বন্যার শেষ
১. কিন্তু ঈশ্বর নোহর কথা ভুলে যান নি। নোহ এবং নোহের নৌকোয় আশ্রয় পাওয়া সব জীবজন্তুর কথাই ঈশ্বরের মনে ছিল। পৃথিবীর উপর দিয়ে তিনি এক বাতাস বইয়ে দিলেন। এবং সমস্ত জল সরে যেতে শুরু করল।
২. আকাশ থেকে অবিশ্রান্ত বর্ষন বন্ধ হল। ভূগর্ভস্ত প্রস্রবণগুলি থেকে জল নির্গত হওয়া বন্ধ হল।
৩-৪. পৃথিবীর উপর থেকে জলরাশি ক্রমশঃ নেমে যেতে লাগল। ১৫০ দিন পরে জল এতটাই নেমে গেল যে নৌকোটা আবার মাটি স্পর্শ করলো। নৌকা গিয়ে ঠেকল অরারটের একটা পর্বতে। সেটা ছিল সপ্তম মাসের ১৭ তম দিন।
৫. জল ক্রমাগত নেমে য়েতে লাগলো এবং দশম মাসের প্রথম দিনে পর্বতের মাথাগুলো জলের উপরে জেগে উঠলো।
৬. আরও ৪০ দিন পরে নোহ নিজের তৈরী নৌকোর জানালাটা খুললেন।
৭. তারপর তিনি নৌকো থেকে একটা দাঁড়কাক উড়িয়ে দিলেন। এবং যতদিন না জল নেমে গিয়ে শুকনো ডাঙা দেখা দিল ততদিন সেই দাঁড়কাকটা নৌকো থেকে উড়ে গিয়ে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় উড়ে বেড়াতে লাগল।
৮. নোহ একটা পায়রাও উড়িয়ে দিলেন। পায়রাটা শুকনো ডাঙা খুঁজে পায় কিনা তা নোহ জানতে চাইছিলেন। তিনি জানতে চাইছিলেন যে পৃথিবী এখনও জলে ডুবে আছে কি না।
৯. পৃথিবী তখনও জলে ঢাকা, তাই পায়রাটা বসার জায়গা না পেয়ে ফিরে এল নৌকোতে। নোহ হাত বাড়িয়ে পায়রাটাকে ধরে নৌকোর ভিতরে টেনে নিলেন।
১০. সাত দিন পরে নোহ আবার পায়রাটা উড়িয়ে দিলেন।
১১. এবং সেদিন বিকেলে পায়রাটা জলপাইয়ের একটা কচি পাতা ঠোঁটে নিয়ে ফিরে এল। পৃথিবীতে যে আবার ডাঙা জেগে উঠতে শুরু করেছে ঐ কচি পাতাটি তারই চিহ্ন।
১২. সাত দিন পরে নোহ আবার পায়রাটা উড়িয়ে দিলেন। কিন্তু এবার পায়রাটা আর ফিরে এল না।
১৩. তারপর নোহ নৌকোর দরজাটা খুললেন। নোহ তাকিয়ে শুকনো ডাঙা দেখতে পেলেন। সেটা ছিল বছরের প্রথম মাসের প্রথম দিন। নোহর বয়স তখন ৬০১ বছর।
১৪. দ্বিতীয় মাসের ২৭তম দিনের মধ্যে ডাঙা সম্পূর্ণ শুকনো হয়ে গেল।
১৫. ঈশ্বর তখন নোহকে বললেন,
১৬. “নৌকো থেকে নেমে এস। তুমি, তোমার স্ত্রী, তোমার পুত্ররা আর তাদের বধূরা নৌকো থেকে এবার বাইরে যাও।
১৭. তোমাদের সঙ্গে নৌকোর সমস্ত পশুপাখী নিয়ে বাইরে যাও। সমস্ত পাখী, সমস্ত জন্তু জানোয়ার এবং বুকে হেঁটে চলে এরকম সমস্ত প্রাণী নিয়ে বাইরে এসো। ঐসব পশুপাখী আরও অনেক পশুপাখীর জন্ম দেবে আর সে সবে আবার পৃথিবী ভরে যাবে।”
১৮. অতএব নোহ, তাঁর স্ত্রী, পুত্র ও পুত্রবধূদের নিয়ে নৌকো থেকে মাটিতে নামলেন।
১৯. সমস্ত জন্তু জানোয়ার, সমস্ত প্রাণী যা বুকে হাঁটে এবং সমস্ত পাখী নৌকো ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে এল। নৌকো ছেড়ে এল জোড়ায় জোড়ায় সমস্ত পশুপাখী।
২০. তখন নোহ প্রভুর জন্যে একটা বেদী তৈরী করলেন। নোহ কয়েকটি শুচি পশু ও কয়েকটি শুচি পাখী ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে নিবেদন করে সেই বেদীতে হোম করলেন।
২১. প্রভু হোমের গন্ধ আঘ্রাণ করে প্রীত হলেন। আপন মনে প্রভু বললেন, “মানুষকে শাস্তি দেওয়ার জন্যে আমি আর কখনও মৃত্তিকাকে অভিশাপ দেব না। কারণ বাল্যকাল থেকে মানুষের স্বভাব মন্দ। সুতরাং এইমাত্র আমি যেমনটি করেছিলাম আর কখনও সেভাবে পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীদের ধ্বংস করব না।
২২. যতদিন পৃথিবী থাকবে ততদিন শস্যের চারা রোপণের আর ফসল কাটার নির্দিষ্ট সময় থাকবে। ততদিন ঠাণ্ডা, গরম, শীতকাল আর গ্রীষ্মকাল এবং দিন, রাত হয়ে চলবে।”