শিশুদের আচরণগত সমস্যা

একঃ “একমাত্র সন্তান। বয়স ছয়। ক্লাশ ওয়ানে পড়ে ইংলিশ মিডিয়ামে মায়ের বক্তব্য স্কুল থেকে মাঝে মধ্যে আমাদের ডেকে পাঠানো হয়। অভিযোগ নানা রকমের। ক্লাশের ছেলে-মেয়েদের মারধোর করে সুযোগ পেলেই। ক্লাশে গোলমাল করে। মিসকেও পাত্তা দেয় না। বাড়িতেও ওকে নিয়ে একই প্রবলেম । দুরন্তপনার শেষ নেই। খাওয়া নিয়ে নানান বায়না। টর্চ থেকে ঘড়ি সব-ই ভেঙে রাখবে। কেউ বেড়াতে এলে তাদের নানাভাবে বিরক্ত করবে। একটা কাজ নিয়ে দু-মুহূর্ত স্থির হয়ে বসতে পারে না। মনোরোগ চিকিৎসক দেখিয়েছি। তারপরও অবস্থা একই রকম আছে।”

সব শিশু সমান মানসিকতার হয় না। খুব দুরন্ত, মানে এনার্জিতে ভরপুর। খাওয়া নিয়ে বায়না প্রায় বাচ্চারাই করে। জোর করে খাওয়াবার দরকার নেই। ক্ষিদে পেলে খাবে। ঘড়ি থেকে টর্চ ইত্যাদি ভাঙে হয়তো জানার ইচ্ছে থেকে কীভাবে ঘড়ি চলছে, কীভাবে টর্চ জ্বলছে—জানতে চায়। শিশুটি ওগুলো ভেঙে ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছে? নাকি তারপর খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে? ওরা স্বাভাবিক ও স্বচ্ছন্দ আচরণগুলোকে বকে মেরে বন্ধ করবেন না। তাতেই বরং ভবিষ্যতে ছেলের প্রবলেম হতে পারে।

আপনার ছেলের এনার্জিকে কাজে লাগাতে ওকে খেলাধুলায় মাতিয়ে রাখুন। দেখবেন ও কেমন পাল্টে যাচ্ছে। নিয়ম করে রোজ একই সময়ে ওর সমবয়সী ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে হুটোপুটি করে খেলার সুযোগ দিন। একদম ঠিক হয়ে যাবে।

দুইঃ আমার নাতি ঋজু। বয়স পাঁচ। সপ্তাহের শনিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঠাকুরদা-ঠাকুরমা’র সঙ্গে কাটিয়ে যায়। ও আসা মানেই খেলে-নেচে-হইহই করে আমাদের দুজনকে নাচিয়ে সময় কাটানো।

একদিন এসেছে। হঠাৎ দেখি হই-হই নেই। স্ত্রী টয়লেটে। আমি লিখছিলাম। ঋজু চুপ কেন? ভিতরের ঘরে ঢুকে দেখি ঋজুর ডান হাতের তালু থেকে টপ্‌-টপ্ করে রক্ত ঝরছে, আর ওর দু’চোখ থেকে টপ্ টপ্ করে ঝরছে বড় বড় জলের ফোঁটা। একটা গ্লাস ভেঙেছে। তারই ভাঙা কাঁচ ফুটে এই বিপত্তি।

এই মুখ হাসি নিয়ে বললাম, “এই ব্যাটা, কাঁদছিস কেন রে? এইটুকু লাগতেই কান্না? দেখ, এক্ষুনি রক্ত বন্ধ হয়ে যাবে।” বলে সবে পাশের ঘরে গেছি, অমনি আমাদের রাধুনি মাসির গলা পেলাম, “আহারে, কি সাংঘাতিক রক্ত পড়ছে। ই-স্!” সঙ্গে সঙ্গে ঋজু শুরু করলো ভ্যাঁ কান্না ।

তুলো, ওষুধ ব্যাড-এইড নিয়ে ঘরে ঢুকেই এক ধমক লাগালাম মাসিকে, “তুমি তোমার কাজে যাও। কিচ্ছু হয়নি। তাই নিয়ে চেঁচামেচি লাগিয়ে ঋজুকে নার্ভাস করতে হবে না ।”

তুলোতে স্যাভলন লাগিয়ে জায়গাটা মুছে দিয়ে বললাম, “বাঁ হাত দিয়ে তুলোটা চেপে থাক, দেখ রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যাবে। যত বড় হতে থাকবি, দুষ্টুমি করবি, ফুটবল খেলবি, ক্রিকেট খেলবি, কিংবা বকসিং। কত চোট খাবি, কাটবে, হাড় ভাঙবে। তার জন্য কাঁদবি নাকি? এই যে আমার হাত ভাঙা, নাক ভাঙা, বুকের পাঁজর ভাঙা, কোনও দিন কাঁদনি। তুই আসার নাতি হয়ে………” কাঁদবি না। নাতি আর কাঁদেনি ।

তিনঃ আপনার সন্তান চুরি করতে শুরু করেছে। না বাড়ি থেকে টাকা পয়সা চুরি করছে না। কিন্তু ওর স্কুল ব্যাগে অন্য কারও পেন, পেনসিল বক্স থাকছে, লক্ষ্য করেছেন। আত্মীয়-বন্ধুদের বাড়িতে বেড়াতে গেছেন। সন্তানও গেছে। কিন্তু ফিরেছে সে বাড়ি থেকে কোনও একটা খেলনা বা কস্‌ মেটিক চুরি করে।

এটি একটি আচরণগত সমস্যা। আপনি যদি মনে করে থাকেন শুধুমাত্র ধমকে, মেরে ওর এই স্বভাব পাল্টাতে পারবেন, তা-হলে হয়তো ভুল করবেন।

আপনি নিজেকে প্রশ্ন করুন। তো—আপনার সন্তান একটা সুন্দর পেন্সিল বক্স দেখে যত বারই কিনতে চেয়েছে, ততবার-ই আপনি কি নানা অজুহাতে খরচা এড়াবার চেষ্টা করেছেন? অথবা, চাইলে-ই দিতে হবে—এমনটা পছন্দ করেন না? ভেবেছেন একটা পেন্সিল বক্স তো আছে। দিতে দিতে ওর লোভ বাড়িয়ে দেওয়া হবে।

আপনি কি সন্তানের জন্য অনেকটা সময় দেন? মনোযোগ দিয়ে ওর প্রশ্ন শোনেন? ওর সঙ্গে গল্প করেন? ওর ক্লাসের বন্ধু-বান্ধবদের নাম-পরিচয় জানেন ? এ-সবের উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তবে আপনি আপনার সন্তানকে সময় মতো বুঝিয়ে বলুন, কেন ওকে কিনে দিলেন না। পরের মাসে মাইনে পেলে কিনে দেবেন—প্রতিশ্রুতি দিলে তা রক্ষা করুন। মিথ্যে প্রতিশ্রুতি না দেওয়াই ভালো। সন্তান যা চাইছে, তা কিনে দেবার আর্থিক ক্ষমতা না থাকলে সেটাকেও সুন্দরভাবে বোঝান, এতে সন্তান সংযমী হবে।

শিশুদের মধ্যে ঝোঁক বা জেদ বেশি হয়। বায়না ধরার স্বভাব থাকে। এই ঝোঁক বা জেদবশত কোনও কিছু পাওয়ার জন্য বায়না ধরলে এবং তাকে সংযমী করতে না পারলে, অসংযমী মন, লোভ বা আপনার উপর রাগ থেকে চুরি করতে পারে। চুরি করতে পরে মানসিক শূন্যতা থেকেও।

এই ধরনের চুরির অভ্যাস এই বয়সে-ই বন্ধ করুন। যদি ভেবে থাকেন, এসব অপরিণত বুদ্ধির কাজ। বয়সে সেরে যাবে—তা’হলে ভুল করবেন। বড়, এমনকি ভবিষ্যতে বড় মাপের মানুষ হলেও চুরির স্বভাব যাবে না। এই চুরির স্বভাবের সঙ্গে ধনী হওয়া বা নামী হওয়ারও কোনও সম্পর্ক নেই। এটা একটা মানসিক রোগ। নাম, ‘ক্লেপটোম্যানিয়া’।

চারঃ একমাত্র ছেলে। ক্লাশ সেভেন পড়ে। কিন্তু লেখাপড়া শিকেয় উঠেছে। সারাক্ষণ টিভি চালিয়ে বসে থাকে। স্কুল থেকে ফিরেই ওর ঘরের টিভি খুলে ধপাস্। অস্থির মতি। সব সময় টিভির রিমোট টিপেই যাচ্ছে। এবার রেজাল্ট যা করবে—ভাবতেই বুক হিম হচ্ছে।

পরবর্তী পর্যায়ে দেখলেন সন্তান অমনোযোগী হয়ে যাচ্ছে। সবে-ই অমনোযোগী। মনে রাখবেন দশ-বার বছর বয়স থেকেই ছেলে-মেয়েদের প্রেম, দৈহিক সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয়ে জানার আগ্রহ বাড়ে। যে সব টিভি চ্যানেলে ‘শরীরী প্রেম’ বা শরীর দেখা যায়, সেগুলো দেখার আকর্ষণই ওকে টিভি সেটের সামনে বসিয়ে রাখে কিনা আপনি জানেন না। আপানি ওর ঘরে ঢুকছেন বুঝলেই চ্যানেল পাল্টে দেয় কিনা জানেন না ।

এই নিয়ে বেশি গোয়েন্দাগিরি করার কোনও প্রয়োজন নেই। বরং সহানুভূতি ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওদের মন জয় করা সহজ। ওর সঙ্গে বসে ‘ন্যাশানাল জিওগ্রাফিক’ ‘অ্যানিমাল প্ল্যানেট’ বা ‘ডিসকভারি’র মতো চ্যানেল দেখতে দেখতে দেখা বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করুন, সন্তানকে বিশ্লেষণ করতে দিন। শরীরী গানের চ্যানেল ও স্থূল সিরিয়ালগুলো যে কত ফালতু, হাস্যকর তা হাসতে হাসতে চোখে আঙুল দিয়ে ওকে দেখিয়ে দিন। ওর বন্ধুদের ঘরে আনতে বলুন। তাদের সঙ্গে পরিচয় করুন। তাদেরও আপনার আপন করে নিন। সমস্যার মেঘ কেটে যাবে ।

পাঁচঃ ছেলের বয়স ১০ বছর। মা-বাবা দু’জনেই ব্যাঙ্ক কর্মী। বাড়িতে আর থাকেন দিদিমা। ছেলেটির মধ্যে একটা হিংস্রতা দেখা দিয়েছে। কুকুর দেখলে ঢিল মেরে আনন্দ পায়। একটা বেড়ালকে একবার দুধের সঙ্গে ইঁদুর-মারা বিষ মিশিয়ে খাইয়ে ছিল। ফড়িং বা প্রজাপতি ধরলে ডানাগুলো ছিঁড়ে আনন্দ পায়। এমন নিষ্ঠুর সন্তানের ভবিষ্যৎ ভেবে মা-বাবা শঙ্কিত ।

এই ধরনের নিষ্ঠুর চরিত্রকে মনস্তত্ত্বে বলে স্যাডিস্ট (Sadist)। এরা নিষ্ঠুর, ধর্ষকামী। ভবিষ্যতে এসব শিশু পাশের বাড়ির বালিকার উপর পাশবিক অত্যাচার করলে অবাক হবার হওয়ার কিছু নেই ।

মা-বাবা দু’জনেই নিজেদের কাজ-কর্ম ও আড্ডা নিয়ে ব্যস্ত থাকলে, অতিমাত্রায় আত্মকেন্দ্রিক হলে ছেলে-মেয়েরা নিষ্ঠুর হয়। বৃদ্ধা দিদিমা নিজের মনে টিভি দেখেন। ঠাকুমা (বাবার মা) থাকেন বৃদ্ধাশ্রমে। গোটা ব্যাপারটাই ছেলেটির একেবারে অপছন্দ। নিজেও অস্তিত্বের সঙ্কটে ভোগে। নিজের অস্তিত্ব বজায় রাখতে দুর্বলদের উপর নিষ্ঠুর অত্যাচার চালায় ।

ছেলেটির প্রয়োজন হৃদয়বান, সহানুভূতিশীল বন্ধু মা-বাবা। ছেলেটির জন্য সময় দিন। তাকে নিয়ে আত্মীয়-বন্ধুদের বাড়ি বেড়াতে যান। তাঁদের সন্তানদের সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ দিন। সন্তানকে ভালোবাসা দিন। সন্তান ভালোবাসা পেলে ভালোবাসার মূল্য বুঝবে, অন্যকে ভালোবাসতে শিখবে।

 

কৈশোরে পা দেওয়া সন্তানের সমস্যা

একঃ মেয়ের বয়স ১৭ বছর। মাধ্যমিকে স্টার পেয়েছিল। কিন্তু টুয়েলভে উঠল অত্যন্ত খারাপ রেজাল্ট করে। মা-বাবা যত্ন নেন। দু-জন প্রাইভেট টিউটর আছে। তারপরও কেন যে এমন হল? অথচ অনেক রাত পর্যন্ত পড়ে?

