খুদাবক্স এমনি এক ভারতীয় ফকির যিনি বিলেতের মাটিতে এক অলৌকিক ঘটনায় সেখানে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। ঘটনাটাঘতেছিল ১৯৩৫ সালের ৯ ও ১৭ সেপ্টেম্বর লন্ডনে। জ্বলন্ত কাঠকয়লার আগুনের ওপর দিয়ে হেঁটে গেলেন খুদাবক্স। ইংরেজরা স্তম্ভিত হল ভারতীয় ফকিরের অলৌকিক ক্ষমতা দেখে। পূর্ব ঘোষিত এই আগুনে হাঁটা অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিজ্ঞানীরা খুদাবক্সের পা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হন যে, পায়ে কোন কিছুর প্রলেপ লাগানো নেই। পা ছিল শুকনো। পায়ের চেটোর তাপমাত্রা ছিল স্বাভাবিক। হাঁটা শেষ করার ১০ সেকেন্ড পরও তাঁর চেটোর তাপমাত্রা ছিল স্বাভাবিক। খুদাবক্সের পায়ের একটা নখে ১/২ বর্গ ইঞ্চি মাপের একটা লিউকোপ্লাস্টার লাগানো ছিল। আগুনে হাঁটার পর সেটাও ছিল প্রায় অক্ষত। ১২ ফুট লম্বা ৬ ফুট চওড়া এবং ৮ ইঞ্চি গভীর অগ্নিকুন্ডটা পার হতে খুদাবক্সের সময় লেগেছিল ৫ সেকেন্ড। চারটি মাত্র পদক্ষেপে তিনি অগ্নিকুন্ড পার হয়েছিলেন। বিজ্ঞানীরা হিসেব করে বার করলেন, প্রতি পদক্ষেপে আগুনের সঙ্গে পায়ের সংযোগ হয়েছিল মাত্র ১ সেকেন্ডেরও ভগ্নাংশ সময়ের জন্য। ফলে পা কোন সময়ই ভালমতো জ্বলন্ত আগুনের স্পর্শে আসতে পারেনি। লন্ডনে হৈ-হৈ ফেলে দিয়েছিলেন খুদাবক্স।
আমাদের মা-ঠাকুমাদের অনেককেইদ দেখেছি জ্বলন্ত উনুন থেকে কোন জ্বলন্ত কাঁচা-কয়লা’ কে চট করে দু’আঙ্গুলে ধরে উনুন থেকে নামাতে। এতো দ্রুত তারা কাজটা করেন যে, কয়লার তাপ ঐ সামান্য সময়ের মধ্যে ভালমতো হাতের সংস্পর্শে আসতে পারে না। গ্রামেও অনেককে দেখেছি, খালি হাতে জ্বলন্ত কাঠকয়লা তুলে হুঁকোর কলকেতে বসিয়ে দিচ্ছে। ওরা হাতের তেলোয় জ্বলন্ত কাঠকয়লা বেশিক্ষণ রাখে না বলে ফোসকা পড়ে না।
ঝাড়খন্ডের রাঁচি জেলায় গ্রীষ্মকালে আদিবাসীদের এক উৎসব পালিত হয়। নাম, মণ্ডাপরব। এই উপলক্ষে আগুনে হাঁটা অনুষ্ঠিত হয়। ওরা এই আগুনে হাঁটাকে বলে ‘ফুলকুদনা’, অর্থাৎ ফুলের উপর লাফানো। আট-দশ হাত লম্বা দু’হাত চওড়া ও আধ হাত গভীর কাঠকয়লার আগুন জ্বালানো হয়। পুরোহিত ওই অগ্নিকুন্ডে মন্ত্র পড়ে জল ছিটিয়ে দেন। আদিবাসীদের বিশ্বাস মন্ত্রপাঠের সঙ্গে-সঙ্গে দেবী পার্বতী আগুনের ওপর ফুলের মতো সুন্দর আঁচল বিছিয়ে দেন। এইবার কেউ ঈশ্বরে বিশ্বাস রেখে ওই আগুনের ওপর দিয়ে হেঁটে গেলে