিশেষ মুহূর্তে একটি বিশেষ প্রয়োজনে হাজার হাজার বছর পর একটা জাতির জীবনে এরূপ একটি চেতনার জন্ম বা সৃষ্টি হয়। আর একটা জাতির জীবনে যখনই এই চেতনার সৃষ্টি হয়, তখনই সেই জাতি ব্যক্তিস্বার্থের উর্ধ্বে উঠে একে অপরকে নিজের মতো ভালবাসে। কখনো কখনো নিজের চাইতে অন্যকে বেশি ভালবাসে।
নিজের চাইতে অন্যকে বেশি ভালবাসা বা অন্যকে নিজের মতো করে ভালবাসার চেতনাকেই বলা হয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।
জাতির জীবনে যখনই এই চেতনার জন্ম হয় তখনই সে জাতির মাথা তুলে দাঁড়ায়। পৃথিবীর কোন শক্তিই আর সেই জাতিকে দাবিয়ে রাখতে পারে না।
অন্যকে নিজের চাইতে বেশি ভালবাসার চেতনা হাজার হাজার বছর পর বাঙালি জাতির জীবনে এসেছিল ‘৭১-এ মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়।
‘৭১ সালে বাঙালি জাতি নিজের সুখ-দুঃখের চাইতে অন্যের সুখ-দুঃখকে বড় করে দেখেছে, বেশি করে দেখেছে।
নিজের চাইতে অন্যকে বেশি ভালবাসার বা অন্যকে নিজের মতো ভালবাসার চেতনা বার বার আসে না। হাজার বছরে একটা জাতির জীবনে একবার এই চেতনা আসে।
জাতির জীবনে যখন এই চেতনা আসে, তখন গোটা জাতি সকল প্রকার অন্যায়, অবিচার, স্বার্থপরতা, পরাধীনতা ইত্যাদি সকল কিছুর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় এবং মুক্তির লড়াই শুরু করে।
বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে একমাত্র ‘৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময়েই বাঙালি এই চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়েছিল এবং গোটা বাঙালি জাতি তখন সকল প্রকার ব্যক্তিস্বার্থের উর্ধ্বে উঠে দেশ ও জাতির স্বার্থকে বড় করে দেখেছে। অন্যকে নিজের চাইতে বেশি ভালবেসেছে। সমস্ত বিদেশী পণ্য বর্জন করে দেশীয় দ্রব্য ব্যবহার করেছে।
এককথায় “মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হচ্ছে নিজের চাইতে অন্যকে বেশি ভালবাসা। নিজের ব্যক্তি স্বার্থের চাইতে দেশ ও জাতির স্বার্থ বেশি দেখা।”
স্বাধীনের পর দেশপ্রেম বিবর্জিত রাজনৈতিক নেতৃত্ব রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসে মুক্তিযুদ্ধের এই চেতনাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আর এই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংসকারী দেশপ্রেম বিবর্জিত রাজনৈতিক নেতৃত্বের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শেখ মুজিবর রহমান’। বলা যায়, শেখ মুজিবের নেতৃত্বেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস হয়েছে।
আমার, শেখ মুজিবের ও শেখ হাসিনার ফাঁসি চাই
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় ইংল্যান্ডের ক্রমওয়েল রাজতন্ত্রের ক্ষমতা লোপ করে নিজেই ক্ষমতার অপব্যবহার করে একজন স্বৈরাচারী হয়েছিলেন। কিন্তু ইংল্যান্ডের গণতান্ত্রিক জনতা তাকে ক্ষমা করেনি। দেশের প্রচলিত আইনে তার বিচার হয়েছিল তার মৃত্যুর পর। এই বিচার প্রিভি কাউন্সিল পর্যন্ত গড়িয়েছিল এবং তার ফাঁসি হয়েছিল। কবর হতে তার হাড়গোড় তুলে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলানো হয়েছিল। এটাই হলো আইনের শাসন।
‘৭৫-এর ১৫ই আগস্ট শেখ মুজিব হত্যার প্রতিবাদে যুদ্ধ করে দেশের যে ক্ষতি করেছি, সেই অপরাধে আমার ফাঁসি চাই।
স্বাধীনতার ঘোষক মুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যার ষড়যন্ত্রের কথা জেনেও তা প্রকাশ না করার এবং হত্যাকারীদের সম্পৃক্ত থাকার অপরাধে আমার ফাঁসি চাই।
‘৮৩-এর মধ্য ফেব্রুয়ারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জয়নাল ও জাফর এবং ‘৮৪-এর ফেব্রুয়ারী সেলিম ও দেলোয়ার হত্যায় শেখ হাসিনার পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্রে অংশ নিয়ে যে অপরাধ করেছি তার জন্য আমার ফাঁসি চাই।
১৯৯২ সালের ডিসেম্বরে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন পণ্ড করার জন্য শেখ হাসিনার পরিকল্পনা ও নির্দেশে হিন্দু-মুসলমান রায়ট লাগিয়ে যে অপরাধ করছি তার জন্য আমার ফাঁসি চাই।