আপনি কি নিশ্চিত যে আপনার কিশোরী কন্যা মধ্যরাতে ইন্টারনেট সার্ফিং করে সময় কাটায় না? বয়ঃসন্ধির কোনও সমস্যায় পড়েছে কিনা, বুঝতে চেষ্টা করুন। ইন্টারনেটের যুগ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সচ্ছল কিশোর-কিশোরী ও যুবক-যুবতীদের সামনে এক নতুন সমস্যার পাহাড় খাড়া করেছে। পর্ণোছবির অমোঘ আকর্ষণ দ্রুত সমস্ত মনোযোগ টেনে নিচ্ছে।

আপনার চেঁচামেচি, বকাবকি ওর সংকোচের আড়াল ভেঙে দিতে পারে। খোলামেলা এবং আরও বেশি করে যৌনাচারের দিকে ঠেলে দিতে পারে।

মেয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব বাড়ান। ওর বন্ধুদের সঙ্গে পরিচিত হতে আমন্ত্রণ জানান। ওর সঙ্গে যৌনশিক্ষা নিয়ে বন্ধুর মতো আলোচনা করুন। রাতে পড়াশুনার চাপের সঙ্গী হওয়ার নাম করে। যতক্ষণ জেগে থাকবে ততক্ষণ সময়ে সময়ে হরলিক্স, ফ্রুটজুস ইত্যাদি এগিয়ে দিন। পড়ার বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে প্রয়োজনে ওর বই পড়ুন। রাতে ওর ঘরে আলাদা খাটে বা বড় খাট হলে একসঙ্গে শোয়া অভ্যেস করুন। আশা করি সমস্যা মিটবে। না মিটলে একটুও দ্বিধা না করে মনোবিদের সাহায্য নিন। ও যে সব মনের কথা আপনাকে বলতে পারছে না, তা বলবে মনোবিদের কাছে। যদি ভেবে থাকেন—‘আমি ওর সবচেয়ে বড় বন্ধু, আমাকে সব বলে’— তা’হলে ভুল করবেন।

দুইঃ বাড়ি কিশোরী কাজের মেয়ে থাকে? ছেলে কিশোর বা যুবক? একটু সতর্কতার প্রয়োজন আছে। যদি উল্টোটা হয়—কিশোর বা যুবক কাজের ছেলে থাকে বাড়িতে, আর মেয়ে কিশোরী বা যুবতী, তাতেও একটু সতর্ক থাকার প্রয়োজন রয়েছে। কাজ করতে এসে আপনার ছেলে বা মেয়ের দ্বারা যৌননিগ্রহের শিকার হচ্ছে কিনা খবর রাখেন?

আমার এমন রুচিহীন, নোংরা কথায় ছিঃ ছিঃ করছেন? পশ্চিমবঙ্গের একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা একাধিক যৌন নির্যাতিতদের মধ্যে আত্মপ্রত্যয় গড়ে তোলায় ব্রতী। তাদের হিসেব মতো পশ্চিমবঙ্গের শিশু শ্রমিকদের বড় অংশই যৌননিগ্রহের শিকার। বাড়ির কাজের মেয়ের বেলায় গৃহকর্তা থেকে গুণধর ছেলেও নিগ্রহকারী হতে পারে। বাড়িতে পুরুষ শিশু শ্রমিক থাকলে সে বাড়ির মেয়ে থেকে গৃহকর্ত্রীর কাছে যৌননিগ্রহে নাস্তানাবুদ হতে পারে।

এটা সমাজের পূর্ণ চিত্র নয়। তবে খণ্ডিত চিত্র অবশ্যই। সুতরাং সন্তানের ভবিষ্যতের স্বার্থে চোখ-কান খুলে রাখার অবশ্যই প্রয়োজন আছে।

আমাদের মনে রাখতে হবে—এই সমাজে অজাচার ছিল, আছে। নিজে চোখ-কান খুলে রাখলেই সমাজের অজাচার বন্ধ হবে না। সমাজকে সুন্দর করার জন্যেই সমাজের অসুখগুলোকে ঠিকঠাক চিনে নেওয়া প্রয়োজন রয়েছে। এই অসুখ ঠিক করতে আসুন না কেন-বেআইনি শিশু শ্রমিক রাখাটা আমরা বন্ধ করি। অথবা শিশু শ্রমিককে নিজের পালিত পুত্র-কন্যার মতো রাখি। রাখতে পারবেন?

আপনাদের ভালোবাসা, আন্তরিকতা ও বন্ধুত্ব-ই পারে সন্তানের মধ্যে কৃতকর্মের জন্য অপরাধবোধ তৈরি করতে। অপরাধবোধই চরিত্র সংশোধনের প্রথম ও প্রধান ধাপ।

তিনঃ ছেলেটি টুয়েলভের ছাত্র। দিদি বি এস সি পড়ছে ফিজিক্সে অনার্স নিয়ে। মেয়েকে নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। যত সমস্যা ছেলেকে নিয়ে। দিদি, মা-বাবা, সবার সঙ্গেই কথায় কথায় ঝগড়া করে। অত্যন্ত খারাপ ব্যবহার করে। প্রায়-ই এটা-ওটা খাবার বানিয়ে দেওয়ার বায়না ধরে। বানিয়ে না দিলে কুরুক্ষেত্র বাঁধিয়ে দেয়। রাত ১১টার পর পড়তে বসে। অনেক বেলা করে ঘুম থেকে ওঠে। ওর ঘর সব সময় এলোমেলো করে রাখে, নোংরা করে রাখে। নিজে তো পরিষ্কার করেই না। মা পরিষ্কার করতে চাইলে, ওর জিনিস-পত্তর এলো-মেলো হয়ে যাবে বলে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করে দেয় ৷

অদ্ভুত ব্যাপার হল, পাড়া-পড়শি বা আত্মীয়দের সঙ্গে এমন ভালো ব্যবহার করে যে, তাঁরা অত্যন্ত ভালো ছেলে বলে মনে করেন। ছেলে লেখা-পড়ায় ভাল। সে বিষয়ে অভিযোগ নেই। কিন্তু ওর অস্বাভাবিক আচরণের কোনও কারণ খুঁজে পান না বাবা-মা। ভুল না করলে, মা-বাবা মেয়ের প্রতি কিছু বেশি পক্ষপাতিত্ব দেখান। আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই ওর অবচেতন মন এমন ব্যবহার করতে প্ররোচিত করে।

ব্যবহারের মধ্য দিয়ে মা-বাবাকেই বোঝাতে হবে, যেন তাঁরা দু-জনের প্রতি সমান ব্যবহার করেন। মা-বাবার মাত্রাতীত পক্ষপাতিত্বের জন্য ভাই ব্যথিত হচ্ছে, তাই ওর ব্যবহারে এই অস্বাভাবিকতা—এটা কোনও দিন দিদি বুঝে ফেললে দিদি’র একটা মানসিক সমস্যা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মা-বাবার পক্ষপাতিত্ব মেয়েটির মধ্যে একটা অপরাধ বোধ তৈরি করতে পারে। অতএব আর দেরি না করে মা-বাবার সচেতন হওয়া উচিত।

চারঃ মা বাবা দু’জনেই অধ্যাপক। মা ইংরেজির, বাবা কেমিস্ট্রির। এক মাত্র ছেলে পড়ে ক্লাশ টেনে। দু’জনেই আন্তরিকভাবে চান, ছেলে পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করুক। মা-বাবা দু’জনেই ছেলেকে পড়ান। এ ছাড়াও প্রাইভেট টিউটর আছে। এত করেও ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে মা-বাবার দুশ্চিন্তার শেষ নেই। ছেলের লেখাপড়ায় একটুও মন নেই। ক্রিকেট খেলা, লিটিল ম্যাগাজিনের কভার আঁকা, ছবি তোলা, গল্প লেখা, গল্পের বই পড়া—এসবেই ওর আগ্রহ বেশি। পড়াশুনাতেই বড় আগ্রহের অভাব রয়েছে। মা-বাবা যত-ই বোঝাই,–এই বয়সে পড়াশুনাই ধ্যান-জ্ঞান করতে হয়। এসব হিজিবিজি কাজে সময় নষ্ট করিস না। পস্তাবি। কে শোনে কার কথা। এক কান দিয়ে শুনে, আর এক কান দিয়ে বের করে দেয়। প্রচণ্ড জেদি হয়ে উঠছে। এত করেও লেখাপড়ায় মাঝারি মানের উপর উঠতে পারেনি।

একটি অনুরোধ, ছেলের ভালোলাগা বিষয়গুলোর প্রতি আকর্ষণকে জোর করে বন্ধ করবেন না। আমাদের দেশের সমাজব্যবস্থায় প্রচলিত শিক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু প্রচলিত শিক্ষার সঙ্গে প্রতিভার সম্পর্ক অনেক সময়-ই থাকে না। খেলোয়াড় একনাথ সোলকার থেকে তেন্ডুলকর, পেলে থেকে মারাদোনা, লতা মঙ্গেশকর থেকে আশা ভোঁসলে, রামকিঙ্কর বেইজ থেকে প্রকাশ কর্মকার, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে সমরেশ বসু, এঁরা প্রত্যেকেই কিংবদন্তী মানুষ। প্রতিভার শীর্ষে স্থান করে নিয়েছিলেন প্রথাগত শিক্ষাকে একটুও পাত্তা না দিয়েই। তাঁদের জ্ঞান, প্রজ্ঞা অর্জন করেছিলেন শেখার (learning)-এর মধ্য দিয়ে। এমন উদাহরণ ছড়িয়ে রয়েছে হাজারে হাজারে, লাখে লাখে।

ছোটবেলা থেকেই পড়াশুনার জন্য সন্তানের উপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করবেন না। প্রতিবেশী ও আত্মীয়ের সন্তানদের সঙ্গে পড়াশুনার প্রতিযোগিতায় নামিয়ে তার স্বাভাবিক ভালোবাসার সময়গুলোকে কেড়ে নেবেন না। যে কোনও কাজে পটু হয়ে উঠলে জীবনে প্রতিষ্ঠার পথ অবশ্যই পাওয়া যায়।

পাঁচঃ একটি ছেলে কলেজের পড়া শেষ করে এখন ইউনিভার্সিটির ছাত্র। মালদায় গেছে যুক্তিবাদী সমিতির কনফারেন্সে প্রতিনিধি হিসেবে। ভালো ছাত্র, লেখার হাত ভালো। কিন্তু খারাপ যেটা, সেটে হল ব্যক্তিত্ব নড়বড়ে। কখন দাঁত মাজবে, সাবান কোথায় রাখবে, শ্যাম্পু করবে কিনা, এখন খেতে বসবে কিনা—সবকিছু নিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করবে! সব কিছুতেই শিশুসুলভ পরনির্ভরতা। ছেলেটি নাকি আবার প্রেম করে! চিঠিতে-চিঠিতে প্ৰেম ।

কথা বলে জেনেছি স্বচ্ছল পরিবারের ছেলেটিকে মা-বাবা মানুষ করেছেন একটু ‘বেশি যত্নে’। কখন গলায় মাফলার জড়াবে, কখন পড়তে বসবে, কখন খাবে, সব মা বাবার রুটিন মাফিক। বন্ধু নেই। কলেজ থেকে ফিরতে হবে ক্লাশ শেষের আধ ঘণ্টার মধ্যে। বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে আড্ডা মেরে বা খেলে সময় নষ্ট না করে পড়তে বসতে হবে। পড়াশুনার বাইরে ইচ্ছে মতো বই পড়া চলবে না।

এক টিচারের কাছ থেকে আমার লেখা পড়ে যুক্তিবাদের প্রতি আকর্ষিত হয়। টিচারের প্রযত্নে চিঠি দিয়ে আমাদের সমিতির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে । কনফারেন্সে এসেছে ‘তাপ্পি’ মেরে ।

ছোটবেলা থেকে মা-বাবা যে কড়া শাসনের মধ্যে রেখেছেন, তা ওর ব্যক্তিত্বকে তলানিতে পৌঁছে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। মা-বাবার উপর পরিপূর্ণভাবে নির্ভর করতে করতে নিজে ভাবার, নিজে করার, নিজে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা হারিয়েছে। কর্মজীবনে এবং বিবাহিত জীবনে এর ফল ভোগ করতে হবে-ই ছেলেটিকে। বান্ধবী স্বাভাবিক ব্যক্তিত্বের হলে ছেলেটির শিশুসুলভ আচরণ দেখলে তার প্রেম কর্পূরের মতো-ই উবে যেতে বাধ্য। কতদিন মেয়েটি মানসিকভাবে পিষ্ট হবে?