পায়ে ফোসকা পড়বে না। আদিবাসী ভক্তেরা পুকুরে স্নান করে ভিজে শরীরে নেচে-নেচে আগুনের ওপর দিয়ে লম্বালম্বিভাবে গোটা তিনেক পদক্ষেপেও হেঁটে যায়। আশ্চর্যের বিষয় (?) তাদের পায়ে ফোসকা পড়ে না। এই অলৌকিক ঘটনা দেখতে বিশাল ভিড় হয়। আদিবাসীরা বিশ্বাস করে এই অলৌকিক ঘটনার পেছনে রয়েছে পুরোহিতের অলৌকিক ক্ষমতা ও ভক্তদের ঈশ্বর-বিশ্বাস।
বিখ্যাত নৃতত্ত্ববিদ প্রয়াত শ্রীনির্মলকুমার বসু কয়েকজন সহযোগী নিয়ে ঘটনাটা দেখতে হাজির হন। শ্রীবসু লক্ষ্য করেন অগ্নিকুন্ড পার হতে ভক্তদের মোট সময় লাগছে ৮ সেকেন্ডের মতো। পা’দুটি এক সেকেন্ডেরও অনেক কম সময়ের জন্য আগুনের স্পর্শ পাচ্ছে। না। কারও পায়েই ফোসকা পড়ছে না।
শ্রীবসুর এক সহযোগী দ্রুত আগুনের ওপর দিয়ে হাঁটার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু, পারেননি। পায়ে ফোসকা পড়েছিল। শ্রীবসুর আর এক সহযোগী ভক্তদের মতো স্নান করে ভেজা শরীরে, ভেজা পায়ে জ্বলন্ত আগুনের ওপর দিয়ে দ্রুত হেঁটে যান। তাঁর পায়ে কোনও ফোসকা পড়েনি। তার দুটি কারণ হল (১) ভেজা পায়ে কিছু নরম মাটির প্রলেপ পড়েছিল। (২) দ্রুত পদক্ষেপের দরুন মুহূর্তের জন্য পা আগুনের স্পর্শ পেয়েছিল।
উজ্জয়িনী জেলার তাজপুর গ্রামেও প্রতি বছর অলৌকিক আগুনে হাঁটা অনুষ্ঠিত হয়। তাজপুরের এই আগুনে হাঁটা ধর্মানুষ্ঠানে যারা হাঁটে তারা নাকি ভৈরবের উপাসক। হাঁটতে গিয়ে কারো পা পুড়লে ধরে নেওয়া হয়, অপবিত্র মনের দরুনই এমনটা হয়েছে।
বুলগেরিয়ার এক সমুদ্র-বন্দর বার্গাস (Burgus)। বার্গাসের ৩০ কিলোমিটার দূরে একটি গ্রাম পানিতচারো (Panitcharewo)। এই গ্রামের নেস্টিনারি (Nestinari) নামে একটি সম্প্রদায় প্রতি বছর ৩ জুন বাইজানটাইন সম্রাট কনস্টানটাইন ও সম্রাজ্ঞী হেলেনাকে স্মরণ করে এক আগুনে হাঁটা উৎসব পালন করে। জনসমাগমও হয় প্রচুর।
জাপান, মালয়, ফিজি, শ্রীলঙ্কা, নিউজিল্যান্ড ও স্পেনেও আগুনে হাঁটা বা অগ্নি-উৎসবের প্রচলন রয়েছে।
আগুনে-হাঁটা একটি কৌশল মাত্র। এই কৌশলের জন্য প্রয়জন ক্ষিপ্রতা ও তাপ-সহন শক্তি, অন্ধ-ভক্তি ও বিশ্বাস ভক্তদের মস্তিষ্কের সেই সব স্নায়ুকে নিষ্ক্রিয় রাখে যা পায়ের তাপের খবর পৌঁছে দেয়।