১৯৯২ সালের পর থেকে ১৯৯৬ সালের মার্চ পর্যন্ত আন্দোলনের নামে ঢাকা শহরে শেখ হাসিনার নীলনক্সা ও নির্দেশে যে ১০৩ (একশত তিন) জন লোক নিহত হয়, এই অজ্ঞাতনামা ১০৩ জন মানুষ হত্যার দায়ে আমার ফাঁসি চাই।
তবে তার আগে
(১) সম্পূর্ণ সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সঠিক সময়ে শেখ মুজিবর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা না করায়, আমাদের স্বাধীনতার জন্য ত্রিশ লক্ষ মানুষকে নিহত (শহীদ) হতে হয় এবং দুই লক্ষ মা-বোনকে ধর্ষিত হয়। এই ত্রিশ লক্ষ মানুষ হত্যা এবং দুই লক্ষ নারী ধর্ষিত হওয়ার জন্য দায়ী শেখ মুজিবর রহমানের মরণোত্তর ফাঁসি চাই।
(২) মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করার অভিযোগে শেখ মুজিবর রহমানের মরণোত্তর বিচার চাই, শাস্তি চাই।
(৩) যে মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে এবং দেশ স্বাধীন করে শেখ মুজিবর রহমানকে স্বাধীন দেশে ফিরিয়ে এনেছে, স্বাধীনতার পর ভারত থেকে সেই প্ৰকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা না এনে, রাজাকার আলবদরসহ ভুয়া ব্যক্তিদের মুক্তিযোদ্ধা সনদ (সার্টিফিকেট) দেওয়ার অভিযোগে শেখ মুজিবর রহমানের মরণোত্তর বিচার চাই, শাস্তি চাই।
(৪) ক্ষমা না চাইতেই স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার, আল বদরদের ঢালাওভাবে ক্ষমা ঘোষণা করার অপরাধে শেখ মুজিবর রহমানের মরণোত্তর শাস্তি চাই।
(৫) মহান বিপ্লবী নেতা কমরেড সিরাজ সিকদারকে বন্দী অবস্থায় বিনা বিচারে গুলি করে হত্যা করার অপরাধে শেখ মুজিবর রহমানের মরণোত্তর ফাঁসি চাই।
(৬) সিরাজ সিকদারকে খুন করে পবিত্র পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে আজ কোথায় শেখ মুজিবর রহমানের মরণোত্তর শাস্তি চাই।
(৭) জনগণের ভোট দেওয়ার অধিকার, মিছিল করার অধিকার, দল করার অধিকার এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণসহ সংবিধানের মৌলিক অধিকার হরণ করে জাতির উপর একদলীয় (বাকশাল) শাসন-শোষণ চাপিয়ে দেওয়ার অপরাধে শেখ মুজিবর রহমানের মরণোত্তর বিচার চাই, শাস্তি চাই।
(ক) ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট শেখ মুজিবর রহমান নিহত হওয়ার পর অনেক চেষ্টা এবং কষ্টের পর শিক্ষিত ছাত্র যুবকদের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফিরিয়ে আনার ধারার সূচনা হয়েছিল। ছাত্র-যুবকরা ভাবতে শুরু করেছিল “রাজনীতি হচ্ছে মানুষকে দেওয়ার জন্য, পাওয়ার জন্য নয়।”
কিন্তু শেখ হাসিনা দেশে এসে সন্ত্রাসী, চোরাকারবারী, কালোবাজারী, ঘুষখোরদের রাজনীতির চালিকাশক্তিতে পরিণত করেছে এবং রাজনীতি থেকে সকল প্রকার নীতি- আদর্শ ঝেটিয়ে বিদায় করে প্রতিষ্ঠিত করেছে নীতিহীন এক রাজনীতি। এই অপরাধে শেখ হাসিনার বিচার চাই, শাস্তি চাই।
(খ) ভারতে বসে স্বাধীনতার ঘোষক মুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যার ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনা করে এবং ১৯৮১ সালের ৩০শে মে তা বাস্তবায়িত করার অপরাধে শেখ হাসিনার ফাঁসি চাই।
(গ) ১৯৮২ সালে, জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত বিএনপি সরকার উৎখাত করে সামরিক সরকার প্রতিষ্ঠিত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অপরাধে শেখ হাসিনার বিচার চাই, শাস্তি চাই।
(ঘ) সামরিক স্বৈরাচার জেনারেল এরশাদকে হাতের মুঠোয় রাখার জন্য, ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনা করে, ছাত্র আন্দোলনের নামে, ‘৮৩-র মধ্য ফেব্রুয়ারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জাফর ও জয়নাল এবং ‘৮৪-র ফেব্রুয়ারীতে সেলিম ও দেলোয়ার হত্যার অপরাধে শেখ হাসিনার ফাঁসি চাই।
(ঙ) ১৯৯২ সালের ডিসেম্বরে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন পণ্ড করার জন্য হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িক রায়ট লাগিয়ে দেওয়ার অপরাধে শেখ হাসিনার বিচার চাই, শাস্তি চাই।
(চ) ১৯৯২ সাল থেকে ১৯৯৬ সালের মার্চ পর্যন্ত, আন্দোলনের ইস্যু তৈরী করার জন্য ঢাকা শহরে ১০৩ জন নিরীহ অজ্ঞাতনামা সাধারণ মানুষকে খুন করার অপরাধে শেখ হাসিনার ফাঁসি চাই।
“আমার ফাঁসি চাই” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