মেয়েটির শুভার্থীরা এমনকী কোনও কোনও মনোবিদ্ হয়তো বিয়ের পরের সমস্যা মেটাতে কিছু উপদেশ দেবেন। বলবেন, ‘স্বামীর’ স্বভাবের ভালো গুণগুলোকে ভালভাবে গ্রহণ কর। দেখবে ধীরে ধীরে স্বামীর ভালোত্বের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছ। ঠাণ্ডা মাথায় ধৈর্য ও বুদ্ধি দিয়ে স্বামীকে মানসিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলো।

বলা যতটা সোজা, করা ততটাই কঠিন। দু-চার বছরে ধৈর্যের বাঁধ ভাঙবেই। তার চেয়ে অনেক সোজা ছেলেটিকে এখনই কোনও মনোবিদের কাছে কাউন্সেলিং-এর জন্য পাঠানো। কাউন্সেলিং কোনও ম্যাজিক নয়। এর জন্য পরিবারের প্রত্যেকেরই সহযোগিতা করতে হবে কাউন্সেলারের সঙ্গে। তাঁর কথা মতো ছেলেটির সঙ্গে ‘বিহেভ’ করতে হবে। সহযোগিতা করতে হবে ছেলেটিকেও । স্বাভাবিক করে তুলতে এক বছর বা তার চেয়েও বেশি সময় লাগাতে-ই পারে।

ছয়ঃ দুটি মেয়ে একটি নামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে থেকে বি এ পড়ছে। হোস্টেলের অনেকেই শুভকামী। সমকামিতার পাশাপাশি ছেলেদের সঙ্গেও শারীরিক সম্পর্ক করে সুযোগ পেলে। কিন্তু মেয়ে দু’টি সারাজীবন বন্ধু হয়ে ‘লিভ টুগেদার’ করতে চায়। এনিয়ে সমস্যা হবে কি? আমার কাছে এই ছিল ওদের জিজ্ঞাসা।

যুক্তিবাদী সমিতির স্টীডি ক্লাশে মেয়ে দুটির সমনে সমস্যাটিকে নিয়ে আলোচনা করেছি। কথা প্রসঙ্গে জানিয়েছে, বছর কয়েক আগে ‘ই টিভি’তে একটি বিতর্ক অনুষ্ঠানে অংশ নিই। বিতর্কের বিষয় ছিল ‘সমকামিতা সহজাত প্রবৃত্তি নাকি মানসিক রোগ’। আমি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও বিদেশী মনোবিজ্ঞানীদের মতামত এই প্রসঙ্গে তুলে ধরি। এবং বলি, ইন্টারনেট সার্ফিং করে বিষয়টি নিয়ে যে সব তথ্য ও তত্ত্ব পাবেন, তাতে দেখতে পাবেন ‘সমকামিতা’ একটা অস্বাভাবিকমানসিক আচরণ। এটা কোনওভাবেই স্বাভাবিক প্রবৃত্তি নয় ।

সেনা ব্যারাকে, পুলিশ ব্যারাকে, জেলে, ছাত্র-ছাত্রীদের অনেক হোস্টেলে সমকামিতার প্রচলন আছে। ‘যৌনতা’ স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। এইসব জায়গাগুলোতে পর্ণোবই, ব্লু-সিডি দেখার চল রয়েছে। স্থূল যৌনতা দেখতে দেখতে বিপরীত লিঙ্গের অভাবে সমকামিতার শিকার হয় ওরা।

এইসব সেনা-পুলিশ-ছাত্র-ছাত্রীরাই আবার বিয়ের পর বিপরীতকামী হয়ে পড়ে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংস্কৃতিগতভাবে উভকামী গোষ্ঠী তৈরি হয়। গো-বলয়ে ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে কোনও কোনও পুরুষ বউ থাকা সত্ত্বেও পুরুষকে বা যৌনসঙ্গী হিসেবে অর্থের বিনিময়ে রেখে দেয়। এটা সংস্কৃতিগতভাবে গর্বের প্রতীক; যেমন, ‘বাবু কালচারের যুগ’-এ বাঙালি ধনী সম্প্রদায় রক্ষিতা পুষতো।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় ব্যারাক বা হোস্টেল জীবনের সাময়িক অভ্যাস কাটিয়ে বিবাহিত জীবনে এরা স্বাভাবিক যৌন আচরণ করে। ব্যতিক্রমীর সংখা শতকরা হিসাবে আসে না।

কোনও কোনও পুরুষ পুরুষত্বহীন হয় শুধুমাত্র ভুল ধারণা পোষণ করে। তারা বিভিন্ন যোগের ও ব্রহ্মচর্যের বইপত্তর পড়ে জেনেছে—বীর্য মানে তেজ। বীর্যক্ষয় অর্থাৎ তেজের ও জীবনীশক্তির ক্ষয়। স্রেফ এমন একটা ভুল ধারণা মাথায় পুষে রাখার ফলে বিয়ের পর স্বাভাবিক যৌনজীবনে প্রবেশ করতে পারে না। মানসিক কারণে পুরুষত্বহীনতায় ভোগে।

একইভাবে ছোট্ট বেলায় কোনও ছেলেকে যদি পরিবারের লোকেরা প্রায়শই মেয়ে সাজিয়ে ওর রূপের প্রশংসা করতে থাকে, তবে তার মধ্যে এক নারী-মানসিকতা গড়ে উঠতে থাকে। পরবর্তীকালে এদের-ই কেউ কেউ শরীরে পুরুষ হলেও মনের দিক থেকে নারীতে রূপান্তরিত হয়। এরা পুরুষের সঙ্গে যৌনমিলনে উৎসাহী হয়।

শারীরিকভাবে আকর্ষণহীন নারীদের কেউ কেউ সমকামী হয়ে ওঠে। ভালোবাসার পুরুষ এলে সমকামী জীবন থেকে বেরিয়ে আসে অনেকে-ই। তবে দীর্ঘকাল ধরে সমকামিতায় অভ্যস্ত হলে অনেক সময় তাতেই পুরোপুরি অভ্যস্ত ও নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এমন অবস্থায় বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গে যৌনজীবনের আকর্ষণ তাদের শুরুই হয় না।

সমকামিতা সহজাত প্রবৃত্তি নয়-একথা বলার অর্থ এই নয় যে, সমকামিতা মাত্রেই সাংঘাতিক খারাপ, সমকামী বহুগামী হলে অবশ্যই খারাপ। উচ্ছৃঙ্খল যৌনজীবনের জন্যই খারাপ। ভালোবাসাহীন দেহ মিলনের জন্যই খারাপ। সমকামী একগামী, ভালোবাসা গভীর হলে খারাপ বলি কী করে? দুটি নারি বা দুটি পুরুষ একটা ফ্ল্যাট ভাড়া সারাটা জীবন কাটালে তা কখনই বেআইনি বলে গণ্য হবে না। তাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক প্রকাশ্যে না আনলেই হল। কারণ সমকামিতা এদেশে অপরাধ। একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের দৈহিক মিলন কোনও অপরাধ নয়। কিন্তু দু-জন নারী বা দু’জন পুরুষের দৈহিক মিলন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এটাকে মাথায় রাখতে হবে।

সাতঃ মেয়েটি স্বচ্ছল পরিবারের একমাত্র সন্তান। আদরে মানুষ। প্রগতিশীল পরিবার। সহপাঠী একটি ছেলের সঙ্গে স্টেডি বন্ধুত্ব। সেই সূত্রে দুই পরিবারেও সখ্যতা। ক্লাশ এইট থেকে গড়ে ওঠা সম্পর্ক ভাঙলো টুয়েলভে। এক বুদ্ধিহীন সুন্দরীকে নিয়ে মেতে উঠেছে ছেলেটি।

মেয়ের সঙ্গে সঙ্গে সমব্যথী বাবাও মানসিকভাবে ভেঙে পড়লেন। মা কিন্তু একটুও ভেঙে পড়েননি। তিনিই কাউন্সেলিং করলেন। কয়েক দিনের মধ্যে মেয়ের মাথায় ঢোকালেন (এক) যে ছেলে সুন্দরী দেখলেই বন্ধুত্ব ছাড়তে পারে, সে আরও বেশি সুন্দরী পেলে একেও ছাড়বে। (দুই) এমন তরলমতি ছেলের সঙ্গে জীবনটা যে আরও বেশি রকম জড়িয়ে যায়নি, এটা ভালো হয়েছে। (তিন) বিশেষ একজনকে পেলেই জীবনে সুখী হবো, এ ধারণাটাই ভুল। দেখতে হবে যাকে চাইছি, সেও আমার চাওয়ার উপযুক্ত কিনা? (চার) অনেকের ভালোবাসা ও অনেক সম্পর্কের সঙ্গে একটা জীবন জড়িয়ে থাকে। শুধুমাত্র একটা ভালোবাসা বা সম্পর্ক ভাঙার উপর জীবনের সার্থকতা আদৌ নির্ভর করে না। (পাঁচ) অপাত্রে ভালোবাসা দিলে সেটা ভুল। কিন্তু দারুণ দুঃখ পাওয়ার মতো কোনও ব্যাপার নয়।

মায়ের কাউন্সেলিংয়ে অসাধারণ কাজ হয়েছে। পরিবর্তে মেয়ের তালে তাল রাখতে আ…হাঃ… উঃ… হু… করলে মেয়ের মস্তিষ্ক স্নায়ুকোষের ভারসাম্য হারাতে বেশি দেরি হতো না ।

আটঃ রাণা আমাদের সমিতির ছেলে। তখন যাদবপুরে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে। ফার্স ইয়ারের ফাইনাল পরীক্ষার দিন সাতেক আগে মা মারা গেলেন। মা ছিলেন রাণির সবচেয়ে প্রিয় মানুষ। খবর পেয়েই দেশের বাড়ি অন্ডাল গেল। তিন দিনের মাথায় ওর মামাতো ভাই ফোনে খবর দিল, রাণার মাথায় গণ্ডগোল হয়েছে। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকছে। চোখ থেকে জল পড়ছে যখন তখন। পরীক্ষার পড়া সব ভুলে গেছে। পরীক্ষায় বসবে না বলছে। এও জানলাম, পাড়াপড়শি, আত্মীয়-স্বজনরা অনবরত আসছেন, আর রাণাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন।

বললাম, কড়া হাতে লোক আসা বন্ধ কর। সহানুভূতি তো নয়-ই। এই সময় সহানুভূতি রাণাকে আরও দুর্বল করে দিচ্ছে। দুঃখের আবেগকে উসকে দিচ্ছে। এই উৎপাত, অত্যাচার এক্ষুনি বন্ধ না করলে রাণা গেল। কালই ওকে আমার বাড়িতে নিয়ে চলে এসো।

রাণা এলো সকালেই। আমার সঙ্গে আড্ডা দিল। দুপুরে ক্রিকেট খেলা দেখলো । বিকেলে মহাজাতি সদনে (সরকারী হল) জ্যোতিষ সম্মেলন বানচাল করায়, ভাণ্ডাফোর করায়, জনা তিরিশেকের একজন হিসেবে অংশ নিল। কোয়াইট ওকে। হোস্টেলে ফিরে গেল। তারপর থেকে নো প্রবলেম ।

নয়ঃ আপনার আংটিটা খুলে রেখে ছিলেন বাথরুমে। স্নানের পর পরতে ভুলে গিয়েছিলেন। যখন মনে পড়লো, বাথরুমে গিয়ে দেখলেন, আংটিটা ভ্যানিস, কী হলো? কাজের মেয়েটা… ? ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে মাঝে-মধ্যে টাকা কমছে। ঘরেতে-ই কি চোর পুষছি? ভাবলেন আপনি। ভাবনাটা স্বাভাবিক !

কিন্তু এখন যা হচ্ছে, তাতে তো চোখ কপালে ওঠার যোগাড়। দামি দামি এবং দুষ্প্রাপ্য বই মাঝে মধ্যে আলমারি থেকে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। বই চুরি, কাজের মেয়েটির কাজ হতে পারে না। বাইরের এত লোক ফ্ল্যাটে আসেন, তাঁদের মধ্যে কেউ? গ্রন্থপ্রেমিক তো কম আসেন না। হতেই পারে তাদের মধ্যে কেউ…

সন্দেহের বাইরে রেখেছেন আপনার একমাত্র ছেলেকে। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। সেকেন্ড ইয়ার। কেন ওকে সন্দেহের ঊর্ধ্বে রেখেছেন? গভীর স্নেহ ও বিশ্বাস অটুট তাই?

ছেলে কি প্রায়-ই ঝিমিয়ে থাকে। অসময়ে অসময়ে বাইরে বেরিয়ে যায় ? শরীর ও পোশাক-পরিচ্ছদের প্রতি যে যত্ন আগে নিত, এখন কি তা নেয় না? ঠিকমতো ক্লাশ করছে কিনা জানেন? পড়াশুনায় যে প্রচণ্ড আগ্রহ এক বছর আগেও ছিল, এখন কি তাতে ভাটা পড়েছে?

এইসব প্রশ্নের উত্তর আপনাকেই খুঁজতে হবে। কারণ ছেলে আপনার। ওর ভালোমন্দ আপনাকেই দেখতে হবে। খোঁজ নিলেই হয়তো আবিষ্কার করবেন, বেশ কয়েকমাস ধরে আপনার ছেলে ড্রাগের নেশা ধরেছে। ড্রাগের টাকা যোগাতে বাড়িতে চুরি করতে শুরু করেছে। বাড়ির চুরি বন্ধ করলে বাইরে চুরি করবে, ছিনতাই করবে। কারণ প্রতিদিন ওর ড্রাগ চাই-ই।

সন্তানকে বিশ্বাস করাই সম্পর্কের ভিত। কিন্তু একে অপরের বিষয়ে জানাটাও জরুরি। ‘সন্তানের ব্যক্তিগত জীবনে নাক গলাই না’—এটা আপনার চোখে প্রগতির লক্ষণ মনে হতেই পারে। কিন্তু এই মানসিকতা সংসারের ভারসাম্য নষ্ট করলে দোষী হবেন আপনি-ই, আপনার স্বার্থপরতা।

সন্তানের প্রয়োজনীয় সব চাহিদা মেটাবার মতো অর্থ ব্যয় করলেই কিন্তু কর্তব্য পালন হয় না। সন্তানের ভালোবাসা পাওয়া যায় না। সন্তানকে সময় দিতে হয়। তাকে বোঝার চেষ্টা করতে হয়। তার বন্ধু হতে হয়। তার আদর্শ হতে হয় ।

অনেক সময় মা-বাবার উচ্ছৃঙ্খলতা, দুর্নীতি, চরিত্রহীনতাতে আঘাত পেয়ে আঘাত ভুলতেও তারা ড্রাগ ধরে। মা-বাবাকেও তাই আদর্শ চরিত্র, আদর্শ মা-বাবা হয়ে উঠতে হবে। নতুবা দেখা যাবে, নার্সিংহোমে রেখে সন্তানকে একবার করে সুস্থ করে তুলছেন, আবার সে নেশা ধরছে। কারণ তার মানসিক আঘাত পাওয়ার অবস্থাটা থেকেই গেছে। তাই আঘাত ভুলতে বা প্রতিশোধ নিতে নিজেকে সে আবার নেশায় ডুবিয়ে রাখছে।

দশঃ কাঁকুরগাছির একতলার বিশাল ফ্ল্যাটে থাকেন অচিন্ত্য। পরিবারে আর আছেন স্ত্রী নয়না ও ছেলে রুদ্র। দোতলার ফ্ল্যাটে থাকেন অচিন্ত্যর দিদি মল্লিকা, তাঁর বর শরৎ ও ছেলে অর্ঘ, মেয়ে নন্দিনী।