‘যুক্তিবাদী সমিতি’ আমাদের বহু সহযোগী সংস্থা, বিজ্ঞান ক্লাব ও যুক্তিবাদী সংগঠন আজ পর্যন্ত আনুমানিক হাজার-হাজার অনুষ্ঠানে জ্বলন্ত লাল টকটকে কাঠের আগুনের ওপর দিয়ে হেঁটে দেখিয়েছে। এমন অসাধারণ দুর্লভ দৃশ্য দেখেছেন অন্তত কয়েক লক্ষ মানুষ। প্রায় প্রতিটি অনুষ্ঠানেই দর্শকদের মধ্যে অনেকেই আগুনে হাঁটায় অংশ নিয়েছেন এবং শতকরা প্রায় ১০০ ভাগ ক্ষেত্রেই দর্শকদের পা আগুনে দগ্ধ হয়নি।
সাধারত ১০ ফুট লম্বা ও ৪ ফুট চওড়া একটি আয়তক্ষেত্র তৈরি করা হয় ইট বিছিয়ে। গনগণে কাঠ কয়লার আঁচে যখন সাধারণ মানুষগুলো ছ’ফুট দূরে দাঁড়িয়েও প্রচন্ড তাপে ঝলসাতে থাকে, তখনই “যুক্তিবাদী জিন্দাবাদ” ধ্বনির মধ্য দিয়ে জ্বলন্ত আগুনের ওপর দিয়ে দীপ্ত ভঙ্গিতে হেঁটে যেতে থাকে যুক্তিবাদী আন্দোলনের কর্মীরা। বহু মানুষের সোচ্ছার ধ্বনি ও আমাদের সহযোগীদের হাঁটতে দেখে দর্শকরাও অনুপ্রাণিত হন। আমাদের আহ্বানে তাঁরাও এগিয়ে আসেন এই একান্ত বিশ্বাস নিয়ে –ওদের যখন পোড়েনি, আমারও পুড়বে না। এই মানসিক শক্তির সঙ্গে দ্রুত চলার ছন্দ যখনই যুক্ত হয়, তখনই আর পা পোড়ে না।
“অলৌকিক নয়,লৌকিক- ১ম খন্ড ” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ
১. অধ্যায়ঃ এক
১.৩ যুক্তিবাদী, মুক্তচিন্তার সেইসব মানুষ
২. অধ্যায়ঃ দুই
২.১ কুসংস্কারের বিরুদ্ধে বিজ্ঞান
২.২ শাসক শ্রেণির স্বার্থে কুসংস্কার পুষ্ট হচ্ছে
৩. অধ্যায়ঃ তিন
৩.২ বিখ্যাত মহারাজের শূন্যে ভাসা
৩.৩ ব্ল্যাক আর্ট ছাড়া সাধিকার শূন্যে ভাসা
৩.৪ লাঠিতে হাতকে বিশ্রাম দিয়ে শূন্যে ভাসা
৩.৫ বেদে-বেদেনীদের শূন্যে ভাসা
৩.৭ সাঁই বাবাঃ সাঁইবাবার অলৌকিক ঘড়ি-রহস্য
৩.১১ শূন্য থেকে হার আনলেন ও হার মানলেন সাঁই
৩.১২ সাঁইবাবার চ্যালেঞ্জঃ পেটে হবে মোহর!
৩.১৬ যে সাধকরা একই সময়ে একাধিক স্থানে হাজির ছিলেন
৩.১৭ অতিন্দ্রীয় ক্ষমতার তান্ত্রিক ও সন্ন্যাসীরা
৩.২০ অবতারদের নিজদেহে রোগ গ্রহণ
৩.২৬ বকনা গরুর অলৌকিক দুধ ও মেহবেব আলি
৩.২৭ বাবা তারক ভোলার মন্দির ও শ্রীশ্রীবাসুদেব
৩.২৮ যোগে বৃষ্টি আনলেন শিববাল যোগী
৩.২৯ চন্দননগরে সাধুর মৃতকে প্রাণ-দান
৩.৩০ ভগবান শ্রীসদানন্দ দেবঠাকুর
৪. অধ্যায়ঃ চার
৫. অধ্যায় পাঁচ
৬. অধ্যায়ঃ ছয়
৬.১ হিস্টিরিয়া, গণ-হিস্টিরিয়া, আত্ম-সম্মোহন, নির্দেশ
৭. অধ্যায়ঃ সাত
৭.২ সম্মোহনে আত্মা এলো ‘সানন্দা’য়
৭.৩ সম্মোহন নিয়ে নানা ভুল ধারণা
৮. অধ্যায়ঃ আট
৮.১ Illusion (ভ্রান্ত অনুভূতি)
৮.২ Hallucination (অলীক বিশ্বাস)
৮.৩ Delusion মোহ, অন্ধ ভ্রান্ত ধারণা
