সাঁওতালদের বহু লোককথায় পুরুষদের বীরসুলভ সরলতাও নারীর তীক্ষ্ণ বুদ্ধির কথা বলা হয়েছে। সমাজের নারীদের সম্মানরক্ষাকে পুরুষরা তাঁদের বীর-ধর্ম বলে মনে করেন। এগুলো যেমন সত্যি, পাশাপাশি এ-ও সত্যি পুরুষরা মহিলাদের বিশ্বাস করেন না। সমাজ বিশ্বাস করে মন্ত্র বা অলৌকিক ক্ষমতা দখল করার ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষদের চেয়ে বেশি অগ্রণী। নারীদের বোঙ্গার পুজোর অধিকার দিলে ছলাকলায় তাঁরা বোঙ্গাদের হৃদয় জয় করে নেবেন। নারীরা রহস্যময় ক্ষমতার অধিকারী হলে সমাজের ক্ষতিই হবে।

নারীদের রহস্যময় ক্ষমতাকে ভয় পাওয়ার হদিশ পাওয়া যায় লোকগাথাতেই।

সে অনেক অনেক আগের কথা। সামজে বাস করতেন এক গুণীন। তাঁর ছিল অলৌকিক সব ক্ষমতা। সেই ক্ষমতার জোরে অনেক মৃত আদিবাসীদের নতুন জীবন দিয়েছিলেন। গুণীনের গুণগ্রাহী জুটলো। গুণীন ঠিক করলেন, তাঁদের দীক্ষা দেবেন। গুণীন বুঝিয়েছিলেন তাঁর আয়ু বেশি দিন নয়। ভক্তদের ডেকে বলেছিলেন, তোদেরই তো দীক্ষা দেবো। কিন্তু মনে হচ্ছে, সব কিছু শেখাবার আগেই আমার মৃত্যু হবে। তোদের কয়েকটা কথা বলি, মন দিয়ে শোন, আমি মারা গেলে আমার মৃতদেহ যেন অবশ্যই দাহ করিস তোরা। চিতা থেকে এক সময় লাফিয়ে উঠবে আগুনের গোলা। আগুনের গোলা দেখে ভয় না পেয়ে তোরা গোলাটাকে গ্রহণ করিস। তাহলেই আমার সমস্ত মন্ত্রশক্তি, অলৌকিক ক্ষমতা তোরা পেয়ে যাবি।

ভক্তদের দীক্ষা দেওয়ার দিন ঠিক হল। দীক্ষার দিন গুরু যখন ঘর থেকে বের হচ্ছেন তখন একটা সাপ কামড়ালো গুরুর মাথায়। গুরুকে বাঁচাবার সব চেষ্টাই ব্যর্থ হল। গুরুকে শ্মশানে নিয়ে গিয়ে চিতা সাজিয়ে তার উপর শোয়ানো হল। চিতায় আগুন জ্বলে ওঠার কিছু পর বিশাল শব্দ করে একটা আগুনের গোলা  শূন্যে উঠে গেল। ভীত ভক্তেরা সেই শব্দে ও গোলার আগুনের তীব্রতায় পালিয়ে গেলেন। কাছের মাঠে কিছু মেয়ে শুকনো কাঠি কুড়োচ্ছিল। আগুনের গোলাটা তাদের কাছে পড়তেই তারা গোবর লেপা ঝুড়ি দিয়ে চাপা দিল। ফলে মেয়েদের মধ্যে সঞ্চারিত হল গুণীনের অলৌকিক শক্তি ও ক্ষমতার বড় অংশ। পরের যে ছোট আগুনের গোলাটা শুন্যে উঠে মাটিতে এসে পড়েছিল, সেটা সংগ্রহ করেছিলেন ভক্তেরা। ভক্ত পুরুষদের মধ্যেও সংক্রমিত হল গুরুর শক্তি, তবে তা খুবই কম।

কোন কোন ক্ষেত্রে সাঁওতাল সমাজের মেয়েরা কিছু কিছু হিন্দু দেব-দেবীর পুজো করছেন বটে। (কালী, কৃষ্ণ ইত্যাদি), কিন্তু এগুলো বিরল ব্যতিক্রম। হিন্দু দেব-দেবীর পুজোর বাইরে কিন্তু সাঁওতাল সমাজ তাঁদের নারীদের বোঙ্গা পুজোর অধিকার অস্বীকার করে নেয়নি।

error: Content is protected !!