অচিন্ত্য ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়র, বি. ই। পেশায় খুব ব্যস্ত। নয়নাও তার ইমপোর্ট- এক্সপোর্ট ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত। ছেলেকে ভালো স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছেন। একাধিক টিচারের কাছে টিউশন নিতে যায় রুদ্র। মাধ্যমিকে ফেল করলো রুদ্র। মা-বাবার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। সম্মানে বিরাট আঘাত লাগলো। ছেলের উপর ক্ষোভ উগরে দিতে লাগলেন দু-জনেই। ক্ষোভের আরও কারণ— রুদ্রর পিসতুতো দাদা অর্ঘ পুনে থেকে বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কমপ্লিট করে বম্বেতে কাজ করছে। সাজান ফ্ল্যাট-গাড়ি-সারভেন্ট কোম্পানি থেকে দিয়েছে। কত-ই বা বয়স? ২৪ বছর হবে। পিসতুতো বোন নন্দিনী বম্বেতে। অ্যাডভারটাইজিং- ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পোস্টগ্রাজুয়েশন করছে। ঝক্‌ঝকে মেয়ে। মল্লিকা ও শরৎ দু-জনেই মোটামুটি বড় চাকুরে। চূড়ান্ত ব্যস্ততার মধ্যে কাটে সকাল থেকে রাত। তারপরও ওপর তলার ওদের ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে তুলনা করতে গেলে লজ্জায় মাথা কাটা যায় রুদ্রর মা-বাবার। বুঝতে পারেন না রুদ্রর গোলমালটা কোথায় ৷

একজন শিশুর বেড়ে ওঠার সময় থেকেই মা-বাবার উচিত তার বন্ধু হয়ে ওঠা। তাকে ‘বড়’ হয়ে ওঠায় সাহায্য করা। তার সুবিধে অসুবিধের দিকে লক্ষ্য রাখা। কখন খাবার দিতে হবে, টিফিনে কী দিতে হবে, টিচার কেমন পড়াচ্ছেন ? হোমওয়ার্কে সাহায্য করা, তাদের খেলা-ধূলায় উৎসাহ দেওয়া, সন্তানের সঙ্গীদের সঙ্গে পরিচিত হওয়া, তাদের মাঝে-মধ্যে আমন্ত্রণ করে খাওয়াতে ছোট-খাট পার্টি দেওয়া—এসেবরই প্রয়োজন আছে বইকী। ছেলে-মেয়েদের বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বড় হওয়ার জন্য প্রতিটি দিন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন মল্লিকা। বড় পদে কাজের দায়িত্ব এবং অনেক সামাজিক দায়িত্ব সামলেও সন্তানদের প্রতি তাঁর ‘অ্যাটিটিউড’ বা মনোভাব তাঁর সন্তানদের এই অবস্থায় পৌঁছোবার পক্ষে অবশ্যই একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে।

ঠিক একই সময়ে রুদ্র তাঁর জীবনে একটা বিপরীত ব্যবহার মা-বাবার কাছ থেকে পেয়েছে। মা-বাবার নিস্পৃহতা এবং একই সঙ্গে অর্ঘ ও নন্দিনীর প্রতি তাদের মায়ের অর্থাৎ পিসির অফুরন্ত ভালোবাসা রুদ্র দেখে আসছে। এগুলো তাকে ব্যথিত করছে। সে লেখাপড়ায় খারাপ হয়ে বখে গিয়ে মা-বাবার উপর প্রতিশোধ তুলছে। মা-বাবা কোনও দিনই মন উজাড় করে ছেলের সুখ-দুঃখের সাথী হয়ে উঠতে পারেনি। শুধু রেজাল্ট কেন ভালো হল না—বকলেই ভালো হবে? অর্ঘ-নন্দিনীর সঙ্গে তুলনা করে অপমান করার চেষ্টা করলে হবে? মল্লিকার মতো ‘নারসিং’ না করেই মল্লিকার মতো ফল চাইলে হবে?

এখন বড় দেরি হয়ে গেছে। সমস্যাটা গুরুতর আকার নিয়েছে। মনোবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়াটা খুবই জরুরি।

 

সমস্যা যখন বড়দের

একঃ শুভেন্দু আর সুলগ্না কলেজ জীবন থেকেই ছিল ‘মেড ফর ইচ আদার’। দু’জনেই পড়াশুনায় ভালো। দু’জনের পরিবারই অতি স্বচ্ছল। দুজনই মাস্টার ডিগ্রি করেছে বিজনেস ম্যানেজমেন্ট নিয়ে। দুজনেই মুম্বাইয়ের দুটি কোম্পানিতে যোগ দিয়েছে। থাকতো শুভেন্দুর কোম্পানির ফ্ল্যাটে। একসঙ্গে থাকতে থাকতে শুভেন্দু আবিষ্কার করলো, সুলগ্না বড় বেশি রকমভাবে শুভেন্দুর বিষয়ে যত্নবান হয়ে পড়েছে। কটা সিগারেট কখন কখন খাবে, ক’পেগ হুইস্কি পান করবে, কবে চুল কাটবে, বাঁ দিক ফিরে না শুয়ে যেন ডান দিক ফিরে শোয়া অভ্যাস করে ইত্যাদি । ফলে সম্পর্কটা আর টানা গেল না ।

দুইঃ সঞ্জয়ের সঙ্গে সুজাতার গভীর বন্ধুত্ব ১৪ বছরের। কিন্তু তারপরেও কোনও একটা ঘটনা নিয়ে দু’জনের সম্পর্কটা খারাপ হয়ে গেছে। তাঁদের সম্পর্কের তিক্ততা দুজনেই কারও কাছে প্রকাশ করেন না। কেন করেন না? এক সময়ের প্রিয়তম মানুষ ছিলেন বলে? ভবিষ্যতে সম্পর্কটা জোড়া লাগতে পারে ভেবে? নাকি শুধুই রুচির ব্যাপার?

সুজাতা মাঝে মধ্যে মেজাজ রাখতে পারেন না। সঞ্জয়ের মুখোমুখি হলে মাঝে মধ্যে বিস্ফোরিত হন। সঞ্জয় চুপ থাকেন, ‘একজন গরম থাকলে অপর জন ঠান্ডা থাকা ভালো ভেবে।

সম্পর্ক আর আগের মতো হবে না—ধরে নিয়েও তিক্ততা বাড়াতে চান না সঞ্জয়। রাগ উগরে দেওয়ার পর কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক দিন নীরবতা। তারপর সুজাতা-ই বলেন, পুরোন প্রসঙ্গ টেনে আর কষ্ট দেবো না তোমাকে

যাক, এইটুকু তো বলেছে। এতেই সঞ্জয়ের মন খারাপ একটু একটু করে স্বাভাবিক হতে থাকে।

সঞ্জয়-সুজাতা তো আপনি আমিও হতে পারি। আমাদের সম্পর্কে তিক্ততা নেমে এলে এমনভাবে বিষয়টাকে গ্রহণ করলে সুন্দর হয় না কি?

তিনঃ ঠাকুরপুকুরের এক গৃহবধূ। বয়স ৩০। বরের বয়স প্রায় চল্লিশ। বিয়ে হয়েছে বছর আটেক। চার বছর আগে একটি মৃত সন্তানের জন্ম দেন। তারপর থেকে মনে হচ্ছে, মৃত সন্তানের জন্ম দেওয়ার জন্য হাজবেন্ড একটু একটু দূরে সরে যাচ্ছেন। সেই সময় তাঁর পাশে বন্ধুর মতো এসে দাঁড়ায় ৫ বছরের ছোট দেওর। ধীরে ধীরে দু’জনের মধ্যে একটা শারীরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরিবারে এই তিনজনের বাইরে আর আছেন শাশুড়ি। বর ও শাশুড়ি দু’জনেই বউদি দেওরের শারীরিক সম্পর্কের কথা জানেন। গৃহবধূটি জানেন, পরিবারের কারও কাছেই বিষয়টি গোপন নেই। এই চিন্তা বধূটিকে অপরাধ বোধে তাড়িত করে ফিরছে। বর ও দেওর দুজনের সঙ্গেই শারীরিক সম্পর্ক রাখার কারণে নিজের উপর ঘেন্না হচ্ছে ।

একজনের সঙ্গে মানসিক দূরত্ব বাড়লে সেই ফাঁকা জায়গা পুরণ করতে আর এক জনের প্রবেশ ঘটার মধ্যে অনৈতিক কোনও ব্যাপার নেই। কিন্তু একই সঙ্গে দেওর ও বরকে বিছানায় তোলাটা অবশ্যই অনৈতিক। গৃহবধূটির উচিত বর ও দেওরকে নিয়ে একসঙ্গে জটিল বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসা। যদি বউটি নিশ্চিত হন, মানসিক শূন্যতার সময় দুর্বল মুহূর্তে কিছু ঘটে গেছে; সেই ঘটনাকে আর টানতে চান না—সে কথাও দু’জনকেই স্পষ্ট করে জানিয়ে দিন। তারপর পুরনো স্মৃতি মন থেকে ঝেড়ে ফেলে দিন। সমাজসেবামূলক কাজে তিনি নিজেকে যুক্ত করুন। বন্ধু ও আত্মীয়দের সঙ্গে মেলামেশা বাড়িয়ে দিন। প্রয়োজনে দত্তক নিন। তাকে নিয়ে ব্যস্ত থাকুন।

আলোচনার সমাপ্তি এমন হতে পারে, চাকুরে দেওর আপনাকে বিয়ে করতে রাজি। বরকে ডিভোর্স দিয়ে দেওরকে বিয়ে করুন। একটু সাহসী হলে দেখবেন, নতুন জীবনে কোনও সমস্যা নেই। নতুন জায়গায় ঘর ভাড়া নিন। পুরনো স্মৃতি ঝেড়ে ফেলে নতুন জীবনযাপন করুন। বিয়েতে বন্ধু-আত্মীয়দের আমন্ত্রণ করুন। যাঁরা সম্পর্কটাকে চাটনি না করে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিচ্ছেন, তাঁদের সঙ্গে ভবিষ্যতে যোগাযোগ রাখতে পারেন।

দুজনের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক বজায় রাখলে অপরাধবোধ

আসতেই পারে। অথবা ভবিষ্যতে আপনি আরও

বড় রকমের বহুগামী জীবনে ঢুকে পড়তে

পারেন। যার আর এক নাম ‘ল্যাম্পট্য’।

চারঃ প্রথমার প্রিয়মানুষ অনুপ। প্রথমা ও অনুপ দু’জনেই জীবনে সফল, প্রতিষ্ঠিত, কাজপাগল। প্রথমা কাজের সঙ্গে বন্ধু-আত্মীয়, প্রবাসী ছেলে ও মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ, পাড়ার রিক্সাওয়ালা থেকে রান্নার মাসির বিপদ-আপদে ঝাঁপিয়ে পড়া, নিজের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিটি ছেলে-মেয়েদের সুবিধে অসুবিধে খোঁজখবর রাখা সব কিছুতেই নিখুঁত।

এরই পাশাপাশি ভালো সিনেমা, থিয়েটার, গান শোনা, আড্ডা দেওয়া ওর চাই-ই। এগুলো ওঁর বেঁচে থাকার শ্বাস-প্রশ্বাস! সবচেয়ে ভালোবাসায় মানুষ অনুপ মেধাবী, লড়াকু মেজাজ আর সারল্যের মিশ্রণে গড়া একটি চরিত্র। অনুপ সব সময় বড় বেশি কর্মব্যস্ত। হয় তো কর্মব্যস্ততা প্রথমার চেয়ে কম। হয়তো বা বেশি। কিন্তু অনুপের একটা ব্যবহার মাঝে মাঝেই প্রথমাকে ব্যথিত করে। অনুপ সব সময়ই নিজেকে এত বেশি রকম কাজেকর্মে ব্যস্ত রাখে যে, প্রত্যেক দিনই যে কিছুটা সময় নিজের জন্য একান্ত করে রাখতে হয়, ভুলে যান। প্রতিদিন দু’জনে যখন কথা হয়, তখন অনুপ কোনও নতুন পড়া আর্টিকেল নিয়ে বা নতুন পড়া বই নিয়ে আলোচনা করেন না, বিশ্লেষণে নামেন না। শুধু ‘আপনাতে আপনি বিভোর’ থাকতে ভালোবাসেন। অনুপের কাজের নেশা, শোষিত সমাজের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা, প্রজ্ঞা ও সাহসকে শ্রদ্ধা করেন বলেই বোধহয় প্রথমার প্রিয়জন অনুপ। কিন্তু গল্পহীন, কাজ পাগল এমন মানুষকে রস-কষহীন মানুষ মনে করে মাঝে মাঝে মানসিক দূরত্ব অনুভব করেন প্রথমা।

সুসম্পর্কের চাবিকাঠি হল ভিন্নতাকে মেনে নেওয়া। প্রত্যেকটা মানুষ ভিন্ন ভিন্ন রকমের। অনুপের আদর্শ যদি হয়ে থাকে, সমাজকে সুন্দর বানানোর পরিকল্পনাকে সার্থক করার চেষ্টা, তাতে তো বাধ সাধছেন না প্রথমা। বরং সে কাজে অনুপকে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেন যিনি, তিনি প্রথমা।

অনুপ প্রথমার সঙ্গ ভালোবাসেন। কথা বলতে ভালোবাসেন দিনে পাঁচ-সাতবার ফোন করবেনই। প্রথমার প্রতি সহমর্মিতা, সহযোগিতা, দায়িত্ব সবই স্বতঃস্ফূর্ততার সঙ্গে পালন করেন। একগামী অন্তরস্থল থেকে। স্বপ্নেও অন্য নারী আসেন না। তারপরও কেন যে….