৯. অধ্যায়ঃ নয়
৯.২ ধর্মের নামে লোক ঠকাবার উপদেশ কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে
৯.৩ সোমনাথ মন্দিরের অলৌকিক রহস্য
৯.৪ প্রাচীন মিশরের ধর্মস্থান রহস্য
৯.৫ কলকাতায় জীবন্ত শীতলাদেবী ও মা দুর্গা
৯.৭ খেজুরতলার মাটি সারায় যত রোগ
৯.১৩ বার্মুডা ট্র্যাঙ্গেল রহস্য
১০. অধ্যায়ঃ দশ
১১. অধ্যায়ঃ এগারো
১১.২ ডুবোজাহাজে টেলিপ্যাথির পরীক্ষা
১১.৩ টেলিপ্যাথির সাহায্যে নোটের নম্বর বলা
১১.৪ টেলিফোনে টেলিপ্যাথিঃ আয়োজক লন্ডনের ‘সানডে মিরর’
১১.৭ টেলিফোন টেলিপ্যাথির আর এক আকর্ষণীয় ঘটনা
১১.৮ এমিল উদ্যা ও রবেয়ার উদ্যা’র টেলিপ্যাথি
১১.৯ অতীন্দ্রিয় ইউরি গেলারকে নিয়ে ‘নেচার’ (Nature)-এর রিপোর্ট
১১.১০ আই আই টি-তে টেলিপ্যাথি দেখালেন দীপক রাও
১১.১১ তবু প্রমাণ করা যায় তেলিপ্যাথি আছে
১২. অধ্যায়ঃ বার
১২.২ নায়াগ্রা জলপ্রপাত ভেঙ্গে পড়ার ভবিষ্যদ্বাণী
১৩. অধ্যায়ঃ তের
১৩.২ সাধু-সন্ন্যাসীদের অতীন্দ্রিয় দৃষ্টি
১৩.৩ ইউরি গেলারের অতীন্দ্রিয় দৃষ্টি
১৪. অধ্যায়ঃ চোদ্দ
১৪.২ মানসিক শক্তিতে রেলগাড়ি থামানো
১৪.৪ স্টীমার বন্ধ করেছিলেন পি.সি. সরকার
১৪.৬ লিফট ও কেবল-কার দাঁড় করিয়েছিলেন ইউরি গেলার
১৪.৭ মানসিক শক্তি দিয়ে গেলারের চামচ বাঁকানো
১৪.৯ ‘নিউ সায়েন্টিস্ট’ –এর পরীক্ষায় ইউরি এলেন না
১৫. অধ্যায়ঃ পনের
১৬. অধ্যায়ঃ ষোল
১৬.১ অধ্যায়ঃ ভাববাদ বনাম যুক্তিবাদ বা বস্তুবাদ
১৬.২ মুক্ত চিন্তার বিরোধী ‘মনু সংহিতা’
১৬.৩ আধ্যাত্মবাদ ও যুক্তিবাদের চোখের আত্মা
১৬.৪ আত্মা, পরলোক ও জন্মান্তর বিষয়ে স্বামী অভেদানন্দ
১৬.৫ স্বামী বিবেকানন্দের চোখে আত্মা
১৬.৬ আত্মা নিয়ে আরও কিছু বিশিষ্ট ভাববাদীর মত
১৬.৭ আত্মা প্রসঙ্গে চার্বাক বা লোকায়ত দর্শন
১৭. অধ্যায়ঃ সতের
১৭.১ জাতিস্মররা হয় মানসিক রোগী, নয় প্রতারক
১৮. অধ্যায়ঃ আঠারো
১৮.১ জাতিস্মর তদন্ত-১: দোলনচাঁপা
১৮.২ জাতিস্মর তদন্ত ২: জ্ঞানতিলক
১৮.৩ জাতিস্মর তদন্ত ৩: ফ্রান্সিস পুনর্জন্ম
১৮.৪ জাতিস্মর তদন্ত ৪: সুনীল দত্ত সাক্সেনা
১৮.৬ জাতিস্মর তদন্ত ৬: কলকাতায় জাতিস্মর
১৯. অধ্যায়ঃ ঊনিশ
১৯.২ উনিশ শতকের দুই সেরা মিডিয়া ও দুই জাদুকর
১৯.৩ প্ল্যানচেটের ওপর আঘাত হেনেছিল যে বই
১৯.৪ স্বামী অভেদানন্দ ও প্রেত-বৈঠক
১৯.৫ বন্ধনমুক্তির খেলায় ভারতীয় জাদুকর
১৯.৬ রবীন্দ্রনাথের প্ল্যানচেট-চর্চা
২০. অধ্যায়ঃ বিশ