অনুপ উচ্চ মেধার পাঠক। তাঁর কাছে লেখকদের নাম নয়, লেখার প্রতিটি তত্ত্ব অনেক বেশি গ্রহণযোগ্যতা পায়। ‘বিখ্যাত’ লেখকদের ভুলে ভরা অংশে লাল কালিতে ক্রস কেটে নোট লেখেন বইতে। এটাই তাঁর পড়ার স্টাইল। কিন্তু সেসব কেন প্রথমার সঙ্গে আলোচনায় উঠে আসে না? প্রথমার প্রতি মুগ্ধতায়? প্রথমা সঙ্গে থাকলে যে মেট্রো স্টেশনে নামবেন, নামেন তার দু-তিনটে স্টেশন পরে। বাস, স্টপেজ ছাড়ায়। যে ম্যাগাজিনটা প্রথমাকে দেবেন বলে নিয়ে বেরিয়েছেন, সেটা না দিয়েই ফেরেন। এসবই ঘটে ভুলের জন্য। অনুপ কখনই ভুলো নন। ভুল হয় প্রথমাকে দেখলে। প্রথমা সাদামাটা চেহারার মানুষ। শারীরিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হওয়ার মতো নন। প্রথমার ব্যক্তিত্ব, মেধা, সহমর্মিতা মুগ্ধ করেছে অনুপকে।

সেই যে শুরুতে যে কথা বলেছিলাম। আবারও সে কথাটাই মনে করিয়ে দিতে চাইছি—সুসম্পর্কের চাবিকাঠি হল চারিত্রিক বিভিন্নতাকে মেনে নেওয়া ।

প্রথমা কী তাঁর পছন্দের সিনেমা বা থিয়েটারে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন অনুপকে? অনুপ রাজি হওয়ার পরও সময়াভাবে তখনই যেতে না পারায় প্রথমা অবস্থার চাপে অন্যের সাথে তা দেখে ফেলেছেন? অনুপ তা জেনেছেন? এ নিয়ে নিশ্চয়ই কোনও তিক্ততা দেখা দেয়নি। কিন্তু অনুপের মন খারাপ কি হয়নি? আগেই দেখে ফেলেছেন, এটা না জানিয়ে আর একবার একসঙ্গে দু’জনে আর একবার দেখলে ভালো হতো। তারপর নিশ্চয়ই দুজনে সিনেমা বা থিয়েটারটি নিয়ে বিশ্লেষণে নামতে পারতেন। দেখতেন, আলোচনা-সমালোচনা তরতর করে এগোতো। অনুপের সঙ্গে সিনেমা দেখার কথা না রাখার পর অনুপকে যখন সিনেমাটি দেখতে বলেছেন, তিনি দেখেছেন? সম্ভবত তিনি দেখেননি। আপাত কঠিন-কঠোর মানুষটিরও একটা দুর্বল জায়গা আছে। বুঝতে হবে। অভিযোগের আঙুল তোলার আগে বিষয়টি নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণে নামার দরকার। নিজেকে কোথায় কতটা পাল্টাবো-তা বুঝতে হবে। অন্যকে পাল্টাতে চাপ দেওয়ার দরকার হয় না। বিহেভিয়ার পাল্টানো যায় সুন্দর বিহেভিয়ারের প্রতি আকর্ষণ তৈরি করে।

প্রথমা দেখতে সাদামাটা হলেও আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব মন টানে। কো-এড কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া ও এক্সিকিউটিভ পদে দীর্ঘদিন কাজ করার সুবাদে ও খুব সহজে মিশতে পারেন ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে। আবার দরকার মতো দূরত্বও রাখতে জানেন। স্বাভাবিকভাবেই ওর বন্ধুর সার্কলটা বেশ বড়। ও খুব পপুলার। ওর ইদানিং মাঝে মাঝে মনে হয় অনুপ যেন বড্ড বেশি নজরদারি করে, ও কখন কার সঙ্গে, কতটা কথা বলছে—তাই দেখে কে কি ভাবতে পারে ইত্যাদি নিয়ে। এটা প্রথমার কাছে অসহ্য ঠেকে। ওর মনে হয় সম্পর্ক ভালো থাকে যদি দুজনের মধ্যে বিশ্বাস, শ্রদ্ধা অটুট থাকে ।

প্রথম আলাপে যেমন খুঁতগুলো চোখে পড়ে না—তেমনি সম্পর্ক পুরনো হলে পরস্পরের ব্যবহারিক ত্রুটিগুলো বড্ড বেশি চোখে পড়ে। গুণগুলো গা-সওয়া হয়ে যায়। তাই সম্পর্ক পুরনো হলেও টিকিয়ে রাখতে হলে—প্রথমত, পরস্পরকে কিছুটা জায়গা ছেড়ে দিতে হয়; ছোটখাট ভুল ত্রুটি (যেমন জন্মদিন ভুলে যাওয়া) নিয়ে মাথা ঘামাতে হয় না। দ্বিতীয়ত, ভুল বা ব্যবহারিক ত্রুটিগুলোকে কিছুটা হিউমার বা ঠাট্টা দিয়ে উড়িয়ে দিতে জানতে হয়। এর জন্য চাই দু পক্ষের উদারতা।

নয়ত বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মধ্যবিত্ত সুলভ সন্দেহ প্রবণতা ও অতিমাত্রায় অধিকার সচেতনতা বা ‘পসেসিভনেস্’ এসে গেলে সম্পর্ক পুরো ভেঙে যাওয়াও বিচিত্র নয়। না ভাঙলেও যা পড়ে থাকে তা যান্ত্রিক, আবেগহীন অভ্যাস।

দু’জনের ছোটো-খাট দোষত্রুটি ভুল দু’জনকেই বুঝতে হবে, মেটাতে হবে, নতুবা ফাটল বাড়বে। সঙ্গে একে অন্যকে বুঝতে হবে। দেখতে হবে অন্যকে বুঝতে কোথাও ভুল হচ্ছে না তো? হতেই পারে। অভিমান আঁকড়ে থাকা ভালো নয়। আবার সেটাকে ‘সন্দেহ’ ভাবছেন, আদৌ কি তা সন্দেহ? নাকি বোঝার ভুল? সন্দেহ হলে বিশ্বাসের ভিত ভাঙবেই। ভাঙবে-ই বন্ধুত্ব।

পাঁচঃ স্ত্রী গৃহবধূ। চাকরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রাণপণে। পরিবার বলতে শিশুকন্যা ও বর। মেয়ে ক্লাশ থ্রিতে পড়ে। বিয়ের এক বছর পর থেকে বরের সঙ্গে কোনও শারীরিক সম্পর্ক নেই। বর জানিয়ে দিয়েছে—অমন ক্যাডবেরি বেবি মার্কা বউয়ের সঙ্গে ইয়ে’ করা অসম্ভব ।

অফিসে বিভিন্ন সময় খবর নিয়ে জেনেছেন, প্রায়ই অফিস যান না। অথচ টাকার সাচ্ছল্য উপছে পড়ছে। ঘুষ? সুযোগ আছে। কিন্তু কাজে না গেলে ঘুষ খাবে কী করে? দীর্ঘ অনুপস্থিতির কারণে চাকরি গেছে। তারপরও টাকার রমরমা একটুও কমেনি। জিমে যায়। দামি জামাকাপড় পরে। চোখের রোদ চশমা থেকে হাতঘড়িটা পর্যন্ত ইমপোর্টেড। বিদেশী প্রসাধনে অভ্যস্ত। ট্যাক্সি ছাড়া চড়ে না। দুপুর বারোটা নাগাদ বের হন। রাত করে ফেরেন। কী যে করছেন? কখন ফাঁসবেন ভেবে সব সময় উৎকণ্ঠায় থাকতে হয় স্ত্রীকে।

গৃহবধূ ও তাঁর পরিবার আমার পরিচিত। কিন্তু সমস্যার যে কথা আমাকে শুনতে হলো, তা ছিল সম্পূর্ণ অজানা। তরুণটির সুন্দর ব্যবহার, গভীর কণ্ঠস্বর, আকর্ষণীয় চেহারা ও সাজপোশাক, হিউমার সেন্স ও আপাত-পরিচ্ছন্ন মানুষটির যে নতুন পরিচয় স্ত্রীর কাছ থেকে পেলাম, তা অজানা ছিল। কিন্তু অবাক হওয়ার মতো কিছু ছিল না। এমন চরিত্রের মানুষ ‘পুরুষ বেশ্যা’ পেশায় থাকে। সাধারণভাবে এদের ক্লায়েন্ট অবাঙালি (প্রধানত মাড়োয়ারি) এবং বিবাহিত, বিবাহবিচ্ছিন্ন, বিধবা বা বরপ্রবাসী এমন ধনী রমণীরা। লজ, রিসর্টস, হোটেল, ক্লায়েন্টের ফ্ল্যাট বা অফিস-চেম্বার হলো এদের মিলনস্থল। এইসব পুরুষ দেহজীবী বা কলবয়দের বলে ‘জিগোলা’ (gigolo)। এরা কেউ-ই পেটের দায়ে এ লাইনে আসেনি। মস্তি করবো আবার মোটা রোজগার করবো—এই মানসিকতা থেকে এরা এসেছে। রোজগার দৈনিক এক হাজারের নিচে নয়।

এরা মোটা টাকা গুণে নেয়, যখন তিন-চার বা পাঁচজন মহিলা এক সঙ্গে ভাড়া করে। মিউজিকের তালে তালে ছেলেটি নাচতে নাচতে পোষাক ছাড়তে শুরু করে। উত্তেজিত মহিলারও নগ্ন হয়। তারপর শুরু হল অতি নোংরা যৌনতা । প্রত্যেক ক্লায়েন্ট যেহেতু শক্ত পৌরুষ নিয়ে খেলতে চায়, তাই প্রত্যেক জিগোলোকেই এমন খেলার আগে ‘ভায়গ্রা’ জাতীয় ওষুধ খেতে হয়। এখানে পূর্ণ শরীরী মিলন হয় না। একাধিক ধনী সুন্দরীদের শরীর নিয়ে ছিনিমিনি খেলে কম করে হাজার তিনেক টাকা রোজগারের মধ্য দিয়ে জিগোলোদের বিকৃত কামনা চরিতার্থ করা ও রোজগার দুই-ই হয়। উচ্চবিত্তের ক্লায়েন্টদের তুষ্ট করতে গৃহবধূটির বর খুবই আদর্শ।

বউটিকে কোনও মিথ্যে আশার কথা না শুনিয়ে নির্মম সম্ভাবনার কথা জানালাম। বললাম, এমন বন্ধনটিকে টিকিয়ে রেখে প্রতিদিন মানসিক যন্ত্রণা সহ্য না করে মানসিকভাবে বিচ্ছিন্ন হওয়ার কথা ভাবুক। স্বনির্ভর হওয়ার মতো যোগ্যতা যখন আছে, তখন সেই যোগ্যতাকে প্রয়োগ করুক।

হ্যাঁ ওরা এখন বিচ্ছিন্ন। প্রতিদিনের নোংরা জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন

ছয়ঃ উদিত বিয়ে করেছে রচনাকে। পরিচয়, প্রেম, বিয়ে। রচনার অভিযোগ, উদিতের চয়েস বলে কিছু নেই। কি যে হিজিবিজি শাড়ি কিনে আনে। বাধ্য হয়ে আবার ওকে নিয়ে দোকানে যেতে হয়, পাল্টে আনতে হয়। আমি কী ধরনের শাড়ি কিনি, কী কসমেটিক্স ব্যবহার করি, তার খবরও রাখে না। সে কথা বললে আবার বাবু’র অভিমান হয়।

অত ‘সত্যবাদী যুধিষ্ঠির’ হওয়া যে অনেক সময় অনেক বড় ক্ষতির শুরু করতে পারে, সেই বোধ রাখতেই হবে রচনার। হাজবেন্ডের আনা শাড়িটা না হয় খুব অপছন্দই হলো ; কিন্তু তিনি তো আপনার জন্যে খুব খুশি মনেই কিনেছেন । যদি হেসে বলতেন, ‘খুব সুন্দর হয়েছে’ মহাভারত অশুদ্ধ হতো না ; হাজবেন্ডও খুশি হতেন। একটা ছোট্ট মিথ্যেতে যেখানে খুশি আনতে পারতেন, সেখানে দুঃখ দিলেন কেন? দুঃখ দিয়েছেন, দুঃখ দিতে চান বলে। অথবা আপনার রুচি খুবই বদখত।

শুধু হাজবেন্ড-এর সঙ্গে এমন ব্যবহার করলে একটা দারুণ পরামর্শ দেবো । সুখি হতে হয় স্বভাব পাল্টান, নতুবা হাজবেন্ড পাল্টান। ব্যবহারটা সবার বেলায় চালু রাখলে সবার অপছন্দের তালিকায় জাগা পাবেনই ।

আপনি নিশ্চয়ই আপনার রান্নার নতুন রেসিপিটা পছন্দ হয়েছে কিনা—বরকে জিজ্ঞেস করেছেন? বর নিশ্চয়ই তারিফ করেছেন। কারণ নিজের মন্দ লাগাকে প্রকাশ্যে না এনে উড়িয়ে দিয়েছেন। বর আপনাকে খুশি রাখতে চান, দুঃখ দিতে চান না, তাই এই মিথ্যেটুকু বলেছেন। আপনিও খুশি রাখার চেষ্টা করুন। দেখবেন—দু’জনের পৃথিবীটা কেমন সুন্দর হয়ে গেছে।

সাতঃ চাকুরে বউ। বয়স ৩১ বছর। একটি নামী বেসরকারি সংস্থার মাঝারি অফিসার। বরও একটি বেসরকারি সংস্থায় মাঝারি মাপের অফিসার। বউটি কথাবার্তায় ঝকঝকে, স্মার্ট, লেখাপড়ায় ভালো ছিলেন, খুব পরিশ্রমী। দোষের মধ্যে সন্দেহপ্রবণ, আত্মকেন্দ্রিক, বস্তিবাসীদের মতো পাড়া মাথায় করে ঝগড়া করেন। ভয়ংকর জিদ্দি, হিস্টিরিক ও ডমিনেটিং। নিজের হাতে ব্লেড চালিয়ে মাঝে মধ্যে রক্তারক্তি কাণ্ড ঘটিয়ে দেন। আত্মহত্যা করবেন বলে ইমোসনাল ব্ল্যাকমেলিং করেন। ডিভোর্স দেওয়ার ভয় দেখান ।

বরটি স্বল্পবাক, গলা চড়িয়ে ঝগড়া করতে পারেন না। বড় ম্যাগাজিনের রেগুলার গল্প লেখক। বড় প্রকাশক ওর লেখা খানকয়েক বই প্রকাশ করেছেন। ছবি আঁকায় যথেষ্ট নাম আছে। সুতরাং গুণগ্রাহী আছেন। অনেক গুণগ্রাহীদের মধ্যে সুন্দরীরাও আছেন।

সুন্দরীরা তাঁদের প্রিয় লেখক, প্রিয় মানুষটিকে বউয়ের হাতে অত্যাচারিত হতে দেখে সহানুভূতি জানান। পরিণতিতে কিছু শিক্ষিতা সুন্দরী এখন ছেলেটির বন্ধু হয়ে উঠেছেন। ছেলেটি ডিভোর্স দিয়ে নতুন ঘর বসাবার কথা ভাবতে চান না একমাত্র সন্তানের কথা ভেবে। দুজনের ঝগড়ার সময় শিশু সন্তান জড়সড় হয়ে থাকে ভয়ে।

বউয়ের সঙ্গে মানিয়ে চলতে চলতে ছেলেটির চরিত্রে এক বিপুল পরিবর্তন এসেছে। ছেলেটি এখন বউয়ের জুতোর শুকতলা। পরিশ্রমী, উদ্যমী, প্রতিভাবান ছেলেটি এখন ব্যক্তিত্বহীন, অমেরুদণ্ডী।

বর-বউ দু’জনে একসঙ্গে পড়েছেন। সাত বছর প্রাক-বিবাহ মেলামেশার পরও দু’জনে এতো মিসফিট্? মেলামেশা পর্বে দু’জনে যুক্তিহীন জেদ, বদমেজাজ, কর্তৃত্ব করার স্বভাব জানতেই পারেননি? নাকি সেসব স্বভাব যখন বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে, তখন প্রেমের আবেগে তা ঢাকা থেকে গেছে?

সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চাইলে দু-জনেরই উচিত ম্যারিটাল কাউন্সেলিং সেশনে নিয়মিত যাওয়া এবং মনোবিদের সাহায্য নেওয়া। বউটি মানসিক রোগী । চিকিৎসার প্রয়োজন। লাগাতার অবদমনে বরটিরও মানসিক রোগী হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। বউটি কাউন্সেলিং সেশনে যেতে বা মনোবিদের নিতে রাজি না হলে ছেলেটির উচিত বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য মানসিকভাবে নিজেকে তৈরি করা।

আটঃ এক এম এ পাশ ব্যাঙ্কে চাকুরে মহিলা তাঁর সমস্যার কথা জানিয়েছিলেন, কাউন্সেলিং-এর উদ্দেশ্যে। ওই ব্যাঙ্কেরই একটি চতুর্থ শ্রেণীর কর্মীর প্রতি আকর্ষিত হন। স্বল্প শিক্ষিত তরুণটিকে বিয়ে করেন। স্মার্ট, বাকচতুর, প্রাণোচ্ছল, হিউমার সেন্সে ভরপুর, উদ্যোগী ছেলেটি অফিসের মেয়েদের চোখে ছিলেন ‘হিরো’।

উদ্যোগী ছেলেটি প্রমোশন পেয়ে কেরানি হয়েছেন। সবই মোটামুটি চলছিল। তৈলমসৃণভাবে না চললেও চলছিল। দুটি মেয়ে। এখন ওরা এইট ও টেনে পড়ে। মহিলা ও তার বর দুটি আলাদা ব্র্যাঞ্চে ট্রান্সফার হয়েছেন ।

একদিন রাতে পুলিশের ফোন পেয়ে মহিলাকে দৌড়তে হলো কলকাতার লাগোয়া দক্ষিণ শহরতলীর এক থানায়। এক রিসর্ট-এ হানা দিয়ে পুলিশ ধরে এনেছেন বেশ কিছু নারী-পুরুষকে। ওঁদের পাকড়াও করা হয়েছে অশালীন অবস্থায়। রিসর্টের মালিককেও ধরে আনা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, রিসর্টে অসামাজিক কাজকর্ম চালান, দেহ ব্যবসা চালান। ধরা পড়া নারী-পুরুষদের একজন হলেন মহিলাটির বর। ছেলেটির মধ্যে কোনও লজ্জা ও অনুশোচনা দেখেননি মহিলা। বরং বউকে দেখে স্মার্টলি হাসলেন, যেন কিছুই হয়নি।

বর ওর এক সাংবাদিক বন্ধুকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। তিনিও হাজির। দুজনে থানা অফিসারকে বোঝাচ্ছিলেন, ছেলেটির সঙ্গী কলগার্ল নয়, অফিস কলিগ। টাকার বিনিময়ে স্ফূর্তি লুটতে আসেনি ছেলেটি। সুতরাং বেআইনি কিছুই করেননি। থানা অফিসার বললেন, রিসর্টের ম্যানেজার তো আপনার সামনেই বললেন, মাঝেমধ্যেই আপনি নতুন নতুন মেয়েদের নিয়ে আসেন।

ছেলেটি বোঝালেন, ওরা কেউই কলগার্ল নয়। সহকর্মী বা অন্য অফিসে কাজ করেন। স্রেফ স্ফূর্তি লুটতে আসেন। টাকার লেনদেন নেই।

থানার অফিসার ছেলেটিকে বললেন, আপনি যাঁদের নিয়ে আজ পর্যন্ত স্ফূর্তি করেছেন, তাঁদের নাম ও অফিসের ঠিকানা, ফোন নম্বর একটা কাগজে লিখে সই করুন।

বর যে সব নাম লিখলেন, তাঁদের অনেককেই চেনেন বউটি। চেনেন অফিসের সহকর্মী হিসেবে। তালিকায় তরুণী থেকে বয়স্কা—সবই আছেন। বউ মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে আনলেন বরকে। তবে বরের সঙ্গে ধরা পড়া মেয়েটিকে আগে কখনও দেখেননি। শুনলেন, মেয়েটির বরকেও নাকি খবর দেওয়া হয়েছে।

বউটি তারপর থেকে তালিকার সহকর্মী মহিলাদের উপর যথেষ্ট বেশি ক্ষুব্ধ। কিন্তু মুখোমুখি ঝগড়া পছন্দ করে না বলে অসহিষ্ণুতা প্রকাশ করেননি।

মহিলাটিকে জানিয়েছি, আপনার নরম মন ও সহ্যশক্তির কথা বর জানেন । আপনি বরের সহকর্মী শয্যাসঙ্গিনীদের নাম শুনে তাঁদের পাকড়াও করে ঝগড়া বাঁধাবেন না। বর তাই এমন কিছু নাম তালিকায় আনেননি, যাঁদের নিয়ে রিসর্টে আসতেন এবং ভবিষ্যতেও আসবেন। আবার এমন কিছু নাম তালিকায় ঢুকিয়েছেন, যাঁদের নিয়ে কখনওই আসেননি। আপনাকে বিভ্রান্ত করতেই পরিকল্পিতভাবে এই তালিকা তৈরি করেছেন। ঘাগু লম্পট হিসেবে এমনটা করাই স্বাভাবিক।

বরের যে কোনও লজ্জা বা অনুশোচনা লক্ষ্য করেননি, এটাই বরের চরিত্রের সবচেয়ে খারাপ দিক। মানসিকভাবে পুরোপুরি ‘যৌন-অপরাধী’ তৈরি হয়ে গেছেন। বারবার ও এই যৌন-অপরাধ বারবারই করবেনই। হয়তো আরও নিখুঁত পরিকল্পনা করে করবেন। মফস্সলের রিসর্টের বদলে কলকাতাতেই গোপন আস্তানা ঠিক খুঁজে নেবেন। যৌনতার নেশা মদের নেশার থেকেও প্রবল। এই নেশার জন্য বাড়তি অর্থের প্রয়োজন। চাহিদা মেটাতে আর্থিক অপরাধে যুক্ত হবেনই। ব্যাঙ্ক লোন দেওয়ার বিনিময়ে ঘুষ নেওয়া থেকে মেয়েদের দালালি সবই করতে পারেন ।

আপনাকে বাস্তব অবস্থাটা বুঝে নিতে হবে (১) ছেলেটি বহু নারীতে আসক্ত ও নির্ভেজাল লম্পট। (২) যৌন অপরাধের পাশাপাশি আর্থিক অপরাধও করেন বা ভবিষ্যতে করবেন। (৩) এ হলো লস্ট কেস। এমন পোড়খাওয়া তৈরি চরিত্রকে সংশোধন করার সাধ্য কোনও মনোবিদের নেই। (৪) বর ভবিষ্যতে আবারও পুলিশের হাতে ধরা পড়বেন। জেলে যাবেন। পত্রিকায় খবর হবেন। আপনিও মেয়েরা লজ্জায় মিশে যাবেন। এমনটা যে কোনও দিন-ই ঘটতে পারে।

আপনি কি এমন একটা বিশ্রী পরিস্থিতির জন্য অপেক্ষা করবেন? ভারতীয় নারীর ঐতিহ্য বজায় রেখে সহিষ্ণুতা দেখাবেন? মেয়েদের সঙ্গে বরং বাবার চরিত্র নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করুন। তাঁদের মানসিকভাবে তৈরি রাখুন। আমি নিশ্চিত, বাবার লাম্পট্য দোষ মেয়েদের চরিত্রকে প্রভাবিত করতে না পারলে, মেয়েদের আপনি সঙ্গে পাবেন। ছেলেটিকে স্পষ্ট জানিয়ে দিন, হয় ওঁকে বদ অভ্যাস ছাড়তে হবে, নতুবা পরিবারকে।

যে সহকর্মীরা তরুণটির সঙ্গে রিসর্টে যাচ্ছেন, তাঁরা কি জানেন, ছেলেটি একজন নির্ভেজাল লম্পট? অনেককেই বিছানায় তোলেন? বউটি জানিয়েছিলেন, সম্ভবত জানেন না কেউ-ই। মহিলার কথায়, ছেলেটি অত্যন্ত ধূর্ত। বিয়ের আগে তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার সময় তাঁর ফিগারের, গায়ের রঙের, স্কিনের উজ্জ্বলতার, স্টাইলের প্রশংসা করে গেছেন দিনের পর দিন। মহিলা তাতে মুগ্ধ হয়ে থাকতেন। জন্মদিন জেনে নিয়ে সবার অজান্তে টুক করে একটা গোলাপ দিয়ে যেতেন ছেলেটি। মাঝে মাঝেই রাতে ফোন করতেন গদোগদো কণ্ঠে। এসবের নীট ফল—শিক্ষা, চাকরির পদ- পার্থক্য সব কিছু ভুলে বিয়ে করেছিলেন। প্রশংসায় ভেসে যেতে বিচার করতেই ভুলে গিয়েছিলেন—দু’জনের রুচির মিল কতটা ।

মেয়ে শিকারী ‘হিরো’রা এমনটাই করে। যোগ্যতার প্রশংসা না করে শরীরের, পোশাকের প্রশংসা করে। প্রশংসার মধ্য দিয়ে অনেক সময় অন্য রকম ইঙ্গিত পৌঁছে দেয়। যেমন – ‘সুমনদাকে সত্যিই ঈর্ষা করি। কী অসাধারণ বউ পেয়েছেন। আপনাকে এখনও বিয়ের পিঁড়িতে বসানো যায়।’ এসবই বললো হয়তো প্রবীণা সুন্দরীকে। অথবা অশ্লীল চুটকুলি বা জোকস বলে অন্য রকম ইঙ্গিত দিত।

যে সব লম্পটরা সহকর্মী মেয়েদের ফাঁদে ফেলে প্রতারি

করে, তারা কখনই এক নারীর কাছে অন্য নারীর সঙ্গে

সম্পর্কের কথা বলে না। সুতরাং ‘এইসব নারীরা

প্রতারিত’—একথা আমরা বলতে পারি। কিন্তু

এঁরা কেউই যৌন নিগ্রহের শিকার নন।

সচেতন ও সচেষ্ট আদান-প্রদানকে

কখনই ‘যৌন নিগ্রহ

বলা যায় না।

এইসব লো-গ্রেডের লোফারদের চরিত্র জেনেও যে সব মেয়েরা যায়, তাদের ‘লম্পট’ ছাড়া আর কিছুই বলতে পারি না ।

বহু অফিসেই এমন ধরনের লম্পট পুরুষের দেখা মিলবে। মিলবে লম্পট মেয়েদেরও। লম্পট পুরুষরা অনেক মেয়েদের চোখেই ‘হিরো’। লম্পট মেয়েরা ‘হিরোইন’।

পারফরমিং আর্ট জগতের অনেক কিংবদন্তী চরিত্র বা মেগাস্টারদের জীবনে বহু বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বা দেহ-মিলন হয়। কিন্তু তাঁরা সেসব নিয়ে বন্ধুদের কাছে গল্প করতে বসেন না। আর এইসব পেঁচি লোফাররা তাদের লম্পট বন্ধুদের কাছে গপ্পো করে, কোন্ কোন্ উচ্চপদস্থ, উচ্চশিক্ষিত, উচ্চমেধার মেয়েদের বিছানায় তুলেছে। এমন গল্পের মধ্যে সত্যি আছে, আবার মিথ্যেও আছে। যাদের তোলার ইচ্ছে আছে, কিন্তু তোলা হয়নি, তাদের কীভাবে কী করেছে সে সব গপ্পো বলে এক ধরনের বিকৃত আনন্দ পায়। এখানেই পেঁচি লোফার ও সুপারস্টার চরিত্রহীনের অ্যাটিচুডের পার্থক্য।

যে সব কর্মরত মহিলারা সুনাম বজায় রাখতে চান, তাঁরা একটু চেষ্টা করলেই এইসব লম্পট সহকর্মীদের চিহ্নিত করতে পারবেন। এদের মাথায় উঠতে দেবেন না। মনে রাখবেন, আপনার ফিগার বা শাড়ির প্রশংসা কোনও পুরুষ করলে তাও ‘যৌন নিগ্রহ’ বলে বিবেচিত হবে, যদি আপনি মনে করেন, এর মধ্যে কোনও অন্য রকম ইঙ্গিত ছিল এবং এটাও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

নয়ঃ ৪৭ বছর বয়সের মহিলার এক নতুন স্বপ্ন-সমস্যা দেখা দিয়েছে। ঘুমোলেই আজেবাজে নোংরা যৌনতার স্বপ্ন এসে হানা দেয়। ঘুম ভাঙলে ব্যাপারটা উপভোগ্য মনে হয় না। বরং বিশ্রী গা-ঘিনঘিনে অবস্থা চলতে থাকে।

এই বয়সটা মেনোপজাল পরিবর্তনের সময়। শরীর মনে একটা বিশাল ভাঙাচোরা হয় এই সময়। এই সময় অনেকেরই মেজাজ খিট্‌খিটে হয়ে যায়, ধৈর্য কমে যায়, মনে অস্থিরতা দেখা দেয়, শারীরিক মিলনের আগ্রহ অতি-মাত্রায় কমে যায়। সেক্স হরমোনগুলোর নিঃসরণ কমে যায়। যোনিপথ শুকনো থাকে। মিলন যন্ত্রনাদায়ক হয়। পাল্টে যায় যৌন-ব্যবহার। এমনটা সবার না হলেও অনেকেরই হয়।

স্বপ্নে উঠে আসে অবচেতন মনের অনেক অবদমিত ইচ্ছে, উদ্বেগ, ভয় ইত্যাদি। স্বপ্নে অপছন্দের মানুষকে শাস্তি দেওয়া যায়, প্রিয় অভিনেত্রী বা অভিনেতার সঙ্গে চুটিয়ে প্রেম করা যায়। এই সবই হয় লিম্বিক সিস্টেম বা ইমোশনাল ব্রেন ঘুমের সময় খুবই সক্রিয় থাকে বলে।

মেনোপজাল পরিবর্তনের সময় যে শারীরিক মিলন কষ্টের মনে হয়, সেই মিলনই যখন স্বপ্নে হয়, তখন আনন্দানুভূতি নিয়ে আসতেই পারে। যৌনমিলন বাস্তবে যার সঙ্গে কষ্টদায়ক, স্বপ্নেও তার সঙ্গে মিলনের ইচ্ছে না হতেই পারে। স্বপ্নে অবচেতন মনে অনেক পুরুষই দেখা দিতে পারে।

এছাড়াও থাকতে পারে আরও অন্য কিছু কারণ। যেমন—অবদমিত যৌন আকাঙ্ক্ষা। হাজবেন্ড যদি সব সময় নিজের ইচ্ছেমতো মিলিত হতে থাকেন, বউয়ের ইচ্ছে অনিচ্ছাকে গুরুত্ব না দেন। মিলনের সময় হাজবেন্ড সব সময় সক্রিয় ও বউ নিষ্ক্রিয় থাকেন। শৈশবে যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছিলেন বা যৌন অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন, যা অবচেতন মনে আজও উত্তেজনা সৃষ্টি করে। অথবা যৌনরসাত্বক কথাবার্তা, পর্ণো বই, ব্লু-ফিল্ম ইত্যাদি ভালো লাগে, যার সামগ্রিক প্রতিফলন হিসেবে হানা দিচ্ছে অশ্লীল নানা স্বপ্ন। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে মনোস্তাত্ত্বিকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন একটুও দেরি না করে।

দশঃ এক চাকুরে বউ, বয়স ৩৩ বছর। তাঁর কথা মতো বিয়ে হয়েছে সাত বছর। বিয়ের বছর তিনেক পর থেকেই দেহ-মিলনের সময় বর খুব নোংরা সব গল্প বলেন। এর আগে দু’জনে এক সঙ্গে পর্ণো বই পড়েছেন, পর্ণো ছবি দেখেছেন। বউটি উত্তেজনা অনুভব করছেন। কিন্তু বরের গল্পগুলো কিছুতেই গ্রহণ করতে পারছেন না। গল্পে তিনি বলেন, “ভাবো, আমি তোমার বউদির সঙ্গে…., তোমার দাদা তোমাকে….।” বর গল্পের চরিত্রগুলো মাঝে-মধ্যেই পাল্টে দেন। কিন্তু গল্পের ধরন পাল্টায় না। গল্প বলার সময় চোখ বুজে আমার শরীরকে নানাভাবে উপভোগ করেন।

বরের ইচ্ছেমতো চরিত্রগুলোর সঙ্গে মিলিত হতে হচ্ছে—এই গল্প এক সময় একঘেয়েমি এনে দিল। বিরক্তির জন্ম দিল। অবস্থা পাল্টাবার একটা উপায় বউটি নিজেই তৈরি করে নেন। বছর দেড়েক হলো বরের গল্পে আর মন দেন না। চোখ বুজে কল্পনায় এনে ফেলেন ইচ্ছেমতো পুরুষকে। কল্পনায় সিনেমা স্টার থেকে আত্মীয় সবাই আসেন। এখন চোখ বন্ধ করে বরকে অন্য পুরুষ ভাবতে একটুও অসুবিধে হয় না। ৫-৬ বছর আগে নগ্ন বরকে দেখতে দেখতে মিলনে যে উত্তেজনা অনুভব করতেন, এখন তা-ই অনুভব করেন কল্পনায়, মিলনের মুহূর্তে চোখ খুলে বরকে দেখতে ভয় পান। উত্তেজনার আগুনে জল পড়ার ভয়।

সম্প্রতি একটা বড় রকমের সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। মুশকিলটা হলো, মিলন শেষে একটা অপরাধবোধ মাঝে মাঝে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। এই অপরাধবোধই এখন সব সময় অস্থিরতা ও অশান্তির মধ্যে তাড়িয়ে নিয়ে চলেছে।

বাস্তবে অনেক সময় সুস্থ-সুন্দর যৌনজীবন পাওয়া যায় না। বিশেষত মধ্যবিত্ত মানসিকতার বাঙালি মেয়েরা তাদের যৌনতাকে অবদমিত রাখতেই অভ্যস্ত। ছোটবেলা থেকেই মা-মাসিদের মতো মহিলারা কিশোরী বয়স থেকেই শিখিয়ে এসেছেন, লজ্জাবনত থাকতে। স্বামীকে দেবতা-জ্ঞানে দেখতে, সেবা করতে। স্বামী যেভাবে দেহ মিলন চাইবে, সেভাবেই নিজেকে উজাড় করে দেবে। স্বামী মিলিত হতে চাইলে নিজেকে নিবেদন করে দেবে। নিজের ইচ্ছে অনিচ্ছে নিয়ে কোনওভাবেই মাথা ঘামাবে না। কখনও যদি নিজের মিলন ইচ্ছে প্রবল হয়, তাকে সংযত করবে। সংযম নারীর গুণ। কখনই সংযম হারিয়ে স্বামীর কাছে মিলনের ইচ্ছে প্রকাশ করবে না। তাতে স্বামী ধরে নেবেই স্ত্রী আমার বড়ই কামুক। স্বামীর মনে এমন ধারণা তৈরি হওয়া মানেই ঘর ভাঙলো।

মধ্যবিত্ত-মানসিকতার মেয়েরা তাই মিলনের সময় কখনই সক্রিয়ভাবে অংশ নেয় না। মরার মতো নিষ্ক্রিয়ভাবে পড়ে থাকে। ‘স্বামী’ অর্থাৎ ‘প্রভু’ রাতে বিছানায় শুয়েই তাঁর মৈথুনকর্ম সেরে ভোস ভোস করে ঘুমোতে থাকে। বউ কী ভাবছে, না ভাবছে—এসব ভাববার মতো মন মধ্যবিত্ত মানসিকতার পুরুষদের মধ্যে তৈরি-ই হয়নি। এইসব মধ্যবিত্ত মানসিকতার পুরুষরা প্রবলভাবে ডিক্টেটর । পুরুষতান্ত্রিক সমাজকে এরাই বাঁচিয়ে রেখেছে।

নিম্নবিত্ত ও উচ্চবিত্ত মানসিকতার মানুষদের মধ্যে একটা বড়

রকমের মিল আছে। এই দুই শ্রেণীর মেয়েরাই অনেক

বেশি স্বাধীন। ওরা পছন্দ না হলে ঘর ছাড়ে, বর

ছাড়ে। নতুন করে ঘর বাঁধে। এই দুই

শ্রেণীর নারী-পুরুষই ব্যক্তি স্বাধীনতায়

বিশ্বাসী। মিলনে নারী-পুরুষ দু’জনই 

সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়।

মধ্যবিত্ত মানসিকতার বাঙালি মেয়েরা ‘কুড়িতে বুড়ি’ হয়। যৌনতাকে অবদমিত রাখার কারণে নানা ধরনের সাইকো সোমাটিক ডিজিজ’ বা মানসিক কারণে শারীরিক অসুখে ভোগেন। অথবা যৌন বিকৃতির শিকার হন, ব্যক্তিত্ব বিকাশে বাধা আসে। চাকুরে বধূটি এমনই এক যৌন বিকৃতির শিকার হয়ে পড়ছেন, ফলে তাঁর স্বাভাবিক ব্যক্তিত্ব বিকশিত হতে পারছে না। কারণ বউটি মধ্যবিত্ত মানসিকতার উর্ধ্বে উঠতে পারেননি।

বউটি তাঁর সমস্যা আমাকে জানিয়েছিলেন কাউন্সেলিংয়ের জন্য। এসব ক্ষেত্রে দু’ভাবে কাউন্সেলিং করা যেতে পারে। একঃ মানসিকভাবে অবদমিত, অপরাধবোদে পীড়িত মানুষটিকে মনের কথা খুলে বলতে সাহায্য করা। তাঁর বলাটা আন্তরিকতার সঙ্গে সহানুভূতির সঙ্গে শুনলে অপরাধবোধে পীড়িত মানুষটির মন অনেক হালকা হয়। এই প্রথম পদ্ধতিকে বলে ‘ক্যাথারসিস’ (Catharsis)।

দ্বিতীয় পদ্ধতিতে সাহায্যপ্রার্থী মানুষটিকে নিশ্চিত করা, যে তাঁর কথাগুলো পুরোপুরি বিশ্বাস করছি। বরের এমন যৌন আচরণ আদৌ বিশ্বাস করছি কিনা, এই নিয়ে তিনি সংশয়ে থাকবেন এটাই স্বাভাবিক। কারণ তাঁর হয়তো জানা নেই পুরুষদের এমন যৌন আচরণ বহুল প্রচলিত। অনেক মহিলা ভাবেন, আমার জীবনেই বোধহয় এমন আকাশ ভাঙা ঘটনা ঘটেছে। আর আমি যা ভাবছি, সেই ভাবনাও খুবই নোংরা, অসম্ভব রকমের খারাপ, অবিশ্বাস্য।

সহানুভূতির সঙ্গে যদি কাউন্সেলিং করা যায়, তবে রোগী নিজের বিচারবুদ্ধি দিয়েই বুঝে নেবেন যে—নিজেকে অপরাধী ভেবে পীড়িত হওয়ার প্রয়োজন নেই । এতে রোগী অস্থিরতা কাটিয়ে আবার পুরোন আত্মবিশ্বাস ফিরে পায় । এই ধরনের কাউন্সেলিংকে বলে ‘সাপোর্টিভ (supportive) কাউন্সেলিং’।

যাই হোক, মেয়েটিকে বুঝিয়েছিলাম, যৌনজীবন সুন্দর হলে, পছন্দসই হলে, মনের মতো হলে মানুষের একটা স্বাভাবিক প্রবৃত্তি বিকশিত হওয়ার সুযোগ পায় । আমাদের মধ্যবিত্ত বাঙালিদের জীবনে সাধারণভাবে বরই তার পছন্দসই যৌন জীবন বউয়ের উপর চাপিয়ে দেয়। এই চাপিয়ে দেওয়া যৌনজীবন বউটির কেমন লাগছে, সহানুভূতির সঙ্গে বোঝার চেষ্টা করে না।

বাড়িতে একটা বেড়াল পুষল তাকে খেতে দিতে হয়। নতুবা

সে তো অন্য বাড়ির হেঁসেলের দিকে মুখ বাড়াবেই।

স্বাভাবিক ও স্বতঃস্ফূর্ত যৌনতা প্রকাশের

সুযোগ যদি বন্ধ করে দেয় বর,

তবে তা বাঁকা পথ

ধরতেই পারে।

এমন বোকা বরদের জন্যই মধ্যবিত্ত সমাজে অজাচার উচ্চবিত্ত বা নিম্নবিত্তদের তুলনায় বহুগুণ বেশি। এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের মধ্যেই বিয়ের কয়েক বছরের মধ্যেই মেয়েদের কাছে মিলন হয়ে দাঁড়ায় ‘মোস্ট বোরিং’ ব্যাপার। মেয়েটি আজ মিলনের সময় চোখ বুজে নিজের পছন্দমতো পুরুষের সঙ্গে মিলিত হচ্ছেন ভাবতে পারছেন। উত্তেজনা অনুভব করছেন। বরের ওই বিকৃত গল্পগুলোই বউটির এমন চিন্তা করার প্রথম ধাপ। বরটি যদি বউয়ের কাছে সোচ্চারে অন্য নারীর সঙ্গে উত্তেজনক মিলনের কথা বলে যান নিজের চোখটি বুজে রেখে, তবে বউটি শুধু কল্পনায় অন্য পুরুষের সঙ্গে মিলিত হলে দোষ কোথায়? কোথায় বা অপরাধ?

কিন্তু মেয়েটির অবচেতন মনে আরও একটি যন্ত্রণা লুকিয়ে রয়েছে। অবচেতন মন বুঝে গেছে—বর আদৌ বিশ্বাসযোগ্য চরিত্রের নয়। কোনও সম্পর্কই ও শ্রদ্ধা করে না। দৈহিক সম্পর্কই ওর কাছে সবচেয়ে বড় কথা ৷

মেয়েটির মন জেনে গেছে, বর আদৌ সাময়িকভাবে ওর সঙ্গে মিলিত হচ্ছে না। বর কি নানা অজাচারে জড়িত? নিজেও কি এইসব কল্পনা করতে করতে এক সময় বাস্তবে আত্মীয়দের সঙ্গে মিলিত হওয়ার সুযোগ নেবেন?

বর-বউয়ের মূল্যবোধের পার্থক্যের জন্যেই বউটি অপরাধবোধে ভুগলেও, বর ভোগেন না। বউটির উচিত সমস্যাকে আর চেপে না রেখে এ বিষয়ে বরের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলা। স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া—অমন নোংরা গল্প শুনতে শুনতে দেহ মিলনে রাজি নন। দু’জনে একই সঙ্গে গিয়ে কোনও মনোবিদের পরামর্শ নিতে চান—একথাও জানিয়ে দিন।

মনোবিদের পরামর্শে কতটা কাজ হচ্ছে দেখুন। সঙ্গে সুসংস্কৃতি সম্পন্ন পরিবেশে ডুবে থাকতে চেষ্টা করুন। রুচিপূর্ণ বই পড়ুন। ভালো সিনেমা, থিয়েটার দেখুন। সংগীত শোনায় ডুবে থাকুন। যৌন আলোচনায় আবদ্ধ বন্ধু-আত্মীয়দের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করুন। সমাজসেবামূলক কাজে বা ক্রিয়েটিভ কাজে সময় দিন—আনন্দ পাবেন। জীবনে যৌনতাই শেষ কথা নয়। জীবনে কেউ যদি ফাগুন হাওয়া নিয়ে আসে, দ্বিধা না করেই গ্রহণ করুন।

বরের সঙ্গে প্রেমহীন নোংরা মিলনের চেয়ে প্রেমিকের সঙ্গে প্রেমময় মিলন অনেক বেশি শ্রদ্ধেয়, অনেক বেশি কাম্য।

ওঁর বর মিলনের সময় যা করছেন তা অবশ্যই ‘যৌননিগ্রহ’ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যৌননিগ্রহ শুধু অফিসে, বাসে, পথে-ঘাটে-ই ঘটে না, আত্মীয়দের দ্বারা ঘটে, অপিসের বসের দ্বারা ঘটে, আর ঘটে হাজবেন্ডের দ্বারা। ভালোবাসাহীন বিকৃত যৌনমিলন যা নারীকে পীড়িত করে তাই যৌননিগ্রহ।

বরের অথবা যে কোনও মানুষের দ্বারা যৌননিগ্রহের শিকার মেয়েদের সাহায্যের জন্য কিছু সংস্থা আছে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।

এগারোঃ মেয়েটির বয়স ২৮ বছর। চাকরি করেন একটি বিশাল কোম্পানিতে । স্মার্ট, ঝক্‌ঝকে কথাবার্তা, আকর্ষণীয় চেহারা, সাজতে জানেন। ওই অপিসে ‘ড্রেস কোড’ চালু আছে। অবিবাহিত। মেয়েটি হঠাৎ-ই তাঁর বসের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনলেন, তাঁকে ‘যৌননিগ্রহ’ করছেন। হায়ার অথারিটিকে লিখিতভাবে অভিযোগ জানালেন। মেয়েদের যৌননিগ্রহ নিয়ে কাজ করে, এমন একটি সংস্থাকেও সব জানালেন।

‘যৌননিগ্রহ’ কাকে বলে? কোনও পুরুষ যখন কোনও মহিলাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিরক্ত করেন, তখন তাকে বলা হয় ‘যৌননিগ্রহ’।

যখন কোনও পুরুষ সহকর্মী মেয়েদের সামনেই অশ্লীল কথাবার্তা

বলেন, পর্ণোবইয়ের ছবি দেখান, কুশ্রী প্রস্তাব দেন, অশালীন

ব্যবহার করেন, শরীরে হাত দিয়ে স্পর্শের উত্তেজনা

নেন, যোগ্যতার প্রশংসা না করে চেহারার স্তুতি

করেন, তখন এ’সবই যৌননিগ্রহের

পর্যায়ে পড়ে।

অবশ্য শুধু পুরুষরাই যে নারীদের যৌননিগ্রহ করে, তা কিন্তু নয়। বাড়িতে কাজে লাগান কিশোর শ্রমিক অনেক সময়ই পরিবারের মহিলাদের দ্বারা যৌননিগ্রহের শিকার হয়। গ্লামার জগতে নাম কিনতে অনেক মেয়েই সব কিছু দিতেই একেবারে তৈরি। যাদের হাতে গ্লামার জগতে ঢোকার চাবিকাঠি আছে বলে মনে করে, তাদেরকেই যৌনজীবনে জড়াবার চেষ্টা করে এসব মেয়েরা। চাবিকাঠি নিয়ে বসে থাকা সব পুরুষই তো সমান নন। যাঁরা সুযোগ নিতে উৎসাহী নন, তারা তারা এমন আগ্রাসী মেয়েদের দ্বারা যৌননিগ্রহের শিকার হন। ফোনে বা মুখে সরাসরি নোংরা প্রস্তাব দেন। ফ্ল্যাটে ডেকে বা পুরুষটির ফ্ল্যাটে গিয়ে দেহমিলনের জন্য প্রলুব্ধ করেন।

ডায়নার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে জড়ানো তালিকায় আছে বাটলার, ব্যক্তিগত টিচার, ঘোড়সওয়ার হওয়ার শিক্ষক, দেহরক্ষী, নিউট্রিশনিস্ট, পামিস্ট, ফিজিওথেরাপিস্ট থেকে ফেংশুইওয়ালা ইত্যাদি। কারও সঙ্গে দেহমিলনে নাকি কোনও ছুঁৎমার্গ ছিল না। ডায়নার তুলনায় অত্যন্ত তুচ্ছ মানুষগুলোকে নিশ্চয়ই ডায়নাই বেছে ছিলেন। তাঁদের মধ্যে কেউ-ই কি মনে করেননি যে তাঁকে যৌননিগ্রহ করছেন লেডি ডায়না?

লিজা মিনেলি অস্কার উইনার সুপারস্টার। ৫৮ বছর বয়সী এই সুপারস্টারের বিরুদ্ধে ২০০২-এ যৌননিগ্রহের অভিযোগ করেন তাঁর-ই গাড়ির ড্রাইভার মহম্মদ। আদালতে প্রমাণ পাওয়া গেছে যে লিজা সত্যিই তাঁকে শরীর দিয়ে তৃপ্ত করতে বাধ্য করতেন ।

অনেক সময়ই নারীর উপর যৌননিগ্রহ হয়। আবার অনেক সময় ব্যক্তিগত রাগ মেটাতে বসের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগও তোলা হয়। উদ্দেশ্য পুরুষটিকে বেইজ্জত করা, যৌননিগ্রহ আদৌ ঘটেছে কিনা প্রমাণ করা খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার পুরুষ মাত্রই সুযোগ পেলে নিগ্রহ করবেন এমন ধারণাটা আদৌ ঠিক নয়।

‘পুরুষশাসিত সমাজ ব্যাপারটা মধ্যবিত্ত সমাজে টিকে

থাকলেও আর সব জায়গায় অচল। অন্তত বৰ্তমান

যুগে। বরং এটা বলা ভালো, শাসক

সুযোগ পেলে নিগ্রহ

করতে পারে।

আজকাল বিভিন্ন মিডিয়ায় বিভিন্ন বড় পদেই মেয়েদের ভিড়। মাল্টিন্যাশানাল কোম্পানির একজিকিউটিভ পদ দখল করতে ঝক্‌ঝকে তরুণীরা বিপুল সংখ্যায় এসে পড়েছেন। ওঁরা নিগৃহীত হলে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করেন। অবদমনের শিকার হন না।

মধ্যবিত্ত মানসিকতার মেয়েরাই অফিস বসের কাছ থেকে নোংরা প্রস্তাব পেয়ে থাকেন। চাকরি হারাবার ভয়ে অনেক সময় এইসব নিগ্রহকে সহ্য করে নেন। আবার অনেকে লোকলজ্জার ভয়ে চুপ করে থাকাটাই ভালো মনে করেন। এদেরই কেউ কেউ অপরাধবোধে ভোগেন, মানসিক অবদমনের কারণে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন।

কোনও কোনও মেয়ে অবশ্য বসকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরিয়ে, অনেক কিছু‍ই আদায় করে ছাড়ে। জানে—কিছু পেতে গেলে কিছু দিতে হয়।

অভিযোগকারী বউটি যে অভিযোগ অফিস বসের বিরুদ্ধে করেছেন, তা প্রমাণ করা খুব কঠিন। এবং সম্ভবত প্রমাণ করতেও পারবেন না। উর্ধ্বতন মহল এই অভিযোগ খারিজ করে দেবেন। অন্য ডিপার্টমেন্টে ট্রান্সফার করবেন। পুরোন বসকে সাহায্য করতে নতুন বস সত্যিই যৌননিগ্রহ শুরু করতে পারেন। এই ক্ষেত্রে একটুও ঘাবড়ে না গিয়ে কোনও দায়িত্বশীল স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। বসকে জেলে পুরে সাড়া ফেলে দিন।

প্রথম পর্বঃ মনের নিয়ন্ত্রণ

♦ কিছু কথা

অধ্যায়ঃ এক

♦ বুদ্ধি, স্মৃতি, প্রতিভা নিয়ে বিভ্রান্তি বেচে খাচ্ছে অনেকে

অধ্যায়ঃ দুই

♦ প্রচুর পড়েন মানে-ই মস্তিষ্কচর্চা করেন?

অধ্যায়ঃ তিন

♦ স্মৃতি-শক্তি ও প্রতিভা এক নয়

অধ্যায়ঃ চার

♦ জ্ঞান (wisdom) ও শিক্ষা (education) এক নয়

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ মস্তিষ্ক ও তার কিছু বৈশিষ্ট্য

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ পাভলভ-তত্ত্বে মস্তিষ্কের ‘ছক’ বা type

অধ্যায়ঃ সাত

♦ আচরণগত সমস্যা

অধ্যায়ঃ আট

♦ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কত কিছু পাল্টে যায়

অধ্যায়ঃ নয়

♦ অলজাইমারস সৃষ্টিশীল মেধায় ভয়ঙ্কর অসুখ

অধ্যায়ঃ দশ

♦ ‘আই কিউ’ কি বাড়ানো যায়?

অধ্যায়ঃ এগারো

♦ জিন বা বংশগতি-ই ঠিক করে মেধা-বুদ্ধি?

অধ্যায়ঃ বারো

♦ বংশগতি গবেষণা ও স্নায়ুবিজ্ঞানের অগ্রগতি

অধ্যায়ঃ তেরো

♦ মানবগুণ বিকাশে পরিবেশের প্রভাব

অধ্যায়ঃ চোদ্দ

♦ মগজ কম্পিউটারে প্রোগ্রামিং

অধ্যায়ঃ পনেরো

♦ মগজধোলাই-এর প্রয়োজনীয়তা বেড়েই চলেছে

দ্বিতীয় পর্বঃ ধ্যাণ-যোগ-সমাধি মেডিটেশন

অধ্যায়ঃ এক

♦ যোগ নিয়ে যোগ বিয়োগ

অধ্যায়ঃ দুই

♦ যোগ কি? যোগ নিয়ে গুলগপ্পো

অধ্যায়ঃ তিন

♦ যোগ

অধ্যায়ঃ চার

♦ যোগের সে’কাল এ’কাল

অধ্যায়ঃ পাঁচ

‘রজনীশ’ এক শিক্ষিত যোগী, বিতর্কিত নাম

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ স্বামী রামদেবঃ সন্ন্যাসী, সর্বযোগসিদ্ধ যোগী, যোগচিকিৎসক !

অধ্যায়ঃ সাত

♦ শ্রীমাতাজী নির্মলা দেবীর সহজযোগ

অধ্যায়ঃ আট

♦ রিল্যাক্সেশন, মেডিটেশন নিয়ে বাংলাদেশের যোগী মহাজাতক

অধ্যায়ঃ নয়

♦ ‘যোগ’ মস্তিষ্ক-চর্চা বিরোধী এক স্থবীর তত্ত্ব

অধ্যায়ঃ দশ

♦ ‘মেডিটেশন’, ‘রিলাক্সেশন’, বা ‘স্বসম্মোহন’

অধ্যায়ঃ এগারো

♦ বিশ লক্ষ টাকার চ্যালেঞ্জ

“মনের নিয়ন্ত্রণ যোগ-মেডিটেশন” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ

⇒ মন্তব্য করুন⇐

error: Content is protected !!